সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রথম বংশাবলি বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

প্রথম বংশাবলি বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

প্রথম বংশাবলি বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিহুদিরা বাবিলীয় বন্দিত্ব থেকে তাদের নিজদেশে ফিরে আসার পর প্রায় ৭৭ বছর কেটে গিয়েছে। দেশাধ্যক্ষ সরুব্বাবিলের পুনর্নিমিত মন্দিরটি ৫৫ বছর ধরে তখনও অস্তিত্বে রয়েছে। যিহুদিদের ফিরে আসার প্রধান কারণ ছিল যিরূশালেমে সত্য উপাসনা পুনর্স্থাপন করা। কিন্তু, যিহোবার উপাসনার প্রতি লোকেদের উদ্যোগের অভাব ছিল। জরুরি ভিত্তিতে উৎসাহের দরকার ছিল আর বাইবেলের প্রথম বংশাবলি বইটি ঠিক সেই বিষয়টাই প্রদান করে।

বংশতালিকা সংক্রান্ত বিবরণগুলো ছাড়াও, প্রথম বংশাবলি বইটিতে রাজা শৌলের মৃত্যু থেকে রাজা দায়ূদের মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় ৪০ বছর সময়কালের ঘটনাবলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মনে করা হয় যে, যাজক ইষ্রা সা.কা.পূ. ৪৬০ সালে এই বইটি লিখেছিলেন। প্রথম বংশাবলি বইটি আমাদের কাছে আগ্রহের বিষয় কারণ এটি মন্দিরে উপাসনা সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে এবং মশীহের বংশধারা সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ দেয়। ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের এক অংশ হিসেবে, এর বার্তা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এবং বাইবেল সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতাকে বৃদ্ধি করে।—ইব্রীয় ৪:১২.

নামের এক অর্থপূর্ণ তালিকা

(১ বংশাবলি ১:১–৯:৪৪)

বংশতালিকা সংক্রান্ত বিস্তারিত যে-বিবরণ ইষ্রা সংকলন করেন, তা অন্তত তিনটে কারণের জন্য প্রয়োজন: যাজকপদে যে কেবলমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিরাই সেবা করবে তা নিশ্চিত করা, গোষ্ঠী অনুযায়ী উত্তরাধিকার নির্ধারণ করতে সাহায্য করা এবং মশীহের দিকে পরিচালনাকারী সেই বংশের বিবরণ সংরক্ষণ করা। বংশতালিকা সংক্রান্ত বিবরণটি যিহুদিদের ইতিহাসের ধারাকে সংযুক্ত করে প্রথম মানুষের কাছে নিয়ে যায়। আদম থেকে নোহ পর্যন্ত দশ প্রজন্ম আর অব্রাহাম পর্যন্ত আরো দশ প্রজন্ম। ইশ্মায়েলের সন্তান, অব্রাহামের উপপত্নী কটূরার সন্তান এবং এষৌর সন্তানদের তালিকা করার পর, বিবরণটি ইস্রায়েলের সেই ১২ বংশের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে।—১ বংশাবলি ২:১.

যিহূদার বংশধরদের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে কারণ তারা রাজা দায়ূদের রাজকীয় বংশকে উৎপন্ন করে। অব্রাহাম থেকে দায়ূদ পর্যন্ত ১৪টা প্রজন্ম আর বাবিলে বন্দিত্বে যাওয়া পর্যন্ত আরো ১৪টা প্রজন্ম। (১ বংশাবলি ১:২৭, ৩৪; ২:১-১৫; ৩:১-১৭; মথি ১:১৭) এরপর ইষ্রা যর্দনের পূর্ব দিকের বংশধরদের বিবরণ দেন আর তারপর লেবির সন্তানদের বংশতালিকার বিবরণ দেন। (১ বংশাবলি ৫:১-২৪; ৬:১) এরপর ইষ্রা যর্দন নদীর পশ্চিম দিকের অন্যান্য কিছু বংশের বিষয়ে সংক্ষেপে বলেন এবং বিন্যামীন বংশ সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ দেন। (১ বংশাবলি ৮:১) এ ছাড়া, বাবিলের বন্দিত্বের পর যিরূশালেমের প্রথম অধিবাসীদের নামও তালিকাবদ্ধ করা হয়।—১ বংশাবলি ৯:১-১৬.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

১:১৮—শেলহের পিতা কে ছিলেন—কৈনন নাকি অর্ফক্‌ষদ? (লূক ৩:৩৫, ৩৬) অর্ফক্‌ষদ ছিলেন শেলহের পিতা। (আদিপুস্তক ১০:২৪; ১১:১২) লূক ৩:৩৬ পদে উল্লেখিত ‘কৈনন’ নামটি সম্ভবত “কল্‌দীয়” নামের বিকৃত রূপ। তা-ই যদি হয়, তা হলে মূল পাঠ্যাংশটিকে হয়তো এভাবে পড়া হবে, “কল্‌দীয় অর্ফক্‌ষদের পুত্র।” অথবা হতে পারে যে, কৈনন ও অর্ফক্‌ষদ নামগুলো একই ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। এই তথ্যটাকেও উপেক্ষা করা উচিত নয় যে, “কৈননের পুত্ত্র” এই অভিব্যক্তিটি কিছু পাণ্ডুলিপিতে পাওয়া যায় না।

২:১৫—দায়ূদ কি যিশয়ের সপ্তম পুত্র ছিলেন? না। যিশয়ের আটটি পুত্র ছিল আর দায়ূদ ছিলেন কনিষ্ঠ। (১ শমূয়েল ১৬:১০, ১১; ১৭:১২) স্পষ্টতই যিশয়ের এক পুত্র নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গিয়েছিল। যেহেতু বংশতালিকা সংক্রান্ত বিবরণে সেই পুত্র কোনো প্রভাব ফেলেননি, তাই ইষ্রা তার নাম বাদ দিয়েছিলেন।

৩:১৭—কেন লূক ৩:২৮ পদে যিকনিয়ের পুত্র শল্টীয়েলকে নেরির পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে? যিকনিয় ছিলেন শল্টীয়েলের পিতা। কিন্তু, সম্ভবত নেরি শল্টীয়েলের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। লূক নেরির জামাতাকে নেরির পুত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন ঠিক যেমনটা তিনি যোষেফের বেলায় করেছিলেন, তাকে মরিয়মের পিতা এলির সন্তান বলে সম্বোধন করেছিলেন।—লূক ৩:২৩.

৩:১৭-১৯—সরুব্বাবিল, পদায় ও শল্টীয়েলের মধ্যে সম্পর্ক কী ছিল? সরুব্বাবিল ছিলেন পদায়ের এক পুত্র, যিনি শল্টীয়েলের এক ভাই ছিলেন। তা সত্ত্বেও, বাইবেল কখনো কখনো সরুব্বাবিলকে শল্টীয়েলের পুত্র বলে সম্বোধন করে। (মথি ১:১২; লূক ৩:২৮) এর কারণ হতে পারে যে, পদায় মারা গিয়েছিলেন এবং শল্টীয়েল সরুব্বাবিলকে প্রতিপালন করেছিলেন। অথবা হতে পারে যেহেতু শল্টীয়েল নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন, তাই পদায় শল্টীয়েলের বিধবা স্ত্রীর প্রতি দেবরের কর্তব্য সাধন করেছিলেন বা তাকে বিয়ে করেছিলেন আর সরুব্বাবিল তাদের মিলনের প্রথমজাত সন্তান ছিলেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ২৫:৫-১০.

৫:১, ২—যোষেফের জন্য জেষ্ঠাধিকার পাওয়ার অর্থ কী ছিল? এটার অর্থ ছিল যে, যোষেফ উত্তরাধিকারের দ্বিগুণ অংশ পেয়েছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৭) এইভাবে তিনি দুটো বংশের—ইফ্রয়িম ও মনঃশির—পিতা হয়েছিলেন। কিন্তু ইস্রায়েলের অন্যান্য পুত্রেরা কেবল একটা বংশের পিতা হয়েছিল।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:১–৯:৪৪. প্রকৃত লোকেদের বংশতালিকাগুলো প্রমাণ করে যে, সত্য উপাসনার সম্পূর্ণ ব্যবস্থার ভিত্তি কোনো পৌরাণিক কাহিনী নয় কিন্তু বাস্তব তথ্য।

