বাবামারা, আপনাদের পরিবারের চাহিদাগুলোর যত্ন নিন
বাবামারা, আপনাদের পরিবারের চাহিদাগুলোর যত্ন নিন
“কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের . . . জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে।”—১ তীমথিয় ৫:৮.
১, ২. (ক) পরিবারগুলোকে একসঙ্গে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত হতে দেখা কেন উৎসাহজনক? (খ) সময়মতো সভাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য পরিবারগুলোকে যেসমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়, সেগুলোর কয়েকটা কী?
সভা শুরু হওয়ার আগে আপনি যখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর চারিদিকে চোখ বুলান, তখন আপনি হয়তো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটী কাপড় পরিহিত ছেলেমেয়েদের দেখতে পান, যারা তাদের বাবামার সঙ্গে তাদের জায়গায় বসে আছে। এই পরিবারগুলোর মধ্যে যে-প্রেম প্রকাশ পায়—যিহোবা এবং পরস্পরের প্রতি—তা দেখা কি আনন্দদায়ক নয়? কিন্তু, একটা পরিবারকে সময়মতো সভাগুলোতে উপস্থিত হওয়ার জন্য কতটা প্রচেষ্টা করতে হয়, তা ভুলে যাওয়া খুবই সহজ।
২ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, বাবামা সারাদিন অনেক ব্যস্ত থাকে আর সভার দিনগুলোতে পারিবারিক জীবন আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে ওঠে। খাবার তৈরি করতে হয়, ঘরের টুকিটাকি কাজ সারতে হয়, হোমওয়ার্ক শেষ করতে হয়। বাবামারা প্রত্যেকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, খাবারদাবার খাওয়া এবং সময়মতো প্রস্তুত হওয়ার বিষয়টা নিশ্চিত করে সবচেয়ে গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকে। অবশ্য, ছেলেমেয়েদের বেলায় একেবারে অসময়ে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতে পারে। বড় ছেলে খেলার সময় প্যান্ট ছিঁড়ে ফেলেছে। ছোট জন খাবার ফেলে দিয়েছে। ছেলেমেয়েরা খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে। (হিতোপদেশ ২২:১৫) ফল কী হয়? এমনকি বাবামার ভেবেচিন্তে করা পরিকল্পনাও হয়তো ভেস্তে যায়। তা সত্ত্বেও, সেই পরিবার প্রায় সবসময়ই সভা শুরু হওয়ার অনেক আগেই কিংডম হলে উপস্থিত থাকে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ, বছরের পর বছর ধরে তাদেরকে সেখানে দেখা কতই না উৎসাহজনক, যখন ছেলেমেয়েরা যিহোবাকে সেবা করার জন্য বড় হতে থাকে!
৩. কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবা পরিবারগুলোকে উচ্চমূল্য দেন?
৩ যদিও একজন বাবা অথবা মা হিসেবে আপনার কাজ মাঝে মাঝে অত্যন্ত কঠিন এমনকি ক্লান্তিকর হয়ে থাকে কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যিহোবা আপনার প্রচেষ্টাকে উচ্চমূল্য দেন। যিহোবাই হলেন পরিবার ব্যবস্থার উদ্যোক্তা। তাই, তাঁর বাক্য বলে যে, প্রত্যেক পরিবার যিহোবার কাছ থেকে “নাম”—এর অস্তিত্ব—“পাইয়াছে।” (ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫) তাই বাবামারা, আপনারা যখন পরিবারে আপনাদের ভূমিকা সঠিক উপায়ে পালন করার চেষ্টা করেন, তখন আপনারা নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম প্রভুকে সম্মান দেন। (১ করিন্থীয় ১০:৩১) এটা কি এক বিশেষ সুযোগ নয়? তাই, বাবামাদেরকে যিহোবা যে-কার্যভার দিয়েছেন, তা বিবেচনা করা আমাদের জন্য উপযুক্ত। এই প্রবন্ধে, আমরা পরিবারের জন্য চিন্তা করার বা পরিবারের যত্ন নেওয়ার বিষয়টা বিবেচনা করব। আসুন আমরা এমন তিনটে উপায় পর্যালোচনা করি, যে-উপায়গুলোতে বাবামারা যত্ন নেবেন বলে ঈশ্বর আশা করেন।
বস্তুগত দিক দিয়ে জোগানো
৪. পরিবারে সন্তানদের চাহিদাগুলোর যত্ন নেওয়ার বিষয়ে যিহোবা কোন ব্যবস্থাগুলো করেছেন?
৪ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।” (১ তীমথিয় ৫:৮) পৌল যখন এখানে “কেহ” শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন, তখন তার মনে কার কথা ছিল? পরিবারের মস্তক, সাধারণত বাবার কথা। ঈশ্বর স্ত্রীকেও তার স্বামীর সহায়ক হিসেবে এক মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকা দিয়েছেন। (আদিপুস্তক ২:১৮) বাইবেলের সময়ের স্ত্রীরা প্রায়ই পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের স্বামীদের সাহায্য করত। (হিতোপদেশ ৩১:১৩, ১৪, ১৬) আজকে একক বাবা অথবা একক মা রয়েছে, এমন পরিবারগুলো আরও অনেক বেশি দেখা যায়। * অনেক একক খ্রিস্টান বাবা অথবা মা তাদের পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রশংসাযোগ্য কাজ করে। অবশ্য, বাবামা দুজনেই থাকবে এবং বাবা নেতৃত্ব নেবেন এমন এক পরিবারই হল আদর্শ পরিবার।
৫, ৬. (ক) নিজেদের পরিবারের জন্য বস্তুগত বিষয় জোগানোর চেষ্টা করে, এমন ব্যক্তিরা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়, সেগুলোর কয়েকটা কী? (খ) জাগতিক কাজের প্রতি কোন দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা খ্রিস্টান জোগানদাতাদের অটল থাকতে সাহায্য করবে?
৫ প্রথম তীমথিয় পাঁচ অধ্যায় ৮ পদে কোন ধরনের যত্ন নেওয়ার কথা পৌলের মনে ছিল? প্রসঙ্গ বলে যে, তিনি সরাসরি পরিবারের বস্তুগত চাহিদাগুলোর বিষয়ে বলছিলেন। আজকের জগতে, পরিবারের একজন মস্তককে হয়তো সেই বিষয়গুলো জোগাতে গিয়ে অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হয়। পৃথিবীব্যাপী অর্থনৈতিক সমস্যা খুবই সাধারণ বিষয় যেমন চাকরি থেকে ছাঁটাই, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, জীবনযাপনের খরচ বৃদ্ধি। এই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখে অটল থাকার জন্য কী একজন জোগানদাতাকে সাহায্য করতে পারে?
৬ একজন জোগানদাতার মনে রাখা উচিত যে, তিনি যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত এক কার্যভার পালন করছেন। পৌলের অনুপ্রাণিত বাক্য দেখায় যে, যে-ব্যক্তি এই আদেশ পালন করতে সমর্থ অথচ তা করতে প্রত্যাখ্যান করেন, তিনি এমন ব্যক্তির তুল্য যিনি ‘বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছেন।’ একজন খ্রিস্টান ঈশ্বরের সামনে এইরকম এক অবস্থান এড়িয়ে চলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। কিন্তু দুঃখজনক যে, আজকের জগতে অনেক লোক “স্নেহরহিত।” (২ তীমথিয় ৩:১, ৩) বস্তুতপক্ষে, অনেক বাবা তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলে তাদের পরিবারকে অসহায় অবস্থার মধ্যে ফেলে রাখে। খ্রিস্টান স্বামীরা তাদের নিজেদের পরিবারের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে এইরকম নির্মম, অবহেলাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখে না। খ্রিস্টান জোগানদাতারা তাদের অনেক সহকর্মীর বিপরীতে, এমনকি সবচেয়ে ছোট কাজগুলোকেও মর্যাদাপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে, যিহোবা ঈশ্বরকে খুশি করার এক উপায় হিসেবে দেখে থাকে, যেহেতু এটা তাদেরকে নিজ প্রিয়জনদের যত্ন নিতে সমর্থ করে।
৭. বাবামাদের যিশুর উদাহরণ গভীরভাবে চিন্তা করা কেন উপযুক্ত?
