সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আলেকজান্দ্রিয়ার ফাইলো শাস্ত্রের সঙ্গে অনুমান যুক্ত করা

আলেকজান্দ্রিয়ার ফাইলো শাস্ত্রের সঙ্গে অনুমান যুক্ত করা

আলেকজান্দ্রিয়ার ফাইলো শাস্ত্রের সঙ্গে অনুমান যুক্ত করা

 সাধারণ কাল পূর্ব ৩৩২ সালে মহান আলেকজান্ডার তার সৈন্যবাহিনীকে মিশরের দিকে পরিচালিত করেছিলেন। বিশ্বজয় করার জন্য পূর্বদিকে ধাবিত হওয়ার আগে তিনি একটা শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেটার নাম দিয়েছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া। এটা গ্রিক সংস্কৃতির এক কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল। অন্যদিকে, সা.কা.পূ. প্রায় ২০ সালে আরেকজন বিজয়ীর জন্ম হয়েছিল, যার অস্ত্রশস্ত্র কোনো তলোয়ার এবং বল্লম নয়, বরং দার্শনিক যুক্তিগুলো ছিল। তিনি আলেকজান্দ্রিয়ার ফাইলো অথবা তার যিহুদি পটভূমির কারণে ফাইলো জুডিয়াস নামে পরিচিত ছিলেন।

সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংসের পর অনেক যিহুদি চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিল আর এর ফলে তাদের অনেকেই মিশরে বাস করেছিল। তাদের মধ্যে হাজার হাজার লোক আলেকজান্দ্রিয়ায় বসবাস করত। কিন্তু, সেখানে যিহুদি এবং তাদের গ্রিক প্রতিবেশীদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা ছিল। যিহুদিরা গ্রিক দেবতাদের উপাসনা করাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, একই সময়ে গ্রিকরা ইব্রীয় শাস্ত্রকে তাচ্ছিল্য করত। ফাইলো তার গ্রিক শিক্ষা এবং যিহুদিদের মাঝে বড় হয়ে ওঠায় এই বিতর্কিত বিষয়ে ভালমতোই অবগত ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, যিহুদিধর্ম ছিল সত্য ধর্ম। কিন্তু, অনেকের বৈসাদৃশ্যে ফাইলো পরজাতিদেরকে ঈশ্বরের দিকে চালিত করার জন্য এক শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজেছিলেন। তিনি যিহুদিধর্মকে তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চেয়েছিলেন।

প্রাচীন লেখাগুলোর নতুন অর্থ

আলেকজান্দ্রিয়ার অনেক যিহুদির মতো ফাইলোরও মাতৃভাষা ছিল গ্রিক। তাই ইব্রীয় শাস্ত্রের গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট সংস্করণ ছিল তার অধ্যয়নের ভিত্তি। সেপ্টুয়াজিন্ট লিপি পরীক্ষা করার সময় তিনি নিশ্চিত হয়ে উঠেছিলেন যে, এর মধ্যে দর্শনের বিষয়বস্তু রয়েছে আর মোশি “দার্শনিক প্রতিভার” অধিকারী ছিলেন।

শত শত বছর আগে, গ্রিক বুদ্ধিজীবিরা দেব-দেবীদের—তাদের প্রাচীন গ্রিক পৌরণিক কাহিনীর দৈত্য ও অপদেবতাদের—সম্বন্ধে কাহিনীগুলো পেয়েছিল, যা মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। তারা সেই প্রাচীন গল্পগুলো পুনরায় নতুনভাবে ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছিল। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান শিল্প-সাহিত্য সম্পর্কিত পণ্ডিত ব্যক্তি জেমস ড্রামন্ড তাদের পদ্ধতি সম্বন্ধে এইভাবে বলেছিলেন: “দার্শনিকরা পৌরাণিক গল্পগুলোর অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম তাৎপর্য খুঁজে বের করতে শুরু করেছিল আর সেগুলোর জঘন্য ও উদ্ভট যৌক্তিকতা থেকে তারা এইরকম উপসংহারে পৌঁছেছিল যে, তাদের লেখকরা নিশ্চয়ই এই আবেদনময় রূপক ভাষার মাধ্যমে কিছু নিগূঢ় বা নৈতিক সত্য প্রকাশ করতে চেয়েছিল।” এই পদ্ধতিকে বলা হয় রূপক ব্যাখ্যা আর ফাইলো শাস্ত্রকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলেন।

উদাহরণ হিসেবে ব্যাগস্টারের সেপ্টুয়াজিন্ট সংস্করণের আদিপুস্তক ৩:২২ পদের বিষয়ে চিন্তা করুন, যা বলে: “সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম ও তার স্ত্রীর জন্য চামড়ার তৈরি বস্ত্র বানিয়েছিলেন এবং তাদের পরিয়েছিলেন।” গ্রিকরা মনে করেছিল যে, পোশাক তৈরি করা সর্বোচ্চ ঈশ্বরের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করবে। তাই ফাইলো এই পদটিকে প্রতীকী অর্থে মনে করেছিলেন এবং বলেছিলেন: “চামড়ার তৈরি বস্ত্র হচ্ছে স্বাভাবিক ত্বকের জন্য এক রূপক অভিব্যক্তি যেটাকে আমাদের দেহ বলা হয়; কারণ ঈশ্বর সর্বপ্রথমে যখন বোধশক্তি সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি সেটাকে আদম নামে ডেকেছিলেন; এরপর তিনি বাহ্যিক অনুভূতি সৃষ্টি করেছিলেন, যেটাকে তিনি নাম দিয়েছিলেন জীবন। তৃতীয় পর্যায়ে তিনি অপরিহার্যভাবে এক দেহও নির্মাণ করেছিলেন, যেটাকে এক রূপক অভিব্যক্তি, চামড়ার বস্ত্র বলেছিলেন।” এইভাবে ফাইলো আদম ও হবাকে বস্ত্রে আচ্ছাদিত করার ব্যাপারে ঈশ্বরের কৃত কাজকে দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবে দেখার চেষ্টা করেছিলেন।

এ ছাড়া, আদিপুস্তক ২:১০-১৪ পদের কথাও বিবেচনা করুন, যা এদন উদ্যানের জন্য জলের উৎসের বিষয়ে বর্ণনা করে এবং উদ্যানের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত চারটে নদীর বিষয়ে উল্লেখ করে। ফাইলো এই কথাগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার চেষ্টা করেছিলেন এবং এর প্রাকৃতিক দৃশ্যকে ছাড়িয়ে আরও বেশি কিছু দেখেছিলেন। সেই জায়গার বিষয়ে মন্তব্য করার পর তিনি বলেছিলেন: “সম্ভবত এই বাক্যাংশও এক রূপক অর্থ বহন করে; চারটে নদী চারটে সদ্‌গুণের চিহ্ন।” তিনি অনুমান করে বলেছিলেন যে, পিশোন নদী প্রতিনিধিত্ব করে পরিণামদর্শিতাকে, গীহোন নদী হচ্ছে সংযমের প্রতীক, হিদ্দেকল (টাইগ্রিস) চিত্রিত করে সহিষ্ণুতাকে এবং ফরাৎ (ইউফ্রেটিস) নদী ন্যায়বিচারকে নির্দেশ করে। এই রূপক অর্থ ভূগোলবিদ্যায় স্থান করে নেয়।

ফাইলো সৃষ্টির বিবরণ, কয়িনের হেবলকে হত্যা করার বিবরণ, নোহের দিনের জলপ্লাবন, বাবিলে ভাষাভেদ এবং মোশির ব্যবস্থার অনেক নীতি সম্বন্ধে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রূপকধর্মী ব্যাখ্যাকে ব্যবহার করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে আগের অনুচ্ছেদ দেখিয়েছে যে, তিনি প্রায়ই বাইবেলের একটি পদের আক্ষরিক সত্যতা স্বীকার করতেন আর এরপর তিনি এই ধরনের কথাগুলো বলে তার রূপক বোধগম্যতাকে তুলে ধরতেন: “সম্ভবত আমাদের এই বিষয়গুলোকে রূপক অর্থে বিবেচনা করা উচিত।” ফাইলোর লেখাগুলোতে প্রতীকী অর্থ অক্ষুণ্ণ রয়েছে কিন্তু দুঃখজনক যে, শাস্ত্রের সুস্পষ্ট অর্থ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।

ঈশ্বর কে?

ফাইলো এক জোরালো দৃষ্টান্তের মাধ্যমে ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিষয়ে সমর্থন করেছিলেন। ভূমি, নদী, গ্রহ এবং নক্ষত্রগুলোর বিষয়ে বর্ণনার পর তিনি উপসংহারে বলেন: “সমস্ত সৃষ্টিকর্মের মধ্যে এই পৃথিবী অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে ও দক্ষতার সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে, যেন কোনো একজনের দ্বারা এটাকে নির্মাণ করা হয়েছিল, যিনি সমস্তকিছু সম্পন্ন করেছিলেন আর তিনি সর্বোচ্চ নিখুঁত জ্ঞানের অধিকারী। আর এইভাবেই আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিষয়ে এক ধারণা লাভ করেছি।” এটা অত্যন্ত উপযুক্ত যুক্তি ছিল।—রোমীয় ১:২০.

কিন্তু, ফাইলো যখন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন, তখন তিনি সত্য থেকে বিচ্যুত হয়েছিলেন। ফাইলো দাবি করেছিলেন যে, ঈশ্বরের “কোনো স্বতন্ত্র গুণাবলি নেই” আর তাই ঈশ্বর “হচ্ছেন বোধাতীত।” ফাইলো ঈশ্বরকে জানার জন্য প্রচেষ্টা করাকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন, বলেছিলেন যে, “ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য বা স্বতন্ত্র গুণাবলি অনুসন্ধান করার জন্য আরও জানার পদক্ষেপ গ্রহণ করা এক চরম বোকামি।” এই ধরনের চিন্তা বাইবেল থেকে নয়, বরং পৌত্তলিক দার্শনিক প্লেটোর কাছ থেকে এসেছিল।

ফাইলো বলেছিলেন, ঈশ্বর এতটাই বোধাতীত যে, তাঁকে এক ব্যক্তিগত নামে ডাকা অসম্ভব। ফাইলো বলেছিলেন: “অতএব এটা যুক্তিযুক্ত ছিল যে, কোনো উপযুক্ত নামই তাঁর জন্য শোভন নয়, যিনি সত্য জীবন্ত ঈশ্বর।” এটা কতই না পরস্পরবিরোধী!

বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে যে, ঈশ্বরের একটি ব্যক্তিগত নাম রয়েছে। যাত্রাপুস্তক ৩:১৫ পদ বলে যে, “যিহোবা [সদাপ্রভু], তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর তোমাদের নিকটে আমাকে পাঠাইয়াছেন; আমার এই নাম অনন্তকালস্থায়ী, এবং এতদ্দ্বারা আমি পুরুষে পুরুষে স্মরণীয়।” ফাইলো, যিনি বাইবেলের এই পদের বিষয়ে জ্ঞানবান একজন যিহুদি ছিলেন, তিনি কেন শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের কোনো নাম ছিল না? কারণ তিনি বাইবেলের ব্যক্তিগত ঈশ্বর সম্বন্ধে নয়, বরং গ্রিক দর্শনের এক নামবিহীন, অগম্য ঈশ্বর সম্বন্ধে বর্ণনা করছিলেন।

মৃতদের অবস্থা কী?

ফাইলো শিখিয়েছিলেন যে, সাইকি হচ্ছে দেহ থেকে আলাদা কিছু। তিনি মানুষকে “দেহ ও সাইকির সমন্বয়ে গঠিত” বলে বর্ণনা করেন। এমন কিছু কি আছে, যা মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে? ফাইলোর ব্যাখ্যা লক্ষ করুন: “আমরা যখন জীবিত থাকি, তখন আমাদের দেহ যদিও জীবিত থাকে কিন্তু আমাদের সাইকি মৃত থাকে ও আমাদের দেহের মধ্যে সমাহিত থাকে যেন কবরে রয়েছে। কিন্তু যদি এটা [দেহ] মারা যায়, তা হলে আমাদের সাইকি এর প্রকৃত জীবন অনুসারে বেঁচে থাকবে, সেই মন্দতা ও মৃতদেহ থেকে মুক্তি লাভ করবে, যেখানে এটা বন্দি অবস্থায় ছিল।” ফাইলোর কাছে সাইকির মৃত্যু ছিল প্রতীকী বিষয়। প্রকৃতপক্ষে এটা কখনোই মারা যায় না। এটা অমর।

কিন্তু, বাইবেল কী শিক্ষা দেয়? উপদেশক ৯:৫, ১০ পদ বলে: “কারণ জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না, এবং তাহাদের আর কোন ফলও হয় না, কারণ লোকে তাহাদের বিষয় ভুলিয়া গিয়াছে। তোমার হস্ত যে কোন কার্য্য করিতে পায়, তোমার শক্তির সহিত তাহা কর; কেননা তুমি যে স্থানে যাইতেছ, সেই পাতালে কোন কার্য্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা, কিছুই নাই।” বাইবেল অনুসারে মানুষের কোনো অমর অংশ থাকে না, যা মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে। *

ফাইলোর মৃত্যুর পর যিহুদিরা তার কথার প্রতি তেমন মনোযোগ দেয়নি। কিন্তু, খ্রিস্টীয়জগৎ উৎসাহ নিয়ে তার শিক্ষাকে মেনে নিয়েছিল। ইউসেবিয়াস এবং গির্জার অন্যান্য নেতারা বিশ্বাস করেছিল যে, ফাইলো খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। জেরম তাকে গির্জার ফাদারদের মধ্যে একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিলেন। যিহুদিরা নয়, বরং ধর্মভ্রষ্ট খ্রিস্টানরা ফাইলোর লেখাগুলো সংরক্ষণ করেছিল।

ফাইলোর লেখাগুলো এক ধর্মীয় বিপ্লবের দিকে চালিত করেছিল। তার প্রভাব নামধারী খ্রিস্টানদের আত্মার অমরত্বের অশাস্ত্রীয় মতবাদকে মেনে নিতে চালিত করেছিল। আর লগোস (অথবা বাক্য) সম্বন্ধে ফাইলোর শিক্ষা ধর্মভ্রষ্ট খ্রিস্টধর্মের বাইবেল বহির্ভূত এক মতবাদ, ত্রিত্বের ধারণাকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ভূমিকা পালন করেছিল।

ভ্রান্ত হবেন না

ইব্রীয় শাস্ত্র অধ্যয়ন করে ফাইলো নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তিনি “কোনো রূপকধর্মী অর্থকে বাদ দেননি, যা হয়তো স্পষ্ট ভাষার আড়ালে চাপা পড়ে যেতে পারে।” কিন্তু দ্বিতীয় বিবরণ ৪:২ পদে যেমন পাওয়া যায়, ঈশ্বরের ব্যবস্থা সম্বন্ধে মোশি বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যাহা আজ্ঞা করি, সেই বাক্যে তোমরা আর কিছু যোগ করিবে না, এবং তাহার কিছু হ্রাস করিবে না। আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আদেশ করিতেছি, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেই সকল আজ্ঞা পালন করিবে।” আপাতদৃষ্টিতে ভাল উদ্দেশ্য নিয়েই ফাইলো অনুমানের আবরণগুলো যুক্ত করেছিলেন, যেগুলো এক ঘন কুয়াশার মতো ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের স্পষ্ট নির্দেশনাকে গুপ্ত রেখেছিল।

“আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পরাক্রম ও আগমনের বিষয় যখন তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছিলাম, তখন আমরা কৌশল-কল্পিত গল্পের অনুগামী হই নাই,” প্রেরিত পিতর বলেছিলেন। (২ পিতর ১:১৬) ফাইলোর লেখাগুলোর বিপরীতে, প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রতি পিতরের নির্দেশনা সত্য ঘটনা ও ঈশ্বরের আত্মা অর্থাৎ ‘সত্যের আত্মার’ পরিচালনার ওপর ভিত্তি করে ছিল, যা তাদেরকে সত্যের দিকে চালিত করেছিল।—যোহন ১৬:১৩.

যদি আপনি বাইবেলের ঈশ্বরকে উপাসনা করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তা হলে আপনার সত্য নির্দেশনা দরকার, মানব চিন্তার ওপর ভিত্তি করা কোনো ব্যাখ্যা নয়। যিহোবা ও তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে আপনাকে সঠিক জ্ঞান নিতে হবে এবং একজন আন্তরিক ছাত্র হওয়ার জন্য আপনাকে নম্র হতে হবে। যদি আপনি এই গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করেন, তা হলে “পবিত্র শাস্ত্রকলাপ” সম্বন্ধে জানতে পারবেন, ‘যে সকল খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাস দ্বারা আপনাকে পরিত্রাণের নিমিত্ত জ্ঞানবান্‌ করিতে পারে।’ আপনি দেখতে পাবেন যে, ঈশ্বরের বাক্য আপনাকে “সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” করতে পারে।—২ তীমথিয় ৩:১৫-১৭.

[পাদটীকা]

^ সাইকি বা নেফিসের বিষয়ে ১৯১০ সালের যিহুদি বিশ্বকোষ (ইংরেজি) এই মন্তব্য করে: “মানুষ মারা যাওয়ার পরও নেফিস বেঁচে থাকে এই শিক্ষাটা সরল বিশ্বাসের পরিবর্তে দার্শনিক বা ঈশ্বরতাত্ত্বিক অনুমান থেকে এসেছে আর পবিত্র শাস্ত্রের কোথাও এই শিক্ষা প্রকাশ করা হয়নি।”

[১০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

ফাইলো যে-শহরে বাস করতেন

ফাইলো মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় বসবাস করতেন এবং সেখানে কাজ করতেন। শত শত বছর ধরে পৃথিবীর মধ্যে এই শহর বইপত্র এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলোচনার রাজধানী ছিল।

ছাত্ররা, সেই শহরের স্কুলগুলোর বিখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করত। আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি বিশ্ববিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। এর সংগ্রহ বৃদ্ধি পেয়ে লক্ষ লক্ষ কপি হয়েছিল, কারণ লাইব্রেরিয়ানরা প্রত্যেকটা লিখিত নথির অনুলিপি সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিল।

পরে, আলেকজান্দ্রিয়া এবং এর জ্ঞানভাণ্ডারের মূল্য ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছিল। রোমের সম্রাটরা তাদের নিজের শহরকে প্রাধান্য দিয়েছিল এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থানান্তরিত করে ইউরোপে নিয়ে এসেছিল। সা.কা. সপ্তম শতাব্দীতে আলেকজান্দ্রিয়ার চূড়ান্ত পতন হয়েছিল যখন আক্রমণকারীরা এই শহরকে জয় করেছিল। আজ পর্যন্ত, ইতিহাসবেত্তারা ওই বিখ্যাত লাইব্রেরির ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে, যাদের কেউ কেউ দাবি করে যে, সভ্যতা তখন এক হাজার বছর পিছিয়ে গিয়েছিল।

[সৌজন্যে]

L. Chapons/Illustrirte Familien-Bibel nach der deutschen Uebersetzung Dr. Martin Luthers

[১২ পৃষ্ঠার বাক্স]

আজকে রূপকধর্মী ব্যাখ্যা

রূপক শব্দটির অর্থ হচ্ছে “উপমান ও উপমেয়ের অভেদ কল্পনামূলক অর্থালঙ্কারবিশেষ।” যে-লেখাগুলোতে রূপক বিষয় রয়েছে সেগুলোতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো প্রতীকীভাবে লুক্কায়িত রয়েছে বলে কথিত আছে। আলেকজান্দ্রিয়ার ফাইলোর মতো, কিছু আধুনিক ধর্মীয় শিক্ষক বাইবেলকে ব্যাখ্যা করার জন্য রূপকধর্মী ব্যাখ্যা ব্যবহার করে।

আদিপুস্তক ১-১১ অধ্যায় বিবেচনা করুন, যেখানে সৃষ্টির আরম্ভ থেকে বাবিলের দুর্গের ঘটনায় মানুষদের ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে মানব ইতিহাসের বিবরণ রয়েছে। বাইবেলের সেই অংশের বিষয়ে একটা ক্যাথলিক অনুবাদ দ্যা নিউ আ্যমেরিকান বাইবেল বলে: “যারা এই অধ্যায়গুলোর মধ্যে নিহিত সত্যগুলোকে সংরক্ষণ করবে, সেই ইস্রায়েলীয়দের কাছে এগুলোকে বোধগম্য করে তোলার জন্য সেগুলোকে সেই সময়ে বসবাসকারী লোকেদের মধ্যে বিদ্যমান বস্তুগুলোর দ্বারা প্রকাশ করার প্রয়োজন ছিল। এই কারণে সত্যগুলোকে তাদের সাহিত্যিক আবরণ থেকে স্পষ্টভাবে পৃথক করতে হয়েছিল।” কথিত আছে যে, আদিপুস্তক ১-১১ অধ্যায় আক্ষরিকভাবে নেওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, ঠিক যেমন আবরণ (বস্ত্র) দেহকে আচ্ছাদন করে, তেমনই শব্দগুলো আরও গভীর এক অর্থ অন্তর্ভুক্ত করে।

কিন্তু যিশু শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, আদিপুস্তকের এই শুরুর অধ্যায়গুলো আক্ষিরকভাবেই সত্য ছিল। (মথি ১৯:৪-৬; ২৪:৩৭-৩৯) প্রেরিত পৌল এবং পিতরও একই কথা বলেছিল। (প্রেরিত ১৭:২৪-২৬; ২ পিতর ২:৫; ৩:৬, ৭) আন্তরিক বাইবেল ছাত্ররা সেই ব্যাখ্যাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে, যেগুলো পুরো ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রাখে না।

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত বাতিঘর

[সৌজন্যে]

Archives Charmet/Bridgeman Art Library