৪:৯, ১০. এলাকার অধিকার শান্তিপূর্ণভাবে বৃদ্ধি করার বিষয়ে যাবেষের ঐকান্তিক প্রার্থনার উত্তর যিহোবা দিয়েছিলেন, যাতে সেখানে আরও বেশি ঈশ্বর ভয়শীল লোকেরা থাকতে পারে। আমাদেরও, শিষ্য তৈরির কাজে উদ্যোগের সঙ্গে অংশ নেওয়ার সময় তা বৃদ্ধির করার জন্য আন্তরিক প্রার্থনা করতে হবে।

৫:১০, ১৮-২২. রাজা শৌলের সময়ে, যর্দনের পূর্ব দিকের বংশগুলো হাগরীয়দের পরাস্ত করেছিল এমনকি যদিও হাগরীয়রা সংখ্যায় দ্বিগুণের চেয়েও বেশি ছিল। এর কারণ ছিল, এই বংশগুলোর বলবান লোকেরা যিহোবার ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করেছিল এবং তাঁর কাছ থেকে সাহায্য লাভ করার চেষ্টা করেছিল। আসুন আমরা আমাদের ভয়ংকর শত্রুদের বিরুদ্ধে আধ্যাত্মিক যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সময় যিহোবার ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখি।—ইফিষীয় ৬:১০-১৭.

৯:২৬, ২৭. লেবীয় দ্বারপালেরা নিরূপিত বা অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ কার্যে রত থাকত। তাদেরকে মন্দিরের পবিত্র জায়গাগুলোতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল। প্রতিদিন দ্বার খোলার ব্যাপারে তারা নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। আমাদের ওপর আস্থা সহকারে, আমাদের এলাকায় লোকেদের কাছে পৌঁছানোর এবং তাদেরকে যিহোবাকে উপাসনা করতে সাহায্য করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। আমাদেরও কি সেই লেবীয় দ্বারপালদের মতো নির্ভরযোগ্য ও আস্থাশীল বলে প্রমাণিত হওয়া উচিত নয়?

রাজা হিসেবে দায়ূদ শাসন করেন

(১ বংশাবলি ১০:১–২৯:৩০)

কাহিনীটি গিল্‌বোয় পর্বতে পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাজা শৌলের এবং তার তিন পুত্রের মৃত্যুর বিবরণ দিয়ে শুরু হয়। যিশয়ের পুত্র দায়ূদকে যিহূদা বংশের ওপর রাজা করা হয়। সমস্ত বংশ থেকে লোকেরা হিব্রোণে আসে এবং দায়ূদকে পুরো ইস্রায়েলের ওপরে রাজা করে। (১ বংশাবলি ১১:১-৩) এর কিছু পরই তিনি যিরূশালেমকে অধিকার করেন। পরে, ইস্রায়েলীয়রা “জয়ধ্বনি সহকারে এবং শৃঙ্গ, . . . নেবল ও বীণাধ্বনি সহকারে” নিয়মসিন্দুক যিরূশালেমে নিয়ে আসে।—১ বংশাবলি ১৫:২৮.

দায়ূদ সত্য ঈশ্বরের জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেই বিশেষ সুযোগটি শলোমনের জন্য সংরক্ষণ করে যিহোবা দায়ূদের সঙ্গে এক রাজ্যচুক্তি করেন। দায়ূদ যখন ইস্রায়েলের শত্রুদের বিরুদ্ধে তার অভিযান চালিয়ে যান, তখন যিহোবা তাকে একটার পর একটা বিজয় এনে দেন। অবৈধভাবে লোক-গণনার ফলে ৭০,০০০ লোকের মৃত্যু হয়। দূতের কাছ থেকে যিহোবার উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি স্থাপন করার নির্দেশ পাওয়ার পর, দায়ূদ যিবূষীয় অর্ণানের কাছ থেকে একটা জমি কেনেন। দায়ূদ সেই স্থানে যিহোবার উদ্দেশে এক “অতিশয় প্রতাপান্বিত” গৃহ নির্মাণ করার জন্য “প্রচুর দ্রব্যের আয়োজন” শুরু করেন। (১ বংশাবলি ২২:৫) দায়ূদ যে-লেবীয় সেবকদের সংগঠিত করেন, সেই সম্বন্ধে শাস্ত্রের অন্য যেকোনো অংশের চেয়ে এখানে আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। রাজা ও লোকেরা মন্দিরের জন্য উদারভাবে দান করে। ৪০ বছরের রাজত্ব করার পর, দায়ূদ “আয়ু, ধন ও গৌরবে পরিপূর্ণ হইয়া” মারা যান “এবং তাঁহার পুত্ত্র শলোমন তাঁহার পদে রাজত্ব করিতে লাগিলেন।”—১ বংশাবলি ২৯:২৮.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

১১:১১—যাদেরকে বধ করা হয়েছিল তাদের সংখ্যা কেন ৮০০ নয় কিন্তু ৩০০ অথচ ২ শমূয়েল ২৩:৮ পদে একই বিবরণে ৮০০ বলে উল্লেখ করা হয়েছে? দায়ূদের সবচেয়ে বলবান তিন জন লোকের প্রধান ছিলেন যাশবিয়াম অথবা যোশেব-বশেবৎ। অন্য দুজন বীর ছিল ইলিয়াসর ও শশ্ম। (২ শমূয়েল ২৩:৮-১১) এই দুটো বিবরণের পার্থক্যের কারণ সম্ভবত হতে পারে যে, সেগুলো একই ব্যক্তির দ্বারা সম্পাদিত বিভিন্ন কাজকে নির্দেশ করে।

১১:২০, ২১—দায়ূদের প্রধান তিন জন বীরের অবস্থানের তুলনায় অবীশয়ের স্থান কী ছিল? অবীশয় সেই তিন জন বীরের একজন ছিলেন না যারা দায়ূদের সেবা করেছিল। কিন্তু, ২ শমূয়েল ২৩:১৮, ১৯, (NW) পদে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ৩০ জন যোদ্ধার প্রধান ছিলেন এবং তাদের যেকারোর চেয়ে অধিক মর্যাদাপন্ন ছিলেন। অবীশয়ের সুনাম সেই তিন জন প্রধান বলবান লোকের সুনামকে ছোট করেছিল কারণ তিনি যাশবিয়ামের মতোই বীরের কাজ করেছিলেন।

১২:৮—কোন অর্থে গাদীয় যোদ্ধাদের মুখ “সিংহ-মুখের ন্যায়” ছিল? এই বলবান লোকেরা প্রান্তরে দায়ূদের পক্ষে ছিল। তাদের চুল লম্বা হয়ে গিয়েছিল। সিংহের কেশরের মতো লম্বা চুল থাকায় তাদেরকে হিংস্র, সিংহের মতো দেখাত।

১৩:৫—“মিসরের সীহোর নদী” কী? কেউ কেউ মনে করেছে যে, এই অভিব্যক্তিটি নীল নদের এক শাখা নদীকে নির্দেশ করে। এ ছাড়া, গণনাপুস্তক ৩৪:৫ পদে উল্লেখিত ‘মিসরের নদীও’ একই ‘নদীকে’ নির্দেশ করে বলে মনে করা হয়। কিন্তু, গণনাপুস্তক ৩৪:৫ পদে একটি ভিন্ন ইব্রীয় শব্দ ব্যবহার করা হয় যেটিকে আরও সঠিকভাবে “উপত্যকা” হিসেবে অনুবাদ করা যেতে পারে। তাই, ‘মিসরের সীহোর নদী’ সাধারণত ‘মিশরের উপত্যকাকে’ বোঝায় বলে মনে হয়—প্রতিজ্ঞাত দেশের দক্ষিণপশ্চিম বরাবর চিহ্নিত একটা লম্বা গিরিখাত।—গণনাপুস্তক ৩৪:২, ৫; আদিপুস্তক ১৫:১৮.

১৬:১, ৩৭-৪০; ২১:২৯, ৩০; ২২:১৯—যিরূশালেমে সিন্দুকটি নিয়ে আসার পর থেকে মন্দির নির্মাণ পর্যন্ত ইস্রায়েলে উপাসনার জন্য কোন ব্যবস্থা কার্যরত ছিল? দায়ূদ যখন যিরূশালেমে সিন্দুকটি নিয়ে এসেছিলেন এবং সেটিকে তার নির্মিত তাঁবুর ভিতরে রেখেছিলেন, তখন সিন্দুকটি অনেক বছর ধরে আবাসের মধ্যে ছিল না। সরিয়ে আনার পর, সিন্দুকটি যিরূশালেমের সেই তাঁবুতেই ছিল। আবাস গিবিয়োনে ছিল, যেখানে মহাযাজক সাদোক ও তার ভাইয়েরা ব্যবস্থায় উল্লেখিত নির্দেশানুসারে বলি উৎসর্গ করত। যিরূশালেমে মন্দির নির্মাণ সমাপ্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চলছিল। মন্দির যখন তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তখন গিবিয়োন থেকে আবাসটিকে যিরূশালেমে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং সিন্দুকটি মন্দিরের অতি পবিত্র স্থানে রাখা হয়েছিল।—১ রাজাবলি ৮:৪, ৬.

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১৩:১১. আমাদের প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়, তখন অসন্তুষ্ট না হয়ে বা রেগে না গিয়ে এবং যিহোবাকে দোষারোপ না করে, আমাদের অবশ্যই পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করতে এবং এটা দেখার চেষ্টা করতে হবে যে, কোন কারণে এই ব্যর্থতা। নিঃসন্দেহে দায়ূদ তা করেছিলেন। তিনি তার ভুল থেকে শিক্ষা লাভ করেছিলেন এবং পরে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলতার সঙ্গে সিন্দুকটিকে যিরূশালেমে নিয়ে এসেছিলেন। *

১৪:১০, ১৩-১৬; ২২:১৭-১৯. আমাদের সবসময় প্রার্থনার মাধ্যমে যিহোবার কাছে আসা এবং যেকোনো কাজ করার আগে তাঁর নির্দেশনা লাভ করার চেষ্টা করা উচিত, যেটা আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে প্রভাবিত করবে।

১৬:২৩-২৯. যিহোবার উপাসনা আমাদের জীবনে প্রথম চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত।

১৮:৩. যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোকে পূর্ণ করেন। দায়ূদের মাধ্যমে তিনি অব্রাহামের বংশকে সম্পূর্ণ কনান দেশ দেওয়ার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছিলেন, “মিসরের নদী অবধি মহানদী, ফরাৎ নদী পর্য্যন্ত” সেই বংশকে বৃদ্ধি করেছিলেন।—আদিপুস্তক ১৫:১৮; ১ বংশাবলি ১৩:৫.

২১:১৩-১৫. যিহোবা দূতকে মহামারী থামাতে আদেশ দিয়েছিলেন কারণ তিনি তাঁর লোকেদের কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। বাস্তবিকই, “তাঁহার করুণা প্রচুর।” *

২২:৫, ৯; ২৯:৩-৫, ১৪-১৬. যদিও যিহোবার মন্দির নির্মাণ করার দায়িত্ব দায়ূদকে দেওয়া হয়নি কিন্তু তিনি এক উদার মনোভাব দেখিয়েছিলেন। কেন? কারণ দায়ূদ উপলব্ধি করেছিলেন যে, তিনি যা কিছু অর্জন করেছিলেন সেগুলো যিহোবার মঙ্গলভাবের দরুনই হয়েছিল। কৃতজ্ঞতার সেই একই অনুভূতি আমাদেরকে উদারতার এক মনোভাব রাখতে অনুপ্রাণিত করা উচিত।

২৪:৭-১৮. দায়ূদের দ্বারা ২৪ জন যাজককে বিভিন্ন দলে ভাগ করার ব্যবস্থাটি, যিহোবার দূত যখন যোহন বাপ্তাইজকের পিতা সখরিয়ের কাছে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং যোহনের জন্ম সম্বন্ধে ঘোষণা করেছিলেন, তখন কার্যকর ছিল। “অবিয়ের দলের” (বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) একজন সদস্য হিসেবে সখরিয় পালাক্রমে সেই সময় মন্দিরে সেবা করছিলেন। (লূক ১:৫, ৮, ৯) সত্য উপাসনা পৌরাণিক কাহিনীর চরিত্র নয় কিন্তু ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের কেন্দ্র করে আবর্তিত। আজকে ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সুসংগঠিত উপাসনার প্রতি আমাদের অনুগত সহযোগিতার মাধ্যমে অনেক আশীর্বাদ আসে।—মথি ২৪:৪৫.

“ইচ্ছুক মনে” যিহোবার সেবা করুন

প্রথম বংশাবলি বইটি কেবলমাত্র বংশতালিকাকেই অন্তর্ভুক্ত করে না। এটি যিরূশালেমে দায়ূদের নিয়মসিন্দুক নিয়ে আসার, তার বড় বড় বিজয়ের, মন্দির নির্মাণ করার আয়োজনের এবং সেবা করার জন্য লেবীয় যাজকদের বিভিন্ন দলে ভাগ করার বিষয়েও বর্ণনা করে। প্রথম বংশাবলি বইয়ে ইষ্রা যা কিছু বর্ণনা করেন, তার সমস্তই নিশ্চয়ই ইস্রায়েলীয়দের উপকৃত করেছিল এবং মন্দিরে যিহোবার উপাসনার জন্য তাদের উদ্যোগকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছিল।

যিহোবার উপাসনাকে তার জীবনে সবচেয়ে প্রথম স্থানে রাখার ব্যাপারে দায়ূদ কী এক চমৎকার উদাহরণই না স্থাপন করেছেন! নিজের জন্য বিশেষ সুযোগগুলো লাভের চেষ্টা না করে, দায়ূদ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার চেষ্টা করেছিলেন। আমাদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে আমরা যেন “একাগ্র অন্তঃকরণে ও ইচ্ছুক মনে” যিহোবাকে সেবা করার জন্য তাঁর পরামর্শকে কাজে লাগাই।—১ বংশাবলি ২৮:৯.

[পাদটীকাগুলো]

^ যিরূশালেমে সিন্দুক স্থানান্তর করার জন্য দায়ূদের প্রচেষ্টা থেকে অন্যান্য শিক্ষা সম্বন্ধে জানার জন্য, ২০০৫ সালের ১৫ই মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৬-১৯ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ দায়ূদের অবৈধভাবে লোক-গণনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য শিক্ষা সম্বন্ধে জানার জন্য, ২০০৫ সালের ১৫ই মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৬-১৯ পৃষ্ঠা দেখুন।

[৮-১১ পৃষ্ঠার তালিকা/চিত্রগুলো]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

সা.কা.পূ. ৪০২৬ সাল আদম আদম থেকে নোহ পর্যন্ত

প্রজন্মগুলো (১,০৫৬ বছর)

১৩০ বছর ⇩

শেথ

১০৫ ⇩

ইনোশ

৯০ ⇩

কৈনন

৭০ ⇩

মহললেল

৬৫ ⇩

যেরদ

১৬২ ⇩

হনোক

৬৫ ⇩

মথূশেলহ

১৮৭ ⇩

লেমক

১৮২ ⇩

সা.কা.পূ. ২৯৭০ সাল নোহ সা.কা.পূ. ২৯৭০ সাল নোহ জন্মগ্রহণ করেন

নোহ থেকে অব্রাহাম পর্যন্ত

৫০২ বছর ⇩ প্রজন্মগুলো (৯৫২ বছর)

শেম

সা.কা.পূ. ২৩৭০ সাল জলপ্লাবন হয়

১০০ ⇩

অর্ফক্‌ষদ

৩৫ ⇩

শেলহ

৩০ ⇩

এবর

৩৪ ⇩

পেলগ

৩০ ⇩

রিয়ূ

৩২ ⇩

সেরিগ

৩০ ⇩

নাহোর

২৯ ⇩

তেরহ

১৩০ ⇩

সা.কা.পূ. ২০১৮ সাল অব্রাহাম সা.কা.পূ. ২০১৮ সাল অব্রাহাম জন্মগ্রহণ করেন

অব্রাহাম থেকে দায়ূদ পর্যন্ত:

১০০ বছর ১৪টা প্রজন্ম (৯১১ বছর)

ইস্‌হাক

৬০ ⇩

যাকোব

প্রায় ৮৮ সাল ⇩

যিহূদা

পেরস

হিষ্রোণ

রাম

অম্মীনাদব

নহশোন

সল্‌মোন

বোয়স

ওবেদ

যিশয়

সা.কা.পূ. ১১০৭ সাল দায়ূদ জন্মগ্রহণ করেন