সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করবেন?

আপনি কি ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করবেন?

আপনি কি ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করবেন?

‘আমরা দর্পণেরই মত প্রভুর [“যিহোবার,” NW] গৌরব প্রতিফলিত করি।’ —২ করিন্থীয় ৩:১৮, বাংলা জুবিলী বাইবেল।

১. মোশি কী দেখেছিলেন আর এরপর কী ঘটেছিল?

 এটা ছিল সবচেয়ে বিস্ময়কর দর্শনগুলোর মধ্যে একটা, যা কোনো মানুষই আগে কখনো দেখেনি। সীনয় পর্বতের ওপর একা দাঁড়িয়ে থাকা মোশির এক অসাধারণ অনুরোধ মেনে নেওয়া হয়েছিল। তাকে এমন কিছু দেখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, যা কোনো মানুষই কখনো দেখেনি—যিহোবার গৌরব। অবশ্য, মোশি যিহোবাকে সরাসরি দেখেননি। ঈশ্বরের রূপ এতটাই দীপ্তিময় যে, কোনো মানুষই তাঁকে দেখে বেঁচে থাকতে পারে না। এর পরিবর্তে, যিহোবা স্পষ্টতই প্রতিনিধিস্বরূপ একজন স্বর্গদূতকে ব্যবহার করে, সেই পথ দিয়ে চলে না যাওয়া পর্যন্ত, মোশিকে তাঁর “করতল” দিয়ে লুকিয়ে রেখেছিলেন। এরপর যিহোবা মোশিকে গৌরবের এই ঐশিক প্রদর্শনের উত্তরাভা দেখার সুযোগ দিয়েছিলেন। একজন স্বর্গদূতের মাধ্যমে যিহোবা মোশির সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। এরপর কী ঘটেছিল তা বাইবেল এভাবে বর্ণনা করে: “পরে মোশি . . . সীনয় পর্ব্বত হইতে নামিলেন; . . . সদাপ্রভুর সহিত আলাপে তাঁহার মুখের চর্ম্ম . . . উজ্জ্বল হইয়াছিল।”—যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৮–৩৪:৭, ২৯.

২. খ্রিস্টানরা যে গৌরব প্রতিফলিত করে, সেই সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল কী লিখেছিলেন?

কল্পনা করুন যে, আপনি মোশির সঙ্গে সেই পর্বতে দাঁড়িয়ে আছেন। সর্বশক্তিমানের চোখ-ধাঁধানো মহিমা দেখা ও তাঁর কথাগুলো শুনতে পাওয়া কত রোমাঞ্চকরই না হবে! ব্যবস্থা চুক্তির মধ্যস্থ মোশির সঙ্গে সীনয় পর্বত থেকে নেমে আসা কত সম্মানজনকই না হবে! কিন্তু, আপনি কি জানেন যে কিছু কিছু দিক দিয়ে সত্য খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের গৌরবকে এমন এক উপায়ে প্রতিফলিত করে, যা এমনকি মোশি এটাকে যেভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন সেটাকেও ছাড়িয়ে যায়? সেই ভাবিয়ে তোলার মতো তথ্যটা প্রেরিত পৌলের দ্বারা লেখা একটা পত্রে পাওয়া যায়। তিনি লিখেছিলেন যে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা ‘দর্পণেরই মত যিহোবার গৌরব প্রতিফলিত করে।’ (২ করিন্থীয় ৩:৭, ৮, ১৮) এক অর্থে, যে-খ্রিস্টানদের পার্থিব আশা রয়েছে তারাও ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করে।

খ্রিস্টানরা যেভাবে ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করে

৩. কোন কোন উপায়ে আমরা যিহোবাকে জানতে পেরেছি, যা মোশি পারেননি?

আমরা সম্ভবত কীভাবে ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করতে পারি? আমরা মোশির মতো করে যিহোবাকে দেখিনি বা তাঁর কথা শুনিনি। কিন্তু, আমরা এমন উপায়গুলোতে যিহোবাকে জানতে পেরেছি, যা মোশি পারেননি। মোশির মৃত্যুর পর প্রায় ১,৫০০ বছর পর্যন্ত যিশু মশীহ হিসেবে আবির্ভূত হননি। ফলে, মোশি জানতে পারেননি যে, কীভাবে ব্যবস্থা যিশুতে পূর্ণ হয়েছে, যিনি মানুষকে পাপ ও মৃত্যুর শোচনীয় নিপীড়ন থেকে মুক্ত করার জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন। (রোমীয় ৫:২০, ২১; গালাতীয় ৩:১৯) এ ছাড়া, মশীহ রাজ্য এবং এটা যে পার্থিব পরমদেশ নিয়ে আসবে, সেটার ওপর কেন্দ্রীভূত যিহোবার উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব সম্বন্ধে মোশি সামান্যই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই আমরা যিহোবার গৌরব আমাদের আক্ষরিক চোখ দিয়ে নয় বরং বাইবেলের শিক্ষাগুলোর ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসের চোখ দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি। সেইসঙ্গে আমরা যিহোবার রব শুনেছি, একজন স্বর্গদূতের মাধ্যমে নয় কিন্তু বাইবেলের মাধ্যমে, বিশেষ করে সুসমাচারের বিবরণগুলোর মাধ্যমে, যেগুলো যিশুর শিক্ষা ও পরিচর্যা সম্বন্ধে খুবই সুন্দরভাবে বর্ণনা দেয়।

৪. (ক) কীভাবে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করে? (খ) যাদের পার্থিব আশা রয়েছে তারা কোন কোন উপায়ে ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করতে পারে?

যদিও খ্রিস্টানরা তাদের মুখ উজ্জ্বল করার মাধ্যমে ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করে না কিন্তু তাদের মুখ যুক্তিযুক্তভাবেই উজ্জ্বল হয়, যখন তারা অন্যদেরকে যিহোবার গৌরবান্বিত ব্যক্তিত্ব এবং উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে জানায়। ভাববাদী যিশাইয় আমাদের দিন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ঈশ্বরের লোকেরা “জাতিগণের মধ্যে [সদাপ্রভুর] প্রতাপ” বা গৌরব “জ্ঞাত করিবে।” (যিশাইয় ৬৬:১৯) এ ছাড়া, ২ করিন্থীয় ৪:১, ২ পদে আমরা পড়ি: “আমরা এই পরিচর্য্যা-পদ প্রাপ্ত হওয়ায়, . . . লজ্জার গুপ্ত কার্য্যসমূহে জলাঞ্জলি দিয়াছি, ধূর্ত্ততায় চলি না, ঈশ্বরের বাক্যে ভাঁজ দিই না, কিন্তু সত্য প্রকাশ দ্বারা ঈশ্বরের সাক্ষাতে মনুষ্যমাত্রের সংবেদের কাছে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি।” পৌল এখানে মূলত অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বিষয় উল্লেখ করেছিলেন, যারা ‘নূতন নিয়মের’ বা চুক্তির “পরিচারক।” (২ করিন্থীয় ৩:৬) কিন্তু, তাদের পরিচর্যা সেই অগণিত লোকের ওপর প্রভাব ফেলেছে, যারা পৃথিবীতে অনন্তজীবনের আশা লাভ করেছে। উভয় দলের পরিচর্যার সঙ্গে শুধুমাত্র তারা যা শিক্ষা দেয় তাতেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তারা যেভাবে জীবনযাপন করে তাতেও যিহোবার গৌরব প্রতিফলিত করা জড়িত। পরাৎপর ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করা হল আমাদের দায়িত্ব ও বিশেষ সুযোগ!

৫. আমাদের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি কীসের প্রমাণ দেয়?

আজকে, ঈশ্বরের রাজ্যের গৌরবান্বিত সুসমাচার যিশুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে প্রচার করা হচ্ছে। (মথি ২৪:১৪) সমস্ত জাতি, বংশ, প্রজা ও ভাষার লোকেরা উদ্যমের সঙ্গে সুসমাচারে সাড়া দিয়েছে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য তাদের জীবনকে রূপান্তরিত করেছে। (রোমীয় ১২:২; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মতো, তারা যা দেখেছে ও শুনেছে, তা না বলে থাকতে পারে না। (প্রেরিত ৪:২০) ষাট লক্ষেরও বেশি লোক—মানব ইতিহাসের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক—আজকে ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করছে। আপনি কি তাদের মধ্যে আছেন? ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি যিহোবার আশীর্বাদ ও সুরক্ষার দৃঢ়প্রত্যয়জনক প্রমাণ দেয়। আমাদের বিরুদ্ধে স্থাপিত শক্তিশালী বাহিনীর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ওপর যিহোবার আত্মা আরও বেশি স্পষ্ট। আসুন আমরা দেখি যে, কেন তা বলা যায়।

ঈশ্বরের লোকেদের চুপ করানো যাবে না

৬. যিহোবার পক্ষ নেওয়ার জন্য কেন বিশ্বাস ও সাহসের প্রয়োজন?

ধরুন আপনাকে একজন নৃশংস অপরাধীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে ডাকা হয়েছে। আপনি জানেন যে, সেই অপরাধীর এক শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে আর তার মুখোশ খুলে দেওয়া রোধ করতে সে সমস্ত উপায় ব্যবহার করবে। এই ধরনের এক অপরাধীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আপনার সাহস ও সেইসঙ্গে এই আস্থার প্রয়োজন হবে যে, কর্তৃপক্ষরা আপনাকে তার কাছ থেকে রক্ষা করবেন। আমরাও একই পরিস্থিতিতে রয়েছি। যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলোর বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে আমরা শয়তান দিয়াবলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিই, নরঘাতক ও মিথ্যাবাদী হিসেবে তার মুখোশ খুলে দিই, যে সারা পৃথিবীর লোককে ভ্রান্ত করছে। (যোহন ৮:৪৪; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) যিহোবার পক্ষ নেওয়া ও দিয়াবলের বিরোধিতা করার জন্য আপনার বিশ্বাস ও সাহস দুটোরই প্রয়োজন।

৭. শয়তান কতটা প্রভাবশালী এবং সে কী করার চেষ্টা করে?

অবশ্যই যিহোবা হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁর ক্ষমতা শয়তানের চেয়ে অপরিসীমভাবে শ্রেষ্ঠ। আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যখন আমরা তাঁকে অনুগতভাবে সেবা করি, তখন যিহোবা আমাদেরকে রক্ষা করতে শুধু সমর্থই নন কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি তা করতে উৎসুকও। (২ বংশাবলি ১৬:৯) তা সত্ত্বেও, শয়তান ভূতগণের বা মন্দ দূতদের ও সেইসঙ্গে ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন মানবজাতির জগৎ উভয়েরই অধিপতি। (মথি ১২:২৪, ২৬; যোহন ১৪:৩০) শয়তান পৃথিবীর সীমানার মধ্যে আবদ্ধ এবং “অতিশয় রাগাপন্ন” হওয়ায়, যিহোবার দাসদের তিক্ত বিরোধিতা করে এবং যারা সুসমাচার প্রচার করে তাদের সকলকে চুপ করানোর জন্য তার নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকা জগৎকে ব্যবহার করে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-৯, ১২, ১৭) সে কীভাবে তা করে? অন্তত তিনটে উপায়ে।

৮, ৯. কীভাবে শয়তান ভ্রান্ত ভালবাসাকে ব্যবহার করে আর কেন আমাদের ভেবেচিন্তে বন্ধুবান্ধব বাছাই করা উচিত?

একটা উপায়, যেটার দ্বারা শয়তান আমাদের বিক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করে, তা হল জীবনের চিন্তা। এই শেষকালে লোকেরা অর্থপ্রিয়, আত্মপ্রিয় এবং বিলাসপ্রিয়। তারা ঈশ্বরপ্রিয় নয়। (২ তীমথিয় ৩:১-৪) জীবনের রোজকার বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত ডুবে থাকায়, আমরা তাদের কাছে যে-সুসমাচার নিয়ে যাই, অধিকাংশ লোক তা ‘বুঝিতে পারে না।’ তারা বাইবেলের সত্য শেখার প্রতি খুব একটা আগ্রহী নয়। (মথি ২৪:৩৭-৩৯) এই ধরনের এক মনোভাব সংক্রামক হতে পারে, আমাদেরকে আধ্যাত্মিক উদাসীন অবস্থায় ঝিমিয়ে পড়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে। আমরা যদি বস্তুগত জিনিসপত্র ও জীবনের আনন্দফূর্তির প্রতি ভালবাসা গড়ে তুলতে দিই, তা হলে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালবাসা শীতল হয়ে যাবে।—মথি ২৪:১২.

এই কারণে, খ্রিস্টানরা ভেবেচিন্তে তাদের বন্ধুবান্ধব বাছাই করে। “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে,” রাজা শলোমন বলেছিলেন, “কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ১৩:২০) আমরা যেন সেই লোকেদের “সহচর” হই, যারা ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করে। তা করা কতই না মনোরম! আমরা যখন সভাগুলোতে ও অন্য সময়ে আমাদের আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করি, তখন আমরা তাদের ভালবাসা, তাদের বিশ্বাস, তাদের আনন্দ এবং তাদের প্রজ্ঞা দেখে উৎসাহ পাই। এই ধরনের গঠনমূলক মেলামেশা আমাদের পরিচর্যায় অধ্যবসায়ী হওয়ার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে দৃঢ় করে।

১০. কোন কোন উপায়ে শয়তান পরিহাসের দ্বারা সেই লোকেদের বিরোধিতা করে থাকে, যারা ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করে?

১০ দ্বিতীয় উপায় যেটার দ্বারা শয়তান সমস্ত খ্রিস্টানকে ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করা থেকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, তা হল পরিহাস। এই পন্থা সম্বন্ধে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। পৃথিবীতে তাঁর পরিচর্যার সময়, যিশু খ্রিস্টকে পরিহাস করা হয়েছিল—তাঁকে উপহাস, তাঁকে ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ, অপমান করা হয়েছিল আর এমনকি তাঁর গায়ে থুথু দেওয়া হয়েছিল। (মার্ক ৫:৪০; লূক ১৬:১৪; ১৮:৩২) প্রাথমিক খ্রিস্টানরাও উপহাসের শিকার হয়েছিল। (প্রেরিত ২:১৩; ১৭:৩২) যিহোবার আধুনিক দিনের দাসেরা অনুরূপ অপব্যবহারের শিকার হয়। প্রেরিত পিতরের কথা অনুসারে, তারা কার্যত “ভাক্ত ভাববাদীগণ” হিসেবে অভিহিত হবে। “শেষকালে,” পিতর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, “উপহাসের সহিত উপহাসকেরা উপস্থিত হইবে; তাহারা আপন আপন অভিলাষ অনুসারে চলিবে, এবং বলিবে, তাঁহার আগমনের প্রতিজ্ঞা কোথায়? কেননা . . . সমস্তই সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন, তেমনই রহিয়াছে।” (২ পিতর ৩:৩, ৪) ঈশ্বরের লোকেরা বাস্তববাদী নয় এই কারণ দেখিয়ে তাদেরকে পরিহাস করা হয়। বাইবেলের নৈতিক মানগুলোকে সেকেলে বলে ধরা হয়। আমরা যে-বার্তা প্রচার করি, অনেকের কাছে সেটা মূর্খতা। (১ করিন্থীয় ১:১৮, ১৯) খ্রিস্টান হিসেবে আমরা হয়তো স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে এবং মাঝে মাঝে পারিবারিক বৃত্তের মধ্যেও পরিহাসের মুখোমুখি হই। তবুও, দমে না গিয়ে আমরা আমাদের প্রচার কাজের মাধ্যমে ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করে চলি, কারণ যিশুর মতো আমরাও জানি যে, ঈশ্বরের বাক্যই সত্যস্বরূপ।—যোহন ১৭:১৭.

১১. কীভাবে শয়তান খ্রিস্টানদের চুপ করানোর জন্য তাড়নাকে ব্যবহার করেছে?

১১ তৃতীয় পন্থা, যেটাকে দিয়াবল আমাদের চুপ করানোর চেষ্টায় ব্যবহার করে থাকে, তা হল বিরোধিতা বা তাড়না। যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “লোকেরা ক্লেশ দিবার জন্য তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, ও তোমাদিগকে বধ করিবে, আর আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদিগকে দ্বেষ করিবে।” (মথি ২৪:৯) বাস্তবিকই, যিহোবার সাক্ষি হিসেবে পৃথিবীর অনেক জায়গায় আমরা প্রচণ্ড ক্লেশ বা তাড়নার মুখোমুখি হয়েছি। আমরা জানি যিহোবা অনেক আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, যারা ঈশ্বরকে সেবা করে ও যারা শয়তান দিয়াবলকে সেবা করে, তাদের মধ্যে ঘৃণা বা শত্রুতা গড়ে উঠবে। (আদিপুস্তক ৩:১৫) এ ছাড়া আমরা এও জানি যে, পরীক্ষার মধ্যেও নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার দ্বারা আমরা যিহোবার সার্বিক সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতার পক্ষে সাক্ষ্য দিই। এটা জানা এমনকি সবচেয়ে চরম পরিস্থিতিগুলোতেও আমাদের শক্তিশালী করতে পারে। কোনো তাড়না কখনো স্থায়ীভাবে আমাদের চুপ করাতে পারবে না, যদি আমরা ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ থাকি।

১২. শয়তানের বিরোধিতার মুখেও বিশ্বস্ত থাকার সময় কেন আমাদের আনন্দ করা উচিত?

১২ আপনি কি জগতের প্রলোভনকে প্রতিরোধ করেন এবং পরিহাস ও বিরোধিতা সত্ত্বেও বিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত হন? তা হলে, আপনার আনন্দ করার কারণ রয়েছে। যিশু সেই ব্যক্তিদের আশ্বাস দিয়েছেন, যারা তাঁকে অনুসরণ করবে: “ধন্য তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে। আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর; কারণ তোমাদের পূর্ব্বে যে ভাববাদিগণ ছিলেন, তাঁহাদিগকে তাহারা সেই মত তাড়না করিত।” (মথি ৫:১১, ১২) আপনার ধৈর্য প্রমাণ দেয় যে, যিহোবার শক্তিশালী পবিত্র আত্মা আপনার ওপর রয়েছে, আপনাকে তাঁর গৌরব প্রতিফলিত করতে শক্তি জোগাচ্ছে।—২ করিন্থীয় ১২:৯.

যিহোবার কাছ থেকে ধৈর্য আসে

১৩. মূল কারণটা কী, যেজন্য আমরা আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় ধৈর্য ধরি?

১৩ মূল যে-কারণটার জন্য আমরা পরিচর্যায় ধৈর্য ধরি, সেটা হচ্ছে আমরা যিহোবাকে ভালবাসি ও তাঁর গৌরব প্রতিফলিত করে আনন্দিত হই। মানুষের সেই ব্যক্তিদের অনুকরণ করার প্রবণতা থাকে, যাদের তারা ভালবাসে ও সম্মান করে এবং যিহোবা ঈশ্বর ছাড়া অন্য আর কেউই অনুকরণ করার মতো এতটা যোগ্য নন। যিহোবা তাঁর নিজের মহৎ প্রেমের কারণে তাঁর পুত্রকে সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার এবং বাধ্য মানবজাতিকে মুক্ত করার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। (যোহন ৩:১৬; ১৮:৩৭) ঈশ্বরের মতো আমরাও চাই যে, সব ধরনের মানুষ যেন মনপরিবর্তন বা অনুতাপ করে ও পরিত্রাণ পায়; সেজন্যই আমরা তাদের কাছে প্রচার করি। (২ পিতর ৩:৯) এই আকাঙ্ক্ষা ও সেইসঙ্গে ঈশ্বরকে অনুকরণ করার জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্প আমাদেরকে পরিচর্যার মাধ্যমে তাঁর গৌরব প্রতিফলিত করার ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ী হতে প্রেরণা দেয়।

১৪. কীভাবে যিহোবা আমাদের পরিচর্যায় ধৈর্য ধরতে শক্তিশালী করেন?

১৪ তবে, খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় ধৈর্য ধরার জন্য আমরা মূলত যিহোবার কাছ থেকে শক্তি পাই। তিনি আমাদেরকে তাঁর আত্মা, তাঁর সংগঠন এবং তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে শক্তি জোগান ও বল দেন। যারা তাঁর গৌরব প্রতিফলিত করতে ইচ্ছুক, তাদের যিহোবা ‘ধৈর্য্য দেন।’ তিনি আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেন এবং বিভিন্ন পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য জ্ঞান বা প্রজ্ঞা দান করেন। (রোমীয় ১৫:৫; যাকোব ১:৫) এ ছাড়া, যিহোবা আমাদেরকে এমন কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে দেন না, যা সহ্যাতীত। আমরা যদি যিহোবার ওপর নির্ভর করি, তা হলে তিনি আমাদের রক্ষার পথ করে দেবেন, যাতে আমরা তাঁর গৌরব ক্রমাগত প্রতিফলিত করতে পারি।—১ করিন্থীয় ১০:১৩.

১৫. কী আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে?

১৫ আমাদের পরিচর্যায় ধৈর্য ধরা প্রমাণ দেয় যে, ঈশ্বরের আত্মা আমাদের ওপর রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ: ধরুন কেউ আপনাকে বিনামূল্যে এক ধরনের রুটি ঘরে ঘরে বিতরণ করতে বললেন। আপনাকে নিজের খরচে ও নিজের সময় ব্যয় করে এটা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, আপনি শীঘ্রই জানতে পারেন যে, আসলে মাত্র অল্প কিছু লোক আপনার রুটি নিতে আগ্রহী; কেউ কেউ এমনকি এটা বিতরণের জন্য আপনার প্রচেষ্টার বিরোধিতাও করবে। আপনি কি মনে করেন যে, আপনি মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে সেই কাজ করে যেতে চাইবেন? সম্ভবত না। অথচ, আপনি হয়তো আপনার নিজের সময় ও নিজের পয়সা খরচ করে বছরের পর বছর বা এমনকি কয়েক দশক ধরে সুসমাচার ঘোষণায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে প্রাণপণ করেছেন। কেন? এইজন্য কি নয় যে আপনি যিহোবাকে ভালবাসেন এবং তাঁর আত্মার মাধ্যমে তিনি আপনাকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করার জন্য আপনার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেছেন? অবশ্যই!

স্মরণে রাখার মতো একটা কাজ

১৬. আমাদের পরিচর্যায় ধৈর্য ধরা আমাদের জন্য এবং যারা আমাদের কথা শোনে তাদের জন্য কী অর্থ রাখে?

১৬ নতুন চুক্তির পরিচর্যা হল অতুলনীয় এক উপহার। (২ করিন্থীয় ৪:৭) একইভাবে, সারা পৃথিবীতে আরও মেষদের দ্বারা চালিত খ্রিস্টীয় পরিচর্যা হল এক ধন। আপনি যখন আপনার পরিচর্যায় ক্রমাগত ধৈর্য ধরেন, তখন আপনি তীমথিয়কে পৌল যেমন লিখেছিলেন তেমনই ‘আপনাকে ও যাহারা আপনার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ’ করতে পারেন। (১ তীমথিয় ৪:১৬) ভেবে দেখুন যে, সেটার অর্থ কী। আপনি যে-সুসমাচার প্রচার করেন, তা অন্যদেরকে চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়। আপনি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের এক দৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলতে পারেন, যাদের আপনি আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করেন। কল্পনা করুন যে, পরমদেশে চিরকাল সেই লোকেদের সঙ্গে বেঁচে থাকা কত আনন্দের বিষয়ই না হবে, যাদেরকে আপনি ঈশ্বরের সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করেছেন! নিশ্চিতভাবেই তারা কখনো তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আপনার প্রচেষ্টাকে ভুলে যাবে না। কতই না পরিতৃপ্তিদায়ক এক কারণ!

১৭. কেন আমাদের সময়কাল মানব ইতিহাসে এক অদ্বিতীয় সময়?

১৭ আপনি মানব ইতিহাসের এক অদ্বিতীয় সময়কালে বাস করছেন। ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন এক জগতে আবার আর কখনোই সুসমাচার প্রচারিত হবে না। নোহ এইরকম এক জগতে বাস করতেন আর তিনি সেটাকে ধ্বংস হয়ে যেতে দেখেছিলেন। তিনি এটা জেনে নিশ্চয়ই কত আনন্দিতই না হয়েছিলেন যে, তিনি একটা জাহাজ নির্মাণ করে বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেছেন, যা তার ও তার পরিবারকে রক্ষার দিকে পরিচালিত করেছিল! (ইব্রীয় ১১:৭) আপনিও একইরকম আনন্দ লাভ করতে পারেন। ভেবে দেখুন, নতুন জগতে আপনি যখন এই শেষকালে করা আপনার কাজগুলোর বিষয়ে চিন্তা করবেন, তখন এটা জেনে আপনি কেমন বোধ করবেন যে, রাজ্যের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনি আপনার যথাসাধ্য করেছিলেন।

১৮. যিহোবা তাঁর দাসদের কোন আশ্বাস এবং উৎসাহ দেন?

১৮ তাই, আসুন আমরা ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করে চলি। আমাদের তা করে চলা এমন কিছু হবে, যা আমরা চিরকাল মনে রাখব। যিহোবা আমাদের কাজগুলোও মনে রাখেন। বাইবেল এই উৎসাহ প্রদান করে: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং তোমরা পবিত্রগণের যে পরিচর্য্যা করিয়াছ ও করিতেছ, তদ্দ্বারা তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না। কিন্তু আমাদের বাসনা এই, যেন তোমাদের প্রত্যেক জন একই প্রকার যত্ন দেখায়, যাহাতে শেষ পর্য্যন্ত প্রত্যাশার পূর্ণতা থাকিবে; যেন তোমরা শিথিল না হও, কিন্তু যাহারা বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা দ্বারা প্রতিজ্ঞা-সমূহের দায়াধিকারী, তাহাদের অনুকারী হও।”—ইব্রীয় ৬:১০-১২.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কীভাবে খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করে?

• কয়েকটা পন্থা কী, যেগুলো ঈশ্বরের লোকেদের চুপ করানোর প্রচেষ্টায় শয়তান ব্যবহার করে থাকে?

• কী প্রমাণ রয়েছে যে, ঈশ্বরের আত্মা আমাদের ওপর রয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

মোশির মুখ গৌরব প্রতিফলিত করেছিল

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমরা আমাদের পরিচর্যায় ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করি