সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অল্পবয়স্করা, যিহোবার প্রশংসা করো!

অল্পবয়স্করা, যিহোবার প্রশংসা করো!

অল্পবয়স্করা, যিহোবার প্রশংসা করো!

“পৃথিবী হইতে সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] প্রশংসা কর, . . . যুবকগণ ও যুবতী সকল।” —গীতসংহিতা ১৪৮:৭, ১২.

১, ২. (ক) অনেক অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে কোন ধরনের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে জানে? (খ) বাবামারা অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের ওপর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করে বলে, কেন তাদের বিরক্ত হওয়ার দরকার নেই?

 প্রায়ই অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা খুব ভাল করে জানে যে, কী কী করার অনুমতি এখনও তাদের নেই। তাদের মধ্যে অনেকে খুব সহজেই আপনাকে বলে দিতে পারে যে, কত বছর না হওয়া পর্যন্ত তারা একা একা রাস্তা পার হতে অথবা সন্ধ্যায় একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে জেগে থাকতে বা গাড়ি চালাতে পারবে না। কখনো কখনো, একজন অল্পবয়স্ক ছেলে বা মেয়ে হয়তো মনে করে যে, তার কাঙ্ক্ষিত অনেক অনুরোধের বেলায়ই তাকে এই একই উত্তর শুনতে হয়, “বড় না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো।”

অল্পবয়স্করা, তোমরা জানো যে তোমাদের বাবামারা, সম্ভবত তোমাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য এই ধরনের সীমাবদ্ধতা দেওয়াকে বিজ্ঞতার কাজ বলে মনে করে। নিশ্চিতভাবে তোমরা এও জানো যে, তোমরা যখন তোমাদের বাবামার বাধ্য হও, তখন যিহোবা খুশি হন। (কলসীয় ৩:২০) কিন্তু, তোমাদের কি কখনো মনে হয়েছে যে, তোমাদের জীবন শুরু করার জন্য তোমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছিল? বড় না হওয়া পর্যন্ত, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই কি করা নিষেধ? এটা একেবারেই সত্য নয়! আজকে একটা কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে, যা অন্যান্য এমন যেকোনো বিশেষ সুযোগের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, যার জন্য তুমি হয়তো অপেক্ষা করে আছ। অল্পবয়স্করা, এই কাজে যোগ দেওয়ার জন্য তোমাদের কি অনুমতি দেওয়া হয়েছে? শুধু অনুমতিই দেওয়া হয়নি—আসলে তা করার জন্য পরাৎপর ঈশ্বর নিজে তোমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন!

৩. যিহোবা অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের কোন বিশেষ সুযোগ লাভ করার জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং আমরা এখন কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

আমরা কোন কাজের কথা বলছি? এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদের কথাগুলো লক্ষ করো: “পৃথিবী হইতে যিহোবার প্রশংসা কর, . . . যুবকগণ ও যুবতী সকল; বৃদ্ধগণ ও বালক-বালিকা-সমূহ।” (গীতসংহিতা ১৪৮:৭, ১২) এখানে তোমাদের জন্য বিরাট সুযোগের কথা বলা হচ্ছে: তোমরা যিহোবার প্রশংসা করতে পারো। যুবক-যুবতী বা একজন অল্পবয়স্ক হিসেবে, সেই কাজে অংশ নেওয়ার জন্য তুমি কি রোমাঞ্চিত? অনেকে তা-ই বোধ করে। এইরকম বোধ করা কেন যথোপযুক্ত, তা দেখার জন্য এসো আমরা তিনটে প্রশ্ন বিবেচনা করি। প্রথমটা হল, কেন তোমাদের যিহোবার প্রশংসা করা উচিত? দ্বিতীয়টা হল, কীভাবে তোমরা কার্যকারীভাবে তাঁর প্রশংসা করতে পারো? আর তৃতীয়টা হল, যিহোবাকে প্রশংসা করার উত্তম সময় কখন?

কেন যিহোবাকে প্রশংসা করা উচিত?

৪, ৫. (ক) একশো আটচল্লিশ গীত অনুসারে আমরা কোন অপূর্ব অবস্থার মধ্যে রয়েছি? (খ) কীভাবে বিভিন্ন সৃষ্টি কথা বলতে বা যুক্তি করতে না পারলেও যিহোবার প্রশংসা করে?

যিহোবাকে প্রশংসা করার এক উল্লেখযোগ্য কারণ হল, তিনি হলেন সৃষ্টিকর্তা। ১৪৮ গীত আমাদের এই সত্যের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে। একটু কল্পনা করো: তুমি যদি এমন একটা বড় দলের নিকটবর্তী হও, যারা একসুরে এক চমৎকার, প্রেরণাদায়ক গান গাইছে, তা হলে তোমার কেমন লাগবে? আর সেই গানের কথাগুলো যদি এমন হয়, যা তুমি সত্য হবে বলে জানো এবং সেগুলো যদি এমন ধারণা প্রকাশ করে, যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ, আনন্দজনক এবং উৎকর্ষজনক বলে তুমি জানো, তা হলে? তুমি কি সেই কথাগুলো শেখার এবং সেই গানে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা বোধ করবে? আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই তা-ই করবে। আসলে, ১৪৮ গীত দেখায় যে, তুমি এইরকম একটা অবস্থার মধ্যে রয়েছ, তবে তা আরও বেশি অপূর্ব। এই গীত এমন এক বিশাল জনতার কথা বর্ণনা করে, যারা সকলে একসুরে যিহোবার প্রশংসা করছে। কিন্তু, এই গীত পড়ার সময় তুমি হয়তো অসাধারণ কিছু লক্ষ করতে পারো। সেটা কী?

একশো আটচল্লিশ গীতের প্রশংসাকারীদের মধ্যে অনেকেই কথা বলতে বা যুক্তি করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, আমরা পড়ি যে সূর্য, চাঁদ, তারা, তুষার, বায়ু, পর্বতমালা এবং পাহাড় যিহোবার প্রশংসা করে। কীভাবে এই জড় সৃষ্টি তা করতে পারে? (৩, ৮, ৯ পদ) আসলে, একইভাবে গাছপালা, জলচর প্রাণী এবং পশুপাখিও প্রশংসা করে। (৭, ৯, ১০ পদ) তুমি কি কখনো চমৎকার সূর্যাস্ত অথবা তারার সমুদ্রের মাঝে পূর্ণিমা দেখেছ বা পশুপাখিকে খেলতে দেখে আনন্দের হাসি হেসেছ অথবা অপূর্ব এক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়েছ? তা হলে, তুমি সৃষ্টি থেকে আসা প্রশংসা গীত “শুনতে” পেয়েছ। যিহোবা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, তিনি হলেন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা, সমস্ত নিখিলবিশ্বে তাঁর মতো এত শক্তিশালী, এত বিজ্ঞ অথবা এত প্রেমময় কেউই নেই।—রোমীয় ১:২০; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.

৬, ৭. (ক) একশো আটচল্লিশ গীত এমন কোন বুদ্ধিমান প্রাণীদের সম্বন্ধে বর্ণনা করে, যারা যিহোবার প্রশংসা করে? (খ) কেন আমরা যিহোবার প্রশংসা করতে পরিচালিত হতে পারি? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

এ ছাড়া, ১৪৮ গীত বুদ্ধিমান প্রাণীদের সম্বন্ধেও বর্ণনা করে, যারা যিহোবার প্রশংসা করছে। ২ পদে আমরা যিহোবার স্বর্গীয় “বাহিনি” স্বর্গদূতেদের ঈশ্বরকে প্রশংসা করতে দেখি। ১১ পদে শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী মানুষদের, যেমন রাজা ও বিচারকর্তাদের প্রশংসায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পরাক্রমী দূতেরা যদি যিহোবার প্রশংসায় আনন্দ খুঁজে পায়, তা হলে নগণ্য মানুষ কি উপযুক্তভাবে বলতে পারে যে, সে এত গুরুত্বপূর্ণ যে তা করতে পারবে না? এরপর ১২ এবং ১৩ পদে অল্পবয়স্করা, তোমাদেরও যিহোবার প্রশংসায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তোমরা কি তা করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছ?

একটা উদাহরণ বিবেচনা করো। তোমার যদি এমন একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকত, যার বিস্ময়কর দক্ষতা রয়েছে—হতে পারে খেলাধুলা, চারুকলা অথবা সংগীতের ক্ষেত্রে—তা হলে তুমি কি তার কথা তোমার পরিবার এবং অন্যান্য বন্ধুবান্ধবের কাছে বলতে না? নিঃসন্দেহে তুমি বলতে। আসলে, যিহোবা যা কিছু করেছেন, সেগুলো সম্বন্ধে জানা আমাদের ওপর একই প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গীতসংহিতা ১৯:১, ২ পদ (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) বলে যে, তারা-ভরা আকাশ দেখে “ভিতর থেকে বাণী বেরিয়ে আসে।” আমরা যখন সেই বিস্ময়কর বিষয়গুলো সম্বন্ধে চিন্তা করি, যেগুলো যিহোবা সম্পাদন করেছেন, তখন আমরা আমাদের ঈশ্বর সম্বন্ধে অন্যদেরকে বলার জন্য কখনো থেমে থাকতে পারি না।

৮, ৯. কোন কারণগুলোর জন্য যিহোবা চান যাতে আমরা তাঁর প্রশংসা করি?

যিহোবাকে প্রশংসা করার আরেকটা উল্লেখযোগ্য কারণ হল যে, তিনি চান যাতে আমরা তা করি। কেন? এর কারণ কি এই যে, মানুষের কাছ থেকে তাঁর প্রশংসা দরকার? না। মানুষ হিসেবে আমাদের হয়তো মাঝে মাঝে প্রশংসার প্রয়োজন কিন্তু যিহোবা আমাদের চেয়ে অনেক উচ্চ। (যিশাইয় ৫৫:৮) নিজের সম্বন্ধে বা নিজের গুণাবলি সম্বন্ধে তাঁর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। (যিশাইয় ৪৫:৫) তা সত্ত্বেও, তিনি চান যাতে আমরা তাঁর প্রশংসা করি এবং আমরা যখন তা করি, তখন তিনি খুশি হন। কেন? দুটো কারণ বিবেচনা করো। প্রথমটা হল, তিনি জানেন যে আমাদের তাঁকে প্রশংসা করতে হবে। তিনি আমাদের আত্মাতে দীনহীন করে বা আধ্যাত্মিক চাহিদা দিয়ে তৈরি করেছেন, যা উপাসনার জন্য প্রয়োজন। (মথি ৫:৩) আমাদের সেই চাহিদা পূরণ হতে দেখা যিহোবাকে খুশি করে, ঠিক যেমন তোমাদের বাবামা তোমাদের সেই খাবারগুলো খেতে দেখে খুশি হয়, যা তোমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর বলে তারা জানে।—যোহন ৪:৩৪.

দ্বিতীয়টা হল, যিহোবা জানেন যে অন্য লোকেদের শুনতে হবে যে, আমরা তাঁর প্রশংসা করি। প্রেরিত পৌল যুবক তীমথিয়কে এই কথাগুলো লিখেছিলেন: “আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও, এ সকলে স্থির থাক; কেননা তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।” (১ তীমথিয় ৪:১৬) হ্যাঁ, তোমরা যখন অন্যদেরকে যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে শিক্ষা দেও, তাঁর প্রশংসা করো, তখন তারাও যিহোবাকে জানতে পারে। যিহোবা সম্বন্ধে জানা বা এই ধরনের জ্ঞান তাদেরকে অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করতে পারে।—যোহন ১৭:৩.

১০. কেন আমরা আমাদের ঈশ্বরকে প্রশংসা করতে অনুপ্রাণিত হই?

১০ যিহোবাকে প্রশংসা করার আরও একটা কারণ রয়েছে। তোমার দক্ষ বন্ধুর উদাহরণের কথা মনে করে দেখো। তুমি যদি অন্যদেরকে তার সম্বন্ধে মিথ্যা বলতে, তার সুনামের অপবাদ দিতে শোনো, তা হলে তুমি কি তার প্রশংসা করার জন্য আগের চেয়ে আরও বেশি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হবে না? আসলে, এই জগতে যিহোবাকে ব্যাপকভাবে অপবাদ দেওয়া হয়েছে। (যোহন ৮:৪৪; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) তাই, যারা তাঁকে ভালবাসে, তারা তাঁর সম্বন্ধে সত্য বলতে, ভুল তথ্যগুলোকে শুধরে দিতে অনুপ্রাণিত হয়। তুমি কি যিহোবার প্রতি তোমার প্রেম এবং উপলব্ধি প্রকাশ করতে চাও এবং দেখাতে চাও যে, তাঁর প্রধান শত্রু শয়তানকে নয় বরং তাঁকে তোমার শাসক হিসেবে চাও? যিহোবার প্রশংসা করার দ্বারা তুমি সেই সমস্তই করতে পারো। তা হলে, পরবর্তী প্রশ্নটি হল, কীভাবে।

কিছু অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে যেভাবে যিহোবার প্রশংসা করেছিল

১১. বাইবেলের কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা যিহোবার প্রশংসায় অনেক কার্যকরী হতে পারে?

১১ বাইবেল দেখায় যে, অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা প্রায়ই যিহোবার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে অনেক কার্যকারী। উদাহরণস্বরূপ, একজন ইস্রায়েলীয় মেয়ে ছিল, যাকে অরামীয়রা বন্দি করে নিয়ে যায়। সে তার কর্ত্রীর কাছে যিহোবার ভাববাদী ইলীশায় সম্বন্ধে নির্ভীকভাবে সাক্ষ্য দেয়। তার সাক্ষ্যের কারণে একটা অলৌকিক কাজ সম্পাদিত হয় এবং এক জোরালো সাক্ষ্য দেওয়া হয়। (২ রাজাবলি ৫:১-১৭) যিশুও একজন বালক হিসেবে নির্ভীকভাবে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তার ছোটবেলার সমস্ত ঘটনা, যা শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ করা যেত, সেগুলোর মধ্যে থেকে যিহোবা একটা ঘটনা বেছে নিয়েছিলেন আর সেটা হল ১২ বছর বয়সে যিরূশালেম মন্দিরে যিশু যখন সাহসের সঙ্গে ধর্মীয় গুরুদের প্রশ্ন করেছিলেন এবং যিহোবার পথ সম্বন্ধে তার বোধ্যগম্যতার দ্বারা তাদেরকে চমৎকৃত করেছিলেন।—লূক ২:৪৬-৪৯.

১২, ১৩. (ক) যিশু তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে মন্দিরে কী করেছিলেন আর তা সেখানে উপস্থিত লোকেদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল? (খ) বালকদের মুখ থেকে প্রশংসাবাণী শুনে যিশু কেমন বোধ করেছিলেন?

১২ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবেও যিশু ছোট ছেলেমেয়েদেরকে যিহোবার প্রশংসা করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, যিশু তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে যিরূশালেম মন্দিরে সময় কাটিয়েছিলেন। বাইবেল বলে যে, সেখানে তিনি “আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল” করেছিলেন। তিনি সেই ব্যক্তিদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, যারা ওই পবিত্রস্থানকে চোরদের আড্ডাখানা করে তুলেছিল। তিনি সেইসঙ্গে অন্ধ এবং খঞ্জ লোকেদের আরোগ্য করেছিলেন। সেখানে উপস্থিত প্রত্যেকের, বিশেষ করে ধর্মীয় গুরুদের যিহোবা এবং তাঁর পুত্র মশীহের প্রশংসা করার জন্য পরিচালিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু, দুঃখজনক যে, সেই সময়কার অনেকে এই ধরনের কোনো প্রশংসা প্রকাশ করেনি। তারা জানত যে, যিশু ঈশ্বরের দ্বারা প্রেরিত কিন্তু তারা ধর্মীয় গুরুদের ভয় পেত। তবে, একটা দল নির্ভীকভাবে কথা বলেছিল। তোমরা কি জানো তারা কারা? বাইবেল বলে: “প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকেরা [যিশুর] কৃত আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল দেখিয়া, আর যে বালকেরা ‘হোশান্না দায়ূদ-সন্তান,’ বলিয়া ধর্ম্মধামে চেঁচাইতেছিল, তাহাদিগকে দেখিয়া, রুষ্ট হইল; এবং [যিশুকে] কহিল, শুনিতেছ, ইহারা কি বলিতেছে?”—মথি ২১:১৫, ১৬; যোহন ১২:৪২.

১৩ সেই যাজকরা মনে করেছিল যে, যিশু সেই বালকদের থামিয়ে দেবেন, যারা তাঁর প্রশংসা করছিল। তিনি কি তা করেছিলেন? একেবারেই না! যিশু যাজকদের উত্তর দিয়েছিলেন: “হাঁ; তোমরা কি কখনও পাঠ কর নাই যে, ‘তুমি শিশু ও দুগ্ধপোষ্যদের মুখ হইতে স্তব সম্পন্ন করিয়াছ’?” এটা স্পষ্ট যে, যিশু এবং তাঁর পিতা অল্পবয়স্ক এই বালকদের প্রশংসা শুনে খুশি হয়েছিল। সেই ছোট ছেলেমেয়েরা তা-ই করেছিল, যা সেখানে উপস্থিত সকল প্রাপ্তবয়স্কদের করা উচিত ছিল। তাদের শিশুসুলভ মনে সমস্তকিছু খুবই স্পষ্ট ছিল বলে মনে হয়। তারা সেই ব্যক্তিকে আশ্চর্য কাজ করতে, সাহস ও বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে এবং ঈশ্বর ও তাঁর লোকেদের প্রতি গভীর প্রেম দেখাতে দেখেছিল। তিনি নিজেকে যা বলে দাবি করতেন, তিনি সেই ব্যক্তিই ছিলেন—প্রতিজ্ঞাত “দায়ূদ-সন্তান” অর্থাৎ মশীহ। তাদের বিশ্বাসের জন্য সেই বালকদের এমনকি ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করার বিশেষ সুযোগ হয়েছিল।—গীতসংহিতা ৮:২.

১৪. অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা যে-দানের অধিকারী, তা কীভাবে তাদেরকে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে সুসজ্জীভূত করে?

১৪ এই উদাহরণগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি? অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা যিহোবার অনেক কার্যকারী প্রশংসাকারী হতে পারে। তাদের প্রায়ই সত্যকে স্পষ্ট এবং সরলভাবে দেখার, তাদের বিশ্বাসকে আন্তরিকতা এবং উদ্যোগের সঙ্গে প্রকাশ করার দান রয়েছে। এ ছাড়া, তাদের হিতোপদেশ ২০:২৯ পদে বলা এই দানও রয়েছে: “যুবকদের বলই তাহাদের শোভা।” হ্যাঁ, যুবক বা অল্পবয়স্করা তোমাদের বল এবং শক্তি রয়েছে—যিহোবাকে প্রশংসা করার প্রকৃত সম্পদ রয়েছে। কীভাবে তুমি সুনির্দিষ্টভাবে এই ধরনের দানগুলোকে কাজে লাগাতে পারো?

কীভাবে তোমরা যিহোবার প্রশংসা করতে পারো?

১৫. যিহোবাকে কার্যকারীভাবে প্রশংসা করার জন্য কোন ধরনের মনোভাব প্রয়োজনীয়?

১৫ কার্যকারী হওয়া হৃদয় থেকে শুরু হয়। তুমি যিহোবাকে কার্যকারীভাবে প্রশংসা করতে পারবে না, যদি কেবল অন্যেরা চায় বলে তুমি তা করো। মনে রাখবে যে, সমস্ত আজ্ঞার মধ্যে সর্বোত্তম আজ্ঞা হল: “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে [“যিহোবাকে,” NW] প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৭) তাঁর বাক্য নিয়ে নিজে নিজে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে তুমি কি কখনো ব্যক্তিগতভাবে যিহোবাকে জেনেছ? এইভাবে শিক্ষালাভ করার যথার্থ ফলাফল হল, যিহোবার জন্য ভালবাসার এক অনুভূতি। সেই ভালবাসা প্রকাশের এক স্বাভাবিক উপায় হল তাঁর প্রশংসা করা। একবার যদি তোমার মনোভাব স্পষ্ট এবং দৃঢ় হয়, তা হলে তুমি যিহোবাকে উদ্যমের সঙ্গে প্রশংসা করার জন্য তৈরি আছ।

১৬, ১৭. যিহোবাকে প্রশংসা করার ক্ষেত্রে আচরণ কোন ভূমিকা পালন করে? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

১৬ এখন, তুমি যা বলবে তা বিবেচনা করার আগে বিবেচনা কর যে, কীভাবে তুমি কাজ করবে। ইলীশায়ের দিনের সেই ইস্রায়েলীয় মেয়ে যদি রূঢ়, অসম্মানজনক অথবা অসৎ স্বভাবের হতো, তা হলে তোমার কি মনে হয় যে, তার অরামীয় বন্দিকর্তারা যিহোবার ভাববাদীর বিষয়ে তার কথা শুনতো? সম্ভবত না। একইভাবে, লোকেরা যদি দেখে যে, তুমি সম্মান দেখাও, সৎ এবং উত্তম আচরণ কর, তা হলে তারা হয়তো তোমার কথা আরও বেশি করে শুনবে। (রোমীয় ২:২১) একটা উদাহরণ বিবেচনা করো।

১৭ পোর্তুগালের ১১ বছর বয়সী একজন মেয়ে স্কুলে সেই ছুটির দিন উদ্‌যাপনের চাপের মুখে পড়েছিল, যা তার বাইবেল শিক্ষিত বিবেকের বিরুদ্ধে ছিল। সে সম্মানের সঙ্গে তার শিক্ষিকাকে ব্যাখ্যা করেছিল যে, কেন সেটা তাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে কিন্তু শিক্ষিকা তাকে উপহাস করেছিল। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষিকা তার ধর্ম নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে বার বার তাকে অপমান করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু, সেই অল্পবয়স্ক মেয়ে সম্মান দেখিয়ে গিয়েছিল। কয়েক বছর পর, সেই অল্পবয়স্ক বোন একজন নিয়মিত অগ্রগামী অর্থাৎ পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে সেবা করছিল। একটা সম্মেলনে সে যে-লোকেদের বাপ্তিস্ম নিতে দেখে, তাদের মধ্যে একজনকে চিনতে পারে। তিনি ছিলেন তার প্রাক্তন শিক্ষিকা! সজল চোখে জড়িয়ে ধরার পর, বয়স্কা মহিলা অল্পবয়স্কা মেয়েকে বলেছিলেন, তিনি কখনো তার ছাত্রীর সম্মানজনক আচরণের কথা ভুলবেন না। একজন সাক্ষি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন এবং সেই শিক্ষিকা তার প্রাক্তন ছাত্রীর আচরণ সম্বন্ধে বলেছিলেন। ফলে, বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয় এবং সেই মহিলা সত্যকে নিজের করে নেন। হ্যাঁ, তোমার আচরণ যিহোবাকে প্রশংসা করার অনেক জোরালো উপায় হতে পারে!

১৮. একজন অল্পবয়স্ক ছেলে বা মেয়ে যদি বাইবেল এবং যিহোবা সম্বন্ধে কথা বলা শুরু করতে দ্বিধাবোধ করে, তা হলে সে কী করতে পারে?

১৮ স্কুলে তোমার বিশ্বাস সম্বন্ধে কথাবার্তা শুরু করাকে তুমি কি কঠিন বলে মনে করো? তা হলে, কেবল তুমি একাই সেইরকম মনে করো না। কিন্তু, তুমি এমন একটা পরিবেশের সৃষ্টি করতে পারো, যাতে অন্যেরা তোমার বিশ্বাস সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আইনসম্মত এবং অনুমোদনযোগ্য হয়, তা হলে সঙ্গে করে বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা নিয়ে এসে সেগুলো মধ্যাহ্নভোজ অথবা অন্যান্য যে-পিরিয়ডে তা পড়ার অনুমতি থাকে, তখন পড়ো না কেন? তোমার সহছাত্র-ছাত্রীরা হয়তো প্রশ্ন করতে পারে যে, তুমি কি পড়ছ। তাদেরকে উত্তর দেওয়ার এবং তুমি যে-প্রবন্ধ বা বই পড়ছ, তাতে যে-আগ্রহজনক বিষয় তুমি খুঁজে পেয়েছ তা বলার মাধ্যমে তুমি হয়তো দেখতে পারো যে, তোমার অজান্তেই এক উত্তম কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার বিষয়টি মনে রেখ এবং তোমার সহছাত্র-ছাত্রীরা কী বিশ্বাস করে, তা খুঁজে বের করো। সম্মান বজায় রেখে মনোযোগ দিয়ে শোনো, বাইবেল থেকে তুমি যা শিখেছ, তা তাদেরকে বলো। ২৯ পৃষ্ঠার অভিজ্ঞতাগুলো যেমন দেখায় যে, অনেক অল্পবয়স্করা স্কুলে ঈশ্বরকে প্রশংসা করছে। এটা তাদের জন্য অনেক আনন্দ নিয়ে আসে এবং অনেককে যিহোবাকে জানতে সাহায্য করে।

১৯. কীভাবে অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা ঘরে ঘরে পরিচর্যায় আরও বেশি কার্যকারী হতে পারে?

১৯ যিহোবার প্রশংসা করার সবচেয়ে কার্যকারী একটা উপায় হল ঘরে ঘরে পরিচর্যা। তুমি যদি এখনও তাতে অংশ না নিয়ে থাকো, তা হলে সেটাকে একটা লক্ষ্য করে তোলো না কেন? আর তুমি যদি তাতে অংশ নিয়ে থাকো, তা হলে এমন আরও অন্যান্য লক্ষ্য কি আছে, যা তুমি নিজের জন্য স্থাপন করতে পারো? উদাহরণস্বরূপ, প্রতিটা ঘরে মূলত একই কথা বলার চেয়ে বরং উন্নতি করার উপায়গুলো খোঁজার চেষ্টা করো, তোমার বাবামা অথবা অন্যান্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে ব্যবহারিক পরামর্শ দিতে বলো। কীভাবে আরও বেশি করে বাইবেল ব্যবহার করতে হয়, কার্যকারী পুনর্সাক্ষাৎ করতে হয় এবং একটা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করতে হয়, তা শেখো। (১ তীমথিয় ৪:১৫) এই উপায়গুলোতে তুমি যত বেশি যিহোবার প্রশংসা করো, তত বেশি কার্যকারী হবে এবং তোমার পরিচর্যা উপভোগ করবে।

কখন তোমাদের যিহোবাকে প্রশংসা করতে শুরু করা উচিত?

২০. কেন অল্পবয়স্কদের এইরকম মনে করার কোনো কারণ নেই যে, যিহোবাকে প্রশংসা করার জন্য তারা এখনও অনেক ছোট?

২০ এই আলোচনার তিনটে প্রশ্নের মধ্যে এই শেষ প্রশ্নটার উত্তর সবচেয়ে সহজ। বাইবেলের সরাসরি উত্তর লক্ষ করো: “তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর।” (উপদেশক ১২:১) হ্যাঁ, যিহোবাকে প্রশংসা করতে শুরু করার সময় এখনই। এটা বলা খুবই সহজ: “যিহোবাকে প্রশংসা করার জন্য এখনও আমি অনেক ছোট। আমি অনভিজ্ঞ। বড় না হওয়া পর্যন্ত আমার অপেক্ষা করা উচিত।” তুমিই যে প্রথম এইরকম চিন্তা করছ, তা নয়। উদাহরণস্বরূপ, অল্পবয়স্ক যিরমিয় যিহোবাকে বলেছিলেন: “হায় হায়, হে প্রভু সদাপ্রভু, দেখ, আমি কথা কহিতে জানি না, কেননা আমি বালক।” যিহোবা তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। (যিরমিয় ১:৬, ৭) একইভাবে, যিহোবাকে প্রশংসা করার সময় আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের এমন কোনো ক্ষতি আসতে পারে না, যা যিহোবা পুরোপুরি দূর করতে পারবেন না।—গীতসংহিতা ১১৮:৬.

২১, ২২. যিহোবার অল্পবয়স্ক প্রশংসাকারীরা কেন শিশিরবিন্দুর তুল্য এবং সেই তুলনা কেন উৎসাহজনক?

২১ তাই, অল্পবয়স্করা আমরা তোমাদের পরামর্শ দিচ্ছি: যিহোবার প্রশংসা করতে দ্বিধাবোধ কোরো না! এখনই, তোমাদের এই যৌবনকালেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা আজকে পৃথিবীতে সম্পাদিত হচ্ছে, তাতে যোগদান করার সবচেয়ে উত্তম সময়। তোমরা যখন তা করো, তখন তোমরা অপূর্ব কিছুর—যিহোবার প্রশংসাকারীদের বিশ্বজনীন পরিবারের—অংশ হয়ে ওঠো। যিহোবা এতে আনন্দিত যে, এই পরিবারের মধ্যে তোমরাও আছ। যিহোবার উদ্দেশে গীতরচকের এই অনুপ্রাণিত কথাগুলো লক্ষ করো: “তোমার বিক্রম-দিনে তোমার প্রজাগণ স্বেচ্ছায় দত্ত উপহার হইবে; পবিত্র শোভায়, ঊষার গর্ব্ভ হইতে, তোমার যুবকেরা তোমার কাছে শিশিরতুল্য।”—গীতসংহিতা ১১০:৩.

২২ সকালের আলোতে চিকচিক করতে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো এক চমৎকার চিত্র তুলে ধরে, তাই না? সেগুলো সতেজ, উজ্জ্বল এবং প্রচুর পরিমাণে থাকায় তা গণনা করা মূলত অসাধ্য। অল্পবয়স্করা, তোমরা যারা এই বিষম সময়ে বিশ্বস্ততার সঙ্গে তাঁর প্রশংসা করছ, তাদেরকে যিহোবা সেভাবেই দেখেন। স্পষ্টতই, যিহোবাকে প্রশংসা করা বেছে নেওয়া তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করে। (হিতোপদেশ ২৭:১১) তা হলে অল্পবয়স্করা, যেকোনোভাবেই হোক, তোমরা যিহোবার প্রশংসা করো!

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• যিহোবাকে প্রশংসা করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ কী?

• বাইবেলের কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা যিহোবার প্রশংসায় অনেক কার্যকারী হতে পারে?

• আজকে অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা কীভাবে যিহোবার প্রশংসা করতে পারে?

• অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের কখন যিহোবার প্রশংসা করতে শুরু করা উচিত এবং কেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

তোমার বন্ধুর যদি কোনো বিশেষ দক্ষতা থাকে, তা হলে তুমি কি তা অন্যদের বলবে না?

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সহছাত্র-ছাত্রীরা হয়তো তোমার বিশ্বাসের প্রতি আগ্রহী হতে পারে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

তুমি যদি তোমার পরিচর্যায় উন্নতি করতে চাও, তা হলে ব্যবহারিক পরামর্শের জন্য আরও অভিজ্ঞ একজন সাক্ষিকে বলো