সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘তোমরা মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ’

‘তোমরা মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ’

‘তোমরা মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ’

“তোমরা . . . মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ। অতএব . . . ঈশ্বরের গৌরব কর।”—১ করিন্থীয় ৬:২০.

১, ২. (ক) মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী, ইস্রায়েলীয় দাসদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হতো? (খ) যে-দাস তার প্রভুকে ভালবাসতেন, তিনি কোন বিষয়টা বেছে নিতে পারতেন?

 “প্রাচীন জগতে দাসপ্রথা সাধারণ এবং ব্যাপকভাবে গৃহীত ছিল,” হোলম্যান ইলাস্ট্রেটেড বাইবেল ডিকশনারি জানায়। এটি আরও জানায়: “মিশর, গ্রিস এবং রোমের অর্থনৈতিক অবস্থা দাস্যকর্মের ওপর নির্ভর ছিল। খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে, ইতালিতে তিন জনের মধ্যে এক জন এবং অন্যান্য দেশে পাঁচ জনের মধ্যে এক জন ব্যক্তি দাস ছিলেন।”

যদিও প্রাচীন ইস্রায়েলেও দাসপ্রথা ছিল কিন্তু মোশির ব্যবস্থা ইব্রীয় দাসদের সুরক্ষা লাভ করার বিষয়টা নিশ্চিত করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবস্থা অনুযায়ী একজন ইস্রায়েলীয় ছয় বছরের বেশি সময় ধরে একজন দাস হিসেবে সেবা করতে পারতেন না। সপ্তম বছরে তাকে “বিনামূল্যে মুক্ত হইয়া চলিয়া” যাওয়ার অনুমতি দিতে হতো। কিন্তু, দাসদের সঙ্গে আচরণের নিয়ম এতটাই ন্যায়সংগত এবং মানবিক ছিল যে, মোশির ব্যবস্থায় এই শর্ত দেওয়া হয়েছিল: “ঐ দাস যদি স্পষ্টরূপে বলে, আমি আপন প্রভুকে এবং আপন স্ত্রী ও সন্তানগণকে ভালবাসি, মুক্ত হইয়া চলিয়া যাইব না, তাহা হইলে তাহার প্রভু তাহাকে ঈশ্বরের নিকটে লইয়া যাইবে, এবং সে তাহাকে কপাটের কিম্বা বাজুর নিকটে উপস্থিত করিবে, তথায় তাহার প্রভু গুঁজি দ্বারা তাহার কর্ণ বিদ্ধ করিবে; তাহাতে সে চিরকাল সেই প্রভুর দাস থাকিবে।”—যাত্রাপুস্তক ২১:২-৬; লেবীয় পুস্তক ২৫:৪২, ৪৩; দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:১২-১৮.

৩. (ক) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা কোন প্রকারের দাসত্ব গ্রহণ করেছিল? (খ) কী আমাদেরকে ঈশ্বরের সেবা করতে পরিচালিত করে?

স্বেচ্ছায় দাসত্ব করার ব্যবস্থা সেই প্রকার দাসত্বের এক পূর্বাভাস দেয় যেটার অধীনে সত্য খ্রিস্টানরা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল লেখক পৌল, যাকোব, পিতর এবং যিহূদা নিজেদেরকে ঈশ্বর এবং খ্রিস্টের দাস বলে শনাক্ত করেছিল। (তীত ১:১; যাকোব ১:১; ২ পিতর ১:১; যিহূদা ১) থিষলনীকীর খ্রিস্টানদের পৌল স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, তারা “[তাহাদের] প্রতিমাগণ হইতে ঈশ্বরের দিকে ফিরিয়া” এসেছে “যেন জীবন্ত সত্য ঈশ্বরের সেবা করিতে” পারে। (১ থিষলনীকীয় ১:৯) কী ওই খ্রিস্টানদের ঈশ্বরের ইচ্ছুক দাস হতে পরিচালিত করেছিল? সেই ইস্রায়েলীয় দাসের ক্ষেত্রে চালিকাশক্তিটা কী ছিল, যিনি তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা অস্বীকার করতেন? সেটা কি তার প্রভুর প্রতি প্রেম নয়? খ্রিস্টীয় দাসত্বের ভিত্তি হল ঈশ্বরের প্রতি প্রেম। আমরা যখন সত্য ও জীবন্ত ঈশ্বরকে জানি এবং তাকে ভালবাসি, তখন আমরা “[আমাদের] সমস্ত হৃদয় ও [আমাদের] সমস্ত প্রাণের সহিত” তাঁকে সেবা করতে পরিচালিত হই। (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১২, ১৩) কিন্তু, ঈশ্বর এবং খ্রিস্টের দাস হওয়ার সঙ্গে কী জড়িত? এটা কীভাবে আমাদের রোজকার জীবনকে প্রভাবিত করে?

“সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর”

৪. কীভাবে আমরা ঈশ্বর এবং খ্রিস্টের দাস হয়ে উঠি?

একজন দাসকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, “যে-ব্যক্তি অন্য আরেক ব্যক্তির বা অন্যদের বৈধ সম্পত্তি এবং সম্পূর্ণ বাধ্যতা দেখাতে বাধ্য।” আমরা যখন যিহোবার কাছে আমাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছি এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছি, তখন আমরা যিহোবার বৈধ সম্পত্তি হয়েছি। “তোমরা নিজের নও, কারণ মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ,” প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন। (১ করিন্থীয় ৬:২০) অবশ্যই, সেই মূল্য হল যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান কারণ এর ভিত্তিতেই ঈশ্বর তাঁর দাস হিসেবে আমাদের গ্রহণ করেন, তা আমরা অভিষিক্ত খ্রিস্টান অথবা তাদের পার্থিব আশাসম্পন্ন সহযোগী যে-ই হই না কেন। (ইফিষীয় ১:৭; ২:১৩; প্রকাশিত বাক্য ৫:৯) তাই, আমাদের বাপ্তিস্মের সময় থেকে “আমরা প্রভুরই [“যিহোবারই,” NW]।” (রোমীয় ১৪:৮) যেহেতু যিশু খ্রিস্টের অমূল্য রক্তের দ্বারা আমাদের ক্রয় করা হয়েছে, তাই আমরা তাঁরও দাস এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করতে বাধ্য।—১ পিতর ১:১৮, ১৯.

৫. যিহোবার দাস হিসেবে আমাদের প্রধান কোন বাধ্যবাধকতা রয়েছে আর কীভাবে আমরা তা পরিপূর্ণ করতে পারি?

দাসদের তাদের প্রভুর বাধ্য থাকতে হবে। আমাদের দাসত্ব স্বেচ্ছাপ্রণোদিত এবং প্রভুর প্রতি আমাদের ভালবাসার দ্বারা অনুপ্রাণিত। “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই,” ১ যোহন ৫:৩ পদ বলে, “যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” তা হলে, আমাদের ক্ষেত্রে বাধ্যতা হল আমাদের প্রেম ও সেইসঙ্গে আমাদের বশীভূত থাকার প্রমাণ। আর আমরা যা কিছু করি, তার সমস্তকিছুতে সেটা দেখা যায়। “তোমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর,” পৌল বলেছিলেন, “সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।” (১ করিন্থীয় ১০:৩১) রোজকার জীবনে এমনকি ছোটোখাটো উপায়েও আমরা দেখাতে চাই যে, আমরা “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দাসত্ব” করি।—রোমীয় ১২:১২.

৬. কীভাবে ঈশ্বরের দাস হওয়া জীবনে আমরা যে-সিদ্ধান্তগুলো নিই, সেগুলোতে প্রভাব ফেলে? একটা উদাহরণের সাহায্যে তা ব্যাখ্যা করুন।

