সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মেনোনাইটরা বাইবেলের সত্য অনুসন্ধান করে

মেনোনাইটরা বাইবেলের সত্য অনুসন্ধান করে

মেনোনাইটরা বাইবেলের সত্য অনুসন্ধান করে

 দুহাজার সালের নভেম্বর মাসের কোনো এক সকালে, বলিভিয়ার কয়েক জন যিহোবার সাক্ষি মিশনারি হঠাৎ তাদের ছোট ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় এবং দেখতে পায় যে, সাদামাটা পোশাক পরা একদল পুরুষ ও মহিলা কিছুটা ঘাবড়ে যাওয়া ভাব নিয়ে তাদের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মিশনারিরা গেট খোলামাত্রই অতিথিদের প্রথম কথা ছিল, “আমরা বাইবেল থেকে সত্য বের করতে চাই।” এই অতিথিরা ছিল মেনোনাইট। পুরুষরা লম্বা ঢিলে জামা এবং মহিলারা গাঢ় রংয়ের আ্যপ্রন পরে ছিল আর তারা নিজেদের মধ্যে জার্মানির এক আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিল। তাদের চোখে ভয় ফুটে উঠেছিল। কেউ তাদের পিছন পিছন এসেছে কি না, সেই বিষয়ে তারা নজর রাখছিল। তা সত্ত্বেও, ঘরে ঢোকার জন্য সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় যুবকদের মধ্যে একজন বলেছিল, “আমি সেই লোকেদের সঙ্গে পরিচিত হতে চাই, যারা ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করে।”

ঘরে ঢোকার পর, অতিথিদের যখন কিছু জলখাবার দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা স্বস্তি বোধ করতে শুরু করেছিল। তারা বহু দূরে অবস্থিত বিচ্ছিন্ন খামার এলাকা থেকে এসেছিল। ছয় বছর ধরে, তারা সেখানে ডাকযোগে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা পাচ্ছিল। “আমরা পড়েছি যে পৃথিবীতে পরমদেশ আসবে। এটা কি সত্যি?” তারা জিজ্ঞাসা করেছিল। সাক্ষিরা তাদেরকে বাইবেল থেকে উত্তরটা দেখিয়েছিল। (যিশাইয় ১১:৯; লূক ২৩:৪৩; ২ পিতর ৩:৭, ১৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) একজন কৃষক অন্যদের বলেন, ‘দেখেছো! এটা সত্যি। পৃথিবী পরমদেশ হবে।’ অন্যরা বলতে থাকে: “আমার মনে হয় আমরা সত্য খুঁজে পেয়েছি।”

মেনোনাইটরা কারা? তারা কী বিশ্বাস করে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য আমাদের ষোড়শ শতাব্দীতে ফিরে যেতে হবে।

মেনোনাইটরা কারা?

১৫০০ সালে, ইউরোপে বাইবেলের অনুবাদ ও প্রচলিত ভাষাগুলোতে মুদ্রণ আকস্মিকভাবে খুব দ্রুত বেড়ে গিয়েছিল, যার ফলে সেখানে বাইবেল অধ্যয়নের আগ্রহকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। মার্টিন লুথার এবং অন্যান্য সংস্কারক ক্যাথলিক গির্জার অনেক শিক্ষা প্রত্যাখ্যান করেছিল। তবুও নবগঠিত প্রটেস্টান্ট গির্জাগুলো অনেক অশাস্ত্রীয় অভ্যাস ধরে রেখেছিল। উদাহরণস্বরূপ, অধিকাংশই আশা করত যে, প্রত্যেক নবজাত শিশুকে গির্জায় বাপ্তিস্ম দিতে হবে। কিন্তু, বাইবেলের সত্য অনুসন্ধানকারীদের মধ্যে কয়েক জন উপলব্ধি করেছিল যে, একজন ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে সবকিছু জেনেবুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমেই কেবল খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সদস্য হতে পারেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) যে-উদ্যোগী প্রচারকরা এই বিশ্বাস ধরে রেখেছিল, তারা বিভিন্ন শহর ও গ্রামে ভ্রমণ করে প্রাপ্তবয়স্কদের বাইবেল শেখাতে ও বাপ্তিস্ম দিতে শুরু করেছিল। এ কারণে তাদের আ্যনাব্যাপ্টিস্ট বলা হতো, যার অর্থ “পুনর্বাপ্তাইজক।”

সত্য অনুসন্ধান করার জন্য আ্যনাব্যাপ্টিস্টদের ওপর নির্ভর করেছিলেন, এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন মেনো সাইমনস্‌, যিনি নেদারল্যান্ডসের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ভিটমারসাম গ্রামের একজন ক্যাথলিক যাজক ছিলেন। ১৫৩৬ সালের মধ্যে তিনি গির্জার সঙ্গে তার সকল বন্ধন ছিন্ন করেছিলেন এবং গির্জার লোকেরা তাকে তন্নতন্ন করে খুঁজছিল। ১৫৪২ সালে পবিত্র রোমীয় সম্রাট চার্লস ৫ম নিজে মেনোকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুরস্কার হিসেবে ১০০ গিল্ডার দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, মেনো কয়েক জন আ্যনাব্যাপ্টিস্টকে বিভিন্ন মণ্ডলীতে একত্রিত করেছিলেন। তাকে ও তার অনুসারীদের শীঘ্রই মেনোনাইট বলে ডাকা হয়েছিল।

আজকে মেনোনাইটরা

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, তাড়নার কারণে হাজার হাজার মেনোনাইট পশ্চিম ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকায় চলে গিয়েছিল। সেখানে তাদের সত্যের অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার এবং তাদের বার্তা অনেকের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু, উন্নতিশীল বাইবেল অধ্যয়ন এবং জনসাধারণ্যে প্রচার করার ক্ষেত্রে তাদের পূর্বপুরুষদের যে-প্রচণ্ড উদ্যোগ ছিল, তার অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছিল। অধিকাংশই বাইবেল বহির্ভূত নির্দিষ্ট শিক্ষাগুলো যেমন ত্রিত্ব, মানব আত্মার অমরত্ব ও নরকাগ্নির শিক্ষাকে ধরে রেখেছিল। (উপদেশক ৯:৫; যিহিষ্কেল ১৮:৪; মার্ক ১২:২৯) আজকে, মেনোনাইট মিশনারিরা সুসমাচার প্রচারের চেয়ে চিকিৎসাগত ও সমাজ সেবার প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকে।

হিসাব করে দেখা গেছে, এখন ৬৫টা দেশে প্রায় ১৩,০০,০০০ মেনোনাইট বসবাস করছে। কিন্তু, বর্তমান সময়কার মেনোনাইটরা তাদের একতার অভাবের জন্য দুঃখ করে থাকে, যেমন শত শত বছর আগে মেনো সাইমনস্‌ করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, বিশ্বের সংঘর্ষগুলো সম্বন্ধে মতভেদ বড় বড় বিভক্তির কারণ হয়েছিল। উত্তর আমেরিকার অনেকে বাইবেলের ভিত্তিতে সামরিকবাহিনীতে কাজ করা প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু, মেনোনাইট ইতিহাসের সূচনা (ইংরেজি) বইটি বলে: “১৯১৪ সালে সামরিকবাহিনীতে অংশগ্রহণ করতে প্রত্যাখ্যান করা, পশ্চিম ইউরোপের মেনোনাইট গির্জাগুলোর জন্য এক স্মরণীয় ইতিহাস ছিল।” আজকে, কিছু মেনোনাইট দল কম-বেশি আধুনিক জীবনধারা গ্রহণ করেছে। অন্যেরা এখনও তাদের জামাকাপড় আটকানোর জন্য বোতামের পরিবর্তে, হুক ও আংটা ব্যবহার করে এবং বিশ্বাস করে যে, পুরুষদের দাড়ি কামানো উচিত নয়।

কিছু মেনোনাইট দল, যারা আধুনিক জগৎ থেকে আলাদা থাকার জন্য দৃঢসংকল্পবদ্ধ, তারা এমন জায়গায় চলে গিয়েছে, যেখানে স্থানীয় সরকার কোনোরকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের থাকার অনুমতি দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ অনুমান করে দেখা গিয়েছে যে, বলিভিয়ায় ৩৮,০০০ জন মেনোনাইট বহু দূরবর্তী অঞ্চলে বাস করে আর প্রত্যেক দল আলাদা আলাদা আচরণবিধি মেনে চলে। কিছু এলাকায় মোটরচালিত যানবাহন নিষিদ্ধ, কেবল ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় রেডিও, টেলিভিশন ও গানবাজনা নিষিদ্ধ। এমনকি কিছু এলাকায়, তারা যে-দেশে থাকে সেই দেশের ভাষা শিখতেও নিষেধ করা হয়। “প্রচারকরা তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমাদেরকে স্প্যানিশ ভাষা শিখতে দেয় না,” একজন এলাকাবাসী মন্তব্য করেছিলেন। অনেকেই নিপীড়িত বোধ করে এবং সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার আতঙ্কের মধ্যে থাকে—যার কখনো বাইরের জীবনের অভিজ্ঞতা হয়নি, তার জন্য এক ভয়াবহ বিষয়।

