আপনি কি অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করেন?
আপনি কি অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করেন?
আমাদের মধ্যে কেই না এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেনি যিনি আমাদের চাইতে দেখতে সুন্দর, আপাতদৃষ্টিতে বেশি জনপ্রিয়, বিষয়গুলো তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে বা একজন ভাল ছাত্র বা ছাত্রী? হয়তো অন্যদের স্বাস্থ্য বেশ ভাল অথবা একটা সন্তোষজনক চাকরি রয়েছে, তারা হয়তো আরও বেশি সফল অথবা তাদের হয়তো অনেক বন্ধুবান্ধব রয়েছে বলে মনে হয়। তাদের হয়তো অনেক ধনসম্পদ, টাকাপয়সা, একটা নতুন গাড়ি রয়েছে অথবা তাদের হয়তো খুব সুখী বলে মনে হয়। এই বিষয়গুলো উল্লেখ করার সময়, আমরা কি অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করি? নানা বিষয়ে কি অন্যদের সঙ্গে তুলনা করতেই হবে? কেন একজন খ্রিস্টান হয়তো সেগুলোকে এড়াতে চাইবেন? আর কীভাবে আমরা নিজেদেরকে কারোর সঙ্গে তুলনা না করেও সন্তুষ্ট থাকতে পারি?
যেকারণে এবং যখন আমরা হয়তো তুলনা করতে পারি
যেকারণে লোকেরা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে থাকে তার একটা ধারণা হল যে, এটা তাদের আত্মসম্মান বজায় রাখতে অথবা বাড়াতে সাহায্য করে। লোকেরা যখন দেখে যে তারা তাদের সঙ্গীসাথিদের মতোই সফল তখন প্রায়ই তারা তাতে সন্তুষ্ট থাকে। আরেকটা ধারণা হল যে, তুলনা করা নিজেদের সম্বন্ধে অনিশ্চয়তাকে হ্রাস করতে, আমরা কী করতে সক্ষম এবং আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো কী, তা বুঝতে সাহায্য করে। অন্যেরা যা সম্পাদন করেছে সেটা আমরা লক্ষ করি। তারা যদি অনেক ব্যাপারে আমাদের মতো হয়ে থাকে এবং কিছু বিশেষ লক্ষ্যে পৌঁছায়, তা হলে আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে, আমরাও সেই একই লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছাতে পারি।
অধিকাংশ সময়েই তুলনা সেই লোকেদের মধ্যে করা হয় যারা একে অপরের সমরূপ—যারা একই লিঙ্গের, একই বয়সের এবং একই সামাজিক পদমর্যাদার এবং যারা একে অপরকে জানে। আমরা সাধারণত এমন কারোর সঙ্গে নিজেদের তুলনা করি না যদি আমরা বুঝতে পারি যে, উভয়ের মধ্যে বিস্তর প্রভেদ রয়েছে। অন্য কথায়, একটা সাধারণ কিশোরী কখনোই একজন জনপ্রিয় মডেলের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে চাইবে না, যেমনটা সে তার সহপাঠীদের সঙ্গে করে থাকে আর একইভাবে একজন জনপ্রিয় মডেলও নিজেকে একটা সাধারণ কিশোরীর সঙ্গে কখনোই তুলনা করবে না।
কোন কোন ক্ষেত্রে তুলনা করা হয়ে থাকে? কোনো সমাজে মূল্যবান বলে বিবেচিত যেকোনো বিষয় অথবা গুণ—উদাহরণস্বরূপ, মেধা, সৌন্দর্য, সম্পদ, পোশাক—হয়তো তুলনার ভিত্তি হতে পারে। তবে, যে-বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের আগ্রহ রয়েছে, আমরা সাধারণত সেগুলোর তুলনা করার প্রবণতা দেখিয়ে থাকি। উদাহরণস্বরূপ, নির্দিষ্টভাবে ডাকটিকিট সংগ্রহের ব্যাপারে যদি
আমাদের আগ্রহ না থাকে, তা হলে, সম্ভবত আমাদের পরিচিত কাউকে ডাকটিকিট সংগ্রহ করতে দেখে আমরা ঈর্ষা করব না।তুলনা করার ফলে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন পরিতৃপ্তি থেকে শুরু করে হতাশা, প্রশংসা ও অনুকরণ করার আকাঙ্ক্ষা থেকে সংকোচবোধ অথবা বিরোধিতার অনুভূতি। এই অনুভূতিগুলোর মধ্যে কয়েকটা ক্ষতিকর আর এগুলো খ্রিস্টীয় গুণাবলির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
প্রতিযোগিতামূলক তুলনা
অনেকে যারা তুলনামূলক বিচারে “জয়ী” হওয়ার চেষ্টা করে তারা এক প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করে। তারা অন্যদের চাইতে আরও ভাল হতে চায় আর তাই যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা মনে করে যে তারা আরও ভাল করেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সন্তুষ্ট হয় না। এই ধরনের লোকেদের কাছাকাছি থাকা মনোরম বিষয় নয়। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় আন্তরিকতাশূন্য, সম্পর্ক চাপপূর্ণ হয়ে থাকে। এই ধরনের লোকেদের শুধু নম্রতারই অভাব নেই কিন্তু তারা সাধারণত তাদের সহমানবদের প্রেম করা সম্বন্ধে বাইবেলের পরামর্শ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়, কারণ তাদের মনোভাব সহজেই অন্যদের মধ্যে হীনমন্যতা এবং অবনত বোধ করার অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে পারে।—মথি ১৮:১-৫; যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.
লোকেদের “পরাজিত” বোধ করানো এক অর্থে তাদেরকে আহত করে। একজন লেখিকার মতানুসারে, “আমাদের ব্যর্থতাগুলো তখনই আরও বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে, যখন মনে হয় যে, আমাদেরই মতো অবস্থার লোকেরা আমরা যা চাই সেটা পেয়ে গিয়েছে।” প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব এইভাবে কারোর প্রতি তার ধনসম্পত্তি, সাফল্য, পদমর্যাদা, সুনাম, সুযোগসুবিধা এবং আরও অন্যান্য বিষয়ের কারণে ঈর্ষা, ক্ষোভ এবং অসন্তুষ্টি জাগিয়ে তোলে। এটা আরও প্রতিযোগিতার দিকে পরিচালিত করে—এক অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত চক্র। বাইবেল “জ্বালাতন” করাকে বা প্রতিযোগিতা জাগিয়ে তোলাকে নিন্দা করে।—গালাতীয় ৫:২৬.
প্রতিদ্বন্দ্বীদের অর্জনগুলোকে তুচ্ছ করার দ্বারা ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তিরা তাদের নিজেদের ক্ষুন্ন আত্মসম্মানকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়াগুলো হয়তো তুচ্ছ বলে মনে হতে পারে কিন্তু যদি শনাক্ত ও দমন করা না হয়, তা হলে সেগুলো বিদ্বেষপূর্ণ অন্যায় কাজ করার দিকে পরিচালিত করতে পারে। বাইবেলের দুটো ঘটনা বিবেচনা করুন, যেগুলোতে ঈর্ষা এক প্রধান কারণ ছিল।
পলেষ্টীয়দের মাঝে বাস করার সময়, ইস্হাক “মেষধন ও গোধন এবং অনেক দাস দাসী” দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন “আর পলেষ্টীয়েরা তাঁহার প্রতি ঈর্ষা করিতে লাগিল।” ইস্হাকের পিতা অব্রাহাম যে-কূপগুলো খনন করেছিলেন সেগুলোতে ধুলো ভরে বন্ধ করে দেওয়ার দ্বারা তারা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল এবং তাদের রাজা ইস্হাককে সেই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন। (আদিপুস্তক ২৬:১-৩, ১২-১৬) তাদের ঈর্ষা ছিল বিদ্বেষপূর্ণ এবং ধ্বংসাত্মক। তারা তাদের মাঝে ইস্হাকের সাফল্যের আনন্দকে কোনো মতেই আর সহ্য করতে পারেনি।
কয়েক শতাব্দী পর, দায়ূদ যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের জন্য সুনাম বয়ে এনেছিলেন। তার অসাধারণ সম্পাদনগুলো ইস্রায়েলের স্ত্রীলোকেদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল, যারা গেয়েছিল: “শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র, আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত।” যদিও শৌল কিছুটা প্রশংসা লাভ করেছিলেন, তবুও তিনি সেই তুলনাকে অবমাননাজনক বলে বিবেচনা করেছিলেন আর তার হৃদয়ে ঈর্ষা জেগে উঠেছিল। সেই সময় থেকে, তিনি দায়ূদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে শুরু করেছিলেন। শীঘ্রই তিনি দায়ূদকে হত্যা করার বিভিন্ন প্রচেষ্টার মধ্যে প্রথমটা গ্রহণ করেছিলেন। ঈর্ষা থেকে কী দুষ্টতাই না উদ্ভূত হতে পারে!—১ শমূয়েল ১৮:৬-১১.
তাই অন্যদের—অসাধারণ সম্পাদনগুলো অথবা সুযোগসুবিধার—সঙ্গে নিজেদের তুলনা করার সময় যদি ঈর্ষা অথবা প্রতিযোগিতার মতো অনুভূতি জেগে উঠে, তা হলে সাবধান হোন! এগুলো হল ক্ষতিকর অনুভূতি, ঈশ্বরের চিন্তাধারার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কিন্তু এই ধরনের মনোভাবকে কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা পরীক্ষা করার আগে, আসুন আমরা এমন কিছু বিবেচনা করি যা তুলনা করার মনোভাবকে জাগিয়ে তোলে।
আত্মমূল্যায়ন ও সন্তুষ্টি
‘আমি কি বুদ্ধিমান, আকর্ষণীয়, দক্ষ, স্বাস্থ্যবান, কর্তৃত্বপরায়ণ, প্রেমময়? কতটা?’ আমরা কদাচিৎ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এই ধরনের বিষয়গুলো জিজ্ঞেস করি। কিন্তু একজন লেখিকার মতানুসারে, “নিঃসন্দেহে, এই ধরনের প্রশ্নগুলো প্রায়ই আমাদের মনে আসে এবং নীরব উত্তরগুলো জোগায়, যেগুলো কমবেশি সন্তোষজনক হয়ে থাকে।” একজন ব্যক্তি যিনি নিশ্চিত নন যে, তিনি কী সম্পাদন করতে পারেন, তিনি হয়তো কোনোরকম
প্রতিযোগিতামূলক প্রবণতা অথবা ঈর্ষার অনুভূতি ছাড়াই এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। তিনি শুধুমাত্র নিজেকে মূল্যায়ন করে দেখছেন। মূলত এই ধরনের মূল্যায়ন করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। তবে, এটা করার সঠিক উপায় নিজেদেরকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা নয়।বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে, আমাদের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষমতা রয়েছে। সবসময়ই, কেউ না কেউ থাকবে যারা আমাদের চেয়ে আরও ভাল করছে বলে মনে হয়। তাই, তাদেরকে ঈর্ষার দৃষ্টিতে না দেখে বরং আমাদের সম্পাদনগুলোকে ঈশ্বরের ধার্মিক মানগুলোর সঙ্গে সংগতি রেখে তুলনা করা উচিত, যেগুলো নির্দেশনা জোগায় যে, কোনটা সঠিক ও উত্তম। ব্যক্তি হিসেবে আলাদা আলাদাভাবে আমরা কেমন সেটার প্রতি যিহোবা আগ্রহী। আমাদেরকে অন্য কারোর সঙ্গে তাঁর তুলনা করার দরকার নেই। প্রেরিত পৌল আমাদের উপদেশ দেন: “প্রত্যেক জন নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করুক, তাহা হইলে সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে, অপরের কাছে নয়।”—গালাতীয় ৬:৪.
ঈর্ষাকে দমন করা
যেহেতু সমস্ত মানুষই অসিদ্ধ, তাই ঈর্ষাকে দমন করার জন্য হয়তো প্রাণপণ ও ক্রমাগত প্রচেষ্টার দরকার হতে পারে। শাস্ত্র আমাদের যে বলে: “সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর,” তা জানা এক বিষয় কিন্তু সেটা করা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। পৌল পাপের প্রতি তার নিজস্ব প্রবণতাকে বুঝতে পেরেছিলেন। এটার সঙ্গে লড়াই করতে, তাকে ‘[তাহার] নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতে’ হয়েছিল। (রোমীয় ১২:১০; ১ করিন্থীয় ৯:২৭) আমাদের জন্য সেটার অর্থ হতে পারে প্রতিযোগিতামূলক চিন্তাধারাকে প্রতিরোধ করে, সেগুলোর জায়গায় গঠনমূলক চিন্তাধারা পোষণ করা। ‘[নিজেদের] বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, তদপেক্ষা বড় বোধ না করিতে’ আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য যিহোবার কাছে আমাদের প্রার্থনা করা দরকার।—রোমীয় ১২:৩.
এ ছাড়া, বাইবেল অধ্যয়ন ও ধ্যান করাও আমাদের সাহায্য করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ভবিষ্যৎ পরমদেশ সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর বিষয়ে চিন্তা করুন। সেই সময়ে সকলেরই শান্তি, উত্তম স্বাস্থ্য, প্রচুর খাদ্য, আরামদায়ক বাড়ি এবং সন্তোষজনক কাজ থাকবে। (গীতসংহিতা ৪৬:৮, ৯; ৭২:৭, ৮, ১৬; যিশাইয় ৬৫:২১-২৩) কারোর কি প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব দেখানোর প্রবণতা থাকবে? একদমই না। তা করার কোনো কারণই থাকবে না। এটা ঠিক যে, সেই সময়ে জীবন কেমন হবে সেই বিষয়ে যিহোবা বিস্তারিত কিছু জানাননি কিন্তু আমরা হয়তো যুক্তিযুক্তভাবে ধরে নিতে পারি যে, আমরা সকলেই সেই আগ্রহজনক কাজ ও দক্ষতাগুলোকে অনুধাবন করতে সক্ষম হব, যা আমাদের আকৃষ্ট করে। একজন হয়তো জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারেন, আরেক জন বস্ত্রে সুন্দর সুন্দর নকশা তৈরি করতে পারেন। কেন একজন অন্যজনকে ঈর্ষা করবে? আমাদের সহকর্মীদের কাজকর্ম আমাদেরকে উদ্দীপিত করবে, রোষের কারণ হবে না। এই ধরনের অনুভূতিগুলো অতীতের বিষয় হবে।
যদি আমরা সেইরকম জীবনের আশা করি, তা হলে আমাদের কি এখনই একইরকম মনোভাব গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত নয়? আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের চারপাশের এই জগতের বহু সমস্যা থেকে মুক্ত এক আধ্যাত্মিক পরমদেশ উপভোগ করছি। যেহেতু ঈশ্বরের নতুন জগতে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব থাকবে না, তাই প্রকৃতপক্ষে এখনই এটা এড়িয়ে চলার কারণ রয়েছে।
তা হলে, অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা কি ভুল? নাকি এমন সময় আছে, যখন তা করা হয়তো উপযুক্ত?
উপযুক্ত তুলনা
অনেক তুলনা তিক্ত অথবা হতাশাজনক প্রতিক্রিয়াগুলোর দিকে পরিচালিত করেছে কিন্তু সবসময়ই যে সেগুলো তেমনটা করে না। এই ব্যাপারে, প্রেরিত পৌলের উপদেশ লক্ষ করুন: “যাহারা বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা দ্বারা প্রতিজ্ঞা-সমূহের দায়াধিকারী, তাহাদের অনুকারী হও।” (ইব্রীয় ৬:১২) যিহোবার প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত সাক্ষিদের গুণগুলোকে গড়ে তোলার চেষ্টা করা ফলপ্রদ হতে পারে। এটা ঠিক যে, সেটার জন্য কিছু তুলনা করার দরকার হতে পারে। কিন্তু এটা আমাদেরকে, আমরা অনুকরণ করতে পারি এমন উদাহরণগুলো এবং যে-ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের উন্নতি করার প্রয়োজন, সেগুলো দেখতে সাহায্য করতে পারে।
যোনাথনের বিষয় বিবেচনা করুন। এক অর্থে, তার ঈর্ষা করার কারণ ছিল। ইস্রায়েলের রাজা শৌলের বড় ছেলে হিসেবে, যোনাথন হয়তো কখনও রাজা হওয়ার আশা করেছিলেন কিন্তু যিহোবা তার চেয়ে প্রায় ৩০ বছরের ছোট একজনকে অর্থাৎ যুবক দায়ূদকে বেছে নিয়েছিলেন। ঈর্ষা পুষে না রেখে, যোনাথন তার নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেখিয়ে এবং যিহোবার মনোনীত রাজা হিসেবে দায়ূদকে সমর্থন করে নিজের সুনাম এনেছিলেন। যোনাথন সত্যিই একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ছিলেন। (১ শমূয়েল ১৯:১-৪) তার পিতা, যিনি দায়ূদকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখেছিলেন, তার বিপরীতে যোনাথন উপলব্ধি করেছিলেন যে, বিষয়গুলোর পিছনে যিহোবার হাত রয়েছে এবং তিনি তাঁর ইচ্ছার বশীভূত হয়েছিলেন; “কেন আমাকে নয় কিন্তু দায়ূদকে বেছে নেওয়া হল?” এইরকম প্রশ্ন করে তিনি নিজেকে দায়ূদের সঙ্গে তুলনা করেননি।
সহখ্রিস্টানদের মধ্যে, আমাদের কখনও এমন ভেবে ভয় পাওয়া উচিত নয় যে, অন্যেরা আমাদের ছাড়িয়ে যেতে অথবা আমাদের স্থান নিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুপযুক্ত। পরিপক্ব খ্রিস্টানরা প্রতিযোগিতার দ্বারা নয় কিন্তু সহযোগিতা, একতা এবং প্রেমের দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়। সমাজবিজ্ঞানী ফ্রান্সচেসকো আলবিরোনি বলেন, ‘প্রেম হল ঈর্ষার প্রধান শত্রু। আমরা যদি কাউকে ভালবাসি, তা হলে আমরা তার জন্য যা মঙ্গল তা-ই চাইব আর তিনি যখন সফল ও সুখী হন, তখন আমরাও সুখী হই।’ তাই খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কোনো বিশেষ সুযোগের জন্য যদি কাউকে বাছাই করা হয়, তা হলে তাতে সন্তুষ্ট থাকা হবে প্রেমময়। যোনাথন সেইরকমই ছিলেন। তার মতো, আমরাও আশীর্বাদপ্রাপ্ত হব যদি আমরা সেই ব্যক্তিদের সমর্থন করি, যারা যিহোবার সংগঠনে দায়িত্বপূর্ণ পদগুলোতে বিশ্বস্ততার সঙ্গে সেবা করে চলেছে।
সহখ্রিস্টানদের দ্বারা স্থাপিত চমৎকার উদাহরণকে যথার্থভাবে প্রশংসা করা যেতে পারে। তাদের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক তুলনা আমাদেরকে তাদের গঠনমূলক বিশ্বাসকে অনুকরণ করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। (ইব্রীয় ১৩:৭) কিন্তু আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে অনুকরণ প্রতিযোগিতায় পরিণত হতে পারে। আমরা যদি মনে করি যে, কেউ আমাদেরকে অতিক্রম করে গিয়েছে যার প্রশংসা আমরা করি এবং আমরা যদি তার মর্যাদাহানি অথবা সমালোচনা করার চেষ্টা করি, তা হলে অনুকরণ ঈর্ষায় পরিণত হবে।
কোনো অসিদ্ধ মানুষই অনুকরণযোগ্য এক আদর্শ রাখতে পারে না। তাই শাস্ত্র বলে: “প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও।” এ ছাড়া, ‘খ্রীষ্ট তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।’ (ইফিষীয় ৫:১, ২; ১ পিতর ২:২১) যিহোবা ও যিশুর গুণগুলো—তাঁদের প্রেম, উষ্ণ অনুভূতি, সহমর্মিতা এবং নম্রতা—হল সেই গুণ, যেগুলো আমাদের অনুকরণ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা উচিত। তাঁদের গুণগুলোর, উদ্দেশ্যগুলোর এবং বিভিন্ন কাজ করার উপায়গুলোর সঙ্গে আমাদের নিজেদের তুলনা করার জন্য সময় করে নেওয়া উচিত। এই ধরনের তুলনা আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারে, নিশ্চিত নির্দেশনা, স্থিরতা এবং নিরাপত্তা জুগিয়ে পরিপক্ব খ্রিস্টান পুরুষ ও নারীদের আকারের পরিমাণ পর্যন্ত অগ্রসর হতে সাহায্য করতে পারে। (ইফিষীয় ৪:১৩) তাদের নিখুঁত উদাহরণকে অনুকরণ করতে আমাদের যথাসাধ্য করার জন্য আমরা যদি মনোনিবেশ করি, তা হলে নিশ্চিতভাবে আমরা সহমানবদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করার প্রবণতা দেখাব না।
[২৮, ২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
রাজা শৌল দায়ূদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
অল্পবয়স্ক দায়ূদকে যোনাথন কখনও একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখেননি