আমাদের সন্তানরা—এক মূল্যবান উত্তরাধিকার
আমাদের সন্তানরা—এক মূল্যবান উত্তরাধিকার
“দেখ, সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার, গর্ব্ভের ফল তাঁহার দত্ত পুরস্কার।” —গীতসংহিতা ১২৭:৩.
১. কীভাবে প্রথম মানবশিশুর জন্ম হয়েছিল?
সেই অলৌকিক ঘটনাগুলো বিবেচনা করুন, যা যিহোবা ঈশ্বর প্রথম পুরুষ এবং নারী সৃষ্টি করার মাধ্যমে সম্ভবপর করেছিলেন। বাবা আদম এবং মা হবা দুজনেই তাদের দেহের একটা অংশ দিয়েছিল, যেটি হবার গর্ভে সম্পূর্ণ নতুন এক ব্যক্তি—প্রথম মানবশিশু—হিসেবে বেড়ে উঠেছিল। (আদিপুস্তক ৪:১) এমনকি আজও পর্যন্ত গর্ভধারণ এবং একটা শিশুর জন্ম আমাদের বিস্মিত করে আর অনেকে যেমন বলে থাকে যে, এটা এক অলৌকিক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়।
২. একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভে যা ঘটে, সেটাকে কেন আপনি এক অলৌকিক কাজ বলবেন?
২ বাবার সঙ্গে মিলনের ফলে মায়ের মধ্যে উৎপন্ন হওয়া প্রথম কোষটা প্রায় ২৭০ দিনের মধ্যে অসংখ্য কোষ দিয়ে গঠিত একটা শিশুতে পরিণত হয়। সেই প্রথম কোষের মধ্যে ২০০রও বেশি প্রকারের কোষ উৎপন্ন করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনাগুলো থাকে। সেই চমৎকার নির্দেশনাগুলো, যা মানুষের বোধাতীত, সেগুলো মেনে চলে এই বিস্ময়কর জটিল কোষগুলো একটা নতুন জীবিত ব্যক্তি গঠন করার জন্য একেবারে সঠিক শৃঙ্খলা ও নিয়মে বৃদ্ধি পায়!
৩. কেন অনেক যুক্তিবাদী লোক এই বিষয়ে একমত যে, ঈশ্বরই এক নতুন জীবিত মানুষের জন্ম সম্ভবপর করেছেন?
৩ আপনি কাকে শিশুর প্রকৃত নির্মাতা বলবেন? নিঃসন্দেহে, তাঁকে যিনি জীবন সৃষ্টি করেছেন। বাইবেলের গীতরচক গেয়েছিলেন: “তোমরা জানিও, সদাপ্রভুই ঈশ্বর, তিনিই আমাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছেন, আমরা তাঁহারই।” (গীতসংহিতা ১০০:৩) বাবামারা, আপনারা ভালভাবেই জানেন যে, আপনাদের কোনো প্রতিভার গুণে আপনারা এত মূল্যবান এক শিশুকে জন্ম দেননি। কেবল অসীম প্রজ্ঞার অধিকারী একজন ঈশ্বরই এক নতুন জীবিত মানুষের অলৌকিক অবয়ব গঠন করতে পারেন। হাজার হাজার বছর ধরে যুক্তিবাদী লোকেরা মায়ের গর্ভে একটা শিশুর গঠনের কৃতিত্ব মহান সৃষ্টিকর্তাকে দিয়েছে। আপনিও কি তা দেন?—গীতসংহিতা ১৩৯:১৩-১৬.
৪. মানুষের কোন ত্রুটি কখনোই যিহোবার ওপর আরোপ করা যায় না?
৪ কিন্তু, যিহোবা কি একজন অনুভূতিহীন সৃষ্টিকর্তা, যিনি কেবল এক জৈবিক প্রক্রিয়া তৈরি করেছিলেন, যেটার দ্বারা পুরুষ ও নারী বংশধর উৎপন্ন করতে পারবে? কিছু মানুষ অনুভূতিহীন কিন্তু যিহোবা কখনোই তাদের মতো নন। (গীতসংহিতা ৭৮:৩৮-৪০) গীতসংহিতা ১২৭:৩ পদে বাইবেল বলে: “দেখ, সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার, গর্ব্ভের ফল তাঁহার দত্ত পুরস্কার।” এখন আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, অধিকার বা উত্তরাধিকার কী এবং এটা কীসের প্রমাণ দেয়।
এক উত্তারাধিকার ও এক পুরস্কার
৫. কেন সন্তানরা এক উত্তরাধিকার?
৫ উত্তরাধিকার হল একটা উপহারের মতো। প্রায়ই বাবামারা তাদের সন্তানদের জন্য উত্তরাধিকার রেখে যেতে কঠোর পরিশ্রম করে। সেটা টাকাপয়সা, বিষয়সম্পত্তি বা কিছু মূল্যবান সম্পদও হতে পারে। যা-ই হোক না কেন, এটা বাবামার ভালবাসার এক প্রমাণ। বাইবেল বলে যে, ঈশ্বর বাবামাদেরকে এক উত্তরাধিকার হিসেবে তাদের সন্তানদের দিয়েছেন। তারা তাঁর কাছ থেকে এক প্রেমময় উপহার। আপনি যদি একজন বাবা অথবা মা হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কি বলতে পারবেন, আপনার কাজগুলো দেখায় যে আপনি আপনার সন্তানদের এমন এক উপহার হিসেবে দেখেন, যা এই নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আস্থা সহকারে আপনাকে দিয়েছেন?
৬. মানুষকে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষম করার পিছনে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কী ছিল?
৬ এই উপহার দেওয়ার পিছনে যিহোবার উদ্দেশ্য ছিল, পৃথিবী যেন আদম ও হবার বংশধর দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। (আদিপুস্তক ১:২৭, ২৮; যিশাইয় ৪৫:১৮) যিহোবা প্রত্যেক মানুষকে আলাদা আলাদাভাবে সৃষ্টি করেননি, যেমনটা তিনি লক্ষ লক্ষ দূতকে করেছিলেন। (গীতসংহিতা ১০৪:৪; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) বরং, ঈশ্বর মানুষকে সন্তান উৎপন্ন করার ক্ষমতা দিয়ে তৈরি করা বেছে নেন, যে-সন্তান তাদের বাবামার সদৃশ হবে। একজন মা এবং বাবার জন্য এইরকম এক নতুন ব্যক্তিকে জন্ম দেওয়া এবং তার যত্ন নেওয়া কত অপূর্ব এবং অদ্বিতীয় এক সুযোগ! যিহোবা এই মূল্যবান উত্তরাধিকার উপভোগ করার সুযোগ আপনাকে দিয়েছেন, এর জন্য বাবামা হিসেবে আপনি কি তাঁকে ধন্যবাদ জানান?
যিশুর উদাহরণ থেকে শিখুন
৭. কিছু মানব বাবামা যা করে থাকে সেগুলোর বিপরীতে, যিশু কীভাবে ‘মনুষ্য-সন্তানগণের’ প্রতি তাঁর আগ্রহ এবং সমবেদনা দেখিয়েছিলেন?
৭ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, সব বাবামা তাদের সন্তানদের এক পুরস্কার হিসেবে দেখে না। অনেকে তাদের সন্তানদের প্রতি একেবারেই সমবেদনা দেখায় না। এইরকম ব্যক্তিরা যিহোবা অথবা তাঁর পুত্রের মতো মনোভাব প্রকাশ করে না। (গীতসংহিতা ২৭:১০; যিশাইয় ৪৯:১৫) এর বিপরীতে, অল্পবয়স্কদের প্রতি যিশুর আগ্রহ সম্বন্ধে বিবেচনা করে দেখুন। এমনকি যিশু মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আসার আগেও—যখন তিনি স্বর্গে একজন শক্তিশালী আত্মিক ব্যক্তি ছিলেন—বাইবেল বলে যে, তিনি ‘মনুষ্য-সন্তানগণে আনন্দিত’ হতেন। (হিতোপদেশ ৮:৩১) মানুষের প্রতি তাঁর ভালবাসা এতটাই গভীর ছিল যে, তিনি স্বেচ্ছায় মুক্তির মূল্য হিসেবে তাঁর জীবন দিয়েছিলেন, যাতে আমরা অনন্তজীবন পেতে পারি।—মথি ২০:২৮; যোহন ১০:১৮.
৮. কীভাবে যিশু বাবামাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
৮ পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু বাবামাদের জন্য বিশেষভাবে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি যা করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। তিনি ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন, এমনকি তখনও যখন তিনি অনেক ব্যস্ত ও মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। তিনি তাদেরকে বাজারে খেলতে দেখেছিলেন এবং তাদের আচরণের কিছু বৈশিষ্ট্য তাঁর শিক্ষার মধ্যে ব্যবহার করেছিলেন। (মথি ১১:১৬, ১৭) যিরূশালেমে তাঁর শেষ যাত্রার সময়, যিশু জানতেন যে তিনি কষ্টভোগ করবেন ও মারা যাবেন। তাই, তাঁকে দেখার জন্য লোকেরা যখন ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছিল, তখন যিশুর শিষ্যরা সম্ভবত তাঁকে আরও অতিরিক্ত চাপ থেকে রক্ষা করার জন্য ছোট ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, যিশু তাঁর শিষ্যদের তিরস্কার করেছিলেন। ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তাঁর ‘আনন্দের’ বিষয়টা দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন: “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না।”—মার্ক ১০:১৩, ১৪.
৯. আমাদের কথার চেয়ে আমাদের কাজ কেন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে?
৯ আমরা যিশুর উদাহরণ থেকে শিখতে পারি। ছোটরা যখন আমাদের কাছে আসে, তখন আমরা কীরকম প্রতিক্রিয়া দেখাই—এমনকি যখন আমরা ব্যস্ত থাকি? যিশুর মতো কি? সন্তানদের যে-বিষয়টা দরকার, বিশেষ করে বাবামার কাছ থেকে, সেটা হল যিশু তাদের যা দিতে ইচ্ছুক ছিলেন তা—তাঁর সময় এবং মনোযোগ। এটা ঠিক যে, এই ধরনের কথা যেমন, “আমি তোমাকে ভালবাসি” বলা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, কথার চেয়ে কাজ আরও বেশি কার্যকর। আপনার ভালবাসা শুধুমাত্র আপনার কথার দ্বারাই নয় কিন্তু আপনার কাজের দ্বারা আরও বেশি প্রকাশিত হয়। এটা আপনার ছোট বাচ্চাদের প্রতি আপনার যত্ন, সময় এবং মনোযোগের দ্বারা প্রকাশ পায়। কিন্তু, এই সমস্তকিছু করা লক্ষণীয় ফলাফল না-ও নিয়ে আসতে পারে, অন্ততপক্ষে যত তাড়াতাড়ি আপনি আশা করেন তত তাড়াতাড়ি নয়। এর জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন। আমরা ধৈর্য ধরা শিখতে পারি, যদি যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা অনুকরণ করি।
যিশুর ধৈর্য এবং স্নেহ
১০. কীভাবে যিশু তাঁর শিষ্যদের নম্রতা সম্বন্ধে এক শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং প্রথমবার তা কী সফলতা পেয়েছিল?
