মারি মরুভূমির প্রাচীন সম্রাজ্ঞী
মারি মরুভূমির প্রাচীন সম্রাজ্ঞী
“আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে আমাদের সৌভাগ্যজনক ঘটনাটা উদ্যাপন করে, সেই রাতে আমার শোবার ঘরে আসার পর আমার মাথা কিছুটা ঝিমঝিম করেছিল,” ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ আঁদ্রে পারো স্মরণ করেছিলেন। ১৯৩৪ সালের জানুয়ারি মাসে সিরিয়ার ইউফ্রেটিস নদীর তীরে ছোট্ট শহর আবু কেমালের কাছে তেল হারিরিতে পারো এবং তার দল মাটি খুঁড়ে একটা মূর্তি উদ্ধার করেছিল, যেটাতে এই কথাগুলো খোদাই করা ছিল: “লামজি-মারি, মারির রাজা, এনলিলের মহাযাজক।” তারা সেটা আবিষ্কার করে দারুণভাবে রোমাঞ্চিত হয়েছিল।
অবশেষে মারি শহরটা খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল! এই আবিষ্কার বাইবেল ছাত্রদের কাছে কেন আগ্রহজনক?
কেন আগ্রহজনক?
যদিও প্রাচীন লেখাগুলো থেকে মারির অস্তিত্ব সম্বন্ধে জানা গিয়েছিল, তবে এর প্রকৃত অবস্থান দীর্ঘসময় ধরে এক রহস্যই ছিল। সুমেরীয় লেখকদের মতে, মারি ছিল এক রাজবংশের কেন্দ্রস্থল, যা এক সময়ে পুরো মেসোপটেমিয়ার ওপর শাসন করেছিল। ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে ওঠায় মারি কৌশলগত কারণেই ব্যবসায়িক পথগুলোর সংযোগস্থলে অবস্থিত ছিল যা অশূরিয়া, মেসোপটেমিয়া, আ্যনাটোলিয়া এবং ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলকে পারস্য উপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছিল। কাঠ, ধাতববস্তু এবং পাথরসহ অন্যান্য সামগ্রী—যেগুলোর সবই মেসোপটেমিয়াতে দুষ্প্রাপ্য ছিল—শহরের
মধ্যে দিয়ে নিয়ে আসা হতো। এগুলোর ওপর আরোপিত কর মারিকে যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী করেছিল, যা এই শহরকে পুরো অঞ্চলের ওপর কর্তৃত্ব করতে সক্ষম করেছিল। কিন্তু, এই কর্তৃত্ব শেষ হয়ে গিয়েছিল, যখন আকাডের সর্গোন সিরিয়া জয় করেছিলেন।সর্গোনের বিজয়ের প্রায় তিনশো বছর পর, মারি একাধিক সামরিক সরকারের শাসনাধীনে ছিল। এদের অধীনে এই শহর যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেছিল। কিন্তু শেষ শাসক জিমরি-লিমের সময়ে মারি এর প্রভাব হারিয়েছিল। জিমরি-লিম একাধিক সামরিক বিজয়, শান্তিচুক্তি এবং বৈবাহিকসূত্রে মৈত্রীবন্ধনের মাধ্যমে তার সাম্রাজ্যকে সুসংহত করার প্রচেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, সা.কা.পূ. প্রায় ১৭৬০ সালে বাবিলের রাজা হামুরাবি এই শহর জয় ও ধ্বংস করেন এবং পারো যেটাকে “প্রাচীন বিশ্বের অতি উন্নত সভ্যতাগুলোর মধ্যে একটা সভ্যতা” বলেন, সেটার শেষ নিয়ে আসেন।
হামুরাবির সৈন্যদল যখন মারিকে ধূলিসাৎ করেছিল, তখন তারা নিজেদের অজান্তেই আধুনিক দিনের প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবেত্তাদের জন্য এক ব্যাপক কাজ রেখে গিয়েছিল। মাটির তৈরি অপোড়া ইটের প্রাচীর অপসারণ করার সময় তারা কিছু কিছু জায়গায় ৫ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন নির্দিষ্ট অট্টালিকাগুলোকে মাটি চাপা দিয়েছিল আর এভাবে এগুলো সেই সময়কার অশান্ত প্রভাব থেকে রক্ষা পেয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন মন্দির ও প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এবং সেইসঙ্গে অসংখ্য হাতিয়ার ও হাজার হাজার খোদাই করা ফলক মাটি খুঁড়ে বের করে, যা প্রাচীন সভ্যতা সম্বন্ধে তথ্য জুগিয়েছিল।
মারির ধ্বংসাবশেষ কেন আমাদের কাছে আগ্রহের বিষয়? কুলপতি অব্রাহাম যে-সময়ে পৃথিবীতে ছিলেন, তখনকার কথা বিবেচনা করুন। অব্রাহাম মহাপ্লাবনের ৩৫২ বছর পর সা.কা.পূ. ২০১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন নোহের দশম প্রজন্ম। ঈশ্বরের আদেশে অব্রাহাম তার নিজের শহর ঊর ত্যাগ করে হারণে গিয়েছিলেন। সা.কা.পূ. ১৯৪৩ সালে অব্রাহাম ৭৫ বছর বয়সে কনান দেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হারণ নগর ত্যাগ করেছিলেন। ইতালির প্রত্নতত্ত্ববিদ পাওলো মাতিয়াই বলেন, “ঊর থেকে [কনানের] যিরূশালেমে অব্রাহামের চলে আসা মারির সময়কালেই ঘটেছিল।” তাই, মারির আবিষ্কার এই অর্থে মূল্যবান যে, এটা আমাদের সেই সময়কার জগৎ সম্বন্ধে কল্পনা করতে সাহায্য করে, যেখানে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাস অব্রাহাম বাস করতেন। *—আদিপুস্তক ১১:১০–১২:৪.
ধ্বংসাবশেষগুলো কী প্রকাশ করে?
মেসোপটেমিয়ার অন্যান্য জায়গার মধ্যে মারিতে ধর্মের ব্যাপক প্রসার হয়েছিল। দেবতাদের সেবা করাকে পুরুষদের কর্তব্য বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবসময় দেবতাদের ইচ্ছা জেনে নিতে হতো। প্রত্নতত্ত্ববিদরা ছয়টা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিংহ মন্দির (কেউ কেউ এটাকে দাগনের এক মন্দির বলে মনে করে, যার বিষয়ে বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে), উর্বরতার দেবী ইস্টারের মন্দির ও সেইসঙ্গে সূর্য দেবতা শামাশের মন্দির। এই মন্দিরগুলোতে শুরু থেকেই দেবতার এক মূর্তি ছিল, যার কাছে উৎসর্গ এবং প্রার্থনা করা হতো। উপাসনাকারীরা উপাসনালয়ের প্রার্থনার বেঞ্চিতে তাদের নিজেদের হাসিমুখের মূর্তি স্থাপন করত, এইরকম মনে করে যে তাদের মূর্তিই তাদের হয়ে উপাসনার কাজকে চালিয়ে
নিয়ে যাবে। পারো উল্লেখ করেছিলেন: “তাদের মূর্তি প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাসীদের বিকল্প ছিল, আজকে ক্যাথলিক উপাসনায় জ্বালানো মোমবাতির মতো, তবে আরও বৃহৎ অর্থে।”তেল হারিরির ধ্বংসাবশেষের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল এক বিশাল প্রাসাদের পরিত্যক্ত জায়গা, যা এর শেষ দখলকারী রাজা জিমরি-লিমের নামে পরিচিত ছিল। ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ লুই-উয়েগ ভাঁসাঁ এটাকে “প্রাচীন প্রাচ্যজগতের স্থাপত্যবিদ্যার রত্ন” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ছয় একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে এখানে প্রায় ৩০০টা কক্ষ এবং অনেক প্রাঙ্গণ ছিল। এমনকি প্রাচীন নিদর্শনে এই প্রাসাদকে পৃথিবীর এক বিস্ময় হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। “এটা খুবই বিখ্যাত ছিল,” জর্জ রূয়ু তার প্রাচীন ইরাক (ইংরেজি) বইয়ে মন্তব্য করেন, “সিরিয়ার উপকূলবর্তী উগারিতের রাজা তার ছেলেকে শুধুমাত্র ‘জিমরি-লিমের বাড়ি’ পরিদর্শনের জন্য ৬০০ কিলোমিটার দূরবর্তী অঞ্চলে পাঠাতে দ্বিধা করেননি।”
