সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক অহংকারী হৃদয় গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সতর্ক হোন

এক অহংকারী হৃদয় গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সতর্ক হোন

এক অহংকারী হৃদয় গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সতর্ক হোন

“ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন।”—যাকোব ৪:৬.

১. উপযুক্ত গর্ববোধের একটা উদাহরণ দিন।

 কিছু ঘটনার কারণে আপনার হৃদয় কি কখনো গর্বে ফুলে উঠেছে? আমাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেরই এইরকম সুখানুভূতি হয়েছে। আমাদের কিছুটা গর্ববোধ করার ক্ষমতা খারাপ কিছু নয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো খ্রিস্টান দম্পতি যখন তাদের মেয়ের উত্তম আচরণ এবং কঠোর পরিশ্রমের বিষয়ে স্কুলের রিপোর্ট পড়ে, তখন মেয়ের সাফল্যে তাদের মুখ হয়তো উষ্ণ পরিতৃপ্তিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। প্রেরিত পৌল এবং তার সঙ্গীরা সেই নতুন মণ্ডলীর জন্য শ্লাঘা বা গর্ব করেছিল, যেটা তারা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিল কারণ ভাইয়েরা বিশ্বস্তভাবে তাড়না সহ্য করেছিল।—১ থিষলনীকীয় ১:১, ৬; ২:১৯, ২০; ২ থিষলনীকীয় ১:১, ৪.

২. কেন গর্ববোধ করা সাধারণত অনাকাঙ্ক্ষিত?

পূর্বোল্লিখিত উদাহরণগুলো থেকে আমরা দেখতে পাই যে, গর্ব আনন্দের সেই অনুভূতিকে নির্দেশ করতে পারে, যা কোনো কাজ করার অথবা কিছু পাওয়ার মাধ্যমে আসে। কিন্তু, বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় যে গর্ব, কারো ক্ষমতা, বাহ্যিক চেহারা, সম্পদ অথবা পদমর্যাদার জন্য অনুপযুক্ত আত্মশ্লাঘা অর্থাৎ শ্রেষ্ঠত্বের এক অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে। এটা প্রায়ই উদ্ধত মনোভাব, এক অহংকারী আচরণের দ্বারা প্রদর্শিত হয়। নিশ্চিতভাবে এই ধরনের গর্বের বিরুদ্ধেই খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কেন? কারণ স্বার্থপরতার প্রতি আমাদের এক সহজাত প্রবণতা রয়েছে, যা আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। (আদিপুস্তক ৮:২১) ফলে আমাদের হৃদয় আমাদেরকে ভুল কারণগুলো নিয়ে গর্ববোধ করার জন্য সহজেই ভ্রান্ত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বর্ণ, সম্পদ, শিক্ষা, সহজাত ক্ষমতা অথবা কার্য সম্পাদনের বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে গর্ববোধ করা খ্রিস্টানদের প্রতিরোধ করতে হবে। এই ধরনের বিষয়গুলোর জন্য যে-গর্ব আসে, তা অনুপযুক্ত এবং ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে।—যিরমিয় ৯:২৩; প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫; ১ করিন্থীয় ৪:৭; গালাতীয় ৫:২৬; ৬:৩, ৪.

৩. অহংকার কী এবং এটা সম্বন্ধে যিশু কী বলেছিলেন?

অনুপযুক্ত গর্ব প্রত্যাখ্যান করার আরও একটা কারণ রয়েছে। আমরা যদি আমাদের হৃদয়ে এই ধরনের গর্বকে গড়ে উঠতে দিই, তা হলে সেটা বৃদ্ধি পেয়ে অত্যন্ত ঘৃণ্য ধরনের গর্বে পরিণত হতে পারে, যেটাকে বলা হয় অহংকার। অহংকার কী? শ্রেষ্ঠ মনে করা ছাড়াও, একজন অহংকারী ব্যক্তি অন্যদের ছোট মনে করেন, যাদেরকে তিনি নিকৃষ্ট হিসেবে দেখেন। (লূক ১৮:৯; যোহন ৭:৪৭-৪৯) অন্যান্য যে-মন্দ বৈশিষ্ট্য “মনুষ্যদের অন্তঃকরণ হইতে, . . . বাহির হয়” এবং “মনুষ্যকে অশুচি করে,” সেগুলোর সঙ্গে যিশু ‘অভিমানকে’ তালিকাবদ্ধ করেছিলেন। * (মার্ক ৭:২০-২৩) খ্রিস্টানরা উপলব্ধি করতে পারে যে, এক অহংকারী হৃদয় গড়ে তোলা এড়িয়ে চলা কত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. অহংকার সম্বন্ধে বাইবেলের উদাহরণগুলো বিবেচনা করা কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে?

অহংকারী ব্যক্তিদের সম্বন্ধে বাইবেলের কিছু বিবরণ বিবেচনা করার দ্বারা আপনি অহংকার এড়িয়ে চলার জন্য সাহায্য পেতে পারেন। এভাবে আপনি সেই অনুপযুক্ত গর্বেবোধ এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে আরও বেশি দক্ষ হবেন, যা হয়তো আপনার মধ্যে রয়েছে অথবা একসময় গড়ে উঠতে পারে। এটা আপনাকে সেই চিন্তাভাবনা অথবা অনুভূতিগুলো প্রত্যাখ্যান করতে সাহায্য করবে, যা এক অহংকারী হৃদয়ের দিকে পরিচালিত করতে পারে। ফলে, আপনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, যখন ঈশ্বর তার এই সাবধানবাণী অনুযায়ী কাজ করবেন: “সেই সময়ে আমি তোমার দর্পযুক্ত উল্লাসকারী লোকদিগকে তোমার মধ্য হইতে হরণ করিব; তাহাতে তুমি আমার পবিত্র পর্ব্বতে আর অহঙ্কার করিবে না।”—সফনিয় ৩:১১.

অহংকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ

৫, ৬. ফরৌণ কীভাবে অহংকার দেখিয়েছিল এবং এর ফল কী হয়েছিল?

ফরৌণের মতো শক্তিশালী শাসকের সঙ্গে যিহোবা যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেটার মাধ্যমেও আপনি অহংকার সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পারেন। কোনো সন্দেহ নেই যে, ফরৌণের এক অহংকারী হৃদয় ছিল। নিজেকে একজন উপাস্য দেবতা হিসেবে দেখার মাধ্যমে তিনি তার দাস ইস্রায়েলীয়দের অবজ্ঞা করেছিলেন। যিহোবার উদ্দেশে “উৎসব করণার্থে” প্রান্তরে যেতে দেওয়ার বিষয়ে ইস্রায়েলের অনুরোধের প্রতি তার প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করুন। “সদাপ্রভু কে, যে আমি তাহার কথা শুনিয়া ইস্রায়েলকে ছাড়িয়া দিব?” এটাই ছিল ফরৌণের অহংকারী উত্তর।—যাত্রাপুস্তক ৫:১, ২.

ফরৌণ ছয়টা আঘাত সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করার পর, মোশিকে যিহোবা মিশরের শাসককে এই কথা বলতে বলেছিলেন: “এখনও তুমি আমার প্রজাগণের উপর দর্প করিয়া তাহাদিগকে ছাড়িয়া দিতে চাহিতেছ না।” (যাত্রাপুস্তক ৯:১৭) এরপর মোশি সপ্তম আঘাতের বিষয়ে ঘোষণা করেন আর সেটা হল শিলাবৃষ্টি, যা দেশকে বিধ্বস্ত করেছিল। দশম আঘাতের পর ইস্রায়েলীয়দের চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার পর পরই ফরৌণ তার মন পরিবর্তন করেছিলেন এবং তাদের পিছনে পিছনে ধাওয়া করেছিলেন। অবশেষে, ফরৌণ এবং তার সৈন্যবাহিনী লোহিত সাগরে (সূফসাগরে) ফাঁদে আটকা পড়েছিল। জলরাশি যখন তাদেরকে ঢেকে ফেলছিল, তখন তারা কী চিন্তা করেছিল, তা একটু কল্পনা করুন! ফরৌণের অহংকারের ফল কী হয়েছিল? তার সর্বোৎকৃষ্ট সৈন্যবাহিনী বলেছিল: “চল, আমরা ইস্রায়েলের সম্মুখ হইতে পলায়ন করি, কেননা সদাপ্রভু তাহাদের পক্ষে মিস্রীয়দের বিপক্ষে যুদ্ধ করিতেছেন।”—যাত্রাপুস্তক ১৪:২৫.

৭. বাবিলের শাসকরা কীভাবে অহংকার দেখিয়েছিল?

অন্যান্য শাসকরাও যিহোবার হাতে অবমানিত হয়েছিল। একজন ছিলেন অশূরের রাজা সন্‌হেরীব। (যিশাইয় ৩৬:১-৪, ২০; ৩৭:৩৬-৩৮) শেষ পর্যন্ত, বাবিলীয়রা অশূর দেশকে জয় করে কিন্তু বাবিলীয় দুজন অহংকারী রাজাকেও অবমানিত করা হয়েছিল। রাজা বেল্‌শৎসরের সেই ভোজের কথা স্মরণ করে দেখুন, যখন তিনি এবং তার রাজবংশীয় অতিথিরা যিহোবার মন্দির থেকে আনীত পাত্রে দ্রাক্ষারস পান করছিল, বাবিলীয় দেবতাদের প্রশংসা করছিল। হঠাৎ করে মনুষ্য হস্তের অঙ্গুলি দেখা যায় আর তা দেওয়ালের ওপর এক বার্তা লেখে। এই রহস্যময় লেখার অর্থ ব্যাখ্যা করতে বলা হলে ভাববাদী দানিয়েল বেল্‌শৎসরকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “পরাৎপর ঈশ্বর আপনার পিতা নবূখদ্‌নিৎসরকে রাজ্য, . . . দিয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহার অন্তঃকরণ গর্ব্বিত হইলে . . . আপন রাজসিংহাসন হইতে চ্যুত হইলেন, ও তাঁহা হইতে গৌরব নীত হইল। হে বেল্‌শৎসর, আপনি তাঁহারই পুত্ত্র, আপনি এই সকল জ্ঞাত হইলেও আপনি অন্তঃকরণ নম্র করেন নাই।” (দানিয়েল ৫:৩, ১৮, ২০, ২২) সেই রাতেই মাদীয়-পারসীক সৈন্যবাহিনী বাবিল জয় করেছিল এবং বেল্‌শৎসরকে হত্যা করা হয়েছিল।—দানিয়েল ৫:৩০, ৩১.

৮. বিভিন্ন অহংকারী ব্যক্তির সঙ্গে যিহোবা কেমন আচরণ করেছিলেন?

এ ছাড়া, অন্যান্য অহংকারী ব্যক্তির কথাও চিন্তা করুন যারা যিহোবার লোকেদের অবজ্ঞা করেছিল: পলেষ্টীয় দৈত্যাকৃতি গলিয়াৎ, পারস্যের প্রধানমন্ত্রী হামন এবং রাজা হেরোদ আগ্রিপ্প, যিনি যিহূদিয়া প্রদেশে শাসন করেছিলেন। তাদের অহংকারের কারণে সেই তিন ব্যক্তি ঈশ্বরের হাতে অবমানিত মৃত্যু ভোগ করেছিল। (১ শমূয়েল ১৭:৪২-৫১; ইষ্টের ৩:৫, ৬; ৭:১০; প্রেরিত ১২:১-৩, ২১-২৩) সেই অহংকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে যিহোবা যেমন আচরণ করেছিলেন, তা এই সত্যতাকে তুলে ধরে: “বিনাশের পূর্ব্বে অহঙ্কার, পতনের পূর্ব্বে মনের গর্ব্ব।” (হিতোপদেশ ১৬:১৮) সত্যিই, কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না যে, “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন।”—যাকোব ৪:৬.

৯. কীভাবে সোরের রাজারা বিশ্বাসঘাতক প্রতিপন্ন হয়েছিল?

মিশর, অশূর এবং বাবিলের অহংকারী রাজাদের বিপরীতে সোরের রাজা একবার ঈশ্বরের লোকেদের সাহায্য করেছিল। রাজা দায়ূদ এবং শলোমনের রাজত্বের সময়ে তিনি রাজপ্রাসাদ এবং ঈশ্বরের মন্দিরের জন্য দক্ষ কারিগর এবং দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ করেছিলেন। (২ শমূয়েল ৫:১১; ২ বংশাবলি ২:১১-১৬) দুঃখের বিষয় যে, পরে সোরের রাজারা যিহোবার লোকেদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। কেন তারা তা করেছিল?—গীতসংহিতা ৮৩:৩-৭; যোয়েল ৩:৪-৬; আমোষ ১:৯, ১০.

“তোমার চিত্ত . . . গর্ব্বিত হইয়াছিল”

১০, ১১. (ক) কাকে সোরের রাজাদের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে? (খ) কোন বিষয়টা ইস্রায়েলের প্রতি সোরের রাজাদের মনোভাব পালটে দিয়েছিল?

১০ যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিহিষ্কেলকে সোরের রাজাদের রাজবংশকে উন্মোচিত এবং নিন্দা করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। “সোরের রাজার” উদ্দেশে দেওয়া সেই বার্তার মধ্যে যে-অভিব্যক্তিগুলো ছিল, সেগুলো সোরের রাজবংশ এবং আদি বিশ্বাসঘাতক শয়তান, যে “সত্যে থাকে নাই” উভয়ের জন্যই উপযুক্ত। (যিহিষ্কেল ২৮:১২; যোহন ৮:৪৪) শয়তান একসময় যিহোবার স্বর্গীয় পুত্রদের সংগঠনে অনুগত আত্মিক প্রাণী ছিল। যিহিষ্কেলের মাধ্যমে যিহোবা ঈশ্বর সোরের রাজবংশ এবং শয়তান, উভয়ের বিদ্রোহের মূল কারণের প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন:

১১ “তুমি ঈশ্বরের উদ্যান এদনে ছিলে; সর্ব্বপ্রকার বহুমূল্য প্রস্তর, . . . তোমার আচ্ছাদন ছিল . . . তুমি অভিষিক্ত আচ্ছাদক করূব ছিলে . . . তোমার সৃষ্টি দিন অবধি তুমি আপন আচারে সিদ্ধ ছিলে; শেষে তোমার মধ্যে অন্যায় পাওয়া গেল। তোমার বাণিজ্যবাহুল্যে তোমার অভ্যন্তর দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ হইল, তুমি পাপ করিলে, তাই আমি তোমাকে . . . ভ্রষ্ট করিলাম, এবং হে আচ্ছাদক করূব, . . . তোমার চিত্ত তোমার সৌন্দর্য্যে গর্ব্বিত হইয়াছিল; তুমি নিজ দীপ্তি হেতু আপন জ্ঞান নষ্ট করিয়াছ।” (যিহিষ্কেল ২৮:১৩-১৭) হ্যাঁ, সোরের রাজাদের অহংকার যিহোবার লোকেদের বিরুদ্ধে দৌরাত্ম্য করতে পরিচালিত করেছিল। সোর বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে অত্যধিক সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছিল এবং এর চমৎকার দ্রব্যসামগ্রীর জন্য বিখ্যাত ছিল। (যিশাইয় ২৩:৮, ৯) সোরের রাজারা নিজেদের সম্বন্ধে উচ্চধারণা পোষণ করেছিল এবং তারা ঈশ্বরের লোকেদের উৎপীড়ন করতে শুরু করেছিল।

১২. কী শয়তানকে প্রতারণা করতে পরিচালিত করেছিল আর সে ক্রমাগত কী করে চলেছে?

১২ একইভাবে, সেই আত্মিক প্রাণী, যে পরে শয়তানে পরিণত হয়েছিল, তার একসময় ঈশ্বরের দেওয়া যেকোনো দায়িত্ব পরিপূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞা ছিল। কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে সে “গর্ব্বান্ধ” হয়ে পড়েছিল এবং ঈশ্বরের শাসন করার উপায়কে অবজ্ঞা করতে শুরু করেছিল। (১ তীমথিয় ৩:৬) সে নিজের সম্বন্ধে এত বেশি চিন্তা করেছিল যে, আদম ও হবার কাছ থেকে সে উপাসনা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিল। এই মন্দ আকাঙ্ক্ষা সগর্ভা হয়ে পাপ প্রসব করেছিল। (যাকোব ১:১৪, ১৫) শয়তান হবাকে ঠিক সেই গাছের ফল খেতে প্রলুব্ধ করেছিল, যে-গাছের ফল খেতে ঈশ্বর তাদের বারণ করেছিলেন। এরপর, সেই নিষিদ্ধ ফলটা আদমকে খাওয়ানোর জন্য শয়তান হবাকে ব্যবহার করেছিল। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) এভাবে প্রথম মানব দম্পতি তাদের ওপর ঈশ্বরের শাসন করার অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করেছিল আর এর ফলে তারা মূলত শয়তানের উপাসক হয়ে উঠেছিল। তার অহংকারের কোনো সীমা নেই। সে যিশু খ্রিস্টসহ স্বর্গের ও পৃথিবীর সমস্ত বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীকে যিহোবার সার্বভৌমত্ব প্রত্যাখ্যান করে বরং তাকে উপাসনা করার জন্য প্রলুব্ধ করতে চেষ্টা করেছে।—মথি ৪:৮-১০; প্রকাশিত বাক্য ১২:৩, ৪, ৯.

১৩. অহংকার কোন ফলসমূহ উৎপন্ন করে?

১৩ এভাবে আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, অহংকারের উৎস হল শয়তান; এটাই হল আজকের জগতের পাপ, দুঃখকষ্ট, এবং কলুষতার মূল কারণ। “এই যুগের দেব” হিসেবে শয়তান ক্রমাগত অনুপযুক্ত গর্ব এবং অহংকারকে বৃদ্ধি করে চলেছে। (২ করিন্থীয় ৪:৪) সে জানে যে তার কাল সংক্ষিপ্ত, তাই সে সত্য খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তার লক্ষ্য হল তাদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া, আত্মপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী এবং অহংকারী করে তোলা। বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, এই ধরনের স্বার্থপর বৈশিষ্ট্যগুলো এই “শেষ কালে” খুবই সাধারণ বিষয় হবে।—২ তীমথিয় ৩:১, ২; প্রকাশিত বাক্য ১২:১২, ১৭.

১৪. কোন নিয়ম অনুযায়ী যিহোবা তাঁর বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীদের সঙ্গে আচরণ করেন?

১৪ তাঁর নিজের ক্ষেত্রে, যিশু খ্রিস্ট সাহসের সঙ্গে শয়তানের অহংকারের কারণে উদ্ভুত মন্দ ফলসমূহকে উন্মোচন করেছিলেন। অন্ততপক্ষে তিন বার এবং আত্মধার্মিক শত্রুদের উপস্থিতিতে যিশু সেই নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেটির দ্বারা যিহোবা মানবজাতির সঙ্গে আচরণ করেন: “যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে, আর যে কেহ আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।”—লূক ১৪:১১; ১৮:১৪; মথি ২৩:১২.

অহংকারের বিরুদ্ধে আপনার হৃদয়কে রক্ষা করুন

১৫, ১৬. কোন বিষয়টা হাগারকে অহংকারী করে তুলেছিল?

১৫ আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন যে, ওপরে উল্লেখিত অহংকারের উদাহরণগুলোর সঙ্গে বিখ্যাত ব্যক্তিরা জড়িত রয়েছে। তার মানে কি এই যে, সাধারণ লোকেরা অহংকারপ্রবণ হয় না? অবশ্যই না। একটা ঘটনা বিবেচনা করুন, যা অব্রাহামের পরিবারে ঘটেছিল। তার উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য সেই কুলপতির কোনো ছেলে ছিল না আর তার স্ত্রী সারার সন্তানধারণের বয়স পার হয়ে গিয়েছিল। অব্রাহামের মতো অবস্থায় একজন পুরুষ প্রথা অনুয়ায়ী দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করতে এবং সন্তানের জন্ম দিতে পারত। ঈশ্বর এইরকম বিয়েগুলোকে মেনে নিয়েছিলেন কারণ সত্য উপাসকদের মধ্যে বিয়ের ব্যাপারে তাঁর আদি উদ্দেশ্য পুনর্প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর সময় তখনও আসেনি।—মথি ১৯:৩-৯.

১৬ তার স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে অব্রাহাম সারার মিশরীয় দাসী হাগারের মাধ্যমে ভাবি উত্তরাধিকারের জন্ম দিতে সম্মত হয়েছিলেন। অব্রাহামের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে হাগার গর্ভবতী হয়েছিলেন। সেই সম্মানীয় পদমর্যাদার জন্য তার অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না হয়ে, তিনি তার হৃদয়কে অহংকারী হয়ে উঠতে দিয়েছিলেন। বাইবেল বলে: “আপনার গর্ব্ভ হইয়াছে দেখিয়া নিজ কর্ত্রীকে তুচ্ছজ্ঞান করিতে লাগিল।” সেই মনোভাব অব্রাহামের পরিবারে এতটাই দ্বন্দ্ব নিয়ে এসেছিল যে, সারা হাগারকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই সমস্যার একটা সমাধান ছিল। ঈশ্বরের দূত হাগারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি আপন কর্ত্রীর নিকটে ফিরিয়া গিয়া নম্র ভাবে তাহার হস্তের বশীভূতা হও।” (আদিপুস্তক ১৬:৪, ৯) স্পষ্টতই, হাগার সেই পরামর্শ শুনেছিলেন, সারার প্রতি তার মনোভাব পরিবর্তন করেছিলেন এবং অসংখ্য লোকের পূর্বপুরুষী হয়েছিলেন।

১৭, ১৮. কেন আমাদের সকলের অহংকারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে?

১৭ হাগারের ঘটনা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যখন কারো পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তখন এর ফলে অহংকার আসতে পারে। শিক্ষাটা হল যে, ঈশ্বরের সেবায় বিশুদ্ধ হৃদয় দেখিয়েছেন এমন একজন খ্রিস্টানও সম্পদ অথবা কর্তৃত্ব পেয়ে অহংকারী হয়ে উঠতে পারেন। অন্যেরা যদি তার সাফল্য, প্রজ্ঞা এবং কর্মক্ষমতার জন্য প্রশংসা করে, তা হলেও এই মনোভাব আসতে পারে। হ্যাঁ, একজন খ্রিস্টানের সতর্ক থাকা উচিত যেন তার হৃদয়ে অহংকার গড়ে না ওঠে। এটা বিশেষ করে সেই সময়ে সত্য যদি তিনি সাফল্য অর্জন করেন অথবা আরও বেশি দায়িত্ব লাভ করে থাকেন।

১৮ অহংকার এড়ানোর সবচেয়ে জোরালো কারণ হল, এই বৈশিষ্ট্যের প্রতি ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁর বাক্য বলে: “উচ্চদৃষ্টি ও গর্ব্বিত মন, দুষ্টদের সেই প্রদীপ পাপময়।” (হিতোপদেশ ২১:৪) আগ্রহের বিষয় হল যে, বাইবেল বিশেষভাবে সেই খ্রিস্টানদের “গর্ব্বিতমনা” না হতে সাবধান করে, “যাহারা এই যুগে ধনবান্‌।” (১ তীমথিয় ৬:১৭; দ্বিতীয় বিবরণ ৮:১১-১৭) আর যে-খ্রিস্টানরা ধনী নয়, তাদের ঈর্ষান্বিত হওয়া বা “কুদৃষ্টি” এড়িয়ে চলা উচিত এবং তাদের মনে রাখা উচিত যে, অহংকার যেকারো—ধনী অথবা গরিব সকলের—মধ্যে গড়ে উঠতে পারে।—মার্ক ৭:২১-২৩; যাকোব ৪:৫.

১৯. কীভাবে উষিয় তার উত্তম নথি নষ্ট করে ফেলেছিলেন?

১৯ অহংকার এবং সেইসঙ্গে অন্যান্য মন্দ বৈশিষ্ট্য যিহোবার সঙ্গে উত্তম সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উষিয়ের রাজত্বের প্রথম দিকের কথা বিবেচনা করুন: “[তিনি] সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা ন্যায্য তাহা করিতেন। . . . তিনি ঈশ্বরের অন্বেষণ করিতে থাকিলেন; আর যত কাল সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিলেন, তত কাল ঈশ্বর তাঁহাকে কৃতকার্য্য করিলেন।” (২ বংশাবলি ২৬:৪, ৫) কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, রাজা উষিয় তার উত্তম নথি নষ্ট করে ফেলেছিলেন কারণ “তাঁহার মন উদ্ধত হইল, তিনি দুরাচরণ করিলেন।” তিনি নিজের সম্বন্ধে এতটা উচ্চধারণা পোষণ করতে শুরু করেছিলেন যে, তিনি ধূপ উৎসর্গ করার জন্য মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন। যাজকরা যখন তাকে এই ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজটা না করার বিষয়ে সাবধান করেছিল, তখন “উষিয় কোপান্বিত হইলেন।” এর ফলে যিহোবা তাকে কুষ্ঠরোগ দিয়ে আঘাত করেছিলেন এবং তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারিয়ে মারা গিয়েছিলেন।—২ বংশাবলি ২৬:১৬-২১.

২০. (ক) কীভাবে হিষ্কিয়ের উত্তম নথি বিপদের মুখে ছিল? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন বিষয় বিবেচনা করা হবে?

২০ সেই ঘটনাকে আপনি রাজা হিষ্কিয়ের উদাহরণের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। একবার সেই রাজার অপূর্ব নথি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির মুখে ছিল কারণ “তাঁহার মন গর্ব্বিত হইয়াছিল।” আনন্দের বিষয় যে, “হিষ্কিয় আপন মনের গর্ব্ব বুঝিয়া আপনাকে অবনত করিলেন” এবং পুনরায় ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করেছিলেন। (২ বংশাবলি ৩২:২৫, ২৬) লক্ষ করুন যে, হিষ্কিয়ের অহংকারের জন্য প্রতিকার ছিল নম্রতা। হ্যাঁ, নম্রতা হল অহংকারের বিপরীত। তাই, পরের প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করব যে, কীভাবে আমরা খ্রিস্টীয় নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে এবং তা বজায় রাখতে পারি।

২১. নম্র খ্রিস্টানরা কীসের জন্য সানন্দে অপেক্ষা করতে পারে?

২১ কিন্তু, আমরা যেন অহংকারের দ্বারা উৎপন্ন সমস্ত মন্দ ফলের কথা ভুলে না যাই। যেহেতু “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন,” তাই আসুন আমরা অনুপযুক্ত গর্ব প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। নম্র খ্রিস্টান হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করার সময় আমরা ঈশ্বরের মহাদিনে রক্ষা পাওয়ার জন্য সানন্দে অপেক্ষা করতে পারি, যখন অহংকারী ব্যক্তিদের এবং তাদের ফলসমূহকে পৃথিবী থেকে দূরীভূত করা হবে। এরপর, “সামান্য লোকের দর্প অধোমুখ হইবে, মান্য লোকদের গর্ব্ব খর্ব্ব হইবে; আর সেই দিন কেবল সদাপ্রভুই উন্নত হইবেন।”—যিশাইয় ২:১৭, ১৮.

[পাদটীকা]

^ মূল ভাষার যে-শব্দকে বাংলা বাইবেলে অহংকার হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটিকে অভিমান, দর্প, গর্ব, উচ্চ, উদ্ধত ইত্যাদি হিসেবেও অনুবাদ করা হয়েছে।

ধ্যানের জন্য বিষয়গুলো

• একজন অহংকারী ব্যক্তিকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?

• অহংকারের উৎস কী?

• কী একজন ব্যক্তিকে অহংকারী হয়ে উঠতে পরিচালিত করতে পারে?

• কেন আমাদের অহংকারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফরৌণের অহংকার তাকে অবমানিত করেছিল

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

হাগারের উন্নত পদমর্যাদা তাকে অহংকারী হতে পরিচালিত করেছিল

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

হিষ্কিয় নিজেকে অবনত করেছিলেন এবং পুনরায় ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করেছিলেন