উদাহরণস্বরূপ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমরা আমাদের স্বর্গীয় প্রভু যিহোবার ইচ্ছা বিবেচনা করার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে চাই। (মালাখি ১:৬) কঠিন সিদ্ধান্তগুলো ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বাধ্যতাকে পরীক্ষায় ফেলে। সেই সময় আমরা কি আমাদের “বঞ্চক” এবং বেপরোয়া বা “রোগ অপ্রতিকার্য্য” এমন হৃদয়ের প্রবণতা অনুযায়ী কাজ করার পরিবর্তে তাঁর পরামর্শে মনোযোগ দেব? (যিরমিয় ১৭:৯) মেলিসা নামে এক অবিবাহিত খ্রিস্টান বাপ্তিস্ম নেওয়ার কিছু পরেই একজন যুবক তার প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছিল। তাকে নম্রভদ্র বলেই মনে হয়েছিল এবং সে ইতিমধ্যেই যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করছিল। তা সত্ত্বেও, একজন প্রাচীন “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করার বিষয়ে যিহোবার আজ্ঞা মেনে চলার প্রজ্ঞা সম্বন্ধে মেলিসাকে বলেছিলেন। (১ করিন্থীয় ৭:৩৯; ২ করিন্থীয় ৬:১৪) “সেই উপদেশ মেনে চলা আমার পক্ষে সহজ ছিল না,” মেলিসা স্বীকার করেন। “কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, যেহেতু আমি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য তাঁর কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলাম, তাই আমি তাঁর স্পষ্ট নির্দেশনা মেনে চলব।” যা ঘটেছিল সেই বিষয়ে চিন্তা করে তিনি বলেন: “আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমি সেই উপদেশ মেনে চলেছিলাম। সেই যুবক শীঘ্রই অধ্যয়ন করা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি যদি সেই সম্পর্ক রাখতাম, তা হলে আমি আজকে একজন অবিশ্বাসীকে বিয়ে করতাম।”

৭, ৮. (ক) মানুষকে সন্তুষ্ট করার বিষয়ে কেন আমাদের অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়? (খ) কীভাবে লোকভয় কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে, তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

ঈশ্বরের দাস হিসেবে কোনোভাবেই আমরা মানুষের দাস হব না। (১ করিন্থীয় ৭:২৩) এটা ঠিক যে, আমরা কেউই অপ্রিয় হতে চাই না কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, খ্রিস্টানদের যে-মানগুলো রয়েছে, সেগুলো জগতের মানগুলো থেকে আলাদা। পৌল জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমি কি মানুষকে সন্তুষ্ট করিতে চেষ্টা করিতেছি?” উপসংহারে তিনি বলেছিলেন: “যদি এখনও মানুষকে সন্তুষ্ট করিতাম, তবে খ্রীষ্টের দাস হইতাম না।” (গালাতীয় ১:১০) আমরা কেবল আমাদের সঙ্গীসাথিদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে লোকেদের আনন্দ দিতে চাই না। তা হলে, আমরা যখন মানিয়ে নেওয়ার চাপের মুখোমুখি হই, তখন আমরা কী করতে পারি?

স্পেনের আ্যলেনা নামে একজন অল্পবয়স্ক খ্রিস্টানের কথা চিন্তা করুন। তার বেশ কয়েক জন সহপাঠী ছিল, যারা রক্তদান করত। তারা জানত যে, যিহোবার একজন সাক্ষি হিসেবে আ্যলেনা রক্তদান করবে না অথবা রক্তগ্রহণ করবে না। যখন পুরো ক্লাসের সামনে তার দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার একটা সুযোগ এসেছিল, তখন আ্যলেনা নিজে থেকেই কিছু বলেছিল। “সত্যি বলতে কী, এই ব্যাপারটায় আমি অত্যন্ত ঘাবড়ে গিয়েছিলাম,” আ্যলেনা ব্যাখ্যা করে। “কিন্তু, আমি ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আর ফলাফল হয়েছিল আশ্চর্যজনক। আমি আমার অনেক সহছাত্র-ছাত্রীর সম্মান অর্জন করতে পেরেছিলাম এবং শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন যে, আমার কাজ দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। সর্বোপরি, যিহোবার নামের পক্ষ সমর্থন এবং আমার শাস্ত্রীয় অবস্থানের কারণগুলো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পেরেছিলাম বলে আমি পরিতৃপ্ত বোধ করেছিলাম।” (আদিপুস্তক ৯:৩, ৪; প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) হ্যাঁ, ঈশ্বর এবং খ্রিস্টের দাস হিসেবে আমরা আলাদা। কিন্তু, সম্মানের সঙ্গে আমাদের বিশ্বাসের পক্ষ সমর্থন করার জন্য প্রস্তুত থাকলে আমরা হয়তো লোকেদের সম্মান অর্জন করতে পারব।—১ পিতর ৩:১৫.

৯. সেই দূতের কাছ থেকে আমরা কী শিখি, যিনি প্রেরিত যোহনকে দেখা দিয়েছিলেন?

আমরা ঈশ্বরের দাস, এই বিষয়টা মনে রাখাও আমাদের নম্র থাকতে সাহায্য করে। একবার প্রেরিত যোহন স্বর্গীয় যিরূশালেম বিষয়ক চমৎকার দর্শন দেখে এতটাই অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন যে, ভজনা করার জন্য তিনি সেই দূতের চরণের সামনে পড়েছিলেন, যিনি ঈশ্বরের মুখপাত্র হিসেবে সেবা করেছিলেন। “দেখিও,” দূত তাকে বলেছিলেন। “এমন কর্ম্ম করিও না; আমি তোমার সহদাস, এবং তোমার ভ্রাতা ভাববাদিগণের ও এই গ্রন্থে লিখিত বচন পালনকারিগণের সহদাস; ঈশ্বরেরই ভজনা কর।” (প্রকাশিত বাক্য ২২:৮, ৯) ঈশ্বরের সমস্ত দাসের জন্য এই দূত কত উত্তম উদাহরণই না স্থাপন করেন! কিছু খ্রিস্টানের হয়তো মণ্ডলীতে বিশেষ দায়িত্বপূর্ণ পদ থাকতে পারে। তা সত্ত্বেও, যিশু বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে যে কেহ মহান্‌ হইতে চায়, সে তোমাদের পরিচারক হইবে; এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ প্রধান হইতে চায়, সে তোমাদের দাস হইবে।” (মথি ২০:২৬, ২৭) যিশুর অনুসারী হিসেবে আমরা সকলে দাস।

“যাহা করিতে বাধ্য ছিলাম, তাহাই করিলাম”

১০. ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা যে তাঁর ইচ্ছা পালন করাকে সবসময় সহজ বলে মনে করেনি, তা দেখানোর জন্য শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো দিন।

১০ অসিদ্ধ মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা সবসময় সহজ নয়। ভাববাদী মোশি সেই সময় আজ্ঞা পালন করতে অনিচ্ছুক হয়েছিলেন, যখন যিহোবা তাকে ইস্রায়েল সন্তানদের মিশরীয় দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আনতে বলেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ৩:১০, ১১; ৪:১, ১০) নীনবীর লোকেদের কাছে বিচারবার্তা ঘোষণা করার কার্যভার পাওয়ার পর, যোনা ‘সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে তর্শীশে পলাইয়া যাইবার নিমিত্ত উঠিয়াছিলেন।’ (যোনা ১:২, ৩) ভাববাদী যিরমিয়ের প্রতিলিপিকারী সচিব বারূক ক্লান্ত হয়ে পড়ার বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন। (যিরমিয় ৪৫:২, ৩) আমাদের ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা অথবা পছন্দ যখন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে, তখন আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? যিশুর দেওয়া একটা দৃষ্টান্ত এর উত্তর দেয়।

১১, ১২. (ক) লূক ১৭:৭-১০ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর দৃষ্টান্তটি সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। (খ) যিশুর দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করি?

১১ যিশু একজন দাসের কথা বলেছিলেন, যিনি সারাদিন মাঠে তার প্রভুর পালের দেখাশোনা করেছিলেন। দাস যখন প্রায় ১২ ঘন্টা হাড়ভাঙা খাটুনি করে ঘরে ফিরে এসেছিলেন, তখন তার প্রভু তাকে বসতে এবং সুস্বাদু খাবার খেতে আমন্ত্রণ জানাননি। এর পরিবর্তে প্রভু বলেছিলেন: “আমি কি খাইব, তাহার আয়োজন কর, এবং আমি যতক্ষণ ভোজন পান করি, ততক্ষণ কোমর বাঁধিয়া আমার সেবা কর, তাহার পর তুমি ভোজন পান করিবে।” সেই দাস একমাত্র তার প্রভুর সেবা করার পরই তার নিজের প্রয়োজনের প্রতি মনোযোগ দিতে পারতেন। যিশু এই বলে তাঁর দৃষ্টান্ত শেষ করেছিলেন: “সেই প্রকারে সমস্ত আজ্ঞা পালন করিলে পর তোমরাও বলিও আমরা অনুপযোগী দাস, যাহা করিতে বাধ্য ছিলাম, তাহাই করিলাম।”—লূক ১৭:৭-১০.

