সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রিস্টানরা—আপনাদের পরিচয় সম্বন্ধে গর্বিত হোন!

খ্রিস্টানরা—আপনাদের পরিচয় সম্বন্ধে গর্বিত হোন!

খ্রিস্টানরা—আপনাদের পরিচয় সম্বন্ধে গর্বিত হোন!

“যে ব্যক্তি শ্লাঘা করে, সে প্রভুতেই [“যিহোবাতেই,” NW] শ্লাঘা করুক।”—১ করিন্থীয় ১:৩১.

১. ধর্মের প্রতি লোকেদের মনোভাবের মধ্যে কোন প্রবণতা স্পষ্ট দেখা যায়?

 “উদাসীনতা।” অনেক লোক নিজেদের বিশ্বাসের প্রতি যে-মনোভাব পোষণ করে, তা ব্যাখ্যা করার জন্য সম্প্রতি ধর্ম বিষয়ক একজন ভাষ্যকার এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আধুনিক ধর্মে যে-বিষয়টা সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি লাভ করেছে, তা আদৌ কোনো ধর্ম নয়—এটা হল এমন এক মনোভাব, যেটাকে উপযুক্তভাবেই ‘উদাসীনতা’ বলে বর্ণনা করা যায়।” একটু বিশদভাবে বর্ণনা করে, তিনি উদাসীনতাকে “নিজের ধর্ম সম্বন্ধে একজন ব্যক্তির যথেষ্ট চিন্তা করার প্রতি অনিচ্ছা” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। অনেক লোক, “ঈশ্বরে বিশ্বাস করে . . . ; তবে তারা তাঁর সম্বন্ধে মোটেও চিন্তিত নয়” তিনি বলেন।

২. (ক) কেন এটা অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয় যে, লোকেরা আধ্যাত্মিকভাবে উদাসীন হয়ে পড়েছে? (খ) উদাসীনতা সত্য খ্রিস্টানদের জন্য কোন বিপদ নিয়ে আসে?

উদাসীনতার প্রতি এই প্রবণতা বাইবেল ছাত্রদের অবাক করে না। (লূক ১৮:৮) আর সাধারণত ধর্মের বিষয়ে এই ধরনের অনাগ্রহ আশা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা ধর্ম মানবজাতিকে ভুল পথে পরিচালিত এবং হতাশ করেছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৫, ১৬) কিন্তু, চারিদিকে ছেয়ে থাকা নিরুৎসাহিতার মনোভাব এবং উদ্যোগের অভাব আন্তরিক খ্রিস্টানদের জন্য এক বিপদ নিয়ে আসে। আমরা কখনোই আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে উদাসীন হওয়ার ঝুঁকি নিতে এবং ঈশ্বরকে সেবা করার ও বাইবেলের সত্যের বিষয়ে আমাদের উদ্যোগকে হারাতে চাই না। যিশু এই ধরনের কদুষ্ণ অবস্থার বিষয়ে সাবধান করেছিলেন, যখন তিনি প্রথম শতাব্দীতে লায়দিকেয়ায় বসবাসরত খ্রিস্টানদের এই বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “তুমি না শীতল না তপ্ত; তুমি হয় শীতল হইলে, নয় তপ্ত হইলে ভাল হইত। . . . তুমি কদুষ্ণ।”—প্রকাশিত বাক্য ৩:১৫-১৮.

আমরা কে, তা বোঝা

৩. খ্রিস্টানরা তাদের পরিচয়ের কোন দিকগুলোর জন্য গর্ববোধ করতে পারে?

আধ্যাত্মিক উদাসীনতার সঙ্গে লড়াই করার জন্য খ্রিস্টানদের এই বিষয়ে স্পষ্ট বোধগম্যতা থাকতে হবে যে, তারা কারা আর তাদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের জন্য তাদের অবশ্যই উপযুক্ত গর্ববোধ করতে হবে। যিহোবার দাস এবং খ্রিস্টের শিষ্য হিসেবে আমরা বাইবেলের বর্ণনার মধ্যে খুঁজে পেতে পারি যে, আমরা কারা। আমরা হলাম যিহোবার “সাক্ষী,” “ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী,” কারণ আমরা সক্রিয়ভাবে অন্যদেরকে “সুসমাচার” জানাই। (যিশাইয় ৪৩:১০; ১ করিন্থীয় ৩:৯; মথি ২৪:১৪) আমরা এমন লোক, যারা “পরস্পর প্রেম” করি। (যোহন ১৩:৩৪) সত্য খ্রিস্টানরা এমন ব্যক্তি, যাদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু হইয়াছে।” (ইব্রীয় ৫:১৪) আমরা হলাম ‘জগতে জ্যোতির্গণ।’ (ফিলিপীয় ২:১৫) আমরা ‘পরজাতীয়দের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখিবার’ জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি।—১ পিতর ২:১২; ২ পিতর ৩:১১, ১৪.

৪. কীভাবে যিহোবার একজন উপাসক নির্ধারণ করতে পারেন যে, তিনি কী নন?

যিহোবার সত্য উপাসকরা এও জানে যে, তারা কী নয়। “তাহারা জগতের নয়,” ঠিক যেমন তাদের নেতা যিশু খ্রিস্ট জগতের ছিলেন না। (যোহন ১৭:১৬) তারা “পরজাতীয়দের” থেকে পৃথক থাকে, যারা “চিত্তে অন্ধীভূত, ঈশ্বরের জীবনের বহির্ভূত হইয়াছে।” (ইফিষীয় ৪:১৭, ১৮) এর ফলে, যিশুর অনুসারীরা “ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন” করে।—তীত ২:১২.

৫. ‘যিহোবাতে শ্লাঘা করিবার’ পরামর্শের দ্বারা কী বোঝায়?

নিজেদের পরিচয় সম্বন্ধে আমাদের স্পষ্ট বোধগম্যতা এবং নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম শাসকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কই আমাদের ‘যিহোবাতে শ্লাঘা করিতে’ প্রেরণা জোগায়। (১ করিন্থীয় ১:৩১) সেটা কী ধরনের শ্লাঘা? সত্য খ্রিস্টান হিসেবে, যিহোবাকে আমাদের ঈশ্বর হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত। আমরা এই পরামর্শ মেনে চলি: “যে ব্যক্তি শ্লাঘা করে, সে এই বিষয়ের শ্লাঘা করুক যে, সে বুঝিতে পারে ও আমার এই পরিচয় পাইয়াছে যে, আমি সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] পৃথিবীতে দয়া, বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করি।” (যিরমিয় ৯:২৪) আমরা ঈশ্বরকে জানার এবং অন্যদের সাহায্য করার জন্য তাঁর দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার বিশেষ সুযোগের জন্য “শ্লাঘা” করি।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা

৬. কেন কেউ কেউ খ্রিস্টান হিসেবে তাদের পরিচয়ের প্রতি স্পষ্ট উপলব্ধি বজায় রাখাকে কঠিন বলে মনে করে?

এটা স্বীকার করতেই হবে যে, খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের প্রতি আমাদের গভীর উপলব্ধি বজায় রাখা সবসময় সহজ নয়। খ্রিস্টান পরিবারে মানুষ হয়েছে এমন একজন যুবক স্মরণ করে বলেছিল যে, কিছু সময়ের জন্য সে আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল: “কখনও কখনও আমার মনে হতো যে, কেন আমি যিহোবার সাক্ষি তা জানতাম না। ছোটবেলা থেকেই আমি সত্যের মধ্যে বড় হয়ে উঠেছি। মাঝে মাঝে আমার মনে হতো যে, এটা কেবল অন্য আরেকটা প্রতিষ্ঠিত, গ্রহণযোগ্য ধর্ম।” অন্যেরা হয়তো বিনোদন জগৎ, প্রচারমাধ্যম এবং জীবন সম্বন্ধে চলতি ঈশ্বরভক্তিহীন দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা নিজেদের প্রভাবিত হতে দেয়। (ইফিষীয় ২:২, ৩) কিছু খ্রিস্টান হয়তো মাঝেমধ্যে আত্মসন্দেহে ভোগে এবং তাদের মূল্যবোধ ও লক্ষ্যগুলো নিয়ে পুনর্বিবেচনা করে থাকে।

৭. (ক) ঈশ্বরের দাসদের জন্য কোন ধরনের আত্মপরীক্ষা করা উপযুক্ত? (খ) কোথায় বিপদ লুকিয়ে রয়েছে?

কিছুটা সতর্ক আত্মপরীক্ষা করা কি একেবারেই ভুল? না। আপনার হয়তো মনে আছে যে, প্রেরিত পৌল এই বলে খ্রিস্টানদের আত্মপরীক্ষা করে চলার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন: “আপনাদের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না; প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর।” (২ করিন্থীয় ১৩:৫) প্রেরিত এখানে আমাদের মধ্যে হয়তো গড়ে উঠেছে এমন যেকোনো আধ্যাত্মিক দুর্বলতাকে সংশোধন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে, সেটাকে চিহ্নিত করার জন্য গঠনমূলক প্রচেষ্টা করতে উৎসাহিত করছিলেন। একজন খ্রিস্টান বিশ্বাসে আছেন কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য তাকে নির্ধারণ করতে হবে যে, তার কথা এবং কাজ তার প্রকাশিত বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে কি না। কিন্তু, যদি ভুলভাবে করা হয়, তা হলে যে-আত্মপরীক্ষা আমাদের “পরিচয়” খুঁজতে অথবা যিহোবা কিংবা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বাইরে উত্তরগুলো অনুসন্ধান করতে আমাদের প্রণোদিত করে, তা অর্থহীন প্রমাণিত হবে আর আধ্যাত্মিকভাবে মারাত্মকও হতে পারে। * আমরা কখনও ‘আমাদের বিশ্বাসরূপ নৌকা ভগ্ন’ হতে দিতে চাইব না।—১ তীমথিয় ১:১৯.

আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো থেকে মুক্ত নই

৮, ৯. (ক) কীভাবে মোশি আত্মসন্দেহের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন? (খ) মোশির আপত্তির প্রতি যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? (গ) যিহোবার আশ্বাসবাণীগুলো আপনার ওপর কেমন প্রভাব ফেলে?

মাঝেমধ্যে আত্মসন্দেহ করে থাকে এমন খ্রিস্টানদের কি এইরকম মনে করা উচিত যে, তারা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে? অবশ্যই না! বাস্তবিকপক্ষে, তারা এটা জেনে সান্ত্বনা পেতে পারে যে, এই ধরনের অনুভূতি নতুন নয়। অতীতে, ঈশ্বরের বিশ্বস্ত সাক্ষিদেরও মাঝে মাঝে এইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, মোশির কথা বিবেচনা করুন, যিনি অসাধারণ বিশ্বাস, আনুগত্য এবং ভক্তি দেখিয়েছিলেন। আপাতদৃষ্টিতে অনেক বড় একটা কাজের জন্য যখন তাকে নিযুক্ত করা হয়েছিল, তখন মোশি সংশয় নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন “আমি কে?” (যাত্রাপুস্তক ৩:১১) স্পষ্টতই তার মনে যে-প্রশ্ন ছিল সেটা হল, ‘আমি অত গুরুত্বপূর্ণ কেউ নই!’ অথবা ‘আমি অক্ষম!’ মোশির পটভূমির বেশ কয়েকটা দিক হয়তো তাকে অযোগ্য বলে মনে করিয়েছিল: তিনি এমন এক জাতি থেকে এসেছিলেন, যারা ক্রীতদাস ছিল। ইস্রায়েলীয়রা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তিনি বাক্‌পটু বক্তা ছিলেন না। (যাত্রাপুস্তক ১:১৩, ১৪; ২:১১-১৪; ৪:১০) তিনি ছিলেন একজন মেষপালক, যে-পেশা মিশরীয়দের কাছে ঘৃণ্য ছিল। (আদিপুস্তক ৪৬:৩৪) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ক্রীতদাসে পরিণত ঈশ্বরের লোকেদের মুক্তিদাতা হওয়ার বিষয়ে তিনি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করেছিলেন!

মোশির কাছে যিহোবা দুটো শক্তিশালী প্রতিজ্ঞা করার মাধ্যমে তাকে এই বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন: “নিশ্চয় আমি তোমার সহবর্ত্তী হইব; এবং আমি যে তোমাকে প্রেরণ করিলাম, তোমার পক্ষে তাহার এই চিহ্ন হইবে; তুমি মিসর হইতে লোকসমূহকে বাহির করিয়া আনিলে পর তোমরা এই পর্ব্বতে ঈশ্বরের সেবা করিবে।” (যাত্রাপুস্তক ৩:১২) ঈশ্বর তাঁর দ্বিধাগ্রস্ত দাসকে বলছিলেন যে, তিনি সবসময় তাঁর সঙ্গে থাকবেন। এ ছাড়া, যিহোবা ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন যে, তিনি তাঁর লোকেদের উদ্ধার করবেনই করবেন। শত শত বছর ধরে তিনি সমর্থনের একইরকম প্রতিজ্ঞা করে এসেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইস্রায়েলীয়রা যখন প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল, তখন মোশির মাধ্যমে তিনি সেই জাতিকে বলেছিলেন: “তোমরা বলবান হও ও সাহস কর, . . . তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনি তোমার সহিত যাইতেছেন, তিনি তোমাকে ছাড়িবেন না, তোমাকে ত্যাগ করিবেন না।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:৬) এ ছাড়া, যিহোবা যিহোশূয়কে আশ্বাস দিয়েছিলেন: “তোমার সমস্ত জীবনকালে কেহ তোমার সম্মুখে দাঁড়াইতে পারিবে না; আমি . . . তোমার সহবর্ত্তী থাকিব; আমি তোমাকে ছাড়িব না, তোমাকে ত্যাগ করিব না।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৫) আর খ্রিস্টানদের কাছে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন: “আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।” (ইব্রীয় ১৩:৫) এই ধরনের দৃঢ় সমর্থন থাকার ফলে আমাদের খ্রিস্টান হিসেবে গর্বিত হওয়া উচিত!

১০, ১১. লেবীয় আসফ কীভাবে যিহোবার প্রতি তার সেবার মূল্য সম্বন্ধে সংশোধিত মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য পেয়েছিলেন?

১০ মোশির প্রায় ৫০০ বছর পরে, আসফ নামে একজন বিশ্বস্ত লেবীয় ন্যায়নিষ্ঠ পথ অনুধাবন করার মূল্য সম্বন্ধে তার সন্দেহের কথা অকপটভাবে লিখেছিলেন। পরীক্ষা এবং প্রলোভন সত্ত্বেও যিহোবাকে সেবা করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করার সময় তিনি এমন কিছু ব্যক্তিকে দিন দিন শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধশালী হতে দেখেছিলেন, যারা ঈশ্বরকে উপহাস করেছিল। আসফের ওপর এটা কেমন প্রভাব ফেলেছিল? “আমার চরণ প্রায় টলিয়াছিল,” তিনি স্বীকার করেছিলেন। “আমার পাদবিক্ষেপ প্রায় স্খলিত হইয়াছিল। কারণ যখন দুষ্টদের কল্যাণ দেখিয়াছিলাম, তখন গর্ব্বিতদের প্রতি ঈর্ষা করিয়াছিলাম।” তিনি যিহোবার একজন উপাসক হওয়ার মূল্য নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন। “নিশ্চয় আমি বৃথাই চিত্ত পরিষ্কার করিয়াছি, নির্দ্দোষতায় হস্ত প্রক্ষালন করিয়াছি,” আসফ মনে করেছিলেন। “কেননা আমি সমস্ত দিন আহত হইয়াছি।”—গীতসংহিতা ৭৩:২, ৩, ১৩, ১৪.

১১ এই ধরনের অস্থির আবেগের সঙ্গে আসফ কীভাবে মোকাবিলা করেছিলেন? তিনি কি সেগুলো অস্বীকার করেছিলেন? না। তিনি প্রার্থনায় ঈশ্বরের কাছে তা জানিয়েছিলেন, যা আমরা ৭৩ গীতে দেখতে পাই। আসফের জন্য এক সন্ধিক্ষণ ছিল মন্দিরের পবিত্রস্থানে যাওয়া। সেখানে গিয়ে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি এখনও সবচেয়ে উত্তম কাজ। আধ্যাত্মিক উপলব্ধিবোধকে পুনরুজ্জীবিত করে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা মন্দতাকে ঘৃণা করেন এবং যথাসময়ে দুষ্টদের শাস্তি দেওয়া হবে। (গীতসংহিতা ৭৩:১৭-১৯) সেই মনোভাব নিয়ে আসফ যিহোবার সম্মানিত দাস হিসেবে তার পরিচয়বোধকে শক্তিশালী করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে বলেছিলেন: “আমি নিরন্তর তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি; তুমি আমার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া রাখিয়াছ। তুমি নিজ মন্ত্রণায় আমাকে গমন করাইবে, শেষে সপ্রতাপে আমাকে গ্রহণ করিবে।” (গীতসংহিতা ৭৩:২৩, ২৪) আসফ পুনরায় তাঁর ঈশ্বরকে নিয়ে গর্ববোধ করেছিলেন।—গীতসংহিতা ৩৪:২.

পরিচয় সম্বন্ধে তাদের দৃঢ় বোধশক্তি ছিল

১২, ১৩. বাইবেলের সেই চরিত্রগুলোর উদাহরণ দিন, যারা যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের জন্য গর্ববোধ করেছিল।

১২ আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়বোধকে শক্তিশালী করার একটা উপায় হল, সেই সমস্ত অনুগত উপাসকদের বিশ্বাস পরীক্ষা এবং তা অনুকরণ করা, যারা দুর্দশা সত্ত্বেও ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের জন্য প্রকৃত গর্ববোধ করেছিল। যাকোবের ছেলে যোষেফের কথা বিবেচনা করুন। অল্পবয়সেই তাকে প্রতারণা করে দাস হিসেবে বিক্রি করে মিশরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যা ছিল তার ঈশ্বরভয়শীল পিতার কাছ থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে ও তার বাড়ির উষ্ণ এবং সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ থেকে ভিন্ন এক জগৎ। মিশরে থাকাকালীন এমন কোনো ব্যক্তি ছিল না, যার কাছে যোষেফ ঈশ্বরীয় উপদেশ পেতে পারেন আর তাকে এমন কঠিন পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যা তার নৈতিকতা এবং ঈশ্বরের ওপর নির্ভরতাকে পরীক্ষায় ফেলেছিল। কিন্তু, তিনি স্পষ্টতই ঈশ্বরের একজন দাস হিসেবে তার পরিচয় সম্বন্ধে দৃঢ় বোধশক্তি বজায় রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছিলেন এবং তিনি যেটাকে সঠিক বলে জানতেন সেটার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। এমনকি শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশের মধ্যেও তিনি যিহোবার একজন উপাসক হতে পেরে গর্বিত ছিলেন আর তিনি যা মনে করতেন, তা প্রকাশ করতে লজ্জিত হননি।—আদিপুস্তক ৩৯:৭-১০.

