সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘সহনশীল হও’

‘সহনশীল হও’

‘সহনশীল হও’

‘যুদ্ধ করা প্রভুর দাসের উপযুক্ত নহে; কিন্তু সকলের প্রতি কোমল, সহনশীল হওয়া উচিত।’ —২ তীমথিয় ২:২৪, ২৫.

১. খ্রিস্টীয় কাজে রত থাকার সময় কেন আমরা মাঝে মাঝে সেই লোকেদের সম্মুখীন হই, যারা কর্কশভাবে কথা বলে?

 আপনি যখন এমন ব্যক্তিদের সম্মুখীন হন, যারা আপনার অথবা আপনি যা উপস্থাপন করেন, সেটার বিরোধিতা করে, তখন আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান? শেষকাল সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে প্রেরিত পৌল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, লোকেরা “ধর্ম্মনিন্দক, . . . অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড” হবে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১২) আপনি হয়তো পরিচর্যায় অথবা অন্যান্য কাজের সময় এইরকম ব্যক্তিদের মুখোমুখি হতে পারেন।

২. কোন শাস্ত্রপদগুলো আমাদের সেই লোকেদের সঙ্গে বিজ্ঞভাবে আচরণ করতে সাহায্য করে, যারা আমাদের সঙ্গে কর্কশভাবে কথা বলে?

যারা কটুবাক্য ব্যবহার করে তাদের সকলেরই যে সঠিক বিষয়ের প্রতি আগ্রহের অভাব রয়েছে এমন নয়। নিদারুণ কষ্ট অথবা হতাশার কারণে হয়তো লোকেরা তাদের আশেপাশে যারাই থাকুক না কেন, তাদের প্রবলভাবে আক্রমণ করে। (উপদেশক ৭:৭) আবার অনেকে এইরকম আচরণ করে কারণ তারা এমন এক পরিবেশে বসবাস এবং কাজ করে, যেখানে রূঢ় ভাষায় কথাবার্তা বলা খুবই সাধারণ। তাই বলে, সেটা এই ধরনের কথাবার্তাকে খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য করে তোলে না বরং এটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কেন অন্য লোকেরা এইরকম কথাবার্তা ব্যবহার করে। কর্কশ কথাবার্তার প্রতি আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? হিতোপদেশ ১৯:১১ পদ বলে: “মানুষের বুদ্ধি তাহাকে ক্রোধে ধীর করে, আর দোষ ছাড়িয়া দেওয়া তাহার শোভা।” আর রোমীয় ১২:১৭, ১৮ পদ আমাদের উপদেশ দেয়: “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না; . . . যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।”

৩. কীভাবে শান্তিপ্রবণ হওয়া আমরা যে-বার্তা প্রচার করি, সেটার সঙ্গে যুক্ত?

আমরা যদি সত্যিই শান্তিপ্রবণ হই, তা হলে আমাদের দেখানো মনোভাবের দ্বারাই তা প্রকাশ পাবে। এটা আমরা যা বলি ও করি তাতে এবং সেইসঙ্গে হয়তো আমাদের মৌখিক অভিব্যক্তি ও কণ্ঠস্বরে প্রতিফলিত হবে। (হিতোপদেশ ১৭:২৭) যিশু তাঁর প্রেরিতদের প্রচার করতে পাঠানোর সময় তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “গৃহে প্রবেশ করিবার সময়ে সেই গৃহকে মঙ্গলবাদ করিও [“সেখানকার লোকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বোল, ‘তোমাদের শান্তি হোক্‌,’” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]। তাহাতে সেই গৃহ যদি যোগ্য হয়, তবে তোমাদের শান্তি তাহার প্রতি বর্ত্তুক; কিন্তু যদি যোগ্য না হয়, তবে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছে ফিরিয়া আইসুক।” (মথি ১০:১২, ১৩) আমরা যে-বার্তা বহন করি, সেটা হল সুসমাচার। বাইবেল এটাকে বলে, ‘শান্তির সুসমাচার,’ ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহের সুসমাচার’ এবং ‘রাজ্যের সুসমাচার।’ (ইফিষীয় ৬:১৫; প্রেরিত ২০:২৪; মথি ২৪:১৪) আমাদের উদ্দেশ্য, অন্য ব্যক্তির বিশ্বাসের সমালোচনা অথবা তার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তার সঙ্গে তর্ক করা নয় বরং ঈশ্বরের বাক্য থেকে তাকে সুসমাচার জানানো।

৪. আপনার সাক্ষাতের কারণ সম্বন্ধে বলার সুযোগ পাওয়ার আগেই যখন বলা হয় যে, “আমি আগ্রহী নই,” তখন আপনি কী বলতে পারেন?

প্রকৃতপক্ষে কোনোকিছু না শুনেই একজন গৃহকর্তা হয়তো সঙ্গে সঙ্গে বলতে পারেন, “আমি আগ্রহী নই।” অনেক ক্ষেত্রে এইরকম বলা যেতে পারে, “আমি বাইবেল থেকে শুধুমাত্র একটি ছোট পদ পড়তে চেয়েছিলাম।” এই ব্যাপারে তিনি হয়তো আপত্তি না-ও করতে পারেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে, এইরকম বলা উপযুক্ত হতে পারে: “আমি আপনাকে এমন এক সময় সম্বন্ধে বলতে চেয়েছিলাম, যখন কোনো অবিচার থাকবে না এবং সমস্ত লোক একে অপরকে ভালবাসতে শিখবে।” এই বিষয়টা যদি সঙ্গে সঙ্গে আরও জানার ব্যাপারে তার আগ্রহের উদ্রেক না করে, তা হলে আপনি হয়তো এই কথাগুলো যুক্ত করতে পারেন: “কিন্তু, মনে হচ্ছে এখন আপনি ব্যস্ত আছেন।” এরপরেও যদি গৃহকর্তার প্রতিক্রিয়া শান্তিপ্রবণ না হয়, তা হলে কি আমাদের এই উপসংহারে আসা উচিত যে, তিনি ‘যোগ্য নন’? প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক না কেন, বাইবেলের এই পরামর্শ মনে রাখুন, “সকলের প্রতি কোমল, . . . সহনশীল” হও।—২ তীমথিয় ২:২৪, ২৫.

অপমানকারী অথচ ভ্রান্ত

৫, ৬. যিশুর অনুসারীদের সঙ্গে শৌল কেমন আচরণ করেছিলেন এবং কেন তিনি এরকম করেছিলেন?

প্রথম শতাব্দীতে শৌল নামে একজন ব্যক্তি তার অসম্মানজনক কথাবার্তা এমনকি তার হিংস্র আচরণের জন্য কুখ্যাত ছিলেন। বাইবেল বলে যে, তিনি “প্রভুর শিষ্যদের বিরুদ্ধে ভয়প্রদর্শন ও হত্যার নিশ্বাস টানিতেছিলেন।” (প্রেরিত ৯:১, ২) পরে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি “ধর্ম্মনিন্দক, তাড়নাকারী ও অপমানকারী” ছিলেন। (১ তীমথিয় ১:১৩) যদিও তার কিছু আত্মীয় ইতিমধ্যেই খ্রিস্টান হয়েছিল, তবুও খ্রিস্টের অনুসারীদের প্রতি তার মনোভাব সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন: “তাঁহাদের বিরুদ্ধে অতিমাত্র উন্মত্ত হইয়া বিদেশীয় নগর পর্য্যন্তও তাঁহাদিগকে তাড়না করিতাম।” (প্রেরিত ২৩:১৬; ২৬:১১; রোমীয় ১৬:৭, ১১) এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, শৌল যখন এইরকম আচরণ করছিলেন, তখন শিষ্যরা তার সঙ্গে প্রকাশ্যে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল।