১২ যিশু এটা দেখানোর জন্য এই দৃষ্টান্তটি দেননি যে, যিহোবার সেবায় আমরা যা করি, সেটার প্রতি তিনি উপলব্ধি দেখান না। বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।” (ইব্রীয় ৬:১০) বরং, যিশুর দৃষ্টান্তের বিষয়বস্তু হল যে, একজন দাস নিজেকে সন্তুষ্ট করতে অথবা তার নিজের আরাম-আয়েশের প্রতি মনোযোগ দিতে পারে না। আমরা যখন নিজেদের ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করেছিলাম এবং তাঁর দাস হওয়া বেছে নিয়েছিলাম, তখন আমরা আমাদের নিজেদের ইচ্ছার পরিবর্তে বরং তাঁর ইচ্ছাকে প্রথমে রাখার বিষয়ে একমত হয়েছিলাম। ঈশ্বরের ইচ্ছাকে আমাদের ইচ্ছার আগে রাখতে হবে।

১৩, ১৪. (ক) কোন কোন পরিস্থিতিতে আমাদের হয়তো নিজেদের প্রবণতাকে কাটিয়ে উঠতে হবে? (খ) কেন আমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত?

১৩ ঈশ্বরের বাক্য এবং ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা জোগানো প্রকাশনাদি নিয়মিতভাবে অধ্যয়ন করার জন্য আমাদের অনেক প্রচেষ্টা করার প্রয়োজন হতে পারে। (মথি ২৪:৪৫) বিশেষ করে সেই সময় যখন পড়া আমাদের জন্য সবসময় কঠিন হয়ে থাকে অথবা কোনো প্রকাশনাদি যদি “ঈশ্বরের গভীর বিষয়” নিয়ে আলোচনা করে থাকে। (১ করিন্থীয় ২:১০) তবুও, আমাদের কি ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য সময় করে নেওয়া উচিত নয়? আমাদের হয়তো অধ্যয়নের বিষয়বস্তু নিয়ে বসা এবং তাতে সময় দেওয়ার জন্য নিজেদের শাসন করতে হবে। কিন্তু, তা না করলে কীভাবে আমরা “কঠিন খাদ্য [যা] সিদ্ধবয়স্কদেরই জন্য,” সেটার স্বাদ গ্রহণ করতে পারব?—ইব্রীয় ৫:১৪.

১৪ আমরা যখন এক দীর্ঘ দিনের কাজের শেষে বাড়িতে ফিরে আসি, সেই সময় সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমাদের হয়তো খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যাওয়ার জন্য নিজেদের তাগাদা দিতে হবে। অথবা অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছে প্রচার করার সহজাত প্রবণতা আমাদের না-ও থাকতে পারে। পৌল নিজে স্বীকার করেছিলেন যে, এমন সময় আসতে পারে, যখন আমরা সুসমাচার ঘোষণা করি, তবে “স্ব-ইচ্ছায়” নয়। (১ করিন্থীয় ৯:১৭) কিন্তু, আমরা এই বিষয়গুলো করি কারণ যিহোবা—আমাদের স্বর্গীয় প্রভু, যাকে আমরা ভালবাসি—আমাদের বলেছেন যে, আমাদের তা করা উচিত। আর অধ্যয়ন করার, সভাতে উপস্থিত থাকার এবং প্রচার করার জন্য চেষ্টা করার পর আমরা কি সবসময় পরিতৃপ্ত এবং সতেজ বোধ করি না?—গীতসংহিতা ১:১, ২; ১২২:১; ১৪৫:১০-১৩.

“পিছনে ফিরিয়া” তাকাবেন না

১৫. কীভাবে যিশু ঈশ্বরের প্রতি বশ্যতার এক উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

১৫ যিশু খ্রিস্ট সর্বোত্তম উপায়ে তাঁর স্বর্গীয় পিতার প্রতি বশ্যতা দেখিয়েছিলেন। “আমার ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসি নাই, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহারই ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য,” যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন। (যোহন ৬:৩৮) গেৎশিমানী বাগানে নিদারুণ যন্ত্রণার সময় তিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “হে আমার পিতঃ, যদি হইতে পারে, তবে এই পানপাত্র আমার নিকট হইতে দূরে যাউক; তথাপি আমার ইচ্ছামত না হউক, তোমার ইচ্ছামত হউক।”—মথি ২৬:৩৯.