১৩ আটশো বছর পরে, একজন বন্দি ইস্রায়েলীয় মেয়ে, যে অরামীয় সেনাপতি নামানের দাসী হয়েছিল, সে যিহোবার একজন উপাসক হিসেবে তার পরিচয় সম্বন্ধে ভুলে যায়নি। যখন সুযোগ এসেছিল, তখন সে সাহসের সঙ্গে যিহোবা সম্বন্ধে উত্তম সাক্ষ্য দিয়েছিল যে-সময়ে সে ইলীশায়কে সত্য ঈশ্বরের একজন ভাববাদী হিসেবে শনাক্ত করেছিল। (২ রাজাবলি ৫:১-১৯) এর কয়েক বছর পরে অল্পবয়স্ক রাজা যোশিয় কলুষিত পরিবেশের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘস্থায়ী ধর্মীয় সংস্কার সম্পন্ন করেছিলেন, ঈশ্বরের মন্দির মেরামত করেছিলেন এবং জাতিকে যিহোবার পথে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তার বিশ্বাস এবং উপাসনা নিয়ে গর্ববোধ করেছিলেন। (২ বংশাবলি ৩৪, ৩৫ অধ্যায়) বাবিলে দানিয়েল এবং তার তিন জন ইব্রীয় বন্ধু কখনও যিহোবার দাস হিসেবে তাদের পরিচয় ভুলে যায়নি এবং এমনকি চাপ ও প্রলোভনের মুখেও তারা তাদের আনুগত্য বজায় রেখেছিল। স্পষ্টতই, তারা যিহোবার দাস হওয়ায় গর্বিত ছিল।—দানিয়েল ১:৮-২০.

আপনার পরিচয় সম্বন্ধে গর্বিত হোন

১৪, ১৫. আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয় নিয়ে গর্ববোধ করার সঙ্গে কী জড়িত?

১৪ ঈশ্বরের এই দাসেরা সফল হয়েছিল কারণ তারা ঈশ্বরের সামনে তাদের অবস্থান সম্বন্ধে গঠনমূলক গর্ববোধ গড়ে তুলেছিল। আজকে আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমাদের খ্রিস্টান পরিচয় নিয়ে গর্ববোধ করার সঙ্গে কী জড়িত?

১৫ প্রথমত, এটা যিহোবার নামের লোকেদের মধ্যে একজন হওয়া এবং তাঁর আশীর্বাদ ও অনুমোদন লাভ করার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। কারা তাঁর বা তাঁর পক্ষে রয়েছে সেই সম্বন্ধে ঈশ্বরের কোনো সন্দেহ নেই। প্রেরিত পৌল, যিনি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় দ্বন্দ্বের এক যুগে বাস করতেন, তিনি লিখেছিলেন: “প্রভু [“যিহোবা,” NW] জানেন, কে কে তাঁহার।” (২ তীমথিয় ২:১৯; গণনাপুস্তক ১৬:৫) যিহোবা সেই ব্যক্তিদের নিয়ে গর্ববোধ করেন, যারা “তাঁহার।” তিনি ঘোষণা করেন, “যে ব্যক্তি তোমাদিগকে স্পর্শ করে, সে তাঁহার চক্ষুর তারা স্পর্শ করে।” (সখরিয় ২:৮) স্পষ্টতই, যিহোবা আমাদের ভালবাসেন। বিনিময়ে, তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাঁর প্রতি গভীর প্রেমের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। পৌল বলেছিলেন: “যদি কেহ ঈশ্বরকে প্রেম করে, সেই তাঁহার জানা লোক।”—১ করিন্থীয় ৮:৩.

১৬, ১৭. যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সমস্ত খ্রিস্টান কেন তাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের জন্য গর্ববোধ করতে পারে?

১৬ যে-যুবক-যুবতীরা যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বড় হয়ে উঠছে, তাদের খ্রিস্টীয় পরিচয় ঈশ্বরের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে আরও দৃঢ় হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করা উচিত। তারা কেবল তাদের বাবামার বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করতে পারে না। ঈশ্বরের প্রত্যেক দাস সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “নিজ প্রভুরই নিকটে হয় সে স্থির থাকে, নয় পতিত হয়।” তাই, পৌল বলে চলেন, “আমাদের প্রত্যেক জনকে ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে।” (রোমীয় ১৪:৪, ১২) স্পষ্টতই, পারিবারিকভাবে চলতে থাকা নিরুৎসাহিতা যিহোবার সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক রজায় রাখতে পারে না।

১৭ ইতিহাস জুড়ে যিহোবার অনেক সাক্ষি রয়েছে। এটা বিশ্বস্ত ব্যক্তি হেবল থেকে শুরু করে—প্রায় ৬,০০০ বছর আগে থেকে—আধুনিক সাক্ষিদের “বিস্তর লোক” এবং যিহোবার আরও অসংখ্য উপাসক পর্যন্ত বিস্তৃত, যারা অনন্ত ভবিষ্যৎ উপভোগ করবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; ইব্রীয় ১১:৪) বিশ্বস্ত উপাসকদের এই দীর্ঘ সারির মধ্যে আমরা হলাম সবেচেয়ে আধুনিক। কত অপূর্ব আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারই না আমাদের রয়েছে!

১৮. আমাদের মূল্যবোধ এবং মানগুলো কীভাবে আমাদের জগৎ থেকে পৃথক রাখে?

১৮ এ ছাড়া, আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়ের অন্তর্ভুক্ত হল সেই মূল্যবোধ, গুণাবলি, মান এবং বৈশিষ্ট্যগুলো, যা আমাদের খ্রিস্টান হিসেবে শনাক্ত করে। এই ‘পথই’ জীবনের এবং ঈশ্বরকে খুশি করার একমাত্র সফল পথ। (প্রেরিত ৯:২; ইফিষীয় ৪:২২-২৪) খ্রিস্টানরা “সর্ব্ববিষয়ের পরীক্ষা” করে এবং ‘যাহা ভাল, তাহা ধরিয়া রাখে’! (১ থিষলনীকীয় ৫:২১) খ্রিস্টধর্ম এবং ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন জগতের মধ্যে বিরাট পার্থক্য সম্বন্ধে আমাদের স্পষ্ট বোধগম্যতা আছে। সত্য এবং মিথ্যা উপাসনার মধ্যে যিহোবা কোনো অনিশ্চয়তার বিষয় রাখেননি। তাঁর ভাববাদী মালাখির মাধ্যমে তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “তোমরা ফিরিয়া আসিবে, এবং ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ দেখিবে।”—মালাখি ৩:১৮.

১৯. সত্য খ্রিস্টানরা কখনও কী হবে না?

১৯ এই বিভ্রান্ত জগতে যিহোবাতে শ্লাঘা করা যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমাদের ঈশ্বরকে নিয়ে গঠনমূলক গর্ব এবং খ্রিস্টীয় পরিচয় সম্বন্ধে দৃঢ় বোধশক্তি বজায় রাখার জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে? পরের প্রবন্ধে বিভিন্ন সাহায্যকারী পরামর্শ পাওয়া যাবে। সেগুলো বিবেচনা করার সময় আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন: সত্য খ্রিস্টানরা কখনও “উদাসীনতার” শিকার হবে না।

[পাদটীকা]

^ এখানে কেবল আধ্যাত্মিক পরিচয়ের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কারও কারও হয়তো পেশাদারী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• খ্রিস্টানরা কীভাবে “যিহোবাতেই শ্লাঘা” করতে পারে?

• মোশি এবং আসফের উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখেছেন?

• বাইবেলের কোন চরিত্রগুলো ঈশ্বরের সেবায় গর্ববোধ করেছিল?

• আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয় নিয়ে গর্ববোধ করার সঙ্গে কী জড়িত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

কিছু সময়ের জন্য মোশি আত্মসন্দেহে ভুগেছিলেন

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবার অনেক প্রাচীন দাস তাদের স্বতন্ত্র পরিচয় সম্বন্ধে গর্ববোধ করেছিল