সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রাথমিক খ্রিস্টধর্ম একসময় যেখানে সমৃদ্ধি লাভ করেছিল, সেখানে প্রচার কাজ প্রসার করা

প্রাথমিক খ্রিস্টধর্ম একসময় যেখানে সমৃদ্ধি লাভ করেছিল, সেখানে প্রচার কাজ প্রসার করা

প্রাথমিক খ্রিস্টধর্ম একসময় যেখানে সমৃদ্ধি লাভ করেছিল, সেখানে প্রচার কাজ প্রসার করা

 ভূমধ্যসাগরের দিকে বিস্তৃত বুটজুতার আকৃতির উপদ্বীপ ইতালি এমন এক স্থান হয়ে উঠেছে, যেখানে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঘটনাগুলো পৃথিবীর ইতিহাসে প্রভাব বিস্তার করেছে। লক্ষ লক্ষ পর্যটকের জন্য এই স্থান হল একটা চুম্বকের মতো, যারা এর বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য, বিখ্যাত শিল্পকর্ম এবং সুস্বাদু রন্ধনপ্রণালীর দ্বারা আকৃষ্ট হয়। এ ছাড়া, এটা এমন এক দেশ, যেখানে বাইবেলের শিক্ষা উন্নতিলাভ করে চলেছে।

সত্য খ্রিস্টধর্ম সম্ভবত সেই সময় প্রথম রোমে—তখনকার বিশ্বশক্তির রাজধানীতে—পৌঁছেছিল, যখন সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে খ্রিস্টান হয়ে ওঠা যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা যিরূশালেম থেকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে এসেছিল। সা.কা. প্রায় ৫৯ সালে প্রেরিত পৌল প্রথমবারের মতো ইতালি পরিদর্শন করেছিলেন। পূতিয়লীর সমুদ্রোপকূলে তিনি বিশ্বাসী “কয়েক জন ভ্রাতার দেখা” পেয়েছিলেন।—প্রেরিত ২:৫-১১; ২৮:১১-১৬.

যিশু এবং প্রেরিতদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, সা.কা. প্রথম শতাব্দী শেষ হওয়ার আগে, ধর্মভ্রষ্ট দলগুলো ধীরে ধীরে সত্য খ্রিস্টধর্ম পরিত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। কিন্তু, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার আগে যিশুর প্রকৃত শিষ্যরা পৃথিবীব্যাপী—যার মধ্যে ইতালিও রয়েছে—সুসমাচার প্রচারের অগ্রভাগে ছিল।—মথি ১৩:৩৬-৪৩; প্রেরিত ২০:২৯, ৩০; ২ থিষলনীকীয় ২:৩-৮; ২ পিতর ২:১-৩.

শুরু তেমন আশাপ্রদ নয়

১৮৯১ সালে চার্লস টেজ রাসেল, যিনি বাইবেল ছাত্রদের (সেই সময় যিহোবার সাক্ষিরা এই নামে পরিচিত ছিল) পৃথিবীব্যাপী প্রচার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তিনি প্রথমবারের মতো ইতালির কিছু শহর পরিদর্শন করেন। তাকে স্বীকার করতে হয়েছিল যে, তার পরিচর্যার ফলাফল তেমন আশাপ্রদ ছিল না: “আমাদেরকে উৎসাহিত করার মতো ইতালিতে শস্য ছেদনের কোনো আশাই আমরা দেখিনি।” ১৯১০ সালের বসন্তকালে, ভাই রাসেল আবার ইতালিতে আসেন এবং রোমের প্রাণকেন্দ্রে এক শরীরচর্চার স্থানে বাইবেলের বিষয়ে একটা বক্তৃতা দেন। ফলাফল কী হয়েছিল? “সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে,” তিনি বর্ণনা করেন, “সেই সভা বেশ হতাশাজনকই ছিল।”

বস্তুত, কয়েক দশক ধরে ইতালিতে সুসমাচার প্রচার কাজের উন্নতি অনেক ধীর ছিল আর আংশিকভাবে তার কারণ ছিল যিহোবার সাক্ষিরা ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্রের দ্বারা তাড়িত হচ্ছিল। সেই সময়ে ওই দেশে ১৫০ জনের বেশি যিহোবার সাক্ষি ছিল না, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই তাদের সেই আত্মীয় অথবা বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে বাইবেলের সত্য শিখেছিল, যারা বিদেশে বাস করত।

