সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করা’

‘মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করা’

‘মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করা’

“আহা! পর্ব্বতগণের উপরে তাহারই চরণ কেমন শোভা পাইতেছে, যে . . . মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে।”—যিশাইয় ৫২:৭.

১, ২. (ক) প্রতিদিন কোন ভয়ংকর ঘটনাগুলো ঘটছে? (খ) ক্রমাগত খারাপ খবরগুলো শুনে অনেক লোক কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়?

 আজকে সারা পৃথিবীর লোকেরা মনে করে যে, তারা দুঃসংবাদের মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে। তারা রেডিও খুলেই মারাত্মক রোগ সম্বন্ধে ভয়ংকর খবরগুলো শোনে, যা বিশ্বকে আতঙ্কিত করছে। টেলিভিশনের খবরে তারা এমন ক্ষুধার্ত শিশুদের অবিস্মরণীয় চিত্রগুলো দেখে, যারা সাহায্যের জন্য কাঁদছে। তারা খবরের কাগজ খুলে বোমা হামলার খবর পড়ে, যার ফলে ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে এবং অগণিত নির্দোষ লোক নিহত হচ্ছে।

হ্যাঁ, প্রতিদিনই নানা ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে। এই জগতের দৃশ্যপট নিশ্চিতভাবে—খারাপের দিকে—পরিবর্তিত হচ্ছে। (১ করিন্থীয় ৭:৩১, NW) পশ্চিম ইউরোপীয় একটা সংবাদপত্রিকা উল্লেখ করেছিল যে, মাঝে মাঝে মনে হয় যেন সম্পূর্ণ বিশ্বই “পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হওয়ার পথে।” তাই আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, বৃদ্ধিরত লোকেরা হতাশবোধ করে! একজন ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে টেলিভিশনের খবর সম্বন্ধে একটা সমীক্ষায় যা বলেছিলেন, তা নিঃসন্দেহে লক্ষ লক্ষ লোকের অনুভূতিকেই প্রতিধ্বনিত করে, তিনি বলেছিলেন: ‘আমি খবর দেখার পর, পুরোপুরিভাবে বিষণ্ণ হয়ে পড়ি। সবগুলোই দুঃসংবাদ। এগুলো শুধু অসহায় করে তোলে।’

যে-সংবাদ সকলের শোনা দরকার

৩. (ক) বাইবেল কোন সুসমাচার ঘোষণা করে? (খ) কেন আপনি রাজ্যের সুসমাচারকে মূল্যবান বলে মনে করেন?

এই ধরনের এক বিষণ্ণ জগতে, কোনো ভাল সংবাদ কি পাওয়া যেতে পারে? বাস্তবিকই পাওয়া যেতে পারে! এটা জানা সান্ত্বনাদায়ক যে, বাইবেল সুসমাচার বা সুসংবাদ ঘোষণা করে। সংবাদটা হল যে, অসুস্থতা, ক্ষুধা, অপরাধ, যুদ্ধ এবং সমস্ত ধরনের উৎপীড়ন ঈশ্বরের রাজ্যের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে। (গীতসংহিতা ৪৬:৯; ৭২:১২) এই ধরনের সংবাদই কি সকলের শোনা দরকার নয়? যিহোবার সাক্ষিরা ঠিক তা-ই মনে করে। অতএব, সমস্ত জাতির লোকেদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার পৌঁছে দিতে তাদের ক্রমাগত প্রচেষ্টার জন্য তারা সুপরিচিত।—মথি ২৪:১৪.

৪. আমাদের পরিচর্যার কোন দিকগুলো আমরা এই প্রবন্ধে এবং কোন দিকটা পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করব?

কিন্তু, এই সুসমাচার প্রচারে—এমনকি কম সাড়া দেয় এমন এলাকাগুলোতেও—ক্রমাগত সন্তুষ্টিজনক এবং অর্থপূর্ণভাবে অংশ নেওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি? (লূক ৮:১৫) নিঃসন্দেহে, আমাদের প্রচার কাজের তিনটে গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে সংক্ষিপ্ত পুনরালোচনা, আমাদের সাহায্য করবে। আমরা পরীক্ষা করতে পারি (১) আমাদের উদ্দেশ্যগুলো বা আমরা কেন প্রচার করি; (২) আমাদের বার্তা বা আমরা কী প্রচার করি; এবং (৩) আমাদের পদ্ধতিগুলো বা আমরা কীভাবে প্রচার করি। আমাদের উদ্দেশ্যগুলোকে বিশুদ্ধ, আমাদের বার্তাকে স্পষ্ট এবং আমাদের পদ্ধতিগুলোকে কার্যকারী করার দ্বারা আমরা বিভিন্ন ধরনের লোকেদের সর্বোত্তম সংবাদ বা সমাচার—ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার—শোনার সুযোগ দিতে পারি। *

কেন আমরা সুসমাচার প্রচারে অংশ নিই

৫. (ক) মূলত, কী আমাদের পরিচর্যায় অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করে? (খ) কেন বলা যেতে পারে যে, প্রচার করার বিষয়ে আমাদের বাইবেলের আজ্ঞা মেনে চলা ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসার এক অভিব্যক্তি?

আসুন আমরা প্রথম দিকটা—আমাদের উদ্দেশ্যগুলো—বিবেচনা করি। কেন আমরা সুসমাচার প্রচার করি? যে-কারণে যিশু করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি পিতাকে প্রেম করি।” (যোহন ১৪:৩১; গীতসংহিতা ৪০:৮) মূলত, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালবাসার কারণে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি। (মথি ২২:৩৭, ৩৮) বাইবেল ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা এবং পরিচর্যার মধ্যে এক সম্পর্ক স্থাপন করে, কারণ এটি বলে: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি।” (১ যোহন ৫:৩; যোহন ১৪:২১) ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোর মধ্যে কি ‘গিয়া শিষ্য করিবার’ আজ্ঞাও অন্তর্ভুক্ত? (মথি ২৮:১৯) হ্যাঁ। এটা ঠিক যে, এই কথাগুলো যিশু বলেছিলেন কিন্তু সেগুলো মূলত যিহোবার কাছ থেকেই এসেছে। কীভাবে? যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি আপনা হইতে কিছুই করি না, কিন্তু পিতা আমাকে যেমন শিক্ষা দিয়াছেন, তদনুসারে এই সকল কথা কহি।” (যোহন ৮:২৮; মথি ১৭:৫) তাই, প্রচার করার বিষয়ে তাঁর আজ্ঞা পালন করার মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে দেখাই যে, আমরা তাঁকে ভালবাসি।

৬. কোন কোন উপায়ে ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা আমাদের প্রচার করতে অনুপ্রাণিত করে?

অধিকন্তু, যিহোবার প্রতি ভালবাসা আমাদের প্রচার করতে অনুপ্রাণিত করে কারণ আমরা সেই মিথ্যাগুলোকে প্রতিহত করতে চাই, যেগুলো শয়তান তাঁর বিরুদ্ধে ছড়াচ্ছে। (২ করিন্থীয় ৪:৪) শয়তান ঈশ্বরের শাসনের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। (আদিপুস্তক ৩:১-৫) যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা মানবজাতির সামনে শয়তানের অপবাদগুলোকে উন্মোচন করে দেওয়ায় এবং ঈশ্বরের নামকে পবিত্রীকৃত করায় অংশ নিতে আকুল আকাঙ্ক্ষী। (যিশাইয় ৪৩:১০-১২, NW) এ ছাড়া, আমরা পরিচর্যায় অংশ নিই কারণ আমরা যিহোবার গুণাবলি এবং পথ সম্বন্ধে জেনেছি। আমরা তাঁর নিকটবর্তী বোধ করি এবং আমাদের ঈশ্বর সম্বন্ধে অন্যদেরকে বলার জন্য দৃঢ় ইচ্ছা বোধ করি। বস্তুতপক্ষে, যিহোবার মঙ্গলভাব এবং তাঁর ধার্মিক পথ আমাদের জন্য এমন আনন্দ নিয়ে আসে যে আমরা তাঁর সম্বন্ধে কথা বলা বন্ধ করতে পারি না। (গীতসংহিতা ১৪৫:৭-১২) যারা শুনবে, তাদের কাছে আমরা তাঁর প্রশংসা এবং তাঁর “গুণকীর্ত্তন” করতে তাগিদ অনুভব করি।—১ পিতর ২:৯; যিশাইয় ৪৩:২১.

৭. ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা ছাড়াও, আরেকটা কোন গুরুত্বপূর্ণ কারণে আমরা প্রচার কাজে অংশ নিই?

পরিচর্যায় ক্রমাগত অংশ নেওয়ার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে: আমরা অকপটভাবে সেই লোকেদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসতে চাই, যারা অগণিত দুঃসংবাদের দ্বারা জর্জরিত এবং যারা বিভিন্ন কারণে উৎপীড়ন ভোগ করছে। এই কাজে আমরা যিশুকে অনুকরণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। উদাহরণস্বরূপ, মার্ক ৬ অধ্যায়ে কী বর্ণিত আছে, তা দেখুন।

৮. মার্ক ৬ অধ্যায়ের বিবরণ লোকেদের প্রতি যিশুর অনুভূতি সম্বন্ধে কী দেখায়?

প্রেরিতরা এক প্রচার অভিযান থেকে ফিরে আসে এবং তারা যা কিছু করেছে ও শিক্ষা দিয়েছে, সেই সমস্তই যিশুকে বলে। যিশু লক্ষ করেন যে, প্রেরিতরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে আর সেইজন্য তিনি তাদেরকে তাঁর সঙ্গে এসে ‘কিছু কাল বিশ্রাম করিতে’ বলেন। তাই, তারা একটা নৌকায় চড়ে এক নির্জন স্থানে যেতে থাকে। লোকেরা তাদের অনুসরণ করে তীর বরাবর দৌড়ে যায় এবং শীঘ্রই তাদের ধরে ফেলে। তখন যিশু কী করেন? বিবরণ বলে: “যীশু . . . বিস্তর লোক দেখিয়া তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা পালক-বিহীন মেষপালের ন্যায় ছিল; আর তিনি তাহাদিগকে অনেক বিষয় শিক্ষা দিতে লাগিলেন।” (মার্ক ৬:৩১-৩৪) ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও, করুণা যিশুকে ক্রমাগত সুসমাচার জানাতে প্রেরণা দেয়। স্পষ্টতই, এই লোকেদের জন্য যিশুর গভীর সহমর্মিতা রয়েছে। তিনি তাদের জন্য সমবেদনাবোধ করেন।

৯. মার্ক ৬ অধ্যায়ের বিবরণ থেকে প্রচার করার জন্য সঠিক মনোভাব সম্বন্ধে আমরা কী শিখি?

এই বিবরণ থেকে আমরা কী শিখি? খ্রিস্টান হিসেবে, আমরা সুসমাচার প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার এক বাধ্যবাধকতা বোধ করি। আমরা সুসমাচার প্রচার করার ব্যাপারে আমাদের দায়িত্বকে উপলব্ধি করি কারণ ঈশ্বরের ইচ্ছা এই যেন “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়।” (১ তীমথিয় ২:৪) তবে, আমরা আমাদের পরিচর্যা কেবল কর্তব্যের খাতিরেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সমবেদনার কারণেও সম্পন্ন করে থাকি। যিশুর মতো আমরা যদি লোকেদের জন্য সমবেদনা বোধ করি, তা হলে আমাদের হৃদয় তাদের কাছে ক্রমাগত সুসমাচার জানানোর জন্য আমাদের যথাসাধ্য করতে প্রেরণা দেবে। (মথি ২২:৩৯) পরিচর্যায় রত হওয়ার জন্য এই ধরনের ভাল উদ্দেশ্য থাকা আমাদের ক্ষান্ত না হয়ে সুসমাচার প্রচার করতে প্রেরণা দেবে।

আমাদের বার্তা—ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার

১০, ১১. (ক) আমরা যে-বার্তা প্রচার করি, সেই সম্বন্ধে যিশাইয় কীভাবে বর্ণনা করেন? (খ) কীভাবে যিশু মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করেন এবং আধুনিক দিনের ঈশ্বরের দাসেরা কীভাবে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করেছে?

১০ আমাদের পরিচর্যার দ্বিতীয় দিকটা—আমাদের বার্তা—সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা কী প্রচার করি? আমরা যে-বার্তা ঘোষণা করি, সেই বিষয়ে ভাববাদী যিশাইয় তার এই চমৎকার বর্ণনা দিয়েছিলেন: “আহা! পর্ব্বতগণের উপরে তাহারই চরণ কেমন শোভা পাইতেছে, যে সুসমাচার প্রচার করে, শান্তি ঘোষণা করে, মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, পরিত্রাণ ঘোষণা করে, সিয়োনকে বলে, তোমার ঈশ্বর রাজত্ব করেন।”—যিশাইয় ৫২:৭.

১১ এই শাস্ত্রপদে “তোমার ঈশ্বর রাজত্ব করেন,” এই মূল অভিব্যক্তিটি আমাদের সেই বার্তা সম্বন্ধে মনে করিয়ে দেয়, যা আমাদের ঘোষণা করতে হবে আর তা মূলত ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার। (মার্ক ১৩:১০) এ ছাড়া, লক্ষ করুন যে, এই পদটি আমাদের বার্তার ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করে। যিশাইয় এই ধরনের শব্দগুলো ব্যবহার করেন যেমন “পরিত্রাণ,” “সুসমাচার,” “শান্তি” এবং “মঙ্গলের।” যিশাইয়ের দিনের কয়েক শতাব্দী পরে প্রথম শতাব্দীতে, যিশু খ্রিস্ট মঙ্গলের সুসমাচার—ঈশ্বরের আসন্ন রাজ্য সম্বন্ধে সুসমাচার—ঘোষণা করার ক্ষেত্রে উদ্যোগী এক উদাহরণ স্থাপন করার দ্বারা এই ভবিষ্যদ্বাণী এক উল্লেখযোগ্য উপায়ে পরিপূর্ণ করেছিলেন। (লূক ৪:৪৩) আধুনিক সময়ে, বিশেষভাবে ১৯১৯ সাল থেকে যিহোবার সাক্ষিরা ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠিত রাজ্য ও এটা যে-আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে, সেই সুসমাচার উদ্যোগের সঙ্গে ঘোষণা করার দ্বারা যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করেছে।

১২. যারা রাজ্যের সুসমাচার গ্রহণ করে, তাদের ওপর এর কোন প্রভাব রয়েছে?

১২ যারা এতে সাড়া দেয়, তাদের ওপর রাজ্য সংবাদ কোন প্রভাব ফেলে? যিশুর দিনের মতো আজকেও সুসমাচার প্রত্যাশা ও সান্ত্বনা জোগায়। (রোমীয় ১২:১২; ১৫:৪) এটা সৎহৃদয়ের লোকেদের প্রত্যাশা দেয় কারণ তারা শিখে যে, সামনে যে আরও ভাল সময় অপেক্ষা করছে, তা বিশ্বাস করার দৃঢ় কারণগুলো রয়েছে। (মথি ৬:৯, ১০; ২ পিতর ৩:১৩) এই ধরনের প্রত্যাশা ঈশ্বর ভয়শীল লোকেদের এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করে। গীতরচক বলেন যে, তারা “অশুভ সংবাদেও . . . ভয় করিবে না।”—গীতসংহিতা ১১২:১, ৭.

এমন এক বার্তা, যা “ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের ক্ষত বাঁধিয়া” দিবে

১৩. কীভাবে ভাববাদী যিশাইয় সেই তাৎক্ষণিক আশীর্বাদগুলো সম্বন্ধে বর্ণনা করেছেন, যেগুলো সুসমাচার গ্রহণকারী ব্যক্তিদের ওপর আসে?

১৩ এ ছাড়া, আমরা যে-সুসমাচার প্রচার করি, সেটা যারা শোনে তাদের জন্য তা তাৎক্ষণিক সান্ত্বনা ও আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসে। কীভাবে? ভাববাদী যিশাইয় কয়েকটা আশীর্বাদের কথা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যখন তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “প্রভু সদাপ্রভুর আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কেননা নম্রগণের কাছে সুসমাচার প্রচার করিতে সদাপ্রভু আমাকে অভিষেক করিয়াছেন; তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমি ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের ক্ষত বাঁধিয়া দিই; যেন বন্দি লোকদের কাছে মুক্তি, ও কারাবদ্ধ লোকদের কাছে কারামোচন প্রচার করি; যেন সদাপ্রভুর প্রসন্নতার বৎসর ও আমাদের ঈশ্বরের প্রতিশোধের দিন ঘোষণা করি; যেন সমস্ত শোকার্ত্তকে সান্ত্বনা করি।”—যিশাইয় ৬১:১, ২; লূক ৪:১৬-২১.

১৪. (ক) “ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের ক্ষত বাঁধিয়া” দেওয়া অভিব্যক্তিটি রাজ্যের বার্তা সম্বন্ধে কী ইঙ্গিত দেয়? (খ) কীভাবে আমরা ভগ্নান্তঃকরণ লোকেদের জন্য যিহোবার চিন্তাকে প্রতিফলিত করি?

১৪ এই ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে যিশু “ভগ্নান্তঃকরণ লোকেদের ক্ষত বাঁধিয়া” দিবেন। যিশাইয় কত অর্থপূর্ণ বর্ণনা ব্যবহার করেছেন! বাইবেলের একটা অভিধান অনুসারে, ‘ক্ষত বাঁধিয়া দেওয়া’ হিসেবে অনুবাদিত ইব্রীয় শব্দটি “প্রায়ই কোনো ব্যান্ডেজ ‘বাঁধার’ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় আর এভাবে আহত ব্যক্তির পরিচর্যা করা ও তাকে সুস্থ করা হয়।” একজন যত্নশীল নার্স হয়তো আহত ব্যক্তির ক্ষতস্থানের চারিদিকে এমনভাবে ব্যান্ডেজ জড়িয়ে দিতে পারেন, যাতে এটিকে প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগানো যায়। একইভাবে, যখন রাজ্যের বার্তা প্রচার করা হয়, তখন যত্নশীল প্রকাশকরা সেই সমস্ত সাড়া দানকারী ব্যক্তিকে সমর্থন জোগায়, যারা কোনো না কোনোভাবে কষ্টভোগ করে। আর যাদের প্রয়োজন রয়েছে, তাদের সমর্থন করার মাধ্যমে তারা যিহোবার চিন্তাকে প্রতিফলিত করে। (যিহিষ্কেল ৩৪:১৫, ১৬) গীতরচক ঈশ্বর সম্বন্ধে বলেন: “তিনি ভগ্নচিত্তদিগকে সুস্থ করেন, তাহাদের ক্ষত সকল বাঁধিয়া দেন।”—গীতসংহিতা ১৪৭:৩.

রাজ্যের বার্তা যেভাবে পার্থক্য নিয়ে আসে

১৫, ১৬. প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের, রাজ্যের বার্তা কীভাবে সমর্থন এবং শক্তি জোগায়, তা বাস্তব জীবনের কোন উদাহরণগুলো তুলে ধরে?

১৫ বাস্তব জীবনের অসংখ্য উদাহরণ দেখায় যে, কীভাবে রাজ্যের বার্তা ভগ্নান্তঃকরণ লোকেদের জন্য আসলেই সমর্থন এবং শক্তি জোগায়। দক্ষিণ আমেরিকার একজন বয়স্কা ভদ্রমহিলা অরিয়ানার কথা বিবেচনা করুন, যিনি বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ফেলেছিলেন। একজন যিহোবার সাক্ষি, অরিয়ানার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এবং তার সামনে বাইবেল ও আমার বাইবেলের গল্পের বই * নামক প্রকাশনাটি পড়তে শুরু করেন। প্রথম প্রথম, সেই বিষণ্ণ ভদ্রমহিলা বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে পড়া শুনতেন এবং মাঝে মাঝে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলতেন। কিন্তু, অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি পড়ার সময় বিছানায় উঠে বসার চেষ্টা করতে শুরু করেন। কিছু দিন পর, তিনি বসার ঘরে চেয়ারে বসে তার বাইবেল শিক্ষকের আসার জন্য অপেক্ষা করতেন। এরপর, সেই ভদ্রমহিলা কিংডম হলের খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করেন। সেই সভাগুলোতে তিনি যা শিখতেন, তার দ্বারা উৎসাহিত হয়ে তিনি তার বাড়ির সামনে দিয়ে যান এমন যেকারোর কাছে বাইবেল সাহিত্যাদি অর্পণ করতে শুরু করেন। পরে, ৯৩ বছর বয়সে অরিয়ানা যিহোবার একজন সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। রাজ্যের বার্তা তার বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল।—হিতোপদেশ ১৫:৩০; ১৬:২৪.

১৬ রাজ্যের বার্তা এমনকি সেই লোকেদেরও অপরিহার্য সমর্থন জোগায়, যারা জানে যে অসুস্থতার কারণে তারা মারা যাবে। উদাহরণ হিসেবে পশ্চিম ইউরোপের মারিয়ার কথাই ধরুন। তিনি মারাত্মক এক রোগে ভুগছিলেন এবং সমস্ত আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি অত্যন্ত বিষণ্ণ ছিলেন, যখন যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। কিন্তু, তিনি যখন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলো জেনেছিলেন, তখন তার জীবন আবারও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। তিনি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন এবং প্রচার কাজে খুবই সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তার জীবনের শেষ দুই বছরে তার চোখে আশা ও আনন্দ উজ্জ্বল ছিল। মারিয়া পুনরুত্থানের এক দৃঢ় আশা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।—রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯.

১৭. (ক) রাজ্যের বার্তা কীভাবে সেই লোকেদের জীবনে পার্থক্য নিয়ে আসে, যারা তা গ্রহণ করে? (খ) ব্যক্তিগতভাবে আপনি কোন কোন উপায়ে দেখেছেন যে, যিহোবা “অবনত সকলকে উত্থাপন করেন”?

১৭ এই ধরনের রিপোর্টগুলো যারা বাইবেলের সত্যের জন্য আকাঙ্ক্ষা করে, তাদের জীবনে রাজ্যের বার্তা কীভাবে পার্থক্য নিয়ে আসতে পারে, তার প্রমাণ দেয়। যারা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকার্ত, তারা যখন পুনরুত্থানের আশা সম্বন্ধে জানতে পারে, তখন নবশক্তি লাভ করে। (১ থিষলনীকীয় ৪:১৩) যে-লোকেরা দারিদ্রের মধ্যে বাস করে এবং তাদের পরিবারের ভরণপোষণ জোগাতে গিয়ে হিমশিম খায়, তারা যখন জানতে পারে যে যিহোবা তাদের কখনো পরিত্যাগ করবেন না, যদি তারা তাঁর প্রতি অনুগত থাকে, তখন তারা নতুন করে আত্মসম্মান ও সাহস লাভ করে। (গীতসংহিতা ৩৭:২৮, NW) হতাশার দ্বারা জর্জরিত এমন অনেকে, যিহোবার সাহায্যে ধীরে ধীরে তা মোকাবিলা করার মতো প্রয়োজনীয় শক্তি গড়ে তোলে আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনকি সেই অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয়। (গীতসংহিতা ৪০:১, ২) সত্যিই, তাঁর বাক্যের মাধ্যমে জোগানো শক্তির দ্বারা যিহোবা এখনই “অবনত সকলকে উত্থাপন করেন।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৪) ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার যেভাবে আমাদের এলাকায় ও খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে ভগ্নান্তঃকরণ লোকেদের জন্য সান্ত্বনা নিয়ে আসে, তা দেখার মাধ্যমে আমাদের বার বার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, আমাদের কাছে আজকে প্রাপ্তিসাধ্য সর্বোত্তম সংবাদ রয়েছে!—গীতসংহিতা ৫১:১৭.

‘তাহাদের জন্য ঈশ্বরের কাছে আমার বিনতি’

১৮. যিহুদিরা সুসমাচার প্রত্যাখ্যান করায় পৌল কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং কেন?

১৮ যদিও আমাদের বার্তার মধ্যে সর্বোত্তম সংবাদ রয়েছে, তবুও অনেকে তা প্রত্যাখ্যান করে। এটা কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করতে পারে? সেই একইভাবে যেভাবে তা প্রেরিত পৌলকে করেছিল। তিনি প্রায়ই যিহুদিদের কাছে প্রচার করতেন কিন্তু তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই পরিত্রাণের বার্তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাদের প্রত্যাখ্যান করা পৌলকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তিনি স্বীকার করেছিলেন: “আমার হৃদয়ে ভারী দুঃখ ও নিরন্তর যাতনা হইতেছে।” (রোমীয় ৯:২) পৌল যে-যিহুদিদের কাছে প্রচার করতেন, তাদের জন্য সমবেদনা বোধ করতেন। এটা তাকে দুঃখ দিয়েছিল যে, তারা সুসমাচার প্রত্যাখ্যান করেছে।

১৯. (ক) কেন এটা বোধগম্য যে, আমরা মাঝে মাঝে নিরুৎসাহিত বোধ করি? (খ) কোন বিষয়টা পৌলকে তার প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল?

১৯ আমরাও সমবেদনার কারণে সুসমাচার প্রচার করি। তাই, এটা বোধগম্য যে, অনেক লোক যখন রাজ্যের বার্তা প্রত্যাখ্যান করে, তখন আমরা হয়তো নিরুৎসাহিত বোধ করতে পারি। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় যে, আমাদের সেই লোকেদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের প্রতি অকৃত্রিম চিন্তা রয়েছে, যাদের কাছে আমরা প্রচার করি। কিন্তু, আমাদের প্রেরিত পৌলের উদাহরণ স্মরণ করা উচিত। কোন বিষয়টা তাকে তার প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল? যদিও যিহুদিরা সুসমাচার গ্রহণ করতে প্রত্যাখ্যান করায় তিনি দুঃখ এবং কষ্ট পেয়েছিলেন কিন্তু পৌল এই মনে করে সমস্ত যিহুদির ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেননি যে তাদের সাহায্য করা যাবে না। তার এই আশা ছিল যে, এখনও এমন লোকেরা রয়েছে যারা খ্রিস্টকে গ্রহণ করবে। তাই, কিছু যিহুদিদের প্রতি তার অনুভূতির বিষয়ে পৌল লিখেছিলেন: “আমার হৃদয়ের সুবাসনা এবং তাহাদের জন্য ঈশ্বরের কাছে বিনতি এই, যেন তাহাদের পরিত্রাণ হয়।”—রোমীয় ১০:১.

২০, ২১. (ক) আমাদের পরিচর্যার বিষয়ে কীভাবে আমরা পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি? (খ) আমাদের পরিচর্যার কোন দিকটা পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে?

২০ পৌল যে-দুটো বিষয় তুলে ধরেছিলেন, তা লক্ষ করুন। তার হৃদয়ে এই ইচ্ছা ছিল যেন কিছু লোক পরিত্রাণ পায় আর তিনি সেইজন্য ঈশ্বরের কাছে বিনতি করেছিলেন। আজকে আমরা পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করি। আমরা এমন যেকোনো ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়ার এক আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা বজায় রাখি, যিনি হয়তো এখনও সুসমাচারের জন্য সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন। আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে চলি যেন সেই ধরনের লোকেদের খুঁজে পেতে পারি, যাতে করে আমরা তাদের সেই পথ অনুসরণ করতে সাহায্য করতে পারি, যা তাদের পরিত্রাণের দিকে পরিচালিত করবে।—হিতোপদেশ ১১:৩০; যিহিষ্কেল ৩৩:১১; যোহন ৬:৪৪.

২১ কিন্তু, যত বেশি লোকের কাছে সম্ভব রাজ্যের বার্তা নিয়ে পৌঁছানোর জন্য আমাদের কেবল আমরা কেন এবং কী প্রচার করি তা-ই নয় কিন্তু আমরা কীভাবে প্রচার করি, সেটাতেও মনোযোগ দিতে হবে। এই বিষয়টা পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ এই প্রবন্ধে আমরা দুটো দিক বিবেচনা করব। দ্বিতীয় প্রবন্ধে তৃতীয় দিকটা বিবেচনা করব।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

আপনি কী শিখেছেন?

• কোন কারণগুলোর জন্য আমরা পরিচর্যায় অংশ নিই?

• মূল বার্তাটি কী, যা আমরা প্রচার করি?

• যারা রাজ্যের বার্তা গ্রহণ করে, তারা কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করে?

• কী আমাদের পরিচর্যা চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

রাজ্যের বার্তা ভগ্নান্তঃকরণ লোকেদের শক্তি দেয়

[২০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

প্রার্থনা আমাদের পরিচর্যায় ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে