সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর”

“প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর”

“প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর”

“আপনাদের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না; প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর।”—২ করিন্থীয় ১৩:৫.

১, ২. (ক) কীভাবে আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে অনিশ্চয়তা আমাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে? (খ) প্রথম শতাব্দীতে করিন্থের কোন পরিস্থিতি হয়তো কয়েক জনকে কোন পথে চলতে হবে, সেই বিষয়ে অনিশ্চিত করে তুলেছিল?

 একজন ব্যক্তি গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণ করার সময় রাস্তার একটা সংযোগস্থলে আসেন, যেখানে সেটা বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। কোন পথটা তাকে তার গন্তব্যে নিয়ে যাবে, সেই সম্বন্ধে অনিশ্চিত হওয়ায়, তিনি দিক নির্দেশনার জন্য পথচারীদের জিজ্ঞেস করেন কিন্তু তাকে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়। বিভ্রান্ত হয়ে তিনি আর এগোতে পারেন না। আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে সন্দেহ থাকলে, তা আমাদের ওপর একই প্রভাব ফেলতে পারে। এই ধরনের অনিশ্চয়তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে, যা আমাদের কোন পথে চলতে হবে, সেই সম্বন্ধে অনিশ্চিত করে তুলবে।

এমন এক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল, যা প্রথম শতাব্দীতে গ্রিসের করিন্থের খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কিছু ব্যক্তির ওপর এইরকম প্রভাব ফেলতে পারত। ‘প্রেরিত-চূড়ামণিরা’ প্রেরিত পৌলের কর্তৃত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছিল: “তাঁহার পত্র সকল ভারযুক্ত ও তেজস্বী বটে, কিন্তু সাক্ষাতে তাঁহার শরীর দুর্ব্বল এবং তাঁহার বাক্য হেয়।” (২ করিন্থীয় ১০:৭-১২; ১১:৫, ৬) এইরকম এক দৃষ্টিভঙ্গি করিন্থীয় মণ্ডলীর কয়েক জনকে হয়তো কীভাবে চলতে হবে, সেই বিষয়ে অনিশ্চিত করে তুলেছিল।

৩, ৪. করিন্থীয়দের প্রতি পৌলের পরামর্শ কেন আমাদের জন্য আগ্রহের বিষয় হওয়া উচিত?

সাধারণ কাল ৫০ সালে পৌল যখন করিন্থে গিয়েছিলেন, তখন তিনি সেখানে মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। করিন্থে তিনি ‘দেড় বৎসর অবস্থিতি করিয়া তাহাদের মধ্যে ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দিয়াছিলেন।’ বস্তুত, “করিন্থীয়দের মধ্যে অনেক লোক শুনিয়া বিশ্বাস করিল, ও বাপ্তাইজিত হইল।” (প্রেরিত ১৮:৫-১১) করিন্থে তার সহবিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের বিষয়ে পৌল গভীরভাবে আগ্রহী ছিলেন। এ ছাড়া, করিন্থীয়রা কয়েকটা বিষয়ে উপদেশ চেয়ে পৌলের কাছে চিঠি লিখেছিল। (১ করিন্থীয় ৭:১) তাই, তিনি তাদেরকে চমৎকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

“আপনাদের পরীক্ষা করিয়া দেখ,” পৌল লিখেছিলেন, “তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না; প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর।” (২ করিন্থীয় ১৩:৫) এই পরামর্শ কাজে লাগানো করিন্থের সেই ভাইদের কোন পথে চলতে হবে, সেই সম্বন্ধে অনিশ্চয়তার হাত থেকে সুরক্ষা করেছিল। আজকে আমাদের জন্যও এটা একইরকম সুরক্ষা দিতে পারে। তা হলে, কীভাবে আমরা পৌলের উপদেশ অনুসরণ করতে পারি? কীভাবে আমরা পরীক্ষা করতে পারি যে, আমরা বিশ্বাসে আছি কি না? আর প্রমাণার্থে নিজেদেরই পরীক্ষা করে দেখার সঙ্গে কী জড়িত?

“আপনাদের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না”

৫, ৬. আমরা বিশ্বাসে আছি কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য আমাদের কাছে কোন মান রয়েছে আর কেন সেটা এক আদর্শ মান?

একটা পরীক্ষায় সাধারণত কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর পরীক্ষা করা হয় এবং এমন একটা ভিত্তি বা মান থাকে, যে-অনুসারে পরীক্ষাটা করা হয়। এই ক্ষেত্রে যেটা পরীক্ষিত হচ্ছে, সেটা সেই বিশ্বাস নয় যে-বিশ্বাসগুলো আমরা গ্রহণ করেছি। আমরা আলাদা আলাদাভাবে হচ্ছি সেই ব্যক্তি, যার পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষাটা সম্পাদন করার জন্য আমাদের এক সিদ্ধ বা নিখুঁত মান রয়েছে। গীতরচক দায়ূদের দ্বারা রচিত একটা সংগীত বলে: “সদাপ্রভুর ব্যবস্থা সিদ্ধ, প্রাণের স্বাস্থ্যজনক; সদাপ্রভুর সাক্ষ্য বিশ্বসনীয়, অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক। সদাপ্রভুর বিধি সকল যথার্থ, চিত্তের আনন্দবর্দ্ধক; সদাপ্রভুর আজ্ঞা নির্ম্মল, চক্ষুর দীপ্তিজনক।” (গীতসংহিতা ১৯:৭, ৮) বাইবেলে যিহোবার নিখুঁত ব্যবস্থা এবং যথার্থ বিধি, তাঁর বিশ্বসনীয় সাক্ষ্য এবং নির্মল আজ্ঞা রয়েছে। সেখানে প্রাপ্ত বার্তা পরীক্ষার জন্য আদর্শ মান।

ঈশ্বর-অনুপ্রাণিত সেই বার্তার বিষয়ে প্রেরিত পৌল বলেন: “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, এবং সমস্ত দ্বিধার খড়গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, এবং প্রাণ ও আত্মা, গ্রন্থি ও মজ্জা, এই সকলের বিভেদ পর্য্যন্ত মর্ম্মবেধী, এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক।” (ইব্রীয় ৪:১২) হ্যাঁ, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের হৃদয়কে—ভিতরে আমরা আসলে কেমন ব্যক্তি, তা—পরীক্ষা করতে পারে। কীভাবে আমরা এই তীক্ষ্ণ এবং কার্যসাধক বার্তা ব্যক্তিগতভাবে প্রয়োগ করতে পারি? এর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে কী জড়িত, সেই বিষয়ে গীতরচক সন্দেহের কোনো অবকাশই রাখেননি। তিনি গেয়েছিলেন: “ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] সেই ব্যক্তি, যে . . . সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে।” (গীতসংহিতা ১:১, ২) ‘সদাপ্রভুর ব্যবস্থা’ ঈশ্বরের লিখিত বাক্য বাইবেলে পাওয়া যায়। যিহোবার বাক্য পড়ে আমাদের আনন্দিত হতে হবে। বস্তুত, এটি নিয়ে ধ্যান করার বা নিচুস্বরে পড়ার জন্য আমাদেরকে সময় করে নিতে হবে। আর তা করার সময় সেখানে যা লেখা রয়েছে, সেটার দ্বারা আমাদের নিজেদেরকে—যাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাকে—পরীক্ষিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

৭. আমরা বিশ্বাসে আছি কি না, তা পরীক্ষা করার প্রধান উপায়টা কী?

তাই, আমরা বিশ্বাসে আছি কি না, তা পরীক্ষা করার প্রধান উপায়টা হল, ঈশ্বরের বাক্য পড়া ও তা নিয়ে ধ্যান করা এবং আমরা যা শিখি সেটার সঙ্গে আমাদের আচরণ কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা পরীক্ষা করা। আমরা আনন্দিত হতে পারি যে, ঈশ্বরের বাক্য বোঝার জন্য আমাদের যথেষ্ট সাহায্য রয়েছে।

৮. কীভাবে ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা প্রকাশিত প্রকাশনাদি আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে সাহায্য করে যে, আমরা বিশ্বাসে আছি কি না?

‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা প্রকাশিত প্রকাশনাদির মাধ্যমে যিহোবা শিক্ষা এবং নির্দেশনা জুগিয়েছেন, যেগুলো শাস্ত্র সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে। (মথি ২৪:৪৫) উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার নিকটবর্তী হোন বইয়ের বেশির ভাগ অধ্যায়ের শেষে দেওয়া “ধ্যানের জন্য প্রশ্নগুলো” শিরোনামের বাক্সটা বিবেচনা করুন। * বইটির এই বৈশিষ্ট্যটা ব্যক্তিগত বিবেচনার জন্য কত উত্তম সুযোগগুলোই না জোগায়! আমাদের প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকাগুলোতে আলোচিত অসংখ্য বিষয়ও আমাদের পরীক্ষা করতে সাহায্য করে যে, আমরা বিশ্বাসে আছি কি না। প্রহরীদুর্গ পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলোতে হিতোপদেশ পুস্তকের ওপর প্রবন্ধগুলোর বিষয়ে একজন খ্রিস্টান মহিলা বলেছিলেন: “এই প্রবন্ধগুলো আমার কাছে খুবই ব্যবহারিক বলে মনে হয়েছে। এগুলো আমাকে পরীক্ষা করে দেখতে সাহায্য করেছে যে, আমার কথাবার্তা, আচরণ এবং মনোভাব সত্যিই যিহোবার ধার্মিক মানগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না।”

৯, ১০. যিহোবার কোন ব্যবস্থাগুলো আমরা বিশ্বাসে আছি কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে আমাদের সাহায্য করে?

এ ছাড়া, মণ্ডলীর সভা এবং সম্মেলনগুলোতেও আমরা প্রচুর নির্দেশনা এবং উৎসাহ পাই। এগুলো সেই আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলোর অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের জন্য জুগিয়েছেন, যাদের সম্বন্ধে যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “শেষকালে এইরূপ ঘটিবে; সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত পর্ব্বতগণের মস্তকরূপে স্থাপিত হইবে, উপপর্ব্বতগণ হইতে উচ্চীকৃত হইবে; এবং সমস্ত জাতি তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে। আর অনেক দেশের লোক যাইবে, বলিবে, চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে, . . . গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব।” (যিশাইয় ২:২, ৩) যিহোবার পথ সম্বন্ধে এই ধরনের নির্দেশনা পাওয়া সত্যিই এক আশীর্বাদ।

১০ আধ্যাত্মিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পরামর্শকেও উপেক্ষা করা যায় না, যাদের অন্তর্ভুক্ত খ্রিস্টান প্রাচীনরাও। তাদের সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “ভ্রাতৃগণ, যদি কেহ কোন অপরাধে ধরাও পড়ে তবে আত্মিক যে তোমরা [“যাদের আধ্যাত্মিক যোগ্যতা রয়েছে,” NW], তোমরা সেই প্রকার ব্যক্তিকে মৃদুতার আত্মায় সুস্থ কর, আপনাকে দেখ, পাছে তুমিও পরীক্ষাতে পড়।” (গালাতীয় ৬:১) আমাদের সুস্থ বা পুনঃসমন্বয় করতে এই ব্যবস্থার জন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি!

১১. আমরা বিশ্বাসে আছি কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য কীসের প্রয়োজন?

১১ আমাদের প্রকাশনাদি, খ্রিস্টীয় সভা, নিযুক্ত ব্যক্তিরা—এগুলো হল যিহোবার কাছ থেকে অপূর্ব ব্যবস্থা। কিন্তু, আমরা বিশ্বাসে আছি কি না, সেটা দেখার জন্য আত্মপরীক্ষার প্রয়োজন। তাই, আমরা যখন আমাদের প্রকাশনাদি পড়ি অথবা শাস্ত্রীয় পরামর্শ শুনি, তখন আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করতে হবে: ‘এটা কি আমার সম্বন্ধে বলছে? আমি কি তা করছি? আমি কি খ্রিস্টীয় বিশ্বাস মেনে চলছি?’ এই ব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে আমরা যে-তথ্য পাই, সেটার প্রতি আমাদের মনোভাব আমাদের আধ্যাত্মিক অবস্থার ওপর এক প্রভাব ফেলে। “প্রাণিক মনুষ্য ঈশ্বরের আত্মার বিষয়গুলি গ্রহণ করে না, কেননা তাহার কাছে সে সকল মূর্খতা,” বাইবেল বলে। “কিন্তু যে আত্মিক, সে সমস্ত বিষয়ের বিচার করে।” (১ করিন্থীয় ২:১৪, ১৫) আমাদের বই, পত্রিকা এবং অন্যান্য প্রকাশনার মধ্যে আমরা যা পড়ি এবং আমাদের সভাগুলোতে বা প্রাচীনদের কাছ থেকে আমরা যা শুনি, সেগুলো সম্বন্ধে আমাদের কি এক ইতিবাচক, আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার প্রচেষ্টা করা উচিত নয়?

“প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর”

১২. প্রমাণার্থে নিজেদেরই পরীক্ষা করার সঙ্গে কী জড়িত?

১২ প্রমাণার্থে নিজেদেরই পরীক্ষা করার সঙ্গে আত্মমূল্যায়ন জড়িত। হ্যাঁ, আমরা সত্যে থাকতে পারি কিন্তু আমাদের আধ্যাত্মিকতা কোন পর্যায়ে রয়েছে? প্রমাণার্থে নিজেদেরই পরীক্ষা করার সঙ্গে আমাদের পরিপক্বতার প্রমাণ দেওয়া এবং আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলোর প্রতি অকৃত্রিম উপলব্ধিবোধ জড়িত।

১৩. ইব্রীয় ৫:১৪ পদ অনুসারে কী আমাদের পরিপক্বতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে?

১৩ আমাদের নিজেদের মধ্যে খ্রিস্টীয় পরিপক্বতার কোন প্রমাণ আমরা খুঁজে পেতে পারি? প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “কঠিন খাদ্য সেই সিদ্ধবয়স্কদেরই জন্য, যাহাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু হইয়াছে।” (ইব্রীয় ৫:১৪) আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল পটু বা প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে আমরা সিদ্ধবয়স্ক হওয়ার বা পরিপক্বতার প্রমাণ দিই। কোনো খেলায় অংশ নেওয়ার আগে একজন ক্রীড়াবিদকে যেমন তার শরীরের নির্দিষ্ট পেশীগুলোকে বার বার ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করতে হয়, তেমনই বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত প্রশিক্ষিত করতে হবে।

১৪, ১৫. ঈশ্বরের বাক্যের গভীর বিষয় সকল অধ্যয়ন করার জন্য কেন আমাদের অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টা করা উচিত?

১৪ কিন্তু, আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল প্রশিক্ষিত করার আগে, আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এর জন্য, অধ্যবসায়ী ব্যক্তিগত অধ্যয়ন অপরিহার্য। আমরা যখন নিয়মিতভাবে ব্যক্তিগত অধ্যয়নে—বিশেষ করে ঈশ্বরের বাক্যের গভীর বিষয়গুলোতে—রত থাকি, তখন আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল উন্নত হয়। বছরের পর বছর ধরে প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় অনেক গভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। যে-প্রবন্ধগুলো গভীর সত্যগুলো নিয়ে আলোচনা করে, সেগুলো পেলে আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই? আমরা কি সেগুলো এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখাই, শুধুমাত্র এই কারণে যে, সেগুলোর মধ্যে “কোন কোন কথা বুঝা কষ্টকর”? (২ পিতর ৩:১৬) এর বিপরীতে, সেখানে যা বলা হচ্ছে, সেগুলো বোঝার জন্য আমরা আরও প্রচেষ্টা করি।—ইফিষীয় ৩:১৮.

১৫ ব্যক্তিগত অধ্যয়ন যদি আমাদের কাছে কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে? এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যেন তা আয়ত্ত করার বা এর প্রতি এক স্বাদ গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা করি। * (১ পিতর ২:২) পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য আমাদের কঠিন খাদ্য অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্যের গভীর সত্যগুলো থেকে পুষ্টি লাভ করতে শেখা প্রয়োজন। নতুবা, আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল স্বাভাবিকভাবেই সীমিত থেকে যাবে। কিন্তু, পরিপক্বতার প্রমাণ দেওয়ার সঙ্গে জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অর্জন করার চেয়েও আরও বেশি কিছু জড়িত। অধ্যবসায়ী ব্যক্তিগত অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা যে-জ্ঞান অর্জন করি, সেটা রোজকার জীবনে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

১৬, ১৭. “বাক্যের কার্য্যকারী” হওয়ার বিষয়ে শিষ্য যাকোব কোন পরামর্শ দিয়েছেন?

১৬ এ ছাড়া, প্রমাণার্থে নিজেদেরই পরীক্ষা করার বিষয়টা সত্যের প্রতি—আমাদের বিশ্বাসের কাজের প্রতি—আমাদের উপলব্ধিবোধ প্রকাশের মধ্যে দেখা যায়। আত্মমূল্যায়নের এই ক্ষেত্রটা সম্বন্ধে বর্ণনা করার জন্য এক জোরালো দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে শিষ্য যাকোব বলেন: “বাক্যের কার্য্যকারী হও, আপনাদিগকে ভুলাইয়া শ্রোতামাত্র হইও না। কেননা যে কেহ বাক্যের শ্রোতামাত্র, কার্য্যকারী নয়, সে এমন ব্যক্তির তুল্য, যে দর্পণে আপনার স্বাভাবিক মুখ দেখে; কারণ সে আপনাকে দেখিল, চলিয়া গেল, আর সে কিরূপ লোক, তাহা তখনই ভুলিয়া গেল। কিন্তু যে কেহ হেঁট হইয়া স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত করে, ও তাহাতে নিবিষ্ট থাকে, ভুলিয়া যাইবার শ্রোতা না হইয়া কার্য্যকারী হয়, সেই আপন কার্য্যে ধন্য হইবে।”—যাকোব ১:২২-২৫.

১৭ যাকোব বলছেন: ‘ঈশ্বরের বাক্যের দর্পণে হেঁট হয়ে দৃষ্টিপাত করো এবং নিজেকে মূল্যায়ন করো। তা করায় নিবিষ্ট থাকো এবং ঈশ্বরের বাক্যে যা পেয়েছ, সেটার আলোকে নিজেকে পরীক্ষা করো। এরপর, যা দেখেছ সেটা শীঘ্রই ভুলে যেও না। প্রয়োজনীয় সংশোধন করো।’ এই উপদেশ মেনে চলা কখনো কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসতে পারে।

১৮. কেন যাকোবের পরামর্শ মেনে চলা এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে?

১৮ উদাহরণস্বরূপ, রাজ্য প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করুন। “লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে, ধার্ম্মিকতার জন্য,” পৌল লিখেছিলেন “এবং মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য।” (রোমীয় ১০:১০) পরিত্রাণের জন্য মুখে স্বীকার বা প্রকাশ্যে ঘোষণা করার জন্য বেশ কিছু রদবদলের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তির কাছেই প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করা সহজ বলে মনে হয় না। এই কাজে উদ্যোগী হওয়া এবং আমাদের জীবনে এই কাজকে এর প্রাপ্য স্থান দেওয়ার জন্য আরও বেশি পরিবর্তন এবং আত্মত্যাগের প্রয়োজন। (মথি ৬:৩৩) কিন্তু, আমরা যখন এই ঈশ্বরদত্ত কাজের কার্যকারী হয়ে উঠি, তখন তা যিহোবার প্রশংসা নিয়ে আসে বলে আমরা সুখী হই। তা হলে, আমরা কি উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারী?

১৯. আমাদের বিশ্বাসের কাজের সঙ্গে কী জড়িত হওয়া উচিত?

১৯ আমাদের বিশ্বাসের কাজ কতটা ব্যাপক হওয়া উচিত? পৌল বলেন: “তোমরা আমার কাছে যাহা যাহা শিখিয়াছ, গ্রহণ করিয়াছ, শুনিয়াছ ও দেখিয়াছ, সেই সকল কর; তাহাতে শান্তির ঈশ্বর তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকিবেন।” (ফিলিপীয় ৪:৮, ৯) আমরা যা শিখেছি, গ্রহণ করেছি, শুনেছি এবং দেখেছি—খ্রিস্টীয় উৎসর্গীকরণের এবং শিষ্যত্বের পূর্ণ মাত্রা—তা করে চলার দ্বারা প্রমাণার্থে নিজেদেরই পরীক্ষা করি। “এই পথ, তোমরা এই পথেই চল,” ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা নির্দেশ দেন।—যিশাইয় ৩০:২১.

২০. কোন ধরনের ব্যক্তিরা মণ্ডলীর জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ?

২০ যে-পুরুষ ও নারীরা অধ্যবসায়ী ছাত্র-ছাত্রী, সুসমাচারের উদ্যোগী প্রচারক, নিখুঁত নীতিনিষ্ঠা রক্ষাকারী এবং রাজ্যের অনুগত সমর্থক, তারা মণ্ডলীর জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ। তাদের উপস্থিতি তারা যে-মণ্ডলীতে মেলামেশা করে, সেটার সুস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে সেখানে যত্ন নেওয়ার জন্য অনেক নতুন ব্যক্তি রয়েছে বলে, তারা অনেক সাহায্যকারী বলে প্রমাণিত হয়। যখন ‘আমরা বিশ্বাসে আছি কি না, সেই বিষয়ে নিজেদেরই পরীক্ষা করিয়া দেখিবার; প্রমাণার্থে নিজেদেরই পরীক্ষা করিবার’ বিষয়ে পৌলের উপদেশে মনোযোগ দিই, তখন আমরাও অন্যদের জন্য উত্তম প্রভাব হয়ে উঠি।

ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে আনন্দিত হোন

২১, ২২. ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে আমরা কীভাবে আনন্দিত হতে পারি?

২১ “হে আমার ঈশ্বর, তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত,” প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ গেয়েছিলেন, “আর তোমার ব্যবস্থা আমার অন্তরে আছে।” (গীতসংহিতা ৪০:৮) দায়ূদ ঈশ্বরের অভীষ্ট বা ইচ্ছা পালন করে প্রীত বা আনন্দিত ছিলেন। কেন? কারণ যিহোবার ব্যবস্থা দায়ূদের হৃদয়ে ছিল। কোন পথে চলতে হবে, সেই বিষয়ে দায়ূদ অনিশ্চিত ছিলেন না।

২২ ঈশ্বরের ব্যবস্থা যখন আমাদের অন্তরে থাকে, তখন কোন পথে চলতে হবে, সেই বিষয়ে আমরা অনিশ্চিত নই। আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে আনন্দিত হই। তাই, আসুন আমরা হৃদয় থেকে যিহোবার সেবা করার সময় অবশ্যই “প্রাণপণ” করি।—লূক ১৩:২৪.

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

^ কীভাবে অধ্যয়ন করা যায়, সেই বিষয়ে সাহায্যকারী পরামর্শের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে উপকার লাভ করুন (ইংরেজি) বইয়ের ২৭-৩২ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• আমরা বিশ্বাসে আছি কি না, তা আমরা কীভাবে পরীক্ষা করতে পারি?

• প্রমাণার্থে নিজেদেরই পরীক্ষা করার সঙ্গে কী জড়িত?

• খ্রিস্টীয় পরিপক্বতার কোন প্রমাণ আমরা দিতে পারি?

• আমাদের বিশ্বাসের কাজ কীভাবে নিজেদের প্রমাণার্থে মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি বিশ্বাসে আছেন কি না, তা পরীক্ষা করার প্রধান উপায়টা কি আপনি জানেন?

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা আমাদের খ্রিস্টীয় পরিপক্বতার প্রমাণ দিই

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

‘ভুলিয়া যাইবার শ্রোতা না হইয়া বাক্যের কার্য্যকারী’ হয়ে আমরা প্রমাণার্থে নিজেদেরই পরীক্ষা করি