দরিদ্রতামুক্ত এক জগৎ সন্নিকট
দরিদ্রতামুক্ত এক জগৎ সন্নিকট
পরমদেশের ছবিগুলো, যেমন এই পত্রিকার প্রচ্ছদে রয়েছে, সেই লোকেদের কাছে আবেদন সৃষ্টি করে, যারা দরিদ্রতার মধ্যে বাস করে। প্রথম মানব দম্পতি আদম ও হবার জন্য এক পরমদেশ বাস্তব ছিল। এদন উদ্যান ছিল তাদের গৃহ। (আদিপুস্তক ২:৭-২৩) যদিও সেই পরমদেশ হারিয়ে গিয়েছে, তবুও দরিদ্রতামুক্ত এক নতুন জগতে ভবিষ্যৎ পরমদেশে বিশ্বাস কেবলমাত্র এক স্বপ্ন নয়। এটা বাইবেলে বলা প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর দৃঢ়ভাবে স্থাপিত।
যিশু খ্রিস্ট পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষ দিনে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। যিশুর সঙ্গে যে দুষ্কর্মকারী ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন, তিনি মানুষের সমস্যাগুলো সমাধানে ঈশ্বরের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “যীশু, আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন।” এই কথাগুলো দেখায় যে, সেই দুষ্কর্মকারী বিশ্বাস করতেন যে, যিশু রাজা হবেন আর তাই মৃতদের আবার জীবিত করা হবে। যিশু উত্তর দিয়েছিলেন: “আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, অদ্যই তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।”—লূক ২৩:৪২, ৪৩.
যারা পরমদেশে বাস করবে তাদের বিষয় বলতে গিয়ে বাইবেল উল্লেখ করে: “লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে।” (যিশাইয় ৬৫:২১) হ্যাঁ, “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না; কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভুর মুখ ইহা বলিয়াছে।”—মীখা ৪:৪.
তা হলে, এখন কেন দরিদ্রতা থাকতে দেওয়া হয়েছে? দরিদ্রতা কবলিত ব্যক্তিদের জন্য ঈশ্বর কোন সাহায্য প্রদান করেন? কখন চূড়ান্তভাবে দরিদ্রতা শেষ হবে?
কেন দরিদ্রতাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে?
আদম ও হবাকে যে-পরমদেশে রাখা হয়েছিল সেটা এক মন্দ দূত শয়তান দিয়াবলের এক বিদ্রোহের ফলে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একটা সাপকে মুখপাত্র হিসেবে ব্যবহার করে শয়তান হবাকে একটা নির্দিষ্ট গাছের ফল খেয়ে ঈশ্বরের আইন ভঙ্গ করার জন্য প্রলুব্ধ করেছিল। সে হবাকে প্রতারিত করে বিশ্বাস করিয়েছিল যে, ঈশ্বর থেকে স্বাধীন হওয়া তার জন্য আরও উত্তম এক জীবন এনে দেবে। হবা যখন সেই নিষিদ্ধ ফল আদমকে দিয়েছিল, তখন সেও খেয়েছিল, তার স্ত্রীর কথা শুনে ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।—আদিপুস্তক ৩:১-৬; ১ তীমথিয় ২:১৪.
উপযুক্তভাবেই সেই বিদ্রোহী দম্পতিকে পরমদেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল আর সেই সময় থেকেই তাদের বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছিল। আজকের দিন পর্যন্ত যিহোবা শয়তানকে পাপী মানবজাতির ওপর শাসন করতে দিয়েছেন, এই বিষয়টা স্পষ্ট করতে যে ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়ার ফল কী হয়। মানব ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে, মানবজাতি পৃথিবীতে পরমদেশ নিয়ে আসতে পারে না। (যিরমিয় ১০:২৩) বরং, ঈশ্বর থেকে স্বাধীন হওয়া দুর্দশাপূর্ণ সমস্যাগুলো নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে দরিদ্রতাও রয়েছে।—উপদেশক ৮:৯.
কিন্তু, এই সমস্যাপূর্ণ জগতে দরিদ্রদের অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়নি। ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য বাইবেলে তাদের জন্য উপকারজনক নির্দেশনা রয়েছে।
“ভাবিত হইও না”
এক বিরাটসংখ্যক শ্রোতা, যাদের মধ্যে অনেক দরিদ্র লোকেরাও ছিল, তাদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে যিশু বলেছিলেন: “আকাশের পক্ষীদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর; তাহারা বুনেও না, কাটেও না, গোলাঘরে সঞ্চয়ও করে না, তথাপি তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন; তোমরা কি তাহাদের হইতে অধিক শ্রেষ্ঠ নও? . . . অতএব ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, ‘কি ভোজন করিব?’ বা ‘বা কি পান করিব?’ বা ‘কি পরিব?’ কেননা পরজাতীয়েরাই এই সকল বিষয় চেষ্টা করিয়া থাকে; তোমাদের স্বর্গীয় পিতা ত জানেন যে এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।”—মথি ৬:২৬-৩৩.