কেন শৌল এরকম করেছিলেন? কয়েক বছর পর, তিনি লিখেছিলেন: “না বুঝিয়া অবিশ্বাসের বশে সেই সকল কর্ম্ম করিতাম।” (১ তীমথিয় ১:১৩) তিনি একজন ফরীশী ছিলেন, যিনি “পৈতৃক ব্যবস্থার সূক্ষ্ম নিয়মানুসারে” শিক্ষিত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ২২:৩) যদিও শৌলের শিক্ষক গমলীয়েল স্পষ্টত কিছুটা উদারহৃদয়ের ছিলেন কিন্তু মহাযাজক কায়াফা, যার সঙ্গে শৌল মেলামেশা করতেন, তিনি অত্যন্ত গোঁড়া ব্যক্তি ছিলেন। কায়াফা ছিলেন সেই চক্রান্তের একজন প্রধান নেতা, যেটা যিশু খ্রিস্টকে মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছিল। (মথি ২৬:৩, ৪, ৬৩-৬৬; প্রেরিত ৫:৩৪-৩৯) পরে, কায়াফা নিশ্চিত করেছিলেন যে, যিশুর প্রেরিতদের যেন প্রহার করা হয় এবং তাদেরকে যিশুর নামে প্রচার বন্ধ করার জন্য তিনি কড়াভাবে আদেশ দিয়েছিলেন। কায়াফা সেই প্রচণ্ড আবেগপূর্ণ সময়ে মহাসভা পরিচালনা করছিলেন, যে-সময়ে স্তিফানকে পাথর মারার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। (প্রেরিত ৫:২৭, ২৮, ৪০; ৭:১-৬০) শৌল পাথর মারার বিষয়টা তদারক করছিলেন এবং কায়াফা তাকে দম্মেশকে যিশুর অনুসারীদের গ্রেপ্তার করে তাদের প্রচার কাজকে দমন করার জন্য আরও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে অনুমতি দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৭:৬০–৮:১;; ৯:১, ২) কায়াফার প্ররোচনায় শৌল মনে করেছিলেন যে, তার আচারআচরণ ঈশ্বরের প্রতি উদ্যোগের প্রমাণ দিচ্ছে কিন্তু আসলে তার প্রকৃত বিশ্বাসের অভাব ছিল। (প্রেরিত ২২:৩-৫) ফলে, শৌল এই বিষয়টা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে, যিশুই ছিলেন প্রকৃত মশীহ। কিন্তু, দম্মেশকের পথে পুনরুত্থিত যিশু যখন অলৌকিকভাবে তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন শৌল চেতনা ফিরে পেয়েছিলেন।—প্রেরিত ৯:৩-৬.

৭. দম্মেশকের পথে যিশুর সঙ্গে শৌলের সাক্ষাতের ফলে তার প্রতি কী ঘটেছিল?

এই ঘটনার অল্প সময় পরেই, শিষ্য অননিয়কে শৌলের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল। আপনি কি এই সাক্ষাতে যেতে চাইতেন? অননিয় শঙ্কিত ছিলেন কিন্তু তিনি শৌলের সঙ্গে সদয়ভাবে কথা বলেছিলেন। দম্মেশকের পথে যিশুর সঙ্গে অলৌলিকভাবে সাক্ষাতের ফলে শৌলের মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছিল। (প্রেরিত ৯:১০-২২) পরবর্তী সময়ে তিনি একজন উদ্যোগী খ্রিস্টান মিশনারি, প্রেরিত পৌল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।

মৃদুশীল অথচ সাহসী

৮. যে-লোকেরা মন্দ কাজ করত, তাদের প্রতি যিশু কীভাবে তাঁর পিতার মনোভাব প্রতিফলিত করেছিলেন?

যিশু এমন একজন উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারী ছিলেন, যিনি লোকেদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে মৃদুশীল অথচ সাহসী ছিলেন। (মথি ১১:২৯) তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতার মনোভাব প্রতিফলিত করেছিলেন, যিনি দুষ্ট ব্যক্তিদের তাদের পথ থেকে সরে আসার জন্য জোরালো পরামর্শ দেন। (যিশাইয় ৫৫:৬, ৭) পাপীদের সঙ্গে আচরণ করার সময় যিশু সেই ব্যক্তিদের লক্ষ করতেন, যাদের মধ্যে উন্নতি করার লক্ষণ প্রকাশ পেত আর তিনি এই ধরনের ব্যক্তিদের উৎসাহিত করতেন। (লূক ৭:৩৭-৫০; ১৯:২-১০) বাহ্যিক চেহারা দেখে অন্যদের বিচার করার পরিবর্তে, যিশু লোকেদের মনপরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাওয়ার আশায় তাঁর পিতার দয়া, ধৈর্য্য ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা অনুকরণ করতেন। (রোমীয় ২:৪) যিহোবার ইচ্ছা হল, সব ধরনের লোক যেন অনুতপ্ত হয় এবং পরিত্রাণ পায়।—১ তীমথিয় ২:৩, ৪.

৯. যিশাইয় ৪২:১-৪ পদ যিশুর ক্ষেত্রে যেভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করতে গিয়ে সুসমাচার লেখক মথি ভবিষ্যদ্বাণীমূলক এই কথাগুলো উদ্ধৃতি করেন: “দেখ, আমার দাস, তিনি আমার মনোনীত, আমার প্রিয়, আমার প্রাণ তাঁহাতে প্রীত, আমি তাঁহার উপরে আপন আত্মাকে স্থাপন করিব, আর তিনি জাতিগণের কাছে ন্যায়বিচার প্রচার করিবেন। তিনি কলহ করিবেন না, উচ্চশব্দও করিবেন না, পথে কেহ তাঁহার রব শুনিতে পাইবে না। তিনি থেৎলা নল ভাঙ্গিবেন না, সধূম শলিতা নির্ব্বাণ করিবেন না, যে পর্য্যন্ত না, ন্যায়বিচার জয়ীরূপে প্রচলিত করেন। আর তাঁহার নামে পরজাতিগণ প্রত্যাশা রাখিবে।” (মথি ১২:১৭-২১; যিশাইয় ৪২:১-৪) সেই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কথাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে যিশু কোলাহলপূর্ণ তর্কবিতর্কে জড়াতেন না। এমনকি চাপের মুখেও তিনি এমনভাবে লোকেদের সঙ্গে কথা বলতেন যে, তা সৎহৃদয়ের লোকেদের হৃদয় স্পর্শ করত।—যোহন ৭:৩২, ৪০, ৪৫, ৪৬.

১০, ১১. (ক) যদিও যিশুর ঘোর বিরোধীদের মধ্যে ফরীশীরা ছিল, তা হলে কেন তিনি তাদের কারো কারো কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন? (খ) মাঝে মাঝে যিশু তাঁর বিরোধীদের কেমন উত্তর দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি কী করেননি?

১০ পরিচর্যার সময়ে যিশু অনেক ফরীশীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। যদিও তাদের মধ্যে কেউ কেউ যিশুকে তাঁর কথার ফাঁদে আটকে ফেলার চেষ্টা করেছিল, তবুও তিনি এই উপসংহারে আসেননি যে, তাদের সকলের মনোভাবই খারাপ ছিল। শিমোন নামে একজন ফরীশী, যিনি কিছুটা সমালোচনাকারী ছিলেন, স্পষ্টতই যিশুকে আরও কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন বলে তাঁকে খাবারের জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যিশু সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন এবং উপস্থিত সকলের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। (লূক ৭:৩৬-৫০) আরেকবার, নীকদীম নামে একজন বিশিষ্ট ফরীশী রাতের অন্ধকারে যিশুর কাছে এসেছিলেন। রাতের বেলা এসেছিলেন বলে যিশু তাঁকে অনুযোগ করেননি। এর পরিবর্তে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করবে তাদের জন্য পরিত্রাণের পথ খুলে দিতে ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠানার দ্বারা যে-প্রেম দেখিয়েছেন, সেই বিষয়ে তিনি নীকদীমের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, যিশু সদয়ভাবে ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি বাধ্যতা দেখানোর গুরুত্ব সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। (যোহন ৩:১-২১) পরবর্তী সময়ে, যিশুর সম্বন্ধে ভাল তথ্য শুনে অন্য ফরীশীরা যখন সেটাকে তুচ্ছ করেছিল, তখন নীকদীম যিশুর পক্ষে কথা বলেছিলেন।—যোহন ৭:৪৬-৫১.

১১ যে-লোকেরা যিশুকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিল, তাদের কপটতা সম্বন্ধে যিশু অন্ধ ছিলেন না। বিরোধীদেরকে তিনি অর্থহীন তর্কবিতর্কে জড়ানোর সুযোগ দিতেন না। কিন্তু, যখন উপযুক্ত হতো তিনি কোনো একটা নীতি উল্লেখ করে, একটা দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে অথবা কোনো শাস্ত্রপদ উদ্ধৃতি করে সংক্ষিপ্ত অথচ জোরালো উত্তর দিতেন। (মথি ১২:৩৮-৪২; ১৫:১-৯; ১৬:১-৪) অন্যান্য সময়, যিশু কোনো উত্তরই দেননি, যখন বোঝা গিয়েছিল যে, তা দিয়ে ভাল কিছু সম্পন্ন হবে না।—মার্ক ১৫:২-৫; লূক ২২:৬৭-৭০.

১২. এমনকি যিশুকে দেখে যখন চিৎকার করা হয়েছিল, তখনও তিনি কীভাবে লোকেদের সাহায্য করতে পেরেছিলেন?

১২ মাঝে মাঝে, অশুচি আত্মার নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যক্তিরা যিশুকে দেখে চিৎকার করত। যখন এইরকম ঘটেছিল, তখন তিনি সহনশীলতা বজায় রেখেছিলেন এবং স্বস্তি নিয়ে আসার জন্য এমনকি তাঁর ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করেছিলেন। (মার্ক ১:২৩-২৮; মার্ক ৫:২-৮, ১৫) আমরা যখন পরিচর্যায় রত থাকি, তখন কেউ কেউ যদি রেগে গিয়ে আমাদের সঙ্গে চিৎকার করে, তখন আমাদেরও সহনশীলতা বজায় রাখতে হবে এবং এইরকম এক পরিস্থিতিকে আমাদের সদয়ভাবে এবং কৌশলে মোকাবিলা করা উচিত।—কলসীয় ৪:৬.

পরিবারের মধ্যে

১৩. কেন লোকেরা মাঝে মাঝে পরিবারের সেই সদস্যের বিরোধিতা করে থাকে, যিনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন?

১৩ যিশুর অনুসারীদের সহনশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা প্রায়ই পরিবারের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি দেখা যায়। যে-ব্যক্তির হৃদয়ে বাইবেলের সত্য গভীরভাবে স্পর্শ করে, তিনি আকুলভাবে চান যাতে তার পরিবারও একইভাবে সাড়া দেয়। কিন্তু যিশু যেমন বলেছিলেন যে, পরিবারের সদস্যরা শত্রুতা দেখাতে পারে। (মথি ১০:৩২-৩৭; যোহন ১৫:২০, ২১) এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদিও বাইবেলের শিক্ষা আমাদের সৎ, দায়িত্ববান হতে এবং অন্যদের প্রতি সম্মান দেখাতে সাহায্য করতে পারে কিন্তু শাস্ত্র এও শিক্ষা দেয় যে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি। (উপদেশক ১২:১, ১৩; প্রেরিত ৫:২৯) পরিবারের কোনো সদস্য যদি মনে করেন যে, যিহোবার প্রতি আমাদের আনুগত্যের কারণে পরিবারের মধ্যে তার প্রভাব কোনোভাবে কমে যাচ্ছে, তা হলে তিনি মনে কষ্ট পেতে পারেন। এইরকম পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার সময়, সহনশীলতা দেখানোর ব্যাপারে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করা আমাদের জন্য কতই না গুরুত্বপূর্ণ!—১ পিতর ২:২১-২৩; ৩:১, ২.

১৪-১৬. যারা আগে তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরোধিতা করত তাদের কারোর কারোর মধ্যে কোন বিষয়টা পরিবর্তন নিয়ে এসেছে?

১৪ আজকে যিহোবাকে সেবা করছে এমন অনেকে যখন বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করে বিভিন্ন পরিবর্তন করেছিল, তখন তাদের বিবাহসঙ্গী অথবা পরিবারের সদস্যরা বিরোধিতা করেছিল। বিরোধীরা হয়তো যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে নেতিবাচক মন্তব্য শুনেছিল এবং সম্ভবত তারা ভয় পেয়েছিল যে, তাদের পরিবারে হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব পড়বে। কী তাদেরকে তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছিল? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, উত্তম উদাহরণই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। বিশ্বাসী ব্যক্তির অটলভাবে বাইবেলের পরামর্শ প্রয়োগ করার—নিয়মিতভাবে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত হওয়া ও পরিচর্যায় অংশ নেওয়া এবং সেইসঙ্গে পারিবারিক দায়িত্বগুলো পালন করা ও যেকোনো কটুবাক্য সত্ত্বেও সহনশীল হওয়ার—কারণে পারিবারিক বিরোধিতা মাঝে মাঝে কিছুটা কমে গিয়েছিল।—১ পিতর ২:১২.

১৫ এ ছাড়া, একজন বিরোধী ব্যক্তি হয়তো ভুল ধারণা অথবা গর্বের কারণে বাইবেল থেকে কোনো ব্যাখ্যা শোনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই বিষয়টা সত্যি হয়েছিল, যিনি বলেছিলেন যে তিনি অত্যন্ত দেশপ্রেমিক ছিলেন। একবার তার স্ত্রী যখন সম্মেলনে ছিলেন, তখন তিনি তার নিজের সমস্ত কাপড়চোপড় নিয়ে ঘর থেকে চলে গিয়েছিলেন। আরেকবার, তিনি একটা বন্দুক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন এবং আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। তার যেকোনো অযৌক্তিক আচরণের জন্য তিনি তার স্ত্রীর ধর্মকে দোষারোপ করতেন। কিন্তু, তার স্ত্রী বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। তার স্ত্রী একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ার বিশ বছর পর, তিনিও একজন সাক্ষি হন। আলবানিয়াতে একজন মহিলা, তার মেয়ে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল বলে রেগে গিয়েছিলেন। সেই মা ১২ বার তার মেয়ের বাইবেল নষ্ট করে দিয়েছিলেন। একদিন তিনি একটা নতুন বাইবেল খোলেন, যা তার মেয়ে টেবিলে রেখে দিয়েছিল। ঘটনাক্রমে, মথি ১০:৩৬ পদ বের হয় এবং মা বুঝতে পারেন যে, সেখানে যা বলা আছে, তা তার প্রতি প্রযোজ্য। যা-ই হোক, মেয়ের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে মা তার মেয়েকে নৌকা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যান, যখন সে অন্যান্য সাক্ষিদের সঙ্গে ইতালিতে সম্মেলন করার জন্য যাচ্ছিল। মা যখন সেই দলের প্রেম, আলিঙ্গন এবং হাসিখুশি মনোভাব দেখেন এবং তাদের পরিতৃপ্তির হাসি শোনেন, তখন তার অনুভূতি পরিবর্তিত হতে শুরু করে। এরপর খুব শীঘ্রই তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন। আজকে তিনি সেই সমস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, যারা প্রথম প্রথম বিরোধিতা করে।

১৬ একবার, একজন স্বামী ছোরা হাতে একদিন তার স্ত্রীর মুখোমুখি হন এবং কর্কশভাবে তাকে অভিযোগ করতে থাকেন, যখন তার স্ত্রী কিংডম হলের কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। স্ত্রী কোমলভাবে উত্তর দিয়েছিলেন: “কিংডম হলের ভিতরে এসো এবং নিজের চোখে দেখো।” তিনি তা-ই করেছিলেন এবং পরে এক সময় তিনি একজন খ্রিস্টান প্রাচীন হয়ে ওঠেন।

১৭. কোনো খ্রিস্টীয় পরিবারে পরিস্থিতি এমনকি চাপপূর্ণ হলেও, কোন শাস্ত্রীয় পরামর্শ সাহায্য করতে পারে?

১৭ আপনার পরিবারের সকলে খ্রিস্টান হলেও এমন সময় আসতে পারে, যখন পারিবারিক পরিস্থিতি চাপপূর্ণ হয় এবং মানব অসিদ্ধতার জন্য এমনকি কথাবার্তাও কর্কশ হয়ে ওঠে। এটা উল্লেখযোগ্য যে, প্রাচীন ইফিষের খ্রিস্টানদের জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল: “সর্ব্বপ্রকার কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা এবং সর্ব্বপ্রকার হিংসেচ্ছা তোমাদের হইতে দূরীকৃত হউক।” (ইফিষীয় ৪:৩১) স্পষ্টতই, ইফিষের খ্রিস্টানদের চারপাশের পরিবেশ, তাদের নিজেদের অসিদ্ধতা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের পূর্বের জীবনধারা তাদেরকে প্রভাবিত করত। কী তাদেরকে পরিবর্তিত হতে সাহায্য করেছিল? তাদের “আপন আপন মনের ভাবে . . . ক্রমশঃ নবীনীকৃত” হওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল। (ইফিষীয় ৪:২৩) তারা যখন ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন, সেটি তাদের জীবনের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলা উচিত তা নিয়ে ধ্যান করেছিল, সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে মেলামেশা করেছিল এবং আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছিল, তখন ঈশ্বরের আত্মার ফল তাদের জীবনে আরও পূর্ণরূপে দেখা গিয়েছিল। তারা ‘পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণচিত্ত হইতে, পরস্পর ক্ষমা করিতে’ শিখেছিল “যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে [তাহাদিগকে] ক্ষমা করিয়াছেন।” (ইফিষীয় ৪:৩২) অন্যেরা যা-ই করুক না কেন, আমাদের সহনশীলতা বজায় রাখতে এবং মধুরস্বভাববিশিষ্ট বা সদয়, করুণচিত্ত এবং ক্ষমাশীল হতে হবে। বস্তুত, আমরা অবশ্যই “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ” করব না। (রোমীয় ১২:১৭, ১৮) ঈশ্বরকে অনুকরণ করে অকৃত্রিম প্রেম দেখানো হল সর্বদা সঠিক কাজ।—১ যোহন ৪:৮.

সমস্ত খ্রিস্টানের জন্য পরামর্শ

১৮. কেন ২ তীমথিয় ২:২৪, ২৫ পদের পরামর্শ প্রাচীনকালের ইফিষের একজন প্রাচীনের জন্য উপযুক্ত ছিল এবং কীভাবে তা সমস্ত খ্রিস্টানকে উপকৃত করতে পারে?

১৮ ‘সহনশীল হইবার’ পরামর্শ সমস্ত খ্রিস্টানের জন্য প্রযোজ্য। (২ তীমথিয় ২:২৪, ২৫) কিন্তু, এটা প্রথমে তীমথিয়কে বলা হয়েছিল, যার ইফিষ মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার সময় এই কথাগুলোর প্রয়োজন হয়েছিল। মণ্ডলীর কেউ কেউ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানানোর ক্ষেত্রে স্পষ্টবাদী ছিল এবং ভুল মতবাদগুলো শিক্ষা দিচ্ছিল। মোশির ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য পুরোপুরি বুঝতে না পারায় তারা বিশ্বাস, প্রেম এবং উত্তম বিবেকের গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল। তারা যখন তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল, তখন গর্ব শত্রুতার সৃষ্টি করেছিল আর এর ফলে তারা খ্রিস্টের শিক্ষাগুলোর এবং ঈশ্বরীয় ভক্তির গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য তীমথিয়কে শাস্ত্রীয় সত্যের ক্ষেত্রে দৃঢ় অথচ তার ভাইদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে কোমল হতে হয়েছিল। বর্তমান সময়ের প্রাচীনদের মতো তিনি জানতেন যে, পাল তার নিজের নয় এবং অন্যদের সঙ্গে তার এমনভাবে আচরণ করতে হবে যেন তা খ্রিস্টীয় প্রেম এবং একতাকে বৃদ্ধি করে।—ইফিষীয় ৪:১-৩; ১ তীমথিয় ১:৩-১১; ৫:১, ২; ৬:৩-৫.

১৯. আমাদের সকলের জন্য কেন “নম্রতার অনুশীলন” করা গুরুত্বপূর্ণ?

১৯ ঈশ্বর তাঁর লোকেদের “নম্রতার অনুশীলন” করতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (সফনিয় ২:৩) “নম্রতার” জন্য ব্যবহৃত ইব্রীয় অভিব্যক্তিটি সেই মনোভাবকে ইঙ্গিত করে, যা একজন ব্যক্তিকে কোনো বিরক্তি এবং পালটা দুর্ব্যবহার ছাড়াই ধৈর্য সহকারে আঘাত সহ্য করতে সমর্থ করে। এমনকি কঠিন পরিস্থিতিগুলোতেও আমরা যাতে সহনশীলতা বজায় রাখতে এবং যিহোবাকে উপযুক্তভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারি, সেই জন্য সাহায্য পেতে আমরা যেন আন্তরিকভাবে যিহোবার কাছে বিনতি করি।

আপনি কী শিখেছেন?

• আপনার সঙ্গে যখন অপমানজনক কথাবার্তা বলা হয়, তখন কোন শাস্ত্রপদগুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

• কেন শৌল অপমানজনকভাবে কাজ করেছিলেন?

• কীভাবে যিশুর উদাহরণ আমাদের সব ধরনের লোকের সঙ্গে উপযুক্তভাবে আচরণ করতে সাহায্য করে?

• বাড়িতে আমাদের কথাবার্তায় সহনশীলতা বজায় রাখার মাধ্যমে কোন উপকারগুলো আসতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

শৌলের কুখ্যাতি সত্ত্বেও অননিয় তার সঙ্গে সদয়ভাবে আচরণ করেছিলেন

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন খ্রিস্টানের বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্বগুলো পালন করা পারিবারিক বিরোধিতাকে কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রিস্টানরা প্রেম এবং একতা বৃদ্ধি করে