সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রিস্টানরা যিহোবার গৌরব প্রতিফলিত করে

খ্রিস্টানরা যিহোবার গৌরব প্রতিফলিত করে

খ্রিস্টানরা যিহোবার গৌরব প্রতিফলিত করে

“ধন্য তোমাদের চক্ষু, কেননা তাহা দেখে, এবং তোমাদের কর্ণ, কেননা তাহা শুনে।”—মথি ১৩:১৬.

১. সীনয় পর্বতে মোশির প্রতি ইস্রায়েলীয়দের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে কোন প্রশ্ন আসে?

 সীনয় পর্বতে সমবেত ইস্রায়েলীয়দের যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার উপযুক্ত কারণ ছিল। বস্তুতপক্ষে, তিনি তাদেরকে এক পরাক্রম হস্ত দ্বারা মিশর থেকে উদ্ধার করেছিলেন। তিনি তাদের প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিয়েছিলেন, প্রান্তরে তাদের জন্য খাদ্য ও জল সরবরাহ করেছিলেন। এরপর, তিনি তাদেরকে অমালেক সৈন্যবাহিনীর ওপর বিজয় এনে দিয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ১৪:২৬-৩১; ১৬:২–১৭:১৩) সীনয় পর্বতের সামনে প্রান্তরে তারা যখন শিবির স্থাপন করেছিল, তখন লোকেরা মেঘগর্জন শুনে ও বিদ্যুৎ চমকাতে দেখে এতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে, তারা কাঁপছিল। পরে তারা মোশিকে সীনয় পর্বত থেকে নেমে আসতে দেখেছিল আর তার মুখ যিহোবার গৌরব প্রতিফলিত করছিল। কিন্তু তারা বিস্ময় এবং উপলব্ধির সঙ্গে সাড়া দেওয়ার পরিবর্তে দূরে সরে গিয়েছিল। “তাহারা [মোশির] নিকটে আসিতে ভীত হইল।” (যাত্রাপুস্তক ১৯:১০-১৯; ৩৪:৩০) যিহোবা, যিনি তাদের জন্য এত কিছু করেছেন, তাঁর গৌরবের প্রতিফলন দেখে তারা কেন ভীত হয়েছিল?

২. মোশি ঈশ্বরের যে-গৌরব প্রতিফলিত করেছিলেন, তা দেখে ইস্রায়েলীয়রা হয়তো কেন ভীত হয়েছে?

সম্ভবত, এই সময়ে ইস্রায়েলীয়দের ভয় পাওয়া আগে যা ঘটেছিল, অনেকটা সেটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তারা যখন একটা সোনার বাছুর বানিয়ে স্বেচ্ছায় যিহোবার অবাধ্য হয়েছিল, তখন তিনি তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ৩২:৪, ৩৫) তারা কি যিহোবার শাসন থেকে শিক্ষা পেয়েছিল ও এর প্রতি উপলব্ধি দেখিয়েছিল? না, অধিকাংশই দেখায়নি। মোশি তার জীবনের শেষ দিকে ইস্রায়েলীয়দের অবাধ্যতার অন্যান্য ঘটনাসহ সোনার বাছুরের ঘটনাটা স্মরণ করেছিলেন। তিনি লোকেদের বলেছিলেন: “তোমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরুদ্ধাচারী হইলে, তাঁহাতে বিশ্বাস করিলে না, ও তাঁহার রবে কর্ণপাত করিলে না। তোমাদের সহিত আমার পরিচয়-দিন অবধি তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধাচারী হইয়া আসিতেছ।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৯:১৫-২৪.

৩. মোশি তার মুখে আবরণ দেওয়ার বিষয়ে কী করেছিলেন?

ইস্রায়েলীয়দের ভয় পাওয়া দেখে মোশি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা বিবেচনা করুন। বিবরণটিতে লেখা আছে: “পরে তাহাদের সহিত কথোপকথন সমাপ্ত হইলে মোশি আপন মুখে আবরণ দিলেন। কিন্তু মোশি যখন সদাপ্রভুর সহিত কথা কহিতে ভিতরে [আবাসে] তাঁহার সম্মুখে যাইতেন, তখন, যাবৎ বাহিরে আসিতেন, তাবৎ সেই আবরণ খুলিয়া রাখিতেন; পরে যে সকল আজ্ঞা পাইতেন, বাহির হইয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণকে তাহা বলিতেন। মোশির মুখের চর্ম্ম উজ্জ্বল, ইহা ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাঁহার মুখের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিত; পরে মোশি সদাপ্রভুর সহিত কথা কহিতে যে পর্য্যন্ত না যাইতেন, তাবৎ আপন মুখে পুনর্ব্বার আবরণ দিয়া রাখিতেন।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৩৩-৩৫) কেন মোশি মাঝে মাঝে তার মুখে আবরণ দিতেন? এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদেরকে যিহোবার সঙ্গে আমাদের নিজেদের সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে দেখতে সাহায্য করতে পারে।

সুযোগগুলো হারানো

৪. প্রেরিত পৌল মোশির আবরণ দেওয়া সম্বন্ধে কোন অর্থ প্রকাশ করেছিলেন?

প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, মোশির আবরণ দেওয়ার সঙ্গে স্বয়ং ইস্রায়েলীয়দের মন ও হৃদয়ের অবস্থা জড়িত ছিল। পৌল লিখেছিলেন: “ইস্রায়েল-সন্তানগণ মোশির মুখের তেজ [‘গৌরব,’ বাংলা জুবিলী বাইবেল] প্রযুক্ত তাঁহার মুখের দিকে একদৃষ্টে চাহিতে পারিল না . . . তাহাদের মন কঠিনীভূত হইয়াছিল।” (২ করিন্থীয় ৩:৭, ১৪) কী এক দুঃখজনক পরিস্থিতি! ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার মনোনীত লোক ছিল আর তিনি চেয়েছিলেন তারা যেন তাঁর নিকটবর্তী হয়। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৪-৬) কিন্তু, তারা ঈশ্বরের গৌরবের প্রতিফলনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে অনিচ্ছুক ছিল। প্রেমপূর্ণ ভক্তিতে তাদের হৃদয় ও মন যিহোবার দিকে ফেরানোর পরিবর্তে, তারা এক অর্থে তাঁর কাছ থেকে সরে গিয়েছিল।

৫, ৬. (ক) মোশির দিনের ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে প্রথম শতাব্দীর যিহুদিদের কী সাদৃশ্য ছিল? (খ) যারা যিশুর কথা শুনেছিল ও যারা শোনেনি, তাদের মধ্যে কী বৈসাদৃশ্য ছিল?

এই ক্ষেত্রে আমরা সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে এক সাদৃশ্য খুঁজে পাই। পৌল যেসময়ে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন সেই সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা চুক্তি, মহান মোশি যিশু খ্রিস্টের মধ্যস্থতায় নতুন চুক্তির দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। কথায় ও কাজে উভয় দিক দিয়ে যিশু নিখুঁতভাবে যিহোবার গৌরব প্রতিফলিত করেছিলেন। পুনরুত্থিত যিশু সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “ইনি [ঈশ্বরের] প্রতাপের” বা গৌরবের “প্রভা ও তত্ত্বের মুদ্রাঙ্ক।” (ইব্রীয় ১:৩) যিহুদিদের কী এক চমৎকার সুযোগই না ছিল! তারা স্বয়ং ঈশ্বরের পুত্রের কাছ থেকে অনন্তজীবন সম্বন্ধীয় কথাগুলো শুনতে পারত! দুঃখের বিষয় যে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই শোনেনি, যাদের কাছে যিশু প্রচার করেছিলেন। তাদের সম্বন্ধে যিশাইয়ের মাধ্যমে করা যিহোবার ভবিষ্যদ্বাণী যিশু উদ্ধৃতি করেছিলেন: “এই লোকদের হৃদয় অসাড় হইয়াছে, শুনিতে তাহাদের কর্ণ ভারী হইয়াছে, ও তাহারা চক্ষু মুদ্রিত করিয়াছে, পাছে তাহারা চক্ষে দেখে, আর কর্ণে শুনে, হৃদয়ে বুঝে, এবং ফিরিয়া আইসে, আর আমি তাহাদিগকে সুস্থ করি।”—মথি ১৩:১৫; যিশাইয় ৬:৯, ১০.

যিহুদি ও যিশুর সেই শিষ্যদের মধ্যে এক স্পষ্ট বৈসাদৃশ্য ছিল, যাদের সম্বন্ধে যিশু বলেছিলেন: “ধন্য তোমাদের চক্ষু, কেননা তাহা দেখে, এবং তোমাদের কর্ণ, কেননা তাহা শুনে।” (মথি ১৩:১৬) সত্য খ্রিস্টানরা যিহোবার সম্বন্ধে জানতে ও তাঁকে সেবা করতে আকুল আকাঙ্ক্ষী। তারা তাঁর ইচ্ছা পালন করে আনন্দিত হয়, যা বাইবেলের পাতায় পাতায় রয়েছে। ফলস্বরূপ, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা নতুন নিয়ম বা চুক্তির সঙ্গে জড়িত তাদের পরিচর্যায় যিহোবার গৌরব প্রতিফলিত করে এবং আরও মেষের সদস্যরাও অনুরূপভাবে তা করে থাকে।—২ করিন্থীয় ৩:৬, ১৮.

যেকারণে সুসমাচার আবৃত রয়েছে

৭. কেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, অধিকাংশ লোক সুসমাচারকে প্রত্যাখ্যান করে?

আমরা যেমন দেখেছি যে, যিশুর দিনে ও মোশির দিনে উভয় সময়ই অধিকাংশ ইস্রায়েলীয় তাদের সামনে খোলা অদ্বিতীয় সুযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমাদের সময়েও তা-ই ঘটছে। অধিকাংশ লোক আমরা যে-সুসমাচার প্রচার করি তা প্রত্যাখ্যান করে। এটা আমাদের অবাক করে না। পৌল লিখেছিলেন: “কিন্তু আমাদের সুসমাচার যদি আবৃত থাকে, তবে যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদেরই কাছে আবৃত থাকে। তাহাদের মধ্যে এই যুগের দেব অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে।” (২ করিন্থীয় ৪:৩, ৪) সুসমাচারকে গুপ্ত রাখার বিষয়ে শয়তানের প্রচেষ্টা ছাড়াও, অনেক লোক তাদের নিজেদের মুখে আবরণ দেয় কারণ তারা দেখতে চায় না।

৮. কোন উপায়ে অনেকে অজ্ঞানতার দ্বারা অন্ধ হয়ে আছে আর কীভাবে আমরা অনুরূপভাবে প্রভাবিত হওয়া এড়াতে পারি?

অনেকের রূপক চোখ অজ্ঞানতার কারণে অন্ধ হয়ে আছে। বাইবেল এমন জাতিগুলোর বিষয়ে বলে, যারা “চিত্তে অন্ধীভূত, ঈশ্বরের জীবনের বহির্ভূত হইয়াছে, আন্তরিক অজ্ঞানতা প্রযুক্ত, . . . হইয়াছে।” (ইফিষীয় ৪:১৮) একজন খ্রিস্টান হওয়ার আগে, ব্যবস্থায় অভিজ্ঞ ব্যক্তি পৌল অজ্ঞানতার দ্বারা এতটাই অন্ধ হয়ে ছিলেন যে, তিনি ঈশ্বরের মণ্ডলীকে তাড়না করতেন। (১ করিন্থীয় ১৫:৯) তা সত্ত্বেও, যিহোবা তার কাছে সত্য প্রকাশ করেছিলেন। পৌল ব্যাখ্যা করেন: “এই জন্য দয়া পাইয়াছি, যেন যীশু খ্রীষ্ট এই অগ্রগণ্য আমাতে সম্পূর্ণ দীর্ঘসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করেন, যাহাতে আমি তাহাদের আদর্শ হইতে পারি, যাহারা অনন্ত জীবনের নিমিত্ত তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে।” (১ তীমথিয় ১:১৬) পৌলের মতো অনেকে, যারা একসময় ঈশ্বরের সত্যের বিরোধিতা করত, তারা এখন তাঁকে সেবা করছে। এটা তাদের কাছেও সাক্ষ্য দিয়ে চলার এক উপযুক্ত কারণ, যারা আমাদের বিরোধিতা করে। ইতিমধ্যে, ঈশ্বরের বাক্য নিয়মিত অধ্যয়ন করে এবং এটির অর্থ বুঝে আমরা এমনভাবে অজ্ঞানতাপ্রযুক্ত কাজ করা থেকে সুরক্ষিত, যা যিহোবার অসন্তোষ নিয়ে আসে।

৯, ১০. (ক) প্রথম শতাব্দীর যিহুদিরা কীভাবে দেখিয়েছিল যে, তারা শিখতে চায় না এবং তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে গোঁড়া? (খ) আজকে খ্রিস্টীয়জগতে কি কোনো সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করুন।

অনেকের ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক দৃষ্টি স্পষ্ট নয় কারণ তারা শিখতে চায় না এবং তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে গোঁড়া। অনেক যিহুদি যিশু ও তাঁর শিক্ষাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছিল কারণ তারা একগুঁয়েভাবে মোশির ব্যবস্থাকে পালন করেছিল। অবশ্যই তাদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যতিক্রম ছিল। উদাহরণস্বরূপ, যিশু পুনরুত্থিত হওয়ার পর “যাজকদের মধ্যে বিস্তর লোক বিশ্বাসের বশবর্ত্তী হইল।” (প্রেরিত ৬:৭) তবে, অধিকাংশ যিহুদিদের সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “অদ্য পর্য্যন্ত যে কোন সময়ে মোশি পাঠ করা হয়, তখন তাহাদের হৃদয়ের উপরে আবরণ থাকে।” (২ করিন্থীয় ৩:১৫) পৌল সম্ভবত জানতেন যে, এর আগে যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের যিশু কী বলেছিলেন: “তোমরা শাস্ত্র অনুসন্ধান করিয়া থাক, কারণ তোমরা মনে করিয়া থাক যে, তাহাতেই তোমাদের অনন্ত জীবন রহিয়াছে; আর তাহাই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়।” (যোহন ৫:৩৯) তারা এত মনোযোগ দিয়ে যে-শাস্ত্র অনুসন্ধান করেছিল, তা তাদেরকে এটা বুঝতে সাহায্য করা উচিত ছিল যে, যিশুই ছিলেন সেই মশীহ। কিন্তু, যিহুদিদের নিজস্ব ধারণাগুলো ছিল আর তাই এমনকি অলৌকিক কার্য সাধনকারী ঈশ্বরের পুত্র পর্যন্ত তাদেরকে অন্য বিষয়ে দৃঢ়নিশ্চিত করতে পারেনি।

১০ আজকে খ্রিস্টীয়জগতের অনেকের ক্ষেত্রে একই বিষয় সত্য। প্রথম শতাব্দীর যিহুদিদের মতো, “ঈশ্বরের বিষয়ে তাহাদের উদ্যোগ আছে, কিন্তু তাহা জ্ঞানানুযায়ী নয়।” (রোমীয় ১০:২) যদিও কেউ কেউ বাইবেল অধ্যয়ন করে কিন্তু তারা এটি যা বলে তা বিশ্বাস করতে চায় না। তারা মেনে নিতে অস্বীকার করে যে, যিহোবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে গঠিত বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর মাধ্যমে তাঁর লোকেদের শিক্ষা দেন। (মথি ২৪:৪৫) কিন্তু, আমরা বুঝতে পারি যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের শিক্ষা দিচ্ছেন এবং ঐশিক সত্যের প্রতি বোধগম্যতা সবসময় বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। (হিতোপদেশ ৪:১৮) নিজেদেরকে যিহোবার দ্বারা শিক্ষিত হতে দিয়ে আমরা তাঁর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধীয় জ্ঞান দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হই।

১১. সত্য লুকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ইচ্ছাপূর্বক চিন্তা কোন ভূমিকা পালন করেছে?

১১ অন্যেরা ইচ্ছাপূর্বক অন্ধ হয়ে আছে। এটা ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল যে, কেউ কেউ ঈশ্বরের লোকেদের এবং যিশুর উপস্থিতি সম্বন্ধে তারা যে-বার্তা ঘোষণা করে, সেটাকে উপহাস করবে। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “সেই লোকেরা ইচ্ছাপূর্ব্বক ইহা ভুলিয়া যায়,” মূলত সেই বিষয়টা যে, নোহের সময়ে জগতে ঈশ্বর একবার জলপ্লাবন এনেছিলেন। (২ পিতর ৩:৩-৬) অনুরূপভাবে, অনেক নামধারী খ্রিস্টান সঙ্গে সঙ্গে স্বীকার করে যে, যিহোবা স্নেহ বা করুণা, দয়া এবং ক্ষমা প্রদর্শন করেন; অথচ, তারা এই বিষয়টা অগ্রাহ্য বা প্রত্যাখ্যান করে যে, তিনি অবশ্যই পাপের দণ্ড দেন। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭) বাইবেল প্রকৃতপক্ষে যা শিক্ষা দেয়, তা বোঝার জন্য সত্য খ্রিস্টানরা প্রাণপণ চেষ্টা করে।

১২. লোকেরা কীভাবে পরম্পরাগত রীতিনীতির দ্বারা অন্ধ হয়ে আছে?

১২ গির্জায় যায় এমন অনেকে পরম্পরাগত বিধি বা রীতিনীতির দ্বারা অন্ধ হয়ে আছে। যিশু তাঁর দিনের ধর্মীয় নেতাদের বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের পরম্পরাগত বিধির জন্য ঈশ্বরের বাক্য নিষ্ফল করিয়াছ।” (মথি ১৫:৬) যিহুদিরা বাবিলের নির্বাসন থেকে ফিরে আসার পর উদ্যোগের সঙ্গে বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপিত করেছিল, অথচ স্বয়ং যাজকরাই অহংকারী ও আত্মধার্মিক হয়ে উঠেছিল। ধর্মীয় উৎসবগুলো রীতিগত বিষয় হয়ে উঠেছিল, ঈশ্বরের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধাশূন্য ছিল। (মালাখি ১:৬-৮) যিশুর সময়ের মধ্যে অধ্যাপক ও ফরীশীরা মোশির ব্যবস্থায় অগণিত পরম্পরাগত রীতিনীতি যোগ করে ফেলেছিল। যিশু সেই লোকেদের কপটী বলে চিহ্নিত করেছিলেন কারণ তারা সেই ধার্মিক নীতিগুলোকে উপেক্ষা করেছিল, যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা ছিল। (মথি ২৩:২৩, ২৪) সত্য খ্রিস্টানদের অবশ্যই সাবধান হতে হবে, যাতে তারা মানুষের তৈরি ধর্মীয় রীতিনীতিগুলোকে তাদের বিশুদ্ধ উপাসনা থেকে পথভ্রষ্ট করার সুযোগ না দেয়।

‘যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে দেখা’

১৩. কোন দুটো উপায়ে মোশি ঈশ্বরের গৌরব কিছুটা দেখেছিলেন?

১৩ মোশি পর্বতে ঈশ্বরের গৌরব দেখতে চেয়েছিলেন আর তিনি যিহোবার গৌরবের উত্তরাভা দেখেছিলেন। যখন তিনি আবাসে যেতেন তিনি কোনো আবরণ দিতেন না। মোশি একজন দৃঢ়বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চেয়েছিলেন। যদিও তাকে দর্শনে যিহোবার গৌরব দেখার জন্য আশীর্বাদ করা হয়েছিল কিন্তু এক অর্থে তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বাসের চোখ দিয়ে ঈশ্বরকে দেখেছিলেন। বাইবেল বলে যে, মোশি “যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে যেন দেখিয়াই স্থির থাকিলেন।” (ইব্রীয় ১১:২৭; যাত্রাপুস্তক ৩৪:৫-৭) আর তিনি ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করেছিলেন, শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট সময়ে তার মুখ উজ্জ্বল হওয়ার দ্বারাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে ইস্রায়েলীয়দের যিহোবাকে জানতে ও তাঁকে সেবা করতে সাহায্য করার জন্য তার প্রচেষ্টাগুলোরও মাধ্যমে।

১৪. যিশু কীভাবে ঈশ্বরের গৌরব দেখেছিলেন এবং তিনি কী করে আনন্দ পেয়েছিলেন?

১৪ স্বর্গে যিশু অগণিত বছর ধরে এমনকি নিখিলবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ারও আগে থেকে, সরাসরি ঈশ্বরের গৌরব দেখেছিলেন। (হিতোপদেশ ৮:২২, ৩০) সেই সময়কালে এক গভীর প্রেমময় ও স্নেহময় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যিহোবা ঈশ্বর সমুদয় সৃষ্টির এই প্রথমজাতের প্রতি সবচেয়ে বেশি কোমল প্রেম ও স্নেহ প্রকাশ করেছিলেন। প্রতিদানে যিশুও তাঁর ঐশিক জীবনদাতার প্রতি গভীর প্রেম ও স্নেহ প্রকাশ করেছিলেন। (যোহন ১৪:৩১; ১৭:২৪) পিতা ও পুত্রের মধ্যে এক নিখুঁত ভালবাসা বিদ্যমান ছিল। মোশির মতো যিশু, তিনি যা কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন সমস্তকিছুতে যিহোবার গৌরব প্রতিফলিত করে আনন্দ পেয়েছিলেন।

১৫. কোন উপায়ে খ্রিস্টানরা ঈশ্বরের গৌরবের বিষয় গভীরভাবে ধ্যান করে?

১৫ মোশি ও যিশুর মতো, পৃথিবীতে ঈশ্বরের বর্তমান দিনের সাক্ষিরা যিহোবার গৌরবের বিষয় গভীরভাবে ধ্যান করতে উৎসুক। তারা গৌরবান্বিত সুসমাচারকে প্রত্যাখ্যান করেনি। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “হৃদয় যখন [তাঁহার ইচ্ছা পালনের জন্য] প্রভুর [“যিহোবার,” NW] প্রতি ফিরে, তখন আবরণ উঠাইয়া ফেলা হয়।” (২ করিন্থীয় ৩:১৬) আমরা শাস্ত্র অধ্যয়ন করি কারণ আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চাই। আমরা যিহোবার পুত্র ও অভিষিক্ত রাজা যিশু খ্রিস্টের মুখে প্রতিফলিত গৌরবের প্রশংসা করি এবং তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করি। মোশি ও যিশুর মতো, অন্যদেরকে সেই গৌরবান্বিত ঈশ্বর যাঁকে আমরা উপাসনা করি তাঁর সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদেরকে এক পরিচর্যা দ্বারা আশীর্বাদ করা হয়েছে।

১৬. সত্য জেনে কেন আমরা আশীর্বাদ পেয়েছি?

১৬ যিশু প্রার্থনা করেছিলেন: “হে পিতঃ, . . . আমি তোমার ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তুমি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের হইতে এই সকল বিষয় গুপ্ত রাখিয়া শিশুদের নিকটে প্রকাশ করিয়াছ।” (মথি ১১:২৫) যিহোবা সেই ব্যক্তিদেরকে তাঁর উদ্দেশ্য ও ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে বোধগম্যতা দান করেন, যারা আন্তরিক এবং হৃদয়ে নম্র। (১ করিন্থীয় ১:২৬-২৮) আমরা তাঁর সুরক্ষামূলক তত্ত্বাবধানের অধীনে এসেছি আর তিনি আমাদের উপকারজনক—পূর্ণরূপে জীবন উপভোগ করার জন্য—শিক্ষা দান করেন। আমরা যেন যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার প্রতিটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করি, তাঁকে আরও অন্তরঙ্গভাবে জানার জন্য তাঁর দেওয়া বহু ব্যবস্থার জন্য কৃতজ্ঞ হই।

১৭. কিভাবে আমরা যিহোবার গুণাবলি আরও পূর্ণরূপে জানতে পারি?

১৭ পৌল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের লিখেছিলেন: “অনাবৃত মুখে আমরা . . . ঠিক যেন দর্পণেরই মত প্রভুর [“যিহোবার,” NW] গৌরব প্রতিফলিত করতে করতে . . . কর্মক্রিয়া অনুসারে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর গৌরবে তাঁর প্রতিমূর্ত্তিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকি।” (২ করিন্থীয় ৩:১৮, বাংলা জুবিলী বাইবেল) আমাদের আশা স্বর্গীয় বা পার্থিব যাই হোক না কেন, যিহোবাকে—বাইবেলে প্রকাশিত তাঁর গুণাবলি ও ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে—আমরা যত বেশি জানব, ততই আমরা তাঁর মতো হয়ে উঠব। আমরা যদি উপলব্ধিপূর্ণভাবে যিশু খ্রিস্টের জীবন, পরিচর্যা এবং শিক্ষাগুলো নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করি, তা হলে আমরা যিহোবার গুণাবলি আরও পূর্ণরূপে প্রতিফলিত করব। এটা জানা কতই না আনন্দের যে, আমরা আমাদের সেই ঈশ্বরের প্রশংসা নিয়ে আসি, যাঁর তেজ বা গৌরবকে আমরা প্রতিফলিত করার চেষ্টা করি!

আপনার কি মনে আছে?

• মোশি ঈশ্বরের যে-গৌরব প্রতিফলিত করেছিলেন, তা দেখে ইস্রায়েলীয়রা কেন ভীত হয়েছিল?

• কোন কোন উপায়ে সুসমাচার “আবৃত” ছিল, প্রথম শতাব্দীতে? আমাদের সময়ে?

• কীভাবে আমরা ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

ইস্রায়েলীয়রা মোশির মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকাতে পারেনি

[২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

পৌলের মতো অনেকে, যারা একসময় ঈশ্বরের সত্যের বিরোধিতা করত, তারা এখন তাঁকে সেবা করছে

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবার দাসেরা ঈশ্বরের গৌরব প্রতিফলিত করে আনন্দ পায়