৭ এ ছাড়া, পরিবারের মস্তকরা যিশুর নিখুঁত উদাহরণ গভীরভাবে চিন্তা করেও সাহায্য পেতে পারে। মনে রাখবেন যে, বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে যিশুকে আমাদের “সনাতন পিতা” বলে উল্লেখ করে। (যিশাইয় ৯:৬, ৭) “শেষ আদম” হিসেবে যিশু কার্যকারীভাবে সেই লোকেদের পিতা হিসেবে ‘প্রথম “মনুষ্য” আদমের’ স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন, যারা তাঁর ওপর বিশ্বাস অনুশীলন করে। (১ করিন্থীয় ১৫:৪৫) আদম, যে কিনা স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিল, তার বিপরীতে যিশু হলেন আদর্শ পিতা। বাইবেল তাঁর সম্বন্ধে বলে: “তিনি আমাদের নিমিত্তে আপন প্রাণ দিলেন, ইহাতে আমরা প্রেম জ্ঞাত হইয়াছি।” (১ যোহন ৩:১৬) হ্যাঁ, অন্যদের জন্য যিশু স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেইসঙ্গে তিনি রোজ অন্যদের ছোটখাটো চাহিদাগুলোকেও নিজের প্রয়োজনের চেয়ে আগে রাখতেন। বাবামারা, আপনারা যদি সেই আত্মত্যাগমূলক মনোভাব অনুকরণ করেন, তা হলে সেটা আপনাদের এবং আপনাদের পরিবারের জন্য উপকার নিয়ে আসবে।
৮, ৯. (ক) বাবামারা নিঃস্বার্থপরভাবে তাদের বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া সম্বন্ধে পাখিদের কাছ থেকে কী শিখতে পারে? (খ) কীভাবে অনেক খ্রিস্টান বাবামা এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখাচ্ছে?
৮ ঈশ্বরের বিপথগামী লোকেদের প্রতি বলা যিশুর এই কথাগুলো থেকে নিঃস্বার্থ প্রেম সম্বন্ধে বাবামারা অনেক কিছু শিখতে পারে: “কুক্কুটী যেমন আপন শাবকদিগকে পক্ষের নীচে একত্র করে, তদ্রূপ আমিও কত বার তোমার সন্তানদিগকে একত্র করিতে ইচ্ছা করিয়াছি।” (মথি ২৩:৩৭) যিশু এখানে একটা মা মুরগির স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছেন, যে তার পাখা দিয়ে তার বাচ্চাদের আশ্রয় দিচ্ছে। সত্যিই, বাবামারা এমন একটা মা মুরগির রক্ষা করার সহজাত প্রবৃত্তি থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে, যে তার বাচ্চাদের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করার জন্য সহজেই নিজেকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। কিন্তু, মা অথবা বাবা পাখিরা রোজ যা করে, সেটাও দেখার মতো উল্লেখযোগ্য বিষয়। খাবারের সন্ধানে তারা অবিরাম এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় উড়ে যায়। এমনকি চরম পরিশ্রান্তির সময়ও তারা তাদের বাচ্চাদের হাঁ করা ঠোঁটে খাবার তুলে দেয়, যারা তা খাওয়ার পর সাধারণত আরও খাওয়ার জন্য কলরব করতে থাকে। যিহোবার অনেক সৃষ্টিই যেভাবে তাদের বাচ্চাদের চাহিদাগুলোর যত্ন নেয়, তা দেখায় যে তারা “প্রবৃত্তিগতভাবে বুদ্ধিমান।”—হিতোপদেশ ৩০:২৪, NW.
৯ একইভাবে, সারা পৃথিবীর খ্রিস্টান বাবামারা প্রশংসনীয়রূপে আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখায়। আপনাদের সন্তানদের ওপর কোনো ক্ষতি আসতে দেওয়ার চেয়ে বরং আপনারা ক্ষতি ভোগ করতে রাজি আছেন। অধিকন্তু, আপনাদের পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য আপনারা রোজ স্বেচ্ছায় আত্মত্যাগ করে থাকেন। আপনাদের মধ্যে অনেকে পরিশ্রান্তজনক বা ক্লান্তিকর কাজ করার জন্য খুব সকালে ওঠেন। পুষ্টিকর খাবার জোগানোর জন্য পরিশ্রম করেন। আপনার সন্তানরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামাকাপড়, আরামদায়ক বাসস্থান এবং পর্যাপ্ত শিক্ষা পাচ্ছে কি না, সেই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য আপনারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। আর আপনারা তা দিনের পর দিন এবং বছরের পর বছর ধরে করে চলেছেন। নিশ্চিতভাবেই, এই ধরনের আত্মত্যাগ এবং ধৈর্য যিহোবাকে খুশি করে! (ইব্রীয় ১৩:১৬) কিন্তু, একইসঙ্গে আপনি মনে রাখেন যে, আপনার পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ উপায় রয়েছে।
আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে জোগানো
১০, ১১. মানুষের চাহিদাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী এবং সন্তানদের এই চাহিদা পূরণ করার জন্য বাবামাকে প্রথমে কী করতে হবে?
১০ বস্তুগত দিক দিয়ে জোগানোর চেয়ে আরও বেশি অপরিহার্য হল আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে জোগানো। যিশু বলেছিলেন: “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।” (মথি ৪:৪; ৫:৩) বাবামারা, আপনারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে জোগানোর জন্য কী করতে পারেন?
১১ এই বিষয়ে, সম্ভবত দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫-৭ পদের মতো শাস্ত্রের আর কোনো অংশ এত ঘন ঘন উদ্ধৃত করা হয় না।। দয়া করে আপনার বাইবেল খুলুন এবং সেই পদগুলো পড়ুন। লক্ষ করুন যে, প্রথমে বাবামাদের বলা হয়েছে যাতে তারা নিজেদের আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা করে, যিহোবার প্রতি ভালবাসা গড়ে তোলে এবং তাঁর কথাগুলো হৃদয়ে নেয়। হ্যাঁ, আপনাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের ঐকান্তিক ছাত্র হতে হবে, নিয়মিতভাবে বাইবেল পড়তে হবে এবং এটি নিয়ে ধ্যান করতে হবে যাতে আপনারা যিহোবার পথ, নীতি এবং আইনগুলোর প্রতি প্রকৃত বোধগম্যতা ও ভালবাসা বৃদ্ধি করতে পারেন। এর ফলে, আপনাদের হৃদয় এত চমৎকার বাইবেলের সত্য দ্বারা পূর্ণ হবে যে, আপনারা যিহোবার জন্য আনন্দ, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা বোধ করবেন। আপনাদের সন্তানদের হৃদয়ে গেঁথে দেওয়ার জন্য অনেক ভাল ভাল বিষয় আপনাদের জানা থাকবে।—লূক ৬:৪৫.
১২. সন্তানদেরকে বাইবেলের সত্যগুলো যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে বাবামারা কীভাবে যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারে?
১২ আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় বাবামারা প্রতিটা সুযোগে তাদের সন্তানদের যিহোবার বাক্য “যত্নপূর্বক শিক্ষা” দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭ পদের পরামর্শ প্রয়োগ করতে প্রস্তুত থাকে। “যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা” দেওয়ার মানে হল, পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া এবং হৃদয়ে ছাপ ফেলা। যিহোবা ভালভাবে জানেন যে, আমাদের সকলের—বিশেষত সন্তানদের—শেখার জন্য পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন। তাই, যিশু তাঁর পরিচর্যায় পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর শিষ্যদেরকে গর্বিত এবং প্রতিযোগীপূর্ণ হওয়ার পরিবর্তে বরং নম্র হওয়ার জন্য শিক্ষা দেওয়ার সময় একই নীতি পুনরাবৃত্তি করার জন্য তিনি বিভিন্ন উপায় খুঁজে নিয়েছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়ে, দৃষ্টান্তের মাধ্যমে এবং নমুনা দেখিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। (মথি ১৮:১-৪; ২০:২৫-২৭; যোহন ১৩:১২-১৫) তবে উল্লেখযোগ্য যে, যিশু কখনো ধৈর্যের অভাব দেখাননি। একইভাবে, সন্তানদের মৌলিক সত্যগুলো শেখানোর জন্য বাবামাদের বিভিন্ন উপায় খুঁজে নিতে হবে এবং যিহোবার নীতিগুলো সন্তানরা বোঝা ও প্রয়োগ না করা পর্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে সেগুলো পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
১৩, ১৪. কিছু উপলক্ষ কী, যখন বাবামারা তাদের সন্তানদের বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে যত্নপূর্বক শিক্ষা দিতে পারে এবং কোন সহায়কগুলো ব্যবহার করে?
১৩ এই ধরনের শিক্ষার জন্য পারিবারিক অধ্যয়নের সময়গুলো হল আদর্শ উপলক্ষ। বস্তুতপক্ষে, নিয়মিত, গঠনমূলক এবং সুখী পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়ন পরিবারের আধ্যাত্মিকতার মূল চাবিকাঠি। যিহোবার সংগঠনের দ্বারা জোগানো সাহিত্যাদি ব্যবহার করে এবং অধ্যয়নগুলোকে সন্তানদের উপযোগীমতো তৈরি করে, সারা পৃথিবীর খ্রিস্টান পরিবারগুলো এই ধরনের অধ্যয়নে আনন্দ পায়। এই ক্ষেত্রে “মহান শিক্ষকের কাছ থেকে শেখো (ইংরেজি) বইটি এক উল্লেখযোগ্য দান, যেমনটা হয়েছে যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে (ইংরেজি) বইটি। * কিন্তু, সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য পারিবারিক অধ্যয়নই একমাত্র সময় নয়।
১৪ দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭ পদ যেমন দেখায় যে, এমন অনেক উপলক্ষ রয়েছে, যখন আপনারা বাবামা হিসেবে আপনাদের সন্তানদের সঙ্গে আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন। একসঙ্গে ভ্রমণ করার সময়, একসঙ্গে কাজ করার সময় অথবা একসঙ্গে আনন্দদায়ক সময় কাটানোর সময় আপনারা হয়তো আপনাদের সন্তানদের আধ্যাত্মিক চাহিদার যত্ন নেওয়ার সুযোগগুলো খুঁজে পেতে পারেন। অবশ্য, আপনাদের সন্তানদেরকে বাইবেলের সত্যের বিষয়ে অবিরত “ভাষণ” দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং, আপনাদের পারিবারিক কথাবার্তাকে গঠনমূলক এবং আধ্যাত্মিক পর্যায়ে রাখুন। উদাহরণস্বরূপ, সচেতন থাক! পত্রিকার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়বস্তুর ওপর প্রচুর প্রবন্ধ রয়েছে। এই প্রবন্ধগুলো যিহোবার সৃষ্ট পশুপাখি, সারা পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় স্থানগুলো এবং মানব সংস্কৃতি ও জীবনধারার বিভিন্ন অপূর্ব দিক নিয়ে কথা বলার পথ খুলে দেয়। এই ধরনের কথাবার্তা হয়তো অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদেরকে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর দ্বারা জোগানো সাহিত্যাদি আরও বেশি করে পড়ার জন্য পরিচালিত করতে পারে।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.
১৫. খ্রিস্টীয় পরিচর্যাকে আগ্রহজনক এবং পরিতৃপ্তিদায়ক হিসেবে দেখার জন্য বাবামারা কীভাবে তাদের সন্তানদেরকে সাহায্য করতে পারে?
১৫ আপনাদের সন্তানদের সঙ্গে গঠনমূলক কথাবার্তায় রত থাকা আপনাদের আরেকটা আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করবে। খ্রিস্টান ছেলেমেয়েদের অন্যদের সঙ্গে তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে কার্যকারীভাবে কথা বলতে শিখতে হবে। প্রহরীদুর্গ অথবা সচেতন থাক! পত্রিকার কিছু আগ্রহজনক বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় আপনি হয়তো বিষয়বস্তুকে পরিচর্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ খুঁজতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন: “এটা কি অপূর্ব হতো না যদি আরও বেশি লোক যিহোবা সম্বন্ধে এই বিষয়টা জানত? কীভাবে আমরা এই বিষয়ে আগ্রহী কাউকে খুঁজে পেতে পারি বলে তোমার মনে হয়?” এই ধরনের আলোচনা অল্পবয়স্কদের মধ্যে অন্যদের সঙ্গে সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার জন্য আরও বেশি আগ্রহ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, যেগুলো তারা শিখছে। পরে, আপনাদের সন্তানরা যখন আপনাদের সঙ্গে পরিচর্যায় যায়, তখন তারা এই ধরনের কথাবার্তাকে কাজে পরিণত হওয়ার জীবন্ত উদাহরণ দেখতে পায়। এ ছাড়া, তারা এও শিখতে পারে যে, পরিচর্যা হল এক আগ্রহজনক এবং সুখকর কাজ, যা প্রচুর পরিতৃপ্তি এবং আনন্দ নিয়ে আসে।—প্রেরিত ২০:৩৫, NW.
১৬. বাবামার প্রার্থনা শুনে সন্তানরা কী শিখতে পারে?
১৬ এ ছাড়া, প্রার্থনা করার সময়ও বাবামারা তাদের সন্তানদের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলোর যত্ন নেয়। যিশু তাঁর শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন যে, কীভাবে প্রার্থনা করতে হয় আর তিনি তাদের সঙ্গে অনেক বার প্রার্থনা করেছিলেন। (লূক ১১:১-১৩) যিহোবার নিজ পুত্রের সঙ্গে প্রার্থনায় যোগ দিয়ে তারা কতটা শিখেছিল, তা একটু ভেবে দেখুন! একইভাবে, আপনাদের সন্তানরা আপনাদের প্রার্থনা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তারা হয়তো শিখতে পারে যে, যিহোবা চান যেন আমরা হৃদয় থেকে মন খুলে কথা বলি, আমাদের যে-উদ্বিগ্নতাই থাকুক না কেন, তা যেন তাঁর কাছে বলি। হ্যাঁ, আপনাদের প্রার্থনা আপনাদের সন্তানদের এক গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক সত্য শিখতে সাহায্য করতে পারে: তারা তাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে এক সম্পর্ক রাখতে পারে।—১ পিতর ৫:৭.
আবেগগত দিক দিয়ে জোগানো
১৭, ১৮. (ক) সন্তানদের প্রতি ভালবাসা দেখানোর গুরুত্ব সম্বন্ধে বাইবেল কী প্রকাশ করে? (খ) সন্তানদের প্রতি ভালবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে বাবাদের কীভাবে যিহোবাকে অনুকরণ করা উচিত?
১৭ অবশ্য সন্তানদের গুরুত্বপূর্ণ আবেগগত চাহিদাও রয়েছে। ঈশ্বরের বাক্য বাবামাদের বলে যে, এই চাহিদা পূরণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, যুবতী স্ত্রীদের উপদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন “সন্তানপ্রিয়া” হয়। তাদের জন্য তা হওয়া, যুবতী মায়েদের সংযত হওয়া বা তাদের চেতনা ফিরে পাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। (তীত ২:৪) বস্তুত, সন্তানের প্রতি ভালবাসা দেখানো হল অনুভূতির বিষয়। এটা একটা সন্তানকে ভালবাসতে শেখায় এবং চিরস্থায়ী উপকার নিয়ে আসে। অন্যদিকে, সন্তানের প্রতি ভালবাসা দেখাতে ব্যর্থ হওয়া হল অজ্ঞানতার কাজ। এটা অনেক দুঃখ নিয়ে আসে এবং যিহোবাকে অনুকরণ করার ব্যর্থতাকে প্রকাশ করে, যিনি আমাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের প্রতি অপরিমেয় ভালবাসা দেখান।—গীতসংহিতা ১০৩:৮-১৪.
১৮ যিহোবা এমনকি তাঁর পার্থিব সন্তানদের প্রতি ভালবাসা দেখানোর ক্ষেত্রে প্রথমে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ১ যোহন ৪:১৯ পদ যেমন বলে, “তিনিই প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন।” বিশেষ করে বাবারা, আপনাদের সন্তানদের সঙ্গে এক ভালবাসার বন্ধন গড়ে তোলার জন্য প্রথমে পদক্ষেপ নিয়ে যিহোবাকে অনুকরণ করা উচিত। বাইবেল বাবাদের জোরালো পরামর্শ দেয় যাতে তারা তাদের সন্তানদের ক্রুদ্ধ না করে, “পাছে তাহাদের মনোভঙ্গ হয়।” (কলসীয় ৩:২১) বাবা অথবা মা তাদের ভালবাসে না বা মূল্য দেয় না, এমন অনুভূতির চেয়ে খুব কমই বিষয় রয়েছে যা সন্তানদের জন্য বেশি ক্রুদ্ধকর। যে-বাবারা তাদের অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে অনিচ্ছুক, তাদের যিহোবার উদাহরণ স্মরণ করা উচিত। যিহোবা তাঁর পুত্রের প্রতি অনুমোদন এবং ভালবাসা প্রকাশ করার জন্য এমনকি স্বর্গ থেকে কথা বলেছিলেন। (মথি ৩:১৭; ১৭:৫) যিশুর জন্য তা কত উৎসাহজনকই না হয়েছিল! একইভাবে, সন্তানরা তাদের বাবামার ভালবাসা এবং অনুমোদনের অকপট অভিব্যক্তি থেকে অনেক শক্তি এবং সাহস পায়।
১৯. শাসন করা কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং খ্রিস্টান বাবামারা কোন ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করে?
