সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের জন্য কি খুব বেশি জ্ঞান?

আমাদের জন্য কি খুব বেশি জ্ঞান?

আমাদের জন্য কি খুব বেশি জ্ঞান?

এক দম্পতি পশ্চিম আফ্রিকার একটা সৈকতে বসে রুপালি চাঁদ দেখছিল। “মানুষ চাঁদ সম্বন্ধে কতখানিই বা জানে এবং আরও কত জানার আছে?” স্বামী বলেছিলেন।

তার স্ত্রী উত্তরে বলেছিলেন: “কল্পনা করতে পারো যে, আমরা পৃথিবীকে এভাবে সরে যেতে দেখতে পারব—ইতিমধ্যেই পৃথিবী সম্বন্ধে কতখানি জ্ঞান রয়েছে এবং শেখার মতো আরও কত কত জ্ঞানই না রয়েছে? “আর একটু ভেবে দেখো! কেবলমাত্র পৃথিবীই সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে না কিন্তু সমগ্র সৌরজগৎও চলমান অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ নিখিলবিশ্বের মধ্যে আমরা সম্ভবত আর কখনোই ঠিক এই একই জায়গায় আবার আসতে পারব না। বস্তুতপক্ষে, আমাদের বর্তমান অবস্থান আমরা শুধুমাত্র সূর্য ও তারাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে জানতে পারি। কিছু কিছু বিষয় সম্বন্ধে আমাদের প্রচুর জ্ঞান রয়েছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা এমনকি এও জানি না যে, আমরা কোথায় আছি!”

 এই ধরনের চিন্তাভাবনা কিছু মৌলিক সত্যকে প্রকাশ করে। শেখার অনেক কিছু আছে বলে মনে হয়। অবশ্য, আমরা প্রত্যেকেই প্রতিদিন কিছু না কিছু নতুন বিষয় শিখছি। তবে, আমরা যত কিছুই শিখি না কেন, মনে হয়ে যে আমরা যে-সমস্ত বিষয় শিখতে চাই সেগুলো শিখতে সক্ষম হই না।

এটা ঠিক যে, নতুন নতুন তথ্য গ্রহণ করার ক্ষমতা ছাড়াও, জ্ঞানকে সঞ্চয় করে রাখার ক্ষমতাও প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবজাতির সমষ্টিগত জ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে অপরিমেয় হয়ে উঠেছে। এখন কম্পিউটার হার্ড ডিস্কের এত ক্ষমতা রয়েছে যে, এটাকে বর্ণনা করার জন্য নতুন গাণিতিক শব্দগুলো আবিষ্কার করতে হয়েছে। একটা সাধারণ সিডি-রম প্রচুর তথ্য সঞ্চয় করে রাখতে পারে; এটার ক্ষমতা হল ৬৮০ মেগাবাইট বা তারও বেশি। একটা সাধারণ ডিভিডি এটার চেয়ে প্রায় সাত গুণ বেশি তথ্য সঞ্চয় করে রাখতে পারে আর এমনকি এর চেয়েও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ডিভিডি পাওয়া যাচ্ছে।

এই আধুনিক সময়ে তথ্য আদানপ্রদান করার জন্য মানুষ যে-মাধ্যমগুলো ব্যবহার করছে, তা প্রায়ই আমাদের বোধগম্যের অতীত। রোটারি প্রেসগুলো অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে খবরের কাগজ, পত্র-পত্রিকা ও বইপত্র ছাপাচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এমন কারোর কাছে বিস্তর তথ্য পাওয়ার জন্য কম্পিউটারে কেবল একটা ক্লিক করলেই যথেষ্ট। এভাবে এবং আরও অন্যান্য উপায়ে তথ্য বন্টন করা, একজনের এটাকে গ্রহণ করার ক্ষমতার চেয়েও আরও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্যের এই পরিমাণকে কখনো কখনো সমুদ্রের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা এতই বিশাল যে, বলতে গেলে আমাদেরকে এতে সাঁতার কাটতে শিখতে হবে কিন্তু চেষ্টা করুন যাতে এক ঢোঁকেই সব গিলে না ফেলেন। জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার থাকায় আমরা বাছাই করতে বাধ্য।

বাছাই করার আরেকটা কারণ হল যে, প্রাপ্তিসাধ্য অধিকাংশ তথ্য সবসময় উপকারজনক নয়। বস্তুতপক্ষে, এর কিছু এমনকি অনাকাঙ্ক্ষিত, সেগুলো জানায় কোনো মূল্য নেই। মনে রাখবেন যে, জ্ঞান তথ্যকে বোঝায়—তা ভাল বা মন্দ, গঠনমূলক বা নেতিবাচক, যা-ই হোক না কেন। বিষয়টা আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন অনেকের দ্বারা বিবেচিত কিছু বিষয় সত্য হলেও আসলে তা সঠিক নয়। কত বারই না সম্মানিত কর্তৃপক্ষদের উক্তিগুলো পরে ভুল বা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে! উদাহরণস্বরূপ, প্রাচীন ইফিষ নগরের সম্পাদককে নিশ্চিতভাবে একজন জ্ঞানী আধিকারিক বলে মনে করা হতো। তিনি দাবি করেছিলেন: “হে ইফিষীয় লোক সকল, বল দেখি, ইফিষীয়দের নগরী যে মহাদেবী দীয়ানার, এবং আকাশ হইতে পতিতা প্রতিমার গৃহমার্জ্জিকা, ইহা মনুষ্যদের মধ্যে কে না জানে?” (প্রেরিত ১৯:৩৫, ৩৬) যদিও এই বিষয়টা সাধারণ লোকেরাও জানত বলে মনে করা হয়—এমনকি অনেকে বলবে যে, তা তর্কাতীত—কিন্তু এটা সত্য ছিল না যে, সেই প্রতিমা আকাশ থেকে পতিত হয়েছিল। তাই, উপযুক্ত কারণেই পবিত্র বাইবেল “মিথ্যা জ্ঞানের” বিষয়ে খ্রিস্টানদের সাবধান করে।—১ তীমথিয় ৬:২০, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।

জ্ঞান বাছাই করার পিছনে এক জোরালো কারণ হল যে, আমাদের বর্তমান আয়ু খুবই সংক্ষিপ্ত। আপনি যত বয়স্কই হোন না কেন, নিঃসন্দেহে অনেক প্রকারের জ্ঞান রয়েছে, যেগুলো আপনি পরীক্ষা করে দেখতে চাইবেন কিন্তু আপনি বুঝতে পারেন যে, তা করার জন্য ততদিন আপনি বেঁচে থাকবেন না।

এই মৌলিক সমস্যাটা কি কখনো পরিবর্তিত হবে? এমন ধরনের জ্ঞান কি অর্জন করা যাবে, যা আয়ুকে লক্ষণীয়ভাবে দীর্ঘ করবে, এমনকি চিরকালের জন্য? এমন ধরনের জ্ঞানের কি ইতিমধ্যেই অস্তিত্ব রয়েছে? যদি থেকে থাকে, তা হলে সেটা কি সবার জন্য প্রাপ্তিসাধ্য হবে? এমন সময় কি আসবে যখন সমস্ত জ্ঞান এমন হবে যেমনটা আমরা আশা করি আর সেটা হল সত্য? উপরে উল্লেখিত দম্পতি এই প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক উত্তর পেয়েছে এবং আপনিও পেতে পারেন। দয়া করে পরের প্রবন্ধটি পড়ুন, যেটি আপনাকে চিরকালের জন্য জ্ঞান নেওয়ার প্রত্যাশা দেবে।