সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার বিশ্বাস কি আপনাকে কাজ করতে পরিচালিত করে?

আপনার বিশ্বাস কি আপনাকে কাজ করতে পরিচালিত করে?

আপনার বিশ্বাস কি আপনাকে কাজ করতে পরিচালিত করে?

 শতপতি একেবারে নিশ্চিত ছিলেন যে, যিশু তার পক্ষাঘাতগ্রস্ত দাসকে সুস্থ করতে পারেন। কিন্তু, সেই শতপতি সম্ভবত নিজেকে অযোগ্য মনে করার কারণে অথবা একজন পরজাতি হওয়ায় যিশুকে তার বাড়িতে আসার আমন্ত্রণ জানাননি। এর পরিবর্তে, সেই শতপতি কিছু যিহুদি প্রাচীনকে যিশুর কাছে পাঠিয়েছিলেন ও বলেছিলেন: “হে প্রভু, আমি এমন যোগ্য নই যে, আপনি আমার ছাদের নীচে আইসেন; কেবল বাক্যে বলুন, তাহাতেই আমার দাস সুস্থ হইবে।” যিশু এমনকি দূরে থেকেও সুস্থ করতে পারেন, শতপতির এই বিশ্বাস লক্ষ করে যিশু তাঁর পশ্চাদ্গামী জনতাকে বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, ইস্রায়েলের মধ্যে কাহারও এত বড় বিশ্বাস দেখিতে পাই নাই।”—মথি ৮:৫-১০; লূক ৭:১-১০.

এই অভিজ্ঞতাটি আমাদেরকে বিশ্বাসের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে। প্রকৃত বিশ্বাস নিষ্ক্রিয় নয়; এটা কাজের দ্বারা দেখা যায়। বাইবেল লেখক যাকোব ব্যাখ্যা করেছিলেন: ‘বিশ্বাস কর্ম্মবিহীন হইলে আপনি একা বলিয়া তাহা মৃত।’ (যাকোব ২:১৭) এই সত্যটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে, যখন আমরা বিশ্বাস নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে কী ঘটতে পারে, সেই বিষয়ে এক বাস্তব উদাহরণ বিবেচনা করে দেখি।

সাধারণ কাল পূর্ব ১৫১৩ সালে, ইস্রায়েল জাতি ব্যবস্থা চুক্তির মাধ্যমে যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে আবদ্ধ হয়েছিল। সেই চুক্তির মধ্যস্থ হিসেবে মোশি ইস্রায়েল সন্তানদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য জানিয়েছিলেন: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর, তবে তোমরা . . . পবিত্র এক জাতি হইবে।” (যাত্রাপুস্তক ১৯:৩-৬) হ্যাঁ, বাধ্যতার ওপর ইস্রায়েলের পবিত্রতা নির্ভর করেছিল।

বহু শতাব্দী পরে, যিহুদিরা ব্যবস্থার নীতিগুলোকে প্রয়োগ করার চেয়ে বরং তা অধ্যয়ন করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছিল। আলফ্রেড এডারশিম মশীহ যিশুর জীবন ও সময়কাল (ইংরেজি) নামক তার বইয়ে লিখেছিলেন: “[রব্বিরা]—‘জগতের মহান ব্যক্তিরা’ বহু আগেই নির্ধারণ করেছিল যে, কাজের চেয়ে অধ্যয়ন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

এটা ঠিক যে, প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দেওয়া হয়েছিল তারা যেন অধ্যবসায়ের সঙ্গে ঈশ্বরের চাহিদাগুলো সম্বন্ধে অধ্যয়ন করে। স্বয়ং ঈশ্বর বলেছিলেন: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) কিন্তু যিহোবা কি কখনো এমনটা বুঝিয়েছিলেন যে, ব্যবস্থার সঙ্গে মিল রেখে করা বা ব্যবস্থায় ইঙ্গিত করা কাজগুলোর চেয়ে ব্যবস্থা অধ্যয়ন করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? আসুন, আমরা তা পরীক্ষা করে দেখি।

পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাজ

ব্যবস্থা অধ্যয়ন করার ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া সম্ভবত ইস্রায়েলীয়দের কাছে যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়েছিল কারণ এক নির্দিষ্ট যিহুদি প্রথায় এইরকম বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, স্বয়ং ঈশ্বর ব্যবস্থা অধ্যয়ন করার পিছনে প্রতিদিন তিন ঘন্টা করে ব্যয় করেন। তাই, আপনি বুঝতে পারছেন যে, কেন কিছু যিহুদি হয়তো এভাবে যুক্তি করেছিল, ‘ঈশ্বর যদি নিয়মিতভাবে ব্যবস্থা অধ্যয়ন করে থাকেন, তা হলে তাঁর পার্থিব প্রাণীদেরও কি একই বিষয় করার জন্য পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়?’

সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীর মধ্যে ব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করার ব্যাপারে রব্বিদের পুরোপুরি মগ্ন হয়ে পড়া তাদের চিন্তাধারাকে সম্পূর্ণরূপে বিকৃত করে ফেলেছিল। “অধ্যাপক ও ফরীশীরা . . . তাহারা বলে, কিন্তু করে না” যিশু বলেছিলেন। “তাহারা ভারী দুর্ব্বহ বোঝা বাঁধিয়া লোকদের কাঁধে চাপাইয়া দেয়, কিন্তু আপনারা অঙ্গুলি দিয়াও তাহা সরাইতে চাহে না।” (মথি ২৩:২-৪) এই ধর্মীয় নেতারা সাধারণ লোকেদের অসংখ্য নিয়মকানুন দিয়ে ভারগ্রস্ত করেছিল কিন্তু তারা নিজেরা কপটভাবে ফাঁকফোকর তৈরি করেছিল, যা তাদেরকে সেই একই নিয়মগুলো পালন করা থেকে বিরত রাখবে। এ ছাড়া, যে-লোকেরা পাণ্ডিত্যপূর্ণ অধ্যয়নের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল, তারা ‘ব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর বিষয়—ন্যায়বিচার, দয়া ও বিশ্বাস—পরিত্যাগ করিয়াছিল।’—মথি ২৩:১৬-২৪.

এটা কতই না অসামঞ্জস্যপূর্ণ যে, অধ্যাপক ও ফরীশীরা তাদের নিজস্ব ধার্মিকতা স্থাপন করার চেষ্টায় ঠিক সেই ব্যবস্থাকেই লঙ্ঘন করেছিল, যেটাকে তারা পালন করে বলে দাবি করত! ব্যবস্থার বিভিন্ন শব্দ এবং অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলতে থাকা বাদানুবাদ তাদেরকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী করেনি। প্রেরিত পৌল যেগুলোকে “নিঃসার শব্দাড়ম্বর,” “বিরোধবাণী” ও মিথ্যা “বিদ্যা” বলেছিলেন সেগুলো যেভাবে পথভ্রষ্ট করেছিল, এটার দ্বারাও একই পরিণতি ঘটেছিল। (১ তীমথিয় ৬:২০, ২১) এ ছাড়া, সীমাহীন গবেষণা তাদের ওপর যে-প্রভাব ফেলেছিল, তা ছিল আরেক গুরুগম্ভীর সমস্যা। তারা এমন বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি, যা তাদেরকে সঠিক কাজ করার দিকে পরিচালিত করে।

মেধাবী মন, বিশ্বাসহীন হৃদয়

যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের চিন্তাধারা ঈশ্বরের চেয়ে কতই না আলাদা ছিল! ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার কিছু আগে, মোশি তাদের বলেছিলেন: “আমি অদ্য তোমাদের কাছে সাক্ষ্যরূপে যাহা যাহা কহিলাম, তোমরা সেই সমস্ত কথায় মনোযোগ কর, আর তোমাদের সন্তানগণ যেন এই ব্যবস্থার সকল কথা পালন করিতে যত্নবান হয়, এই জন্য তাহাদিগকে তাহা আদেশ করিতে হইবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪৬) এটা থেকে স্পষ্ট যে, ঈশ্বরের লোকেদের শুধু ব্যবস্থার অধ্যবসায়ী ছাত্র হওয়াই যথেষ্ট নয় কিন্তু ব্যবস্থা পালনকারীও হওয়া উচিত।

কিন্তু, ইস্রায়েল জাতি বার বার যিহোবার প্রতি অবিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়েছিল। উপযুক্ত ধরনের কাজ করার পরিবর্তে, ইস্রায়েল সন্তানেরা ‘তাঁহাতে বিশ্বাস করিল না, ও তাঁহার রবে কর্ণপাত করিল না।’ (দ্বিতীয় বিবরণ ৯:২৩; বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২:১৫, ১৬; ২ বংশাবলি ২৪:১৮, ১৯; যিরমিয় ২৫:৪-৭) অবশেষে, যিহুদিরা মশীহ হিসেবে যিশুকে প্রত্যাখ্যান করার দ্বারা খুবই নিকৃষ্টভাবে তাদের অবিশ্বস্ততাকে প্রদর্শন করেছিল। (যোহন ১৯:১৪-১৬) এর ফলে, যিহোবা ঈশ্বর ইস্রায়েলকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং পরজাতিদের দিকে তাঁর মনোযোগ ফিরিয়েছিলেন।—প্রেরিত ১৩:৪৬.

আমাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে যেন আমরাও একই ফাঁদে না পড়ি অর্থাৎ এইরকম মনে না করি যে, মেধাবী মন কিন্তু বিশ্বাসহীন হৃদয় নিয়ে আমরা ঈশ্বরকে উপাসনা করতে পারব। অন্যভাবে বলতে গেলে, আমাদের বাইবেল অধ্যয়ন পুঁথিগত পড়াশোনার চেয়েও আরও বেশি কিছু হওয়া দরকার। আমাদের জীবনকে উপকৃত করতে হলে সঠিক জ্ঞান অবশ্যই আমাদের হৃদয়ে পৌঁছাতে হবে। সবজির বাগান করার বিষয়ে অধ্যয়ন করে এরপর যদি কখনো কোনো বীজ বপন না করা হয়, তা হলে কি কোনো লাভ আছে? এটা ঠিক যে, কীভাবে বাগান করতে হয়, সেই বিষয়ে আমরা হয়তো পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে পারি কিন্তু আমরা কখনোই কোনো ফল ভোগ করতে পারব না! একইভাবে, বাইবেল অধ্যয়ন করার দ্বারা যারা ঈশ্বরের চাহিদাগুলো সম্বন্ধে শেখে, তাদের অবশ্যই সত্যের বীজগুলোকে তাদের হৃদয়ে পৌঁছাতে দিতে হবে, যাতে সেই বীজগুলো অঙ্কুরিত হয়ে তাদেরকে কাজ করতে পরিচালিত করে।—মথি ১৩:৩-৯, ১৯-২৩.

“বাক্যের কার্য্যকারী হও”

প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, “বিশ্বাস শ্রবণ হইতে . . . হয়।” (রোমীয় ১০:১৭) ঈশ্বরের বাক্য থেকে শোনার পর তাঁর পুত্র, যিশু খ্রিস্টে বিশ্বাস অনুশীলন করার এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আমাদেরকে অনন্তজীবনের প্রত্যাশা দেয়। হ্যাঁ, ‘আমি ঈশ্বরকে ও খ্রিস্টকে বিশ্বাস করি,’ শুধুমাত্র এই কথা বলার চেয়েও বেশি কিছু প্রয়োজন।

যিশু তাঁর অনুসারীদের এমন বিশ্বাস অর্জন করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন যা তাদেরকে কাজ করতে পরিচালিত করবে: “ইহাতেই আমার পিতা মহিমান্বিত হন যে, তোমরা প্রচুর ফলে ফলবান্‌ হও; আর তোমরা আমার শিষ্য হইবে।” (যোহন ১৫:৮) পরবর্তী সময়ে যিশুর অর্ধভ্রাতা যাকোব লিখেছিলেন: “বাক্যের কার্য্যকারী হও, . . . শ্রোতামাত্র হইও না।” (যাকোব ১:২২) কিন্তু, কীভাবে আমরা জানতে পারি যে, কী করতে হবে? কথা এবং উদাহরণের দ্বারা যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরকে খুশি করতে হলে আমাদের কী করা দরকার।

পৃথিবীতে থাকাকালীন, যিশু রাজ্যের কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং তাঁর পিতার নামকে মহিমান্বিত করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেছিলেন। (যোহন ১৭:৪-৮) কোন উপায়ে? অনেক লোক হয়তো অসুস্থ ও খঞ্জকে সুস্থ করার বিষয়ে যিশুর অলৌকিক কাজগুলোকে স্মরণ করতে পারে। কিন্তু মথির সুসমাচারের বিবরণ সেই প্রধান উপায়টি সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে জানায়: “যীশু সমস্ত নগরে ও গ্রামে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন; তিনি লোকদের সমাজ-গৃহে উপদেশ দিলেন ও রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিলেন।” লক্ষ করার মতো বিষয় হচ্ছে যে, যিশু সুযোগ মতো তাঁর কিছু বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের কাছে অথবা আশেপাশে থাকা স্থানীয় লোকেদের কাছে প্রচার করে তাঁর পরিচর্যাকে সীমিত রাখেননি। তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন, “সমুদয় গালীলে” লোকেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তাঁর কাছে প্রাপ্তিসাধ্য সব ধরনের মাধ্যমকেই তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন।—মথি ৪:২৩, ২৪; ৯:৩৫.

সেইসঙ্গে যিশু তাঁর অনুসারীদেরও শিষ্য তৈরির কাজে অংশ নিতে পরিচালনা দিয়েছিলেন। বাস্তবিকই, তিনি এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন, যাতে তারা সেটা অনুকরণ করতে পারে। (১ পিতর ২:২১) যিশু তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যদের বলেছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।”—মথি ২৮:১৯, ২০.

এটা স্বীকার করতে হবে যে, প্রচার কাজে অংশ নেওয়া সত্যিই এক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়। যিশু নিজে বলেছিলেন: “দেখ, কেন্দুয়াদের মধ্যে যেমন মেষশাবক, তদ্রূপ তোমাদিগকে প্রেরণ করিতেছি।” (লূক ১০:৩) আমরা যখন বিরোধিতার মুখোমুখি হই, তখন অযথা দুঃখ বা উদ্বেগ এড়াতে পিছিয়ে পড়া হল এক স্বাভাবিক প্রবণতা। যিশুকে গ্রেপ্তার করার দিন সন্ধ্যায় তা-ই ঘটেছিল। প্রেরিতরা ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সেই সন্ধ্যায়, পিতর যিশুকে চেনার বিষয়ে তিন বার অস্বীকার করেছিলেন।—মথি ২৬:৫৬, ৬৯-৭৫.

এ ছাড়া, আপনি হয়তো জেনে আশ্চর্য হবেন যে, এমনকি প্রেরিত পৌলও বলেছিলেন যে, সুসমাচার প্রচার করার ক্ষেত্রে তাকে সংগ্রাম করতে হয়েছিল। তিনি থিষলনীকীয় মণ্ডলীকে লিখেছিলেন: “আমরা আমাদের ঈশ্বরে সাহসী হইয়া অতিশয় প্রাণপণে তোমাদের কাছে ঈশ্বরের সুসমাচারের কথা বলিয়াছিলাম।”—১ থিষলনীকীয় ২:১, ২.

ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে অন্যদের কাছে কথা বলার ক্ষেত্রে পৌল ও তার সহপ্রেরিতরা ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল আর আপনিও তা পারেন। কীভাবে? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে যিহোবার ওপর আস্থা রাখা। আমরা যদি যিহোবার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখি, তা হলে সেই বিশ্বাস আমাদেরকে কাজ করতে পরিচালিত করবে এবং আমরা তাঁর ইচ্ছা পালন করতে সক্ষম হব।—প্রেরিত ৪:১৭-২০; ৫:১৮, ২৭-২৯.

আপনার কাজের জন্য এক পুরস্কার রয়েছে

যিহোবাকে সেবা করার জন্য দেওয়া আমাদের প্রচেষ্টা সম্বন্ধে তিনি ভালভাবে অবগত রয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, আমরা কখন অসুস্থ বা ক্লান্ত, তা তিনি জানেন। তিনি আমাদের অনিশ্চয়তা ও আত্মসন্দেহের অনুভূতি সম্বন্ধে অবগত আছেন। আর্থিক সমস্যা যখন আমাদের ভারগ্রস্ত করে অথবা আমাদের স্বাস্থ্য কিংবা আবেগ যখন আমাদের নিরুৎসাহিত করে, তখন যিহোবা খুব ভালভাবে আমাদের অবস্থা সম্বন্ধে জানেন।—২ বংশাবলি ১৬:৯; ১ পিতর ৩:১২.

আমাদের অসিদ্ধতা ও কষ্ট সত্ত্বেও আমাদের বিশ্বাস যখন আমাদের কাজ করতে পরিচালিত করে, তখন যিহোবা কতই না আনন্দিত হন! তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের প্রতি যে-স্নেহপূর্ণ অনুভূতি যিহোবার রয়েছে, তা এক অসাড় অনুভূতি নয়—একটা প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে এটা প্রদর্শিত হয়েছে। ঐশিক অনুপ্রেরণা পেয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং তোমরা পবিত্রগণের যে পরিচর্য্যা করিয়াছ ও করিতেছ, তদ্দ্বারা তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।”—ইব্রীয় ৬:১০.

“তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই” এবং “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা,” বাইবেলে যিহোবা সম্বন্ধে উক্ত বর্ণনায় আপনি নির্ভর করতে পারেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪; ইব্রীয় ১১:৬) উদাহরণ হিসেবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, কালিফোর্ণিয়ার একজন মহিলা স্মরণ করে বলেন: “আমার বাবা পারিবারিক জীবন শুরু করার আগে দশ বছর ধরে তিনি পূর্ণসময়ের একজন পরিচারক হিসেবে সেবা করেছেন। তার কাছ থেকে সেই গল্পগুলো শুনে আমি খুব খুশি হতাম যে, কীভাবে যিহোবা তাকে পরিচর্যায় শক্তি জুগিয়েছিলেন। অনেকবার তিনি পরিচর্যায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে গ্যাস ভরতে গিয়ে তার শেষ সম্বলটুকু ব্যয় করেছিলেন। পরিচর্যা থেকে যখন তিনি বাড়ি ফিরতেন, প্রায়ই তার দরজার পাশে খাবার রাখা থাকত, যেগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে তিনি পেতেন।”

বস্তুগতভাবে সাহায্য দেওয়া ছাড়া “করুণা-সমষ্টির পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” আমাদের আবেগগত ও আধ্যাত্মিকভাবেও সাহায্য করেন। (২ করিন্থীয় ১:৩) “যিহোবার ওপর আস্থা রাখা হল এক সান্ত্বনাদায়ক অনুভূতি,” একজন সাক্ষি বলেন যিনি অনেক বছর ধরে বহু পরীক্ষা সহ্য করে এসেছেন। “এটা আপনাকে যিহোবার ওপর বিশ্বাস রাখার এবং তিনি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করেন, তা দেখার সুযোগ করে দেয়।” আপনি নম্রভাবে ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ নিকটবর্তী হতে পারেন এই আশ্বাস নিয়ে যে, তিনি আপনার ব্যক্তিগত চিন্তাগুলোর প্রতি মনোযোগ দেবেন।—গীতসংহিতা ৬৫:২.

আধ্যাত্মিক শস্যচ্ছেদন কর্মীরা প্রচুর আশীর্বাদ ও পুরস্কার পায়। (মথি ৯:৩৭, ৩৮) জনসাধারণ্যে পরিচর্যায় অংশ নেওয়া অনেকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারজনক হয়েছে এবং আপনার জন্যও তা হতে পারে। কিন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হচ্ছে অন্যদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়া ঈশ্বরের সঙ্গে এক ভাল সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে আমাদের সাহায্য করে।—যাকোব ২:২৩.

সৎকর্ম করে চলুন

ঈশ্বরের একজন দাসের এমন উপসংহারে আসা ভুল হবে যে, যিহোবা দুঃখ পান যখন দুর্বলতা বা বার্ধক্যের কারণে সেই ব্যক্তি পরিচর্যায় ততটা অংশ নিতে পারেন না যতটা তিনি করতে চান। সেই ব্যক্তিদের জন্যও একই বিষয় প্রযোজ্য, যারা খারাপ স্বাস্থ্য, পারিবারিক দায়িত্ব বা অন্যান্য পরিস্থিতির কারণে বেশি করতে পারে না।

মনে করে দেখুন যে, প্রেরিত পৌল যখন কোনো অসুস্থতা বা প্রতিবন্ধকতার কারণে দুর্বল বোধ করেছিলেন, তখন তিনি ‘প্রভুর কাছে তিন বার নিবেদন করিয়াছিলেন, যেন উহা’ তাকে “ছাড়িয়া যায়।” পৌল যাতে যিহোবার সেবায় আরও বেশি কিছু সম্পাদন করতে পারেন সেইজন্য তাকে সুস্থ করার পরিবর্তে বরং ঈশ্বর বলেছিলেন: “আমার অনুগ্রহ তোমার পক্ষে যথেষ্ট; কেননা আমার শক্তি দুর্ব্বলতায় সিদ্ধি পায়।” (২ করিন্থীয় ১২:৭-১০) অতএব, এই আশ্বাস রাখুন যে, যেকোনো কষ্টকর পরিস্থিতি আপনি সহ্য করুন না কেন, তাঁর কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনি যতটুকুই করুন, আপনার স্বর্গীয় পিতা তা উপলব্ধি করেন।—ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬.

আমরা যতটা দিতে পারি তার চেয়ে বেশি কিছু আমাদের প্রেমময় সৃষ্টিকর্তা আমাদের কাছে দাবি করেন না। তিনি শুধুমাত্র চান যে, আমাদের যেন সেই ধরনের বিশ্বাস থাকে যা আমাদেরকে কাজ করতে পরিচালিত করবে।

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

ব্যবস্থা অধ্যয়ন করাই কি যথেষ্ট ছিল?

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে কাজও করা দরকার