১৯ অবশ্য, বাবামার ভালবাসা শুধু মুখে বলার চেয়ে আরও বেশি কিছু। ভালবাসা মূলত কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে জোগানো বাবামার ভালবাসার এক অভিব্যক্তি হতে পারে, বিশেষ করে বাবামারা যখন তা এমন উপায়ে প্রকাশ করে, যা দেখায় যে প্রেমই হল মূল চালিকাশক্তি। সেইসঙ্গে, শাসন করাও বাবামার ভালবাসা প্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ অভিব্যক্তি। বস্তুত, “প্রভু [“যিহোবা,” NW] যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাসন করেন।” (ইব্রীয় ১২:৬) অন্যদিকে, শাসন করতে ব্যর্থ হওয়া বাবামার ঘৃণার প্রকাশ! (হিতোপদেশ ১৩:২৪) “বিচারানুরূপ” শাস্তি দিয়ে যিহোবা সবসময় সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখেন। (যিরমিয় ৪৬:২৮) অসিদ্ধ বাবামার পক্ষে এই ধরনের ভারসাম্য বজায় রাখা সবসময় সহজ নয়। কিন্তু, সেই ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আপনাদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করা উপযুক্ত। দৃঢ় এবং প্রেমময় শাসন সন্তানকে এক সুখী, ফলপ্রদ জীবনযাপনের জন্য গড়ে উঠতে সাহায্য করে। (হিতোপদেশ ২২:৬) প্রত্যেক খ্রিস্টান বাবা অথবা মা কি তার সন্তানের জন্য তা-ই চান না?
২০. বাবামারা কীভাবে তাদের সন্তানদের “জীবন মনোনীত” করার সম্ভাব্য সবচেয়ে উত্তম সুযোগ দিতে পারে?
২০ বাবামারা, আপনারা যখন যিহোবার দেওয়া আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজটা পালন করেন—আপনাদের সন্তানদের বস্তুগত, আধ্যাত্মিক এবং আবেগগত দিক দিয়ে যত্ন নেন—তখন এর পুরস্কার প্রচুর। এভাবে আপনারা আপনাদের সন্তানদের “জীবন মনোনীত” করার এবং এরপর ‘বাঁচিয়া’ থাকার সম্ভাব্য সবচেয়ে উত্তম সুযোগ দেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯) যে-সন্তানরা পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যিহোবাকে সেবা করা এবং জীবনের পথে থাকা বেছে নেয়, তারা তাদের বাবামার জন্য প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসে। (গীতসংহিতা ১২৭:৩-৫) এই ধরনের আনন্দ চিরকাল থাকবে! কিন্তু, অল্পবয়স্করা কীভাবে এখন যিহোবার প্রশংসা করতে পারে? পরের প্রবন্ধ এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
[পাদটীকাগুলো]
^ এই আলোচনায় জোগানদাতা হিসেবে সাধারণত পুরুষকে উল্লেখ করা হবে। কিন্তু, নীতিগুলো সেই খ্রিস্টান নারীদের জন্যও প্রযোজ্য, যারা প্রধান জোগানদাতা হিসেবে কাজ করে।
^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
বাবামারা তাদের সন্তানদের এই উপায়গুলোতে যত্ন নেওয়ার জন্য কী করতে পারে যেমন,
• বস্তুগত দিক দিয়ে?
• আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে?
• আবেগগত দিক দিয়ে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
অনেক পাখি তাদের বাচ্চার জন্য খাবার জোগাড় করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাবামাদের প্রথমে নিজেদের আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধি করতে হবে
[২০, ২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
সন্তানদের সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে শেখানোর জন্য বাবামারা অনেক উপলক্ষ খুঁজে নিতে পারে
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাবামার অনুমোদন থেকে সন্তানরা শক্তি এবং সাহস পায়