সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘একটী মহামূল্য মুক্তা পাওয়া’

‘একটী মহামূল্য মুক্তা পাওয়া’

‘একটী মহামূল্য মুক্তা পাওয়া’

“স্বর্গ-রাজ্য বলে আক্রান্ত হইতেছে, এবং আক্রমীরা সবলে তাহা অধিকার করিতেছে।”—মথি ১১:১২.

১, ২. (ক) রাজ্য সম্বন্ধীয় নীতিগল্পগুলোর একটাতে যিশু কোন বিরল গুণের বিষয় তুলে ধরেছিলেন? (খ) মহামূল্য মুক্তার নীতিগল্পে যিশু কী বলেছিলেন?

 এমন কোনোকিছু কি রয়েছে, যেটাকে আপনি এতটাই মূল্যবান মনে করেন যে, সেটা পাওয়ার জন্য আপনার যা কিছু আছে তার সমস্তই পরিত্যাগ করবেন? যদিও লোকেরা কিছু লক্ষ্যের—টাকাপয়সা, খ্যাতি, ক্ষমতা বা পদমর্যাদার—অনুধাবন করতে গিয়ে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করার বিষয় বলে থাকে কিন্তু একজন ব্যক্তি সাধারণত অতি বিরল ক্ষেত্রেই এমন কাম্য কিছু পেয়ে থাকে, যেটার জন্য তিনি সমস্তকিছু পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক হন। যিশু খ্রিস্ট এই বিরল অথচ চমৎকার গুণটিকে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধীয় চিন্তা উদ্রেগকারী তাঁর অনেক নীতিগল্পের একটাতে উল্লেখ করেছিলেন।

এটা হচ্ছে একটা নীতিগল্প বা দৃষ্টান্ত, যা যিশু শুধুমাত্র তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন আর সেটাকে প্রায়ই মহামূল্য মুক্তার দৃষ্টান্ত বলা হয়। যিশু এই কথা বলেছিলেন: “স্বর্গ-রাজ্য এমন এক বণিকের তুল্য, যে উত্তম উত্তম মুক্তা অন্বেষণ করিতেছিল, সে একটী মহামূল্য মুক্তা দেখিতে পাইয়া গিয়া [“অবিলম্বে,” NW] সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া তাহা ক্রয় করিল।” (মথি ১৩:৩৬, ৪৫, ৪৬) এই দৃষ্টান্ত থেকে তাঁর শ্রোতারা কোন বিষয়টা শিখুক বলে যিশু চেয়েছিলেন? আর কীভাবে আমরা যিশুর কথাগুলো থেকে উপকৃত হতে পারি?

মুক্তার মহামূল্য গুণ

৩. প্রাচীনকালে উত্তম মানের মুক্তা কেন এত মূল্যবান ছিল?

প্রাচীনকাল থেকেই মুক্তাকে অলংকার সামগ্রী হিসেবে মূল্যবান বলে গণ্য করা হচ্ছে। একটি উৎস বলে যে, রোমীয় পণ্ডিত প্লিনি দি এল্ডারের মতে, মুক্তা “দামি সামগ্রীগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান” দখল করেছিল। সোনা, রুপো বা অন্যান্য দামি রত্নগুলোর বৈসাদৃশ্যে মুক্তা জীবিত বস্তুগুলো থেকে উৎপাদিত হয়ে থাকে। এটা সকলেরই জানা যে, নির্দিষ্ট প্রকারের ঝিনুক, অমসৃণ বস্তুগুলোকে—যেমন পাথরের ক্ষুদ্র কণাগুলোকে—নেকার নামে পরিচিত ক্ষরিত বস্তুর প্রলেপের মধ্যে ঢেকে রাখার মাধ্যমে চকচকে মুক্তায় পরিণত করতে পারে। প্রাচীনকালে, সর্বোত্তম মানের মুক্তা মূলত ইস্রায়েল দেশ থেকে দূরে অবস্থিত লোহিত সাগর, পারস্য উপসাগর এবং ভারত মহাসাগর থেকে সংগ্রহ করা হতো। নিঃসন্দেহে, এই কারণেই যিশু “এমন এক বণিকের” কথা বলেছিলেন “যে উত্তম উত্তম মুক্তা অন্বেষণ করিতেছিল।” প্রকৃতই মূল্যবান এমন মুক্তা খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে প্রচেষ্টা করতে হবে।

৪. বণিকের সম্বন্ধে যিশুর নীতিগল্পের মূল শিক্ষাটা কী?

