ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করুন এবং যা ভাল তা কাটুন
ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করুন এবং যা ভাল তা কাটুন
“তাহারা বায়ুরূপ বীজ বপন করে, ঝঞ্ঝারূপ শস্য কাটিবে।”—হোশেয় ৮:৭.
১. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে পারি?
এক বিপদজনক অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যাত্রা করা নিরাপদ হবে, যদি একজন অভিজ্ঞ পথপ্রদর্শক পথ দেখিয়ে নিয়ে যান। একা একা পথ চলার চেয়ে বরং এই ধরনের একজন পথপ্রদর্শকের সঙ্গে গমনাগমন করা বিজ্ঞতার কাজ হবে। কোনো কোনো দিক দিয়ে এটা সেই পরিস্থিতিকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, যেখানে আমরা রয়েছি। রূপকভাবে বলতে গেলে, যিহোবা বর্তমান দুষ্ট জগতের বিশাল মরুভূমির মধ্যে দিয়ে আমাদের পথ দেখানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। আমাদের নিজেদের পাদবিক্ষেপ নিজেরা স্থির করার পরিবর্তে, তাঁর সঙ্গে গমনাগমন করার দ্বারা আমরা বিজ্ঞ হই। কীভাবে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে পারি? সেই নির্দেশনা অনুসরণ করার দ্বারা, যা তিনি তাঁর বাক্যে জুগিয়েছেন।
২. এই প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?
২ পূর্বের প্রবন্ধ, হোশেয় ১ থেকে ৫ অধ্যায়ে পাওয়া রূপক নাটকটি নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা যেমন দেখেছি, ওই নাটকে সেই শিক্ষাগুলো রয়েছে, যেগুলো ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। এখন আসুন আমরা ৬ থেকে ৯ অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করি। এই চারটে অধ্যায়ের সারাংশ দিয়ে আলোচনা শুরু করা সাহায্যকারী হবে।
এক সংক্ষিপ্ত সারাংশ
৩. হোশেয় ৬ থেকে ৯ অধ্যায়ে কী রয়েছে, তা সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।
৩ যিহোবা হোশেয়কে মূলত ইস্রায়েলের দশ বংশের উত্তর রাজ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন। সেই জাতি ঈশ্বরের কাছ থেকে সরে গিয়েছিল, যেটা এর প্রভাবশালী বংশের নাম অনুযায়ী ইফ্রয়িম নামেও পরিচিত। হোশেয় ৬ থেকে ৯ অধ্যায় দেখায় যে, লোকেরা যিহোবার নিয়ম বা চুক্তিকে ভঙ্গ ও দুষ্টতা অনুশীলন করার দ্বারা তাদের আনুগত্যহীনতা প্রকাশ করেছিল। (হোশেয় ৬:৭) তারা যিহোবার কাছে ফিরে আসার পরিবর্তে, জাগতিক মিত্রদের ওপর নির্ভর করেছিল। যেহেতু তারা যা মন্দ তা-ই বুনে চলছিল, তাই তারা মন্দই কাটবে। অন্য কথায়, প্রতিকূল বিচার আসন্ন ছিল। কিন্তু, হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণীতে এক হৃদয়গ্রাহী বার্তাও ছিল। লোকেদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যিহোবার কাছে ফিরে আসতে পারে এবং তাদের প্রতি করুণা দেখানো হবে, যদি তারা আন্তরিক অনুতাপের প্রমাণ দেয়।
৪. হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী থেকে কোন ব্যবহারিক শিক্ষাগুলো আমরা বিবেচনা করব?
