সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পুনরুত্থানের আশা—আপনার জন্য এটা কী অর্থ রাখে?

পুনরুত্থানের আশা—আপনার জন্য এটা কী অর্থ রাখে?

পুনরুত্থানের আশা—আপনার জন্য এটা কী অর্থ রাখে?

“তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১৬.

১-৩. ভবিষ্যতের জন্য কেউ কেউ কোন আশা পোষণ করে থাকে? উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে বলুন।

 নয় বছর বয়সী ক্রিস্টোফার ও তার দাদা, তাদের মাসি, মেসো এবং দুই মাসতুতো ভাইয়ের সঙ্গে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারের কাছে খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় ঘরে ঘরে প্রচার করে সময় কাটায়। আমাদের সহযোগী পত্রিকা, সচেতন থাক! ব্যাখ্যা করে যে, কী ঘটেছিল। “বিকেলবেলা তারা একসঙ্গে ব্ল্যাকপুলে দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে গিয়েছিল, যেটা ছিল সমুদ্রের কাছে এক বিনোদন কেন্দ্র। তারা ৬ জনসহ মোট ১২ জন গাড়ি দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যায়, যেটাকে পুলিশ ‘এক নিদারুণ ধ্বংসযজ্ঞ’ বলে অভিহিত করেছিল।”

সেই দুঃখজনক ঘটনার আগের রাতে, সেই পরিবার মণ্ডলীর বই অধ্যয়নে গিয়েছিল, যেখানে মৃত্যুর ওপর আলোচনা করা হয়েছিল। “ক্রিস্টোফার সবসময় খুবই চিন্তাশীল ছেলে ছিল,” তার বাবা বলেন। “সেদিন রাতে, সে স্পষ্টভাবে এক নতুন জগৎ ও ভবিষ্যতের জন্য তার আশার বিষয়ে বলেছিল। এরপর, আমাদের আলোচনা চলাকালে ক্রিস্টোফার হঠাৎ বলেছিল: ‘যিহোবার সাক্ষি হওয়ার একটা উপকারিতা হচ্ছে যে, যদিও মৃত্যু কষ্ট দেয় কিন্তু আমরা জানি যে, একদিন আমরা পৃথিবীতে আবারও একে অন্যকে দেখতে পাব।’ আমাদের মধ্যে উপস্থিত কেউই কখনো ভাবতে পারেনি যে, সেই কথাগুলো এতখানি স্মরণীয় হয়ে উঠতে যাচ্ছে।” *

বেশ কয়েক বছর আগে, ১৯৪০ সালে ফ্রান্টস্‌ নামে অস্ট্রিয়ার একজন সাক্ষি যিহোবার প্রতি তার আনুগত্য ভাঙতে অস্বীকার করায় গিলোটিন দ্বারা তার শিরশ্ছেদের সম্ভাবনা ছিল। বার্লিনের একটা আটক রাখার স্থান থেকে ফ্রান্টস্‌ তার মাকে লিখেছিলেন: “আমি যা জানি, সেই অনুযায়ী যদি আমি [সামরিকবাহিনীর] শপথ গ্রহণ করতাম, তা হলে আমি মৃত্যুর যোগ্য পাপ করে ফেলতাম। সেটা আমার জন্য অবিশ্বস্ততা হতো। আমি পুনরুত্থানে আসতাম না। . . . প্রিয় মা ও আমার সমস্ত ভাইবোনেরা, আজকে আমাকে আমার শাস্তির বিষয় জানানো হয়েছে আর তোমরা ভয় পেয়ো না, হ্যাঁ আমার মৃত্যুদণ্ডই হয়েছে আর আগামীকাল সকালে আমার শিরশ্ছেদ করা হবে। ঈশ্বরের কাছ থেকে আমার সেই একই শক্তি রয়েছে, যে-শক্তি অতীতে সমস্ত সত্য খ্রিস্টানদের ছিল। . . . তুমি যদি মৃত্যু পর্যন্ত দৃঢ় থাকো, তা হলে পুনরুত্থানে আমাদের আবার দেখা হবে। . . . আবার আমাদের দেখা না হওয়া পর্যন্ত বিদায়।” *

৪. এখানে বর্ণিত অভিজ্ঞতাগুলো আপনার ওপর কোন প্রভাব ফেলেছে এবং পরে আমরা কী বিবেচনা করব?

পুনরুত্থানের আশা ক্রিস্টোফার ও ফ্রান্টস্‌ উভয়ের কাছে বিরাট অর্থ রেখেছিল। এটা তাদের কাছে বাস্তব ছিল। নিশ্চিতভাবেই এই বিবরণগুলো আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে! যিহোবার প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে গভীর ও পুনরুত্থানের প্রতি আমাদের আশাকে শক্তিশালী করার জন্য আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, কেন পুনরুত্থান হবে এবং এটার দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত।

পার্থিব পুনরুত্থানের দর্শন

৫, ৬. প্রকাশিত বাক্য ২০:১২, ১৩ পদে প্রেরিত যোহনের দ্বারা লিপিবদ্ধ দর্শন কী প্রকাশ করে?

খ্রিস্ট যিশুর সহস্র বছরের রাজত্ব চলাকালীন ঘটনাগুলোর এক দর্শনে প্রেরিত যোহন পার্থিব পুনরুত্থান ঘটতে দেখেছিলেন। “আমি দেখিলাম, ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সমস্ত মৃত লোক,” তিনি বর্ণনা করেছিলেন। “আর সমুদ্র আপনার মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল, এবং মৃত্যু ও পাতাল [“হেডিজ,” NW] আপনাদের মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল।” (প্রকাশিত বাক্য ২০:১২, ১৩) “ক্ষুদ্র” বা “মহান্‌” যেকোনো পদমর্যাদারই হোক না কেন, মানবজাতির সাধারণ কবর হেডিজে (শিওলে) বন্দি হিসেবে আবদ্ধ সকলকে মুক্ত করা হবে। যারা সমুদ্রে তাদের জীবন হারিয়েছে, তারাও সেই সময় জীবন ফিরে পাবে। এই চমৎকার ঘটনা যিহোবার উদ্দেশ্যের অংশ।

শয়তানকে বন্দি ও তাকে অগাধলোকে নিক্ষেপ করার দ্বারা খ্রিস্টের সহস্র বছরের রাজত্বের শুরু হয়। পুনরুত্থিত কোনো ব্যক্তি বা মহাক্লেশ থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত কেউই সেই রাজত্ব চলাকালে শয়তানের দ্বারা ভ্রান্ত হবে না কারণ সে নিষ্ক্রিয় থাকবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩) আপনার কাছে এক হাজার বছর হয়তো এক দীর্ঘ সময় বলে মনে হতে পারে কিন্তু বস্তুতপক্ষে যিহোবার দৃষ্টিতে তা “এক দিনের সমান।”—২ পিতর ৩:৮.

৭. খ্রিস্টের সহস্র বছরের রাজত্বের সময় বিচারের ভিত্তি কী হবে?

সেই দর্শন অনুসারে, খ্রিস্টের সহস্র বছরের রাজত্ব হবে বিচারের এক সময়। প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “আমি দেখিলাম, ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সমস্ত মৃত লোক সেই সিংহাসনের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে; পরে ‘কয়েকখান পুস্তক খোলা গেল’, এবং আর একখানি পুস্তক, অর্থাৎ জীবন-পুস্তক খোলা গেল, এবং মৃতেরা পুস্তকসমূহে লিখিত প্রমাণে ‘আপন আপন কার্য্যানুসারে’ বিচারিত হইল। . . . এবং তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন কার্য্যানুসারে বিচারিত হইল।” (প্রকাশিত বাক্য ২০:১২, ১৩) লক্ষ করুন যে, এই বিচারের ভিত্তি ব্যক্তি মারা যাওয়ার আগে কী করেছে বা করেনি, তা ছিল না। (রোমীয় ৬:৭) এর পরিবর্তে, এটা ‘কয়েকখান পুস্তকের’ বিষয় বলে, যেগুলো খোলা হবে। সেই পুস্তকগুলোতে লিপিবদ্ধ বিষয়বস্তু শেখার পর একজন ব্যক্তির করা কাজগুলোই নির্ধারণ করার ভিত্তি হবে যে, তার নাম ‘জীবন-পুস্তকে’ লেখা থাকবে কি না।

‘জীবনের পুনরুত্থান’ অথবা ‘বিচারের পুনরুত্থান’

৮. পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের জন্য কোন দুটো সম্ভাব্য ফলাফল থাকবে?

