সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিবাহিত দম্পতিদের জন্য বিজ্ঞ নির্দেশনা

বিবাহিত দম্পতিদের জন্য বিজ্ঞ নির্দেশনা

বিবাহিত দম্পতিদের জন্য বিজ্ঞ নির্দেশনা

“নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও। স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে . . . প্রেম কর।”—ইফিষীয় ৫:২২, ২৫.

১. বিবাহ সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি কী?

 যিশু বলেছিলেন যে, বিবাহ হচ্ছে ঈশ্বরের দ্বারা একজন নারী ও একজন পুরুষকে “একাঙ্গ” হওয়ার জন্য একত্রিত করা। (মথি ১৯:৫, ৬) এটা আলাদা ব্যক্তিত্বের দুজন লোককে জড়িত করে, যারা একই আগ্রহ গড়ে তুলতে শেখে এবং একই লক্ষ্যগুলোর উদ্দেশ্যে একসঙ্গে কাজ করে। বিবাহ হল চিরজীবনের এক অঙ্গীকার, অস্থায়ী কোনো চুক্তি নয় যা সহজেই বাতিল করা যেতে পারে। অনেক দেশে বিবাহবিচ্ছেদ পাওয়া কঠিন কোনো বিষয় নয় কিন্তু খ্রিস্টানদের দৃষ্টিতে বৈবাহিক সম্পর্ক এক পবিত্র বিষয়। এই সম্পর্ক কেবলমাত্র গুরুতর একটা কারণের জন্য শেষ হয়।—মথি ১৯:৯.

২. (ক) বিবাহিত দম্পতিদের জন্য কোন সাহায্য প্রাপ্তিসাধ্য? (খ) বিয়েকে সফল করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

একজন মহিলা বিবাহ উপদেষ্টা বলেছিলেন: “এক সফল বিবাহ হল ক্রমাগত পরিবর্তনশীল এক প্রক্রিয়া, যেহেতু বিবাহ নতুন বিষয়গুলো প্রকাশ করে, উত্থাপিত সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয় এবং জীবনের প্রত্যেকটা পর্যায়ে প্রাপ্তিসাধ্য সম্পদগুলো ব্যবহার করে।” খ্রিস্টান বিবাহিত দম্পতিদের জন্য সেই সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাইবেল থেকে বিজ্ঞ পরামর্শ, সহখ্রিস্টানদের কাছ থেকে সমর্থন এবং প্রার্থনার মাধ্যমে যিহোবার সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। এক সফল বিবাহ টিকে থাকে এবং বছরের পর বছর ধরে তা স্বামী ও স্ত্রীর জন্য সুখ এবং পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, এটা বিবাহের উদ্যোক্তা যিহোবার জন্য সম্মান নিয়ে আসে।—আদিপুস্তক ২:১৮, ২১-২৪; ১ করিন্থীয় ১০:৩১; ইফিষীয় ৩:১৪; ১ থিষলনীকীয় ৫:১৭.

যিশু এবং তাঁর মণ্ডলীকে অনুকরণ করুন

৩. (ক) বিবাহিত দম্পতিদের প্রতি দেওয়া পৌলের পরামর্শের সারাংশ করুন। (খ) যিশু কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

দুই হাজার বছর আগে, প্রেরিত পৌল খ্রিস্টান দম্পতিদের এই বিজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন: “মণ্ডলী যেমন খ্রীষ্টের বশীভূত, তেমনি নারীগণ সর্ব্ববিষয়ে আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হউক। স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।” (ইফিষীয় ৫:২৪, ২৫) এখানে কতই না সুন্দর তুলনা প্রকাশ করা হয়েছে! যে-খ্রিস্টান স্ত্রীরা তাদের স্বামীর প্রতি নম্রভাবে বশীভূত থাকে, তারা মস্তকপদের কাছে নীতি স্বীকার করা এবং তা মেনে চলার ক্ষেত্রে মণ্ডলীকে অনুকরণ করে। যে-বিশ্বাসী স্বামীরা সুসময় অথবা দুঃসময় যখনই হোক না কেন, ক্রমাগত তাদের স্ত্রীদের প্রেম করে তারা দেখায় যে, মণ্ডলীকে ভালবাসা এবং এর যত্ন নেওয়া সম্বন্ধে খ্রিস্টের উদাহরণকে তারা যথাসম্ভব নিখুঁতভাবে অনুসরণ করে।

৪. স্বামীরা কীভাবে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে?

খ্রিস্টান স্বামীরা হলেন তাদের পরিবারের মস্তক কিন্তু তাদেরও এক মস্তক রয়েছেন আর তিনি হলেন যিশু। (১ করিন্থীয় ১১:৩) তাই, যিশু যেমন তাঁর মণ্ডলীর যত্ন নিয়েছেন, তেমনই স্বামীরা প্রেমের সঙ্গে আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক উভয় ক্ষেত্রেই তাদের পরিবারের যত্ন নেয়, এমনকি যদিও তা করতে গিয়ে আত্মত্যাগের প্রয়োজন হয়। তারা নিজেদের আকাঙ্ক্ষা এবং পছন্দগুলোর চেয়ে বরং তাদের পরিবারের মঙ্গলের বিষয়টাকে প্রাধান্য দেয়। যিশু বলেছিলেন: “অতএব সর্ব্ববিষয়ে তোমরা যাহা যাহা ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও।” (মথি ৭:১২) এই নীতিটি বিবাহের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। পৌল এই বিষয়টা দেখিয়েছেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য। . . . কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে।” (ইফিষীয় ৫:২৮, ২৯) একজন ব্যক্তি যতটা মনোযোগ ও যত্নের সঙ্গে নিজের ভরণপোষণ জোগান এবং লালন পালন করেন, তার স্ত্রীর জন্যও ঠিক ততটা করা উচিত।

৫. স্ত্রীরা কীভাবে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে অনুকরণ করতে পারে?

ঈশ্বরকে উপাসনা করে এমন স্ত্রীরা আদর্শ হিসেবে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে দেখে থাকে। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তাঁর অনুসারীরা আনন্দের সঙ্গে তাদের পূর্বের পেশা ছেড়ে দিয়েছিল এবং তাঁকে অনুসরণ করেছিল। তাঁর মৃত্যুর পরেও তারা ক্রমাগত তাঁর প্রতি বশীভূত ছিল এবং বিগত প্রায় ২,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সত্য খ্রিস্টীয় মণ্ডলী এখনও যিশুর প্রতি বশীভূত রয়েছে ও সেইসঙ্গে সমস্ত বিষয়ে তাঁর নেতৃত্ব অনুসরণ করছে। একইভাবে, খ্রিস্টান স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের অবজ্ঞা করে না অথবা বিবাহের মধ্যে মস্তকপদের শাস্ত্রীয় ব্যবস্থাকে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করার চেষ্টা করে না। এর পরিবর্তে, তারা তাদের স্বামীদের সাহায্য করে এবং তাদের বশীভূত থাকে, তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে তাদের উৎসাহিত করে। স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই যখন এইরকম প্রেমময় উপায়ে কাজ করে, তখন তাদের বিয়ে সফল হবেই এবং তারা সেই সম্পর্কের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাবে।

ক্রমাগত তাদের সঙ্গে বাস করুন

৬. স্বামীদের উদ্দেশে পিতর কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?

এ ছাড়া, প্রেরিত পিতরও বিবাহিত দম্পতিদের পরামর্শ দিয়েছিলেন আর তার কথাগুলো বিশেষভাবে স্বামীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে। তিনি বলেছিলেন: “স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া [তোমাদের স্ত্রীদের] সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস কর, তাহাদিগকে আপনাদের সহিত জীবনের অনুগ্রহের সহাধিকারিণী জানিয়া সমাদর কর; যেন তোমাদের প্রার্থনা রুদ্ধ না হয়।” (১ পিতর ৩:৭) পিতরের পরামর্শের গুরুত্ব এই পদের শেষ কথাগুলোর মধ্যে দেখা যায়। একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে সমাদর করতে ব্যর্থ হন, তা হলে সেটা যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে। তার প্রার্থনা রুদ্ধ হয়ে যাবে।

৭. কীভাবে একজন স্বামীর তার স্ত্রীকে সমাদর করা উচিত?

তা হলে, কীভাবে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের সমাদর করতে পারে? নিজের স্ত্রীকে সমাদর করার অর্থ হল তার সঙ্গে প্রেম দেখিয়ে, সম্মান এবং মর্যাদা সহকারে আচরণ করা। স্ত্রীদের সঙ্গে এই ধরনের সদয় ব্যবহার অনেকের কাছে অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। একজন গ্রিক পণ্ডিত লেখেন: “রোমীয় আইনের অধীনে একজন মহিলার কোনো অধিকার ছিল না। আইনের মধ্যে তিনি একজন শিশুর মতোই ছিলেন। . . . তিনি পুরোপুরিভাবে তার স্বামীর বশীভূত ছিলেন এবং সম্পূর্ণরূপে তার করুণার পাত্রী ছিলেন।” খ্রিস্টীয় শিক্ষার কতই না বিপরীত! খ্রিস্টান স্বামী তার স্ত্রীকে সমাদর করতেন। তিনি ব্যক্তিগত খেয়ালখুশি অনুযায়ী নয় কিন্তু খ্রিস্টীয় নীতিগুলোর দ্বারা পরিচালিত হয়ে তার সঙ্গে আচারব্যবহার করতেন। অধিকন্তু, স্ত্রী দুর্বল পাত্র, এই বিষয়টা মনে রেখে তিনি তার প্রতি “জ্ঞানপূর্ব্বক” বিবেচনা দেখাতেন।

কোন দিক দিয়ে “দুর্ব্বল পাত্র”?

৮, ৯. কোন কোন দিক দিয়ে মহিলারা পুরুষদের সমান?

মহিলারা “দুর্ব্বল পাত্র” এটা বলার দ্বারা পিতর বোঝাননি যে, বুদ্ধির দিক দিয়ে অথবা আধ্যাত্মিকভাবে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে দুর্বল। এটা ঠিক যে, মণ্ডলীতে অনেক খ্রিস্টান পুরুষের বিশেষ সুযোগ রয়েছে, যা মহিলারা পাওয়ার আশা করতে পারে না এবং পরিবারের মধ্যে মহিলারা তাদের স্বামীদের বশীভূত থাকে। (১ করিন্থীয় ১৪:৩৫; ১ তীমথিয় ২:১২) তা সত্ত্বেও, একই বিশ্বাস, ধৈর্য এবং উচ্চ নৈতিক মানগুলো নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য আবশ্যক। আর পিতর যেমন বলেছিলেন স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েই “জীবনের অনুগ্রহের সহাধিকারিণী” বা উত্তরাধিকারী। পরিত্রাণের কথা বিবেচনা করলে, যিহোবা ঈশ্বরের সামনে তাদের সমরূপ অবস্থান রয়েছে। (গালাতীয় ৩:২৮) পিতর প্রথম শতাব্দীর অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের কাছে লিখছিলেন। তাই, তার কথাগুলো খ্রিস্টান স্বামীদের মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, “খ্রীষ্টের সহদায়াদ” হিসেবে তাদের এবং তাদের স্ত্রীদের একই স্বর্গীয় আশা রয়েছে। (রোমীয় ৮:১৭) একসময়, উভয়েই ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যে যাজক এবং রাজা হিসেবে সেবা করবে!—প্রকাশিত বাক্য ৫:১০.

অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের স্ত্রীরা কোনোভাবেই তাদের অভিষিক্ত স্বামীদের চেয়ে ছোট নয়। আর নীতির দিক দিয়ে তা তাদের বেলায়ও একই বিষয় সত্য, যাদের পার্থিব আশা রয়েছে। ‘বিস্তর লোকের’ নারী ও পুরুষরা উভয়েই মেষশাবকের রক্তে নিজ নিজ বস্ত্র ধৌত এবং শুক্লবর্ণ করেছে। নারী ও পুরুষরা উভয়েই বিশ্বব্যাপী “দিবারাত্র” যিহোবার উদ্দেশ্যে প্রশংসায় অংশ নেয়। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০, ১৪, ১৫) নারী ও পুরুষ উভয়েই “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” উপভোগ করার জন্য অপেক্ষা করে আছে, যখন তারা “প্রকৃতরূপে জীবন” পেয়ে আনন্দ করবে। (রোমীয় ৮:২১; ১ তীমথিয় ৬:১৯) অভিষিক্ত অথবা আরও মেষ যা-ই হোক না কেন, সমস্ত খ্রিস্টান একত্রে ‘এক পালকের’ অধীনে “এক পাল” হিসেবে যিহোবাকে সেবা করে। (যোহন ১০:১৬) খ্রিস্টান স্বামী এবং স্ত্রীর জন্য একে অপরের প্রতি সমাদর দেখানোর কত জোরালো এক কারণ!

১০. কোন অর্থে মহিলারা “দুর্ব্বল পাত্র”?

১০ তা হলে, কোন দিক দিয়ে মহিলারা “দুর্ব্বল পাত্র”? পিতর সম্ভবত সেই বিষয়টার কথা উল্লেখ করছিলেন যে, সাধারণত মহিলারা পুরুষদের চেয়ে ছোট এবং শারীরিক দিক দিয়ে কম শক্তিশালী। অধিকন্তু, আমাদের এই অসিদ্ধ অবস্থায় সন্তান ধারণ করার অপূর্ব সুযোগ শরীরকে দুর্বল করে দেয়। সন্তানধারণে সক্ষম বয়সী মহিলারা হয়তো নিয়মিতভাবে শারীরিক অস্বস্তি ভোগ করে। নিঃসন্দেহে তাদের বিশেষ যত্ন এবং বিবেচনার প্রয়োজন হয়, যখন এই ধরনের কষ্ট অথবা গর্ভবতী হওয়ার এবং জন্ম দেওয়ার পরিশ্রান্তজনক কঠিন অবস্থা ভোগ করে। একজন স্বামী, যিনি স্ত্রীর প্রয়োজনীয় সমর্থনের বিষয়টা উপলব্ধি করে তাকে সমাদর করেন তিনি বিয়েকে সফল করার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবেন।

ধর্মের দিক দিয়ে বিভক্ত এক পরিবারে

১১. স্বামী এবং স্ত্রী ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলেও কোন অর্থে একটা বিয়ে সফল হতে পারে?

১১ কিন্তু, বিবাহ সাথিদের মধ্যে একজন বিয়ের কিছু পরে খ্রিস্টীয় সত্য গ্রহণ করেছে এবং অন্যজন গ্রহণ করেননি বলে যদি তাদের মধ্যে ভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থাকে তা হলে কী? এই ধরনের বিয়ে কি সফল হতে পারে? অনেকের অভিজ্ঞতা দেখায় যে, হ্যাঁ হতে পারে। ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এমন এক স্বামী এবং স্ত্রীর তারপরও এই অর্থে সফল বিয়ে থাকতে পারে যে, এটা স্থায়ী হতে পারে এবং উভয়ের জন্যই সুখ নিয়ে আসতে পারে। তা ছাড়া, বিয়ে তখনও যিহোবার চোখে বলবৎ রয়েছে; তখনও তারা “একাঙ্গ।” তাই, খ্রিস্টান স্বামী বা স্ত্রীদের একসঙ্গে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যদি তাদের সঙ্গী একমত থাকে। যদি তাদের ছেলেমেয়ে থাকে, তা হলে তারা খ্রিস্টান বাবা অথবা মার বিশ্বস্ততা থেকে উপকৃত হয়।—১ করিন্থীয় ৭:১২-১৪.

১২, ১৩. পিতরের পরামর্শ অনুসরণ করে কীভাবে খ্রিস্টান স্ত্রীরা তাদের অবিশ্বাসী স্বামীদের সাহায্য করতে পারে?

১২ পিতর সেই খ্রিস্টান মহিলাদের প্রতি সদয় পরামর্শ দিয়েছেন, যারা ধর্মের দিক দিয়ে বিভক্ত পরিবারে রয়েছে। নীতির দিক দিয়ে তার কথাগুলো সেই খ্রিস্টান স্বামীদের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে, যারা একই পরিস্থিতিতে রয়েছে। পিতর লেখেন: “হে ভার্য্যা সকল, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।”—১ পিতর ৩:১, ২.

১৩ একজন স্ত্রী যদি তার স্বামীর কাছে কৌশলে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে পারেন, তা হলে সেটা প্রশংসনীয়। কিন্তু, তিনি যদি শুনতে না চান তা হলে? সেটা তার ব্যাপার। তাই বলে সবই শেষ হয়ে যায়নি যেহেতু খ্রিস্টীয় আচরণও জোরালো সাক্ষ্য দেয়। অনেক স্বামী, যারা আগে আগ্রহী ছিল না এবং যারা এমনকি তাদের স্ত্রীদের বিশ্বাসের বিরোধিতা করেছিল, তারা তাদের স্ত্রীদের উত্তম আচরণ দেখার পরে “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত” হয়েছে। (প্রেরিত ১৩:৪৮) এমনকি একজন স্বামী যদি খ্রিস্টীয় সত্য গ্রহণ না-ও করেন, তবুও তিনি তার স্ত্রীর আচরণ দেখে অনুকূলভাবে প্রভাবিত হতে পারেন যা বিয়েতে উত্তম ফল নিয়ে আসে। একজন স্বামী, যার স্ত্রী যিহোবার সাক্ষিদের একজন তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি কখনোই তাদের উচ্চমান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারবেন না। তা সত্ত্বেও, তিনি নিজেকে “চমৎকার স্ত্রীর এক সুখী স্বামী” বলে অভিহিত করেছিলেন এবং একটা সংবাদপত্রে পাঠানো এক চিঠিতে অকপটভাবে তার স্ত্রীর ও সেইসঙ্গে তার সহসাক্ষিদের প্রশংসা করেছিলেন।

১৪. স্বামীরা কীভাবে তাদের অবিশ্বাসী স্ত্রীদের সাহায্য করতে পারে?

১৪ যে-খ্রিস্টান স্বামীরা পিতরের কথাগুলোর নীতি প্রয়োগ করেছে, তারাও তাদের আচরণের মাধ্যমে তাদের স্ত্রীদের লাভ করেছে। অবিশ্বাসী স্ত্রীরা দেখেছে যে, তাদের স্বামীরা দায়িত্ববোধসম্পন্ন হয়েছে, ধূমপান, মদ্যপান এবং জুয়াখেলার পিছনে টাকাপয়সা অপচয় করা ছেড়ে দিয়েছে ও সেইসঙ্গে এখন আর খারাপ ভাষা ব্যবহার করে না। এই অবিশ্বাসী স্ত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। তারা প্রেমময় খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে এবং ভাইবোনদের মধ্যে তারা যা দেখেছে তা তাদেরকে যিহোবার নিকটবর্তী করেছে।—যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.

“হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য”

১৫, ১৬. একজন খ্রিস্টান স্ত্রী কোন ধরনের আচরণের দ্বারা হয়তো তার অবিশ্বাসী স্বামীকে লাভ করতে পারেন?

১৫ কোন ধরনের আচরণ স্বামীদের লাভ করায় সাহায্য করতে পারে? আসলে, এটা হল সেই ধরনের আচরণ যা খ্রিস্টান মহিলাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে গড়ে ওঠে। পিতর বলেছিলেন: “কেশবিন্যাস ও স্বর্ণাভরণ কিম্বা বস্ত্র পরিধানরূপ বাহ্য ভূষণ, তাহা নয়, কিন্তু হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য, মৃদু ও প্রশান্ত আত্মার অক্ষয় শোভা, তাহাদের ভূষণ হউক; তাহাই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য। কেননা পূর্ব্বকালের যে পবিত্র নারীগণ ঈশ্বরে প্রত্যাশা রাখিতেন, তাঁহারাও সেই প্রকারে আপনাদিগকে ভূষিত করিতেন, আপন আপন স্বামীর বশীভূত হইতেন; যেমন সারা অব্রাহামের আজ্ঞা মানিতেন, নাথ বলিয়া তাঁহাকে ডাকিতেন; তোমরা যদি সদাচরণ কর ও কোন মহাভয়ে ভীত না হও, তবে তাঁহারই সন্তান হইয়া উঠিয়াছ।”—১ পিতর ৩:৩-৬.

১৬ পিতর একজন খ্রিস্টান মহিলাকে তার বাহ্যিক বেশভূষার ওপর নির্ভর না করতে পরামর্শ দেন। এর পরিবর্তে তিনি যেন তার স্বামীকে তার ভিতরের মনুষ্যের ওপর বাইবেলের শিক্ষার প্রভাব বুঝতে দেন। নতুন মনুষ্য বা ব্যক্তিত্ব যে কার্যরত সেই বিষয়টা তাকে দেখতে দিন। তিনি হয়তো এটাকে তার স্ত্রীর সেই পুরনো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তুলনা করবেন, যা তার আগে ছিল। (ইফিষীয় ৪:২২-২৪) নিশ্চিতভাবেই তিনি তার ‘মৃদু ও প্রশান্ত আত্মাকে’ সতেজতাদায়ক এবং আকর্ষণীয় বলে দেখতে পাবেন। এই ধরনের আত্মা কেবল স্বামীকেই সুখী করে না কিন্তু এটা “ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য।”—কলসীয় ৩:১২.

১৭. খ্রিস্টান স্ত্রীদের জন্য সারা কীভাবে এক উত্তম উদাহরণ?

১৭ সারাকে আদর্শ হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং তিনি খ্রিস্টান স্ত্রীদের জন্য উদাহরণযোগ্য, হোক তাদের স্বামী বিশ্বাসী অথবা অবিশ্বাসী। নিঃসন্দেহে, সারা অব্রাহামকে তার মস্তক হিসেবে দেখতেন। এমনকি মনে মনেও তিনি তাকে ‘প্রভু’ বলে ডাকতেন। (আদিপুস্তক ১৮:১২) কিন্তু, এটা তাকে ছোট করেনি। স্পষ্টতই, তিনি আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় মহিলা ছিলেন যার যিহোবার প্রতি নিজের অটল বিশ্বাস ছিল। বস্তুত, তিনি ‘বৃহৎ সাক্ষিমেঘের’ অংশ, যাদের বিশ্বাসের উদাহরণ ‘ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়িতে’ অনুপ্রাণিত করা উচিত। (ইব্রীয় ১১:১১; ১২:১) সারার মতো হওয়া একজন খ্রিস্টান স্ত্রীর জন্য মর্যাদাহানিকর নয়।

১৮. এক বিভক্ত পরিবারে কোন নীতিগুলো মনে রাখা উচিত?

১৮ ধর্মের দিক দিয়ে বিভক্ত পরিবারেও স্বামীই মস্তক। তিনি যদি বিশ্বাসী হয়ে থাকেন, তা হলে তিনি তার নিজের বিশ্বাসের ব্যাপারে আপোশ না করে তার স্ত্রীর বিশ্বাসের প্রতি বিবেচনা দেখাবেন। আর স্ত্রী যদি বিশ্বাসী হন, তা হলে তিনিও তার নিজের বিশ্বাসের ব্যাপারে আপোশ করবেন না। (প্রেরিত ৫:২৯) তা সত্ত্বেও, তিনি তার স্বামীর মস্তকপদকে অগ্রাহ্য করবেন না। তিনি তার অবস্থানের প্রতি সম্মান দেখাবেন এবং ‘স্বামীর ব্যবস্থার’ অধীনে থাকবেন।—রোমীয় ৭:২.

বাইবেলের বিজ্ঞ নির্দেশনা

১৯. কিছু চাপ কী যা বিবাহবন্ধনের ওপর আসে কিন্তু কীভাবে এই ধরনের চাপগুলোকে প্রতিরোধ করা যায়?

১৯ আজকে অনেক বিষয় বিবাহের বিবাহবন্ধনের ওপর চাপ নিয়ে আসতে পারে। কিছু পুরুষ তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়। কিছু মহিলা তাদের স্বামীর মস্তকপদকে মেনে নিতে চায় না। কিছু বিয়েতে একজন সঙ্গী অন্য সঙ্গীর দ্বারা অত্যাচারিত হয়। খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক চাপ, মানব অসিদ্ধতা এবং অনৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্বন্ধে অধঃপতিত মনোভাবসহ জগতের আত্মা তাদের আনুগত্যকে পরীক্ষায় ফেলতে পারে। তা সত্ত্বেও, তাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, যে-খ্রিস্টান নারী ও পুরুষরা বাইবেলের নীতিগুলো পালন করে, তারা যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করে। এমনকি বিয়েতে যদি কেবল একজন সঙ্গীও বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করে, তা হলে পরিস্থিতি দুজনে প্রয়োগ না করার ফলে যেমন হতো, তার চেয়ে ভাল হয়। অধিকন্তু, এমনকি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও যিহোবার যে-দাসেরা তাদের বিয়ের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে তাদেরকে তিনি ভালবাসেন এবং সাহায্য করেন। তিনি তাদের আনুগত্য ভুলে যান না।—গীতসংহিতা ১৮:২৫; ইব্রীয় ৬:১০; ১ পিতর ৩:১২.

২০. সমস্ত খ্রিস্টানকে পিতর কোন পরামর্শ দিয়েছেন?

২০ বিবাহিত পুরুষ ও মহিলাকে পরামর্শ দেওয়ার পর প্রেরিত পিতর উৎসাহজনক উষ্ণ কথা দিয়ে শেষ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “অবশেষে বলি, তোমরা সকলে সমমনা, পরদুঃখে দুঃখিত, ভ্রাতৃপ্রেমিক, স্নেহবান্‌ ও নম্রমনা হও। মন্দের পরিশোধে মন্দ করিও না, এবং নিন্দার পরিশোধে নিন্দা করিও না; বরং আশীর্ব্বাদ কর, কেননা আশীর্ব্বাদের অধিকারী হইবার নিমিত্তই তোমরা আহূত হইয়াছ।” (১ পিতর ৩:৮, ৯) সকলের জন্য, বিশেষ করে বিবাহিত দম্পতিদের জন্য বাস্তবিকই বিজ্ঞ পরামর্শ!

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• খ্রিস্টান স্বামীরা কীভাবে যিশুকে অনুকরণ করে?

• খ্রিস্টান স্ত্রীরা কীভাবে মণ্ডলীকে অনুকরণ করে?

• কোন দিক দিয়ে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের সমাদর করতে পারে?

• যে-খ্রিস্টান স্ত্রীদের স্বামীরা বিশ্বাসী নয়, তাদের জন্য সর্বোত্তম পথ কী?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন খ্রিস্টান স্বামী তার স্ত্রীকে ভালবাসেন এবং তার যত্ন নেন

একজন খ্রিস্টান স্ত্রী তার স্বামীকে সম্মান এবং সমাদর করেন

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

রোমীয় আইনের বিপরীতে, খ্রিস্টীয় শিক্ষাগুলোর অধীনে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে সমাদর করতেন

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

‘বিস্তর লোকের’ অন্তর্ভুক্ত নারী ও পুরুষরা উভয়েই পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবনের জন্য অপেক্ষা করে আছে

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

সারা অব্রাহামকে তার প্রভু হিসেবে দেখতেন