সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার শক্তিতে শিম্‌শোন জয়ী হন!

যিহোবার শক্তিতে শিম্‌শোন জয়ী হন!

যিহোবার শক্তিতে শিম্‌শোন জয়ী হন!

 প্রতিহিংসাপরায়ণ শত্রুরা শিম্‌শোনের চোখ দুটো উপড়ে নেয় এবং তাকে সশ্রম কারাদণ্ডে পাঠায়। এরপর তারা তাকে জনতার মনোরঞ্জন করানোর জন্য কারাগার থেকে বের করে পৌত্তলিক মন্দিরে নিয়ে আসে। তারা তাকে হাজার হাজার দর্শকদের সামনে হেঁটে যেতে বাধ্য করে ও তাকে নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রূপ করে। এই বন্দি কোনো অপরাধী কিংবা কোনো শত্রু দলের একজন সেনাপতি নন। তিনি হলেন যিহোবার একজন উপাসক এবং তিনি ইস্রায়েলে ২০ বছর ধরে বিচারক হিসেবে সেবা করেছেন।

কীভাবে শিম্‌শোন—শারীরিক দিক দিয়ে সর্বকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি—এইরকম এক অবমাননাকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন? তার অসাধারণ শক্তি কি তাকে রক্ষা করেছিল? শিম্‌শোনের শক্তির গোপন রহস্যটা কী ছিল? তার জীবন কাহিনী থেকে আমরা কি কিছু শিখতে পারি?

তিনি “ইস্রায়েলকে নিস্তার করিতে আরম্ভ” করবেন

ইস্রায়েল সন্তানদের সত্য উপাসনা থেকে সরে আসার এক ইতিহাস ছিল। তাই, তারা যখন “সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই পুনর্ব্বার করিল; . . . সদাপ্রভু চল্লিশ বৎসর তাহাদিগকে পলেষ্টীয়দের হস্তে সমর্পণ করিলেন।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৩:১.

শিম্‌শোনের কাহিনী তখন থেকে শুরু হয়, যখন যিহোবার এক দূত মানোহ নামে একজন ইস্রায়েলীয় ব্যক্তির বন্ধ্যা স্ত্রীকে দর্শন দিয়েছিলেন এবং তাকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেবেন। “তাহার মস্তকে ক্ষুর উঠিবে না,” দূতটি তাকে জানিয়েছিলেন, “কেননা সেই বালক গর্ব্ভহইতেই ঈশ্বরের উদ্দেশে নাসরীয় হইবে, এবং সে পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে ইস্রায়েলকে নিস্তার করিতে আরম্ভ করিবে।” (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৩:২-৫) শিম্‌শোন মাতৃগর্ভে আসার আগেই যিহোবা স্থির করেছিলেন যে, শিম্‌শোনকে এক বিশেষ কার্যভার দেওয়া হবে। তার জন্মলগ্ন থেকেই তিনি একজন নাসরীয় হয়েছিলেন—এমন একজন যাকে বিশেষ ধরনের পবিত্র সেবার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।

সে “আমার দৃষ্টিতে মনোহরা”

শিম্‌শোন যতই বড় হতে থাকেন, “সদাপ্রভু তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন।” (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৩:২৪) একদিন শিম্‌শোন তার বাবা ও মায়ের কাছে এসে বলেছিলেন: “আমি তিম্নায় পলেষ্টীয়দের কন্যাদের মধ্যে একটী রমণীকে দেখিয়াছি; তোমরা তাহাকে আনিয়া আমার সহিত বিবাহ দেও।” (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৪:২) একটু কল্পনা করুন যে তারা কতখানি অবাক হয়েছিল। উৎপীড়কদের হাত থেকে ইস্রায়েলয়ীদের মুক্ত করার পরিবর্তে, তাদের ছেলে কিনা তাদের সঙ্গেই বিবাহ বন্ধন গড়ে তুলতে চাইছে। পৌত্তলিক দেব-দেবীর উপাসকদের মধ্যে থেকে একজন কন্যাকে বিয়ে করা ঈশ্বরের ব্যবস্থাবিরুদ্ধ ছিল। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:১১-১৬) তাই বাবামা আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন: “তোমার জ্ঞাতিগণের মধ্যে ও আমার সমস্ত স্বজাতির মধ্যে কি কন্যা নাই যে, তুমি অচ্ছিন্নত্বক্‌ পলেষ্টীয়দের কন্যা বিবাহ করিতে যাইতেছ?” তবুও শিম্‌শোন নাছোড়বান্দা হয়ে বলেছিলেন: “আমার জন্য তাহাকেই আনাও, কেননা আমার দৃষ্টিতে সে মনোহরা।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৪:৩.

কীভাবে নির্দিষ্টভাবে এই পলেষ্টীয় কন্যাটি শিম্‌শোনের কাছে “মনোহরা” হয়েছিল? ম্যাকক্লিনটক এবং স্ট্রংয়ের সাইক্লোপিডিয়া ইঙ্গিত করে, এর অর্থ নয় যে সে “সুন্দরী, নজরকাড়া, আকর্ষণীয়া” ছিল “কিন্তু এক অভীষ্ট, উদ্দেশ্য অথবা লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে” মনোহরা ছিল। কোন অভীষ্ট পূরণের ক্ষেত্রে? বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৪:৪ পদ ব্যাখ্যা করে যে, শিম্‌শোন “পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে সুযোগ অন্বেষণ করিতেছিলেন।” শিম্‌শোন সেই উদ্দেশ্যে কন্যাটির প্রতি আগ্রহী ছিলেন। শিম্‌শোন যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছিলেন, তখন “সদাপ্রভুর আত্মা . . . তাঁহাকে চালাইতে লাগিলেন,” অথবা তাকে পদক্ষেপ নিতে উদ্দীপিত করেছিল। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৩:২৫) তাই একজন স্ত্রীর জন্য শিম্‌শোনের এই অস্বাভাবিক অনুরোধ ও সেইসঙ্গে ইস্রায়েলের ওপর বিচারক হিসেবে তার পুরো কর্মজীবনের পিছনে যিহোবার আত্মা ছিল এক চালিকা শক্তি। শিম্‌শোন যে-সুযোগটা খুঁজছিলেন সেটা কি তিনি পেয়েছিলেন? আসুন আমরা প্রথমে বিবেচনা করি যে, যিহোবা কীভাবে তাকে ঐশিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন।

শিম্‌শোন তার ভাবী স্ত্রীর শহর, তিম্নায় ভ্রমণ করছিলেন। শাস্ত্রীয় বিবরণ জানায়, “তিম্নাস্থ দ্রাক্ষাক্ষেত্রে উপস্থিত হইলে দেখ, এক যুবা সিংহ শিম্‌শোনের সম্মুখবর্ত্তী হইয়া গর্জ্জিয়া উঠিল। তখন সদাপ্রভুর আত্মা তাঁহার উপরে সবলে আসিলেন, তাহাতে . . . তিনি . . . ঐ সিংহকে ছিঁড়িয়া ফেলিলেন।” শক্তির এই অসাধারণ প্রকাশ ঘটেছিল, যখন শিম্‌শোন একাকী ছিলেন। সেখানে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। একজন নাসরীয় হিসেবে শিম্‌শোন যে তার ঈশ্বরদত্ত কার্যভার পূরণ করতে সমর্থ ছিলেন, সেবিষয়ে আশ্বাস দেওয়ার এটাই কি যিহোবার উপায় ছিল? বাইবেল তা বলে না কিন্তু নিশ্চিতভাবে শিম্‌শোন উপলব্ধি করেছিলেন যে, তার নিজের এইরকম অসাধারণ শক্তি ছিল না। এটা নিশ্চয়ই ঈশ্বরের থেকে এসেছে। সামনে যে-কাজ রয়েছে সেই কাজে তাকে সাহায্য করার জন্য তিনি যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারতেন। সিংহ সংক্রান্ত ঘটনার দ্বারা শক্তি লাভ করে শিম্‌শোন “গিয়া সেই কন্যার সহিত আলাপ করিলেন; আর সে [তাহার] দৃষ্টিতে মনোহরা হইল।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৪:৫-৭.

