সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়কে রক্ষা করা

আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়কে রক্ষা করা

আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়কে রক্ষা করা

“সদাপ্রভু কহেন, তোমরাই আমার সাক্ষী।”—যিশাইয় ৪৩:১০.

১. কোন ধরনের লোকেদের যিহোবা তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেন?

 আপনি যখন কিংডম হলে থাকেন, তখন আপনার চারপাশে ভাল করে লক্ষ করুন। উপাসনার এই স্থানে আপনি কাদের দেখতে পান? আপনি হয়তো আন্তরিক যুবক-যুবতীদের দেখেন, যারা শাস্ত্রীয় প্রজ্ঞায় পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছে। (গীতসংহিতা ১৪৮:১২, ১৩) এ ছাড়া, আপনি হয়তো পরিবারের এমন মস্তকদের দেখবেন, যারা পারিবারিক জীবনকে নষ্ট করে দেয় এমন এক জগতের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বরকে খুশি করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সম্ভবত, আপনি প্রিয় বৃদ্ধ ভাইবোনদের দেখবেন, যারা বার্ধক্যের অসুস্থতাগুলো সত্ত্বেও অটলভাবে যিহোবার প্রতি তাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলছে। (হিতোপদেশ ১৬:৩১) সকলেই যিহোবাকে গভীরভাবে ভালবাসে। আর তিনি তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের জন্য তাদের আকর্ষণ করাকে উপযুক্ত বলে মনে করেছেন। “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে, কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না,” ঈশ্বরের পুত্র দৃঢ়ভাবে এই কথা বলে তা নিশ্চিত করেছিলেন।—যোহন ৬:৩৭, ৪৪, ৬৫.

২, ৩. খ্রিস্টীয় পরিচয় সম্বন্ধে এক দৃঢ় বোধশক্তি বজায় রাখা কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে?

আমরা কি এমন লোকেদের অংশী হতে পেরে আনন্দিত হব না, যাদের প্রতি যিহোবার অনুমোদন এবং আশীর্বাদ রয়েছে? তবে, ‘শেষ কালের বিষম সময়ে’ খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের পরিচয় সম্বন্ধে দৃঢ় বোধশক্তি বজায় রাখা এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। (২ তীমথিয় ৩:১) এটা বিশেষ করে সেই সমস্ত অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের বেলায় সত্য, যারা খ্রিস্টীয় পরিবারগুলোতে মানুষ হয়ে উঠছে। “যদিও আমি খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতাম,” এইরকম একজন তরুণ স্বীকার করে, “আমার কোনো স্পষ্ট আধ্যাত্মিক লক্ষ্য ছিল না আর খোলাখুলিভাবে বললে যিহোবাকে সেবা করার স্পষ্ট কোনো আকাঙ্ক্ষা ছিল না।”

যিহোবাকে সেবা করার অকপট আকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ সঙ্গীসাথিদের প্রচণ্ড চাপ, জাগতিক প্রভাব এবং পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলোর কারণে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়তে পারে। আমাদের ওপর যখন চাপ আসে, তখন এর ফলে ধীরে ধীরে আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয় হয়তো হারিয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আজকে জগতের অনেকেই নৈতিকতা সম্বন্ধে বাইবেলের মানগুলোকে আমাদের আধুনিক জগতের তুলনায় সেকেলে অথবা অবাস্তব হিসেবে দেখে থাকে। (১ পিতর ৪:৪) কেউ কেউ মনে করে যে, ঈশ্বর যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেভাবে উপাসনা করা গুরুত্বপূর্ণ নয়। (যোহন ৪:২৪) ইফিষীয়দের প্রতি পৌল তার চিঠিতে এমন এক জগতের বিষয়ে বলেছেন, যে-জগতের এক “আত্মা” অথবা প্রভাবশালী মনোভাব রয়েছে। (ইফিষীয় ২:২) সেই আত্মা যিহোবাকে জানে না এমন এক সমাজের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য লোকেদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।

৪. খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের স্পষ্ট পরিচয়কে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর যিশু কীভাবে জোর দিয়েছিলেন?

