সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মৃত্যুর মারাত্মক প্রভাব

মৃত্যুর মারাত্মক প্রভাব

মৃত্যুর মারাত্মক প্রভাব

 “ছয় বছর বয়সী এক মেয়ে আত্মহত্যা করে।” এই দুঃখজনক শিরোনামটি, জ্যাকি নামে এক ছোট্ট মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর বিষয়ে উল্লেখ করেছিল। সম্প্রতি, তার মা এক মারাত্মক রোগে ভুগে মারা গিয়েছিলেন। জ্যাকি এক চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তার ভাইবোনদের বলেছিল যে, সে ‘এক স্বর্গদূত হতে চায় এবং তার মায়ের সঙ্গে থাকতে চায়।’

ইয়েনের বয়স যখন ১৮ তখন সে তার যাজককে এই বিষয়টা ব্যাখ্যা করার জন্য বিনতি করেছিল যে, কেন ইয়েনের বাবা ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন। সেই যাজক দাবি করেছিলেন যে, যেহেতু ইয়েনের বাবা একজন ভাল মানুষ ছিলেন, তাই ঈশ্বর চেয়েছিলেন যেন তিনি স্বর্গে থাকেন। সেই ব্যাখ্যা শুনে ইয়েন এই উপসংহারে আসে যে, সে এই ধরনের একজন নিষ্ঠুর ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে চায় না। ইয়েনের কাছে জীবন এতটাই অর্থহীন বলে মনে হয়েছিল যে, সে ভোগবিলাসের জীবনযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর ফলে সে মদ, মাদকদ্রব্য ও অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়েছিল। নিজের জীবনের ওপর সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল।

“জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে”

এই দুটো দুঃখজনক ঘটনা দেখায় যে, কীভাবে মৃত্যু লোকেদের জীবনকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারে, বিশেষ করে যদি তা হঠাৎ করে ঘটে। নিঃসন্দেহে, সকলে বাইবেলে বর্ণিত এই বাস্তবতা সম্বন্ধে অবগত: “জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে।” (উপদেশক ৯:৫) কিন্তু, অনেকেই সেই কঠিন বাস্তবতাকে উপেক্ষা করতে চায়। আপনার সম্বন্ধে কী বলা যায়? বেঁচে থাকার জন্য আমাদের এতটা সময় ও মনোযোগ দিতে হয় যে, আমরা হয়তো আমাদের মৃত্যু সম্বন্ধে চিন্তা করা উপেক্ষা করে থাকি, যেটা আপাতদৃষ্টিতে বহু দূরে বলে মনে হয়।

“অধিকাংশ লোক মৃত্যুকে ভয় পায় এবং সেই বিষয়ে চিন্তা করা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে,” দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া উল্লেখ করে। তবে, এক সাংঘাতিক দুর্ঘটনা বা এক মারাত্মক রোগ হয়তো আমাদেরকে আকস্মিক মৃত্যুর মুখোমুখি করতে পারে। অথবা সম্ভবত একজন বন্ধুর বা আত্মীয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আমাদেরকে কঠোরভাবে সেই পরিণামের বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে পারে, যা সমস্ত মানবজাতির জন্য অপেক্ষা করছে।

তা সত্ত্বেও, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াগুলোতে শোকার্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই এই ধরনের কথা বলে থাকে, “জীবন জীবনের গতিতে চলতেই থাকবে।” আর বাস্তবিকই সেভাবে চলছে। বস্তুতপক্ষে, জীবন এত দ্রুত কেটে যাচ্ছে বলে মনে হতে পারে যে, আমরা যেন খুব তাড়াতাড়িই বার্ধক্যের সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি। এইরকম অবস্থায় এসে, মৃত্যুকে আর সুদূর ভবিষ্যতের বিষয় বলে মনে হয় না। অনেকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে হয়, দীর্ঘদিনের অনেক বন্ধুকে হারানোর কষ্ট সহ্য করতে হয়। অনেক বয়স্ক ব্যক্তির মনে প্রায়ই এই বিভ্রান্তিকর প্রশ্নটা ওঠে, “আমার পালা কবে আসবে?”

এক বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন

যদিও কেউ মৃত্যুর বাস্তবতাকে অস্বীকার করে না, তবুও মৃত্যুর পরে কী হতে পারে, তা এক বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো মনে হতে পারে। পরস্পরবিরোধী অনেক ব্যাখ্যা একজন সন্দেহবাদীকে পুরো বিষয়টাকে অজ্ঞাত বিষয়ের ওপর করা এক অযথা বিতর্কের বিষয় হিসেবে দেখার দিকে পরিচালিত করতে পারে। বাস্তববাদী ব্যক্তি হয়তো এই উপসংহারে আসতে পারে যে যেহেতু “একটাই জীবন” তাই জীবনের যথাসম্ভব সর্বোত্তম বিষয়গুলো আপনার উপভোগ করা উচিত।

এর বিপরীতে, অন্যেরা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করে যে, মৃত্যু সমস্তকিছুরই শেষ। তবুও, এর পরে কী হয় সেই সম্বন্ধে তাদের কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। কেউ কেউ ধরে নেয় যে, স্বর্গে অনন্তকাল ধরে সুখের মধ্যে জীবন চলতেই থাকবে আর অন্যেরা মনে করে যে, ভবিষ্যতে তারা আবার জীবিত হবে, সম্ভবত এক ভিন্ন ব্যক্তিরূপে।

শোকার্ত আত্মীয়রা সবসময়ই নিজেদের জিজ্ঞেস করে, “মৃতেরা কোথায়?” বেশ কয়েক বছর আগের কথা, একটা ফুটবল ক্লাবের সদস্যরা যখন এক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার জন্য যাচ্ছিল, তখন একটা ট্রাক হঠাৎ করে তাদের মিনিবাসকে ধাক্কা মারে, ফলে বাসটা কয়েক বার উলটে রাস্তার ধারে চলে যায়। সেই দলের পাঁচ জন সদস্য মারা যায়। সেই দুর্ঘটনায় তার ছেলের মৃত্যুর পর থেকে একজন মায়ের জীবন বলতে গেলে প্রায় থেমে যায়। তিনি এটা জানার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন যে, তার ছেলে কোথায় রয়েছে। তিনি রোজ তার ছেলের কবরের কাছে যান ও ঘন্টার পর ঘন্টা জোরেজোরে ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। “মৃত্যুর পর কিছুই বেঁচে থাকে না এটা আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না,” তিনি দুঃখ করে বলেন, “কিন্তু আমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত নই।”

স্পষ্টতই, মৃত্যু সম্বন্ধে আমাদের মনোভাব আমাদের জীবনের ওপর এখনই প্রভাব ফেলতে পারে। দুঃখজনক মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঘটনাগুলোর প্রতি লোকেদের প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বহু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। আপনি কীভাবে সেগুলোর উত্তর দেবেন, তা বিবেচনা করুন। মৃত্যুর বিষয়টা ভুলে গিয়ে আমাদের কি শুধু বেঁচে থাকার বিষয়টার ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত? মৃত্যুর উপস্থিতির ভীতিকে কি আমাদের জীবনকে নষ্ট করতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত? একজন শোকার্ত আত্মীয়ের কি সবসময় তার মৃত প্রিয়জন কোথায় রয়েছে, সেই সম্বন্ধে ভেবে যেতেই হবে? মৃত্যু কি সবসময় এক বিভ্রান্তিকর প্রশ্নই থেকে যাবে?