যদিও উত্তম মানের মুক্তা অনেক দিন থেকেই দামি সামগ্রী হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, সেগুলোর অর্থমূল্য যিশুর নীতিগল্পের মূল শিক্ষা নয়। এই নীতিগল্পে যিশু ঈশ্বরের রাজ্যকে শুধুমাত্র একটি মহামূল্য মুক্তার সঙ্গেই তুলনা করেননি; তিনি ‘উত্তম মুক্তা অন্বেষণ করিতেছিল এমন এক বণিক’ এবং এইরকম একটা মুক্তা পাওয়ার পর তার সাড়াদানের প্রতিও মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন। সাধারণ দোকানদারের বৈসাদৃশ্যে একজন মুক্তা বণিক বা পাইকারি বিক্রেতা ছিলেন এমন এক ব্যক্তি যাকে ব্যবসায় অভিজ্ঞ বলা যেতে পারে আর যার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল অথবা মুক্তাকে অদ্বিতীয় করে তোলে এমন শৈল্পিক গুণাগুণ ও সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো নির্ণয় করার প্রয়োজনীয় বিচক্ষণতা ছিল। তিনি একটা মুক্তা দেখে বুঝতে পারবেন যে, এটা খাঁটি কি না ও সেইসঙ্গে নিকৃষ্ট বা নকল পণ্যের দ্বারা তিনি ঠকবেন না।

৫, ৬. (ক) যিশুর নীতিগল্পের বণিকের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য? (খ) গুপ্তধনের নীতিগল্প বণিক সম্বন্ধে কোন বিষয় প্রকাশ করে?

স্বতন্ত্র এই বণিকের অন্য আরেকটা বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একজন সাধারণ বণিক হয়তো প্রথমে মুক্তার বাজারদর হিসাব করেন যাতে নির্ণয় করতে পারেন যে, লাভ করতে হলে তাকে কত মূল্য দিতে হবে। তিনি হয়তো এও বিবেচনা করবেন যে, বাজারে এই ধরনের মুক্তার চাহিদা আছে কি না, যাতে তিনি এটাকে তাড়াতাড়ি বিক্রি করে দিতে পারেন। অন্য কথায়, তিনি মুক্তার মালিক হওয়া নয় বরং তার বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে দ্রুত মুনাফা অর্জনে আগ্রহী হবেন। কিন্তু, যিশুর নীতিগল্পের বণিকের ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। তার আগ্রহ অর্থবিষয়ক বা বস্তুগত ছিল না। বস্তুত, তিনি যেটার অন্বেষণ করছিলেন, সেটা পাওয়ার জন্য তার “সর্ব্বস্ব”—সম্ভবত তার সমস্ত ব্যক্তিগত সম্পদ ও সম্পত্তি—পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক ছিলেন।

অধিকাংশ বণিকের চোখে, যিশুর নীতিগল্পে বলা ব্যক্তি যা করেছিলেন, তা সম্ভবত মূর্খতাপূর্ণ কাজ ছিল। একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী এই ধরনের এক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাবসা হাতে নেওয়ার কথা মাথায়ই আনবেন না। কিন্তু, যিশুর নীতিগল্পের বণিকের কাছে মূল্য সম্বন্ধে এক ভিন্ন মান ছিল। তার পুরস্কার ছিল কোনো আর্থিক সুবিধা নয় বরং অতুলনীয় মূল্যের কোনোকিছু অর্জন করার আনন্দ ও পরিতৃপ্তি। এই বিষয়টা যিশুর বলা এই ধরনের অন্য আরেকটা দৃষ্টান্তে স্পষ্ট করা হয়েছে। তিনি বলেছিলেন: “স্বর্গ-রাজ্য ক্ষেত্রমধ্যে গুপ্ত এমন ধনের তুল্য, যাহা দেখিতে পাইয়া এক ব্যক্তি গোপন করিয়া রাখিল, পরে আনন্দ হেতু গিয়া সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া সেই ক্ষেত্র ক্রয় করিল।” (মথি ১৩:৪৪) হ্যাঁ, ধন আবিষ্কার করা ও সেটার মালিক হওয়ার ফলে যে-আনন্দ আসে, সেটাই সেই ব্যক্তিকে সবকিছু পরিত্যাগ করার জন্য প্রেরণা দিতে যথেষ্ট ছিল। আজকে কি এই ধরনের ব্যক্তিরা রয়েছে? এমন কোনো ধন কি রয়েছে, যা এই ধরনের ত্যাগস্বীকারের যোগ্য?

যারা মহামূল্যকে উপলব্ধি করেছিল

৭. কীভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, তিনি রাজ্যের মহামূল্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন?

যিশু তাঁর নীতিগল্পটা বলতে গিয়ে ‘স্বর্গরাজ্যের’ বিষয়ে বলছিলেন। এটা নিশ্চিত যে তিনি নিজেও রাজ্যের মহামূল্যকে উপলব্ধি করেছিলেন। সুসমাচারের বিবরণগুলো সেই বিষয়ে জোরালো সাক্ষ্য দেয়। সা.কা. ২৯ সালে যিশু তাঁর বাপ্তিস্মের পর “প্রচার করিতে আরম্ভ করিলেন; বলিতে লাগিলেন, ‘মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল’।” প্রায় সাড়ে তিন বছর তিনি জনতাকে রাজ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি সেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত গমন করেছিলেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে করিতে নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিয়াছিলেন।’—মথি ৪:১৭; লূক ৮:১.

৮. রাজ্য কী সম্পাদন করবে তা দেখানোর জন্য যিশু কী করেছিলেন?

সারাদেশে অসংখ্য অলৌকিক কাজ করার দ্বারা—যেগুলোর মধ্যে ছিল অসুস্থকে সুস্থ করা, ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো, প্রকৃতিকে বশে আনা, এমনকি মৃতদের পুনরুত্থিত করা—যিশু এও দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের রাজ্য কী সম্পাদন করবে। (মথি ১৪:১৪-২১; মার্ক ৪:৩৭-৩৯; লূক ৭:১১-১৭) শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর জীবন দান করে, যাতনাদণ্ডে একজন শহীদের মতো মৃত্যুবরণ করে ঈশ্বর ও রাজ্যের প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রমাণ করেছিলেন। সেই বণিক যেভাবে ‘মহামূল্য মুক্তার’ জন্য তার সবকিছু স্বেচ্ছায় দিয়ে দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই যিশু রাজ্যের জন্য বেঁচে ছিলেন ও মারাও গিয়েছিলেন।—যোহন ১৮:৩৭.

৯. যিশুর প্রাথমিক শিষ্যদের মধ্যে কোন বিরল গুণ দেখা গিয়েছিল?

যিশু শুধুমাত্র রাজ্যের ওপরই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অনুসারীদের এক ক্ষুদ্র দলকে একত্রিত করার ওপরও তাঁর নিজের জীবনকে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। তারাও ছিল সেই ব্যক্তি যারা রাজ্যের মহামূল্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিল। তাদের মধ্যে ছিল আন্দ্রিয়, যিনি মূলত যোহন বাপ্তাইজকের একজন শিষ্য ছিলেন। যিশুই ছিলেন “ঈশ্বরের মেষশাবক” এই বিষয়ে যোহনের সাক্ষ্য শোনার পর, আন্দ্রিয় এবং যোহনের অন্য আরেকজন শিষ্য, খুব সম্ভবত সিবদিয়ের পুত্রদের মধ্যে একজন যার নামও ছিল যোহন, তারা তৎক্ষণাৎ যিশুর কাছে এসেছিল এবং বিশ্বাসী হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টা সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। তখনই আন্দ্রিয় তার ভাই শিমোনের কাছে গিয়েছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন: “আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি।” এর পর পরই শিমোন (যিনি কৈফা বা পিতর হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন) এবং সেইসঙ্গে ফিলিপ ও তার বন্ধু নথনেলও যিশুকে মশীহ হিসেবে শনাক্ত করতে পেরেছিল। বাস্তবিকপক্ষে, নথনেল যিশুকে এই কথা বলতে পরিচালিত হয়েছিলেন: “আপনিই ঈশ্বরের পুত্ত্র, আপনিই ইস্রায়েলের রাজা।”—যোহন ১:৩৫-৪৯.

কাজ করার জন্য উদ্দীপিত

১০. শিষ্যরা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল, যখন যিশু তাদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কিছু সময় পর এসেছিলেন এবং তাদের আহ্বান করেছিলেন?

১০ আন্দ্রিয়, পিতর, যোহন এবং অন্যেরা যখন মশীহকে আবিষ্কার করেছিল, তখন তাদের যে-রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়েছিল, সেটাকে সেই বণিকের অনুভূতির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যখন তিনি মহামূল্য মুক্তা খুঁজে পেয়েছিলেন। এখন তারা কী করবে? যিশুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হওয়ার পর পরই তারা কী করেছিল, সেই বিষয়ে সুসমাচারের বিবরণগুলো আমাদের বেশি কিছু জানায় না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই তাদের স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু, প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছর পর, যিশু আবারও আন্দ্রিয়, পিতর, যোহন এবং যোহনের ভাই যাকোবের কাছে এসেছিলেন, যখন তারা গালীল সমুদ্রের ধারে তাদের মাছ ধরার ব্যবসায় রত ছিল। * তাদের দেখে যিশু বলেছিলেন: “আমার পশ্চাৎ আইস। আমি তোমাদিগকে মনুষ্যধারী করিব।” তারা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? পিতর ও আন্দ্রিয় সম্বন্ধে মথির বিবরণ বলে: “তখনই তাঁহারা জাল পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন।” যাকোব ও যোহনের সম্বন্ধে আমরা পড়ি: “তখনই তাঁহারা নৌকা ও আপনাদের পিতাকে পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন।” লূকের বিবরণ আরও বলে যে, তারা “সকলই পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন।”—মথি ৪:১৮-২২; লূক ৫:১-১১.

১১. সম্ভবত কোন বিষয়টা যিশুর আহ্বানের প্রতি শিষ্যদের অবিলম্বে সাড়া দিতে পরিচালিত করেছিল?

১১ শিষ্যদের অবিলম্বে সাড়াদান কি তাড়াহুড়ো করে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত ছিল? কখনোই না! যদিও তারা যিশুর সঙ্গে তাদের প্রথম সাক্ষাতের পর তাদের মাছ ধরার পারিবারিক ব্যবসায় ফিরে গিয়েছিল কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে, সেই সময় তারা যা দেখেছিল ও শুনেছিল, তা তাদের হৃদয়ে ও মনে এক গভীর ছাপ ফেলেছিল। প্রায় এক বছর কেটে যাওয়া তাদেরকে সেই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য যথেষ্ট সময় দিয়েছিল। এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এসেছিল। তারা কি সেই বণিকের মতো হবে, যার হৃদয় অমূল্য মুক্তা আবিষ্কারের দ্বারা এতটাই উদ্দীপিত হয়েছিল যে, যিশুর বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ‘অবিলম্বে গিয়া’ সেই মুক্তা কেনার জন্য যা যা করতে হবে তা-ই করেছিলেন? হ্যাঁ। তারা যা দেখেছিল ও শুনেছিল তা তাদের হৃদয়কে উদ্দীপিত করেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল যে, পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। তাই, বিবরণগুলো আমাদের যেমন বলে যে, কোনোরকম দ্বিধা না করেই তারা সমস্তকিছু পরিত্যাগ করেছিল এবং যিশুর অনুসারী হয়ে উঠেছিল।

১২, ১৩. (ক) যিশুর কথা শুনেছিল এমন অনেকে কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? (খ) যিশু তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যদের বিষয়ে কী বলেছিলেন এবং তাঁর কথাগুলো কী ইঙ্গিত করে?

১২ সুসমাচারের বিবরণগুলোতে পরে উল্লেখিত কয়েক জন ব্যক্তির চেয়ে এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা কতই না আলাদা ছিল! অনেকে যিশুর দ্বারা সুস্থ হয়েছিল বা তাঁর কাছ থেকে খাবার খেয়েছিল কিন্তু তারা যার যার মতো তাদের নিজেদের কাজকর্মে ফিরে গিয়েছিল। (লূক ১৭:১৭, ১৮; যোহন ৬:২৬) কেউ কেউ এমনকি যিশু যখন তাদেরকে তাঁর অনুসারী হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন তারা পিছিয়ে গিয়েছিল। (লূক ৯:৫৯-৬২) অন্যদিকে, বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে যিশু পরে বলেছিলেন: “যোহন বাপ্তাইজকের কাল হইতে এখন পর্য্যন্ত স্বর্গ-রাজ্য বলে আক্রান্ত হইতেছে, এবং আক্রমীরা সবলে তাহা অধিকার করিতেছে।”—মথি ১১:১২.

১৩ পদটি সম্বন্ধে বাইবেল পণ্ডিত হাইনরিখ্‌ মাইয়ার বলেন: “এই কথাগুলোর দ্বারা আসন্ন মশীহ রাজ্যের জন্য উৎসুক, অপ্রতিরোধ্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রামকে বর্ণনা করা হয়েছে . . . রাজ্য সম্বন্ধে আগ্রহ খুবই উৎসুক ও শক্তিশালী (কোনোভাবে শান্ত ও প্রত্যাশী নয়)।” সেই বণিকের মতো, এই অল্প কিছু ব্যক্তি শীঘ্রই যা সত্যিই মূল্যবান ছিল সেটাকে শনাক্ত করেছিল আর তারা রাজ্যের জন্য স্বেচ্ছায় তাদের সমস্তই পরিত্যাগ করেছিল।—মথি ১৯:২৭, ২৮; ফিলিপীয় ৩:৮.

অন্যেরা অন্বেষণে অংশ নিয়েছিল

১৪. কীভাবে যিশু রাজ্যের প্রচার কাজের জন্য প্রেরিতদের প্রস্তুত করেছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?

১৪ যিশু যখন তাঁর পরিচর্যা চালিয়ে গিয়েছিলেন, তখন তিনি রাজ্যের লক্ষ্যে উপনীত হতে অন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন ও সাহায্য করেছিলেন। প্রথমে তিনি তাঁর শিষ্যদের মধ্যে থেকে ১২ জনকে বাছাই করেছিলেন ও তাদেরকে প্রেরিত হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন বা তারা তাঁর দ্বারা পাঠানো ব্যক্তি ছিল। কীভাবে তাদের পরিচর্যা সম্পাদন করতে হবে, সেই সম্বন্ধে যিশু তাদেরকে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং সেইসঙ্গে তাদের সামনে যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও কষ্টকর পরিস্থিতিগুলো ছিল, সেগুলো সম্বন্ধে তাদের বিভিন্ন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন। (মথি ১০:১-৪২; লূক ৬:১২-১৬) পরবর্তী দুই বছর বা আরও বেশি সময় তারা যিশুর সঙ্গে সারাদেশ জুড়ে প্রচার করেছিল এবং তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছিল। তারা তাঁর কথাগুলো শুনেছিল, তাঁর শক্তিশালী কাজগুলোর সাক্ষি হয়েছিল এবং তাঁর ব্যক্তিগত উদাহরণ দেখেছিল। (মথি ১৩:১৬, ১৭) নিঃসন্দেহে এই সমস্তকিছুই গভীরভাবে তাদের স্পর্শ করেছিল, এতখানিই স্পর্শ করেছিল যে, সেই বণিকের মতো তারা উদ্যোগের সঙ্গে ও সর্বান্তঃকরণে রাজ্যের অনুধাবন করেছিল।

