সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কারা পুনরুত্থিত হবে?

কারা পুনরুত্থিত হবে?

কারা পুনরুত্থিত হবে?

“ইহাতে আশ্চর্য্য মনে করিও না; কেননা এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে, এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।”—যোহন ৫:২৮, ২৯.

১. জ্বলন্ত ঝোপের মধ্যে থেকে মোশি কোন উল্লেখযোগ্য ঘোষণা শুনেছিলেন এবং পরে সেই কথাগুলোর প্রতি কে পুনরায় দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছিলেন?

 সাড়ে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে খুবই অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছিল। মোশি, কুলপতি যিথ্রোর মেষপাল চরাচ্ছিলেন। হোরেব পর্বতের কাছে ঝোপের মধ্যে অগ্নিশিখাতে যিহোবার দূত মোশির সামনে উপস্থিত হন। “তিনি দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, ঝোপ অগ্নিতে জ্বলিতেছে, তথাপি ঝোপ বিনষ্ট হইতেছে না,” যাত্রাপুস্তকের বিবরণ বর্ণনা করে। এরপর ঝোপের মধ্যে থেকে একটা কণ্ঠস্বর তাকে ডেকেছিল। “আমি তোমার পিতার ঈশ্বর,” সেই কণ্ঠস্বর ঘোষণা করেছিল, “অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর।” (যাত্রাপুস্তক ৩:১-৬) পরে, সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে ঈশ্বরের নিজ পুত্র যিশু পুনরায় সেই কথাগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছিলেন।

২, ৩. (ক) অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের জন্য কোন পুরস্কার অপেক্ষা করছে? (খ) কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

যিশু কিছু সদ্দূকীর সঙ্গে আলোচনা করছিলেন, যারা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করত না। যিশু ঘোষণা করছিলেন: “মৃতগণ যে উত্থাপিত হয়, ইহা মোশিও ঝোপের বৃত্তান্তে দেখাইয়াছেন; কেননা তিনি প্রভুকে ‘অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর, ও যাকোবের ঈশ্বর’ বলেন। ঈশ্বর ত মৃতদের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু জীবিতদের; কেননা তাঁহার সাক্ষাতে সকলেই জীবিত।” (লূক ২০:২৭, ৩৭, ৩৮) এই কথাগুলো বলার দ্বারা যিশু নিশ্চিত করেছিলেন যে, ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে বহু আগে মৃত অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোব তখনও ঈশ্বরের স্মৃতিতে জীবিত ছিলেন। ইয়োবের মতো তারাও তাদের “সৈন্যবৃত্তির” বা অপরিহার্য বিষয় সেই মৃত্যুর নিদ্রার শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। (ইয়োব ১৪:১৪) ঈশ্বরের নতুন জগতে তারা পুনরুত্থিত হবে।

কিন্তু সেই কোটি কোটি ব্যক্তির বিষয়ে কী বলা যায়, যারা মানব ইতিহাস জুড়ে মারা গিয়েছে? তারাও কি পুনরুত্থিত হবে? সেই প্রশ্নের এক সন্তোষজনক উত্তর পাওয়ার আগে আসুন আমরা ঈশ্বরের বাক্য থেকে খুঁজে বের করি যে, লোকেরা যখন মারা যায় তখন তারা কোথায় যায়।

মৃতেরা কোথায়?

৪. (ক) লোকেরা যখন মারা যায়, তখন তারা কোথায় যায়? (খ) শিওল কী?