যেভাবে সত্যের একটা বীজ বপন করা হয়েছিল

এটা তখন হয়েছিল যখন ইয়োহান নামের একজন মেনোনাইট কৃষক তার প্রতিবেশীর ঘরে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার একটি কপি দেখেছিলেন। ইয়োহানের পরিবার কানাডা থেকে মেক্সিকোতে এবং পরে বলিভিয়ার অভিবাসী হয়েছিল। কিন্তু ইয়োহান সবসময় বাইবেলের সত্য অনুসন্ধান করার জন্য সাহায্যের আকাঙ্ক্ষা করতেন। তিনি পত্রিকাটি পড়ার জন্য নিতে চেয়েছিলেন।

পরে ইয়োহান যখন তার খামারে উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করার জন্য শহরে গিয়েছিলেন, তখন একজন সাক্ষির সঙ্গে কথা বলেছিলেন, যিনি বাজারে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা অর্পণ করছিলেন। সেই সাক্ষি তাকে একজন জার্মানভাষী মিশনারির কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন আর শীঘ্রই ইয়োহান ডাকযোগে জার্মান ভাষার প্রহরীদুর্গ পত্রিকা পেতে শুরু করেছিলেন। প্রত্যেকটা সংখ্যা খুব সতর্কতার সঙ্গে পড়া হতো এবং একেবারে ছিঁড়ে না যাওয়া পর্যন্ত পত্রিকাটি তার এলাকার প্রত্যেকটা পরিবারে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হতো। মাঝে মাঝে পরিবারগুলো একসঙ্গে মিলিত হতো এবং মধ্যরাত পর্যন্ত প্রহরীদুর্গ পত্রিকা অধ্যয়ন করত ও উল্লেখিত বাইবেলের পদগুলো মিলিয়ে দেখত। ইয়োহান দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছিলেন যে, যিহোবার সাক্ষিরাই পৃথিবীব্যাপী একতাবদ্ধভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছে। ইয়োহান মারা যাওয়ার আগে, তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে বলেছিলেন: “তোমরা সবসময় প্রহরীদুর্গ পড়বে। এটা তোমাদের বাইবেল বুঝতে সাহায্য করবে।”

ইয়োহানের পরিবারের কয়েক জন সদস্য, তারা বাইবেল থেকে যে-বিষয়গুলো শিখছিল সেগুলো সম্বন্ধে তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছিল। “এই পৃথিবী ধ্বংস হবে না। এর পরিবর্তে, ঈশ্বর এটাকে পরমদেশে পরিণত করবেন,” তারা বলেছিল। “আর ঈশ্বর মানুষকে নরকে যন্ত্রণা দেন না।” শীঘ্রই গির্জার প্রচারকরা এই আলোচনার বিষয়ে শুনেছিল আর তারা ইয়োহানের পরিবারকে ভয় দেখিয়েছিল যে, যদি তারা সেটা বন্ধ না করে তা হলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে। পরে, মেনোনাইট প্রাচীনরা তাদের ওপর যে-চাপ নিয়ে আসছিল সেই সম্বন্ধে এক পারিবারিক আলোচনার সময়ে, একজন যুবক নির্দ্বিধায় তার মতামত জানিয়েছিল। “আমি জানি না কেন আমরা আমাদের গির্জার প্রাচীনদের সম্বন্ধে অভিযোগ করি,” সে বলেছিল। “আমরা সবাই জানি যে কোনটা সত্য ধর্ম কিন্তু সেই ব্যাপারে আমরা কিছুই করিনি।” এই কথাগুলো সেই যুবকের বাবার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। শীঘ্রই সেই পরিবারের দশ জন সদস্য যিহোবার সাক্ষিদের সন্ধানে এক গোপন যাত্রা শুরু করেছিল এবং সেই যাত্রা মিশনারিদের হোমে এসে শেষ হয়েছিল, যে-বিষয়ে শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরদিন চার জন মিশনারি সেই এলাকায় তাদের নতুন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। মিশনারিদের মোটরগাড়িটা সেই রাস্তায় একমাত্র মোটরচালিত বাহন ছিল। ঘোড়ায় টানা গাড়িগুলোর পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে যাওয়ার সময়, তারা স্থানীয় অধিবাসীদের মতোই কৌতূহলী দৃষ্টি বিনিময় করেছিল। শীঘ্রই তারা দুটো মেনোনাইট পরিবারের দশ জন সদস্যের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল।

সেদিন জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে * বইয়ের প্রথম অধ্যায় আলোচনা করার জন্য চার ঘন্টা সময় লেগেছিল। প্রত্যেক অনুচ্ছেদের জন্য কৃষকরা বাইবেলের আরও অন্যান্য পদ দেখেছিল এবং সেই পদগুলোকে তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করছিল কি না, তা তারা জানতে চেয়েছিল। প্রত্যেকটা প্রশ্ন পড়ার পর কয়েক মিনিট বিরতি নেওয়া হতো আর সেই সময়ে একজন মুখপাত্র দলের হয়ে চূড়ান্ত উত্তর দেওয়ার আগে কৃষকদের সঙ্গে জার্মানির এক আঞ্চলিক ভাষায় আলোচনা করে নিতেন। এটা এক স্মরণীয় দিন ছিল কিন্তু সমস্যার এক প্রচণ্ড ঝড় ঘনীভূত হচ্ছিল। তারা পরীক্ষার মখোমুখি হতে যাচ্ছিল ঠিক যেমন প্রায় পাঁচশো বছর আগে মেনো সাইমনস্‌, বাইবেলের সত্য অনুসন্ধান করার সময় মুখোমুখি হয়েছিলেন।

সত্যের কারণে পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া

কয়েকদিন পর গির্জার প্রাচীনরা ইয়োহানের পরিবারের কাছে এসেছিল এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের এই হুমকি দিয়েছিল: “আমরা শুনেছি যে, যিহোবার সাক্ষিরা তোমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তোমরা তাদেরকে নিষেধ করে দেবে যেন তারা আবার না আসে এবং যদি তোমরা তাদের সাহিত্যাদি পুড়িয়ে না ফেলো, তা হলে তোমাদেরকে বহিষ্কার করা হবে।” তারা সাক্ষিদের সঙ্গে শুধুমাত্র একবার বাইবেল অধ্যয়ন করেছিল, তাই এটা তাদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা নিয়ে এসেছিল।

“আপনারা যা বলেছেন আমরা তা করতে পারব না,” পরিবারের একজন মস্তক উত্তর দিয়েছিলেন। “সেই লোকেরা আমাদের বাইবেল শেখাতে এসেছিল।” প্রাচীনরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? তারা বাইবেল অধ্যয়ন করার কারণে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল! এটা সত্যিই এক নির্দয় আঘাত ছিল। এলাকার চিজ ফ্যাক্টরির পশুবাহিত গাড়ি একটা পরিবারের ঘরের সামনে দিয়ে দুধ সংগ্রহ না করেই চলে গিয়েছিল, তাদের আয়ের একমাত্র উৎসকে বাতিল করে দিয়েছিল। একটা পরিবারের মস্তককে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছিল। অন্য একজনকে এলাকার দোকান থেকে জিনিস কিনতে দেওয়া হয়নি এবং তার দশ বছরের মেয়েকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া, প্রতিবেশীরা একজন যুবক ব্যক্তির স্ত্রীকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার বাড়ি ঘেরাও করেছিল, তারা এই দাবি করেছিল যে, সে তার বহিষ্কৃত স্বামীর সঙ্গে থাকতে পারবে না। এই সমস্তকিছু সত্ত্বেও, যে-পরিবারগুলো বাইবেল অধ্যয়ন করত, তারা সত্যের অনুসন্ধান করা বন্ধ করেনি।

মিশনারিরা প্রত্যেক সপ্তাহে দীর্ঘ সময় গাড়ি চালিয়ে গিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা চালিয়ে গিয়েছিল। পরিবারগুলোর জন্য সেই অধ্যয়ন কত শক্তিবর্ধকই না ছিল! কয়েকটা পরিবারের সদস্য অধ্যয়নে উপস্থিত হওয়ার জন্য দুই ঘন্টা ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে আসত। যেদিন পরিবারগুলো একজন মিশনারিকে প্রথমবার প্রার্থনা করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, সেটা ছিল এক মর্মস্পর্শী ঘটনা। এই এলাকাগুলোতে মেনোনাইটরা কখনো জোরে জোরে প্রার্থনা করত না, তাই তারা কখনো কাউকে তাদের হয়ে প্রার্থনা করতে শোনেনি। তাদের চোখে জল এসে গিয়েছিল। আর মিশনারিরা যখন তাদের সঙ্গে করে একটা টেপ রেকর্ডার নিয়ে এসেছিল, তখন তাদের কৌতূহল সম্বন্ধে কি আপনি কল্পনা করতে পারেন? তাদের এলাকায় কখনোই গানবাজনার অনুমোদন ছিল না। তারা রাজ্যের সংগীত শুনে এতটাই আনন্দিত হয়েছিল যে, তারা প্রত্যেকটা অধ্যয়নের পর রাজ্যের গান গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল! কিন্তু, তারপরও প্রশ্ন থেকে গিয়েছিল যে, কীভাবে তারা তাদের নতুন পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে টিকে থাকতে পারবে?

এক প্রেমময় ভ্রাতৃসমাজ খুঁজে পাওয়া

তাদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরিবারগুলো নিজেরাই চিজ তৈরি করতে শুরু করেছিল। মিশনারিরা তাদেরকে ক্রেতা খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিল। উত্তর আমেরিকার একজন দীর্ঘ সময়ের সাক্ষি, যিনি দক্ষিণ আমেরিকার মেনোনাইট এলাকায় বড় হয়েছিলেন, তিনি এই পরিবারগুলোর দুর্দশার কথা শুনেছিলেন। তিনি বিশেষভাবে সাহায্য করতে উৎসুক ছিলেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে বলিভিয়াতে এসেছিলেন। প্রচুর আধ্যাত্মিক উৎসাহ জোগানো ছাড়াও, তিনি পরিবারগুলোকে একটা পিকআপ ট্রাক কিনতে সাহায্য করেছিলেন যাতে তারা কিংডম হলের সভাগুলোতে যেতে এবং তাদের উৎপাদিত দ্রব্য বাজারে নিয়ে যেতে পারে।

“আমাদের সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর আমাদের জন্য পরিস্থিতি অনেক কঠিন ছিল। আমরা বিষণ্ণ মুখে কিংডম হলে যেতাম,” পরিবারের একজন সদস্যা স্মরণ করেন, “কিন্তু আনন্দিত হয়ে ফিরে আসতাম।” সেই সময় স্থানীয় সাক্ষিরা কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল এবং সমর্থন জুগিয়েছিল। কয়েক জন জার্মান ভাষা শিখেছিল এবং জার্মান ভাষায় সভা পরিচালনা করতে সাহায্য করার জন্য কয়েক জন জার্মানভাষী সাক্ষি ইউরোপ থেকে বলিভিয়ায় এসেছিল। শীঘ্রই মেনোনাইট সমাজ থেকে ১৪ জন অন্যদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে শুরু করেছিল।

২০০১ সালের ১২ই অক্টোবর, মিশনারি হোমে প্রথম সাক্ষাতের এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে প্রাক্তন আ্যনাব্যাপ্টিস্টদের মধ্যে ১১ জন আবারও বাপ্তিস্ম নিয়েছিল, তবে এবার সেটা ছিল যিহোবার কাছে উৎসর্গীকরণের প্রতীকস্বরূপ। তখন থেকে অনেকেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে। পরে, একজন মন্তব্য করেছিলেন: “যখন থেকে আমরা বাইবেলের সত্য শিখেছি, আমরা এমন দাসদের মতো অনুভব করি, যাদেরকে মুক্ত করা হয়েছে।” অন্য একজন বলেছিলেন: “অনেক মেনোনাইট তাদের সমাজে প্রেমের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করে। কিন্তু যিহোবার সাক্ষিরা পরস্পরের প্রতি আগ্রহ দেখায়। আমি তাদের মধ্যে নিরাপদ বোধ করি।” আপনি যদি বাইবেলের সত্য আরও ভালভাবে বোঝার জন্য অনুসন্ধান করে থাকেন, তা হলে আপনিও হয়তো বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হবেন। কিন্তু যদি আপনি সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন এবং এই পরিবারগুলোর মতো বিশ্বাস ও সাহস প্রদর্শন করেন, তা হলে আপনিও সফল হবেন আর সুখ খুঁজে পাবেন।

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

জার্মান ভাষায় বাইবেল সাহিত্যাদি পেয়ে আনন্দপূর্ণ প্রতিক্রিয়া

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যদিও গানবাজনা সবসময়ই নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু এখন তারা প্রত্যেকটা বাইবেল অধ্যয়নের পরে গান গায়