পুনরুত্থান—এমন এক শিক্ষা যা আপনাকে প্রভাবিত করে
পুনরুত্থান—এমন এক শিক্ষা যা আপনাকে প্রভাবিত করে
“আমি ঈশ্বরে এই প্রত্যাশা করিতেছি যে, ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।”—প্রেরিত ২৪:১৫.
১. কীভাবে পুনরুত্থানের বিষয়টা মহাসভার সামনে এক বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছিল?
সাধারণ কাল ৫৬ সালে প্রেরিত পৌল তার তৃতীয় মিশনারি যাত্রার শেষের দিকে যিরূশালেমে ছিলেন। রোমীয়রা তাকে গ্রেপ্তার করার পর তিনি যিহুদি উচ্চ আদালত মহাসভার সামনে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। (প্রেরিত ২২:২৯, ৩০) পৌল সেই আদালতের সদস্যদের দিকে ভালমতো তাকিয়ে লক্ষ করেছিলেন যে, তাদের মধ্যে কিছু ছিল সদ্দূকী ও কিছু ছিল ফরীশী। এই দুটো দল এক উল্লেখযোগ্য দিক দিয়ে আলাদা ছিল। সদ্দূকীরা পুনরুত্থানের বিশ্বাসকে অগ্রাহ্য করেছিল; ফরীশীরা এটাকে মেনে নিয়েছিল। পৌল সেই বিতর্কিত বিষয়টার কোন পক্ষে ছিলেন, তা দেখানোর জন্য ঘোষণা করেছিলেন: “হে ভ্রাতৃগণ, আমি ফরীশী এবং ফরীশীদের সন্তান; মৃতদের প্রত্যাশা ও পুনরুত্থান সম্বন্ধে আমার বিচার হইতেছে।” এই কথা বলে তিনি সমবেত জনতাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছিলেন!—প্রেরিত ২৩:৬-৯.
২. কেন পৌল পুনরুত্থানের প্রতি তার বিশ্বাসের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত ছিলেন?
২ কয়েক বছর আগে, পৌল যখন দম্মেশকে যাওয়ার রাস্তায় ছিলেন, তখন এক দর্শনে যিশুর বাণী শুনেছিলেন। পৌল এমনকি যিশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “প্রভু, আমি কি করিব?” যিশু উত্তর দিয়েছিলেন: “উঠিয়া দম্মেশকে যাও, তোমাকে যাহা যাহা করিতে হইবে বলিয়া নিরূপিত আছে, সে সমস্ত সেখানেই তোমাকে বলা যাইবে।” দম্মেশকে পৌঁছানোর পর একজন সাহায্যকারী খ্রিস্টান শিষ্য অননিয় পৌলের দেখা পেয়েছিলেন, যিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর তোমাকে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন তুমি তাঁহার ইচ্ছা জ্ঞাত হও, এবং সেই ধর্ম্মময়কে [পুনরুত্থিত যিশুকে] দেখিতে ও তাঁহার মুখের বাণী শুনিতে পাও।” (প্রেরিত ২২:৬-১৬) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পৌল পুনরুত্থানের প্রতি তার বিশ্বাসের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত ছিলেন।—১ পিতর ৩:১৫.
পুনরুত্থানের আশার বিষয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা
৩, ৪. কীভাবে পৌল পুনরুত্থানের একনিষ্ঠ সমর্থক প্রমাণিত হয়েছিলেন আর তার উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৩ এরপর পৌল দেশাধ্যক্ষ ফীলিক্সের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই সময় তর্তুল্ল নামে ‘এক জন উকীল’ পৌলের বিরুদ্ধে যিহুদিদের মামলা পেশ করেছিলেন, তাকে একটা দল বা সম্প্রদায়ের নেতা বলে এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন। উত্তরে পৌল স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছিলেন: “আপনার নিকটে আমি ইহা স্বীকার করি, ইহারা যাহাকে দল বলে, সেই পথ অনুসারে আমি পৈতৃক ঈশ্বরের আরাধনা করিয়া থাকি।” এরপর মূল বিতর্কের বিষয়ে এসে তিনি আরও বলেছিলেন: “ইহারাও যেমন প্রতীক্ষা করিয়া থাকে, সেইরূপ আমি ঈশ্বরে এই প্রত্যাশা করিতেছি যে, ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।”—প্রেরিত ২৩:২৩, ২৪; ২৪:১-৮, ১৪, ১৫.
৪ প্রায় দুবছর পর, ফীলিক্সের উত্তরসূরি পর্কিয় ফীষ্ট, বন্দি পৌলকে জেরা করার জন্য রাজা হেরোদ আগ্রিপ্পকে তার সঙ্গে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ফীষ্ট ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, অভিযোগকারীরা “যীশু নামে কোন মৃত ব্যক্তি, . . . জীবিত” হয়েছেন বলে পৌলের দাবি নিয়ে বাদানুবাদ করেছিল। আত্মপক্ষ সমর্থন করার সময় পৌল জিজ্ঞেস করেছিলেন: “ঈশ্বর যদি মৃতগণকে উঠান, তবে তাহা আপনাদের বিচারে কেন বিশ্বাসের অযোগ্য বোধ হয়?” এরপর তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “ঈশ্বর হইতে সাহায্য প্রাপ্ত হইয়া আমি অদ্য পর্য্যন্ত দাঁড়াইয়া আছি, ক্ষুদ্র ও মহান্ সকলের কাছে সাক্ষ্য দিতেছি, ভাববাদিগণ এবং মোশিও যাহা ঘটিবে বলিয়া গিয়াছেন, ইহা ছাড়া আর কিছুই বলিতেছি না। আর তাহা এই, খ্রীষ্টকে দুঃখভোগ করিতে হইবে, আর তিনিই প্রথম, মৃতগণের পুনরুত্থান দ্বারা, প্রজালোক ও পরজাতীয় লোক উভয়ের কাছে দীপ্তি প্রচার করিবেন।” (প্রেরিত ২৪:২৭; ২৫:১৩-২২; ২৬:৮, ২২, ২৩) পুনরুত্থানের কী এক একনিষ্ঠ সমর্থকই না পৌল ছিলেন! পৌলের মতো আমরাও দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করতে পারি যে, পুনরুত্থান হবে। কিন্তু আমরা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া আশা করতে পারি? সম্ভবত পৌল যেরকম প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন সেইরকমই।
৫, ৬. (ক) প্রেরিতরা পুনরুত্থানের বিশ্বাসকে সমর্থন করায় কোন ধরনের প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক হয়েছিল? (খ) আমরা যখন পুনরুত্থানের প্রতি আমাদের আশাকে প্রকাশ করি, তখন কী অতীব গুরুত্বপূর্ণ?
৫ পৌলের দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রায় (সা.কা. প্রায় ৪৯-৫২ সাল) তিনি যখন এথেন্স (আথীনী) পরিদর্শন করেছিলেন, তখন কী হয়েছিল তা বিবেচনা করুন। তিনি সেই লোকেদের সঙ্গে যুক্তি করেছিলেন, যারা অনেক দেবদেবীর ওপর বিশ্বাস করত আর তিনি তাদেরকে ঈশ্বরের নিরূপিত ব্যক্তি দ্বারা ন্যায়ে জগৎসংসারের বিচার করার ব্যাপারে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য জোরালোভাবে আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তি যিশু ছাড়া অন্য আর কেউ ছিলেন না। পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, যিশুকে পুনরুত্থিত করার দ্বারা ঈশ্বর এই বিষয়ে একটা নিশ্চয়তা জুগিয়েছিলেন। প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল? আমরা পড়ি: “তখন মৃতগণের পুনরুত্থানের কথা শুনিয়া কেহ কেহ উপহাস করিতে লাগিল; কিন্তু আর কেহ কেহ বলিল, আপনার কাছে এ বিষয় আর একবার শুনিব।”—প্রেরিত ১৭:২৯-৩২.
৬ সেই প্রতিক্রিয়া সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর অল্প কিছু সময় পরেই পিতর ও যোহন যে-অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, সেটার সমরূপ ছিল। সেখানেও সদ্দূকীরা বিতর্কে এক বড় ভূমিকা রেখেছিল। প্রেরিত ৪:১-৪ পদ বর্ণনা করে যে কী ঘটেছিল: “তাঁহারা লোকদের নিকটে কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে যাজকেরা ও ধর্ম্মধামের সেনাপতি এবং সদ্দূকীরা হঠাৎ তাঁহাদের নিকটে আসিয়া উপস্থিত হইল, তাহারা অতিশয় বিরক্ত হইয়াছিল, কারণ তাঁহারা লোকদিগকে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুতেই মৃতগণের মধ্য হইতে পুনরুত্থান প্রচার করিতেন।” তবে অন্যেরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। “যে সকল লোক বাক্য শুনিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে অনেকে বিশ্বাস করিল; তাহাতে পুরুষদের সংখ্যা কমবেশ পাঁচ হাজার হইল।” স্পষ্টতই, আমরা যখন পুনরুত্থানের আশা সম্বন্ধে কথা বলি, তখন আমরা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া আশা করতে পারি। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, এই শিক্ষার প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বাস এবং পুনরুত্থান
৭, ৮. (ক) প্রথম শতাব্দীর করিন্থীয় মণ্ডলীর উদ্দেশে দেওয়া চিঠিতে যেমন দেখানো হয়েছে, কীভাবে বিশ্বাস বৃথা হতে পারে? (খ) কীভাবে পুনরুত্থানের আশা সম্বন্ধে এক সঠিক বোধগম্যতা সত্য খ্রিস্টানদের আলাদা করে?
৭ সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে যারা খ্রিস্টান হয়েছিল, তাদের সকলের জন্যই পুনরুত্থানের আশাকে মেনে নেওয়া সহজ ছিল না। যাদের কাছে এটা মেনে নেওয়া কঠিন ছিল তাদের কেউ কেউ করিন্থের মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করত। পৌল তাদেরকে লিখেছিলেন: “প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন।” এরপর পৌল এই কথা বলার দ্বারা তার বক্তব্যকে সত্য বলে প্রমাণ করেছিলেন যে, পুনরুত্থিত খ্রিস্ট ‘পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিয়াছিলেন,’ যাদের অধিকাংশ তখনও জীবিত ছিল বলে পৌল উল্লেখ করেছিলেন। (১ করিন্থীয় ১৫:৩-৮) তিনি আরও যুক্তি দেখিয়েছিলেন: “খ্রীষ্ট যখন এই বলিয়া প্রচারিত হইতেছেন যে, তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইয়াছেন, তখন তোমাদের কেহ কেহ কেমন করিয়া বলিতেছ যে, মৃতগণের পুনরুত্থান নাই? মৃতগণের পুনরুত্থান যদি না হয়, তবে খ্রীষ্টও ত উত্থাপিত হন নাই। আর খ্রীষ্ট যদি উত্থাপিত না হইয়া থাকেন, তাহা হইলে ত আমাদের প্রচারও বৃথা, তোমাদের বিশ্বাসও বৃথা।”—১ করিন্থীয় ১৫:১২-১৪.
৮ হ্যাঁ, পুনরুত্থানের শিক্ষা এতই অপরিহার্য যে, পুনরুত্থানকে যদি বাস্তব হিসেবে মেনে না নেওয়া হয়, তা হলে খ্রিস্টীয় বিশ্বাস বৃথা হয়ে যাবে। বাস্তবিকই, পুনরুত্থান সম্বন্ধে সঠিক বোধগম্যতা সত্য খ্রিস্টানদের মিথ্যা থেকে আলাদা করে। (আদিপুস্তক ৩:৪; যিহিষ্কেল ১৮:৪) তাই, পৌল পুনরুত্থানের শিক্ষাকে খ্রিস্টধর্মের মৌলিক বা ‘আদিম কথার’ অন্তর্ভুক্ত করেন। পরিপক্বতা বা “সিদ্ধির চেষ্টায় অগ্রসর” হওয়াই যেন আমাদের সংকল্প হয়। আর পৌল বিশেষভাবে পরামর্শ দেন, “ঈশ্বরের অনুমতি হইলে তাহাই করিব।”—ইব্রীয় ৬:১-৩.
পুনরুত্থানের আশা
৯, ১০. বাইবেল যখন পুনরুত্থানের বিষয় উল্লেখ করে, তখন এটি কী বোঝায়?
৯ পুনরুত্থানের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আসুন আমরা এই ধরনের প্রশ্নগুলো পুনরালোচনা করি, যেমন: বাইবেল যখন পুনরুত্থানের বিষয় উল্লেখ করে, তখন এটি কী বোঝায়? কীভাবে পুনরুত্থানের শিক্ষা যিহোবার প্রেমকে মহিমান্বিত করে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদেরকে ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী করবে ও সেইসঙ্গে অন্যদেরকে শিক্ষা দিতে আমাদের সাহায্য করবে।—২ তীমথিয় ২:২; যাকোব ৪:৮.
১০ “পুনরুত্থান” শব্দটি একটি গ্রিক শব্দের অনুবাদ, যেটির আক্ষরিক অর্থ হল “আবার উঠে দাঁড়ানো।” এই অভিব্যক্তিটির সঙ্গে কী জড়িত? বাইবেল অনুসারে, পুনরুত্থানের আশা হচ্ছে এই দৃঢ়প্রত্যয় যে একজন মৃত ব্যক্তি আবার জীবিত হতে পারে। বাইবেল আরও দেখায় যে, একজন ব্যক্তি তার পার্থিব বা স্বর্গীয় আশার ওপর ভিত্তি করে, হয় তিনি এক মানবদেহে না হয় এক আত্মিক দেহে পুনর্জীবিত হন। পুনরুত্থানের এই চমৎকার প্রত্যাশায় প্রদর্শিত যিহোবার প্রেম, প্রজ্ঞা ও শক্তি দেখে আমরা বিস্মিত হয়ে যাই।
১১. ঈশ্বরের অভিষিক্ত দাসদের কোন পুনরুত্থানের প্রত্যাশাগুলো প্রদান করা হয়েছে?
১১ যিশু ও তাঁর অভিষিক্ত ভাইদের পুনরুত্থান তাদের এক আত্মিক দেহ প্রদান করে, যা স্বর্গে সেবা করার জন্য উপযুক্ত। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৫-৩৮, ৪২-৫৩) তারা একসঙ্গে সেই মশীহ রাজ্যের শাসক হিসেবে সেবা করবে, যে-রাজ্য পৃথিবীতে পরমদেশের মতো অবস্থা নিয়ে আসবে। মহাযাজক যিশুর অধীনে এই অভিষিক্তরা এক রাজকীয় যাজকবর্গ গঠন করে। তারা ধার্মিকতার নতুন জগতে খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের উপকারিতা প্রয়োগ করবে। (ইব্রীয় ৭:২৫, ২৬; ৯:২৪; ১ পিতর ২:৯; প্রকাশিত বাক্য ২২:১, ২) সেই সময়ের মধ্যে, এখনও পৃথিবীতে জীবিত রয়েছে এমন অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে থাকতে চায়। তাদের মৃত্যুর পর স্বর্গে অমর আত্মিক জীবনে পুনরুত্থিত হওয়ার মাধ্যমে তারা তাদের “উপার্জ্জিত ফল” পাবে। (২ করিন্থীয় ৫:১-৩, ৬-৮, ১০; ১ করিন্থীয় ১৫:৫১, ৫২; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১৩) “যখন আমরা তাঁহার মৃত্যুর সাদৃশ্যে তাঁহার সহিত একীভূত হইয়াছি,” পৌল লিখেছিলেন, “তখন অবশ্য পুনরুত্থানের সাদৃশ্যেও হইব।” (রোমীয় ৬:৫) কিন্তু সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যাদের জন্য পুনরুত্থানের অর্থ হচ্ছে মানুষ হিসেবে আবারও পৃথিবীতে জীবন লাভ করা? কীভাবে পুনরুত্থানের আশা তাদেরকে ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী করে? আমরা অব্রাহামের উদাহরণ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি।
পুনরুত্থান এবং যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব
১২, ১৩. পুনরুত্থানে বিশ্বাস করার কোন জোরালো ভিত্তি অব্রাহামের ছিল?
১২ “ঈশ্বরের বন্ধু” হিসেবে বর্ণিত অব্রাহাম বিশ্বাসের এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। (যাকোব ২:২৩) ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ে বিশ্বস্ত নারী-পুরুষদের তালিকায় অব্রাহামের বিশ্বাসের কথা পৌল তিন বার উল্লেখ করেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৮, ৯, ১৭) তার তৃতীয় উল্লেখ অব্রাহামের সেই সময়ের প্রদর্শিত বিশ্বাসের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে, যখন তিনি বাধ্যতার সঙ্গে তার পুত্র ইস্হাককে বলি হিসেবে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। অব্রাহাম দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, ইস্হাকের মাধ্যমে এক বংশ সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা যিহোবার দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল। ইস্হাককে যদি বলি হিসেবে মৃত্যুবরণ করতেও হতো, তবুও অব্রাহাম “মনে স্থির করিয়াছিলেন, ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতেও উত্থাপন করিতে সমর্থ।”
১৩ ঘটনাক্রমে যিহোবা যখন অব্রাহামের বিশ্বাসের দৃঢ়তা দেখেছিলেন, তখন তিনি বলির বিকল্প হিসেবে একটা পশুর ব্যবস্থা করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, ইস্হাকের অভিজ্ঞতা পুনরুত্থানের একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করেছিল, যেমন পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন: “তিনি [অব্রাহাম] তথা হইতে দৃষ্টান্তরূপে তাঁহাকে [ইস্হাককে] ফিরিয়া পাইলেন।” (ইব্রীয় ১১:১৯) অধিকন্তু, পুনরুত্থানে বিশ্বাস করার পিছনে অব্রাহামের ইতিমধ্যেই জোরালো এক ভিত্তি ছিল। যিহোবা কি অব্রাহামের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাকে পুনর্জীবিত করেননি, যখন তিনি এবং তার স্ত্রী সারা দুজনেই বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাদের পুত্র ইস্হাককে জন্ম দিয়েছিলেন?—আদিপুস্তক ১৮:১০-১৪; ২১:১-৩; রোমীয় ৪:১৯-২১.
১৪. (ক) ইব্রীয় ১১:৯, ১০ পদ অনুসারে, অব্রাহাম কীসের অপেক্ষা করেছিলেন? (খ) নতুন জগতে রাজ্যের আশীর্বাদগুলো লাভ করার জন্য অব্রাহামের প্রতি এখনও আর কী ঘটতে হবে? (গ) কীভাবে আমরা রাজ্যের আশীর্বাদগুলো লাভ করতে পারি?
১৪ পৌল অব্রাহামকে একজন প্রবাসী এবং তাঁবুতে বসবাসকারী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যিনি “ভিত্তিমূলবিশিষ্ট সেই নগরের অপেক্ষা করিতেছিলেন, যাহার স্থাপনকর্ত্তা ও নির্ম্মাতা ঈশ্বর।” (ইব্রীয় ১১:৯, ১০) এটা যিরূশালেমের মতো কোনো আক্ষরিক নগর ছিল না, যেখানে ঈশ্বরের মন্দির অবস্থিত ছিল। বরং এটা ছিল এক রূপক নগর। এটা ছিল ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য, যা খ্রিস্ট যিশু ও তাঁর ১,৪৪,০০০ জন সহশাসককে নিয়ে গঠিত। ১,৪৪,০০০ জনকেও তাদের স্বর্গীয় প্রতাপে “পবিত্র নগরী, নূতন যিরূশালেম,” খ্রিস্টের ‘কন্যা’ বা কনে হিসেবে বলা হয়। (প্রকাশিত বাক্য ২১:২) ১৯১৪ সালে, যিহোবা যিশুকে স্বর্গীয় রাজ্যের মশীহ রাজা হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন এবং তাঁকে তাঁর শত্রুদের মাঝে কর্তৃত্ব করার আদেশ দিয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ১১০:১, ২; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫) রাজ্য শাসনের আশীর্বাদগুলো লাভ করার জন্য “ঈশ্বরের বন্ধু,” অব্রাহামকে আবারও জীবিত হতে হবে। একইভাবে, রাজ্যের আশীর্বাদগুলো লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের নতুন জগতে বেঁচে থাকতে হবে, হয় হর্মাগিদোনে রক্ষাপ্রাপ্ত বিস্তর লোকের সদস্য হিসেবে, না হয় মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত ব্যক্তি হিসেবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) কিন্তু, পুনরুত্থানের আশার ভিত্তিটি কী?
ঈশ্বরের প্রেম—পুনরুত্থানের আশার ভিত্তি
১৫, ১৬. (ক) বাইবেলের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীটি কীভাবে আমাদের পুনরুত্থানের আশার জন্য ভিত্তি স্থাপন করে? (খ) কীভাবে পুনরুত্থানে বিশ্বাস আমাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী করে?
১৫ আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, অব্রাহামের মতো আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এবং ঈশ্বরের আদেশগুলোর প্রতি বাধ্যতা আমাদেরকে যিহোবার দ্বারা ধার্মিক ঘোষিত হওয়া ও তাঁর বন্ধু হিসেবে দেখা সম্ভব করে। এটা আমাদেরকে রাজ্য শাসন থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। বাস্তবিকই, আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে ঈশ্বরের বাক্যে লিপিবদ্ধ সর্বপ্রথম ভবিষ্যদ্বাণীটি পুনরুত্থানের আশা ও ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করে। এটা কেবলমাত্র শয়তানের মস্তক চূর্ণ করার বিষয়ই বলে না কিন্তু অন্যদিকে ঈশ্বরের নারীর বংশের পাদমূলে আঘাত করার কথাও বলে। দণ্ডের ওপর যিশুর মৃত্যুই ছিল রূপকভাবে পাদমূলে আঘাত করা। তৃতীয় দিনে তাঁর পুনরুত্থান সেই ক্ষতকে আরোগ্য করে তুলেছিল এবং “মৃত্যুর কর্তৃত্ববিশিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থাৎ দিয়াবলকে শক্তিহীন” করার জন্য চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার পথকে সুগম করে দিয়েছিল।—ইব্রীয় ২:১৪.
১৬ পৌল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, “ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন।” (রোমীয় ৫:৮) এই অনুগ্রহ বা অযাচিত দয়ার প্রতি আমাদের উপলব্ধি আমাদেরকে প্রকৃতই যিশু ও আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার আরও নিকটবর্তী করে।—২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫.
১৭. (ক) ইয়োব কোন আশা প্রকাশ করেছিলেন? (খ) ইয়োব ১৪:১৫ পদ যিহোবা সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে আর এটা আপনার মধ্যে কেমন অনুভূতির সৃষ্টি করে?
১৭ প্রাক্ খ্রিস্টীয় যুগের একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োবও পুনরুত্থানের জন্য সানন্দে প্রতীক্ষা করেছিলেন। শয়তানের কারণে তিনি প্রচুর কষ্টভোগ করেছিলেন। তার সেই মিথ্যা বন্ধুরা, যারা কখনো পুনরুত্থানের বিষয় উল্লেখ করেনি, তাদের বৈসাদৃশ্যে ইয়োব এই আশা থেকে সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন ও জিজ্ঞেস করেছিলেন: “মনুষ্য মরিয়া কি পুনর্জীবিত হইবে?” উত্তরে স্বয়ং ইয়োব ঘোষণা করেছিলেন: “আমি আপন সৈন্যবৃত্তির সমস্ত দিন প্রতীক্ষা করিব, যে পর্য্যন্ত আমার দশান্তর না হয়।” তাঁর ঈশ্বর যিহোবাকে সম্বোধন করে তিনি স্বীকার করেছিলেন: “পরে তুমি আহ্বান করিবে, ও আমি উত্তর দিব।” আমাদের প্রেমময় সৃষ্টিকর্তার অনুভূতি সম্বন্ধে ইয়োব উল্লেখ করেছিলেন: “তুমি আপন হস্তকৃতের প্রতি মমতা করিবে [“তোমার আকুল আকাঙ্ক্ষা থাকবে,” NW]।” (ইয়োব ১৪:১৪, ১৫) হ্যাঁ, যিহোবা উৎসুকভাবে সেই সময়ের জন্য প্রত্যাশা করেন, যখন বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা পুনরুত্থানের মাধ্যমে জীবন ফিরে পাবে। আমরা অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমাদের প্রতি যে-প্রেম ও অনুগ্রহ দেখান, তা নিয়ে আমরা যখন ধ্যান করি, তখন তা আমাদের তাঁর আরও কত নিকটবর্তীই না করে!—রোমীয় ৫:২১; যাকোব ৪:৮.
১৮, ১৯. (ক) আবারও বেঁচে থাকার কোন প্রত্যাশা দানিয়েলের রয়েছে? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয় পুনরালোচনা করব?
১৮ ভাববাদী দানিয়েলের বিষয়ে ঈশ্বরের একজন দূত বর্ণনা করেছিলেন যে, তিনি “মহাপ্রীতি-পাত্র” ছিলেন, যিনি বিশ্বস্ত সেবায় দীর্ঘসময় বেঁচে ছিলেন। (দানিয়েল ১০:১১, ১৯) সা.কা.পূ. ৬১৭ সালে নির্বাসিত হওয়ার সময় থেকে পারস্য-রাজ কোরসের রাজত্বের তৃতীয় বছর, সা.কা.পূ. ৫৩৬ সালে এক দর্শন লাভ করার কিছু সময় পর তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যিহোবার প্রতি দানিয়েলের নীতিনিষ্ঠা অক্ষুণ্ণ ছিল। (দানিয়েল ১:১; ১০:১) কোরসের রাজত্বের তৃতীয় বছরের কোনো এক সময়ে দানিয়েল বিশ্বশক্তিগুলোর উত্থানের বিষয়ে এক দর্শন লাভ করেছিলেন, যা আসন্ন মহাক্লেশে এসে শেষ হয়। (দানিয়েল ১১:১–১২:১৩) দানিয়েল সেই দর্শন পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেননি বলে যে-স্বর্গদূত তাকে সেই বিষয় জানিয়েছিলেন, তাকে দানিয়েল জিজ্ঞেস করেছিলেন: “হে আমার প্রভু, এই সকলের শেষফল কি হইবে?” উত্তরে সেই স্বর্গদূত ‘শেষকালের’ প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন, যে-সময়ে “বুদ্ধিমানেরাই বুঝিবে।” দানিয়েলের নিজের প্রত্যাশাগুলো কী ছিল? সেই স্বর্গদূত স্বীকার করেছিলেন: “তুমি শেষের অপেক্ষাতে গমন কর, তাহাতে বিশ্রাম পাইবে।” (দানিয়েল ১২:৮-১০, ১৩) দানিয়েল খ্রিস্টের সহস্র বছরের রাজত্ব চলাকালীন “ধার্ম্মিকগণের পুনরুত্থান সময়ে” ফিরে আসবেন।—লূক ১৪:১৪.
১৯ আমরা প্রথম যখন বিশ্বাসী হয়েছিলাম, তার চেয়ে এখন আমরা শেষকালের আরও শেষ মুহূর্তে এবং খ্রিস্টের সহস্র বছরের রাজত্বের শুরুর আরও কাছাকাছি সময়ে বাস করছি। তাই, আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে, ‘অব্রাহাম, ইয়োব, দানিয়েল এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত নারী-পুরুষদের সঙ্গে মেলামেশা করার জন্য আমি কি নতুন জগতে থাকব?’ আমরা থাকব, যদি আমরা যিহোবার নিকটবর্তী থাকি ও তাঁর আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হই। আমাদের পরের প্রবন্ধে আমরা পুনরুত্থানের আশা আরও বিস্তারিতভাবে পুনরালোচনা করব, যাতে আমরা সেই ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারি যে, কারা পুনরুত্থিত হবে।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• পৌল যখন পুনরুত্থানের প্রতি তার আশা ঘোষণা করেছিলেন, তখন তিনি কেমন প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন?
• কেন পুনরুত্থানের আশা সত্য খ্রিস্টানদের মিথ্যা থেকে আলাদা করে?
• কীভাবে আমরা জানি যে, অব্রাহাম, ইয়োব এবং দানিয়েলের পুনরুত্থানে বিশ্বাস ছিল?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
দেশাধ্যক্ষ ফীলিক্সের সামনে উপস্থিত হয়ে পৌল দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে পুনরুত্থানের আশা সম্বন্ধে ঘোষণা করেছিলেন
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
অব্রাহামের কেন পুনরুত্থানে বিশ্বাস ছিল?
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইয়োব পুনরুত্থানের আশা থেকে সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
দানিয়েল ধার্মিক ব্যক্তিদের পুনরুত্থানে ফিরে আসবেন