কিন্তু, যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাস হিসেবে আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদের যে-কারও জন্যই—যুবক হই অথবা বৃদ্ধ হই—খ্রিস্টীয় পরিচয় হারিয়ে ফেলা দুঃখজনক হবে। খ্রিস্টীয় পরিচয় সম্বন্ধে এক গঠনমূলক বোধশক্তি কেবল যিহোবার মান এবং আমাদের কাছ থেকে তিনি যা কিছু আশা করেন, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে। আর তা যুক্তিসংগত কারণ আমরা তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট হয়েছি। (আদিপুস্তক ১:২৬; মীখা ৬:৮) বাইবেল খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের স্পষ্ট পরিচয়কে বস্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেছে, যা পরলে সকলে দেখতে পায়। আমাদের সময় সম্বন্ধে যিশু সাবধান করেছিলেন: “দেখ, আমি চোরের ন্যায় আসিতেছি; ধন্য সেই ব্যক্তি, যে জাগিয়া থাকে, এবং আপন বস্ত্র রক্ষা করে, যেন সে উলঙ্গ হইয়া না বেড়ায়, এবং লোকে তাহার অপমান না দেখে।” * (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৫) আমরা আমাদের খ্রিস্টীয় গুণাবলি এবং আচরণের মানকে খুলে ফেলতে অথবা শয়তানের জগৎকে আমাদেরকে গঠন করতে দিতে চাই না। যদি দিই, তা হলে আমরা এই “বস্ত্র” হারিয়ে ফেলব। এইরকম অবস্থা শোচনীয় এবং লজ্জাজনক হবে।

৫, ৬. আধ্যাত্মিক স্থিরতা কেন অতি গুরুত্বপূর্ণ?

খ্রিস্টীয় পরিচয় সম্বন্ধে এক দৃঢ় বোধশক্তি একজন ব্যক্তি যেভাবে জীবনযাপন করেন, সেটার ওপর অনেক প্রভাব ফেলে। কীভাবে? যিহোবার একজন উপাসক যদি তার পরিচয় সম্বন্ধে স্পষ্ট বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেন, তা হলে তিনি হয়তো সুসংজ্ঞাত নির্দেশনা অথবা লক্ষ্য না থাকার ফলে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়তে পারেন। এই ধরনের দ্বিমনা অবস্থা সম্বন্ধে বাইবেল বার বার সতর্ক করে। “যে সন্দেহ করে,” শিষ্য যাকোব সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “সে বায়ুতাড়িত বিলোড়িত সমুদ্র-তরঙ্গের তুল্য। সেই ব্যক্তি যে প্রভুর নিকটে কিছু পাইবে, এমন বোধ না করুক; সে দ্বিমনা লোক, আপনার সকল পথে অস্থির।”—যাকোব ১:৬-৮; ইফিষীয় ৪:১৪; ইব্রীয় ১৩:৯.

কীভাবে আমরা আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়কে রক্ষা করতে পারি? পরাৎপরের উপাসক হওয়ার মহান সুযোগের প্রতি আমাদের সচেতনতাকে বাড়ানোর জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে? দয়া করে নিচের উপায়গুলো বিবেচনা করুন।

আপনার খ্রিস্টীয় পরিচয়কে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করুন

৭. কেন আমাদের পরীক্ষা করার জন্য যিহোবার কাছে মিনতি করা উপকারী?

যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে ক্রমাগত শক্তিশালী করুন। একজন খ্রিস্টানের সবচেয়ে মূল্যবান যে-সম্পদ রয়েছে, সেটা হল ঈশ্বরের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক। (গীতসংহিতা ২৫:১৪, NW; হিতোপদেশ ৩:৩২, বাংলা জুবিলী বাইবেল) আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয় নিয়ে যদি আমাদের মনে সন্দেহ দেখা দিতে শুরু করে, তা হলে এই সম্পর্কের গুণগত মান এবং গভীরতা নিয়ে ভাল করে পরীক্ষা করা উচিত। উপযুক্তভাবে গীতরচক মিনতি করেছিলেন: “সদাপ্রভু, আমার পরীক্ষা করিয়া প্রমাণ লও, আমার মর্ম্ম ও চিত্ত নির্ম্মল কর।” (গীতসংহিতা ২৬:২) এইরকম পরীক্ষা কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ আমরা আমাদের নিজেদের গভীর মনোভাব এবং অন্তরের প্রবণতাগুলো সম্বন্ধে নির্ভরযোগ্য বিচারক হতে পারি না। কেবল যিহোবাই আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্বকে—আমাদের মনোভাব, চিন্তাভাবনা এবং আবেগকে—বুঝতে সমর্থ আছেন।—যিরমিয় ১৭:৯, ১০.

৮. (ক) যিহোবার দ্বারা পরীক্ষিত হওয়া কীভাবে আমাদের উপকার করতে পারে? (খ) আপনি কীভাবে খ্রিস্টান হিসেবে উন্নতি করতে সাহায্য পেয়েছেন?

যিহোবাকে আমাদের পরীক্ষা করতে বলে আমরা তাঁকে তা করার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। তিনি হয়তো পরিস্থিতিগুলোকে এমনভাবে পরিচালিত করেন, যা আমাদের প্রকৃত মনোভাব এবং হৃদয়ের অবস্থা প্রকাশ করে। (ইব্রীয় ৪:১২, ১৩; যাকোব ১:২২-২৫) এই ধরনের পরীক্ষাগুলো আমাদের সাদরে গ্রহণ করা উচিত কারণ সেগুলো যিহোবার প্রতি আমাদের আনুগত্যের গভীরতা প্রকাশ করার সুযোগ করে দেয়। এগুলো দেখাতে পারে যে, আমরা “সিদ্ধ ও সম্পূর্ণ” কি না এবং আমাদের “কোন বিষয়ের অভাব” নাই। (যাকোব ১:২-৪) আর তা করার সময় আমরা আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে উঠতে পারি।—ইফিষীয় ৪:২২-২৪.

৯. বাইবেলের সত্য নিজে পরীক্ষা করা কি আমাদের জন্য কোনো ঐচ্ছিক বিষয়? ব্যাখ্যা করুন।

বাইবেলের সত্য নিজে পরীক্ষা করে দেখুন। যিহোবার একজন দাস হিসেবে আমাদের পরিচয়ের বোধশক্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, যদি না তা দৃঢ়ভাবে শাস্ত্রের জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে হয়। (ফিলিপীয় ১:৯, ১০) প্রত্যেক খ্রিস্টানের—যুবক অথবা বৃদ্ধ সকলের—নিজের সন্তুষ্টির জন্য প্রমাণ করে দেখতে হবে যে, তিনি যা বিশ্বাস করেন, তা বাস্তবিকই সেই সত্য যা বাইবেলে পাওয়া যায়। পৌল সহবিশ্বাসীদের কাছে বিনতি করেছিলেন: “সর্ব্ববিষয়ের পরীক্ষা কর; যাহা ভাল, তাহা ধরিয়া রাখ।” (১ থিষলনীকীয় ৫:২১) যে-অল্পবয়স্ক খ্রিস্টানরা ঈশ্বরভয়শীল পরিবারে রয়েছে, তাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, তারা তাদের বাবামার বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত খ্রিস্টান হতে পারে না। শলোমনের পিতা দায়ূদ তাকে ‘আপন পিতার ঈশ্বরকে জ্ঞাত হইবার, এবং একাগ্র অন্তঃকরণে তাঁহার সেবা করিবার’ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ বংশাবলি ২৮:৯) তার পিতা কীভাবে যিহোবার প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলেছিলেন, শুধু সেটা দেখাই অল্পবয়স্ক শলোমনের জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাকেও যিহোবাকে জানতে হতো এবং তিনি তা-ই করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের কাছে বিনতি করেছিলেন: “আমি যেন এই লোকদের সাক্ষাতে বাহিরে যাইতে ও ভিতরে আসিতে পারি, সে জন্য এখন আমাকে বুদ্ধি ও জ্ঞান দেও।”—২ বংশাবলি ১:১০.

১০. সঠিক মনোভাব নিয়ে অকপট প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা কেন ভুল কিছু নয়?

১০ দৃঢ় বিশ্বাস জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। ‘বিশ্বাস শ্রবণ হইতে হয়,’ পৌল বলেছিলেন। (রোমীয় ১০:১৭) এর দ্বারা তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? তিনি বুঝিয়েছিলেন যে, আমরা ঈশ্বরের বাক্য থেকে পুষ্টি লাভ করার দ্বারা যিহোবা, তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো ও তাঁর সংগঠনের ওপর আমাদের বিশ্বাস এবং আস্থা গড়ে তুলি। বাইবেল সম্বন্ধে অকপট প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা আশ্বাসদায়ক উত্তরগুলো পেতে সাহায্য করে। অধিকন্তু, রোমীয় ১২:২ পদে আমরা পৌলের এই উপদেশ পাই: ‘তোমরা পরীক্ষা করিয়া জান, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।’ কীভাবে আমরা তা করতে পারি? “সত্যের তত্ত্বজ্ঞান” বা সঠিক জ্ঞান লাভ করার মাধ্যমে। (তীত ১:১) যিহোবার আত্মা আমাদের এমনকি কঠিন বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করতে পারে। (১ করিন্থীয় ২:১১, ১২) কোনোকিছু বুঝতে অসুবিধা হলে যিহোবার সাহায্যের জন্য আমাদের প্রার্থনা করা উচিত। (গীতসংহিতা ১১৯:১০, ১১, ২৭) যিহোবা চান আমরা যেন তাঁর বাক্য বুঝি, তা বিশ্বাস করি এবং পালন করি। তিনি আমাদের সঠিক মনোভাব নিয়ে অকপট প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে আমন্ত্রণ জানান।

ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হোন

১১. (ক) কোন স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা আমাদের ফাঁদে ফেলতে পারে? (খ) সঙ্গীসাথিদের চাপকে প্রতিরোধ করার জন্য কীভাবে আমরা সাহস সঞ্চয় করতে পারি?

১১ মানুষকে নয় কিন্তু ঈশ্বরকে খুশি করার চেষ্টা করুন। কোনো একটা দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে আমাদের পরিচয় কিছুটা প্রতিষ্ঠা করা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। প্রত্যেকের বন্ধুবান্ধবের প্রয়োজন এবং গ্রহণযোগ্য হওয়ার মাধ্যমে আমরা সুখী ও নিরাপদ বোধ করি। কিশোর বয়সে—ও সেইসঙ্গে জীবনের পরবর্তী সময়ে—সঙ্গীসাথিদের চাপ জোরালো হতে পারে, যা অন্যদেরকে অনুকরণ অথবা খুশি করার প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। কিন্তু, বন্ধুবান্ধব এবং সঙ্গীসাথিরা সবসময় আমাদের মঙ্গলের জন্য চিন্তা করে না। মাঝে মাঝে তারা কেবল ভুল কাজ করার জন্য সঙ্গী চায়। (হিতোপদেশ ১:১১-১৯) একজন খ্রিস্টান যখন অবাঞ্চিত সঙ্গীসাথির চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন, তখন তিনি সাধারণত তার পরিচয়কে গুপ্ত রাখার চেষ্টা করেন। (গীতসংহিতা ২৬:৪) “এই জগতের লোকেদের মতো নিজেদের চলতে দিও না,” প্রেরিত পৌল সাবধান করে দিয়েছিলেন। (রোমীয় ১২:২, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) যিহোবা সেই প্রয়োজনীয় মনের শক্তি জোগান, যা আমাদের বাইরের যেকোনো চাপের উপযোগী হওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দরকার।—ইব্রীয় ১৩:৬.

১২. যখন ঈশ্বরের ওপর আমাদের নির্ভরতা জড়িত থাকে, তখন কোন নীতি এবং উদাহরণ আমাদেরকে বিশ্বাসে দৃঢ় থাকতে শক্তিশালী করতে পারে?

১২ বাইরের চাপগুলো যখন আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়ের অনুভূতিকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়, তখন মনে রাখা উচিত যে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্য, জনমত অথবা অধিকাংশ লোকেদের প্রবণতার চেয়ে আরও বহুগুণ গুরুত্বপূর্ণ। যাত্রাপুস্তক ২৩:২ পদের কথাগুলো নিরাপদ নীতি হিসেবে কাজ করে: “তুমি দুষ্কর্ম্ম করিতে বহু লোকের পশ্চাদ্বর্ত্তী হইও না।” অধিকাংশ সহইস্রায়েলীয় যখন যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করার বিষয়ে তাঁর ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল, তখন কালেব অধিকাংশ ব্যক্তিদের পশ্চাদ্‌গামী হওয়াকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো নির্ভরযোগ্য আর তার দৃঢ় অবস্থানের জন্য তিনি প্রচুররূপে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। (গণনাপুস্তক ১৩:৩০; যিহোশূয়ের পুস্তক ১৪:৬-১১) একইভাবে আপনিও কি জনপ্রিয় মতামতের চাপকে প্রতিরোধ করার জন্য ইচ্ছুক, যাতে ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে রক্ষা করতে পারেন?

১৩. খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের পরিচয় সম্বন্ধে জানানো কেন প্রজ্ঞার কাজ?

১৩ আপনার খ্রিস্টীয় পরিচয়কে জানতে দিন। সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা হল পদক্ষেপ নেওয়া, এই প্রবাদ আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়কে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সত্য। ইষ্রার দিনে বিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়রা যখন যিহোবার ইচ্ছা পালন করার বিষয়ে তাদের প্রচেষ্টার বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল, তখন তারা বলেছিল: “যিনি স্বর্গের ও পৃথিবীর ঈশ্বর, আমরা তাঁহারই দাস।” (ইষ্রা ৫:১১) আমরা যদি শত্রুভাবাপন্ন লোকেদের প্রতিক্রিয়া এবং সমালোচনার দ্বারা প্রভাবিত হই, তা হলে আমরা ভয়ে জর্জরিত হয়ে পড়তে পারি। প্রত্যেককে খুশি করার চেষ্টা করা আমাদের কার্যকারিতাকে দুর্বল করে দেবে। তাই, আতঙ্কিত হবেন না। সবসময় অন্যদেরকে স্পষ্টভাবে জানানো ভাল যে, আপনি যিহোবার একজন সাক্ষি। সম্মানিত উপায়ে কিন্তু দৃঢ়ভাবে আপনি অন্যদের কাছে খ্রিস্টান হিসেবে আপনার মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং আপনার অবস্থান সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে পারেন। অন্যদের জানতে দিন যে, আপনি নৈতিকতা সম্বন্ধীয় বিচার্য বিষয়গুলোতে যিহোবার উচ্চ নৈতিক মানগুলো বজায় রাখার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন। স্পষ্ট করে দিন যে, আপনার খ্রিস্টীয় নীতিনিষ্ঠা আপোশ করার মতো কোনো বিষয় নয়। দেখান যে, আপনার নৈতিক মানগুলোর জন্য আপনি গর্বিত। (গীতসংহিতা ৬৪:১০) একজন অটল খ্রিস্টান হিসেবে লক্ষণীয় হওয়া আপনাকে শক্তিশালী করতে, সুরক্ষা জোগাতে আর এমনকি অন্যদেরকে যিহোবা ও তাঁর লোকেদের সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে পরিচালিত করে।

১৪. উপহাস অথবা বিরোধিতার দ্বারা কি আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত? ব্যাখ্যা করুন।

১৪ হ্যাঁ, কেউ কেউ হয়তো আপনাকে উপহাস অথবা আপনার বিরোধিতা করতে পারে। (যিহূদা ১৮) আপনার মূল্যবোধ সম্বন্ধে অন্যদের কাছে ব্যাখ্যা করার ব্যাপারে আপনার প্রচেষ্টার প্রতি তারা যদি অনুকূলভাবে সাড়া না দেয়, তা হলে নিরুৎসাহিত হবেন না। (যিহিষ্কেল ৩:৭, ৮) আপনি যত দৃঢ়সংকল্পবদ্ধই হোন না কেন, আপনি কখনও সেই লোকেদের দৃঢ়প্রত্যয়ী করতে পারবেন না, যাদের দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। ফরৌণের কথা স্মরণ করে দেখুন। কোনো মহামারী অথবা অলৌকিক কাজ—এমনকি তার নিজের প্রথমজাত পুত্রকে হারানো—কোনোকিছুই ফরৌণকে এই বিষয়ে প্রত্যয়ী করতে পারেনি যে, মোশি আসলে যিহোবার পক্ষে কথা বলেছিলেন। তাই, নিজেকে লোকভয়ের দ্বারা জর্জরিত হতে দেবেন না। ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করা এবং বিশ্বাস রাখা আপনাকে ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে।—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬; হিতোপদেশ ২৯:২৫.

অতীত থেকে শিখুন, ভবিষ্যতের জন্য গড়ে উঠুন

১৫, ১৬. (ক) আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার কী? (খ) ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার নিয়ে চিন্তা করে কীভাবে আমরা উপকৃত হতে পারি?

১৫ আপনার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে অত্যন্ত মূল্যবান গণ্য করুন। ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে খ্রিস্টানরা তাদের মূল্যবান আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার সম্বন্ধে চিন্তা করে উপকৃত হবে। এই উত্তরাধিকারের অন্তর্ভুক্ত হল যিহোবার বাক্যের সত্য, অনন্তজীবনের আশা এবং সুসমাচারের ঘোষক হিসেবে ঈশ্বরকে প্রতিনিধিত্ব করার সম্মান। তাঁর সাক্ষিদের মধ্যে, বিশেষ সুযোগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দলের মধ্যে আপনি কি আপনার ব্যক্তিগত অবস্থান দেখতে পাচ্ছেন, যাদের জীবনরক্ষাকারী রাজ্য প্রচার কাজের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে? মনে রাখবেন যে, যিহোবাই দৃঢ়ভাবে বলেছেন: “তোমরাই আমার সাক্ষী।”—যিশাইয় ৪৩:১০.

১৬ আপনি নিজেকে এই ধরনের প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘এই আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার আমার কাছে কতটা মূল্যবান? ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করাকে আমার জীবনে সবচেয়ে প্রথমে রাখার জন্য আমি কি এটাকে যথাযথ মূল্যবান বলে গণ্য করি? এটার প্রতি আমার উপলব্ধি কি এমন যেকোনো প্রলোভন প্রতিরোধ করতে আমাকে শক্তিশালী করার জন্য যথেষ্ট দৃঢ়, যা হয়তো আমাকে এটা হারাতে পরিচালিত করতে পারে?’ এ ছাড়াও, আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার আমাদের মধ্যে আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা সম্বন্ধে গভীর অনুভূতি গেঁথে দিতে পারে, যা কেবল যিহোবার সংগঠনের মধ্যে উপভোগ করা যেতে পারে। (গীতসংহিতা ৯১:১, ২) যিহোবার সংগঠনের আধুনিক ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো পুনরালোচনা করা আমাদের ওপর এই ছাপ ফেলতে পারে যে, কোনো ব্যক্তি বা বিষয় যিহোবার লোকেদেরকে পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণরূপে দূর করতে পারে না।—যিশাইয় ৫৪:১৭; যিরমিয় ১:১৯.

১৭. কেবল আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের ওপর নির্ভর করা ছাড়া আরও কীসের প্রয়োজন?

১৭ অবশ্য, আমরা কেবল আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের ওপর নির্ভর করতে পারি না। আমাদের প্রত্যেককে যিহোবার সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। ফিলিপীর খ্রিস্টানদের বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করার পর পৌল তাদেরকে লিখেছিলেন: “হে আমার প্রিয়তমেরা, তোমরা সর্ব্বদা যেমন আজ্ঞাবহ হইয়া আসিতেছ, তেমনি আমার সাক্ষাতে যেরূপ কেবল সেইরূপ নয়, বরং এখন আরও অধিকতররূপে আমার অসাক্ষাতে, সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন কর।” (ফিলিপীয় ২:১২) আমাদের পরিত্রাণের জন্য আমরা অন্য কারও ওপর নির্ভর করতে পারি না।

১৮. খ্রিস্টীয় কাজকর্ম কীভাবে আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়ের বোধশক্তিকে বাড়াতে পারে?

১৮ খ্রিস্টীয় কাজকর্মে নিয়োজিত থাকুন। কথিত আছে যে, “কাজ ব্যক্তিগত পরিচয়কে গঠন করে থাকে।” আজকে খ্রিস্টানদের ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের সুসমাচার প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পৌল ঘোষণা করেছিলেন: “পরজাতীয়দের জন্য প্রেরিত বলিয়া আমি নিজ পরিচর্য্যা-পদের গৌরব করিতেছি।” (রোমীয় ১১:১৩) আমাদের প্রচার কাজ আমাদেরকে জগৎ থেকে পৃথক করে এবং এতে আমাদের অংশগ্রহণ আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়কে আরও বাড়িয়ে দেয়। অন্যান্য ঈশতান্ত্রিক কাজে যেমন খ্রিস্টীয় সভা, উপাসনার স্থানগুলো নির্মাণ করার কার্যক্রম, অভাব রয়েছে এমন ব্যক্তিদের সাহায্য করার প্রচেষ্টা এবং এইরকম আরও অন্যান্য কিছুতে নিজেদের নিয়োজিত রাখা খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের পরিচয়ের বোধশক্তিকে গভীর করে।—গালাতীয় ৬:৯, ১০; ইব্রীয় ১০:২৩, ২৪.

স্পষ্ট পরিচয়, বাস্তব আশীর্বাদ

১৯, ২০. (ক) একজন খ্রিস্টান হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে আপনি কোন উপকারগুলো পেয়েছেন? (খ) কী আমাদের প্রকৃত পরিচয়ের ভিত্তি জোগায়?

১৯ সত্য খ্রিস্টান হওয়ায় আমরা যে-প্রচুর আশীর্বাদ ও সুবিধাগুলো উপভোগ করছি, সেগুলো একটু সময় নিয়ে বিবেচনা করুন। ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার দ্বারা স্বীকৃতি লাভ করার বিশেষ সুযোগ আমাদের রয়েছে। ভাববাদী মালাখি বলেছিলেন: “যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, তাহারা পরস্পর আলাপ করিল, এবং সদাপ্রভু কর্ণপাত করিয়া শুনিলেন; আর যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, ও তাঁহার নাম ধ্যান করিত, তাহাদের জন্য তাঁহার সম্মুখে একখানি স্মরণার্থক পুস্তক লেখা হইল।” (মালাখি ৩:১৬) ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর বন্ধু হিসেবে দেখতে পারেন। (যাকোব ২:২৩) আমাদের জীবন স্পষ্ট উদ্দেশ্য, গভীর অর্থ এবং গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ লক্ষ্যগুলোর দ্বারা বিভূষিত হতে পারে। আর আমাদের অনন্ত ভবিষ্যতের আশা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছে।—গীতসংহিতা ৩৭:৯.

২০ মনে রাখবেন যে, আপনার প্রকৃত পরিচয় এবং মূল্য, আপনার যোগ্যতা সম্বন্ধে ঈশ্বরের মূল্যায়নের দ্বারা নির্ধারিত হয়, অন্যেরা আপনার সম্বন্ধে কী চিন্তা করে সেটার দ্বারা নয়। অন্যেরা হয়তো মানুষের অপর্যাপ্ত মানগুলোর দ্বারা আমাদের মূল্যায়ন করতে পারে। কিন্তু ঈশ্বরের প্রেম এবং ব্যক্তিগত আগ্রহ আমাদের যোগ্যতার এই প্রকৃত ভিত্তি জোগায় যে, আমরা তাঁর। (মথি ১০:২৯-৩১) এর ফলে, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নিজেদের ভালবাসা আমাদের পরিচয় সম্বন্ধে মহান বোধশক্তি এবং আমাদের জীবনে সবচেয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা জোগায়। “যদি কেহ ঈশ্বরকে প্রেম করে, সেই তাঁহার জানা লোক।”—১ করিন্থীয় ৮:৩.

[পাদটীকা]

^ এই কথাগুলো হয়তো পরোক্ষভাবে যিরূশালেম মন্দিরের অধ্যক্ষের দায়িত্বকে বোঝায়। রাত্রি প্রহরে তিনি মন্দিরের মধ্যে ঘুরে দেখতেন যে, লেবীয় রক্ষীরা তাদের নিজ নিজ অবস্থানে জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে পড়েছে। কোনো রক্ষীকে যদি ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যেত, তা হলে তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হতো এবং লজ্জাজনক শাস্তি হিসেবে হয়তো তার বস্ত্র পুড়িয়ে ফেলা হতো।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• খ্রিস্টানদের জন্য তাদের আধ্যাত্মিক পরিচয়কে রক্ষা করা কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?

• আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়কে কীভাবে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি?

• কাকে খুশি করব, সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হলে কোন বিষয়গুলো আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে?

• কীভাবে খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের পরিচয় সম্বন্ধে দৃঢ় বোধশক্তি আমাদের ভবিষ্যৎকে গঠন করতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রিস্টীয় কাজকর্মে নিয়োজিত থাকা আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়কে বাড়িয়ে তোলে