লক্ষণীয় উন্নতি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, বেশ কয়েক জন মিশনারিকে ইতালিতে পাঠানো হয়। কিন্তু, সরকারি দলিলপত্রে প্রাপ্ত চিঠিপত্রে দেখানো হয়েছে যে, ভ্যাটিকানের উচ্চপদস্থ বিশপমণ্ডলী মিশনারিদের বহিষ্কার করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছিল। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, মিশনারিদের সেই দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।

বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও, ইতালির অনেক লোক যিহোবার উপাসনার ‘পর্ব্বতে’ স্রোতের ন্যায় আসতে শুরু করেছিল। (যিশাইয় ২:২-৪) সাক্ষিদের মধ্যে বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য ছিল। ২০০৪ সালে সুসমাচার প্রকাশকদের শীর্ষ সংখ্যা ছিল ২,৩৩,৫২৭ জন, ১ জন সাক্ষির জন্য ২৪৮ জন করে অধিবাসী এবং খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ সভায় উপস্থিত হয়েছিল ৪,৩৩,২৪২ জন। সেখানে যিহোবার সাক্ষিদের ৩,০৪৯টা মণ্ডলী ছিল আর তারা আরামদায়ক কিংডম হলে মিলিত হতো। সম্প্রতি, বিশেষভাবে নির্দিষ্ট কিছু দল উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লাভ করেছে।

অনেক ভাষায় প্রচার করা

আফ্রিকা, এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে অনেক অভিবাসী কাজের খোঁজে বা আরও উন্নত জীবনযাপনের জন্য অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুঃখজনক পরিস্থিতিগুলো থেকে রেহাই পেতে ইতালিতে চলে আসে। কীভাবে এই লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সাহায্য করা যেতে পারে?

ইতালির অনেক সাক্ষি কঠিন ভাষাগুলো যেমন, আম্‌হারিক, আরবি, আলবেনীয়, চাইনিজ, টাগালগ, পাঞ্জাবি, বাংলা এবং সিংহলা ভাষা শেখার প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রহণ করেছে। বিদেশি ভাষাগুলোতে সাক্ষ্য দিতে এই আগ্রহী ব্যক্তিদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য ২০০১ সালের শুরু থেকে বিভিন্ন কোর্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত তিন বছরে, ৩,৭১১ জন সাক্ষি ১৭টা ভাষায় অনুষ্ঠিত ৭৯টা কোর্সে যোগদান করেছে। এটা ২৫টা ভাষায় ১৪৬টা মণ্ডলী এবং ২৭৪টা দল গঠন ও সেগুলোকে শক্তিশালী করতে সম্ভবপর করেছে। এভাবে অনেক আন্তরিক ব্যক্তি সুসমাচার শুনেছে এবং বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছে। এর ফলাফল প্রায়ই অসাধারণ হয়।

যিহোবার সাক্ষিদের একজন পরিচারক, ভারত থেকে আসা জর্জ নামে এক মালায়ালামভাষী ব্যক্তির কাছে বাইবেল সম্বন্ধে কথা বলেছিলেন। কাজের ব্যাপারে বড় বড় সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, জর্জ আনন্দের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন। কয়েক দিন পর, জর্জের বন্ধু গিল নামে পাঞ্জাবিভাষী একজন ভারতীয় ব্যক্তি, কিংডম হলে যান এবং তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয়। গিল তেলুগুভাষী ভারতীয় ব্যক্তি ডেভিডকে সাক্ষিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। শীঘ্রই, ডেভিড বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন। সনি এবং সুবাস নামে আরও দুজন ভারতীয় ব্যক্তি ডেভিডের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকত। তারা দুজনই বাইবেল অধ্যয়নে যোগ দেয়।

কয়েক সপ্তাহ পরে, সাক্ষিরা মারাঠিভাষী এক ব্যক্তি ডালিপের কাছ থেকে একটা ফোন পেয়েছিল। তিনি বলেছিলেন: “আমি জর্জের বন্ধু। আপনারা কি আমাকে বাইবেল শেখাতে পারেন?” এরপর সুমিত নামে তামিলভাষী এক ব্যক্তি বাইবেল অধ্যয়ন করতে চেয়েছিলেন। শেষে, জর্জের আরেকজন বন্ধু টেলিফোন করে বাইবেল অধ্যয়ন করার কথা বলেছিলেন। জর্জ এরপর ম্যাক্স নামে আরেকজন যুবককে কিংডম হলে নিয়ে আসেন। তিনিও বাইবেল অধ্যয়ন করার কথা বলেন। এযাবৎ, ছয়টা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা হচ্ছে এবং আরও চারটে বাইবেল অধ্যয়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেগুলো ইংরেজিতে করা হয়, যদিও উর্দু, তামিল, তেলুগু, পাঞ্জাবি, মালায়ালাম, মারাঠি এবং হিন্দি প্রকাশনাও ব্যবহার করা হয়।

বধির ব্যক্তিরা সুসমাচার “শুনতে” পায়

ইতালিতে ৯০,০০০রেরও বেশি বধির ব্যক্তি রয়েছে। ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে, সাক্ষিরা তাদেরকে বাইবেলের সত্য শেখানোর প্রতি মনোযোগ দিতে শুরু করে। প্রথমে, কিছু বধির সাক্ষি তাদের সেই সমস্ত সহপরিচারককে ইতালীয় সাংকেতিক ভাষা শেখায়, যারা সেই ক্ষেত্রে সাহায্য করতে ইচ্ছুক ছিল। তখন আরও বেশি সংখ্যক বধির লোক বাইবেলের প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছিল। বর্তমানে, ১,৪০০রও বেশি ব্যক্তি, যারা ইতালীয় সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে, তারা খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিচ্ছে। ১৫টা মণ্ডলী এবং ৫২টা দল ইতালীয় সাংকেতিক ভাষায় সভা করে।

প্রথম প্রথম, বধির লোকেদের কাছে প্রচার করা মূলত কয়েক জন সাক্ষির পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করত। কিন্তু ১৯৭৮ সালে, যিহোবার সাক্ষিদের ইতালির শাখা অফিস বধির লোকেদের জন্য সম্মেলনের ব্যবস্থা করতে শুরু করে। সেই বছর মে মাসে ঘোষণা করা হয় যে, মিলানে আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বধির লোকেদের জন্য একাধিক অধিবেশন থাকবে। ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিলানের সম্মেলন হলে বধির লোকেদের জন্য প্রথম সীমা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সেই সময় থেকে শাখা অফিস বৃদ্ধিরত প্রকাশকদের এই ভাষায় তাদের দক্ষতাকে বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করার মাধ্যমে বধির লোকেদের আধ্যাত্মিক পুষ্টির প্রতি গভীর মনোযোগ দিচ্ছে। পরিচর্যায় বধির লোকেদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলো সংগঠিত করার জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে বিশেষ অগ্রগামীদেরকে (পূর্ণসময়ের সুসমাচার প্রচারকদের) কয়েকটা দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। কার্যক্রম দেখার প্রক্রিয়াকে উন্নত করার জন্য তিনটে সম্মেলন হলে সর্বাধুনিক ভিডিও সিস্টেম স্থাপন করা হয়। আর বধির লোকেদের আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর জন্য খ্রিস্টীয় প্রকাশনাদির ভিডিওক্যাসেটগুলোও পাওয়া যাচ্ছে।

পর্যবেক্ষকরা লক্ষ করেছে যে, সাক্ষিরা বধির লোকেদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলোর ভালভাবে যত্ন নিচ্ছে। ইতালীয় বধির সংস্থার দ্বারা প্রকাশিত পারোল এ স্যানি পত্রিকা ক্যাথলিক পাদরির দ্বারা পাঠানো একটা চিঠি থেকে উদ্ধৃত করেছিল: “বধির হওয়া এই অর্থে কঠিন যে, বধির লোকেদের ক্রমাগত মনোযোগের প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, কোনোরকম সমস্যা ছাড়া একা একাই তিনি গির্জাতে আসেন কিন্তু ধর্মানুষ্ঠানে যা পড়া হচ্ছে, ঘোষণা করা হচ্ছে অথবা যে-গান গাওয়া হচ্ছে, এই সমস্তকিছু অনুসরণ করার জন্য তার একজন ব্যাখ্যাকারীর সাহায্যের প্রয়োজন।” ওই পত্রিকাটি আরও বলেছিল যে, সেই প্রধান পাদরি “স্বীকার করেন, দুঃখের বিষয় যে, গির্জা এই অক্ষম লোকেদের যত্ন নেওয়ার জন্য এখনও প্রস্তুত নয় এবং তিনি বলেন যে, অনেক বধির লোক নিজেদের গির্জার চেয়ে যিহোবার সাক্ষিদের কিংডম হলে আরও ভাল যত্ন পেয়ে থাকে।”

বন্দিদের কাছে সুসমাচার প্রচার করা হয়

একজন ব্যক্তি জেলখানায় থেকেও কি স্বাধীন হতে পারেন? হ্যাঁ, কারণ সেই সমস্ত ব্যক্তিকে ‘স্বাধীন করিবার’ ক্ষমতা ঈশ্বরের বাক্যের রয়েছে, যারা এটি গ্রহণ করে এবং এটি তাদের জীবনে প্রয়োগ করে। যিশু “বন্দিগণের কাছে” যে-বার্তা ঘোষণা করেছিলেন, তা পাপ এবং মিথ্যাধর্ম থেকে মুক্ত করেছিল। (যোহন ৮:৩২; লূক ৪:১৬-১৯) ইতালিতে জেলখানায় প্রচার করার মাধ্যমে চমৎকার ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। যিহোবার সাক্ষিদের প্রায় ৪০০ জন পরিচারক বন্দিদের আধ্যাত্মিক সাহায্য জোগানোর জন্য তাদের কাছে সাক্ষাৎ করার বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছে। যিহোবার সাক্ষিরাই ছিল প্রথম ন-ক্যাথলিক সংগঠন, যারা এইরকম অনুমতি চেয়েছিল এবং তা পেয়েছিল।

বাইবেলের বার্তা হয়তো অকল্পনীয় উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। বন্দিরা সহবন্দিদের কাছে যিহোবার সাক্ষিদের বাইবেল শিক্ষার কাজ সম্বন্ধে কথা বলে। এর ফলে, কিছু সহবন্দি একজন সাক্ষি পরিচারককে তাদের কাছে সাক্ষাৎ করার জন্য অনুরোধ করে। অথবা পরিবারের যে-সদস্যরা বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছে, তারা বন্দিদের উৎসাহিত করেছিল যেন তারা সাক্ষিদেরকে তাদের কাছে আসতে অনুরোধ করে। কিছু বন্দি, যারা খুনের দায়ে বা অন্যান্য গুরুতর অপরাধের কারণে আজীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে, তারা অনুতপ্ত হয়েছে এবং তাদের জীবনকে পুরোপুরি পালটে ফেলেছে। এটা তাদেরকে যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করতে এবং বাপ্তিস্ম নিতে প্রস্তুত করে।

বেশ কয়েকটা জেলখানায় বাইবেলের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ার, যিশুর মৃত্যুর স্মরণার্থ সভা উদ্‌যাপন করার এবং যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা উৎপন্ন বাইবেল কার্যক্রমের ভিডিওক্যাসেটগুলো দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশির ভাগ সময়ই, বিরাট সংখ্যক বন্দি এই সভাগুলোতে যোগ দেয়।

জেলখানার লোকেদের ব্যবহারিক উপায়ে সাহায্য করার জন্য সাক্ষিরা ব্যাপকভাবে এমন বিষয়বস্তু সম্বলিত পত্রিকাগুলো বিতরণ করেছে, যেগুলো থেকে সহবন্দিরা সাহায্য পাবে। এই ধরনের একটি পত্রিকা ছিল ২০০১ সালের ৮ই মে সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকা, যা “বন্দিরা কি সংশোধিত হতে পারে?” বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছে। ২০০৩ সালের ৮ই এপ্রিল (ইংরেজি) পত্রিকার সংখ্যাটা “পরিবারের মধ্যে নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার—আপনি কী করতে পারেন?” বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে ছিল। বন্দিদের কাছে হাজার হাজার কপি বিতরণ করা হয়েছিল। এর ফলে কয়েকশো বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা হচ্ছে। কয়েক জন কারারক্ষীও বাইবেলের বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে।

কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি লাভ করার পর, কনস্টানটিনো নামে একজন বন্দি ১৩৮ জন সাক্ষির উপস্থিতিতে সান রিমোর কিংডম হলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। “আমার মনে হয়েছিল যেন আমি স্নেহের দ্বারা আবিষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম,” কনস্টানটিনো বলেছিলেন, যিনি তার বাপ্তিস্মের পর দৃশ্যতই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। স্থানীয় একটা সংবাদপত্র কারাধ্যক্ষের এই কথাগুলো তুলে ধরেছিল: “এটা অনেক আনন্দদায়ক ছিল . . . যে, আমরা এই অনুমতি পেয়েছিলাম। একজন বন্দির সামাজিক, ব্যক্তিগত এবং আধ্যাত্মিক পুনর্বাসনকে উন্নীত করতে পারে এমন সমস্তকিছু বিবেচনা করা উচিত।” বাইবেলের সত্যের সঠিক জ্ঞান কনস্টানটিনোর জীবনকে যেভাবে প্রভাবিত করেছিল, তা দেখে কনস্টানটিনোর স্ত্রী এবং মেয়ে অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছিল: “সে যে পরিবর্তন করেছে, তা দেখে আমরা গর্বিত। সে শান্তিপ্রবণ হয়েছে এবং আমাদের জন্য তার চিন্তা ক্রমাগত বাড়ছে। আমরা তার ওপর আমাদের নির্ভরতাকে এবং তার প্রতি সম্মানকে পুনরুজ্জীবিত করেছি।” তারাও বাইবেল অধ্যয়ন করতে এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করেছে।

সারজো, যিনি চুরি, সশস্ত্র ডাকাতি, মাদকদ্রব্য চোরাচালান এবং খুনের দায়ে দোষী ছিলেন, তাকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তিন বছর ধরে শাস্ত্র অধ্যয়ন এবং তার জীবনে বিরাট পরিবর্তন করার পর, সারজো বাপ্তিস্ম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ইলবা দ্বীপের পোর্টো আতসুরো জেলখানার মধ্যে তিনি হলেন ১৫তম বন্দি, যিনি একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। বেশ কয়েক জন সহবন্দির উপস্থিতিতে তিনি জেলখানার খেলার মাঠে বহনযোগ্য পুলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন।

লেওনার্ডো, যিনি ২০ বছরের দণ্ডাদেশ পেয়েছেন, তিনি পারমা শহরের একটা কিংডম হলে বাপ্তিস্ম নেওয়ার বিশেষ অনুমতি পেয়েছিলেন। স্থানীয় সংবাদপত্রের সাক্ষাৎকারে লেওনার্ডো বলেছিলেন যে, তিনি “এই বিষয়টা স্পষ্ট করতে” চান “যে, তিনি জেলখানার অন্ধকার থেকে রক্ষা পাওয়ার এক উপায় হিসেবে নয় বরং গভীরভাবে অনুভূত আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ করার জন্য একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” লেওনার্ডো বলেছিলেন: “আমার জীবন ছিল ভুলত্রুটিতে পূর্ণ কিন্তু আমি তা পিছনে ফেলে এসেছি। আমি পরিবর্তিত হয়েছি তবে তা রাতারাতি নয়। আমাকে সবসময় ন্যায়নিষ্ঠ থাকতে হবে।”

সালভাটোরি, যিনি খুনের দায়ে দোষী ছিলেন, তিনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সম্বলিত জেলখানা স্পোলিটোতে আছেন। কারাগারের মধ্যে অনুষ্ঠিত তার বাপ্তিস্ম অনেককে প্রভাবিত করেছিল। সেখানকার কারাধ্যক্ষ বলেছিলেন: “বেছে নেওয়ার এক সামাজিক গুরুত্ব, যা সকলের প্রতি আরও উত্তম আচরণ করার দিকে পরিচালিত করে, তা করার জন্য উৎসাহিত করা উচিত আর সেটা জেলখানার এবং সমস্ত সমাজের উপকারের জন্য।” সালভাটোরি যে-পরিবর্তনগুলো করেছে, সেটার ফলস্বরূপ তার স্ত্রী এবং এক মেয়ে এখন যিহোবার সাক্ষিদের সভাগুলোতে যোগ দিচ্ছে। সালভাটোরি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন এমন একজন বন্দি যিহোবার একজন উৎসর্গীকৃত দাস হিসেবে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন।

প্রাথমিক খ্রিস্টধর্মের কিছু প্রসার এবং বৃদ্ধি ইতালিতে হয়েছিল। (প্রেরিত ২:১০; রোমীয় ১:৭) এই শস্য ছেদনের সময়ে, সেই একই এলাকাগুলোতে ক্রমাগত আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি এবং প্রসার হচ্ছে, যেখানে পৌল এবং তার সহখ্রিস্টানরা সুসমাচার প্রচার করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেছিল।—প্রেরিত ২৩:১১; ২৮:১৪-১৬.

[১৩ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

ইতালি

রোম

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বিটন্‌টো সম্মেলন হল এবং রোমে একটা ইতালীয় সাংকেতিক ভাষার মণ্ডলী

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাইবেলের সত্যের মাধ্যমে বন্দিরা “স্বাধীন” হচ্ছে

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সেই জায়গায় ক্রমাগত আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি হচ্ছে, যেখানে একসময় প্রাথমিক খ্রিস্টধর্ম সমৃদ্ধি লাভ করেছিল