সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রথম শমূয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

প্রথম শমূয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

প্রথম শমূয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

সময়টা হচ্ছে সা.কা.পূ. ১১১৭ সাল। যিহোশূয় প্রতিজ্ঞাত দেশ জয় সম্পন্ন করার পর প্রায় তিনশো বছর কেটে গিয়েছে। ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ যিহোবার ভাববাদীর কাছে এক উল্লেখযোগ্য অনুরোধ নিয়ে আসে। ভাববাদী বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনা করেন আর যিহোবা তাদের অনুরোধ গ্রাহ্য করেন। এটা বিচারকদের সময়ের শেষ এবং মানব রাজাদের যুগের শুরুকে চিহ্নিত করে। বাইবেলের প্রথম শমূয়েল বইটি ইস্রায়েল জাতির ইতিহাসের সেই সন্ধিক্ষণকে ঘিরে রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলোর বিষয়ে বর্ণনা করে।

শমূয়েল, নাথন এবং গাদের দ্বারা লিখিত প্রথম শমূয়েল বইয়ের মধ্যে ১০২ বছরের—সা.কা.পূ. ১১৮০ থেকে ১০৭৮ সাল পর্যন্ত—ঘটনাবলি রয়েছে। (১ বংশাবলি ২৯:২৯) এটি ইস্রায়েলের চার জন নেতার এক বিবরণ। দুজন বিচারক হিসেবে এবং দুজন রাজা হিসেবে সেবা করে; দুজন যিহোবার প্রতি বাধ্য এবং দুজন অবাধ্য। এ ছাড়াও, আমরা দুজন উদাহরণযোগ্য মহিলা এবং এক সাহসী অথচ অমায়িক যোদ্ধার সঙ্গে পরিচিত হই। এই উদাহরণগুলো, কোন আচরণগুলো অনুকরণ করতে হবে এবং কোনগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, সেই সম্বন্ধে মূল্যবান শিক্ষাগুলো প্রদান করে। তাই, প্রথম শমূয়েল বইয়ের বিষয়বস্তু আমাদের চিন্তাভাবনা এবং আচরণের ক্ষেত্রে কার্যকারী হতে পারে।—ইব্রীয় ৪:১২.

এলির স্থলে শমূয়েল বিচারক হন

(১ শমূয়েল ১:১–৭:১৭)

সময়টা হচ্ছে ফলসঞ্চয়ের উৎসব আর হান্না, যিনি রামায় বাস করেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। * যিহোবা তার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন এবং তিনি এক ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তার মানত পূর্ণ করার জন্য হান্না তার ছেলে শমূয়েলকে “সদাপ্রভুর গৃহে” সেবা করার জন্য দান করেন। সেখানে ছেলেটি “এলি যাজকের সম্মুখে সদাপ্রভুর পরিচর্য্যা” করেন। (১ শমূয়েল ১:২৪; ২:১১) শমূয়েলের বয়স যখন অনেক কম, তখন যিহোবা তার সঙ্গে কথা বলেন এবং এলির কুলের ওপর যিহোবার দণ্ডাজ্ঞা ঘোষণা করেন। শমূয়েল বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইস্রায়েলের সমস্ত লোক তাকে যিহোবার একজন ভাববাদী হিসেবে স্বীকার করে।

এক সময় পলেষ্টীয়রা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে আসে। তারা সিন্দুক হস্তগত করে এবং এলির দুই ছেলেকে হত্যা করে। এই সংবাদ শোনার পর বৃদ্ধ এলি মারা যান, যিনি “চল্লিশ বৎসর ইস্রায়েলের বিচার করিয়াছিলেন।” (১ শমূয়েল ৪:১৮) সিন্দুক অধিকার করা পলেষ্টীয়দের জন্য ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হয়, তাই তারা এটি ইস্রায়েলীয়দের ফেরত দিয়ে দেয়। শমূয়েল এখন ইস্রায়েলে বিচার করছেন আর তাই দেশে শান্তি বিরাজ করছে।

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

২:১০—কেন হান্না প্রার্থনা করেছিলেন যে, যিহোবা “আপন রাজাকে বল দিবেন,” যখন ইস্রায়েলের মধ্যে কোনো মানব রাজা ছিল না? ইস্রায়েলীয়দের যে একজন মানব রাজা থাকবে, সেই সম্বন্ধে মোশির ব্যবস্থায় ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৪-১৮) মৃত্যুশয্যায় ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় যাকোব বলেছিলেন: “যিহূদা হইতে রাজদণ্ড [রাজকীয় কর্তৃত্বের এক প্রতীক] যাইবে না।” (আদিপুস্তক ৪৯:১০) এ ছাড়া, সারার—ইস্রায়েলীয়দের আদিমাতার—বিষয়ে যিহোবা বলেছিলেন: “তাহা হইতে লোকবৃন্দের রাজগণ উৎপন্ন হইবে।” (আদিপুস্তক ১৭:১৬) তাই, হান্না একজন ভাবি রাজা সম্বন্ধে প্রার্থনা করছিলেন।

৩:৩—শমূয়েল কি প্রকৃতপক্ষে অতি পবিত্রস্থানে শয়ন করতেন? না, তিনি সেখানে শয়ন করতেন না। শমূয়েল ছিলেন কহাতীয়দের অযাজকীয় গোষ্ঠীর একজন লেবীয়। (১ বংশাবলি ৬:৩৩-৩৮) প্রকৃতপক্ষে, তাকে ‘পবিত্র বস্তু দেখিতে ভিতরে যাইবার’ অনুমতি দেওয়া হয়নি। (গণনাপুস্তক ৪:১৭-২০) পবিত্রস্থানের কেবল যে-অংশে শমূয়েল যেতে পারতেন, সেটা ছিল আবাসের প্রাঙ্গণ। তিনি নিশ্চয়ই সেখানেই শয়ন করেছেন। আর স্পষ্টতই এলি নিজেও প্রাঙ্গণের কোনো একটা জায়গায় শয়ন করতেন। “ঈশ্বরীয় সিন্দুক যে স্থানে ছিল,” এই অভিব্যক্তিটি স্পষ্টতই আবাসস্থানকে নির্দেশ করেছিল।

৭:৭-৯, ১৭—যেহেতু কেবল যিহোবার মনোনীত স্থানেই নিয়মিতভাবে বলি উৎসর্গ করার কথা ছিল, তা হলে কেন শমূয়েল মিস্‌পাতে হোমবলি উৎসর্গ করেছিলেন এবং রামাতে যজ্ঞবেদি নির্মাণ করেছিলেন? (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:৪-৭, ১৩, ১৪; যিহোশূয়ের পুস্তক ২২:১৯) শীলোর আবাস থেকে পবিত্র সিন্দুক সরানোর পর, যিহোবার উপস্থিতির প্রমাণ সেখানে আর ছিল না। তাই, ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে, শমূয়েল মিস্‌পাতে হোমবলি উৎসর্গ করেছিলেন এবং রামাতেও যজ্ঞবেদি নির্মাণ করেছিলেন। স্পষ্টতই, এই কাজকে যিহোবা অনুমোদন করেছিলেন।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:১১, ১২, ২১-২৩; ২:১৯. হান্নার প্রার্থনাপূর্ণ মনোভাব, তার নম্রতা, যিহোবার দয়ার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা এবং তার চির মাতৃস্নেহ ঈশ্বরভয়শীল মহিলাদের জন্য উদাহরণযোগ্য।

১:৮. কথার মাধ্যমে অন্যদেরকে শক্তিশালী করার কী এক উদাহরণই না ইল্‌কানা স্থাপন করেছেন! (ইয়োব ১৬:৫) তিনি হতাশাগ্রস্ত হান্নার কাছে কোনোরকম কৈফিয়ৎ না চেয়ে তাকে এই প্রশ্ন করেছিলেন: “তোমার মন শোকাকুল কেন?” এটা হান্নাকে তার অনুভূতি সম্বন্ধে প্রকাশ করতে উৎসাহিত করেছিল। এরপর ইল্‌কানা তাকে তার অনুরাগের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন, এই বলে: “তোমার কাছে দশ পুত্ত্র হইতেও কি আমি উত্তম নহি?”

২:২৬; ৩:৫-৮, ১৫, ১৯. ঈশ্বরদত্ত কাজ অধ্যবসায়ের সঙ্গে সম্পন্ন করে, আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এবং সুশীল ও শ্রদ্ধাপূর্ণ হয়ে আমরা ঈশ্বর ও মানুষ উভয়ের কাছেই “অনুগ্রহ প্রাপ্ত” হতে পারি।

৪:৩, ৪, ১০. এমনকি নিয়মসিন্দুকের মতো পবিত্র বস্তুও রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেনি। আমাদের অবশ্যই ‘প্রতিমাগণ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিতে’ হবে।—১ যোহন ৫:২১.

ইস্রায়েলের প্রথম রাজা —এক সাফল্য অথবা ব্যর্থতা?

(১ শমূয়েল ৮:১–১৫:৩৫)

শমূয়েল সারাজীবন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত আছেন কিন্তু তার ছেলেরা ঈশ্বরের পথে চলে না। ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ যখন একজন মানব রাজার জন্য অনুরোধ করেছিল, তখন যিহোবা তাদেরকে একজন রাজা দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেন। শমূয়েল যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করেন এবং রাজা হিসেবে বিন্যামীন বংশীয় এক সুদর্শন যুবক শৌলকে মনোনীত করেন। অম্মোনীয়দের পরাজিত করার মাধ্যমে শৌল রাজা হিসেবে তার পদকে দৃঢ় করেন।

শৌলের সাহসী পুত্র যোনাথন পলেষ্টীয়দের এক প্রহরী সৈন্যদলকে পরাজিত করেন। পলেষ্টীয়রা এক বিরাট বাহিনী নিয়ে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে আসে। শৌল ভীতবিহ্বল হয়ে পড়েন এবং অবাধ্য হয়ে নিজে নিজে এক হোমবলি উৎসর্গ করেন। সাহসী যোনাথন কেবলমাত্র তার অস্ত্রবাহককে নিয়েই পলেষ্টীয় আরেক প্রহরী সৈন্যদলকে আক্রমণ করেন। কিন্তু, ঝোঁকের মাথায় নেওয়া শৌলের শপথ জয়ী হওয়ার শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। শৌল তার সমস্ত শত্রুদের বিরুদ্ধে “যুদ্ধ করিলেন।” (১ শমূয়েল ১৪:৪৭) কিন্তু, অম্মোনীয়দের পরাজিত করার পর, যে-বিষয়গুলো “বর্জ্জিত” করার কথা ছিল, সেগুলো ধ্বংস না করে তিনি যিহোবার অবাধ্য হন। (লেবীয় পুস্তক ২৭:২৮, ২৯) পরিণামস্বরূপ, যিহোবা শৌলকে রাজা হিসেবে পরিত্যাগ করেন।

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৯:৯—“যাঁহাকে ভাববাদী বলা যায়, পূর্ব্বকালে তাঁহাকে দর্শক বলা যাইত,” এই অভিব্যক্তির তাৎপর্য কী? এই কথাগুলো হয়তো ইঙ্গিত দেয় যে, ভাববাদীরা শমূয়েলের দিনে এবং ইস্রায়েলের রাজাদের যুগে বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছিল আর “দর্শক” শব্দটির জায়গায় “ভাববাদী” শব্দটি প্রচলিত হয়েছে। ভাববাদীদের বংশধারায় শমূয়েলকেই প্রথম বলে বিবেচনা করা হয়।—প্রেরিত ৩:২৪.

১৪:২৪-৩২, ৪৪, ৪৫—শৌলের শপথ লঙ্ঘন করে মধু খাওয়ার ফলে যোনাথন কি ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারিয়েছিলেন? এই কাজের ফলে যোনাথন ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারিয়েছেন বলে মনে হয় না। প্রথমত, যোনাথন তার বাবার শপথ সম্বন্ধে জানতেন না। তা ছাড়া, শপথ যা হয় মিথ্যা উদ্যোগ অথবা রাজকীয় ক্ষমতার ভুল দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল, তা লোকেদের জন্য সমস্যার কারণ হয়েছিল। কীভাবে এইরকম এক শপথে ঈশ্বরের অনুমোদন থাকতে পারে? যদিও যোনাথন শপথ লঙ্ঘন করার পরিণতি মেনে নিতে ইচ্ছুক ছিলেন কিন্তু তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন।

১৫:৬—কেন কেনীয়রা শৌলের কাছ থেকে বিশেষ দয়া পেয়েছিল? কেনীয়রা মোশির শ্বশুরের বংশধর ছিল। ইস্রায়েলীরা সীনয় পর্বত ত্যাগ করার পরে তারা তাদের সাহায্য করেছিল। (গণনাপুস্তক ১০:২৯-৩২) এ ছাড়া, কনান দেশেও কেনীয়রা যিহূদার সন্তানদের সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য বাস করেছিল। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১:১৬) যদিও তারা পরে অমালেকীয় এবং অন্যান্য লোকেদের সঙ্গে বসবাস করেছিল, তবুও ইস্রায়েলের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। তাই, উত্তম কারণেই শৌল কেনীয়দের আঘাত করা থেকে বিরত ছিলেন।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

৯:২১; ১০:২২, ২৭. শৌল যখন প্রথম রাজা হয়েছিলেন, তখন তার বিনয়ী মনোভাব এবং নম্রতা তাকে সেই সময় নির্বোধের মতো কাজ করা থেকে রক্ষা করেছিল, যখন কিছু ‘পাষণ্ড’ লোক তার রাজপদকে মেনে নেয়নি। অযৌক্তিক কাজগুলোর বিরুদ্ধে এই ধরনের মনোভাব কী এক সুরক্ষা!

১২:২০, ২১. “অবস্তু” যেমন মানুষের ওপর নির্ভর করা, জাতিগুলোর সামরিক শক্তির ওপর আস্থা রাখা অথবা প্রতিমাপূজাকে কখনও যিহোবার সেবা থেকে আপনাকে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেবেন না।

১২:২৪. যিহোবার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় বজায় রাখা এবং আমাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে তাঁকে সেবা করার মূল চাবিটা হল, প্রাচীনকালে ও সেইসঙ্গে আধুনিক দিনে তাঁর লোকেদের জন্য তিনি যে ‘মহৎ মহৎ কর্ম্ম করিয়াছেন, তাহা দেখা।’

১৩:১০-১৪; ১৫:২২-২৫, ৩০. অহংকারের বিষয়ে সাবধান থাকুন—তা সেটা অবাধ্যতার কাজ অথবা গর্বিত মনোভাব যা কিছু দ্বারাই প্রকাশ পাক না কেন।—হিতোপদেশ ১১:২.

একজন বালক মেষপালককে রাজপদের জন্য মনোনীত করা হয়

(১ শমূয়েল ১৬:১–৩১:১৩)

শমূয়েল যিহূদা বংশীয় দায়ূদকে ভাবি রাজা হওয়ার জন্য অভিষিক্ত করেন। এর কিছু পরেই, দায়ূদ পলেষ্টীয় দৈত্যাকৃতি গলিয়াৎকে কেবল গুলতির একটা প্রস্তর দিয়ে হত্যা করেন। দায়ূদ এবং যোনাথনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। শৌল দায়ূদকে তার যোদ্ধাদের ওপর নিযুক্ত করেন। দায়ূদের অনেক বিজয়ের ফলে ইস্রায়েলের মহিলারা গান গেয়েছিল: “শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র, আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত।” (১ শমূয়েল ১৮:৭) ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে শৌল দায়ূদকে হত্যা করার চেষ্টা করেন। তিন বার শৌলের দ্বারা আক্রমণের পর দায়ূদ পালিয়ে যান এবং একজন পলাতক হয়ে ওঠেন।

পলাতক হিসেবে থাকার সময় দায়ূদ দুবার শৌলকে বধ করা থেকে বিরত ছিলেন। সেইসঙ্গে তিনি সুন্দরী অবীগলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং অবশেষে তাকে বিয়ে করেন। পলেষ্টীয়রা যখন ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে আসে, তখন শৌল যিহোবার অনুসন্ধান করেন। কিন্তু, যিহোবা তাকে ত্যাগ করেছেন। শমূয়েল মারা গিয়েছেন। বেপরোয়া হয়ে শৌল একজন ভূতুরিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করেন, শুধু এই কথা শোনার জন্য যে পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি মারা যাবেন কি না। সেই যুদ্ধে শৌল মারাত্মক আহত হন এবং তার ছেলেদের হত্যা করা হয়। একজন ব্যর্থ ব্যক্তি হিসেবে শৌলের মৃত্যু দ্বারা সেই বিবরণ শেষ হয়। দায়ূদ এখনও লুকিয়ে আছেন।

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

১৬:১৪—কোন দুষ্ট আত্মা শৌলকে উদ্বিগ্ন করেছিল? যে-দুষ্ট আত্মা শৌলের মনের শান্তি হরণ করেছিল, তা ছিল তার মন ও হৃদয়ের দুষ্ট প্রবণতা—অন্যায় করার জন্য তার ভিতরের জোরালো মনোভাব। যিহোবা যখন তাঁর পবিত্র আত্মা উঠিয়ে নেন, তখন শৌল যিহোবার সুরক্ষা হারিয়ে ফেলেন এবং তার নিজের দুষ্ট মনোভাবের দ্বারা চালিত হন। যেহেতু ঈশ্বর পবিত্র আত্মার জায়গায় সেই দুষ্ট আত্মাকে থাকতে দিয়েছিলেন, তাই এই দুষ্ট আত্মাকে “সদাপ্রভু হইতে এক দুষ্ট আত্মা” বলে অভিহিত করা হয়েছে।

১৭:৫৫১ শমূয়েল ১৬:১৭-২৩ পদের পরিপ্রেক্ষিতে কেন শৌল জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, দায়ূদ কার পুত্র ছিলেন? শৌলের অনুসন্ধান করার মধ্যে কেবল দায়ূদের বাবার নাম জানতে চাওয়ার বিষয়টাই ছিল না। খুব সম্ভবত তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কোন ধরনের ব্যক্তি এমন এক ছেলের জন্ম দিয়েছিলেন, যিনি সবেমাত্র এক দৈত্যকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেছেন।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১৬:৬, ৭. অন্যদের বাহ্যিক বেশভূষা দেখে প্রভাবিত না হয়ে অথবা সঙ্গে সঙ্গে তাদের সম্বন্ধে সিদ্ধান্তে না এসে বরং তাদেরকে যিহোবার মতো করে আমাদের দেখার চেষ্টা করতে হবে।

১৭:৪৭-৫০. আমরা গলিয়াতের মতো শত্রুদের কাছ থেকে আসা বিরোধিতা অথবা তাড়না সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি কারণ “এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর।”

১৮:১, ৩; ২০:৪১, ৪২. প্রকৃত বন্ধুদের তাদের মধ্যেও পাওয়া যেতে পারে, যারা যিহোবাকে ভালবাসে।

২১:১২, ১৩. যিহোবা চান যাতে আমরা আমাদের মানসিক দক্ষতাকে এবং ক্ষমতাকে আমাদের জীবনের কঠিন পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করার জন্য কাজে লাগাই। তিনি আমাদেরকে তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য দিয়েছেন, যা আমাদের বিচক্ষণতা, জ্ঞান এবং পরিণামদর্শিতা বা চিন্তা করার ক্ষমতা দান করে। (হিতোপদেশ ১:৪) এ ছাড়া, নিযুক্ত প্রাচীনদের সাহায্যও আমাদের রয়েছে।

২৪:৬; ২৬:১১. যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তির প্রতি অকপট সম্মান দেখানোর ক্ষেত্রে দায়ূদ কত উত্তম উদাহরণই না স্থাপন করেছেন!

২৫:২৩-৩৩. অবীগলের সুবিচার উদাহরণযোগ্য।

২৮:৮-১৯. লোকেদের ভুলপথে পরিচালিত করা অথবা তাদের ক্ষতি করার চেষ্টায় দুষ্ট আত্মারা একজন নির্দিষ্ট কোনো মৃত ব্যক্তি হওয়ার ভান করতে পারে। আমাদের সমস্ত ধরনের প্রেতচর্চা থেকে পলায়ন করতে হবে।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২.

৩০:২৩, ২৪. গণনাপুস্তক ৩১:২৭ পদের ওপর ভিত্তি করা এই সিদ্ধান্ত দেখায় যে, যিহোবা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন, যারা মণ্ডলীতে সহকারী ভূমিকা পালন করে। তাই, আমরা যা-ই করি না কেন, আসুন ‘প্রাণের সহিত কার্য্য করি, মনুষ্যের কর্ম্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই [“যিহোবারই,” NW] কর্ম্ম বলিয়া করি।’—কলসীয় ৩:২৩.

কী ‘বলিদান অপেক্ষা উত্তম’?

এলি, শমূয়েল, শৌল এবং দায়ূদের অভিজ্ঞতাগুলোতে কোন মৌলিক সত্যর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে? এটা হল: “বলিদান অপেক্ষা আজ্ঞাপালন উত্তম, এবং মেষের মেদ অপেক্ষা অবধান করা উত্তম। কারণ আজ্ঞালঙ্ঘন করা মন্ত্রপাঠ জন্য পাপের তুল্য, এবং অবাধ্যতা, পৌত্তলিকতা ও ঠাকুরপূজার সমান।”—১ শমূয়েল ১৫:২২, ২৩.

বিশ্বব্যাপী রাজ্য প্রচার এবং শিষ্য তৈরির কাজে অংশগ্রহণ করার কী এক বিশেষ সুযোগই না আমাদের রয়েছে! আমরা যখন যিহোবাকে “আপন আপন ওষ্ঠাধর বৃষরূপে” দিই, তখন তাঁর লিখিত বাক্য এবং তাঁর সংগঠনের পার্থিব অংশের মাধ্যমে দেওয়া তাঁর নির্দেশনা মেনে চলার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।—হোশেয় ১৪:২; ইব্রীয় ১৩:১৫.

[পাদটীকা]

^ প্রথম শমূয়েল বইয়ে উল্লেখিত বিভিন্ন জায়গার অবস্থানের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত “সেই উত্তম দেশ দেখুন” (ইংরেজি) ব্রোশারের ১৮-১৯ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ইস্রায়েলের প্রথম রাজা এক নম্র এবং বিনয়ী শাসক থেকে পরিবর্তিত হয়ে এক গর্বিত এবং অহংকারী রাজা হয়ে ওঠেন

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

গলিয়াতের মতো শত্রুদের কাছ থেকে বিরোধিতার মুখোমুখি হলে আমরা কোন বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি?