সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা সেই ব্যক্তিদের রক্ষা করেন, যারা তাঁর ওপর আশা রাখে

যিহোবা সেই ব্যক্তিদের রক্ষা করেন, যারা তাঁর ওপর আশা রাখে

যিহোবা সেই ব্যক্তিদের রক্ষা করেন, যারা তাঁর ওপর আশা রাখে

“তব দয়া ও তব সত্য সতত আমাকে রক্ষা করুক।”—গীতসংহিতা ৪০:১১.

১. রাজা দায়ূদ যিহোবার কাছে কী অনুরোধ করেছিলেন এবং কীভাবে সেই অনুরোধ এখন গ্রাহ্য করা হয়েছে?

 প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ “ধৈর্য্যসহ সদাপ্রভুর অপেক্ষা” করেছিলেন বা তাঁর ওপর আশা রেখেছিলেন এবং এই কথা বলতে পরিচালিত হয়েছিলেন যে, যিহোবা “[তাহার] প্রতি মনোযোগ করিয়া [তাহার] আর্ত্তনাদ শুনিলেন।” (গীতসংহিতা ৪০:১) তিনি নিজে বার বার দেখেছিলেন যে, যারা যিহোবাকে ভালবাসে, তাদেরকে তিনি কীভাবে রক্ষা করেন। তাই, দায়ূদ সতত যিহোবার দ্বারা রক্ষা পাওয়ার বিষয়ে অনুরোধ করতে পেরেছিলেন। (গীতসংহিতা ৪০:১১) যে-বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদের কাছে “শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থানের” বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল, তাদের কথা বিবেচনা করলে দায়ূদ এখন যিহোবার স্মৃতিতে এমন এক ব্যক্তি হিসেবে সুরক্ষিত রয়েছেন, যিনি সেই পুরস্কার পাবেন। (ইব্রীয় ১১:৩২-৩৫) এভাবে তার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সম্ভাব্য সর্বোত্তম উপায়ে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তার নাম যিহোবার ‘স্মরণার্থক পুস্তকে’ লেখা রয়েছে।—মালাখি ৩:১৬.

২. কীভাবে শাস্ত্র আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, যিহোবার দ্বারা রক্ষিত হওয়ার অর্থ কী?

যদিও ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ে উল্লেখিত বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা যিশু খ্রিস্ট পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আরও আগে বেঁচে ছিল, তবুও তারা এই কথাগুলোর মাধ্যমে যিশু যা শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেটার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করেছিল: “যে আপন প্রাণ ভালবাসে, সে তাহা হারায়; আর যে এই জগতে আপন প্রাণ অপ্রিয় জ্ঞান করে, সে অনন্ত জীবনের নিমিত্ত তাহা রক্ষা করিবে।” (যোহন ১২:২৫) তাই, স্পষ্টতই যিহোবার দ্বারা রক্ষিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, দুঃখকষ্ট অথবা তাড়না থেকে রেহাই পাওয়া। বরং এর অর্থ হল, একজন ব্যক্তি আধ্যাত্মিকভাবে রক্ষিত হন, যাতে তিনি ঈশ্বরের সামনে এক উত্তম অবস্থান বজায় রাখতে সমর্থ হন।

৩. আমাদের কাছে কোন প্রমাণ রয়েছে যে, খ্রিস্ট যিশু যিহোবার দ্বারা রক্ষিত হয়েছিলেন আর এর ফল কী হয়েছিল?

স্বয়ং যিশু নিষ্ঠুর তাড়না এবং নিন্দার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন আর তাঁর শত্রুরা শেষ পর্যন্ত তাঁকে সবচেয়ে অপমানজনক এবং যাতনাময় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে সফল হয়েছিল। কিন্তু, মশীহকে রক্ষা করার বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার সঙ্গে এটা কোনোরকম সংঘাত ঘটায়নি। (যিশাইয় ৪২:১-৬) অসম্মানজনক মৃত্যুর পর তৃতীয় দিনে যিশুর পুনরুত্থান প্রমাণ করেছিল যে, যিহোবা সাহায্যের জন্য তাঁর আর্তনাদ শুনেছিলেন—ঠিক যেমন যিহোবা দায়ূদের আর্তনাদও শুনেছিলেন। আর এর উত্তরে যিহোবা যিশুকে নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য শক্তি দিয়েছিলেন। (মথি ২৬:৩৯) এভাবে, রক্ষিত হয়ে যিশু স্বর্গে অমরত্ব লাভ করেছিলেন এবং যে-লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি তাঁর মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস রেখে কাজ করেছে, তাদেরও অনন্তজীবনের প্রত্যাশা রয়েছে।

৪. অভিষিক্ত খ্রিস্টান এবং ‘আরও মেষকে’ কোন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে?

আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা এখন তাঁর দাসদের রক্ষা করতে ঠিক ততটাই ইচ্ছুক ও সমর্থ, যতটা তিনি দায়ূদ এবং যিশুর দিনে ছিলেন। (যাকোব ১:১৭) যিশুর অভিষিক্ত ভাইদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে অল্পসংখ্যক, যারা এখনও পৃথিবীতে রয়েছে, তারা যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার ওপর নির্ভর করতে পারে: “অক্ষয় ও বিমল ও অজর দায়াধিকার . . . স্বর্গে তোমাদের নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে; এবং ঈশ্বরের শক্তিতে তোমরাও পরিত্রাণের নিমিত্ত বিশ্বাস দ্বারা রক্ষিত হইতেছ, যে পরিত্রাণ শেষকালে প্রকাশিত হইবার জন্য প্রস্তুত আছে।” (১ পিতর ১:৪, ৫) “আরও মেষ,” যাদের পার্থিব আশা রয়েছে, তারাও একইভাবে ঈশ্বরের ওপর এবং গীতরচকের মাধ্যমে দেওয়া তাঁর এই প্রতিজ্ঞার ওপর নির্ভর করতে পারে: “হে সদাপ্রভুর সমস্ত সাধু, তোমরা তাঁহাকে প্রেম কর; সদাপ্রভু বিশ্বস্তদিগকে রক্ষা করেন।”—যোহন ১০:১৬; গীতসংহিতা ৩১:২৩.

আধ্যাত্মিকভাবে রক্ষিত

৫, ৬. (ক) আধুনিক সময়ে ঈশ্বরের লোকেদের কীভাবে সাহায্য করা হয়েছে? (খ) যিহোবার সঙ্গে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের কোন সম্পর্ক রয়েছে আর যাদের পার্থিব আশা রয়েছে, তাদের সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়?

আধুনিক সময়ে, যিহোবা তাঁর লোকেদের এক আধ্যাত্মিক উপায়ে রক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। যদিও তিনি তাদেরকে তাড়না অথবা জীবনের স্বাভাবিক সমস্যা এবং দুঃখজনক ঘটনাগুলো থেকে রক্ষা করেন না কিন্তু তিনি অনুগতভাবে তাদেরকে সেই সাহায্য এবং প্রেরণা দিয়েছেন, যা তাঁর সঙ্গে তাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন। যে-ভিত্তির ওপর তারা এই সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, সেটা হল ঈশ্বরের প্রেমময় মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থার ওপর তাদের বিশ্বাস। এই বিশ্বস্ত খ্রিস্টানদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে স্বর্গে খ্রিস্টের সহশাসক হওয়ার জন্য ঈশ্বরের আত্মার মাধ্যমে অভিষিক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র হিসেবে ধার্মিক বলে ঘোষণা করা হয়েছে আর তাদের প্রতি এই কথাগুলো প্রযোজ্য: “তিনিই আমাদিগকে অন্ধকারের কর্ত্তৃত্ব হইতে উদ্ধার করিয়া আপন প্রেমভূমি পুত্ত্রের রাজ্যে আনয়ন করিয়াছেন; ইহাঁতেই আমরা [“মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে,” NW] মুক্তি, পাপের মোচন, প্রাপ্ত হইয়াছি।”—কলসীয় ১:১৩, ১৪.