১০ যিশু তাঁর শিষ্যদের মধ্যে কে বিশিষ্ট, সেটা নিয়ে চলতে থাকা প্রতিযোগিতা সম্বন্ধে অবগত ছিলেন। তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে কফরনাহূমে পৌঁছানোর পর একদিন তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন: “পথে তোমরা কোন্ বিষয়ে তর্কবিতর্ক করিতেছিলে? তাঁহারা চুপ করিয়া রহিলেন, কারণ কে শ্রেষ্ঠ, পথে পরস্পর এই বিষয়ে বাদানুবাদ করিয়াছিলেন।” তাদেরকে কঠোরভাবে তিরস্কার করার পরিবর্তে যিশু ধৈর্য সহকারে তাদেরকে এক বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছিলেন, যাতে তিনি তাদেরকে নম্রতা সম্বন্ধে শেখাতে পারেন। (মার্ক ৯:৩৩-৩৭) এটা কি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিয়ে এসেছিল? সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে আসেনি। প্রায় ছয় মাস পরে, যাকোব এবং যোহন রাজ্যে বিশিষ্ট পদ পাবার জন্য যিশুকে অনুরোধ করতে তাদের মাকে দিয়ে সুপারিশ করিয়েছিল। আবারও যিশু ধৈর্য সহকারে তাদের চিন্তাভাবনাকে শুধরে দিয়েছিলেন।—মথি ২০:২০-২৮.
১১. (ক) যিশুর সঙ্গে ওপরের কুঠুরিতে পৌঁছানোর পর তাঁর প্রেরিতরা কোন রীতিগত কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছিল? (খ) যিশু কী করেছিলেন এবং তাঁর সেই প্রচেষ্টা কি সেই সময়ে সফল হয়েছিল?
১১ শীঘ্রই সাধারণ কাল ৩৩ সালের নিস্তারপর্বের সময় উপস্থিত হয় এবং তা উদ্যাপন করার জন্য যিশু একান্তে তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে মিলিত হন। ওপরের কুঠুরিতে পৌঁছানোর পর, ১২ জন প্রেরিতের মধ্যে একজনও রীতিগতভাবে অন্যদের ময়লা পা ধুইয়ে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেননি, যা গৃহের একজন দাস অথবা একজন মহিলার দ্বারা করা সবচেয়ে ছোট কাজ ছিল। (১ শমূয়েল ২৫:৪১; ১ তীমথিয় ৫:১০) তাঁর শিষ্যদের এখনও পদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতে দেখে যিশু কত দুঃখই না পেয়েছিলেন! তাই, যিশু প্রত্যেকের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন আর এরপর অন্যদের সেবা করার বিষয়ে তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করেছিলেন। (যোহন ১৩:৪-১৭) তারা কি তা করেছিল? বাইবেল বলে যে, কিছু সময় পর সেই দিন সন্ধ্যায় “তাঁহাদের মধ্যে এই বিবাদও উৎপন্ন হইল যে, তাঁহাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য।”—লূক ২২:২৪.
১২. সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রচেষ্টায় বাবামারা কীভাবে যিশুকে অনুকরণ করতে পারে?
১২ আপনার সন্তানরা যখন আপনার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ না করে, তখন বাবামারা আপনারা কি উপলব্ধি করেন যে, যিশু কেমন অনুভব করেছিলেন? লক্ষ করুন যে, যিশু তাঁর প্রেরিতদের বিষয়ে হাল ছেড়ে দেননি, যদিও তারা তাদের দোষত্রুটিগুলো শোধরাতে দেরি করেছিল। তাঁর ধৈর্য অবশেষে ফল উৎপন্ন করেছিল। (১ যোহন ৩:১৪, ১৮) বাবামারা, আপনাদের যিশুর প্রেম ও ধৈর্য অনুকরণ করা উচিত, কখনো আপনার সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রচেষ্টায় হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।
১৩. একজন বাবা অথবা মার কেন সন্তানের জিজ্ঞাসাকে ধমক দিয়ে অবহেলা করা উচিত নয়?
১৩ সন্তানদের বোঝা প্রয়োজন যে, তাদের বাবামা তাদেরকে ভালবাসে এবং তাদের প্রতি আগ্রহী। যিশু জানতে চেয়েছিলেন যে, তাঁর শিষ্যরা কী চিন্তা করে, তাই তারা যখন বিভিন্ন প্রশ্ন করত, তখন তিনি শুনতেন। কিছু বিষয়ে তাদের চিন্তাভাবনা কী, তা তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করতেন। (মথি ১৭:২৫-২৭) হ্যাঁ, উত্তম শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং অকৃত্রিম আগ্রহ দেখানো। একজন বাবা অথবা মার, এক জিজ্ঞাসু সন্তানকে ধমক দিয়ে অবহেলা করার এইরকম যেকোনো প্রবণতাকে প্রতিরোধ করা উচিত: “যাও এখান থেকে! দেখতে পাচ্ছ না আমি ব্যস্ত?” বাবা অথবা মা যদি সত্যিই ব্যস্ত থাকেন, তা হলে সন্তানকে বুঝিয়ে বলা উচিত যে, বিষয়টা নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে। আর বাবামার এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে যেন পরে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এভাবে সন্তান বুঝতে পারবে যে, তার প্রতি বাবামার সত্যিই আগ্রহ রয়েছে এবং সে আরও সহজে বাবা অথবা মার ওপর আস্থা স্থাপন করতে পারবে।
১৪. বাবামারা তাদের সন্তানদের প্রতি স্নেহ দেখানোর ক্ষেত্রে যিশুর কাছ থেকে কী শিখতে পারে?
১৪ সন্তানদের কোলে নিয়ে এবং তাদেরকে জড়িয়ে ধরে স্নেহ দেখানো কি বাবামার জন্য উপযুক্ত? আবারও বাবামারা যিশুর কাছ থেকে শিখতে পারে। বাইবেল বলে যে, তিনি “তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন।” (মার্ক ১০:১৬) ছোট বাচ্চারা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল বলে আপনি মনে করেন? নিঃসন্দেহে তাদের হৃদয় উষ্ণ হয়েছিল এবং তারা যিশুর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল! বাবামারা, আপনাদের ও আপনাদের ছোট বাচ্চাদের মধ্যে যদি অকৃত্রিম স্নেহ ও ভালবাসা থাকে, তা হলে তারা আপনাদের দেওয়া শাসন এবং শিক্ষার প্রতি আরও দ্রুত সাড়া দেবে।
কতটা সময় দিতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন
১৫, ১৬. সন্তান লালনপালন সম্বন্ধীয় একটা জনপ্রিয় ধারণা কী এবং আপাতদৃষ্টিতে কী এটাকে উদ্ভূত করেছে?
১৫ সন্তানদের তাদের বাবামার সঙ্গে অনেক সময় কাটানোর এবং তাদের কাছ থেকে প্রেমময় মনোযোগ পাওয়ার আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, সেই বিষয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছে। সন্তান লালনপালন সম্বন্বীয় একটা ধারণা যেটা খুব সুচতরভাবে প্রচলিত হয়ে উঠেছে, সেটাকে বলা হয় গঠনমূলক সময়। এই ধারণার সমর্থনকারীরা দাবি করে যে, সন্তানদের সঙ্গে কাটানো সীমিত সময় যদি অর্থপূর্ণ, সুপরিকল্পিত ও পূর্বনির্দিষ্ট হয়, তা হলে বাবামাদের সন্তানদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর প্রয়োজন হয় না। গঠনমূলক সময়ের ধারণাটা কি আসলেই কার্যকর, সেটা কি ছোট বাচ্চাদের মঙ্গলের কথা মনে রেখে উদ্ভূত হয়েছিল?
১৬ একজন লেখক, যার অনেক ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন যে, তারা “তাদের বাবামাদের কাছ থেকে যে-বিষয়টা সবচেয়ে বেশি চায়, তা হল আরও বেশি সময়” ও সেইসঙ্গে “পূর্ণ মনোযোগ।” লক্ষণীয় যে, কলেজের একজন অধ্যাপক মন্তব্য করেছিলেন: “বাবামার অপরাধবোধের কারণে এই শব্দটি [গঠনমূলক সময়] গড়ে উঠেছে। লোকেরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে কম সময় কাটানোর বিষয়টাকে নিজেদের কাছে সঠিক বলে তুলে ধরছিল।” তা হলে, সন্তানদের সঙ্গে বাবামাদের কতটা সময় ব্যয় করা উচিত?
১৭. বাবামার কাছ থেকে সন্তানদের কী প্রয়োজন?
১৭ বাইবেল তা বলে না। কিন্তু, ইস্রায়েলীয় বাবামাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন তাদের সন্তানদের সঙ্গে ঘরে থাকার, রাস্তায় চলার, ঘুমানোর এবং ঘুম থেকে ওঠার সময় তাদের সঙ্গে কথা বলে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭) স্পষ্টতই এর মানে হল যে, বাবামাদের প্রতিদিন ক্রমাগত তাদের সন্তানদের সঙ্গে ভাববিনিময় করা এবং তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া উচিত।
১৮. যিশু কীভাবে তাঁর শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিলেন এবং তা থেকে বাবামারা কী শিখতে পারে?
১৮ যিশু সফলভাবে তাঁর শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যখন তিনি তাদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন, ভ্রমণ করেছিলেন ও এমনকি যখন অবসর সময় কাটিয়েছিলেন। এভাবে তিনি তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিটা সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিলেন। (মার্ক ৬:৩১, ৩২; লূক ৮:১; ২২:১৪) একইভাবে, সন্তানদের সঙ্গে উত্তম ভাববিনিময় গড়ে তোলার ও তা বজায় রাখার এবং তাদেরকে যিহোবার পথে শিক্ষা দেওয়ার প্রতিটা সুযোগকে কাজে লাগানোর বিষয়ে খ্রিস্টান বাবামাদের সতর্ক থাকা উচিত।
যা শিক্ষা দিতে হবে এবং যেভাবে তা দেওয়া যায়
১৯. (ক) সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানো ছাড়াও আর কীসের প্রয়োজন? (খ) ছোট ছেলেমেয়েদেরকে বাবামাদের মূলত কী শিক্ষা দিতে হবে?
১৯ সন্তানদের সফলভাবে মানুষ করে তোলার জন্য শুধুমাত্র তাদের সঙ্গে সময় কাটানো আর এমনকি তাদেরকে শিক্ষা দেওয়াই যথেষ্ট নয়। কী শেখানো হয়, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ করুন যে, এগুলো কী হওয়া উচিত সেই বিষয়ে বাইবেল কীভাবে জোর দেয়। “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি,” এটি বলে “তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে।” ‘এই সকল কথা’ কী, যা সন্তানদের শেখানো প্রয়োজন? নিশ্চিতভাবেই এগুলো হল সেই কথাগুলো যেগুলো সবেমাত্র উল্লেখ করা হয়েছে, যথা: “তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫-৭) যিশু বলেছিলেন যে, এটা হল ঈশ্বরের সমস্ত আজ্ঞার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আজ্ঞা। (মার্ক ১২:২৮-৩০) বাবামাদের মূলত ছোট বাচ্চাদেরকে যিহোবা সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে হবে, তাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে হবে যে, কেন একা তিনিই আমাদের সর্বান্তঃকরণ প্রেম ও ভক্তি পাওয়ার যোগ্য।
২০. ঈশ্বর প্রাচীনকালের বাবামাদের তাদের সন্তানদেরকে কী শিক্ষা দেওয়ার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন?
২০ কিন্তু, ‘এই সকল কথা’ যা বাবামাদের তাদের সন্তানদের শেখানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে সমস্ত সত্তা দিয়ে ঈশ্বরকে ভালবাসার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। দ্বিতীয় বিবরণের আগের অধ্যায়ে, আপনি লক্ষ করবেন যে, প্রস্তর ফলকে—দশ আজ্ঞায়—ঈশ্বর যে-নিয়মগুলো লিখেছিলেন, মোশি সেগুলো আবারও উল্লেখ করেন। এই আজ্ঞাগুলোর অন্তর্ভুক্ত মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা, নরহত্যা না করা, ব্যভিচার না করা। (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১১-২২) তাই, প্রাচীনকালের বাবামাদের তাদের সন্তানদেরকে নৈতিক মূল্যবোধগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন সম্বন্ধে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজকে, খ্রিস্টান বাবামাদেরও তাদের সন্তানদের একই নির্দেশনা দিতে হবে, যদি তারা তাদের এক নিরাপদ ও সুখী ভবিষ্যৎ লাভ করার জন্য সাহায্য করতে চায়।
২১. ছোট বাচ্চাদেরকে ঈশ্বরের বাক্য “যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা” দেওয়ার নির্দেশনার দ্বারা কী বোঝানো হয়েছিল?