পরে শিম্‌শোন যখন কন্যাটিকে বিয়ে করতে সেখানে ফিরে গিয়েছিলেন, তখন তিনি “সেই সিংহের শব দেখিবার জন্য পথ ছাড়িয়া গেলেন; আর দেখ, সিংহের দেহে এক ঝাঁক মধুমক্ষিকা ও মধুর চাক রহিয়াছে।” এই বিষয়টা মনে রেখে, শিম্‌শোন তার বিবাহ অনুষ্ঠানে ত্রিশ জন পলেষ্টীয় সহচরকে এই প্রহেলিকা বা ধাঁধাঁটা বলেছিলেন: “খাদক হইতে নির্গত হইল খাদ্য, বলবান হইতে নির্গত হইল মিষ্ট দ্রব্য।” তারা যদি এই ধাঁধাঁটার অর্থ বলতে পারে, তা হলে শিম্‌শোন তাদেরকে ৩০টা জামা ও ৩০ জোড়া বস্ত্র দেবেন। তারা যদি বলতে না পারে, তা হলে তাদের তাকে একই জিনিস দিতে হবে। পলেষ্টীয়রা তিন দিন ধরে ধাঁধাঁটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। চতুর্থ দিনে, তারা কন্যাটিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল। তারা তাকে বলেছিল: “তুমি আপনার স্বামীকে ফুস্‌লাও, যাহাতে তিনি প্রহেলিকার অর্থ আমাদিগকে বলেন; নতুবা আমরা তোমাকে ও তোমার পিতৃকুলকে আগুনে পোড়াইয়া মারিব।” কতই না নিষ্ঠুর! পলেষ্টীয়রা যদি তাদের নিজেদের লোকেদের সঙ্গে এইরকম ব্যবহার করে, তা হলে উৎপীড়িত ইস্রায়েলীয়দের অবস্থার কথা একটু কল্পনা করুন!—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৪:৮-১৫.

অত্যন্ত ভয় পেয়ে সেই কন্যাটি উত্তরটা তার কাছে বলার জন্য শিম্‌শোনকে জোরাজুরি করে। শিম্‌শোনের প্রতি ভালবাসা ও আনুগত্যের অভাব দেখিয়ে, সে সঙ্গে সঙ্গে সহচরদের জানিয়ে দেয়। তারা ধাঁধাঁটার অর্থ বলে দেয় আর শিম্‌শোন জানতেন যে, আসলে কীভাবে তারা এটা বলতে পেরেছে। তিনি তাদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি আমার গাভী দ্বারা চাষ না করিতে, আমার প্রহেলিকার অর্থ খুঁজিয়া পাইতে না।” যে-সুযোগটার জন্য শিম্‌শোন এতদিন অপেক্ষা করছিলেন, তখনই সেটা সামনে এসেছিল। “সদাপ্রভুর আত্মা তাঁহার উপরে সবলে আসিলেন, আর তিনি অস্কিলোনে নামিয়া গিয়া তথাকার ত্রিশ জনকে আঘাত করিয়া তাহাদের বস্ত্র খুলিয়া লইয়া প্রহেলিকার অর্থকারীদিগকে যোড়া যোড়া বস্ত্র দিলেন।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৪:১৮, ১৯.

অস্কিলোনে শিম্‌শোনের কাজ কি তার প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছার দ্বারা চালিত হয়েছিল? না। এটা ছিল ঈশ্বরের মনোনীত উদ্ধারকারীর মাধ্যমে তাঁরই একটা কাজ। শিম্‌শোনের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর লোকেদের নিষ্ঠুর উৎপীড়কদের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ আরম্ভ করেছিলেন। এই অভিযান ক্রমাগত চালিয়ে যেতে হতো। পরের সুযোগটা উপস্থিত হয়েছিল, যখন শিম্‌শোন তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।