তাই বলে একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে যে চুরি করতে হবে, এমন নয়। (হিতোপদেশ ৬:৩০, ৩১) তার সমস্ত বিষয় জোগানো হবে, যদি তিনি ঈশ্বরকে তার জীবনে প্রথমে রাখেন। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের লেসোথোর একজন ব্যক্তি টুকিসোর ঘটনা বিবেচনা করুন। সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দমন করার জন্য ১৯৯৮ সালে বিদেশি সৈন্যবাহিনী লেসোথোতে প্রবেশ করে। এই যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে দোকানপাট লুঠ করা হয়, লোকেরা তাদের চাকরি হারায় এবং প্রচণ্ড খাদ্যাভাব দেখা দেয়।
টুকিসো রাজধানীর একেবারে চরম দরিদ্র এলাকায় বাস করতেন। তার প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেকেই বেঁচে থাকার জন্য দোকানপাটে লুঠপাট করেছিল। টুকিসো যখন তার এক কক্ষবিশিষ্ট ঘরে ফিরে এসেছিলেন, তখন তিনি দেখেছিলেন যে, তার সঙ্গে মাসেসো নামে যে-মহিলা থাকতেন, তিনি অনেক জিনিসপত্র লুঠ করে নিয়ে এসেছিলেন। “সমস্তকিছু বাইরে নিয়ে যাও,” টুকিসো বলেছিলেন আর ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, চুরি করা ঈশ্বরের আইনের বিরুদ্ধে। মাসেসো সেইমতো কাজ করেছিলেন। প্রতিবেশীরা তাদেরকে বিদ্রূপ করেছিল এবং সেই চুরি করা খাবার নিয়ে নিয়েছিল।
টুকিসো এইরকম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন কারণ যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করে তিনি এই বিষয়ে শিখেছিলেন। ঈশ্বরের আইনের প্রতি তার এই বাধ্যতার ফলে কি তাকে অনাহারে থাকতে হয়েছিল? না। যিহোবার সাক্ষিদের যে-মণ্ডলীর সঙ্গে টুকিসো মেলামেশা করতেন সেখানকার প্রাচীনরা অল্প সময় পরেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এবং তার জন্য কিছু খাবার নিয়ে এসেছিল। আসলে, প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার যিহোবার সাক্ষিরা লেসোথোতে তাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের জন্য দুই টনের বেশি ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছিল। ঈশ্বরের প্রতি টুকিসোর বাধ্যতা এবং মণ্ডলীর প্রেমপূর্ণ সহযোগিতার দ্বারা মাসেসো অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনিও বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন। অবশেষে, তারা দুজনেই আইনত বিবাহ করেছিল আর এইভাবে যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হয়েছিল। তারা এখনও বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করে যাচ্ছে।
যিহোবা ঈশ্বর দরিদ্রদের জন্য চিন্তা করেন। (“দরিদ্রদেরকে ঈশ্বর কোন দৃষ্টিতে দেখেন?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) তিনি প্রেমের সঙ্গে টুকিসো ও মাসেসোর মতো অন্যদেরও সাহায্য করার জন্য তাঁর বিষয়ে শেখার ব্যবস্থা করেছেন। আর তিনি তাঁর বাক্যে রোজকার জীবনযাপনের জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ জুগিয়েছেন।
এক উপকারজনক ব্যবস্থা
যিহোবার সাক্ষিরা সবসময় দরিদ্রদের জন্য ঈশ্বরের চিন্তার বিষয়টা প্রতিফলিত করার চেষ্টা করেছে। (গালাতীয় ২:১০) প্রায়ই একটা দেশে যখন দুর্যোগ দেখা যায় এবং সত্য খ্রিস্টানরা এর শিকার হয়, তখন প্রয়োজনীয় সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। অধিক গুরুত্বপূর্ণ হল, যিহোবার সাক্ষিরা সকলের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলোর বিষয়ে চিন্তা প্রকাশ করে, যাদের মধ্যে দরিদ্ররাও রয়েছে। (মথি ৯:৩৬-৩৮) বিগত ষাট বছরে হাজার হাজার প্রশিক্ষিত পরিচারক বিদেশে মিশনারি হিসেবে সেবা করার জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে গিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, ফিনল্যান্ড থেকে আসা এক মিশনারি দম্পতি সেসোথো ভাষা শিখেছিল এবং টুকিসো ও মাসেসোকে যিশুর শিষ্য হয়ে উঠতে শিক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছিল। (মথি ২৮:১৯, ২০) এই ধরনের মিশনারি কাজের জন্য প্রায়ই এক ধনী দেশের আরামদায়ক জীবন পরিত্যাগ করে এক দরিদ্র দেশে চলে যেতে হয়।
বেঁচে থাকার জন্য চুরি করা সত্য খ্রিস্টানদের জন্য কোনো বিকল্প উপায় নয়। পরিবর্তে, যিহোবা ঈশ্বরের প্রতিপালনের ক্ষমতার ওপর তাদের বিশ্বাস আছে। (ইব্রীয় ১৩:৫, ৬) যে-উপায়ে যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রতিপালন করেন তার মধ্যে একটা হল বিশ্বব্যাপী তাঁর উপাসকদের সংগঠনের মাধ্যমে, যে-উপাসকরা একে অন্যের জন্য চিন্তা করে।
আরেকটা উপায়ে যিহোবা দরিদ্রদের সাহায্য করে থাকেন আর তা হচ্ছে রোজকার জীবনযাপনের বিষয়ে ব্যবহারিক ইফিষীয় ৪:২৮) অনেক বেকার লোক নিজেদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে, যেমন শাকসবজির বাগান করা ও এর যত্ন নেওয়ার মতো কঠোর পরিশ্রম করে থাকে। এ ছাড়া বাইবেল দরিদ্র লোকেদের ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো, যেমন মদের অপব্যবহার পরিহার করার বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে অর্থ সঞ্চয় করতে সাহায্য করে।—ইফিষীয় ৫:১৮.
পরামর্শ দিয়ে। উদাহরণ হিসেবে, বাইবেল আদেশ দেয়: “চোর আর চুরি না করুক, বরং স্বহস্তে সদ্ব্যাপারে পরিশ্রম করুক, যেন দীনহীনকে দিবার জন্য তাহার হাতে কিছু থাকে।” (দরিদ্রতামুক্ত এক জগৎ—কখন?
বাইবেল দেখায় যে, আমরা শয়তানের শাসনের “শেষ কালে” বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১) শীঘ্রই যিহোবা ঈশ্বর মানবজাতিকে বিচার করার জন্য যিশু খ্রিস্টকে প্রেরণ করবেন। সেই সময়ে কী ঘটবে? যিশু তাঁর একটা দৃষ্টান্তে উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আর যখন মনুষ্যপুত্ত্র সমুদয় দূত সঙ্গে করিয়া আপন প্রতাপে আসিবেন, তখন তিনি নিজ প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন। আর সমুদয় জাতি তাঁহার সম্মুখে একত্রীকৃত হইবে; পরে তিনি তাহাদের এক জন হইতে অন্য জনকে পৃথক্ করিবেন, যেমন পালরক্ষক ছাগ হইতে মেষ পৃথক্ করে।”—মথি ২৫:৩১-৩৩.
এই দৃষ্টান্তের মেষেরা হল সেই ব্যক্তিরা যারা যিশুর রাজপদের প্রতি বশীভূত হয়। যিশু তাদেরকে মেষের সঙ্গে তুলনা করেন কারণ তারা তাদের পালক হিসেবে তাঁকে অনুসরণ করে। (যোহন ১০:১৬) এই মেষতুল্য ব্যক্তিরা যিশুর নিখুঁত শাসনাধীনে জীবন লাভ করবে। এটা দরিদ্রতামুক্ত নতুন জগতে এক সুখময় জীবন হবে। যিশুর শাসনকে প্রত্যাখ্যান করে এমন ছাগতুল্য ব্যক্তিরা চিরকালের জন্য ধ্বংস হবে।—মথি ২৫:৪৬.
ঈশ্বরের রাজ্য দুষ্টতার শেষ নিয়ে আসবে। আর এরপর দরিদ্রতা অতীতের এক বিষয় হবে। এর পরিবর্তে, পৃথিবীতে সেই লোকেরা বাস করবে যারা একে অন্যকে ভালবাসে ও তাদের জন্য চিন্তা করে। যিহোবার সাক্ষিদের প্রেমময় আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজের মধ্যে এই ধরনের এক নতুন জগৎ দেখা সম্ভবপর হতে পারে, কারণ যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।”—যোহন ১৩:৩৫.
[৬, ৭ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
দরিদ্রদেরকে ঈশ্বর কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
বাইবেল মানবজাতির সৃষ্টিকর্তাকে “ক্ষুধিতদিগকে খাদ্য দান করেন” বলে বর্ণনা করে। (গীতসংহিতা ১৪৬:৭) এর মধ্যে শতাধিক পদ রয়েছে, যা দরিদ্রদের জন্য ঈশ্বরের চিন্তাকে তুলে ধরে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবা প্রাচীন ইস্রায়েল জাতিকে তাঁর ব্যবস্থা দেওয়ার সময় তিনি ইস্রায়েলীয় কৃষকদের তাদের ক্ষেত্রের শস্য পুরোপুরি না কাটার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা জলপাই বা জিতবৃক্ষ অথবা দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পতিত ফল দ্বিতীয়বার সংগ্রহ করতে পারত না। এই আইনগুলো বিদেশি, অনাথ, বিধবা এবং অন্যান্য দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য এক প্রেমময় ব্যবস্থা ছিল।—লেবীয় পুস্তক ১৯:৯, ১০; দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৯-২১.
এ ছাড়া, ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা কোন বিধবাকে কিম্বা পিতৃহীনকে দুঃখ দিও না। তাহাদিগকে কোন মতে দুঃখ দিলে যদি তাহারা আমার নিকটে ক্রন্দন করে, তবে আমি অবশ্য তাহাদের ক্রন্দন শুনিব; আর আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে, এবং আমি তোমাদিগকে খড়্গ দ্বারা বধ করিব, তাহাতে তোমাদের স্ত্রীরা বিধবা ও তোমাদের সন্তানগণ পিতৃহীন হইবে।” (যাত্রাপুস্তক ২২:২২-২৪) দুঃখের বিষয় যে, অনেক ইস্রায়েলীয় ধনী ব্যক্তি এই কথাগুলো উপেক্ষা করেছিল। এটাসহ আরও অন্যান্য মন্দ কাজের জন্য যিহোবা ঈশ্বর তাঁর ভাববাদীদের মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়দের অনেক সতর্কবাণী দিয়েছিলেন। (যিশাইয় ১০:১, ২; যিরমিয় ৫:২৮; আমোষ ৪:১-৩) অবশেষে ঈশ্বর অশূরীয়দের এবং পরে বাবিলীয়দেরকে ইস্রায়েলীয়দের এলাকা জয় করতে দিয়েছিলেন। অনেক ইস্রায়েলীয়কে হত্যা করা হয়েছিল এবং রক্ষাপ্রাপ্তদের ভিনদেশে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ঈশ্বরের প্রিয় পুত্র যিশু খ্রিস্ট দরিদ্রদের জন্য তাঁর পিতার প্রেমময় চিন্তাকে প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর পরিচর্যার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে যিশু বলেছিলেন: “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কারণ তিনি আমাকে অভিষিক্ত করিয়াছেন, দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করিবার জন্য।” (লূক ৪:১৮) তার মানে এই নয় যে, যিশু তাঁর পরিচর্যাকে দরিদ্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। তিনি প্রেমের সঙ্গে ধনী লোকেদেরও সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু, তা করার সময় যিশু প্রায়ই দরিদ্রদের জন্য তাঁর চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন ধনী শাসনকর্তাকে তিনি এই পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমার যাহা কিছু আছে, সমস্ত বিক্রয় কর, আর দরিদ্রদিগকে বিতরণ কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাদ্গামী হও।”—লূক ১৪:১, ১২-১৪; ১৮:১৮, ২২; ১৯:১-১০.
যিহোবা ঈশ্বর এবং তাঁর পুত্র গভীরভাবে দরিদ্রদের বিষয়ে চিন্তা করে। (মার্ক ১২:৪১-৪৪; যাকোব ২:১-৬) দরিদ্রদের জন্য তাঁর চিন্তাকে প্রতিফলিত করে যিহোবা তাঁর স্মৃতিতে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র ব্যক্তিকে রাখেন, যারা মারা গিয়েছে। এই ধরনের সমস্ত ব্যক্তি দরিদ্রতামুক্ত এক নতুন জগতে পুনরুত্থিত হবে।—প্রেরিত ২৪:১৫.
[চিত্রগুলো]
যিহোবার সাক্ষিদের আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ দেখায় যে, নতুন জগৎ সম্ভব
[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
টুকিসো এবং মাসেসো সেই মিশনারির সঙ্গে, যিনি টুকিসোর সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন
[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
মাসেসো তার ঘরের দরজায় সেই মিশানারির সঙ্গে, যিনি তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন