সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

রূতের বিবরণ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

রূতের বিবরণ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

রূতের বিবরণ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

এটি হচ্ছে দুজন স্ত্রীলোকের মধ্যে আনুগত্যের এক হৃদয়গ্রাহী নাটক। এটি যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি উপলব্ধির ও তাঁর আয়োজনের ওপর নির্ভর করার এক বিবরণ। এটি হল একটা গল্প, যা মশীহের বংশধারার প্রতি যিহোবার গভীর আগ্রহের প্রতি জোর দেয়। এটি একটা পরিবারের আনন্দ ও বেদনার মর্মস্পর্শী এক কাহিনী। বাইবেলের রূতের বিবরণ বইয়ে এই বিষয়গুলোসহ আরও কিছু রয়েছে।

রূতের বিবরণ বইটিতে ইস্রায়েলে ‘বিচারকর্ত্তৃগণের কর্ত্তৃত্বকালের’ ১১ বছরের সময়কালের ঘটনাবলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। (রূতের বিবরণ ১:১) লিপিবদ্ধ ঘটনাবলি অবশ্যই বিচারকদের সময়কালের শুরুর দিকে ঘটেছিল কারণ ভূস্বামী বোয়স, যিনি এই বাস্তব নাটকের এক চরিত্র তিনি ছিলেন যিহোশূয়ের সময়কার রাহবের ছেলে। (যিহোশূয়ের পুস্তক ২:১, ২; রূতের বিবরণ ২:১; মথি ১:৫) এই কাহিনী সা.কা.পূ. ১০৯০ সালে সম্ভবত ভাববাদী শমূয়েল লিখেছিলেন। এটি বাইবেলের একমাত্র বই, যেটি একজন ন-ইস্রায়েলীয় স্ত্রীলোকের নামে পরিচিত হয়েছে। এর বার্তা “জীবন্ত ও কার্য্যসাধক।”—ইব্রীয় ৪:১২.

“তুমি যেখানে যাইবে, আমিও তথায় যাইব”

(রূতের বিবরণ ১:১–২:২৩)

যখন নয়মী এবং রূৎ বৈৎলেহমে এসে পৌঁছায়, তখন তারা মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়ে। দুই জনের মধ্যে বয়স্কা জনের প্রতি নির্দেশ করে সেই নগরের স্ত্রীলোকেরা জিজ্ঞেস করতে থাকে: “এ কি নয়মী?” প্রত্যুত্তরে নয়মী বলেন: “আমাকে নয়মী [মনোরমা] বলিও না, বরং মারা [তিক্তা] বলিয়া ডাক, কেননা সর্ব্বশক্তিমান আমার প্রতি অতিশয় তিক্ত ব্যবহার করিয়াছেন। আমি পরিপূর্ণা হইয়া যাত্রা করিয়াছিলাম, এখন সদাপ্রভু আমাকে শূন্যা করিয়া ফিরাইয়া আনিলেন।”—রূতের বিবরণ ১:১৯-২১.

ইস্রায়েলে এক দুর্ভিক্ষের কারণে নয়মীর পরিবারকে যখন বৈৎলেহম থেকে মোয়াব দেশে যেতে হয়, তখন তিনি এই অর্থে “পরিপূর্ণা” ছিলেন যে, তার স্বামী এবং দুই ছেলে ছিল। কিন্তু, তারা মোয়াবে স্থায়ী হওয়ার অল্প সময় পরে তার স্বামী ইলীমেলক মারা যান। পরে দুই ছেলে মোয়াবীয় স্ত্রীলোক অর্পা ও রূৎকে বিয়ে করে। প্রায় দশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর দুই ছেলে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায় আর এই তিন জন স্ত্রীলোক স্বামীহারা হয়। শাশুড়ি নয়মী যখন যিহূদায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তার ছেলেদের বিধবা স্ত্রীরাও তার সঙ্গে যায়। মাঝপথে নয়মী তার ছেলের বউদের মোয়াবে ফিরে যেতে বলেন এবং তাদের নিজেদের লোকেদের মধ্যে থেকে স্বামী খুঁজে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। অর্পা সম্মত হন। কিন্তু রূৎ এই বলে নয়মীর সঙ্গে থেকে যান: “তুমি যেখানে যাইবে, আমিও তথায় যাইব; এবং তুমি যেখানে থাকিবে, আমিও তথায় থাকিব; তোমার লোকই আমার লোক, তোমার ঈশ্বরই আমার ঈশ্বর।”—রূতের বিবরণ ১:১৬.

দুই বিধবা নয়মী এবং রূৎ যব কাটার শুরুর দিকে বৈৎলেহমে এসে পৌঁছায়। ঈশ্বরের ব্যবস্থায় উল্লেখিত এক আয়োজনের সুবিধা গ্রহণ করে রূৎ একটা জমিতে পতিত শস্য কুড়াতে শুরু করেন, যেটা আসলে ইলীমেলকের এক আত্মীয়ের—বোয়স নামে এক বয়স্ক যিহুদির—ছিল। রূৎ বোয়সের অনুগ্রহ লাভ করেন এবং “যব ও গোম কাটা” শেষ না হওয়া “পর্য্যন্ত” তার জমিতেই শস্য কুড়াতে থাকেন।—রূতের বিবরণ ২:২৩.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

১:৮—নয়মী কেন তার ছেলের বউদের তাদের বাবার বাড়ির পরিবর্তে “আপন আপন মাতার বাটীতে” ফিরে যেতে বলেছিলেন? অর্পার বাবা সেই সময়ে জীবিত ছিলেন কি না, তা উল্লেখ নেই। কিন্তু রূতের বাবা তখনও ছিলেন। (রূতের বিবরণ ২:১১) তা সত্ত্বেও, নয়মী মায়ের বাড়ি বলেন, সম্ভবত এটা চিন্তা করে যে, তাদের মায়ের কথা উল্লেখ করা তাদেরকে মাতৃস্নেহের স্বস্তির বিষয় মনে করিয়ে দেবে। এটা এই মেয়েদের তাদের প্রিয় শাশুড়ির কাছ থেকে আলাদা হওয়ার দুঃখকে লাঘব করবে। এই মন্তব্য সম্ভবত এই ধারণাও দেয় যে, নয়মীর বিপরীতে রূৎ এবং অর্পার মায়েদের সুপ্রতিষ্ঠিত বাড়ি ছিল।

১:১৩, ২১—যিহোবাই কি নয়মীর জীবনকে দুঃখার্ত করেছিলেন এবং তাকে নিগ্রহ করেছিলেন বা তার ওপর দুর্ভোগ নিয়ে এসেছিলেন? না, আর নয়মী ঈশ্বরকে কোনো অন্যায়ের জন্য অভিযুক্তও করেননি। কিন্তু, তার প্রতি যা কিছু ঘটেছিল, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ভেবেছিলেন যে, যিহোবা তার বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি দুঃখার্ত ও নিরৎসাহিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া, সেই সময়ে গর্ভের ফলকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ এবং বন্ধ্যাবস্থাকে অভিশাপ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কোনো নাতিনাতনি না থাকায় ও সেইসঙ্গে দুই ছেলের মৃত্যু হওয়ায় নয়মী হয়তো এইরকম চিন্তা করাকে যুক্তিযুক্ত মনে করেছিলেন যে, যিহোবা তার বিপক্ষ হয়েছেন বা তাকে অবনত করেছেন।

২:১২—রূৎ যিহোবার কাছ থেকে কোন “সম্পূর্ণ পুরস্কার” পেয়েছিলেন? রূতের একটা ছেলে হয়েছিল এবং ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বংশের—যেটা হল যিশু খ্রিস্টের—এক অংশ হওয়ার বিশেষ সুযোগ লাভ করেছিলেন।—রূতের বিবরণ ৪:১৩-১৭; মথি ১:৫, ১৬.

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:৮; ২:২০. মর্মান্তিক ঘটনাগুলো ভোগ করা সত্ত্বেও, নয়মী যিহোবার দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়ার প্রতি তার আস্থা বজায় রেখেছিলেন। আমাদেরও তা-ই করা উচিত, বিশেষ করে যখন আমরা কঠিন পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হই।

১:৯. একটা ঘর শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের খাওয়া ও ঘুমানোর জায়গার চাইতে আরও বেশি কিছু হওয়া উচিত। এটা বিশ্রাম ও আরামের এক শান্তিপূর্ণ স্থান হওয়া উচিত।

১:১৪-১৬. অর্পা “আপন লোকদের ও আপন দেবতার নিকটে ফিরিয়া গেল।” রূৎ যাননি। তিনি তার নিজ দেশের আরামআয়েশ ও সুরক্ষা পরিত্যাগ করেছিলেন এবং যিহোবার প্রতি অনুগত থেকেছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি অনুগত প্রেম গড়ে তোলা এবং এক আত্মত্যাগের মনোভাব প্রকাশ করা আমাদেরকে স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাগুলোর দ্বারা প্রলোভিত হওয়া এবং ‘বিনাশের জন্য সরিয়া পড়া’ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে।—ইব্রীয় ১০:৩৯.