যোহনের দর্শনের প্রথম দিকে যিশুর সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয় যে, তাঁর কাছে “মৃত্যুর ও [হেডিজের] চাবি” রয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১:১৮) তিনি যিহোবার পক্ষে “জীবনের আদিকর্ত্তা” হিসেবে সেবা করেন, যাঁকে “জীবিত ও মৃতগণের বিচার” করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। (প্রেরিত ৩:১৫; ২ তীমথিয় ৪:১) তিনি এটা কীভাবে করবেন? যারা মৃত্যুতে ঘুমিয়ে আছে, তাদের জীবনে পুনরুত্থিত করে। “ইহাতে আশ্চর্য্য মনে করিও না,” যিশু যাদের কাছে প্রচার করেছিলেন সেই জনতাকে বলেছিলেন, “কেননা এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে।” এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “যাহারা সৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা জীবনের পুনরুত্থানের জন্য, ও যাহারা অসৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা বিচারের পুনরুত্থানের জন্য বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮-৩০) তাই, প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত নারী-পুরুষদের জন্য কোন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?

৯. (ক) পুনরুত্থিত হয়ে অনেকে নিঃসন্দেহে কোন বিষয় সম্বন্ধে জানতে পারবে? (খ) কোন বিরাট শিক্ষামূলক কাজ করা হবে?

প্রাচীনকালের এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা যখন পুনরুত্থানের মাধ্যমে ফিরে আসবে, তখন তারা শীঘ্রই দেখতে পাবে যে তারা যে-প্রতিজ্ঞাগুলোতে নির্ভর করেছিল, সেগুলো এখন বাস্তব হয়েছে। ঈশ্বরের নারীর বংশের পরিচয় সম্বন্ধে জানার জন্য তারা কতই না আগ্রহী হবে, যা বাইবেলে প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে উল্লেখ করা হয়েছে! এটা জেনে তারা কতই না আনন্দিত হবে যে, এই প্রতিজ্ঞাত মশীহ যিশু মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়েছেন আর এর মাধ্যমে তাঁর জীবন এক মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছেন! (মথি ২০:২৮) আর পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের যারা অভ্যর্থনা জানাবে, তারা তাদেরকে এই বিষয়টা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে প্রচুর আনন্দ পাবে যে, এই মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা হচ্ছে যিহোবার অযাচিত দয়া ও করুণার এক অভিব্যক্তি। পৃথিবীর জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের রাজ্য কী সম্পাদন করছে, এই বিষয়টা যখন পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা আবিষ্কার করবে, তখন নিঃসন্দেহে তাদের হৃদয় যিহোবার প্রতি প্রশংসার অভিব্যক্তিতে উপচে উঠবে। তাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা ও তাঁর পুত্রের প্রতি তাদের অনুরাগ প্রদর্শন করার প্রচুর সুযোগ তারা পাবে। জীবিত সকলে বিরাট শিক্ষামূলক কাজে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত হবে, যা কবর থেকে পুনরুত্থিত সেই কোটি কোটি ব্যক্তিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন, যাদের ঈশ্বরের মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থাকেও মেনে নিতে হবে।

১০, ১১. (ক) সহস্র বছরের রাজত্ব পৃথিবীর সকলের জন্য কোন সুযোগ করে দেবে? (খ) এটার দ্বারা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত?

১০ পুনরুত্থিত অব্রাহাম সেই “নগরের” শাসনাধীনে জীবনের বাস্তবতা উপভোগ করে প্রচুর সান্ত্বনা লাভ করবেন, যে-নগরের জন্য তিনি সানন্দে প্রতীক্ষা করেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:১০) প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত ইয়োব কত রোমাঞ্চিতই না হবেন যখন তিনি জানতে পারবেন যে, তার জীবনধারা যিহোবার অন্যান্য দাসদেরও শক্তিশালী করেছে, যারা তাদের নীতিনিষ্ঠার পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল! আর দানিয়েল সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে জানার জন্য কতই না উৎসুক হবেন, যেগুলো তিনি লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন!

১১ বাস্তবিকই, যারা ধার্মিক নতুন জগতে জীবন লাভ করবে, তা সেটা পুনরুত্থানের মাধ্যমেই হোক বা মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পেয়েই হোক, তাদের সকলের পৃথিবী ও এর অধিবাসীদের জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানার অনেক কিছু থাকবে। অনন্তকাল বেঁচে থাকার এবং যুগ যুগ ধরে চিরকাল যিহোবার প্রশংসা করার প্রত্যাশা নিশ্চিতভাবেই সহস্র বছরের শিক্ষামূলক কার্যক্রমকে এক প্রকৃত আনন্দের বিষয় করবে। কিন্তু, পুস্তকগুলোতে লিপিবদ্ধ বিষয়গুলো শিখে ব্যক্তিগতভাবে আমরা কী করি, সেটাই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা যা শিখব, তা কি কাজে লাগাব? অতি গুরুত্বপূর্ণ যে-তথ্য আমাদেরকে সত্য থেকে বিচ্যুত করার বিষয়ে শয়তানের চূড়ান্ত প্রচেষ্টাকে প্রতিরোধ করতে শক্তিশালী করবে, আমরা কি তা নিয়ে ধ্যান করব ও কাজে লাগাব?

১২. শিক্ষামূলক কাজ এবং পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করা, উভয় কাজে পূর্ণরূপে অংশ নেওয়ার জন্য কী প্রত্যেককে সাহায্য করবে?

১২ সেই চমৎকার আশীর্বাদগুলোর কথা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, যা খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের উপকারগুলো প্রয়োগ করার ফলে আসবে। পুনরুত্থানে যাদের জীবন পুনর্স্থাপিত হবে তাদের সেই ধরনের অসুস্থতা বা অক্ষমতাগুলো থাকবে না, যা বর্তমানে তারা ভোগ করছে। (যিশাইয় ৩৩:২৪) এক সুস্থ দেহ এবং নিখুঁত স্বাস্থ্যের প্রত্যাশা নতুন জগতের সমস্ত অধিবাসীকে জীবনের পথে পুনরুত্থিত কোটি কোটি ব্যক্তিকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য শিক্ষামূলক কাজে পূর্ণরূপে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেবে। এ ছাড়া, সেই অধিবাসীরা পৃথিবীতে এ যাবৎ সংঘটিত সর্ববৃহৎ কাজে অংশ নেবে—যিহোবার প্রশংসা করার জন্য পুরো গ্রহকে এক পরমদেশে পরিণত করা।

১৩, ১৪. চূড়ান্ত পরীক্ষায় শয়তানকে মুক্ত করার উদ্দেশ্য কী এবং ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কোন কোন পরিণতি ঘটার সম্ভাবনা থাকবে?

১৩ চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য শয়তানকে যখন অগাধলোক থেকে মুক্ত করা হবে, তখন সে মানুষদের আরও একবার ভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। প্রকাশিত বাক্য ২০:৭-৯ পদ অনুসারে, সমস্ত ‘ভ্রান্ত জাতিগণ’ অথবা লোকেদের দল যারা শয়তানের দুষ্ট প্রভাবে চলে যাবে, তারা ধ্বংসের বিচার লাভ করবে: ‘স্বর্গ হইতে অগ্নি পড়িয়া তাহাদিগকে গ্রাস করিবে।’ যারা সহস্র বছর চলাকালে পুনরুত্থিত হবে, তাদের মধ্যে কারো কারো জন্য এই ধ্বংস তাদের পুনরুত্থানকে এক নিন্দনীয় বিচারের পুনরুত্থান করে তুলবে। এর বৈসাদৃশ্যে, পুনরুত্থিত নীতিনিষ্ঠা-রক্ষাকারীরা অনন্তজীবনের পুরস্কার লাভ করবে। বাস্তবিকই, তাদের পুনরুত্থান হবে ‘জীবনের পুনরুত্থান।’—যোহন ৫:২৯.

১৪ কীভাবে পুনরুত্থানের আশা এমনকি এখনই আমাদের সান্ত্বনা দিতে পারে? বস্তুতপক্ষে, ভবিষ্যতে আমরা যে এর উপকারগুলো লাভ করব, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

এখনই শেখার মতো বিষয়গুলো

১৫. কীভাবে পুনরুত্থানের বিশ্বাস এখনই সাহায্যকারী হতে পারে?

১৫ সম্প্রতি আপনি হয়তো কোনো প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারিয়েছেন এবং এই ধরনের এক বিরাট বিচ্ছেদের কারণে হয়তো বড় রদবদলের সঙ্গে মোকাবিলা করছেন। পুনরুত্থানের আশা আপনাকে ভিতর থেকে এক প্রশান্তি ও শক্তি অর্জন করতে সাহায্য করে, যা সত্য জানে না এমন ব্যক্তিরা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। “আমরা চাহি না যে, যাহারা নিদ্রাগত হয়, তাহাদের বিষয়ে তোমরা অজ্ঞাত থাক,” পৌল থিষলনীকীয়দের সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, “যেন যাহাদের প্রত্যাশা নাই, সেই অন্য সকল লোকের মত তোমরা দুঃখার্ত্ত না হও।” (১ থিষলনীকীয় ৪:১৩) আপনি কি নিজেকে নতুন জগতে এমন ব্যক্তি হিসেবে কল্পনা করতে পারেন, যিনি পুনরুত্থানের বিষয়টা নিজের চোখে দেখছেন? আপনার প্রিয়জনদের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে ধ্যান করার দ্বারা এখনই সান্ত্বনা লাভ করুন।

১৬. যখন পুনরুত্থান ঘটবে তখন আপনার অনুভূতি হয়তো কেমন হবে?

১৬ বর্তমানে আপনি আদমের বিদ্রোহের শারীরিক পরিণতি হয়তো কোনো অসুস্থতার আকারে ভোগ করতে পারেন। এটা যে-হতাশা নিয়ে আসে সেটাকে আপনার ব্যক্তিগতভাবে নতুন জগতে পুনরুত্থিত হওয়ার এবং পুনরুজ্জীবিত স্বাস্থ্য ও শক্তি নিয়ে আবার জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দপূর্ণ প্রত্যাশাকে ম্লান করতে দেবেন না। এরপর যখন আপনি চোখ খুলবেন এবং দেখতে পাবেন যে, আনন্দপূর্ণ মুখগুলো আপনার পুনরুত্থানে আপনার সঙ্গে আনন্দের ভাগী হতে উৎসুক, তখন আপনি ঈশ্বরকে তাঁর প্রেমপূর্ণ-দয়ার জন্য ধন্যবাদ না জানিয়ে পারবেন না।

১৭, ১৮. কোন দুটো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আমাদের মনে রাখা উচিত?

১৭ এই সময়ের মধ্যে দুটো শিক্ষণীয় বিষয় বিবেচনা করুন, যা আমাদের মনে রাখা উচিত। একটা হচ্ছে, এখনই সর্বান্তঃকরণে যিহোবাকে সেবা করার গুরুত্ব। আমাদের প্রভু খ্রিস্ট যিশুকে অনুকরণ করে আমাদের আত্মত্যাগমূলক জীবন, যিহোবা ও আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি ভালবাসাকে প্রদর্শন করে। বিরোধিতা অথবা তাড়না যদি আমাদের জীবনোপায় অথবা স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়, তা হলে আমরা যে-পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখিই হই না কেন, আমরা বিশ্বাসে দৃঢ় থাকার জন্য সংকল্পবদ্ধ। বিরোধীরা যদি আমাদেরকে মৃত্যুর হুমকি দেয় তা হলে পুনরুত্থানের আশা আমাদের সান্ত্বনা দেবে এবং যিহোবা ও তাঁর রাজ্যের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে আমাদের শক্তিশালী করে। হ্যাঁ, রাজ্য প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজের প্রতি আমাদের উদ্যোগ আমাদেরকে সেই অনন্ত আশীর্বাদগুলো লাভ করার প্রত্যাশা দেয়, যা যিহোবা ধার্মিকদের জন্য সঞ্চিত রেখেছেন।

১৮ দ্বিতীয় শিক্ষাটি আমরা কীভাবে আমাদের অসিদ্ধতার কারণে আসা প্রলোভনগুলোর মুখোমুখি হই, তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। পুনরুত্থানের আশা সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান এবং যিহোবার অযাচিত দয়ার প্রতি আমাদের উপলব্ধি বিশ্বাসে দৃঢ় থাকার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করে। “তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না,” প্রেরিত যোহন সাবধান করেছিলেন। “কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই। কেননা জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে। আর জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৫-১৭) বস্তুবাদিতার আকারে জগতের আকর্ষণ আমাদের জন্য সামান্য আগ্রহের বিষয় হবে, যখন আমরা এটাকে ‘প্রকৃত জীবনের’ সঙ্গে তুলনা করি। (১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯) যদি অনৈতিক কাজ করার জন্য আমরা প্রলোভিত হই, তা হলে আমরা দৃঢ়ভাবে তা প্রতিরোধ করব। আমরা উপলব্ধি করি যে, হর্‌মাগিদোন আসার আগে যদি আমরা মারা যাই, তা হলে যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করে এমন আচারব্যবহার ক্রমাগত দেখিয়ে চললে তা আমাদেরকে সেই ব্যক্তিদের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে, যাদের পুনরুত্থানের কোনো প্রত্যাশা নেই

১৯. কোন অপরিমেয় বিশেষ সুযোগ সম্বন্ধে আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়?

১৯ সর্বোপরি, আমাদের কখনোই এখন ও চিরকালের জন্য যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করার অপরিমেয় বিশেষ সুযোগকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। (হিতোপদেশ ২৭:১১) মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের বিশ্বস্ততা অথবা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ পর্যন্ত ক্রমাগত নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা যিহোবাকে দেখার সুযোগ করে দেয় যে, সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিচার্য বিষয়ে আমরা কার পক্ষে রয়েছি। মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পেয়ে অথবা অলৌকিক পুনরুত্থানের অংশী হয়ে পার্থিব পরমদেশে বাস করা তখন কতই না আনন্দের হবে!

আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করা

২০, ২১. পুনরুত্থান সম্বন্ধে আমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর না দেওয়া হলেও কী আমাদের বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করবে? ব্যাখ্যা করুন।

২০ পুনরুত্থান সম্বন্ধে আমাদের আলোচনা কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। মৃত্যুর সময় যারা বিবাহিত ছিল, তাদের বিষয়গুলোকে যিহোবা কীভাবে সমাধান করবেন? (লূক ২০:৩৪, ৩৫) পুনরুত্থান কি সেই জায়গা থেকেই হবে, যেখানে লোকেরা মারা গিয়েছিল? পুনরুত্থিতরা কি তাদের পরিবারগুলোর কাছাকাছি কোনো জায়গায় জীবন ফিরে পাবে? পুনরুত্থান ব্যবস্থা সম্বন্ধে অন্যান্য আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও জানা হয়নি। তা সত্ত্বেও, যিরমিয়ের কথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে: “সদাপ্রভু মঙ্গলস্বরূপ, তাঁহার আকাঙ্ক্ষীদের পক্ষে, তাঁহার অন্বেষী প্রাণের পক্ষে। সদাপ্রভুর পরিত্রাণের প্রত্যাশা করা, নীরবে অপেক্ষা করা, ইহাই মঙ্গল।” (বিলাপ ৩:২৫, ২৬) যিহোবার নিরূপিত সময়ে, সমস্ত বিষয় প্রকাশিত হবে, যা আমাদের পূর্ণ পরিতৃপ্তি দেবে। এই বিষয়ে কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি?

২১ গীতরচকের অনুপ্রাণিত কথাগুলোর বিষয়ে চিন্তা করুন, যখন তিনি যিহোবা সম্বন্ধে গেয়েছিলেন: “তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৬) বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাঞ্ছা বা আকাঙ্ক্ষাগুলো পরিবর্তিত হয়। ছোটকালে আমরা যে-বিষয়গুলো পাওয়ার আশা করেছিলাম, এখন আর সেগুলো আমাদের আকাঙ্ক্ষা নয়। জীবনকে আমরা কীভাবে দেখি, তা আমরা যা ভোগ করি ও সেইসঙ্গে আমাদের আশাগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়। তা সত্ত্বেও, নতুন জগতে আমাদের সঠিক আকাঙ্ক্ষাগুলো যা-ই হোক না কেন, নিশ্চিতভাবেই যিহোবা সেগুলো পরিপূর্ণ করবেন।

২২. কেন আমাদের যিহোবার প্রশংসা করার উত্তম কারণ রয়েছে?

২২ যে-বিষয়টা এখন আমাদের প্রত্যেকের চিন্তার বিষয়, তা হচ্ছে বিশ্বস্ত থাকা। “ধনাধ্যক্ষের এই গুণ চাই, যেন তাহাকে বিশ্বস্ত দেখিতে পাওয়া যায়।” (১ করিন্থীয় ৪:২) আমরা ঈশ্বরের রাজ্যের গৌরবান্বিত সুসমাচারের অধ্যক্ষ। যাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, তাদের সকলের কাছে এই সুসমাচার ঘোষণা করার ক্ষেত্রে আমাদের অধ্যবসায় আমাদের জীবনের পথে থাকতে সাহায্য করে। কখনো এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করবেন না যে, “সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে।” (উপদেশক ৯:১১) জীবনের অনিশ্চয়তার দ্বারা ঘটিত যেকোনো অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ প্রতিরোধ করার জন্য পুনরুত্থানের গৌরবান্বিত আশাকে ধরে রাখুন। এই বিষয়ে দৃঢ়নিশ্চিত হোন, আপাতদৃষ্টিতে যদি এমনটা মনে হয় যে, খ্রিস্টের সহস্র বছরের রাজত্ব শুরু হওয়ার আগে আপনি মারা যাবেন, তা হলে আপনি এই নিশ্চয়তা থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারবেন যে, স্বস্তি আসবেই। যিহোবার সময়মতো আপনি সৃষ্টিকর্তাকে সম্বোধন করে বলা ইয়োবের কথাগুলো প্রতিধ্বনিত করতে পারবেন: “তুমি আহ্বান করিবে, ও আমি উত্তর দিব।” যিহোবাই প্রশংসিত হোন, যিনি সেই সমস্ত ব্যক্তিকে জীবনে ফিরিয়ে আনতে আকুল আকাঙ্ক্ষী, যারা তাঁর স্মৃতিতে রয়েছে!—ইয়োব ১৪:১৫, NW.

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ১৯৮৮ সালের ৮ই জুলাই সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ১০ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত যিহোবার সাক্ষিরা—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বইয়ের ৬৬২ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• সহস্র বছরের রাজত্ব চলাকালে লোকেদের কীসের ভিত্তিতে বিচার করা হবে?

• কেন কেউ কেউ ‘জীবনের পুনরুত্থান’ এবং অন্যেরা ‘বিচারের পুনরুত্থান’ লাভ করবে?

• কীভাবে পুনরুত্থানের আশা এখনই আমাদের সান্ত্বনা দিতে পারে?

• কীভাবে গীতসংহিতা ১৪৫:১৬ পদের কথাগুলো আমাদেরকে পুনরুত্থান সম্বন্ধে উত্তর দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নগুলো মোকাবিলা করতে সাহায্য করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

পুনরুত্থানে বিশ্বাস কীভাবে আমাদের এখনই সাহায্য করতে পারে?