২১ এ ছাড়া লক্ষ করুন যে, বাবামাদের বলা হয়েছে কীভাবে ‘এই সকল কথা’ বা আজ্ঞাগুলো তাদের ছোট বাচ্চাদের শিক্ষা দিতে হবে: “তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে।” “যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা” শব্দটার অর্থ হল, “বার বার পুনরাবৃত্তি অথবা উপদেশের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া এবং ছাপ ফেলা: উৎসাহিত করা অথবা মনের মধ্যে গেঁথে দেওয়া।” তাই, ঈশ্বর মূলত বাবামাদের এক সুপরিকল্পিত বাইবেল শিক্ষার কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে বলছেন, যেটার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্তানদের মনের মধ্যে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে গেঁথে দেওয়া।
২২. ইস্রায়েলীয় বাবামাদের তাদের সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য কী করতে বলা হয়েছিল এবং এর অর্থ কী ছিল?
২২ এইরকম এক সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের জন্য বাবামাদের নিজে থেকে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বাইবেল বলে: “তোমার হস্তে চিহ্নস্বরূপে সে সকল [‘এই সকল কথা’ বা ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো] বাঁধিয়া রাখিবে, ও সে সকল ভূষণস্বরূপে তোমার দুই চক্ষুর মধ্যস্থানে থাকিবে। আর তোমার গৃহদ্বারের কপালে ও তোমার বহির্দ্বারে তাহা লিখিয়া রাখিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৮, ৯) এর অর্থ এই নয় যে, বাবামাদের আক্ষরিকভাবে ঈশ্বরের নিয়মগুলো তাদের দরজার চৌকাঠে ও দরজায় লিখে রাখা, তাদের সন্তানদের হাতে সেগুলোর একটা অনুলিপি বেঁধে দেওয়া এবং তাদের দুই চোখের মধ্যে রাখা। বরং মূল বিষয়টা হল, বাবামাদের উচিত তাদের সন্তানদের ঈশ্বরের শিক্ষাগুলো সবসময় স্মরণ করিয়ে দেওয়া। তাদের সন্তানদের এমন নিয়মিত, অবিরতভাবে শিক্ষা দেওয়া উচিত, যেন ঈশ্বরের শিক্ষাগুলো সবসময় সন্তানদের সামনেই রয়েছে।
২৩. পরের সপ্তাহের পাঠে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে?
২৩ বিশেষভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী, যেগুলো বাবামাদের তাদের সন্তানদেরকে শেখাতে হবে? বর্তমানে, সন্তানরা যাতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে সেইজন্য তাদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া, উভয়ই কেন গুরুত্বপূর্ণ? বাবামাদের তাদের সন্তানদেরকে কার্যকারীভাবে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সাহায্য করতে বর্তমানে কী সহযোগিতা জোগানো হচ্ছে? এই প্রশ্নগুলো ও সেইসঙ্গে অন্যান্য প্রশ্ন, যা অনেক বাবামাকে ভাবিয়ে তোলে, সেগুলো পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• বাবামাদের কেন তাদের সন্তানদের মূল্যবান বলে গণ্য করা উচিত?
• যিশুর কাছ থেকে বাবামারা এবং অন্যেরা কী শিখতে পারে?
• বাবামাদের তাদের সন্তানদের সঙ্গে কতটা সময় ব্যয় করা উচিত?
• সন্তানদের কী শেখানো উচিত এবং কীভাবে শিক্ষা দেওয়া উচিত?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশুর শিক্ষা দেওয়ার ধরন থেকে বাবামারা কী শিখতে পারে?
[১১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
কখন এবং কীভাবে ইস্রায়েলীয় বাবামাদের তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা দিতে হতো?
[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
বাবামাদের তাদের সন্তানদের ঈশ্বরের শিক্ষাগুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত