সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা ‘তাহাদের পুরস্কারদাতা যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে’

যিহোবা ‘তাহাদের পুরস্কারদাতা যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে’

যিহোবা ‘তাহাদের পুরস্কারদাতা যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে’

“যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।”—ইব্রীয় ১১:৬.

১, ২. কেন যিহোবার কিছু দাস হয়তো নেতিবাচক অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করতে পারে?

 “আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে একজন যিহোবার সাক্ষি কিন্তু আমি নিজেকে কখনো সেই নামে ডাকার যোগ্য বলে মনে করি না,” বারবারা স্বীকার করেন। * “যদিও আমি অগ্রগামীর কাজ করেছি এবং অন্যান্য অনেক বিশেষ সুযোগ আমার ছিল কিন্তু সেগুলোর কোনোটাই আমাকে সত্যিকারভাবে এটা বিশ্বাস করানোর জন্য মনে হয় যথেষ্ট ছিল না যে, আমি একজন সাক্ষি হিসেবে ডাকার যোগ্য।” কিথও একইরকম ধারণা প্রকাশ করেন। “মাঝে মাঝে আমি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতাম কারণ যিহোবার দাসদের আনন্দিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে কিন্তু আমি আনন্দিত ছিলাম না,” তিনি বলেন। “এটা নিজেকে দোষী ভাবতে পরিচালিত করেছিল, যা পরিস্থিতিকে কেবল আরও খারাপই করে তুলেছিল।”

অতীতে এবং বর্তমানে, যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত দাস একইরকম অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করেছে। মাঝে মাঝে আপনিও কি করেছেন? আপনার হয়তো একটার পর একটা সমস্যা লেগেই রয়েছে, যেখানে আপনার সহবিশ্বাসীদের দেখে মনে হয় যে, তারা চিন্তামুক্ত ও সুখী জীবন উপভোগ করছে। এর ফলে, আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, আপনার ওপর যিহোবার অনুমোদন নেই অথবা তাঁর মনোযোগ পাওয়ার যোগ্যও আপনি নন। হুট করে এইরকম উপসংহারে আসবেন না। বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয়: “[সদাপ্রভু] দুঃখীর দুঃখ উপেক্ষা বা ঘৃণা করেন নাই; তিনি তাহা হইতে আপন মুখও লুকান নাই; বরং সে তাঁহার কাছে কাঁদিলে তিনি শুনিলেন।” (গীতসংহিতা ২২:২৪) মশীহ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক এই বাক্যগুলো দেখায় যে, যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের কথা কেবল শোনেনই না কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের পুরস্কারও দেন।

৩. কেন আমরা এই বিধিব্যবস্থার চাপগুলো থেকে মুক্ত নই?

কেউই এই বিধিব্যবস্থার চাপগুলো থেকে মুক্ত নয়—এমনকি যিহোবার লোকেরাও নয়। আমরা এমন এক জগতে বাস করি, যা যিহোবার প্রধান শত্রু শয়তান দিয়াবলের দ্বারা শাসিত। (২ করিন্থীয় ৪:৪; ১ যোহন ৫:১৯) বস্তুত, অলৌকিকভাবে সুরক্ষিত হওয়ার পরিবর্তে যিহোবার দাসেরা শয়তানের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। (ইয়োব ১:৭-১২; প্রকাশিত বাক্য ২:১০) তাই, ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ের আগে পর্যন্ত আমাদের এই আস্থা নিয়ে ‘ক্লেশে ধৈর্য্যশীল হইতে’ এবং ‘প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিতে’ হবে যে, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন। (রোমীয় ১২:১২) আমাদের এইরকম মনে করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয় যে, আমাদের ঈশ্বর যিহোবা আমাদের ভালবাসেন না!

প্রাচীনকালের ধৈর্যের বিভিন্ন উদাহরণ

৪. যিহোবার কয়েক জন বিশ্বস্ত দাসের উদাহরণ দিন, যারা দুর্দশামূলক পরিস্থিতি ভোগ করেছিল।

যিহোবার প্রাচীনকালের অনেক দাসকে বিভিন্ন দুর্দশামূলক পরিস্থিতি ভোগ করতে হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, নিঃসন্তান থাকায় হান্না “তিক্তপ্রাণা” ছিলেন—যে-পরিস্থিতিকে তিনি যিহোবার দ্বারা ভুলে যাওয়ার সমরূপ বলে বিবেচনা করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১:৯-১১) এলিয়কে যখন ঘাতক রানি ঈষেবল হত্যা করার জন্য তাড়া করেছিলেন, তখন তিনি ভীত হয়ে পড়েছিলেন এবং যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন: “এই যথেষ্ট; হে সদাপ্রভু, এখন আমার প্রাণ লও, কেননা আপন পিতৃপুরুষদের হইতে আমি উত্তম নহি।” (১ রাজাবলি ১৯:৪) আর প্রেরিত পৌল নিশ্চয়ই তার অসিদ্ধতার কারণে অত্যন্ত দুঃখার্ত হয়ে পড়েছিলেন, যখন তিনি স্বীকার করেছিলেন: “সৎকার্য্য করিতে ইচ্ছা করিলেও মন্দ আমার কাছে উপস্থিত হয়।” তিনি আরও বলেছিলেন: “দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি!”—রোমীয় ৭:২১-২৪.

৫. (ক) হান্না, এলিয় এবং পৌল কীভাবে পুরস্কৃত হয়েছিল? (খ) আমরা যদি নেতিবাচক অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করি, তা হলে ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমরা কীভাবে সান্ত্বনা পেতে পারি?

অবশ্য আমরা জানি যে, হান্না, এলিয় এবং পৌল সকলেই যিহোবার সেবায় ধৈর্য বজায় রেখেছিল আর তিনি তাদেরকে প্রচুররূপে পুরস্কৃত করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১:২০; ২:২১; ১ রাজাবলি ১৯:৫-১৮; ২ তীমথিয় ৪:৮) তা সত্ত্বেও, তারা দুঃখ, হতাশা এবং ভয়সহ মানুষের সমস্ত ধরনের আবেগের সঙ্গে লড়াই করেছিল। তাই, মাঝে মাঝে আমাদের মধ্যে যদি নেতিবাচক অনুভূতি আসে, তা হলে এতে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। কিন্তু, জীবনের উদ্বিগ্নতাগুলো যদি আপনাকে এই বিষয়ে সন্দেহ করতে পরিচালিত করে যে, যিহোবা আপনাকে সত্যিই ভালবাসেন কি না, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? ঈশ্বরের বাক্য থেকে আপনি সান্ত্বনা পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আগের প্রবন্ধে আমরা যিশুর এই উক্তি নিয়ে আলোচনা করেছি যে, “তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও” যিহোবার গণিত আছে। (মথি ১০:৩০) উৎসাহমূলক এই কথাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, যিহোবা তাঁর প্রত্যেক দাসের প্রতি গভীরভাবে আগ্রহী। এ ছাড়া, চড়ুই পাখি সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্তটাও মনে করে দেখুন। সেই ছোট পাখিগুলোর একটাও যদি যিহোবার অলক্ষে ভূমিতে না পড়ে, তা হলে তিনি কি আপনার খারাপ অবস্থা না দেখার ভান করবেন?

৬. কীভাবে বাইবেল সেই সমস্ত ব্যক্তির জন্য সান্ত্বনার এক উৎস হতে পারে, যারা নেতিবাচক অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করছে?

এটা কি আসলেই সম্ভব যে, আমরা অসিদ্ধ মানুষেরা সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরের চোখে মূল্যবান হতে পারি? হ্যাঁ! বস্তুত, বাইবেলে অসংখ্য এমন বিবরণ রয়েছে, যেগুলো এই বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দেয়। সেগুলোতে মনোযোগ দিয়ে আমরা গীতরচকের কথাগুলো প্রতিধ্বনিত করতে পারি, যিনি বলেছিলেন: “আমার আন্তরিক ভাবনার বৃদ্ধিকালে তোমার দত্ত সান্ত্বনা আমার প্রাণকে আহ্লাদিত করে।” (গীতসংহিতা ৯৪:১৯) আসুন আমরা ঈশ্বরের বাক্য থেকে এই সান্ত্বনামূলক উক্তিগুলোর কয়েকটা বিবেচনা করি, যা আমাদের আরও পূর্ণরূপে বুঝতে সাহায্য করবে যে, ঈশ্বর আমাদের মূল্যবান বলে গণ্য করেন এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করে চললে তিনি আমাদের পুরস্কৃত করবেন।

যিহোবার “বিশেষ সম্পত্তি”

৭. ভাববাদি মালাখির মাধ্যমে কলুষিত জাতির প্রতি যিহোবা কোন উৎসাহজনক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন?

সাধারণ কাল পূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে যিহুদিদের মধ্যে শোচনীয় এক অবস্থা বিদ্যমান ছিল। যাজকরা অনুপযুক্ত পশু গ্রহণ করত এবং সেগুলো যিহোবার বেদিতে বলি হিসেবে উৎসর্গ করত। বিচারকরা পক্ষপাতিত্ব দেখাত। ডাকিনীবিদ্যা, মিথ্যা, প্রতারণা এবং পারদারিকতা চারিদিকে ছড়িয়ে ছিল। (মালাখি ১:৮; ২:৯; ৩:৫) সেই নির্লজ্জ কলুষিত জাতির উদ্দেশে মালাখি অবাক করার মতো এক ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এক সময় যিহোবা তাঁর লোকেদের অনুমোদনযোগ্য এক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। আমরা পড়ি: “তাদের বিষয়ে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলেছেন, ‘আমার নির্দিষ্ট করা দিনে তারা আমার নিজের বিশেষ সম্পত্তি হবে; তারা আমারই হবে। একজন লোক যেমন তার সেবাকারী ছেলেকে মমতা করে শাস্তি থেকে রেহাই দেয় তেমনি করে আমি তাদের রেহাই দেব।’”—মালাখি ৩:১৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।

৮. কেন মালাখি ৩:১৭ পদ সাধারণ অর্থে বিস্তর লোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে?

মালাখির ভবিষ্যদ্বাণী আধুনিক দিনে আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ হয়েছে, যাদের নিয়ে ১,৪৪,০০০ জনের আত্মিক জাতি গঠিত। সেই জাতি সত্যিই যিহোবার “বিশেষ সম্পত্তি” অথবা “নিজস্ব প্রজাবৃন্দ।” (১ পিতর ২:৯) মালাখির ভবিষ্যদ্বাণী ‘বিস্তর লোকের’ জন্যও উৎসাহজনক হতে পারে, যারা “সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষ শাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে” এবং “শুক্লবস্ত্র পরিহিত।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৪, ৯) এক পালক যিশু খ্রিস্টের অধীনে তারা অভিষিক্তদের সঙ্গে এক পালে পরিণত হয়েছে।—যোহন ১০:১৬.

৯. কেন যিহোবার লোকেরা তাঁর কাছে “বিশেষ সম্পত্তি”?

যারা যিহোবাকে সেবা করা বেছে নেয়, তাদেরকে তিনি কীভাবে দেখেন? মালাখি ৩:১৭ পদে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি তাদেরকে এমনভাবে দেখেন যেভাবে একজন প্রেমময় পিতা তার সন্তানকে দেখে থাকেন। আর সেই উষ্ণ উক্তিটা লক্ষ করুন, যেখানে তিনি তার লোকেদের “বিশেষ সম্পত্তি” বলে বর্ণনা করেছেন। অন্যান্য অনুবাদ এই বাক্যাংশটিকে “আমার নিজস্ব,” “আমার নিজস্ব অধিকার,” এবং “আমার রত্নগুলো” হিসেবে অনুবাদ করে। যারা যিহোবাকে সেবা করে, তাদেরকে কেন তিনি এতখানি বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে দেখেন? একটা কারণ হল যে, তিনি হলেন একজন উপলব্ধিপরায়ণ ঈশ্বর। (ইব্রীয় ৬:১০) যারা তাঁকে হৃদয় থেকে সেবা করে, তিনি তাদের নিকটবর্তী হন এবং তাদেরকে বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে দেখেন।

১০. কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য সুরক্ষা জোগান?

১০ আপনি কি এমন কোনো মূল্যবান সম্পদ সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারেন, যেটাকে আপনি বিশেষ সম্পত্তি হিসেবে দেখেন? সেটাকে রক্ষা করার জন্য আপনি কি পদক্ষেপ নেন না? যিহোবা তাঁর ‘বিশেষ সম্পত্তির’ ক্ষেত্রে তা-ই করেন। এটা ঠিক যে, তিনি তাঁর লোকেদেরকে জীবনের সমস্ত পরীক্ষা এবং দুঃখজনক ঘটনা থেকে রক্ষা করেন না। (উপদেশক ৯:১১) কিন্তু, যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত লোকেদের আধ্যাত্মিকভাবে রক্ষা করতে পারেন এবং করবেন। তিনি তাদেরকে সেই শক্তি জোগান, যা কোনো পরীক্ষা সহ্য করার জন্য প্রয়োজন। (১ করিন্থীয় ১০:১৩) তাই, ঈশ্বরের প্রাচীন লোক ইস্রায়েলীয়দের মোশি বলেছিলেন: “তোমরা বলবান হও ও সাহস কর, . . . তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনি তোমার সহিত যাইতেছেন, তিনি তোমাকে ছাড়িবেন না, তোমাকে ত্যাগ করিবেন না।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:৬) যিহোবা তাঁর লোকেদের এমনভাবে যত্ন নেন যে তারা পুরস্কার লাভ করে থাকে। তাঁর কাছে তারা “বিশেষ সম্পত্তি।”

যিহোবা “পুরস্কারদাতা”

১১, ১২. পুরস্কারদাতা হিসেবে যিহোবার ভূমিকা উপলব্ধি করা কীভাবে আমাদের সন্দেহের অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে?

১১ যিহোবা যে তাঁর লোকেদের মূল্যবান বলে গণ্য করেন, তার আরেকটা প্রমাণ হল যে, তিনি তাদের পুরস্কার দেন। তিনি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “তোমরা ইহাতে আমার পরীক্ষা কর, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, আমি আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করিয়া তোমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ করি কি না।” (মালাখি ৩:১০) নিশ্চিতভাবে, পরিশেষে যিহোবা তাঁর দাসদের অনন্তজীবন দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। (যোহন ৫:২৪; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) এই অমূল্য পুরস্কার যিহোবার প্রেম এবং উদারতার বিশালতা সম্বন্ধে প্রকাশ করে। এটা এও দেখায় যে, তিনি সত্যিই তাদেরকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন, যারা তাঁকে সেবা করা বেছে নেয়। যিহোবাকে এক উদার পুরস্কারদাতা হিসেবে দেখতে শেখা, ঈশ্বরের সামনে আমাদের অবস্থান সম্বন্ধে যেকোনো সন্দেহের সঙ্গে মোকাবিলা করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। বস্তুত, যিহোবা আমাদেরকে তাঁকে একজন পুরস্কারদাতা হিসেবে দেখার জন্য জোরালো পরামর্শ দেন! পৌল লিখেছিলেন: “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।”—ইব্রীয় ১১:৬.

১২ অবশ্য, আমরা যিহোবার সেবা করি কারণ আমরা তাঁকে ভালবাসি আর তা কেবল তিনি আমাদের পুরস্কার দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন বলে নয়। তা সত্ত্বেও, পুরস্কারের আশা হৃদয়ে রাখা অনুপযুক্ত বা স্বার্থপর বিষয় নয়। (কলসীয় ৩:২৩, ২৪) তাদেরকে তিনি ভালবাসেন এবং উচ্চমূল্য দেন বলেই যিহোবা প্রথমে পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং যারা আন্তরিকভাবে তাঁর অন্বেষণ করে, তাদেরকে তিনি পুরস্কার দেন।

১৩. মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা কেন আমাদের প্রতি যিহোবার প্রেমের সর্বোত্তম প্রমাণ?

১৩ যিহোবার চোখে মানবজাতির সম্ভাব্য মূল্যের সর্বোত্তম ইঙ্গিত হল, মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা। প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা এই ধারণার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ যে, যিহোবার চোখে আমরা অযোগ্য এবং তিনি আমাদের ভালবাসেন না। বস্তুত, যিহোবা যদি আমাদের জন্য এত উচ্চমূল্য প্রদান করে থাকেন—তাঁর একজাত পুত্রকে উৎসর্গ করে থাকেন—তা হলে, নিশ্চিতভাবে তিনি আমাদের গভীরভাবে ভালবাসেন।

১৪. মুক্তির মূল্যকে পৌল কীভাবে দেখতেন, তা কোন বিষয়টা দেখায়?

১৪ তাই, আপনার মধ্যে যদি নেতিবাচক অনুভূতি আসে, তা হলে মুক্তির মূল্য নিয়ে ধ্যান করুন। হ্যাঁ, এই উপহারকে যিহোবার কাছ থেকে আপনার জন্য এক ব্যবস্থা হিসেবে দেখুন। প্রেরিত পৌল তা-ই করেছিলেন। মনে করে দেখুন যে তিনি বলেছিলেন: “দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি!” কিন্তু, এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমি ঈশ্বরের ধন্যবাদ করি” যিনি, পৌল বলেছিলেন, “আমাকে প্রেম করিলেন, এবং আমার নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন।” (রোমীয় ৭:২৪, ২৫; গালাতীয় ২:২০) এই কথাগুলো বলার দ্বারা পৌল দম্ভ করছিলেন না। তার এই আস্থা ছিল যে, যিহোবা তাকে আলাদা এক ব্যক্তি হিসেবে মূল্যবান বলে গণ্য করেন। পৌলের মতো আপনারও মুক্তির মূল্যকে আপনার জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে এক উপহার হিসেবে দেখতে শেখা উচিত। যিহোবা কেবল একজন শক্তিশালী পরিত্রাতাই নন কিন্তু সেইসঙ্গে প্রেমপূর্ণ পুরস্কারদাতাও।

শয়তানের ‘চাতুরী’ থেকে সাবধান থাকুন

১৫-১৭. (ক) কীভাবে দিয়াবল নেতিবাচক অনুভূতি কাজে লাগায়? (খ) ইয়োবের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কোন উৎসাহ পেতে পারি?

১৫ তারপরও, এটা বিশ্বাস করা হয়তো আপনার কাছে কঠিন বলে মনে হতে পারে যে, ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া অনুপ্রাণিত সান্ত্বনা সত্যিই আপনার প্রতি প্রযোজ্য কি না। আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে, ঈশ্বরের নতুন জগতে চিরকাল বাস করার পুরস্কার এমন কিছু, যা অন্যেরা পেতে পারে কিন্তু আপনি সেটা পাওয়ার যোগ্য নন। আপনার যদি এইরকম মনে হয়, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?

১৬ নিঃসন্দেহে ইফিষীয়দের প্রতি পৌলের এই উপদেশের সঙ্গে আপনি পরিচিত আছেন: “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান কর, যেন দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইতে পার।” (ইফিষীয় ৬:১১) আমরা যখন শয়তানের কৌশলগুলো নিয়ে চিন্তা করি, তখন বস্তুবাদিতা এবং অনৈতিকতার মতো বিষয়গুলো চট করে আমাদের মাথায় আসে আর তা আসাটাই উপযুক্ত। এই প্রলোভনগুলো ঈশ্বরের প্রাচীন এবং আমাদের সময়ের অনেক দাসকে ফাঁদে ফেলেছে। কিন্তু, শয়তানের আরেকটা সুনিপুণ কাজকে—যিহোবা ঈশ্বর তাদেরকে ভালবাসেন না, লোকেদের এই বিষয়ে প্রত্যয়ী করার প্রচেষ্টাকে—আমাদের উপেক্ষা করা উচিত নয়।

১৭ লোকেদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায় শয়তান এই ধরনের অনুভূতি কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে খুবই পটু। ইয়োবের প্রতি বলা বিল্‌দদের কথাগুলো স্মরণ করুন: “ঈশ্বরের কাছে মর্ত্ত্য কেমন করিয়া ধার্ম্মিক হইবে? অবলার সন্তান কেমন করিয়া বিশুদ্ধ হইবে? দেখ, তাঁহার দৃষ্টিতে চন্দ্রও নিস্তেজ, তারাগণও নির্ম্মল নহে; তবে কীটসদৃশ মর্ত্ত্য কি? কৃমিসদৃশ মনুষ্য-সন্তান কি?” (ইয়োব ২৫:৪-৬; যোহন ৮:৪৪) সেই কথাগুলো কতটা নিরুৎসাহজনক, তা কি আপনি কল্পনা করতে পারেন? তাই, শয়তানকে আপনার মন ভেঙে দেওয়ার সুযোগ দেবেন না। বরং, শয়তানের কৌশলগুলো সম্বন্ধে সাবধান থাকুন আর এর ফলে যা সঠিক, তা করার জন্য লড়াই করার মতো সাহস এবং শক্তি আপনার থাকবে। (২ করিন্থীয় ২:১১) এমনকি যদিও ইয়োবকে সংশোধিত হতে হয়েছিল কিন্তু তিনি যা হারিয়েছিলেন, যিহোবা সেই সমস্তের দ্বিগুণ পরিমাণ ফিরিয়ে দিয়ে তার ধৈর্যকে পুরস্কৃত করেছিলেন।—ইয়োব ৪২:১০.

যিহোবা “আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্‌”

১৮, ১৯. কীভাবে ঈশ্বর “আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্‌” এবং কোন দিক দিয়ে তিনি “সকলই জানেন”?

১৮ এটা ঠিক যে, গভীরভাবে গেঁথে থাকা নিরুৎসাহিতার অনুভূতি দমন করা কঠিন হতে পারে। কিন্তু, যিহোবার আত্মা আপনাকে ধীরে ধীরে ‘ঈশ্বর-জ্ঞানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্গসমূহ’ ভেঙে ফেলতে সাহায্য করতে পারে। (২ করিন্থীয় ১০:৪, ৫) নেতিবাচক চিন্তাভাবনা যখন আপনাকে জর্জরিত করার মতো হুমকিস্বরূপ হয়, তখন প্রেরিত যোহনের এই কথাগুলো চিন্তা করুন: “ইহাতে জানিব যে, আমরা সত্যের, এবং তাঁহার সাক্ষাতে আপনাদের হৃদয় আশ্বাসযুক্ত করিব, কারণ আমাদের হৃদয় যদি আমাদিগকে দোষী করে, ঈশ্বর আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্‌, এবং সকলই জানেন।”—১ যোহন ৩:১৯, ২০.

১৯ “ঈশ্বর আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্‌,” এই বাক্যাংশের অর্থ কী? কখনো কখনো আমাদের হৃদয় আমাদেরকে দোষী বলে মনে করায়, বিশেষভাবে যখন আমরা আমাদের অসিদ্ধতা এবং ভুলগুলোর কথা স্মরণ করে কষ্ট পাই। অথবা আমাদের পটভূমির কারণে নিজেদের সম্বন্ধে নেতিবাচকভাবে চিন্তা করার অত্যধিক প্রবণতা থাকতে পারে, ঠিক যেন আমরা এমন কোনোকিছুই করতে পারি না, যা যিহোবার কাছে গ্রাহ্য হতে পারে। প্রেরিত যোহনের কথাগুলো আমাদের আশ্বাস দেয় যে, যিহোবা সেটার চেয়েও মহান! তিনি আমাদের ভুলগুলোকে অতিক্রম করে আরও কিছু দেখেন এবং আমাদের প্রকৃত সম্ভাবনা উপলব্ধি করেন। এ ছাড়া, তিনি আমাদের মনোভাব এবং উদ্দেশ্য জানেন। দায়ূদ লিখেছিলেন: “তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।” (গীতসংহিতা ১০৩:১৪) হ্যাঁ, নিজেদের সম্বন্ধে আমরা যা জানি, যিহোবা তার চেয়েও আরও ভাল জানেন!

“ভূষণার্থক মুকুট” এবং “রাজকিরীট”

২০. যিহোবা তাঁর দাসদের যেভাবে দেখেন, সেই সম্বন্ধে যিশাইয়ের পুনর্স্থাপনের ভবিষ্যদ্বাণী কী প্রকাশ করে?

২০ ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর প্রাচীন লোকেদের পুনর্স্থাপনের আশা দিয়েছিলেন। তারা যখন বাবিলে নির্বাসিত হয়েছিল, তখন এই সান্ত্বনা এবং আশ্বাস ঠিক তা-ই ছিল যা এই হতাশ ব্যক্তিদের প্রয়োজন হয়েছিল! তারা যখন তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে আসবে, সেই সময়ের দিকে তাকিয়ে যিহোবা বলেছিলেন: “তুমি সদাপ্রভুর হস্তস্থিত ভূষণার্থক মুকুট, তোমার ঈশ্বরের করতলস্থিত রাজকিরীট হইবে।” (যিশাইয় ৬২:৩) এই কথাগুলোর মাধ্যমে যিহোবা তাঁর লোকেদের মর্যাদা এবং মহিমা দিয়ে ভূষিত করেছিলেন। তিনি আজকে আত্মিক ইস্রায়েল জাতির ক্ষেত্রেও একই বিষয় করেছেন। এটা ঠিক এমন যেন তিনি তাদেরকে এমনভাবে উচ্চীকৃত করেছেন, যাতে সকলে প্রশংসা করতে পারে।

২১. কীভাবে আপনি এই নিশ্চয়তা পেতে পারেন যে, আপনার বিশ্বস্তভাবে দেখানো ধৈর্যকে যিহোবা পুরস্কৃত করবেন?

২১ যদিও এই ভবিষ্যদ্বাণী অভিষিক্তদের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল কিন্তু এটা সেই মর্যাদা সম্বন্ধে বর্ণনা করে, যা যিহোবা তাদের ওপর বর্ষণ করেন যারা তাঁর সেবা করে। তাই, সন্দেহের দ্বারা জর্জরিত হলে মনে রাখবেন যে, অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও যিহোবার কাছে আপনি “ভূষণার্থক মুকুট” এবং ‘রাজকিরীটের’ ন্যায় মূল্যবান হতে পারেন। তাই, আন্তরিকভাবে তাঁর ইচ্ছা পালন করার চেষ্টা করে তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করে চলুন। (হিতোপদেশ ২৭:১১) তা করার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনার বিশ্বস্তভাবে দেখানো ধৈর্যকে যিহোবা পুরস্কৃত করবেন!

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

আপনার কি মনে আছে?

• কীভাবে আমরা যিহোবার কাছে “বিশেষ সম্পত্তি”?

• যিহোবাকে আমাদের পুরস্কারদাতা হিসেবে দেখা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

• শয়তানের কোন ‘চাতুরী’ থেকে আমাদের সাবধান থাকতে হবে?

• কোন দিক দিয়ে ঈশ্বর “আমাদের হৃদয় অপেক্ষাও মহান্‌”?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

পৌল

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

এলিয়

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

হান্না

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের বাক্যে প্রচুর সান্ত্বনামূলক বিষয়বস্তু রয়েছে