একহাতে যুদ্ধ করা

তিম্নায় ফিরে এসে শিম্‌শোন জানতে পারেন যে, তার শ্বশুর অন্য লোকের সঙ্গে শিম্‌শোনের স্ত্রীর বিয়ে দিয়েছেন এমনটা মনে করে যে, শিম্‌শোন তাকে ঘৃণা করেন। শিম্‌শোনকে খুবই অসন্তুষ্ট মনে হয়েছিল। তিনি ৩০০টা শিয়াল ধরে সেগুলোকে জোড়া জোড়া করে বেঁধে দুই দুই লেজে এক একটা মশাল বেঁধে দিয়েছিলেন। সেগুলোকে যখন ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন সেগুলো শস্যক্ষেত্র, দ্রাক্ষাক্ষেত্র এবং জিতবৃক্ষের উদ্যান সমস্তই পুড়িয়ে ফেলে, সেই বছরের জন্য পলেষ্টীয়দের তিনটে প্রধান শস্যকে নষ্ট করে দেয়। ক্রুদ্ধ পলেষ্টীয়রা নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেছিল। তারা এর জন্য শিম্‌শোনের স্ত্রী ও তার বাবা দায়ী বলে মনে করে তাদের দুজনকে পুড়িয়ে মারে। তাদের এই নির্মম প্রতিশোধ শিম্‌শোনের উদ্দেশ্য সাধন করে। পরে, তিনি ব্যাপক হত্যাসাধন করে তাদের আক্রমণ করেছিলেন।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৫:১-৮.

ইস্রায়েলীয়রা কি বুঝতে পেরেছিল যে, যিহোবা ঈশ্বর শিম্‌শোনকে আশীর্বাদ করছিলেন আর তাই পলেষ্টীয়দের শাসনের শেষ আনার জন্য তার সঙ্গে ছিলেন? একেবারেই না। সমস্যা এড়ানোর জন্য, যিহূদার লোকেরা ঈশ্বরের মনোনীত নেতাকে গ্রেপ্তার করার এবং তার শত্রুদের কাছে তাকে আত্মসমর্পণ করার জন্য ৩,০০০ জন লোক পাঠায়। কিন্তু, ইস্রায়েলীয়দের এই আনুগত্যহীনতা শিম্‌শোনকে তার শত্রুদের আরও ক্ষতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল। তিনি যখন পলেষ্টীয়দের হাতে প্রায় সমর্পিত হতে যাচ্ছেন, তখনই “সদাপ্রভুর আত্মা সবলে তাঁহার উপরে আসিলেন, আর তাঁহার দুই বাহুস্থিত দুই রজ্জু অগ্নিদগ্ধ শণের ন্যায় হইল, এবং তাঁহার দুই হস্ত হইতে বেড়ি খসিয়া পড়িল।” এরপর তিনি এক গর্দভের হনু বা চোয়ালের হাড় তুলে নেন এবং তারপর সেটা দিয়ে এক সহস্র লোককে আঘাত করেন।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৫:১০-১৫.

যিহোবাকে অনুরোধ করে শিম্‌শোন বলেছিলেন: “তুমি আপন দাসের হস্ত দ্বারা এই মহানিস্তার সাধন করিয়াছ, এখন আমি তৃষ্ণা হেতু মারা পড়ি, ও অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকদের হাতে পড়ি।” যিহোবা শিম্‌শোনের প্রার্থনা শুনেছিলেন এবং এর উত্তর দিয়েছিলেন। “ঈশ্বর . . . শূন্যগর্ভ স্থান বিদীর্ণ করিলেন, ও তাহা হইতে জল নির্গত হইল; তখন তিনি জল পান করিলে তাঁহার প্রাণ ফিরিয়া আসিল, ও তিনি সজীব হইলেন।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৫:১৮, ১৯.

শিম্‌শোন তার লক্ষ্য অনুধাবন করার ক্ষেত্রে সংকল্পবদ্ধ ছিলেন, যেটা ছিল পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ। ঘসা বা গাজায় একজন বেশ্যার বাড়িতে শিম্‌শোনের থাকার পিছনে উদ্দেশ্য ছিল, ঈশ্বরের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। শত্রু শহরে রাতের বেলা থাকার জন্য শিম্‌শোনের একটা জায়গার প্রয়োজন ছিল আর তা তিনি পেয়েছিলেন একজন বেশ্যার বাড়িতে। শিম্‌শোনের মনে কোনো অনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি অর্ধরাতে বা মাঝরাতে স্ত্রীলোকটির বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, নগর-দ্বারের কবাট ও দুই বাজু উপড়িয়ে ফেলেছিলেন এবং সেগুলোকে হিব্রোণের কাছে এক পর্বতের ওপরে নিয়ে গিয়েছিলেন, যেটা প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে ছিল। এটা ঐশিক অনুমোদনে এবং ঈশ্বরদত্ত শক্তিতে করা হয়েছিল।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৬:১-৩.

অসাধারণ পরিস্থিতিগুলোর দরুন পবিত্র আত্মা শিম্‌শোনের ক্ষেত্রে যেভাবে কাজ করেছিল, তা অদ্বিতীয় ছিল। আজকে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা তাদেরকে শক্তিশালী করার জন্য সেই একই আত্মার ওপর নির্ভর করতে পারে। যিশু তাঁর অনুসারীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, যিহোবা “যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।”—লূক ১১:১৩.

যিহোবা কেন ‘শিম্‌শোনকে ত্যাগ করিয়াছিলেন’?

এটা তখন ঘটেছিল যখন শিম্‌শোন দলীলা নামে একটা স্ত্রীলোককে ভালবেসেছিলেন। পলেষ্টীয়দের পাঁচ ভূপাল শিম্‌শোনকে পরাস্ত করার জন্য এতই উঠে-পড়ে লেগেছিল যে, তারা তার স্ত্রীর সাহায্য চেয়েছিল। তারা দলীলার কাছে এসে তাকে বলেছিল: ‘তুমি তাহাকে ফুস্‌লাইয়া দেখ, কিসে তাহার এমন মহাবল হয়, কিসে আমরা তাহাকে জয় করিতে পারিব।’ পাঁচ ভূপালের প্রত্যেক জন ঘুস হিসেবে তাকে ‘এগার শত রৌপ্য মুদ্রা’ প্রদান করেছিল।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৬:৪, ৫.

রৌপ্য মুদ্রাগুলো যদি শেকল হয়ে থাকে, তা হলে ৫,৫০০ শেকল প্রদান করা বেশ বড় অঙ্কের ঘুস ছিল। অব্রাহাম তার স্ত্রীকে কবর দেওয়ার জায়গার জন্য ৪০০ শেকল প্রদান করেছিলেন আর একজন দাস মাত্র ৩০ শেকলে বিক্রি হতো। (আদিপুস্তক ২৩:১৪-২০; যাত্রাপুস্তক ২১:৩২) ভূপালেরা—পাঁচটা পলেষ্টীয় শহরের শাসকরা—যে দলীলার জাতিগত আনুগত্য নয় কিন্তু তার লোভের কারণে তাকে অনুরোধ করেছিল এই বিষয়টা ইঙ্গিত করে যে, তিনি সম্ভবত একজন ইস্রায়েলীয় স্ত্রীলোক ছিলেন। যাই হোক না কেন, দলীলা সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন।

তিন বার শিম্‌শোন দলীলাকে তার প্রশ্নের বিভ্রান্তিকর উত্তর দিয়েছিলেন আর দলীলা তিন বার তাকে তার শত্রুদের কাছে সমর্পণ করার চেষ্টা করে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। কিন্তু “সে প্রতিদিন বাক্য দ্বারা তাঁহাকে পীড়াপীড়ি করিয়া এমন ব্যস্ত করিয়া তুলিল যে, প্রাণধারণে তাঁহার বিরক্তি বোধ হইল।” শেষ পর্যন্ত শিম্‌শোন সত্যটা প্রকাশ করে দিয়েছিলেন যে—তার চুল কখনও কাটা হয়নি। তার চুল যদি কাটা হয়, তা হলে তিনি দুর্বল হয়ে যাবেন এবং তার শক্তি অন্যান্য সমস্ত মানুষের মতোই হয়ে যাবে।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৬:৬-১৭.

সেটাই ছিল শিম্‌শোনের পতনের কারণ। দলীলা কৌশলে তাকে এমন এক পরিস্থিতিতে পরিচালিত করেছিলেন যে, তার মাথা মুণ্ডন করতে হয়েছিল। কিন্তু শিম্‌শোনের শক্তি প্রকৃতপক্ষে তার চুলের মধ্যে ছিল না। তার চুল কেবল একজন নাসরীয় হিসেবে ঈশ্বরের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ককে প্রতিনিধিত্ব করেছিল। শিম্‌শোন যখন মাথা মুণ্ডন করার কারণে তার পৃথক্‌-স্থিতি বা নাসরীয় পদকে প্রভাবিত হতে দিয়েছিলেন, তখন ‘সদাপ্রভু তাহাকে পরিত্যাগ করিয়াছিলেন।’ পরে পলেষ্টীয়রা শিম্‌শোনের ওপর শক্তি প্রয়োগ করে তাকে অন্ধ করেছিল এবং কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৬:১৮-২১.

এটা আমাদেরকে কী জোরালো শিক্ষাই না দেয়! যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে কি খুবই মূল্যবান হিসেবে আমাদের গণ্য করা উচিত নয়? আমরা যদি আমাদের খ্রিস্টীয় উৎসর্গীকরণের ব্যাপারে কোনোরকম আপোশ করি, তা হলে আমরা কীভাবে আশা করতে পারি যে, তিনি আমাদের ওপর আশীর্বাদ করবেন?

“পলেষ্টীয়দের সহিত আমার প্রাণ যাউক”

শিম্‌শোনের পতনে মহা উল্লাসিত পলেষ্টীয়রা তাদের দেবতা দাগোনকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল। তাদের বিজয় উৎসবে, তারা তাদের বন্দি শিম্‌শোনকে দাগোনের মন্দিরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শিম্‌শোন তার পতনের প্রকৃত কারণ জানতেন। তিনি জানতেন কেন যিহোবা তাকে পরিত্যাগ করেছেন আর শিম্‌শোন তার নিজের ব্যর্থতার জন্য অনুশোচনা করেছিলেন। শিম্‌শোন যখন কারাগারে ছিলেন, তখন তার মাথার চুল বেশ ঘন হয়ে বড় হতে শুরু করেছিল। হাজার হাজার পলেষ্টীয়দের সামনে এখন তিনি কোন পদক্ষেপ নেবেন?

শিম্‌শোন প্রার্থনা করে বলেছিলেন, “প্রভু সদাপ্রভু, অনুগ্রহ করিয়া আমাকে স্মরণ করুন; হে ঈশ্বর, অনুগ্রহ করিয়া কেবল এই একটী বার আমাকে বলবান করুন, যেন আমি পলেষ্টীয়দিগকে আমার দুই চক্ষুর নিমিত্ত একেবারেই প্রতিশোধ দিতে পারি।” এরপর তিনি গৃহের মধ্যস্থিত স্তম্ভ দুটো ধরে “আপনার সমস্ত বলে নত হইয়া পড়িলেন।” ফল কী হয়েছিল? “তাহাতে ঐ গৃহ ভূপালগণের ও যত লোক ভিতরে ছিল, সমস্ত লোকের উপরে পড়িল; এইরূপে তিনি জীবনকালে যত লোক বধ করিয়াছিলেন, মরণকালে তদপেক্ষা অধিক লোককে বধ করিলেন।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৬:২২-৩০.

শারীরিক শক্তির দিক দিয়ে শিম্‌শোনের সমতুল্য কোনো ব্যক্তি ছিল না। তার পরাক্রমী কাজগুলো বাস্তবিকই উল্লেখযোগ্য ছিল। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, যিহোবার বাক্য শিম্‌শোনকে বিশ্বাসে বলবান ব্যক্তিদের মধ্যে গণিত করে।—ইব্রীয় ১১:৩২-৩৪.

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

শিম্‌শোনের শক্তির গোপন রহস্য কী ছিল?