সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এই অশান্ত সময়ে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করুন

এই অশান্ত সময়ে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করুন

এই অশান্ত সময়ে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করুন

“হনোক ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন। পরে তিনি আর রহিলেন না, কেননা ঈশ্বর তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন।”—আদিপুস্তক ৫:২৪.

১. আমাদের সময়ের কিছু বৈশিষ্ট্য কী, যেগুলো এই সময়কে বিপর্যয়মূলক করে তোলে?

 অশান্ত সময়! এই কথাগুলো অস্থিরতা ও দৌরাত্ম্যপূর্ণ সেই বছরগুলোর কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে, যা ১৯১৪ সালে মশীহ রাজ্যের জন্ম থেকে মানবজাতি ভোগ করে আসছে। সেই সময় থেকে, মানুষেরা “শেষ কালে” রয়েছে। দুর্ভিক্ষ, রোগব্যাধি, ভূমিকম্প এবং যুদ্ধের মতো বিপর্যয়গুলো নজিরবিহীন মাত্রায় তাদেরকে জর্জরিত করেছে। (২ তীমথিয় ৩:১; প্রকাশিত বাক্য ৬:১-৮) যারা যিহোবার উপাসনা করে, তারাও এর থেকে রেহাই পায় না। কমবেশি আমাদের সকলকেই এই সময়ের কষ্ট এবং অনিশ্চয়তাগুলো সহ্য করতে হয়। যে-বিষয়গুলো আমাদের জীবনকে খুবই দুর্বিসহ করে তোলে, সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অপরাধ এবং অসুস্থতা।

২. যিহোবার দাসেরা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সম্মুখীন হয়েছে?

এ ছাড়া, যিহোবার অনেক দাস একটার পর একটা চরম তাড়নার ঢেউ সহ্য করেছে কারণ শয়তান সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছে, “যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) আর যদিও আমরা সকলে সরাসরি তাড়না ভোগ করিনি কিন্তু সমস্ত সত্য খ্রিস্টানকে শয়তান দিয়াবল এবং সেই আত্মার সঙ্গে লড়াই করতে হয়, যা সে মানবজাতির মধ্যে জাগিয়ে তোলে। (ইফিষীয় ২:২; ৬:১২) সেই আত্মার দ্বারা প্রভাবিত না হওয়ার জন্য সদাসতর্ক থাকা প্রয়োজন কারণ কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে এবং অন্যান্য এমন যেকোনো জায়গায় আমাদের এর সম্মুখীন হতে হয়, যেখানে আমাদের সেই লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয়, যাদের বিশুদ্ধ উপাসনার প্রতি কোনো আগ্রহই নেই।

ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করুন, পরজাতীয়দের সঙ্গে নয়

৩, ৪. কোন দিক দিয়ে খ্রিস্টানরা জগৎ থেকে আলাদা?

প্রথম শতাব্দীতে, খ্রিস্টানরাও একইভাবে এই জগতের আত্মার সঙ্গে কঠিন লড়াই করেছে এবং এটা তাদেরকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর বাইরের লোকেদের থেকে অনেক আলাদা করে তুলেছিল। পৌল সেই বৈসাদৃশ্য সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন: “অতএব আমি এই বলিতেছি, ও প্রভুতে দৃঢ়রূপে আদেশ করিতেছি, তোমরা আর পরজাতীয়দের ন্যায় চলিও না; তাহারা আপন আপন মনের অসার ভাবে চলে; তাহারা চিত্তে অন্ধীভূত, ঈশ্বরের জীবনের বহির্ভূত হইয়াছে, আন্তরিক অজ্ঞানতা প্রযুক্ত, হৃদয়ের কঠিনতা প্রযুক্ত হইয়াছে। তাহারা অসাড় হইয়া সলোভে সর্ব্বপ্রকার অশুচি ক্রিয়া করিবার জন্য আপনাদিগকে স্বৈরিতায় সমর্পণ করিয়াছে।”—ইফিষীয় ৪:১৭-১৯.

এই কথাগুলো কত স্পষ্টভাবে এই জগতের—পৌলের ও সেইসঙ্গে আমাদের দিনের—গভীর আধ্যাত্মিক ও নৈতিক অন্ধকারাচ্ছন্নতার বিষয়ে বর্ণনা করে! প্রথম শতাব্দীর মতো, আজকেও খ্রিস্টানরা ‘পরজাতীয়দের ন্যায় চলে’ না। এর পরিবর্তে, তারা ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করার এক বিশেষ সুযোগ উপভোগ করে। এটা সত্যি যে, কিছু লোক হয়তো এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে যে নগণ্য, অসিদ্ধ মানুষ ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে পারে বলা যুক্তিযুক্ত কি না। কিন্তু বাইবেল দেখায় যে, তারা গমনাগমন করতে পারে। অধিকন্তু, যিহোবা চান তারা যেন তা করে। আমাদের সাধারণ কাল পূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে ভাববাদী মীখা অনুপ্রাণিত এই কথাগুলো লিখেছিলেন: “ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন?”—মীখা ৬:৮.

কীভাবে এবং কেন ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করবেন?

৫. কীভাবে একজন অসিদ্ধ মানুষ ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে পারে?

কীভাবে আমরা সর্বশক্তিমান, অদৃশ্য ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে পারি? স্পষ্টতই, সহমানবদের সঙ্গে আমরা যেভাবে গমনাগমন করি, সেভাবে নয়। বাইবেলে “গমনাগমন” অভিব্যক্তিটি ‘একটা নির্দিষ্ট কাজের ধারা অনুসরণ করাকে’ বোঝাতে পারে। * এই কথা মনে রেখে আমরা বুঝতে পারি যে, যিনি ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করেন, তিনি ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারিত এবং তাঁকে খুশি করে এমন এক জীবনধারা অনুসরণ করেন। এই ধরনের এক জীবনধারার অনুধাবন করা আমাদেরকে চারপাশের অধিকাংশ লোক থেকে আলাদা করে। কিন্তু, একজন খ্রিস্টানের জন্য এটাই হল একমাত্র সঠিক বাছাই। কেন? এর অনেক কারণ রয়েছে।

৬, ৭. কেন ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করা সর্বোত্তম পথ?

প্রথমত, যিহোবা হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা, আমাদের জীবনের উৎস এবং জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, সেগুলোর জোগানদাতা। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) তাই, আমরা কীভাবে গমনাগমন করব, সেই বিষয়ে বলার অধিকার একমাত্র তাঁরই রয়েছে। এ ছাড়া, ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করা হল যথাসম্ভব সবচেয়ে উপকারজনক পথ। যারা তাঁর সঙ্গে গমনাগমন করে, তাদের জন্য তিনি পাপের ক্ষমা লাভ করার ব্যবস্থা করেছেন এবং অনন্তজীবনের নিশ্চিত আশা প্রদান করেন। এ ছাড়া, আমাদের চিরপ্রেমময় স্বর্গীয় পিতা বিজ্ঞ পরামর্শও জোগান, যা সেইসমস্ত ব্যক্তিকে এখনই জীবনকে সফল করতে সাহায্য করে যারা তাঁর সঙ্গে গমনাগমন করে, যদিও তারা অসিদ্ধ এবং এমন এক জগতে বাস করে, যা শয়তানের অধীনে রয়েছে। (যোহন ৩:১৬; ২ তীমথিয় ৩:১৫, ১৬; ১ যোহন ১:৮; ২:২৫; ৫:১৯) ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করার আরেকটা কারণ হল যে, তা করার জন্য আমাদের ইচ্ছা মণ্ডলীর শান্তি এবং একতার ক্ষেত্রে অবদান রাখে।—কলসীয় ৩:১৫, ১৬.

সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আমরা যখন ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করি, তখন আমরা দেখাই যে এদন উদ্যানে উত্থাপিত মহান বিচার্য বিষয়ে—সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়ে—আমাদের অবস্থান কোথায়। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) আমরা আমাদের জীবনধারার মাধ্যমে দেখাই যে, আমরা সম্পূর্ণরূপে যিহোবার পক্ষে রয়েছি এবং নির্ভীকভাবে ঘোষণা করি যে, একা তিনিই ন্যায্য সার্বভৌম। (গীতসংহিতা ৮৩:১৮) এভাবে আমরা আমাদের এই প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি যে, ঈশ্বরের নাম পবিত্রীকৃত হোক এবং তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ হোক। (মথি ৬:৯, ১০) যারা ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করা বেছে নেয়, তারা কতই না বিজ্ঞ! তারা নিশ্চিত হতে পারে যে, তারা সঠিক পথে চলছে, কারণ যিহোবা হলেন “একমাত্র প্রজ্ঞাবান্‌।” তিনি কখনো ভুল করেন না।—রোমীয় ১৬:২৭.

৮. কীভাবে হনোক ও নোহের সময় আমাদের সময়ের মতোই ছিল?

কিন্তু, এত অশান্ত সময়ে এবং যেখানে অধিকাংশ লোকের যিহোবাকে সেবা করার কোনো আগ্রহই নেই এমন অবস্থায় খ্রিস্টান হিসেবে কীভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব? প্রাচীনকালের যে-বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা অত্যন্ত কঠিন সময়েও তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিল, তাদের কথা বিবেচনা করলে আমরা এর উত্তর খুঁজে পাই। এদের মধ্যে দুজন ছিল হনোক ও নোহ। তারা দুজনেই এমন এক সময়ে বাস করত, যা অনেকটা আমাদের সময়ের মতোই। চারিদিকে দুষ্টতা ছেয়ে গিয়েছিল। নোহের দিনে পৃথিবী দৌরাত্ম্য এবং অনৈতিকতায় ভরে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, হনোক ও নোহ তাদের সময়ের জগতের আত্মাকে প্রতিরোধ করেছিল এবং যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করেছিল। তারা কীভাবে তা করতে পেরেছিল? সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য এই প্রবন্ধে আমরা হনোকের উদাহরণ আলোচনা করব। পরের প্রবন্ধে আমরা নোহের উদাহরণ বিবেচনা করব।

অশান্ত সময়ে হনোক ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করেছিলেন

৯. হনোক সম্বন্ধে আমাদের কাছে কোন তথ্য রয়েছে?

শাস্ত্রে বর্ণিত হনোকই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করেছিলেন। বাইবেলের বিবরণ বলে: “মথূশেলহের জন্ম দিলে পর হনোক . . . ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিলেন।” (আদিপুস্তক ৫:২২) এরপর হনোকের আয়ু—যা যদিও আমাদের আয়ুর সঙ্গে তুলনা করলে দীর্ঘ কিন্তু সেই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে সংক্ষিপ্ত—সম্বন্ধে বলার পর সেই বিবরণ বলে: “হনোক ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন। পরে তিনি আর রহিলেন না, কেননা ঈশ্বর তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন।” (আদিপুস্তক ৫:২৪) এটা স্পষ্ট যে, বিরোধীরা হনোককে আক্রমণ করার আগে যিহোবা তাকে জীবিতদের দেশ থেকে স্থানান্তরিত করে মৃত্যুর নিদ্রায় নিদ্রিত করেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৫, ১৩) এই সংক্ষিপ্ত পদগুলো ছাড়া, বাইবেলে হনোক সম্বন্ধে মাত্র অল্প কয়েক বার উল্লেখ রয়েছে। তা সত্ত্বেও, আমাদের কাছে থাকা তথ্য এবং অন্যান্য ইঙ্গিত থেকে আমাদের এই কথা বলার উত্তম কারণ রয়েছে যে, হনোকের সময় অশান্ত ছিল।

১০, ১১. (ক) আদম ও হবার বিদ্রোহের পরে কীভাবে কলুষতা ছড়িয়ে পড়েছিল? (খ) হনোক কোন ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বার্তা প্রচার করেছিলেন এবং তিনি নিশ্চিতভাবে কোন সাড়া পেয়েছিলেন?

১০ উদাহরণস্বরূপ, আদমের পাপের পরে মানবজাতির মধ্যে কত দ্রুত কলুষতা ছড়িয়ে পড়েছিল, তা বিবেচনা করুন। বাইবেল আমাদের বলে যে, আদমের প্রথম পুত্র কয়িন প্রথম মানব খুনি হয়ে ওঠে, যখন সে তার ভাই হেবলকে হত্যা করে। (আদিপুস্তক ৪:৮-১০) হেবলের নৃশংস মৃত্যুর পরে, আদম ও হবার আরেকটা পুত্র জন্মগ্রহণ করে এবং তারা তার নাম রাখে শেথ। তার সম্বন্ধে আমরা পড়ি: “পরে শেথেরও পুত্ত্র জন্মিল, আর তিনি তাহার নাম ইনোশ রাখিলেন। তৎকালে লোকেরা সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকিতে আরম্ভ করিল।” (আদিপুস্তক ৪:২৫, ২৬) দুঃখজনক যে, ধর্মভ্রষ্ট উপায়ে ‘যিহোবার নামে ডাকা’ হয়েছিল। * ইনোশের জন্মের অনেক বছর পরে, লেমক নামে কয়িনের একজন বংশধর তার দুই স্ত্রীর জন্য একটা গান রচনা করেছিলেন, যে-গানে তিনি এই বিষয় ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি এমন এক যুবককে হত্যা করেছিলেন যে তাকে আঘাত করেছিল। তিনি এও সাবধান করেছিলেন: “যদি কয়িনের বধের প্রতিফল সাত গুণ হয়, লেমকের বধের প্রতিফল সাতাত্তর গুণ হইবে।”—আদিপুস্তক ৪:১০, ১৯, ২৩, ২৪.

১১ আলোচ্য সংক্ষিপ্ত এই বিষয়গুলো দেখায় যে, এদন উদ্যানে শয়তান যে-কলুষতার সূত্রপাত করেছিল, তা খুব দ্রুত আদমের বংশধরদের মধ্যে দুষ্টতা ছড়িয়ে দিয়েছিল। এইরকম এক জগতে হনোক যিহোবার একজন ভাববাদী ছিলেন, যার জোরালো অনুপ্রাণিত কথাগুলো এমনকি আজকেও প্রযোজ্য। যিহূদা বলেন যে, হনোক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “দেখ, প্রভু আপন অযুত অযুত পবিত্র লোকের সহিত আসিলেন, যেন সকলের বিচার করেন; আর ভক্তিহীন সকলে আপনাদের যে সকল ভক্তিবিরুদ্ধ কার্য্য দ্বারা ভক্তিহীনতা দেখাইয়াছে, এবং ভক্তিহীন পাপিগণ তাঁহার বিরুদ্ধে যে সকল কঠোর বাক্য কহিয়াছে, তৎপ্রযুক্ত তাহাদিগকে যেন ভর্ৎসনা করেন।” (যিহূদা ১৪, ১৫) এই কথাগুলো হর্‌মাগিদোনের সময়ে চূড়ান্তভাবে পরিপূর্ণ হবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬) তা সত্ত্বেও, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, এমনকি হনোকের দিনে অনেক “ভক্তিহীন পাপিগণ” ছিল, যারা হনোকের ভবিষ্যদ্বাণী শুনে বিরক্ত হয়েছিল। এটা কতই না প্রেমময় এক কাজ ছিল যে যিহোবা এই ভাববাদীকে তাদের নাগালের বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন!

কী হনোককে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে শক্তিশালী করেছিল?

১২. কোন বিষয়টা হনোককে তার সমসাময়িক লোকেদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল?

১২ এদন উদ্যানে আদম এবং হবা শয়তানের কথা শুনেছিল এবং আদম যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) তাদের পুত্র হেবল এক ভিন্ন পথ অনুসরণ করেছিল এবং যিহোবা তার প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ৪:৩, ৪) দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আদমের বংশধরদের মধ্যে অধিকাংশই হেবলের মতো ছিল না। কিন্তু, হনোক ছিলেন, যিনি কয়েকশো বছর পরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আদমের অন্যান্য অনেক বংশধর এবং হনোকের মধ্যে পার্থক্য কী ছিল? প্রেরিত পৌল সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন: “বিশ্বাসে হনোক লোকান্তরে নীত হইলেন, যেন মৃত্যু না দেখিতে পান; তাঁহার উদ্দেশ আর পাওয়া গেল না, কেননা ঈশ্বর তাঁহাকে লোকান্তরে লইয়া গেলেন। বস্তুতঃ লোকান্তরে নীত হইবার পূর্ব্বে তাঁহার পক্ষে এই সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছিল যে, তিনি ঈশ্বরের প্রীতির পাত্র ছিলেন।” (ইব্রীয় ১১:৫) হনোক সেই বৃহৎ ‘[প্রাক্‌খ্রিস্টীয়] সাক্ষিমেঘের’ অংশ ছিলেন, যারা বিশ্বাসের চমৎকার উদাহরণ ছিল। (ইব্রীয় ১২:১) হনোকের বিশ্বাসই তাকে ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে—আজকে আমাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিরই তিন গুণ আয়ুরও বেশি সময় ধরে—সঠিক আচরণ বজায় রাখতে সমর্থ করেছিল!

১৩. হনোকের কোন ধরনের বিশ্বাস ছিল?

১৩ হনোক এবং অন্যান্য সাক্ষির বিশ্বাসকে পৌল বর্ণনা করেছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন: “বিশ্বাস প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান, অদৃশ্য বিষয়ের প্রমাণপ্রাপ্তি।” (ইব্রীয় ১১:১) হ্যাঁ, বিশ্বাস হল আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে সেই নিশ্চিত প্রত্যাশা যে, আমরা যে-বিষয়গুলোর আশা করে আছি সেগুলো সত্য হবেই। এর সঙ্গে এমন এক দৃঢ় প্রত্যাশা জড়িত যে, এটা আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রভাবিত করে। এই ধরনের বিশ্বাসই হনোককে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে সমর্থ করেছিল, যদিও তার চারপাশের জগতের লোকেরা তা করেনি।

১৪. হনোকের বিশ্বাস হয়তো কোন সঠিক জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে ছিল?

১৪ প্রকৃত বিশ্বাস তত্ত্বজ্ঞান বা সঠিক জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে। হনোকের কোন ধরনের জ্ঞান ছিল? (রোমীয় ১০:১৪, ১৭; ১ তীমথিয় ২:৪) নিঃসন্দেহে, তিনি এদনে সংঘটিত ঘটনাগুলোর কথা জানতেন। সম্ভবত, তিনি এও শুনেছিলেন যে, এদন উদ্যান—যেটা হয়তো তখনও বিদ্যমান ছিল কিন্তু মানুষ সেখানে ঢুকতে পারত না—সেখানে জীবন কেমন ছিল। (আদিপুস্তক ৩:২৩, ২৪) আর আদমের বংশধররা যে পৃথিবী পূর্ণ করবে এবং সম্পূর্ণ গ্রহকে আদি পরমদেশের মতো করবে, সেই বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধেও তিনি জানতেন। (আদিপুস্তক ১:২৮) এ ছাড়া, হনোক নিশ্চয়ই এক বংশ উৎপাদন করার বিষয়ে যিহোবার সেই প্রতিজ্ঞাকে হৃদয়ে পোষণ করেছিলেন, যা শয়তানের মস্তক চূর্ণ করবে এবং শয়তানের প্রতারণার মন্দ প্রভাবগুলোকে দূর করে দেবে। (আদিপুস্তক ৩:১৫) বস্তুত, হনোকের নিজের অনুপ্রাণিত ভবিষ্যদ্বাণী যিহূদা পুস্তকে সংরক্ষিত রয়েছে, যা শয়তানের বংশের ধ্বংস সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। যেহেতু হনোকের বিশ্বাস ছিল, তাই আমরা জানি যে, তিনি যিহোবাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে উপাসনা করতেন, যিনি ‘যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তাহাদের পুরস্কারদাতা।’ (ইব্রীয় ১১:৬) তাই, আমাদের যেসমস্ত বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে, তা যদিও হনোকের ছিল না কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তি গড়ে তোলার মতো যথেষ্ট জ্ঞান তার ছিল। এইরকম বিশ্বাস নিয়ে তিনি অশান্ত সময়েও তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিলেন।

হনোকের উদাহরণ অনুকরণ করুন

১৫, ১৬. কীভাবে আমরা হনোকের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি?

১৫ যেহেতু হনোকের মতো আমরাও আজকে বিদ্যমান এই অশান্ত সময়ে যিহোবাকে খুশি করতে চাই, তাই আমাদের হনোকের উদাহরণ অনুসরণ করা উচিত। যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমাদের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে ও তা বজায় রাখতে হবে। কিন্তু, আমাদের এর চেয়েও আরও বেশি কিছু করতে হবে। সেই সঠিক জ্ঞানের দ্বারা আমাদের জীবনকে পরিচালিত করতে হবে। (গীতসংহিতা ১১৯:১০১; ২ পিতর ১:১৯) আমাদেরকে ঈশ্বরের চিন্তাধারার মাধ্যমে নির্দেশনা লাভ করে সেই অনুযায়ী চলতে হবে, আমাদের প্রতিটা চিন্তায় এবং কাজে সর্বদা তাঁকে খুশি করার আপ্রাণ চেষ্টা থাকতে হবে।

১৬ হনোকের সময়ে আর কে যিহোবাকে সেবা করছিল, সেই বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো বিবরণ নেই কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, হয় তিনি একা নতুবা সংখ্যালঘু একটা দলের সদস্য ছিলেন। জগতে আমাদের সংখ্যাও কম কিন্তু সেটা আমাদের হতাশ করে না। যারাই আমাদের বিরুদ্ধে থাকুক না কেন, যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন। (রোমীয় ৮:৩১) ভক্তিহীন লোকেদের আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে হনোক সাহসের সঙ্গে সাবধান করেছিলেন। আমরাও তার মতো সাহসী যখন উপহাস, বিরোধিতা এবং তাড়না সত্ত্বেও আমরা “রাজ্যের এই সুসমাচার” প্রচার করি। (মথি ২৪:১৪) হনোক তার সমসাময়িক অনেক লোকের মতো এত বেশি বছর বেঁচে ছিলেন না। তা সত্ত্বেও, তার আশা সেই জগৎকে ঘিরে ছিল না। তিনি আরও মহৎ কিছুর দিকে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:১০, ৩৫) আমরাও যিহোবার উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতার ওপর আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছি। তাই, এই জগৎকে আমরা পূর্ণমাত্রায় ভোগ করি না। (১ করিন্থীয় ৭:৩১) এর পরিবর্তে, আমরা আমাদের শক্তি এবং সম্পদ মূলত যিহোবার সেবায় ব্যবহার করি।

১৭. আমাদের কাছে কোন জ্ঞান রয়েছে, যা হনোকের কাছে ছিল না আর তাই আমাদের কী করা উচিত?

১৭ হনোকের এই বিশ্বাস ছিল যে, ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিজ্ঞাত বংশ যিহোবার নিরূপিত সময়ে আবির্ভূত হবে। সেই বংশ—যিশু খ্রিস্ট—আবির্ভূত হওয়ার, মুক্তির মূল্য প্রদান করার এবং আমাদের ও সেইসঙ্গে হনোকের মতো বিশ্বস্ত প্রাচীন সাক্ষিদের জন্য অনন্তজীবনের অধিকারী হওয়ার পথ খুলে দেওয়ার পর এখন প্রায় দুহাজার বছর কেটে গিয়েছে। সেই বংশ, এখন ঈশ্বরের রাজ্যের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত রাজা, শয়তানকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করেছেন আর আমরা আমাদের চারপাশে এর ফলস্বরূপ সন্তাপ দেখতে পাচ্ছি। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২) হ্যাঁ, হনোকের চেয়ে এখন আমাদের কাছে আরও অনেক বেশি জ্ঞান রয়েছে। তাই, আমরা যেন তাঁর মতো দৃঢ় বিশ্বাস রাখি। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতার প্রতি আমাদের আস্থা যেন আমরা যা কিছু করি, তার সমস্তকিছুতে প্রভাব ফেলে। হনোকের মতো আমরা যেন ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করি, যদিও আমরা অশান্ত সময়ে বাস করছি।

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) বইয়ের খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২২০, অনুচ্ছেদ ৬ দেখুন।

^ ইনোশের দিনের আগে, যিহোবা আদমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। হেবল যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য বলি উৎসর্গ করেছিলেন। ঈর্ষান্বিত ক্রোধ কয়িনকে খুন করার দিকে পরিচালিত করার আগে ঈশ্বর এমনকি কয়িনের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। তাই, “যিহোবার নামে ডাকিতে” আরম্ভ করার অর্থ নিশ্চয়ই নতুন কোনো উপায়ে হবে, সেটা বিশুদ্ধ উপাসনা অনুযায়ী নয়।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করার অর্থ কী?

• কেন ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করা সর্বোত্তম পথ?

• কোন বিষয়টা হনোককে অশান্ত সময় সত্ত্বেও ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে সমর্থ করেছিল?

• কীভাবে আমরা হনোককে অনুকরণ করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিশ্বাসে “হনোক ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন”

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ হবেই

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

একেবারে ডান দিকের মহিলা: FAO photo/B. Imevbore; ধসে পড়া বিল্ডিং: San Hong R-C Picture Company