সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরিত্রাণ, কেবল কাজের দ্বারা নয় কিন্তু অযাচিত দয়ার দ্বারা

পরিত্রাণ, কেবল কাজের দ্বারা নয় কিন্তু অযাচিত দয়ার দ্বারা

পরিত্রাণ, কেবল কাজের দ্বারা নয় কিন্তু অযাচিত দয়ার দ্বারা

“বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; . . . তাহা কর্ম্মের ফল নয়, যেন কেহ শ্লাঘা না করে।”—ইফিষীয় ২:৮, ৯.

১. কীভাবে ব্যক্তিগত সাফল্যগুলোর ক্ষেত্রে খ্রিস্টানরা সাধারণ লোকেদের থেকে ভিন্ন এবং কেন?

 আজকে লোকেরা ব্যক্তিগত সাফল্যগুলোর জন্য অনেক গর্বিত হয়ে থাকে আর প্রায়ই তারা দ্রুত নিজেদের নিয়ে শ্লাঘা করে। খ্রিস্টানরা এক্ষেত্রে ভিন্ন। তারা নিজেদের সাফল্যকে জাহির করা থেকে বিরত থাকে, এমনকি তা যদি সত্য উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্তও হয়ে থাকে। যদিও দল হিসেবে যিহোবার লোকেরা যা সম্পাদন করে থাকে, তাতে তারা আনন্দিত হয় কিন্তু এক্ষেত্রে তারা তাদের নিজেদের অবদানকে জাহির করে না। তারা উপলব্ধি করে যে, যিহোবার সেবায় ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়ে সঠিক মনোভাব হল আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেষ পর্যন্ত যাকে অনন্তজীবনের দান দেওয়া হবে, তিনি তা ব্যক্তিগত সাফল্যগুলোর দ্বারা নয় কিন্তু বিশ্বাস এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ বা অযাচিত দয়ার দ্বারাই লাভ করবেন।—লূক ১৭:১০; যোহন ৩:১৬.

২, ৩. পৌল কী নিয়ে শ্লাঘা করেছিলেন এবং কেন?

প্রেরিত পৌল এই সম্বন্ধে খুব ভালভাবে অবগত ছিলেন। “মাংসে একটা কন্টক” থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তিন বার প্রার্থনা করার পর, তিনি যিহোবার কাছ থেকে উত্তর পেয়েছিলেন: “আমার অনুগ্রহ তোমার পক্ষে যথেষ্ট; কেননা আমার শক্তি দুর্ব্বলতায় সিদ্ধি পায়।” নম্রভাবে যিহোবার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে পৌল বলেছিলেন: “অতএব আমি বরং অতিশয় আনন্দের সহিত নানা দুর্ব্বলতায় শ্লাঘা করিব, যেন খ্রীষ্টের শক্তি আমার উপরে অবস্থিতি করে।” পৌলের নম্র মনোভাবকেই আমাদের অনুকরণ করতে চাওয়া উচিত।—২ করিন্থীয় ১২:৭-৯.

যদিও পৌল খ্রিস্টীয় কাজগুলো সম্পাদন করার কারণে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কিন্তু তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তার কৃতিত্বগুলো তার নিজের কোনো বিশেষ ক্ষমতার কারণে হয়নি। বিনয়ের সঙ্গে তিনি বলেছিলেন: “আমি সমস্ত পবিত্রগণের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম হইলেও আমাকে এই অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে, যাহাতে পরজাতিদের কাছে আমি খ্রীষ্টের সেই ধনের বিষয়ে সুসমাচার প্রচার করি, যে ধনের সন্ধান করিয়া উঠা যায় না।” (ইফিষীয় ৩:৮) এই কথাগুলোর মধ্যে শ্লাঘাপূর্ণ মনোভাব অথবা আত্মধার্মিকতাপূর্ণ অহংকার কোনোটাই নেই। “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।” (যাকোব ৪:৬; ১ পিতর ৫:৫) নিজেদেরকে আমাদের ভাইদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র বলে বিবেচনা করে আমরা কি পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করি?

“প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর”

৪. কেন মাঝে মাঝে অন্যদেরকে আমাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা আমাদের পক্ষে কঠিন হতে পারে?

প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “প্রতিযোগিতার কিম্বা অনর্থক দর্পের বশে কিছুই করিও না, বরং নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (ফিলিপীয় ২:৩) এটা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে যদি আমরা কোনো দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকি। সম্ভবত সমস্যা এইজন্যই উদ্ভব হয় কারণ আমরা কিছুটা হলেও প্রতিযোগিতার মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি, যে-মনোভাব আজকে জগতে ব্যাপকভাবে দেখা যায়। হতে পারে, ছেলেমেয়ে হিসেবে আমাদেরকে বাড়িতে নিজের ভাইবোনের সঙ্গে অথবা স্কুলে আমাদের সহপাঠীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আমাদের হয়তো স্কুলের প্রধান ক্রীড়াবিদ হতে অথবা সবচেয়ে ভাল ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে সুনাম অর্জন করার জন্য সবসময় জোরালোভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য, যেকোনো দায়িত্বের ক্ষেত্রে আমাদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু, খ্রিস্টানরা তা করে থাকে, নিজেদের প্রতি অযথা মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য নয় বরং সেই কাজ থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করার এবং সম্ভবত অন্যদেরও উপকৃত করার জন্য। যা-ই হোক, সবসময় প্রথমে থেকে প্রশংসিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা বিপদজনক হতে পারে। কীভাবে?

৫. দমন করা না হলে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব কীসের দিকে পরিচালিত করতে পারে?

দমন করা না হলে প্রতিযোগিতামূলক অথবা দর্প করার মনোভাব একজন ব্যক্তিকে অভদ্র এবং উদ্ধত করে তুলতে পারে। তিনি হয়তো অন্যদের ক্ষমতা এবং বিশেষ সুযোগগুলো দেখে ঈর্ষান্বিত হতে পারেন। হিতোপদেশ ২৮:২২ পদ বলে: “যার চক্ষু মন্দ [“ঈর্ষাপরায়ণ,” NW], সে ধনের চেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত; সে জানে না যে, দীনতা তাহাকে ধরিবে।” তিনি এমনকি ধৃষ্টতাপূর্ণভাবে সেই পদ লাভ করার চেষ্টা করতে পারেন, যা পাওয়ার অধিকার তার নেই। তার কাজকে সঠিক বলে প্রমাণ করার জন্য তিনি হয়তো অন্যদের বিরুদ্ধে বচসা করতে এবং অন্যদের দোষ ধরতে শুরু করতে পারেন—যে-মনোভাবগুলো খ্রিস্টানদের পরিহার করা উচিত। (যাকোব ৩:১৪-১৬) যেকোনোভাবেই হোক না কেন, তিনি আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব গড়ে তোলার ঝুঁকির মুখে ধাবিত হচ্ছেন।

৬. কীভাবে বাইবেল এক প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের বিরুদ্ধে সাবধান করে?

তাই, বাইবেল খ্রিস্টানদের জোরালো পরামর্শ দেয়: “অনর্থক দর্প না করি, পরস্পরকে জ্বালাতন [“পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা,” NW] না করি, পরস্পর হিংসাহিংসি না করি।” (গালাতীয় ৫:২৬) প্রেরিত যোহন এমন একজন সহখ্রিস্টানের কথা বলেছিলেন, যিনি স্পষ্টতই এই ধরনের মনোভাবের ফাঁদে পড়েছিলেন। “আমি মণ্ডলীকে কিছু লিখিয়াছিলাম,” যোহন বলেছিলেন, “কিন্তু তাহাদের প্রাধান্যপ্রিয় দিয়ত্রিফি আমাদিগকে গ্রাহ্য করে না। এই জন্য, যদি আমি আসি, তবে সে যে সকল কার্য্য করে, তাহা স্মরণ করাইব, কেননা সে দুর্ব্বাক্য দ্বারা আমাদের গ্লানি করে।” একজন খ্রিস্টানের জন্য এই ধরনের ফাঁদে পড়া কতই না দুঃখজনক পরিস্থিতি!—৩ যোহন ৯, ১০.

৭. আজকের প্রতিযোগিতামূলক কর্মক্ষেত্রে একজন খ্রিস্টান কোন বিষয় এড়িয়ে চলতে চাইবেন?

অবশ্য, এইরকম চিন্তা করা অবাস্তব যে, একজন খ্রিস্টান প্রতিযোগিতামূলক সমস্ত কাজই সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে পারেন। তার চাকরির সঙ্গে হয়তো অন্য ব্যক্তিদের অথবা একই পণ্য উৎপাদনকারী বা একই সেবা প্রদানকারী ব্যাবসার মধ্যে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা যুক্ত থাকতে পারে। কিন্তু, এমনকি এইরকম অবস্থাগুলোর মধ্যেও একজন খ্রিস্টান সম্মান, প্রেম এবং বিবেচনা দেখিয়ে তার ব্যাবসা চালিয়ে যেতে চাইবেন। তিনি অবৈধ অথবা অখ্রিস্টীয় অভ্যাসগুলো প্রত্যাখ্যান করবেন এবং এমন ব্যক্তি হওয়া এড়িয়ে চলবেন, যিনি মূলত প্রতিযোগিতাপূর্ণ, দুরন্ত ব্যবসায়িক মনোভাবের জন্য পরিচিত। তিনি এইরকম মনে করবেন না যে, এক নম্বর হওয়াই—যেকোনো বিষয়েই হোক না কেন—জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাগতিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যদি এইরকম মনোভাব দেখাতে হয়, তা হলে উপাসনার ক্ষেত্রে তা আরও কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ!

‘অন্যের সংগে নিজের তুলনা না করা’

৮, ৯. (ক) খ্রিস্টান প্রাচীনদের পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার কোনো কারণ নেই কেন? (খ) কেন ১ পিতর ৪:১০ পদ ঈশ্বরের সমস্ত দাসের জন্য প্রযোজ্য?

উপাসনার ক্ষেত্রে খ্রিস্টানদের যে-মনোভাব রাখা উচিত, তা এই অনুপ্রাণিত কথাগুলোর মধ্যে রয়েছে: “প্রত্যেকে নিজের কাজ পরীক্ষা করে দেখুক, তাহলে অন্যের সংগে নিজের তুলনা না করে তার নিজের কাজের জন্য সে গর্ববোধ করতে পারবে।” (গালাতীয় ৬:৪, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ) মণ্ডলীতে প্রাচীনরা একে অন্যের প্রতিযোগী নয়, এই বিষয়টা উপলব্ধি করে তারা এক দেহ হিসেবে সহযোগিতা করে এবং একসঙ্গে কাজ করে। মণ্ডলীর সার্বিক মঙ্গলের জন্য প্রত্যেকে যে-অবদান রাখতে পারে, তাতে তারা আনন্দিত হয়। এভাবে তারা ঐক্যনাশক প্রতিযোগিতা এড়িয়ে চলে এবং মণ্ডলীর বাকি সকলের জন্য একতার ক্ষেত্রে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করে।

বয়স, অভিজ্ঞতা অথবা সহজাত ক্ষমতাগুলোর কারণে কোনো কোনো প্রাচীন হয়তো অন্যদের চেয়ে বেশি দক্ষ হতে পারে অথবা তাদের হয়তো আরও বেশি অন্তর্দৃষ্টি থাকতে পারে। এই কারণে, যিহোবার সংগঠনে প্রাচীনদের ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব থাকে। তুলনা করার পরিবর্তে, তারা এই পরামর্শ মনে রাখে: “তোমরা যে যেমন অনুগ্রহদান পাইয়াছ, তদনুসারে ঈশ্বরের বহুবিধ অনুগ্রহ-ধনের উত্তম অধ্যক্ষের মত পরস্পর পরিচর্য্যা কর।” (১ পিতর ৪:১০) আসলে, এই শাস্ত্রপদটি যিহোবার সমস্ত দাসের বেলায় প্রযোজ্য কারণ কিছুটা হলেও সকলে সঠিক জ্ঞানরূপ দান লাভ করেছে এবং সকলে খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার বিশেষ সুযোগ উপভোগ করে থাকে।

১০. একমাত্র কোন উপায়ে আমাদের পবিত্র সেবা যিহোবার কাছে গ্রাহ্য হবে?

১০ আমাদের পবিত্র সেবা একমাত্র তখনই যিহোবাকে খুশি করে, যখন তা নিজেকে অন্যদের চেয়ে উচ্চীকৃত করার জন্য নয় বরং প্রেম এবং ভক্তি সহকারে প্রদান করা হয়। তাই, সত্য উপাসনাকে সমর্থন করার সঙ্গে যুক্ত আমাদের কাজ সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কেউই সঠিকভাবে অন্যদের মনোভাবের বিচার করতে পারে না কিন্তু যিহোবা “হৃদয় তৌল করেন।” (হিতোপদেশ ২৪:১২; ১ শমূয়েল ১৬:৭) তাই, মাঝে মাঝে নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘বিশ্বাসের কাজ সম্পাদন করার বিষয়ে আমার মনোভাব কেমন?’—গীতসংহিতা ২৪:৩, ৪; মথি ৫:৮.

আমাদের কাজ সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি

১১. পরিচর্যায় আমাদের কাজ সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো যুক্তিসংগতভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে?

১১ যিহোবার অনুমোদন লাভ করার জন্য মনোভাব যদি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়, তা হলে আমাদের বিশ্বাসের কাজ সম্বন্ধে আমাদের কতদূর পর্যন্ত চিন্তা করা উচিত? যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সঠিক মনোভাব নিয়ে আমাদের পরিচর্যা সম্পাদন করি, ততক্ষণ পর্যন্ত কি আমাদের হিসেব রাখার সত্যিই প্রয়োজন আছে যে, আমরা কী করি এবং কতটা করি? এগুলো হল যুক্তিসংগত প্রশ্ন, কারণ আমরা বিশ্বাসের কাজগুলোর আগে সংখ্যাকে রাখতে চাই না অথবা আমাদের খ্রিস্টীয় কাজ সম্বন্ধে উত্তম রিপোর্টকে আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় হতে দিতে চাই না।

১২, ১৩. (ক) কয়েকটা কারণ কী, যার জন্য আমরা আমাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যার রেকর্ড রাখি? (খ) আমরা যখন আমাদের প্রচার কাজের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেখি, তখন আমাদের আনন্দ করার কোন কোন কারণ রয়েছে?

১২ যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য সংগঠিত (ইংরেজি) বই কী বলে, তা লক্ষ করুন: “যিশু খ্রিস্টের প্রাথমিক অনুসারীরা প্রচার কাজে উন্নতির রিপোর্টের বিষয়ে আগ্রহী ছিল। (মার্ক ৬:৩০) বাইবেলের প্রেরিত বইটি আমাদের জানায় যে, পঞ্চাশত্তমীর দিনে শিষ্যদের ওপর যখন পবিত্র আত্মা বর্ষিত হয়েছিল, তখন সেখানে প্রায় ১২০ জন ব্যক্তি উপস্থিত ছিল। শীঘ্রই শিষ্যদের সংখ্যা বেড়ে ৩,০০০ এবং এরপর ৫,০০০ জন হয়েছিল। . . . (প্রেরিত ১:১৫; ২:৫-১১, ৪১, ৪৭; ৪:৪; ৬:৭) বৃদ্ধির এই সংবাদ শিষ্যদের কত উৎসাহই না দিয়েছিল!” একই কারণে, আজকে যিহোবার সাক্ষিরা যিশুর এই কথাগুলোর পরিপূর্ণতা অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী যা সম্পাদন করা হচ্ছে, তার রেকর্ড রাখার চেষ্টা করে: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (মথি ২৪:১৪) এই ধরনের রিপোর্ট পৃথিবীব্যাপী যা সম্পাদন করা হচ্ছে, সেটার এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। এগুলো দেখায় যে, প্রচার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোথায় সাহায্য দরকার ও কোন ধরনের সাহিত্যাদি দরকার এবং সেগুলো কতটা পরিমাণে প্রয়োজন।

১৩ তাই, আমাদের প্রচার কাজ সম্বন্ধে আমাদের রিপোর্ট দেওয়া, রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার দায়িত্ব আরও কার্যকারীভাবে সম্পাদন করতে আমাদের সমর্থ করে। এ ছাড়া, পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় আমাদের ভাইদের কাজের কথা শুনে আমরা কি উৎসাহিত হই না? পৃথিবীব্যাপী বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের সংবাদ আমাদের আনন্দে পূর্ণ করে, আরও বেশি কাজ করার দিকে পরিচালিত করে এবং আমাদেরকে যিহোবার আশীর্বাদের বিষয়ে আশ্বাস দেয়। আর এটা জানা কতই না পরিতৃপ্তিদায়ক যে, আমাদের ব্যক্তিগত রিপোর্ট বিশ্বব্যাপী রিপোর্টের সঙ্গে যুক্ত হয়! পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের তুলনায় আমাদের রিপোর্ট খুবই সামান্য কিন্তু তা যিহোবার অলক্ষিত থাকে না। (মার্ক ১২:৪২, ৪৩) মনে রাখবেন যে, আপনার রিপোর্ট ছাড়া পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

১৪. প্রচার এবং শিক্ষা দেওয়া ছাড়াও আমাদের যিহোবার উপাসনায় আর কী জড়িত?

১৪ অবশ্য, যিহোবার একজন উৎসর্গীকৃত দাস হিসেবে প্রত্যেক সাক্ষি তাদের দায়িত্ব পরিপূর্ণ করার জন্য যা করে থাকে, সেগুলোর বেশির ভাগ তার রিপোর্টে আসে না। উদাহরণস্বরূপ, রিপোর্টের মধ্যে ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিতি এবং অংশগ্রহণ করা, মণ্ডলীর দায়িত্বগুলো, প্রয়োজনে সহবিশ্বাসীদের সহযোগিতা করা, পৃথিবীব্যাপী শিক্ষাদানের কাজে আর্থিক সাহায্য এবং আরও অন্যান্য কাজের বিষয় থাকে না। তাই, যদিও আমাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যার রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের প্রচারে উদ্যোগ বজায় রাখতে এবং ঝিমিয়ে পড়া এড়াতে সাহায্য করে কিন্তু এটাকে আমাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। এটাকে আধ্যাত্মিক অনুমতিপত্র অথবা পাসপোর্ট হিসেবে দেখা উচিত নয়, যা অনন্তজীবনের জন্য আমাদের যোগ্যতাকে নির্ধারণ করে।

“সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী”

১৫. যদিও কেবল কাজ আমাদের পরিত্রাণ দিতে পারে না কিন্তু কেন তা অপরিহার্য?

১৫ স্পষ্টতই, যদিও কেবল কাজ আমাদের পরিত্রাণ দিতে পারে না কিন্তু তা অপরিহার্য। তাই, খ্রিস্টানদের ‘আপনার নিমিত্ত নিজস্ব প্রজাবর্গ, সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী প্রজাবর্গ’ বলা হয় আর তাদেরকে “প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে” উৎসাহিত করা হয়। (তীত ২:১৪; ইব্রীয় ১০:২৪) আরও জোর দিয়ে আরেকজন বাইবেল লেখক যাকোব, সহজভাবে বলেছিলেন: “বাস্তবিক যেমন আত্মাবিহীন দেহ মৃত, তেমনি কর্ম্মবিহীন বিশ্বাসও মৃত।”—যাকোব ২:২৬.

১৬. কাজের চেয়ে কী আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কীসের বিষয়ে আমাদের সাবধান থাকতে হবে?

১৬ যদিও সৎক্রিয়া বা ভাল কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে কিন্তু সেগুলো করার পিছনে মনোভাব হল আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই, মাঝে মাঝে আমাদের মনোভাব পরীক্ষা করা বিজ্ঞতার কাজ। যেহেতু কোনো মানুষই অন্যদের মনোভাব সম্বন্ধে সঠিকভাবে জানে না, তাই আমাদের অন্যদের বিচার করার বিষয়ে সাবধান হতে হবে। “তুমি কে, যে অপরের ভৃত্যের বিচার কর?” আমাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছে ও সেইসঙ্গে এই স্পষ্ট উত্তর দেওয়া হয়েছে: “নিজ প্রভুরই নিকটে হয় সে স্থির থাকে, নয় পতিত হয়।” (রোমীয় ১৪:৪) সকলের প্রভু যিহোবা এবং তাঁর নিযুক্ত বিচারক খ্রিস্ট যিশু আমাদের বিচার করবেন, তবে তা কেবল আমাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের বিভিন্ন মনোভাব, আমাদের সুযোগ, আমাদের প্রেম এবং আমাদের ভক্তির ওপর ভিত্তি করে। কেবল যিহোবা এবং খ্রিস্ট যিশু সঠিকভাবে বিচার করতে পারেন যে, প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোর মাধ্যমে খ্রিস্টানদের যা করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে, তা আমরা করছি কি না: “তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর; এমন কার্য্যকারী হও, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে।”—২ তীমথিয় ২:১৫; ২ পিতর ১:১০; ৩:১৪.

১৭. আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করার সময় কেন আমাদের যাকোব ৩:১৭ পদের কথাগুলো মনে রাখা উচিত?

১৭ যিহোবা আমাদের কাছে যা আশা করেন, সেই বিষয়ে তিনি যুক্তিযুক্ত। যাকোব ৩:১৭ পদ অনুযায়ী “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত [“যুক্তিযুক্ত,” NW] সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ, ভেদাভেদবিহীন ও নিষ্কপট।” এই ক্ষেত্রে যিহোবাকে অনুকরণ করা কি আমাদের জন্য জ্ঞান বা প্রজ্ঞার কাজ ও সেইসঙ্গে এক প্রকৃত সাফল্য নয়? তাই, নিজেদের ও আমাদের ভাইবোনদের জন্য আমাদের অযৌক্তিক এবং অবাস্তব প্রত্যাশাগুলো স্থাপন করা উচিত নয়।

১৮. আমাদের কাজ এবং যিহোবার অযাচিত দয়ার প্রতি যখন আমাদের ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তখন আমরা কীসের জন্য সানন্দে প্রতীক্ষা করতে পারি?

১৮ আমাদের বিশ্বাসের কাজ এবং যিহোবার অযাচিত দয়ার প্রতি যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সেই আনন্দ বজায় রাখতে পারব, যা যিহোবার সত্য দাসদের এক স্বতন্ত্র চিহ্ন। (যিশাইয় ৬৫:১৩, ১৪) যিহোবা তাঁর লোকেদের একটা দল হিসেবে যে-আশীর্বাদ বর্ষণ করছেন, তাতে আমরা আনন্দ করতে পারি, তা ব্যক্তিগতভাবে আমরা যতটুকুই করতে সমর্থ হই না কেন। ক্রমাগত “প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে” আমরা আমাদের যথাসাধ্য করার জন্য ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চাইব। তা হলে, নিঃসন্দেহে “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা [আমাদের] হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলিপীয় ৪:৪-৭) হ্যাঁ, আমরা এটা জেনে সান্ত্বনা ও উৎসাহ লাভ করতে পারি যে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি, তবে শুধুমাত্র কাজ দ্বারা নয় কিন্তু যিহোবার অযাচিত দয়ার দ্বারা!

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন যে কেন খ্রিস্টানরা

• ব্যক্তিগত সাফল্যের বিষয়ে শ্লাঘা করা থেকে বিরত থাকে?

• প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব এড়িয়ে চলে?

• ক্ষেত্রের পরিচর্যায় তাদের খ্রিস্টীয় কাজের রিপোর্ট দেয়?

• সহখ্রিস্টানদের বিচার করা এড়িয়ে চলে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

“আমার অনুগ্রহ তোমার পক্ষে যথেষ্ট”

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

মণ্ডলীর মঙ্গলের ক্ষেত্রে প্রত্যেকে যে-অবদান রাখতে পারে, তাতে প্রাচীনরা আনন্দ করে

[১৮, ১৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনার রিপোর্ট ছাড়া, পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট অসম্পূর্ণ থেকে যাবে