২:২. রূৎ, বিদেশি এবং দুর্দশাগ্রস্তদের উপকারার্থে পতিত শস্য কুড়ানোর আয়োজনের সদ্ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তিনি নম্রমনা ছিলেন। একজন অভাবী খ্রিস্টানের তার সহবিশ্বাসীদের প্রেমপূর্ণ সহযোগিতা নেওয়ার বা তার যোগ্যতা অনুযায়ী যেকোনো সরকারি সাহায্য গ্রহণ করার ক্ষেত্রে গর্বিত হওয়া উচিত নয়।

২:৭. পতিত শস্য কুড়ানোর অধিকার থাকা সত্ত্বেও, রূৎ তা করার আগে অনুমতি চেয়েছিলেন। (লেবীয় পুস্তক ১৯:৯, ১০) এটা তার নম্রতার এক চিহ্ন ছিল। যেহেতু “মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে,” তাই আমাদেরও মৃদুতার বা ‘নম্রতার অনুশীলন করা’ হবে বিজ্ঞতার কাজ।—সফনিয় ২:৩; গীতসংহিতা ৩৭:১১.

২:১১. রূৎ নয়মীর কাছে নিজেকে আত্মীয় অপেক্ষা আরও বেশি কিছুর প্রমাণ দিয়েছিলেন। তিনি একজন প্রকৃত বন্ধু ছিলেন। (হিতোপদেশ ১৭:১৭) তাদের বন্ধুত্ব অটল ছিল কারণ এটা প্রেম, আনুগত্য, সহানুভূতি, দয়া এবং আত্মত্যাগের মনোভাবের মতো গুণাবলির ওপর ভিত্তি করে ছিল। আরও গুরুত্বপূর্ণ যে, এর ভিত্তি ছিল তাদের আধ্যাত্মিকতা—যিহোবাকে সেবা করার এবং তাঁর উপাসকদের মধ্যে থাকার জন্য তাদের আকাঙ্ক্ষা। আমাদেরও সত্য উপাসকদের সঙ্গে প্রকৃত বন্ধুত্ব গড়ে তোলার চমৎকার সুযোগগুলো রয়েছে।

২:১৫-১৭. বোয়স রূতের জন্য তার কাজের বোঝা হালকা করে দেওয়া সত্ত্বেও, “সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত সেই ক্ষেত্রে কুড়াইল।” রূৎ একজন কঠোর পরিশ্রমী স্ত্রীলোক ছিলেন। একজন খ্রিস্টানের অধ্যবসায়ী কর্মী হওয়ার সুনাম থাকা উচিত।

২:১৯-২২. নয়মী ও রূৎ সান্ধ্যকালীন সময়গুলোতে মনোরম কথাবার্তা উপভোগ করত, বয়স্কা নয়মী তার চেয়ে কমবয়সী রূতের কাজের প্রতি আগ্রহ দেখাতেন, উভয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিগুলো প্রকাশ করত। একটা খ্রিস্টান পরিবারে কি এর ব্যতিক্রম হওয়া উচিত?

২:২২, ২৩. যাকোবের মেয়ে দীণার বিপরীতে রূৎ যিহোবার উপাসকদের সঙ্গে মেলামেশা করেছিলেন। আমাদের জন্য এটা কী এক চমৎকার উদাহরণ!—আদিপুস্তক ৩৪:১, ২; ১ করিন্থীয় ১৫:৩৩.

নয়মী “পরিপূর্ণা” হন

(রূতের বিবরণ ৩:১–৪:২২)

নয়মীর এত বয়স হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি সন্তানের জন্ম দিতে পারতেন না। তাই তিনি তার পরিবর্তে রূৎকে মুক্ত করার ব্যবস্থা অনুযায়ী বিয়ে করার বা দেবরের কর্তব্য সাধনে রাজি হতে নির্দেশ দেন। নয়মীর নির্দেশনা অনুসরণ করে রূৎ বোয়সকে মুক্তিকর্তা হতে অনুরোধ করেন। বোয়স তা মেনে নিতে প্রস্তুত হন। কিন্তু, আরও ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় রয়েছে, যাকে সেই সুযোগটা প্রথমে দেওয়া উচিত।

বোয়স বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য দেরি করেননি। ঠিক পরদিন সকালেই তিনি সেই আত্মীয়ের সামনে বৈৎলেহমের দশ জন প্রাচীনকে একত্রিত করেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করেন যে, তিনি মুক্তিকর্তা হতে ইচ্ছুক কি না। সেই ব্যক্তি তা করতে অস্বীকার করেন। তাই, বোয়স একজন মুক্তিকর্তা হন এবং রূৎকে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ের ফলে এক ছেলের জন্ম হয় যার নাম ওবেদ, যিনি রাজা দায়ূদের দাদু। বৈৎলেহমের স্ত্রীলোকেরা এখন নয়মীকে বলে: “ধন্য সদাপ্রভু . . . [এই বালকটী] তোমার প্রাণ পুনরায় স্বস্থ করিবে, ও বৃদ্ধাবস্থায় তোমার প্রতিপালক হইবে; কেননা যে তোমাকে ভালবাসে ও তোমার পক্ষে সাত পুত্ত্র হইতেও উত্তমা, তোমার সেই পুত্ত্রবধূই ইহাকে প্রসব করিয়াছে।” (রূতের বিবরণ ৪:১৪, ১৫) যে-স্ত্রীলোক “শূন্যা” হয়ে বৈৎলেহমে ফিরে এসেছিলেন, তিনি পুনরায় “পরিপূর্ণা” হন!—রূতের বিবরণ ১:২১.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৩:১১—কী রূৎকে “সাধ্বী” মহিলার সুনাম দিয়েছিল? “কেশবিন্যাস” অথবা ‘স্বর্ণাভরণ কিম্বা বস্ত্র পরিধানরূপ বাহ্য ভূষণের’ জন্য অন্যেরা রূতের প্রশংসা করেনি। বরং এর কারণ ছিল “হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য”—তার আনুগত্য ও প্রেম, তার নম্রতা ও মৃদুতা, তার অধ্যবসায় ও আত্মত্যাগের মনোভাব। যেকোনো ঈশ্বর ভয়শীল স্ত্রীলোক যিনি রূতের মতো সুনাম লাভ করার আকাঙ্ক্ষা করেন, তাকে অবশ্যই এই গুণগুলো গড়ে তোলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে।—১ পিতর ৩:৩, ৪; হিতোপদেশ ৩১:২৮-৩১.

৩:১৪—কেন রূৎ এবং বোয়স ভোর হওয়ার আগেই ঘুম থেকে জেগে ওঠে? এর কারণ এই নয় যে, রাতের বেলা কোনো অনৈতিক কিছু ঘটেছিল আর তাই তারা তা গোপন করতে চেয়েছিল। সেই রাতে রূৎ যা করেছিলেন তা প্রকৃতপক্ষে রীতিগতভাবে একজন স্ত্রীলোক দেবরের কর্তব্য সাধনের অধিকার লাভ করার জন্য যে-প্রচেষ্টা করে, সেটার সঙ্গে মিল রেখেই করা হয়েছিল। তিনি নয়মীর নির্দেশনা মেনে নিয়ে কাজ করেছিলেন। এ ছাড়া, বোয়সের প্রতিক্রিয়া স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, রূৎ যা করেছিলেন তাতে তিনি অন্যায় কিছু লক্ষ করেননি। (রূতের বিবরণ ৩:২-১৩) তাই স্পষ্টত, রূৎ এবং বোয়স ভোর হতেই জেগে ওঠে, যাতে কেউ ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানোর কারণ না পায়।

৩:১৫—বোয়সের রূৎকে ছয় [মাণ] যব দেওয়ার তাৎপর্য কী ছিল? এটা দেওয়া সম্ভবত চিত্রিত করেছিল যে, ছয়দিন কাজের পর যেমন বিশ্রাম দিন আসে, তেমনি রূতের বিশ্রাম দিন নিকটবর্তী ছিল। বোয়স এটা নিশ্চিত করেছিলেন যে, রূৎ যেন তার স্বামীর বাড়িতে এক “বিশ্রামস্থান” পান। (রূতের বিবরণ ১:৯; ৩:১) এ ছাড়া, এটাও হতে পারে যে, রূৎ তার মাথায় করে ছয় [মাণ] যবের চেয়ে বেশি বয়ে নিয়ে যেতে পারতেন না।

৩:১৬—নয়মী কেন রূৎকে জিজ্ঞেস করেন: “কে ওখানে?” (বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) তিনি কি তার ছেলের বউকে চিনতে পারেননি? সেটা হতে পারে, কারণ রূৎ যখন নয়মীর কাছে ফিরে এসেছিলেন, তখনও হয়তো অন্ধকার ছিল। তবে, এই প্রশ্নের অর্থ এটাও হতে পারে যে, নয়মী মুক্ত করার আয়োজনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রূতের সম্ভাব্য নতুন পরিচয়ের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করছিলেন।

৪:৬—কীভাবে একজন মুক্তিকর্তা মুক্ত করার দ্বারা তার অধিকারকে “নষ্ট” করতে পারতেন? প্রথমত, একজন দরিদ্র হয়ে গিয়ে যদি তার জমির অধিকারকে বিক্রি করে দিতেন, তা হলে একজন মুক্তিকর্তাকে সেই জমি ক্রয় করতে হতো, যেটার মূল্য পরবর্তী যোবেল বছর পর্যন্ত অবশিষ্ট বছরের সংখ্যানুযায়ী নির্ধারণ করা হতো। (লেবীয় পুস্তক ২৫:২৫-২৭) এটা করা তার নিজের সম্পত্তির মূল্যকে কমিয়ে দিত। অধিকন্তু, রূতের একটা ছেলে জন্মালে, সেই সময়ে বেঁচে থাকা মুক্তিকর্তার কোনো নিকট আত্মীয়ের পরিবর্তে সেই ছেলে ক্রীত জমির উত্তরাধিকারী হতো।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

৩:১২; ৪:১-৬. বোয়স যিহোবার আয়োজন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলেছিলেন। আমরা কি ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিগুলো মেনে চলায় মনোযোগী?—১ করিন্থীয় ১৪:৪০.

৩:১৮. বোয়সের প্রতি নয়মীর আস্থা ছিল। আমাদেরও কি বিশ্বস্ত সহবিশ্বাসীদের প্রতি একই আস্থা থাকা উচিত নয়? রূৎ স্বেচ্ছায় দেবরের কর্তব্য সাধনের আয়োজন অনুযায়ী এমন একজন ব্যক্তিকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, যার সম্বন্ধে রূৎ কিছুই জানতেন না, এমনকি বাইবেলে তার নামও নেই। (রূতের বিবরণ ৪:১) কেন তা করতে চেয়েছিলেন? কারণ ঈশ্বরের ব্যবস্থায় তার আস্থা ছিল। আমাদেরও কি একই আস্থা আছে? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন বিবাহসঙ্গী খোঁজার বিষয় বিবেচনা করা হয়, তখন আমরা কি “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করার পরামর্শ মেনে চলি?—১ করিন্থীয় ৭:৩৯.

৪:১৩-১৬. রূৎ যদিও একজন মোয়াবীয় এবং কমোশ দেবতার প্রাক্তন উপাসক ছিলেন, তবুও তিনি কী এক চমৎকার সুযোগই না লাভ করেছিলেন! এটা এই নীতিকে স্পষ্ট করে যে, “যে ইচ্ছা করে, বা যে দৌড়ে, তাহা হইতে এটী হয় না, কিন্তু দয়াকারী ঈশ্বর হইতে হয়।”—রোমীয় ৯:১৬.

ঈশ্বর ‘যেন উপযুক্ত সময়ে তোমাদিগকে উন্নত করেন’

রূতের বিবরণ বইটি যিহোবাকে প্রেমপূর্ণ-দয়ার এক ঈশ্বর হিসেবে বর্ণনা করে, যিনি তাঁর অনুগত দাসদের পক্ষে কাজ করেন। (২ বংশাবলি ১৬:৯) রূৎ যেভাবে আশীর্বাদ পেয়েছিলেন সেই বিষয়টা যখন আমরা বিবেচনা করি, তখন আমরা যিহোবাতে প্রশ্নাতীত বিশ্বাসসহ আমাদের আস্থা রাখার মূল্য বুঝতে পারি, এই পূর্ণ বিশ্বাসসহ “যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।”—ইব্রীয় ১১:৬.

রূৎ, নয়মী এবং বোয়সের যিহোবার আয়োজনের ওপর পূর্ণ নির্ভরতা ছিল আর সবকিছুই তাদের পক্ষে ভাল ফল নিয়ে এসেছিল। একইভাবে, “যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, যাহারা তাঁহার সঙ্কল্প অনুসারে আহূত, তাহাদের পক্ষে সকলই মঙ্গলার্থে একসঙ্গে কার্য্য করিতেছে।” (রোমীয় ৮:২৮) তাই আসুন আমরা প্রেরিত পিতরের এই পরামর্শ কাজে লাগাই: “অতএব তোমরা ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে নত হও, যেন তিনি উপযুক্ত সময়ে তোমাদিগকে উন্নত করেন; তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।”—১ পিতর ৫:৬, ৭.

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি জানেন, রূৎ কেন নয়মীকে ছেড়ে যাননি?

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

কী রূৎকে “সাধ্বী” হওয়ার সুনাম দিয়েছে?

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

রূতের জন্য যিহোবার কাছ থেকে “সম্পূর্ণ পুরস্কার” কী ছিল?