এক প্রশস্ত প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর আগে পরিদর্শনকারীরা দুর্গের পাশের একটা একক প্রবেশপথ দিয়ে দুর্ভেদ্য প্রাসাদে প্রবেশ করতে পারত। মঞ্চের ওপর অধিষ্ঠিত সিংহাসনে আসীন মারির শেষ রাজা জিমরি-লিম সেনাবাহিনী, বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক বিষয়সমূহ দেখাশোনা করতেন; বিচার ঘোষণা করতেন; এবং পরিদর্শক ও দূতাবাস কর্মীদের স্বীকৃতি প্রদান করতেন। অতিথিদের জন্য থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল, যারা কিনা রাজার জাঁকজমকপূর্ণ ভোজোৎসবে নিয়মিতভাবে পানাহার করত। খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল, ঝলসানো, ভাজা বা সেদ্ধ গরু, খাসি, হরিণের মাংস, মাছ এবং গৃহপালিত মুরগির মাংস—সবকিছু মশলাযুক্ত রসুনের সস এবং সবজি ও পনিরের বিভিন্ন উপাদনসহ পরিবেশন করা হতো। ভোজের শেষপদে ছিল তাজা, শুকনো বা চিনির প্রলেপ দেওয়া ফল এবং ছাঁচে তৈরি করা কেক। অতিথিদের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিয়ার বা মদ পরিবেশন করা হতো।
প্রাসাদে স্বাস্থ্যবিধান ছিল। যে-স্নানাগারগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলোতে পোড়ামাটির টাব এবং আসনবিহীন শৌচাগার ছিল। এই কক্ষগুলোর মেঝে এবং প্রাচীরের নীচের অংশ পিচের প্রলেপ দিয়ে সুরক্ষিত ছিল। নোংরা জল নিষ্কাশনের জন্য ইটের নর্দমা ছিল এবং পিচ দিয়ে কাদামাটির পাইপগুলো জলরোধক করা হয়েছিল, যা প্রায় ৩,৫০০ বছর পর এখনও সক্রিয়। রাজকীয় হারেমের তিন জন মহিলা যখন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, তখন খুব কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের অসুস্থ একজন মহিলাকে আলাদা রাখা হতো এবং নির্দিষ্ট সময় ধরে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হতো। “তার পেয়ালা থেকে কারো পান করা, তার টেবিল থেকে কারো খাবার গ্রহণ করা এবং তার চেয়ারে কারো বসা অনুচিত ছিল।”
সংরক্ষিত নথিপত্র থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
পারো এবং তার দল আকেডিয়ানে লেখা প্রায় ২০,০০০ কীলকাকার ফলক আবিষ্কার করেছিল। ফলকগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল চিঠিপত্র এবং প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিষয়বস্তু। এই সংরক্ষিত নথিপত্রের মধ্যে কেবলমাত্র তিনভাগের একভাগ ছাপা হয়েছে। যাই হোক, এগুলো ২৮টি খণ্ডে গঠিত। এগুলোর কীরকম মূল্য রয়েছে? “মারির নথিপত্র আবিষ্কারের আগে,” জাঁ-ক্লোদ মেরগুয়েরঁ, যিনি মারি প্রত্নতাত্ত্বিক মিশনের পরিচালক ছিলেন, তিনি বলেন, “আমরা দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শুরুতে ইতিহাসের, দীর্ঘপ্রতিষ্ঠিত বিধানের এবং মেসোপটেমিয়ার ও সিরিয়ার রোজকার জীবন সম্বন্ধে একেবারে কিছুই জানতাম না। ফলকগুলোর কারণেই ইতিহাসের সমগ্র অধ্যায়গুলো লেখা সম্ভবপর হয়েছে।” পারোর মন্তব্য অনুযায়ী, সংরক্ষিত নথিপত্রগুলো “এগুলোতে উল্লেখিত লোকেদের সম্বন্ধে এবং পুরাতন নিয়ম আমাদেরকে কুলপতিদের সময় সম্বন্ধে যা বলে, এই দুইয়ের মধ্যে আশ্চর্য রকমের সাদৃশ্য প্রকাশ করে।”
এ ছাড়া, মারিতে পাওয়া ফলকগুলো বাইবেলের নির্দিষ্ট কিছু অংশের বিষয়ও তথ্য প্রকাশ করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে, সেই ফলকগুলো ইঙ্গিত করে যে, একজন শত্রুর হারেমের ওপর অধিকার লাভ করা “সেই সময়ে রাজকীয় আচরণের এক মৌলিক ঘটনা” ছিল। বিশ্বাসঘাতক অহীথোফলের পরামর্শে দায়ূদের পুত্র অবশালেমের তার পিতার উপপত্নীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা নতুন কিছুই ছিল না।—২ শমূয়েল ১৬:২১, ২২.
১৯৩৩ সাল থেকে তেল হারিরিতে ৪১টি প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু, সেই সময় পর্যন্ত মারির ২৭০ একর জমির মধ্যে কেবলমাত্র ২০ একর জমি পরীক্ষা করা হয়েছে। সম্ভবত এখনও মরুভূমির এই প্রাচীন সম্রাজ্ঞী মারি শহরে চমকপ্রদ আরও অনেক কিছু আবিষ্কার করার আছে।
[পাদটীকা]
^ এ ছাড়া সম্ভবত এও হতে পারে যে, সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংসের পর যিহুদিদের বাবিলে বন্দিত্বে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা মারির ধ্বংসাবশেষের পাশ দিয়েই যাত্রা করেছিল।
[১০ পৃষ্ঠার মানচিত্র]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
পারস্য উপসাগর
ঊর
মেসোপটেমিয়া
ইউফ্রেটিস নদী
মারি
অশূরিয়া
হারণ
আ্যনাটোলিয়া
কনান
যিরূশালেম
ভূমধ্যসাগর (মহাসমুদ্র)
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
এই প্রমাণপত্র দেখায় যে, মারির রাজা লাডুন-লিম তার নির্মাণ কাজের বিষয়ে দম্ভ করেছিলেন
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
লামজি-মারির এই মূর্তি আবিষ্কার মারিকে শনাক্ত করার ব্যাপারে ইতিবাচক ফল দিয়েছিল
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
মারির পরিচালক ইবিহেল প্রার্থনারত
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাসাদের মঞ্চ, যেখানে সম্ভবত একটা দেবীর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
মারির ধ্বংসাবশেষ, মাটির তৈরি অপোড়া ইটের নির্মাণ কাজ দেখাচ্ছে
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাসাদের স্নানাগার
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
মারির বিজেতা নারাম-সিন বিজয়ের প্রস্তরফলক
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে প্রায় ২০,০০০ কীলকাকার ফলক খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
© Mission archéologique française de Tell Hariri - Mari (Syrie)
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
প্রমাণপত্র: Musée du Louvre, Paris; মূর্তি: © Mission archéologique française de Tell Hariri - Mari (Syrie)
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
মূর্তি: Musée du Louvre, Paris; মঞ্চ ও স্নানাগার: © Mission archéologique française de Tell Hariri - Mari (Syrie)
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
বিজয়ের প্রস্তরফলক: Musée du Louvre, Paris; প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ: © Mission archéologique française de Tell Hariri - Mari (Syrie)