অন্যান্য লক্ষ লক্ষ বিশ্বস্ত খ্রিস্টানকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, তারাও ঈশ্বরের মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হতে পারে। আমরা পড়ি: “মনুষ্যপুত্ত্রও পরিচর্য্যা পাইতে আসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন।” (মার্ক ১০:৪৫) এই খ্রিস্টানরা যথাসময়ে “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” লাভ করার প্রতীক্ষা করে আছে। (রোমীয় ৮:২১) ইতিমধ্যে, তারা ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে মূল্যবান বলে গণ্য করে এবং সেই সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা করে।

৭. কীসের মাধ্যমে আজকে যিহোবা তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলকে রক্ষা করেন?

যে-একটা উপায়ে যিহোবা যেভাবে তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলকে রক্ষা করেন সেটা হল, ক্রমবর্ধমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ব্যবস্থা করে। এটা তাদেরকে সত্য সম্বন্ধে আরও সঠিক জ্ঞান লাভ করার সুযোগ করে দেয়। এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর বাক্য, তাঁর সংগঠন এবং তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে ক্রমাগত নির্দেশনা জোগান। ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ পরিচালনায়, ঈশ্বরের লোকেরা সারা পৃথিবীতে এক আন্তর্জাতিক পরিবারের মতো। দাস শ্রেণী যিহোবার দাসদের পরিবারগুলোর আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলোর এবং প্রয়োজনে এমনকি দৈহিক চাহিদাগুলোরও যত্ন নেয়—তা তাদের জাতীয়তা অথবা সামাজিক পদমর্যাদা যা-ই হোক না কেন।—মথি ২৪:৪৫.

৮. যিহোবা তাঁর অনুগত ব্যক্তিদের প্রতি কোন আস্থা রাখেন আর তা তাদের কোন আশ্বাস দেয়?

যিহোবা যেমন যিশুকে তাঁর শত্রুদের প্রচণ্ড আক্রমণ থেকে দৈহিকভাবে রক্ষা করেননি, তেমনই আজকেও তিনি খ্রিস্টানদের সেভাবে রক্ষা করেন না। কিন্তু, তাই বলে এটা ঈশ্বরের অসন্তোষের ইঙ্গিত নয়। আর তা হতেই পারে না! বরং এটা তাঁর এই আস্থাকে জোরালো করে যে, তারা নিখিলবিশ্বের মহান বিচার্য বিষয়ে তাঁর পক্ষ সমর্থন করবে। (ইয়োব ১:৮-১২; হিতোপদেশ ২৭:১১) যিহোবা কখনো সাধু বা তাঁর প্রতি অনুগত ব্যক্তিদের পরিত্যাগ করবেন না, “কেননা সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন; তিনি আপন সাধুগণকে পরিত্যাগ করেন না; তাহারা চিরকাল রক্ষিত হয়।”—গীতসংহিতা ৩৭:২৮.

প্রেমপূর্ণ-দয়া এবং সত্যের দ্বারা রক্ষিত

৯, ১০. (ক) যিহোবার সত্য কীভাবে তাঁর লোকেদের রক্ষা করে? (খ) কীভাবে বাইবেল দেখায় যে, যিহোবা তাঁর অনুগত লোকেদের তাঁর প্রেমপূর্ণ-দয়ার মাধ্যমে রক্ষা করেন?

দায়ূদ ৪০ গীতে লিপিবদ্ধ তার প্রার্থনায় যিহোবার দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়া এবং সত্যের দ্বারা রক্ষিত হওয়ার বিষয়ে অনুরোধ করেছিলেন। যিহোবার সত্যতা এবং ধার্মিকতার প্রতি তাঁর ভালবাসার কারণে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তাঁর মানগুলো কী। যারা এই মানগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করে, তারা হতাশা, ভয় এবং বিভিন্ন সমস্যা থেকে অনেকখানি রক্ষিত হয়, যেগুলো সেই লোকেরা ভোগ করে যারা মানগুলোকে অবহেলা করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা নিজেদের ও সেইসঙ্গে আমাদের প্রিয়জনদের অনেক হৃদয়বিদারক সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারি যদি আমরা নেশাকর ওষুধ এবং মদ্যজাতীয় পানীয়ের অপব্যবহার, বাছবিচারহীনভাবে যৌনসম্পর্ক করা এবং দৌরাত্ম্যপূর্ণ জীবনযাপন এড়িয়ে চলি। আর এমনকি যারা যিহোবার সত্যের পথ থেকে বিপথগামী হয়—যেমন একসময় দায়ূদ হয়েছিলেন—তাদের এই নিশ্চয়তা রয়েছে যে, ঈশ্বর এখনও অনুতপ্ত অন্যায়কারীদের জন্য “অন্তরাল।” এই ধরনের ব্যক্তিরা উল্লাসে বলে ওঠে: “তুমি সঙ্কট হইতে আমাকে উদ্ধার করিবে।” (গীতসংহিতা ৩২:৭) ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ-দয়ার কী এক অভিব্যক্তি!

১০ ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ-দয়ার আরেকটা উদাহরণ হল, ঈশ্বর তার দাসদের দুষ্ট জগৎ থেকে পৃথক থাকতে সতর্ক করেন, যেটাকে তিনি শীঘ্রই ধ্বংস করে দেবেন। আমরা পড়ি: “তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই। কেননা জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে।” এই সতর্কবাণীতে মনোযোগ দিয়ে এবং সেই অনুসারে কাজ করে আমরা আক্ষরিকভাবে আমাদের জীবনকে চিরকালের জন্য রক্ষা করতে পারি, কারণ এই পদ আরও বলে: “আর জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৫-১৭.

চিন্তা করার ক্ষমতা, বিচক্ষণতা এবং প্রজ্ঞার দ্বারা রক্ষিত

১১, ১২. চিন্তা করার ক্ষমতা, বিচক্ষণতা এবং প্রজ্ঞা কীভাবে আমাদের রক্ষা করে, তা ব্যাখ্যা করুন।

১১ যারা ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার আশা করে, তাদেরকে দায়ূদের পুত্র শলোমন লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “পরিণামদর্শিতা তোমার প্রহরী হইবে, বুদ্ধি তোমাকে রক্ষা করিবে।” তিনি আরও পরামর্শ দিয়েছিলেন: “প্রজ্ঞা উপার্জ্জন কর, . . . প্রজ্ঞাকে ছাড়িও না, সে তোমাকে রক্ষা করিবে; তাহাকে প্রেম কর, সে তোমাকে সংরক্ষণ করিবে।”—হিতোপদেশ ২:১১; ৪:৫, ৬.

১২ আমরা পরিণামদর্শিতা বা চিন্তা করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করি, যদি আমরা ঈশ্বরের বাক্য থেকে যা শিখি তা নিয়ে ধ্যান করি। আর তা করা আমাদের আরও বেশি বুদ্ধি বা বিচক্ষণতা লাভ করতে সাহায্য করে, যাতে আমরা সঠিক বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে পারি। এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু আমাদের মধ্যে অধিকাংশই—সম্ভবত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে—জানি যে, সমস্যাগুলো সেই সময়ে দেখা যায়, যখন লোকেরা হয় জেনেশুনে অথবা অজান্তে মূর্খতাপূর্ণ অগ্রাধিকারগুলো স্থাপন করে থাকে। শয়তানের জগৎ লক্ষ্য হিসেবে আমাদের সামনে বস্তুগত সম্পদ, বিশিষ্ট হওয়া এবং ক্ষমতাকে রাখে কিন্তু যিহোবা আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্থাৎ আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের ওপর জোর দেন। পরের বিষয়গুলোকে আগের বিষয়গুলোর চেয়ে অগ্রাধিকার দিতে ব্যর্থ হওয়া পরিবারে ভাঙন সৃষ্টি করতে, বন্ধুত্বকে নষ্ট করতে এবং আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোকে ম্লান করে দিতে পারে। এর ফলে, একজন ব্যক্তি কেবল দুঃখজনক বাস্তবতা লাভ করতে পারে, যা যিশুর এই কথাগুলো থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়: “বস্তুতঃ মনুষ্য যদি সমুদয় জগৎ লাভ করিয়া আপন প্রাণ খোয়ায়, তবে তাহার কি লাভ হইবে?” (মার্ক ৮:৩৬) প্রজ্ঞা আমাদেরকে যিশুর এই পরামর্শে মনোযোগ দিতে নির্দেশ দেয়: “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।”—মথি ৬:৩৩.

আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার বিপদ

১৩, ১৪. আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার অর্থ কী এবং তা হওয়া কেন মূর্খতার কাজ?

১৩ মানুষের স্বভাবই হল নিজেদের প্রতি আগ্রহী হওয়া। কিন্তু, যখন ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা এবং আগ্রহগুলো আমাদের জীবনে প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে, তখন সমস্যা দেখা দেয়। তাই, তাঁর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে রক্ষা করার জন্য যিহোবা আমাদের আত্মকেন্দ্রিক হওয়া এড়াতে নির্দেশ দেন। এই শব্দের অর্থ হল, “কেবল নিজেরই লাভ বা মঙ্গল যাহার একমাত্র লক্ষ্য।” এটা কি আজকের অনেক লোকেদের সম্বন্ধে সঠিকভাবে বর্ণনা করে না? লক্ষণীয়ভাবে, বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ‘শেষ কালে মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয় হইবে।’—২ তীমথিয় ৩:১-৪.

১৪ অন্যদের প্রতি আগ্রহ দেখানো, তাদেরকে নিজের মতো করে প্রেম করার বিষয়ে বাইবেলের আদেশ পালন করার প্রজ্ঞাকে খ্রিস্টানরা উপলব্ধি করে। (লূক ১০:২৭; ফিলিপীয় ২:৪) বেশির ভাগ লোক হয়তো এটাকে অবাস্তব বলে মনে করতে পারে কিন্তু যদি আমরা সফল বিবাহ, সুখী পারিবারিক জীবন এবং পরিতৃপ্তিদায়ক বন্ধুত্ব উপভোগ করতে চাই, তা হলে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই, যিহোবার একজন প্রকৃত দাস কখনো আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে নিজের স্বাভাবিক আগ্রহের দ্বারা তার জীবনকে নিয়ন্ত্রিত হতে দেবেন না। সবচেয়ে প্রথমে এর অর্থ হল, যিহোবার অর্থাৎ যে-ঈশ্বরের উপাসনা তিনি করেন, তাঁর আগ্রহগুলো।

১৫, ১৬. (ক) আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব কীসের দিকে পরিচালিত করতে পারে আর তা কাদের উদাহরণের সাহায্যে স্পষ্ট করা হয়েছে? (খ) প্রকৃতপক্ষে, একজন ব্যক্তি যখন অন্যদের বিচার করার ক্ষেত্রে সত্বর হন, তখন তিনি আসলে কী করেন?

১৫ আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব একজন ব্যক্তিকে আত্মধার্মিক হওয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে, যার ফলে একজন ব্যক্তি সংকীর্ণমনা এবং দুঃসাহসী হয়ে উঠতে পারে। বাইবেল উপযুক্তভাবেই বলে: “হে মনুষ্য তুমি যে বিচার করিতেছ, তুমি যে কেহ হও, তোমার উত্তর দিবার পথ নাই; কারণ যে বিষয়ে তুমি পরের বিচার করিয়া থাক, সেই বিষয়ে আপনাকেই দোষী করিয়া থাক; কেননা তুমি যে বিচার করিতেছ, তুমি সেই মত আচরণ করিয়া থাক।” (রোমীয় ২:১; ১৪:৪, ১০) যিশুর দিনের ধর্মীয় নেতারা তাদের নিজেদের ধার্মিকতা সম্বন্ধে এতটাই প্রত্যয়ী ছিল যে, তারা নিজেদেরকে যিশু এবং তাঁর অনুসারীদের সমালোচনা করার যোগ্য বলে মনে করেছিল। তা করার মাধ্যমে তারা নিজেদের বিচারকের আসনে বসিয়েছিল। নিজেদের দোষত্রুটির ক্ষেত্রে অন্ধ হয়ে, তারা আসলে নিজেদের ওপরই নিন্দা নিয়ে এসেছিল।

১৬ যিশুর একজন অনুসারী যিহূদা, যিনি তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, তিনি নিজেকে এমন এক ব্যক্তি করে তুলেছিলেন, যিনি অন্যদের বিচার করতেন। একবার বৈথনিয়াতে লাসারের বোন মরিয়ম যখন যিশুকে সুগন্ধি তেল দিয়ে অভিষিক্ত করেছিলেন, তখন যিহূদা দৃঢ়ভাবে সেটার প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি এই বলে যুক্তি দেখিয়ে তার বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন: “এই আতর তিন শত সিকিতে বিক্রয় করিয়া কেন দরিদ্রদিগকে দেওয়া গেল না?” কিন্তু, বাইবেলের বিবরণ ব্যাখ্যা করে চলে: “সে যে দরিদ্র লোকদের জন্য চিন্তা করিত বলিয়া এই কথা কহিল, তাহা নয়; কিন্তু কারণ এই, সে চোর, আর তাহার নিকটে টাকার থলী থাকাতে তাহার মধ্যে যাহা রাখা যাইতে, তাহা হরণ করিত।” (যোহন ১২:১-৬) আসুন, আমরা যেন কখনো যিহূদা অথবা ধর্মীয় নেতাদের মতো না হই, যারা অন্যদের বিচার করার ক্ষেত্রে সত্বর ছিল আর এর দ্বারা আসলে নিজেরাই দোষী হয়েছিল।

১৭. আত্মগরিমা করার অথবা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার ফলে যে-বিপদ আসতে পারে, তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১৭ দুঃখজনক যে, কিছু প্রাথমিক খ্রিস্টান যদিও যিহূদার মতো চোর ছিল না কিন্তু দর্প বা আত্মগরিমা করে গর্বের শিকার হয়েছিল। তাদের সম্বন্ধে যাকোব লিখেছিলেন: “এখন তোমরা আপন আপন দর্পে শ্লাঘা করিতেছ।” এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “এই প্রকারের সমস্ত শ্লাঘা মন্দ।” (যাকোব ৪:১৬) আমরা যা সম্পাদন করেছি তা নিয়ে অথবা যিহোবার সেবায় আমাদের বিশেষ সুযোগগুলো নিয়ে দুঃসাহস দেখানো বা দম্ভ করা মানে নিজেই নিজের পরাজয় ডেকে আনা। (হিতোপদেশ ১৪:১৬) প্রেরিত পিতরের বেলায় যা ঘটেছিল, তা আমরা স্মরণ করি, যিনি ক্ষণিকের জন্য অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে গর্ব করে বলেছিলেন: “যদি সকলে আপনাতে বিঘ্ন পায়, আমি কখনও বিঘ্ন পাইব না। . . . যদি আপনার সহিত মরিতেও হয়, কোন মতে আপনাকে অস্বীকার করিব না।” বস্তুতপক্ষে, নিজেকে নিয়ে গর্ব করার কোনো কারণই আমাদের নেই। আমরা যা কিছুই উপভোগ করি না কেন, তা একমাত্র যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়ার কারণে। এটা মনে রাখা আমাদের আত্মগরিমা করা থেকে রক্ষা করবে।—মথি ২৬:৩৩-৩৫, ৬৯-৭৫.

১৮. গর্ব সম্বন্ধে যিহোবা কেমন বোধ করেন?

১৮ আমাদেরকে বলা হয়েছে, “বিনাশের পূর্ব্বে অহঙ্কার, পতনের পূর্ব্বে মনের গর্ব্ব।” কেন? যিহোবা উত্তর দেন: “অহঙ্কার, দাম্ভিকতা . . . আমি ঘৃণা করি।” (হিতোপদেশ ৮:১৩; ১৬:১৮) এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যিহোবা “অশূর-রাজের চিত্তস্ফীতিরূপ ফলের” কারণে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন “ও তাহার উচ্চদৃষ্টিরূপ আড়ম্বরের প্রতিফল” দিয়েছিলেন। (যিশাইয় ১০:১২) যিহোবা তার কাছ থেকে নিকাশ নিয়েছিলেন। শীঘ্রই শয়তানের জগতের গর্বিত, আত্মশ্লাঘী নেতাদের এবং দৃশ্য ও অদৃশ্য সমস্তকিছুর কাছ থেকে নিকাশ নেওয়া হবে। আমরা যেন কখনো যিহোবার শত্রুদের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবকে প্রতিফলিত না করি!

১৯. কোন ক্ষেত্রে ঈশ্বরের লোকেরা গর্বিত অথচ নম্র?

১৯ সত্য খ্রিস্টানদের যিহোবার দাস হিসেবে গর্বিত হওয়ার উপযুক্ত কারণ রয়েছে। (যিরমিয় ৯:২৪) একই সময়ে, তাদের নম্র থাকারও উপযুক্ত কারণ রয়েছে। কেন? কারণ “সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।” (রোমীয় ৩:২৩) তাই, যিহোবার দাস হিসেবে আমাদের অবস্থানকে রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রেরিত পৌলের মতো মনোভাব রাখতে হবে, যিনি বলেছিলেন যে, “খ্রীষ্ট যীশু পাপীদের পরিত্রাণ করিবার জন্য জগতে আসিয়াছেন” আর এরপর তিনি যুক্ত করেছিলেন: “তাহাদের মধ্যে আমি অগ্রগণ্য।”—১ তীমথিয় ১:১৫.

২০. কীভাবে যিহোবা এখন তাঁর লোকেদের রক্ষা করেন এবং কীভাবে তিনি ভবিষ্যতে তাদের রক্ষা করবেন?

২০ যেহেতু যিহোবার লোকেরা ঐশিক আগ্রহগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আনন্দিত মনে তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহগুলোকে দ্বিতীয় স্থানে রাখে, তাই আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা ক্রমাগত তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে রক্ষা করবেন। এ ছাড়া, আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে যখন মহাক্লেশ হবে, তখন যিহোবা তাঁর লোকেদের কেবল আধ্যাত্মিকভাবেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে দৈহিকভাবেও রক্ষা করবেন। ঈশ্বরের নতুন জগতে প্রবেশ করার পর, তারা উল্লাস সহকারে এই কথা বলতে সমর্থ হবে: “এই দেখ, ইনিই আমাদের ঈশ্বর; আমরা ইহাঁরই অপেক্ষায় ছিলাম, ইনি আমাদিগকে ত্রাণ করিবেন; ইনিই সদাপ্রভু; আমরা ইহাঁরই অপেক্ষায় ছিলাম, আমরা ইহাঁর কৃত পরিত্রাণে উল্লাসিত হইব, আনন্দ করিব।”—যিশাইয় ২৫:৯.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কীভাবে রাজা দায়ূদ এবং যিশু খ্রিস্ট রক্ষিত হয়েছিল?

• আজকে যিহোবার লোকেদের কীভাবে রক্ষা করা হয়?

• কেন আমাদের আত্মকেন্দ্রিক হওয়া এড়িয়ে চলা উচিত?

• কেন আমরা গর্বিত অথচ নম্র হতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কীভাবে যিহোবা দায়ূদ এবং যিশুকে রক্ষা করেছিলেন?

[১০, ১১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আজকে কোন কোন উপায়ে ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিকভাবে রক্ষা করা হয়?

[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবাকে সেবা করার জন্য যদিও আমরা গর্বিত কিন্তু আমাদের অবশ্যই সর্বদা নম্র থাকতে হবে