১৫. আনন্দ করার জন্য তাঁর অনুসারীদের কোন প্রকৃত কারণ ছিল বলে যিশু জানিয়েছিলেন?

১৫ বারো জন প্রেরিত ছাড়াও, যিশু “আরও সত্তর জনকে নিযুক্ত করিলেন, আর . . . সেই সমস্ত নগরে ও স্থানে আপনার অগ্রে দুই দুই জন করিয়া তাহাদিগকে প্রেরণ করিলেন।” এ ছাড়া, তিনি তাদেরকে সম্মুখস্থ পরীক্ষা ও কষ্টগুলোর বিষয় বলেছিলেন এবং লোকেদের কাছে এই কথা বলতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন: “ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের সন্নিকট হইল।” (লূক ১০:১-১২) সেই ৭০ জন যখন ফিরে এসেছিল, তখন তারা খুবই আনন্দিত হয়েছিল এবং যিশুকে এই সংবাদ দিয়েছিল: “প্রভু, আপনার নামে ভূতগণও আমাদের বশীভূত হয়।” কিন্তু, সম্ভবত তাদের অবাক করে দিয়ে যিশু প্রকাশ করেছিলেন যে, রাজ্যের প্রতি তাদের উদ্যোগের কারণে এমনকি আরও বড় আনন্দ তাদের জন্য সঞ্চিত ছিল। তিনি তাদের বলেছিলেন: “আত্মারা যে তোমাদের বশীভূত হয়, ইহাতে আনন্দ করিও না; কিন্তু তোমাদের নাম যে স্বর্গে লিখিত আছে, ইহাতেই আনন্দ কর।”—লূক ১০:১৭, ২০.

১৬, ১৭. (ক) যিশু তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের সঙ্গে শেষ রাত কাটানোর সময় কী বলেছিলেন? (খ) যিশুর কথাগুলো প্রেরিতদের জন্য কোন আনন্দ ও আশ্বাস নিয়ে এসেছিল?

১৬ শেষে, সা.কা. ৩৩ সালের ১৪ই নিশান রাতে যিশু যখন তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি প্রভুর সান্ধ্যভোজ প্রবর্তন করেছিলেন এবং তাদের সেই ঘটনা স্মরণ করার আদেশ দিয়েছিলেন। সন্ধ্যাবেলায় যিশু তাঁর অবশিষ্ট ১১ জন প্রেরিতকে বলেছিলেন: “তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রহিয়াছ; আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নিরূপণ করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিরূপণ করিতেছি [“আমার পিতা যেমন আমার সঙ্গে এক রাজ্যের জন্য চুক্তি করেছেন, তেমনই আমিও তোমাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করছি,” NW], যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার মেজে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে।”—লূক ২২:১৯, ২০, ২৮-৩০.

১৭ প্রেরিতরা যখন যিশুর কাছ থেকে এই কথাগুলো শুনেছিল, তখন তা তাদের হৃদয়কে কতই না আনন্দ এবং পরিতৃপ্তিতে পূর্ণ করেছিল! তাদেরকে সেই সর্বোচ্চ সম্মান ও অদ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যা যেকোনো মানুষ পেতে পারত। (মথি ৭:১৩, ১৪; ১ পিতর ২:৯) সেই বণিকের মতো, তারা যিশুকে অনুসরণ করে রাজ্যের অনুধাবন করতে গিয়ে অনেক কিছু পরিত্যাগ করেছে। তখন তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে এই পর্যন্ত তারা যে-ত্যাগস্বীকারগুলো করেছে, সেগুলো বৃথা যায়নি।

১৮. এগারো জন প্রেরিতের পাশাপাশি আর কারা শেষ পর্যন্ত রাজ্য থেকে উপকার লাভ করবে?

১৮ তবে, সেই রাতে কেবল যিশুর সঙ্গে উপস্থিত প্রেরিতরাই রাজ্য থেকে উপকার লাভ করবে না। এটা যিহোবারই ইচ্ছা ছিল যে মোট ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তিকে গৌরবান্বিত স্বর্গীয় রাজ্যে যিশুর সহশাসক হিসেবে রাজ্য চুক্তিতে গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া, প্রেরিত যোহন দর্শনে দেখেছিলেন যে, “বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না . . . তাহারা সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষ শাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে . . . কহিতেছে, ‘পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, এবং মেষশাবকের দান।’” এরা হচ্ছে রাজ্যের পার্থিব প্রজা। *প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০; ১৪:১, ৪.

১৯, ২০. (ক) সমস্ত জাতির লোকেদের জন্য কোন সুযোগ খোলা রয়েছে? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন প্রশ্ন আলোচনা করা হবে?

১৯ স্বর্গারোহণ করার অল্প কিছু সময় আগে যিশু তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারীদের আদেশ দিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৯, ২০) এভাবে সমস্ত জাতি থেকে আসা লোকেরা যিশু খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে উঠতে পারবে। তারাও তাদের হৃদয়কে রাজ্যের প্রতি—স্বর্গীয় অথবা পার্থিব যে-পুরস্কারের জন্যই হোক না কেন—নিবিষ্ট করবে, ঠিক যেমন উত্তম মানের মুক্তার ক্ষেত্রে সেই বণিক করেছিলেন।

২০ যিশুর কথাগুলো ইঙ্গিত করেছিল যে, শিষ্য তৈরির কাজ ‘যুগান্ত’ পর্যন্ত চলতে থাকবে। তাই, আমাদের দিনে এখনও কি এমন ব্যক্তিরা রয়েছে, যারা ঈশ্বরের রাজ্যের অনুধাবন করতে গিয়ে তাদের সমস্তই দিয়ে দিতে ইচ্ছুক? এই প্রশ্নটাই পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ সিবদিয়ের পুত্র যোহন হয়তো প্রথমবার সাক্ষাতের পরই যিশুকে অনুসরণ করেছিলেন এবং তাঁর কৃত কিছু কাজ নিজের চোখে দেখেছিলেন, ফলে সেগুলো যোহনকে তার সুসমাচারের বিবরণে এতটা প্রাণবন্তভাবে লিপিবদ্ধ করতে সমর্থ করেছিল। (যোহন ২-৫ অধ্যায়) তবে, যিশু তাকে আহ্বান করার কিছু সময় আগে তিনি তার পরিবারের মাছ ধরার ব্যবসায় ফিরে গিয়েছিলেন।

^ আরও বিস্তারিত জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইয়ের ১০ অধ্যায় দেখুন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• বণিকের নীতিগল্পের মূল শিক্ষাটা কী?

• রাজ্যের মহামূল্যের প্রতি যিশু কীভাবে গভীরভাবে উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন?

• আন্দ্রিয়, পিতর, যোহন ও অন্যদের যখন যিশু আহ্বান করেছিলেন, তখন কোন বিষয়টা তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিতে পরিচালিত করেছিল?

• সমস্ত জাতির লোকেদের সামনে কোন চমৎকার সুযোগ রয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

‘তাঁহারা সকলই পরিত্যাগ করিয়া যিশুর পশ্চাদগামী হইলেন’

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

স্বর্গারোহণের আগে যিশু তাঁর অনুসারীদের শিষ্য তৈরি করার আদেশ দিয়েছিলেন