১৬, ১৭. (ক) যে-বিষয়গুলো আমরা পিছনে ফেলে এসেছি, সেগুলোকে আমাদের কোন দৃষ্টিতে দেখা উচিত? (খ) দেখান যে, কীভাবে পৌল জাগতিক সম্ভাবনাগুলোকে “সমস্তেরই ক্ষতি” হিসেবে গণ্য করার ক্ষেত্রে বাস্তববাদী ছিলেন?

১৬ যিশু খ্রিস্ট চান যাতে ঈশ্বরের দাস হওয়ার জন্য আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা বজায় রাখি। তিনি বলেছিলেন: “যে কোন ব্যক্তি লাঙ্গলে হাত দিয়া পিছনে ফিরিয়া চায়, সে ঈশ্বরের রাজ্যের উপযোগী নয়।” (লূক ৯:৬২) ঈশ্বরের সেবা করার সময়, যে-বিষয়গুলো আমরা পিছনে ফেলে এসেছি, সেগুলো নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করা নিশ্চিতভাবে আমাদের জন্য উপযুক্ত নয়। বরং, ঈশ্বরের দাস হওয়া বেছে নেওয়ার দ্বারা আমরা যা অর্জন করেছি, সেগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করা উচিত। ফিলিপীয়দের প্রতি পৌল লিখেছিলেন: “বাস্তবিক আমার প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি; তাঁহার নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়াছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টকে লাভ করি।”—ফিলিপীয় ৩:৮.

১৭ পৌল যে-বিষয়গুলোকে সমস্তই ক্ষতি বলে বিবেচনা করেছিলেন এবং ঈশ্বরের একজন দাস হিসেবে আধ্যাত্মিক পুরস্কারগুলো লাভ করার জন্য যেগুলো পরিত্যাগ করেছিলেন, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। তিনি কেবল জগতের আরাম-আয়েশই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে যিহুদি ধর্মের একজন ভাবি নেতা হওয়ার সম্ভাবনাও ত্যাগ করে এসেছিলেন। পৌল যদি যিহুদি ধর্মেই থাকতেন, তা হলে তিনি হয়তো তার শিক্ষক গমলীয়েলের ছেলে শিমিয়োনের মতো একই অবস্থানে থাকতেন। (প্রেরিত ২২:৩; গালাতীয় ১:১৪) শিমিয়োন ফরীশীদের একজন নেতা হয়েছিলেন এবং সা.কা. ৬৬-৭০ সালে—কিছু আপত্তি সত্ত্বেও—তিনি রোমীয়দের বিরুদ্ধে যিহুদি বিদ্রোহে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি সেই দ্বন্দ্বে হয় যিহুদি চরমপন্থী নতুবা রোমীয় সৈন্যদের হাতে মারা গিয়েছিলেন।

১৮. আধ্যাত্মিক প্রাপ্তিগুলো যেভাবে পরিতৃপ্তি নিয়ে আসতে পারে, তা দেখানোর জন্য একটা উদাহরণ দিন।

১৮ যিহোবার সাক্ষিদের অনেকে পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করেছে। “পড়াশোনা শেষ করার কয়েক বছরের মধ্যেই আমি লন্ডনের একজন বিখ্যাত উকিলের নির্বাহী সচিব হিসেবে চাকরি পাই,” জিন বলেন। “আমি আমার কাজ উপভোগ করতাম এবং অনেক টাকাপয়সা রোজগার করতাম কিন্তু হৃদয় থেকে আমি জানতাম যে, যিহোবাকে সেবা করার জন্য আমি আরও বেশি কিছু করতে পারি। অবশেষে আমি কাজে ইস্তফা দিই এবং অগ্রগামীর কাজ শুরু করি। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে, প্রায় ২০ বছর আগে আমি সেই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম! আমার পূর্ণসময়ের পরিচর্যা যেকোনো সচিবের চাকরির চেয়ে আমার জীবনকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছে। যিহোবার বাক্য একজন ব্যক্তির জীবনকে কীভাবে পরিবর্তিত করতে পারে, তা দেখার মহান পরিতৃপ্তি আর কোনোকিছুই দিতে পারে না। সেই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা এক অপূর্ব বিষয়। যিহোবাকে দেওয়ার সঙ্গে আমরা যা কিছু লাভ করি, সেটার তুলনা হয় না।”

১৯. আমাদের দৃঢ়সংকল্প কী হওয়া উচিত এবং কেন?

১৯ আমাদের পরিস্থিতিগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে পারে। কিন্তু, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণ একই থাকে। আমরা এখনও যিহোবার দাস এবং কীভাবে আমরা আমাদের সময়, শক্তি, বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য গুণগুলোকে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে পারি, সেই সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার তিনি আমাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তাই, এই বিষয়ে আমরা যে-সিন্ধান্তগুলো নিই, সেগুলো ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমকে প্রকাশ করতে পারে। এ ছাড়া, সিদ্ধান্তগুলো দেখায় যে, আমরা কতদূর পর্যন্ত ব্যক্তিগত ত্যাগস্বীকার করতে রাজি আছি। (মথি ৬:৩৩) আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, যিহোবাকে আমাদের সর্বোত্তমটা দেওয়ার জন্য কি আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত নয়? পৌল লিখেছিলেন: “যদি আগ্রহ থাকে, তবে যাহার যাহা আছে, তদনুসারে তাহা গ্রাহ্য হয়; যাহার যাহা নাই, তদনুসারে নয়।”—২ করিন্থীয় ৮:১২.

‘তোমরা ফল পাইতেছ’

২০, ২১. (ক) ঈশ্বরের দাসদের দ্বারা কোন ফল উৎপন্ন হয়? (খ) যারা যিহোবাকে তাদের সর্বোত্তমটা দেয়, তাদেরকে যিহোবা কীভাবে পুরস্কৃত করেন?

২০ ঈশ্বরের দাস হওয়া পীড়নকর নয়। এর বৈসাদৃশ্যে এটা আমাদের সেই মারাত্মক ক্ষতিকর দাসত্ব থেকে সুরক্ষা জোগায়, যা আমাদের সুখকে কেড়ে নেয়। “পাপ হইতে স্বাধীনীকৃত হইয়া, এবং ঈশ্বরের দাস হইয়া,” পৌল লিখেছিলেন, “তোমরা পবিত্রতার জন্য ফল পাইতেছ এবং তাহার পরিণাম অনন্ত জীবন।” (রোমীয় ৬:২২) ঈশ্বরের জন্য আমাদের দাসত্ব করা এই অর্থে পবিত্রতার জন্য ফল উৎপন্ন করে যে, আমরা পবিত্র অথবা নৈতিকভাবে শুদ্ধ আচরণ থেকে উপকার লাভ করি। এ ছাড়াও, ভবিষ্যতে এটা আমাদের অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করে।

২১ যিহোবা তাঁর দাসদের প্রতি উদার। আমরা যখন তাঁর সেবায় আমাদের সর্বোত্তমটা করি, তখন তিনি আমাদের জন্য “আকাশের দ্বার সকল” মুক্ত করেন এবং আমাদের প্রতি “অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ” করেন। (মালাখি ৩:১০) চিরকাল ধরে যিহোবার দাস হিসেবে সেবা করে চলা কতই না আনন্দদায়ক হবে!

আপনার কি মনে আছে?

• কেন আমরা ঈশ্বরের দাস হয়ে উঠি?

• কীভাবে আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি আমাদের বশ্যতা দেখাই?

• যিহোবার ইচ্ছাকে আমাদের নিজের ইচ্ছার আগে রাখার জন্য কেন আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত?

• কেন আমাদের ‘পিছনে ফিরিয়া চাওয়া’ উচিত নয়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ইস্রায়েলে স্বেচ্ছায় দাসত্ব করার ব্যবস্থা খ্রিস্টীয় দাসত্বের এক পূর্বাভাস ছিল

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমরা যখন বাস্তিস্ম নিই, তখন আমরা ঈশ্বরের দাস হয়ে উঠি

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের ইচ্ছাকে প্রথমে রাখে

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

মোশি তার কার্যভার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অনিচ্ছুক ছিলেন