বাইবেল ঘোষণা করে যে, মৃতেরা “কিছুই জানে না।” মৃত্যুর পর নরকাগ্নিতে কোনো যাতনা নেই, লিম্বোতে (খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্ম না হওয়া মৃত ব্যক্তিদের আত্মাদের বাসস্থান) কোনো যন্ত্রণা অপেক্ষা করছে না কিন্তু শুধুমাত্র ধূলিতে প্রতিগমন করে থাকে। তাই, ঈশ্বরের বাক্য জীবিত ব্যক্তিদের উপদেশ দেয়: “তোমার হস্ত যে কোন কার্য্য করিতে পায়, তোমার শক্তির সহিত তাহা কর; কেননা তুমি যে স্থানে যাইতেছ, সেই পাতালে [“শিওলে,” NW] কোন কার্য্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা, কিছুই নাই।” (উপদেশক ৯:৫, ১০; আদিপুস্তক ৩:১৯) “শিওল” শব্দটি অনেকের কাছে অপরিচিত। এটি একটি ইব্রীয় শব্দ, যেটির উৎস অজানা রয়েছে আর বাংলা বাইবেলে এটিকে সংগতিপূর্ণভাবে “পাতাল” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। অনেক ধর্ম শিক্ষা দেয় যে, মৃতেরা এখনও জীবিত রয়েছে কিন্তু ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য যেমন দেখায় যে, যারা শিওলে রয়েছে তারা মৃত, তারা কিছুই জানে না বা চেতনাহীন। শিওল হচ্ছে মানবজাতির সাধারণ কবর।

৫, ৬. মৃত্যুতে যাকোব কোথায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তাকে কাদের সঙ্গে কবর দেওয়া হয়েছিল?

বাইবেলে “শিওল” শব্দটি সবচেয়ে প্রথমে আমরা আদিপুস্তক ৩৭:৩৫ পদে পাই। তার প্রিয় ছেলে যোষেফকে হারানোর পর কুলপতি যাকোব সান্ত্বনা লাভ করতে অস্বীকার করেছিলেন, এই কথা ঘোষণা করে: “আমি শোক করিতে করিতে পুত্ত্রের নিকটে [শিওলে] নামিব।” তার ছেলে মারা গিয়েছে মনে করে যাকোবও মরতে চেয়েছিলেন ও শিওলে যেতে চেয়েছিলেন। পরে যাকোবের বড় নয় ছেলে দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তার সবচেয়ে ছোট ছেলে বিন্যামীনকে মিশরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু, যাকোব এই কথা বলে তা অস্বীকার করেছিলেন: “আমার পুত্ত্র তোমাদের সঙ্গে যাইবে না, কেননা তাহার সহোদর মরিয়া গিয়াছে, সে একা রহিয়াছে; তোমরা যে পথে যাইবে, সেই পথে যদি ইহার কোন বিপদ ঘটে, তবে শোকে এই পাকা চুলে আমাকে [শিওলে] নামাইয়া দিবে।” (আদিপুস্তক ৪২:৩৬, ৩৮) এই দুটো উল্লেখ মৃত্যুকে শিওলের সঙ্গে জড়িত করে, মৃত্যুর পরে কোনো ধরনের জীবনের সঙ্গে নয়।

আদিপুস্তকের বিবরণ প্রকাশ করে যে, যোষেফ মিশরের খাদ্য প্রশাসক হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত যাকোব যোষেফের সঙ্গে এক আনন্দপূর্ণ পুনর্মিলনের জন্য সেখানে যেতে সমর্থ হয়েছিলেন। এরপর যাকোব ১৪৭ বছর বয়সে খুবই বৃদ্ধাবস্থায় তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেখানেই বাস করেছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি যে-ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন সেই অনুযায়ী তার ছেলেরা তার মৃতদেহ কনান দেশে মক্‌পেলা গুহাতে নিয়ে গিয়ে সেখানে কবর দেয়। (আদিপুস্তক ৪৭:২৮; ৪৯:২৯-৩১; ৫০:১২, ১৩) ফলে, যাকোবকে তার বাবা ইস্‌হাক ও তার দাদু অব্রাহামের সঙ্গে কবর দেওয়া হয়েছিল।

‘তাহাদের পূর্বপুরুষদের নিকটে সংগৃহীত’

৭, ৮. (ক) অব্রাহাম তার মৃত্যুতে কোথায় গিয়েছিলেন? ব্যাখ্যা করুন। (খ) কী দেখায় যে, অন্যেরাও তাদের মৃত্যুতে শিওলে গিয়েছিল?

এর আগে, যিহোবা যখন অব্রহামের সঙ্গে তার চুক্তি নিশ্চিত করেছিলেন এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তার বংশ বহুসংখ্যক হবে, তখন তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, অব্রাহামের প্রতি কী ঘটবে। “আর তুমি,” যিহোবা বলেছিলেন, “শান্তিতে আপন পূর্ব্বপুরুষদের নিকটে যাইবে, ও শুভ বৃদ্ধাবস্থায় কবর প্রাপ্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ১৫:১৫) ঠিক তা-ই ঘটেছিল। আদিপুস্তক ২৫:৮ পদ বলে: “পরে অব্রাহাম বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু হইয়া শুভ বৃদ্ধাবস্থায় প্রাণত্যাগ করিয়া আপন লোকদের নিকটে সংগৃহীত হইলেন।” এই লোকেরা কারা ছিল? আদিপুস্তক ১১:১০-২৬ পদ নোহের পুত্র শেম থেকে শুরু করে তার পূর্বপুরুষদের তালিকাভুক্ত করে। অতএব, এরাই ছিল শিওলে ইতিমধ্যেই ঘুমিয়ে থাকা সেই ব্যক্তিরা, যাদের নিকটে অব্রাহাম মৃত্যুর পর সংগৃহীত হয়েছিলেন।

“আপন লোকেদের নিকটে সংগৃহীত হইলেন,” অভিব্যক্তিটি ইব্রীয় শাস্ত্রে প্রায়ই দেখা যায়। তাই এই উপসংহারে আসা যুক্তিযুক্ত যে, অব্রাহামের পুত্র ইশ্মায়েল এবং মোশির ভাই হারোণ দুজনেই তাদের মৃত্যুতে শিওলে গিয়েছে এবং সেখান থেকে পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করছে। (আদিপুস্তক ২৫:১৭; গণনাপুস্তক ২০:২৩-২৯) সেই অনুযায়ী মোশিও শিওলে গিয়েছিলেন, যদিও কেউই জানত না যে, তার কবর কোথায় ছিল। (গণনাপুস্তক ২৭:১৩; দ্বিতীয় বিবরণ ৩৪:৫, ৬) একইভাবে, ইস্রায়েলের নেতা হিসেবে মোশির উত্তরসূরি যিহোশূয় ও সেইসঙ্গে লোকেদের সমস্ত বংশধরও মৃত্যুতে শিওলে গিয়েছিল।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২:৮-১০.

৯. (ক) কীভাবে বাইবেল দেখায় যে, ইব্রীয় শব্দ “শিওল” এবং গ্রিক শব্দ “হেডিজ” একই জায়গাকে বোঝায়? (খ) যারা শিওলে বা হেডিজে আছে তাদের কোন প্রত্যাশা রয়েছে?

কয়েক শতাব্দী পর, দায়ূদ ইস্রায়েলের ১২ বংশের রাজা হয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে তিনি “আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত . . . হইলেন।” (১ রাজাবলি ২:১০) তিনিও কি শিওলে গিয়েছিলেন? আগ্রহের বিষয়টা হচ্ছে, সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রেরিত পিতর দায়ূদের মৃত্যুর বিষয় উল্লেখ করেছিলেন এবং গীতসংহিতা ১৬:১০ পদ উদ্ধৃতি করে বলেছিলেন: “তুমি আমার প্রাণ [শিওলে] পরিত্যাগ করিবে না।” দায়ূদ যে তখনও তার কবরেই ছিলেন, তা উল্লেখ করার পর পিতর সেই কথাগুলোকে যিশুর প্রতি প্রয়োগ করেছিলেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, দায়ূদ “পূর্ব্ব হইতে দেখিয়া . . . খ্রীষ্টেরই পুনরুত্থান বিষয়ে এই কথা কহিলেন যে, তাঁহাকে পাতালে [“হেডিজে,” NW] পরিত্যাগও করা হয় নাই, তাঁহার মাংস ক্ষয়ও দেখে নাই। এই যীশুকেই ঈশ্বর উঠাইয়াছেন, আমরা সকলেই এই বিষয়ের সাক্ষী।” (প্রেরিত ২:২৯-৩২) এখানে পিতর “হেডিজ” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, যা ইব্রীয় শব্দ ‘শিওলের’ গ্রিক সমার্থ শব্দ। তাই বলা যায় যে, যারা হেডিজে রয়েছে তাদের অবস্থাও শিওলে থাকা ব্যক্তিদের মতোই। তারা ঘুমিয়ে আছে, পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করছে।

অধার্মিক ব্যক্তিরা কি শিওলে রয়েছে?

১০, ১১. কেন আমরা বলতে পারি যে, কিছু অধার্মিক ব্যক্তি মৃত্যুতে শিওলে বা হেডিজে যায়?

১০ মোশি ইস্রায়েল জাতিকে পরিচালনা দিয়ে মিশর থেকে বের করে আনার পর, প্রান্তরে এক বিদ্রোহ হয়েছিল। মোশি লোকেদেরকে তাদের বিদ্রোহী নেতাদের—কোরহ, দাথন ও অবীরামের—থেকে পৃথক হতে বলেছিলেন। তাদের অপমৃত্যু হবে। মোশি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “সাধারণ লোকদের মরণের ন্যায় যদি এই মনুষ্যেরা মরে, কিম্বা সাধারণ লোকের শাস্তির ন্যায় যদি ইহাদের শাস্তি হয়, তবে সদাপ্রভু আমাকে পাঠান নাই। কিন্তু সদাপ্রভু যদি অঘটন ঘটান এবং ভূমি আপন মুখ বিস্তার করিয়া ইহাদিগকে ও ইহাদের সর্ব্বস্ব গ্রাস করে, আর ইহারা জীবদ্দশায় [শিওলে] নামে, তবে ইহারা যে সদাপ্রভুকে অবজ্ঞা করিয়াছে, তাহা তোমরা জানিতে পারিবে।” (গণনাপুস্তক ১৬:২৯, ৩০) তাই ভূমি মুখ খুলেই হোক বা কোরহ ও ২৫০ জন লেবীয় যারা তার পক্ষ নিয়েছিল তাদের বেলায় যেমনটা হয়েছিল অর্থাৎ আগুনের দ্বারা গ্রাস করেই হোক, এই সমস্ত বিদ্রোহী শিওল বা হেডিজে চলে গিয়েছিল।—গণনাপুস্তক ২৬:১০.

১১ শিমিয়ি, যিনি দায়ূদকে শাপ দিয়েছিলেন, তিনি দায়ূদের উত্তরসূরি শলোমনের হাতে শাস্তি পেয়েছিলেন। “তাহাকে নিরপরাধ জ্ঞান করিবে না,” দায়ূদ আদেশ দিয়েছিলেন, “কেননা তুমি বুদ্ধিমান; তাহার প্রতি তোমার যাহা কর্ত্তব্য, তাহা বুঝিবে; তাহাকে পক্ব কেশে রক্তের সহিত [শিওলে] নামাইবে।” শলোমন সেই শাস্তি কার্যকর করার জন্য বনায়কে আজ্ঞা দিয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ২:৮, ৯, ৪৪-৪৬) বনায়ের দ্বারা নিহত আরেকজন ব্যক্তি ছিলেন ইস্রায়েলের প্রাক্তন সেনাপতি যোয়াব। তিনি পক্ব কেশে ‘শান্তিতে [শিওলে] নামিতে’ পারেননি। (১ রাজাবলি ২:৫, ৬, ২৮-৩৪) এই দুটো উদাহরণই দায়ূদের এই অনুপ্রাণিত গীতের সত্যতার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়: “দুষ্টেরা [শিওলে] ফিরিয়া যাইবে, যে জাতিরা ঈশ্বরকে ভুলিয়া যায়, তাহারাও যাইবে।”—গীতসংহিতা ৯:১৭.

১২. অহীথোফল কে ছিলেন এবং মৃত্যুতে তিনি কোথায় গিয়েছিলেন?

১২ অহীথোফল ছিলেন দায়ূদের ব্যক্তিগত উপদেষ্টা। তার পরামর্শকে স্বয়ং যিহোবার কাছ থেকে আসা পরামর্শ হিসেবে গণ্য করা হতো। (২ শমূয়েল ১৬:২৩) দুঃখের বিষয় যে, এই নির্ভরযোগ্য দাস বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়েছিলেন এবং দায়ূদের পুত্র অবশালোমের উসকে দেওয়া বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিলেন। স্পষ্টতই, দায়ূদ এই বিদ্রোহের বিষয় পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন: “কোন শত্রু যে আমাকে তিরস্কার করিয়াছে, তাহা নয়, করিলে আমি তাহা সহিতে পারিতাম; বিদ্বেষীও আমার বিরুদ্ধে দর্প করে নাই, করিলে তাহা হইতে আপনাকে লুকাইতাম।” দায়ূদ আরও বলেছিলেন: “মৃত্যু তাহাদের উপরে হঠাৎ আইসুক; তাহারা জীবদ্দশায় [শিওলে] নামুক; কারণ তাহাদের আলয়ে এবং তাহাদের অন্তরে দুষ্টতা আছে।” (গীতসংহিতা ৫৫:১২-১৫) মৃত্যুতে অহীথোফল ও তার সঙ্গীরা শিওলে গিয়েছিল।

গিহেন্নায় কারা রয়েছে?

১৩. কেন যিহূদাকে “বিনাশ-সন্তান” বলা হয়?

১৩ দায়ূদের পরিস্থিতিকে মহান দায়ূদ যিশুর পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করুন। খ্রিস্টের ১২ জন প্রেরিতের মধ্যে একজন ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা, অহীথোফলের মতো বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়েছিলেন। যিহূদার বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ কাজ অহীথোফলের চেয়ে আরও অনেক বেশি গুরুতর ছিল। যিহূদা ঈশ্বরের একজাত পুত্রের বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন। তাঁর পার্থিব পরিচর্যার শেষের দিকে এক প্রার্থনায় ঈশ্বরের পুত্র তাঁর অনুসারীদের বিষয়ে বলেছিলেন: “তাহাদের সঙ্গে থাকিতে থাকিতে আমি তাহাদিগকে তোমার নামে রক্ষা করিয়া আসিয়াছি—যে নাম তুমি আমাকে দিয়াছ আমি তাহাদিগকে সাবধানে রাখিয়াছি, তাহাদের মধ্যে কেহ বিনষ্ট হয় নাই, কেবল সেই বিনাশ-সন্তান হইয়াছে, যেন শাস্ত্রের বচন পূর্ণ হয়।” (যোহন ১৭:১২) এখানে যিহূদাকে “বিনাশ-সন্তান” হিসেবে উল্লেখ করার দ্বারা যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, যিহূদা যখন মারা গিয়েছিলেন তখন পুনরুত্থিত হওয়ার কোনো আশাই তার ছিল না। তিনি ঈশ্বরের স্মৃতিতে জীবিত ছিলেন না। তিনি শিওলে নয় কিন্তু গিহেন্নাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, গিহেন্না কী?

১৪. গিহেন্না কোন বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে?

১৪ যিশু তাঁর দিনের ধর্মীয় নেতাদের নিন্দা করেছিলেন কারণ তারা তাদের প্রত্যেক শিষ্যকে “নারকী [“গিহেন্নার প্রজা,” NW]” * করে তুলেছিল। (মথি ২৩:১৫) সেই সময়ে লোকেরা হিন্নোম উপত্যকার সঙ্গে পরিচিত ছিল, যেটা ছিল আবর্জনা ফেলার এক জায়গা, যেখানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এমন অপরাধীদের মৃতদেহ ফেলা হতো, যাদেরকে উপযুক্তভাবে কবর দেওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হতো। এর আগে, স্বয়ং যিশু তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশে গিহেন্নার বিষয় উল্লেখ করেছিলেন। (মথি ৫:২৯, ৩০) এর রূপক অর্থ তাঁর শ্রোতাদের কাছে স্পষ্ট ছিল। গিহেন্না চির ধ্বংসকে প্রতিনিধিত্ব করেছিল, যেখান থেকে পুনরুত্থানের কোনো আশা নেই। যিশুর দিনের ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা ছাড়া অন্য আর কেউ কি তাদের মৃত্যুতে শিওল বা হেডিজে না গিয়ে গিহেন্নায় গিয়েছে?

১৫, ১৬. কারা মৃত্যুতে গিহেন্নায় গিয়েছিল আর কেন তারা সেখানে গিয়েছে?

১৫ প্রথম মানব-মানবী আদম ও হবাকে সিদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তাদের পাপে পতিত হওয়া ছিল ইচ্ছাকৃত। তাদের সামনে ছিল হয় অনন্তজীবন নতুবা মৃত্যু। তারা ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল এবং শয়তানের পক্ষ নিয়েছিল। তারা যখন মারা গিয়েছিল, তখন তাদের খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান থেকে উপকার লাভ করার কোনো প্রত্যাশাই ছিল না। এর পরিবর্তে, তারা গিহেন্নায় গিয়েছিল।

১৬ আদমের প্রথমজাত পুত্র কয়িন তার ভাই হেবলকে হত্যা করেছিল এবং এরপর পলাতক হিসেবে জীবনযাপন করেছিল। প্রেরিত যোহন কয়িনকে “পাপাত্মার লোক” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। (১ যোহন ৩:১২) এইরকম উপসংহারে আসা যুক্তিযুক্ত যে, তার বাবামার মতো সে-ও মারা যাওয়ার মাধ্যমে গিহেন্নায় গিয়েছিল। (মথি ২৩:৩৩, ৩৫) ধার্মিক হেবলের পরিস্থিতি এর চেয়ে কত আলাদা! “বিশ্বাসে হেবল ঈশ্বরের উদ্দেশে কয়িন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ উৎসর্গ করিলেন, এবং তদ্দ্বারা তাঁহার পক্ষে এই সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছিল যে, তিনি ধার্ম্মিক; ঈশ্বর তাঁহার উপহারের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়াছিলেন,” পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন ও আরও বলেছিলেন, “এবং তদ্দ্বারা তিনি মৃত হইলেও এখনও কথা কহিতেছেন।” (ইব্রীয় ১১:৪) হ্যাঁ, হেবল বর্তমানে শিওলে আছেন, যিনি পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করছেন।

“প্রথম” এবং এক “শ্রেষ্ঠ” পুনরুত্থান

১৭. (ক) এই ‘শেষকালে’ কারা শিওলে যায়? (খ) যারা শিওলে রয়েছে এবং যারা গিহেন্নায় রয়েছে, তাদের প্রত্যাশা কী?

১৭ যারা এই তথ্য পড়ে, তাদের অনেকে ‘শেষকালে’ মারা যাচ্ছে এমন ব্যক্তিদের অবস্থা সম্বন্ধে চিন্তা করবে। (দানিয়েল ৮:১৯) প্রকাশিত বাক্য ৬ অধ্যায় সেই সময়ের চার জন অশ্বারোহীর আরোহণের বিষয় বর্ণনা করে। আগ্রহের বিষয় হল যে, এগুলোর মধ্যে শেষটার নাম হচ্ছে মৃত্যু আর হেডিজ তার অনুগমন করছে। তাই, অনেকে যারা পূর্ববর্তী অশ্বারোহীর পদক্ষেপের কারণে অকালে মারা যায়, তারা হেডিজে যায় ও সেখানে থেকে ঈশ্বরের নতুন জগতে পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করে। (প্রকাশিত বাক্য ৬:৮) তা হলে, যারা শিওলে (হেডিজে) এবং যারা গিহেন্নায় রয়েছে, তাদের প্রত্যাশা কী? সহজভাবে বললে, প্রথম স্থানের ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে পুনরুত্থান; পরবর্তী স্থানের লোকেদের জন্য অনন্ত ধ্বংস অর্থাৎ অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়া।

১৮. ‘প্রথম পুনরুত্থান’ কোন প্রত্যাশা প্রদান করে?

১৮ প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “যে কেহ . . . প্রথম পুনরুত্থানের অংশী হয়, সে ধন্য ও পবিত্র; তাহাদের উপরে দ্বিতীয় মৃত্যুর কোন কর্ত্তৃত্ব নাই; কিন্তু তাহারা ঈশ্বরের ও খ্রীষ্টের যাজক হইবে, এবং সেই সহস্র বৎসর তাঁহার সঙ্গে রাজত্ব করিবে।” যারা খ্রিস্টের সহশাসক হবে, তারা “প্রথম পুনরুত্থানের” অংশী হয়, কিন্তু বাকি মানবজাতির জন্য কোন আশা রয়েছে?—প্রকাশিত বাক্য ২০:৬.

১৯. কীভাবে কেউ কেউ এক ‘শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থান’ থেকে উপকৃত হয়?

১৯ ঈশ্বরের সেবক এলিয় এবং ইলীশায়ের সময় থেকে, পুনরুত্থানের অলৌকিক কাজ লোকেদের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিল। পৌল বর্ণনা করেছিলেন, “নারীগণ আপন আপন মৃত লোককে পুনরুত্থান দ্বারা পুনঃপ্রাপ্ত হইলেন; অন্যেরা প্রহার দ্বারা নিহত হইলেন, মুক্তি গ্রহণ করেন নাই, যেন শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থানের ভাগী হইতে পারেন।” হ্যাঁ, এই বিশ্বস্ত নীতিনিষ্ঠা-রক্ষাকারীরা এমন এক পুনরুত্থানের জন্য সানন্দে প্রতীক্ষা করেছিল, যা তাদেরকে মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে শুধু এমন আরও কিছু বছর নয় কিন্তু অনন্তজীবনের প্রত্যাশা দেবে! সেটা বাস্তবিকই এক ‘শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থান’ হবে।—ইব্রীয় ১১:৩৫.

২০. পরবর্তী প্রবন্ধ কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে?

২০ যিহোবা এই দুষ্ট ব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসার আগে যদি আমরা বিশ্বস্তভাবে মারা যাই, তা হলে আমাদের এক “শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থানের” নিশ্চিত আশা রয়েছে, এটা সেই অর্থে শ্রেষ্ঠ কারণ এই পুনরুত্থানে অনন্তজীবনের প্রত্যাশা রয়েছে। যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “ইহাতে আশ্চর্য্য মনে করিও না; কেননা এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে, এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) আমাদের পরবর্তী প্রবন্ধ পুনরুত্থানের উদ্দেশ্য নিয়ে আরও আলোচনা করে। এটা দেখাবে যে, কীভাবে পুনরুত্থানের আশা নীতিনিষ্ঠা-রক্ষাকারী হওয়ার জন্য আমাদের শক্তিশালী করে এবং আত্মত্যাগের মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

[পাদটীকা]

^ গ্রিক শব্দ “গিহেন্না” যার অর্থ হচ্ছে “হিন্নোম উপত্যকা,” এটিকে বাংলা বাইবেলে সংগতিপূর্ণভাবে “নরক” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কেন যিহোবাকে “জীবিতদের” ঈশ্বর হিসেবে বর্ণনা করা হয়?

• যারা শিওলে রয়েছে তাদের অবস্থা কী?

• যারা গিহেন্নায় রয়েছে, তাদের প্রত্যাশাগুলো কী?

• কীভাবে কেউ কেউ ‘শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থান’ থেকে উপকৃত হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

অব্রাহামের মতো যারা শিওলে যায়, তারা পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করে

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেন আদম ও হবা, কয়িন এবং ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা গিহেন্নায় গিয়েছে?