৪ হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণীর এই চারটে অধ্যায় থেকে আমরা আরও নির্দেশনা লাভ করতে পারি, যা ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে আমাদের সাহায্য করবে। আসুন আমরা চারটে ব্যবহারিক শিক্ষা বিবেচনা করি: (১) প্রকৃত অনুতাপ শুধু কথায় নয় কিন্তু কাজের দ্বারা প্রদর্শিত হয়; (২) শুধুমাত্র বলিদান ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে না; (৩) যিহোবা কষ্ট পান, যখন তাঁর উপাসকরা তাঁর কাছ থেকে সরে যায়; এবং (৪) ভাল কিছু কাটার জন্য আমাদের অবশ্যই ভাল কিছু বপন করতে হবে।
যেভাবে প্রকৃত অনুতাপ প্রদর্শিত হয়
৫. হোশেয় ৬:১-৩ পদে বলা বিষয়গুলোর অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য বলুন।
৫ হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী অনুতাপ ও করুণা সম্বন্ধে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। হোশেয় ৬:১-৩ পদে আমরা পড়ি: “চল, আমরা সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া যাই, কারণ তিনিই বিদীর্ণ করিয়াছেন, তিনি আমাদিগকে সুস্থও করিবেন; তিনি আঘাত করিয়াছেন, তিনি আমাদের ক্ষত বন্ধনও করিবেন। দুই দিনের পরে তিনি আমাদিগকে সঞ্জীবিত করিবেন, তৃতীয় দিনে উঠাইবেন, তাহাতে আমরা তাঁহার সাক্ষাতে বাঁচিয়া থাকিব। আইস, আমরা সদাপ্রভুকে জ্ঞাত হই, জ্ঞাত হইবার জন্য অনুধাবন করি; অরুণোদয়ের ন্যায় তাঁহার উদয় নিশ্চিত; আর তিনি আমাদের নিকটে বৃষ্টির ন্যায় আসিবেন, ভূমি-সেচনকারী শেষ বর্ষার ন্যায় আসিবেন।”
৬-৮. ইস্রায়েলের অনুতাপের মধ্যে ভুল কী ছিল?
৬ এই পদগুলোতে লিপিবদ্ধ কথাগুলো কে বলেছিলেন? কেউ কেউ মনে করে যে, এই উক্তিগুলো অবাধ্য ইস্রায়েলীয়দের এবং তারা আরও বলে যে, অবাধ্য লোকেরা অনুতপ্ত হওয়ার ভান করছিল ও নিজেদের স্বার্থে ঈশ্বরের করুণার সুযোগ নিচ্ছিল। কিন্তু, অন্যেরা বলে যে, ভাববাদী হোশেয় এই কথাগুলো বলছিলেন, লোকেদেরকে যিহোবার কাছে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করছিলেন। এই উক্তিগুলো যে-ই করুক না কেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হচ্ছে সামগ্রিকভাবে ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের লোকেরা কি অকৃত্রিম অনুতাপ প্রদর্শন করে যিহোবার কাছে ফিরে এসেছিল? উত্তরটা হচ্ছে, না। হোশেয়র মাধ্যমে যিহোবা বলেন: “হে ইফ্রয়িম, তোমার জন্য আমি কি করিব? হে যিহূদা, তোমার জন্য কি করিব? তোমাদের সাধুতা [“প্রেমপূর্ণ-দয়া,” NW] ত প্রাতঃকালের মেঘের ন্যায়, শিশিরের ন্যায়, যাহা প্রত্যূষে উড়িয়া যায়।” (হোশেয় ৬:৪) ঈশ্বরের লোকেদের শোচনীয় আধ্যাত্মিক অবস্থার কী এক প্রামাণিক সাক্ষ্য! প্রেমপূর্ণ-দয়া বা অনুগত প্রেম প্রায় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল—ঠিক সকালের কুয়াশাচ্ছন্ন শিশিরের মতো, যা সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যায়। যদিও লোকেরা আপাতদৃষ্টিতে অনুতাপের ভান করেছিল কিন্তু যিহোবা তাদের করুণা দেখানোর কোনো কারণই খুঁজে পাননি। সমস্যাটা কোথায় ছিল?
৭ ইস্রায়েলের অনুতাপ সত্যিকার অর্থে হৃদয় থেকে ছিল না। হোশেয় ৭:১৪ পদ লোকেদের প্রতি যিহোবার অসন্তোষ সম্বন্ধে এভাবে বলে: “তাহারা অন্তঃকরণের সহিত আমার কাছে ক্রন্দন করে নাই, কিন্তু আপন আপন শয্যাতে হাহাকার করে।” ১৬ পদ আরও বলে: “তাহারা ফিরিয়া আইসে বটে, কিন্তু যিনি ঊর্দ্ধ্বস্থ, তাঁহার প্রতি নয়”—অর্থাৎ, “উপাসনার এক উচ্চীকৃত কাঠামোর প্রতি নয়।” (পাদটীকা, NW) লোকেরা যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করার দ্বারা যিহোবার উচ্চীকৃত উপাসনার প্রতি ফিরে আসতে ইচ্ছুক ছিল না। বস্তুতপক্ষে, তারা আসলে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে চায়নি।
৮ ইস্রায়েলের দেখানো অনুতাপের মধ্যে আরেকটা সমস্যা ছিল। লোকেরা পাপ করে চলছিল—প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন রকমের পাপ, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রতারণা, খুন, চুরি করা, প্রতিমাপূজা এবং অন্যান্য জাতির সঙ্গে মূর্খতাপূর্ণ মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। হোশেয় ৭:৪ পদে লোকেদের ‘তুন্দুরের’ বা রুটিওয়ালার চুলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, এর স্পষ্ট কারণ হচ্ছে মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো তাদের মধ্যে জ্বলছিল। এই ধরনের এক শোচনীয় আধ্যাত্মিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, লোকেরা কি করুণা পাওয়ার যোগ্য ছিল? নিঃসন্দেহে না! হোশেয় বিদ্রোহী লোকেদের বলেন যে, যিহোবা “তাহাদের অপরাধ স্মরণ করিবেন” এবং “তাহাদের পাপ সকলের প্রতিফল দিবেন।” (হোশেয় ৯:৯) না, তাদের জন্য একটুও করুণা নয়!
৯. হোশেয়র কথাগুলো আমাদের অনুতাপ এবং করুণা সম্বন্ধে কী শিক্ষা দেয়?
৯ হোশেয়র কথাগুলো পড়ে আমরা অনুতাপ ও করুণা সম্বন্ধে কী শিখি? বিশ্বাসহীন ইস্রায়েলীয়দের সতর্কবাণীমূলক উদাহরণ আমাদের শিক্ষা দেয় যে, যিহোবার করুণা থেকে উপকার পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই আন্তরিক অনুতাপ দেখাতে হবে। এই ধরনের অনুতাপ কীভাবে প্রদর্শিত হয়? যিহোবা চোখের জল বা নিছক কথার দ্বারা প্রতারিত হন না। অকৃত্রিম অনুতাপ কাজের দ্বারা স্পষ্ট হয়। করুণা লাভ করার জন্য একজন অন্যায়কারীকে অবশ্যই তার পাপের পথ পুরোপুরিভাবে ত্যাগ করতে এবং যিহোবার উচ্চীকৃত উপাসনার উচ্চ মানগুলোর সঙ্গে সংগতি রেখে জীবনযাপন করতে হবে।
শুধুমাত্র বলিদানই যিহোবাকে সন্তুষ্ট করে না
১০, ১১. ইস্রায়েলের ক্ষেত্রে যেমন স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছে, কেন শুধুমাত্র বলিদানই যিহোবাকে সন্তুষ্ট করে না?
১০ এখন আসুন আমরা দ্বিতীয় শিক্ষাটা আলোচনা করি, যা যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। এটা হল: শুধুমাত্র বলিদান ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে না। হোশেয় ৬:৬ পদ বলে: “আমি [সদাপ্রভু] দয়াই চাই, বলিদান নয়; এবং হোম অপেক্ষা ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান [চাই]।” লক্ষ করুন যে, যিহোবা দয়ায় বা প্রেমপূর্ণ-দয়ায় অথবা অনুগত প্রেমে—হৃদয়ের এক গুণে—আর তাঁর সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ায় আনন্দিত হন। কিন্তু আপনি হয়তো ভাবছেন: ‘কেন এই পদটি বলে যে, যিহোবা ‘বলিদানে’ এবং ‘হোমে’ আনন্দ করেন না? মোশির ব্যবস্থায় কি এই বিষয়গুলোই চাওয়া হয়নি?’
১১ ব্যবস্থায় বলিদান ও হোমবলি চাওয়া হয়েছিল কিন্তু হোশেয়র সমসাময়িক ব্যক্তিদের এক গুরুতর সমস্যা ছিল। স্পষ্টতই, এমন ইস্রায়েলীয়রা ছিল, যারা নিছক কর্তব্যের খাতিরে কেবলমাত্র লোক-দেখানো ভক্তি প্রদর্শন করে সেই ধরনের বলিদান করেছিল। একইসঙ্গে তারা পাপও করে চলছিল। তাদের পাপের দ্বারা তারা ইঙ্গিত করেছিল যে, তাদের হৃদয়ে অনুগত প্রেম ছিল না। এ ছাড়া, তারা দেখিয়েছিল যে ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞানকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে কারণ তারা এর সঙ্গে সংগতি রেখে জীবনযাপন করেনি। লোকেদের যদি হৃদয়ের সঠিক অবস্থা না থাকে এবং তারা জীবনযাপনের সঠিক পথ অনুধাবন না করে থাকে, তা হলে তাদের বলিদানের কী-ই বা মূল্য থাকবে? তাদের বলিদানগুলো যিহোবা ঈশ্বরের কাছে অসন্তোষজনক ছিল।
১২. হোশেয় ৬:৬ পদে আজকের দিনের লোকেদের জন্য কোন সতর্কবাণী রয়েছে?
১২ হোশেয়র কথাগুলোতে আজকে গির্জাগামী অনেক ব্যক্তির জন্য এক সতর্কবাণী রয়েছে। তারা ধর্মীয় রীতিনীতিগুলোর দ্বারা ঈশ্বরের কাছে বলি উৎসর্গ করে। কিন্তু, তাদের রোজকার আচরণে তাদের উপাসনা খুব সামান্যই প্রভাব ফেলে। তাদের হৃদয় যদি তাদেরকে তাঁর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান নিতে এবং পাপপূর্ণ কাজগুলো থেকে ফিরে আসার দ্বারা সেই জ্ঞান প্রয়োগ করতে প্রেরণা না দেয়, তা হলে এই লোকেরা কি আসলেই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করছে? কোনো ব্যক্তিই যেন এইরকম মনে না করে যে, কেবলমাত্র ধর্মীয় কাজগুলোই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে। যিহোবা সেই মানুষদের প্রতি একটুও আনন্দিত হন না, যারা প্রকৃতপক্ষে তাঁর বাক্য অনুযায়ী জীবনযাপন করার পরিবর্তে, নিছক আনুষ্ঠানিকতার খাতিরে উপাসনা করে তাঁর অনুগ্রহ লাভ করার চেষ্টা করে থাকে।—২ তীমথিয় ৩:৫.
১৩. আমরা কোন ধরনের বলি উৎসর্গ করে থাকি কিন্তু সেগুলোর মূল্য সম্বন্ধে আমাদের কী মনে রাখা উচিত?
১৩ সত্য খ্রিস্টান হিসেবে, আমরা এই কথা মনে রাখি যে, শুধুমাত্র বলিদান ঈশ্বরকে খুশি করে না। এটা ঠিক যে, আমরা ঈশ্বরের কাছে পশু উৎসর্গ করি না। কিন্তু, আমরা “তাঁহারই দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশে নিয়ত স্তব-বলি, অর্থাৎ তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল, উৎসর্গ করি।” (ইব্রীয় ১৩:১৫) এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যেন হোশেয়র দিনের পাপী ইস্রায়েলীয়দের মতো না হই, এইরকম চিন্তা করে যে, আমরা ঈশ্বরের কাছে বলি উৎসর্গ করার দ্বারা অন্যায়ের ক্ষতিপূরণ করতে পারব। একজন তরুণীর উদাহরণ বিবেচনা করুন, যে গোপনে যৌন অনৈতিকতায় জড়িত হয়েছিল। সে পরে স্বীকার করেছিল: “আমি আমার ক্ষেত্রের পরিচর্যাকে বৃদ্ধি করেছিলাম, এই ভেবে যে, এটা হয়তো যেকোনোভাবে আমার অন্যায়কে ঢেকে দেবে।” এটা ঠিক পথভ্রষ্ট ইস্রায়েলীয়রা যা করার চেষ্টা করেছিল, সেইরকমই ছিল। কিন্তু, আমাদের স্তববলি একমাত্র তখনই যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, যদি তাতে হৃদয়ের সঠিক প্রেরণা এবং ঈশ্বরীয় আচরণ থাকে।
যিহোবার উপাসকরা যখন তাঁকে পরিত্যাগ করে, তখন তিনি কষ্ট পান
১৪. ঈশ্বরের অনুভূতি সম্বন্ধে হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী কী প্রকাশ করে?
১৪ হোশেয় ৬ থেকে ৯ অধ্যায়ে তৃতীয় যে-শিক্ষাটা আমরা পাই তা হল, যিহোবা কেমন বোধ করেন যখন তাঁর উপাসকরা তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। ঈশ্বরের কঠিন ও কোমল, এই উভয় অনুভূতিই রয়েছে। যারা তাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত, তাদের প্রতি তাঁর আনন্দ ও সমবেদনার কোমল অনুভূতি রয়েছে। কিন্তু, তাঁর লোকেরা যখন অনুতপ্ত হয় না, তখন তিনি চরম, চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেন। যেহেতু আমাদের মঙ্গলের জন্য ঈশ্বরের গভীর চিন্তা রয়েছে, তাই তিনি আনন্দিত হন, যখন আমরা তাঁর সঙ্গে বিশ্বস্তভাবে গমনাগমন করি। “সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগেতে প্রীত, তিনি নম্রদিগকে পরিত্রাণে ভূষিত করিবেন,” গীতসংহিতা ১৪৯:৪ পদ বলে। কিন্তু, তাঁর দাসেরা যখন অবিশ্বস্ত হয়, তখন ঈশ্বর কেমন বোধ করেন?
১৫. হোশেয় ৬:৭ পদ অনুসারে কিছু ইস্রায়েলীয় কেমন আচরণ করেছিল?
১৫ অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের বিষয় উল্লেখ করতে গিয়ে যিহোবা বলেন: “ইহারা আদমের ন্যায় নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াছে; ঐ স্থানে আমার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে।” (হোশেয় ৬:৭) যে-ইব্রীয় শব্দকে “বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির অর্থ এও বোঝাতে পারে যে, “প্রতারণাপূর্ণ আচরণ করা, অবিশ্বস্ত (আচরণ করা)।” মালাখি ২:১০-১৬ পদে, যে-ইস্রায়েলীয়রা তাদের বিবাহ সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছিল, তাদের আনুগত্যহীন আচরণ বর্ণনা করার জন্য এই একই ইব্রীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। হোশেয় ৬:৭ পদে এই শব্দটির ব্যবহার সম্বন্ধে একটি তথ্যগ্রন্থ বলে যে, এটি হল “বিবাহ সম্বন্ধে এক রূপক ভাষা, যা সম্পর্কের মধ্যে ব্যক্তিগত গুণাবলিকে তুলে ধরে . . . এই পরিস্থিতি হল এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক, যেখানে ভালবাসাকে অবমাননা করা হয়েছে।”
১৬, ১৭. (ক) ইস্রায়েল জাতি তাদের সঙ্গে ঈশ্বরের চুক্তি সম্বন্ধে কেমন আচরণ করেছিল? (খ) আমাদের কাজগুলো সম্বন্ধে আমাদের কী মনে রাখা উচিত?
১৬ যিহোবা ইস্রায়েলকে তাঁর রূপক স্ত্রী হিসেবে দেখেছিলেন কারণ সেই জাতির সঙ্গে তাঁর চুক্তি ছিল। তাই, তাঁর লোকেরা যখন সেই চুক্তির শর্তগুলো অবমাননা করেছিল, তখন তা এমন ছিল যেন, তারা ব্যভিচার করেছিল। ঈশ্বর ছিলেন একজন বিশ্বস্ত স্বামীর মতো কিন্তু তাঁর লোকেরা তাঁকে পরিত্যাগ করেছিল!
১৭ আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা তাঁর সঙ্গে গমনাগমন করি কি না, সেই সম্বন্ধে ঈশ্বর চিন্তা করেন। এই বিষয়টা আমাদের মনে রাখা উচিত যে, “ঈশ্বর প্রেম” এবং আমাদের কাজগুলো তাঁকে প্রভাবিত করে। (১ যোহন ৪:১৬) আমরা যদি কোনো ভুল পথের অনুধাবন করি, তা হলে আমরা যিহোবাকে দুঃখ দিই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁকে অসন্তুষ্ট করি। এই বিষয়টা মনে রাখা আমাদের জন্য প্রলোভনের কাছে নতি স্বীকার করার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিরোধক হতে পারে।
যেভাবে আমরা যা ভাল তা কাটতে পারি
১৮, ১৯. হোশেয় ৮:৭ পদে আমরা কোন নীতি পাই এবং সেই নীতি ইস্রায়েলীয়দের ক্ষেত্রে কীভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছিল?
১৮ আসুন আমরা এবার হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী থেকে চতুর্থ বিষয়টা বিবেচনা করি—যেভাবে আমরা যা ভাল তা কাটতে পারি। ইস্রায়েলীয়দের সম্বন্ধে এবং তাদের বিশ্বাসহীন পথের মূর্খতা ও অসারতা সম্বন্ধে হোশেয় লেখেন: “তাহারা বায়ুরূপ বীজ বপন করে, ঝঞ্ঝারূপ শস্য কাটিবে।” (হোশেয় ৮:৭) এখানে আমরা একটা নীতি পাই, যা আমাদের মনে রাখা উচিত: এখন আমরা যা করি ও আমাদের প্রতি পরে যা ঘটবে, তার মধ্যে এক সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের ক্ষেত্রে এই নীতিটি কীভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছিল?
১৯ পাপ করে চলার দ্বারা সেই ইস্রায়েলীয়রা যা মন্দ, তা-ই বপন করছিল। মন্দ পরিণতিগুলো ভোগ না করেই কি তারা তা করে চলতে পারত? নিশ্চিতভাবেই তারা চরম প্রতিকূল বিচার এড়াতে পারত না। হোশেয় ৮:১৩ পদ বলে: “এখন তিনি [সদাপ্রভু] তাহাদের অপরাধ স্মরণ করিয়া তাহাদের পাপের প্রতিফল দিবেন।” আর হোশেয় ৯:১৭ পদে আমরা পড়ি: “আমার ঈশ্বর তাহাদিগকে অগ্রাহ্য করিবেন, কেননা তাহারা তাঁহার বাক্য মানে নাই; আর তাহারা জাতিগণের মধ্যে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিবে।” যিহোবা ইস্রায়েলীদের তাদের পাপের জন্য প্রতিফল দেবেন বা তাদের কাছে নিকাশ নেবেন। যেহেতু তারা মন্দ বিষয় বপন করেছিল, তাই তারা মন্দ বিষয়ই কাটবে। তাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বিচার এসেছিল সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে, যখন অশূরীয়রা ইস্রায়েলের দশ বংশের উত্তর রাজ্যকে ধ্বংস করেছিল এবং এর অধিবাসীদের বন্দিত্বে নিয়ে গিয়েছিল।
২০. ইস্রায়েলীয়দের অভিজ্ঞতা আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
২০ সেই ইস্রায়েলীয়দের অভিজ্ঞতা আমাদের এক মৌলিক সত্য শিক্ষা দেয়: আমরা যা বুনব, তা-ই কাটব। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের সাবধান করে: “তোমরা ভ্রান্ত হইও না, ঈশ্বরকে পরিহাস করা যায় না; কেননা মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে।” (গালাতীয় ৬:৭) আমরা যদি যা মন্দ, তা-ই বুনি, তা হলে আমরা মন্দই কাটব। উদাহরণস্বরূপ, যারা এক অনৈতিক জীবনধারা অনুধাবন করে, তারা তিক্ত পরিণতিগুলো কাটবে। একজন অনুতাপহীন অন্যায়কারী এক দুঃখজনক পরিণতি ভোগ করবেই।
২১. কীভাবে আমরা যা ভাল, তা কাটতে পারি?
২১ তা হলে, কীভাবে আমরা যা ভাল তা কাটতে পারি? একটা সাধারণ দৃষ্টান্তের দ্বারা সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যেতে পারে। একজন কৃষক যদি গম চাষ করতে চান, তা হলে তিনি কি ধান বপন করবেন? নিশ্চয়ই না! তিনি যা কাটতে চান, তাকে তা-ই বপন করতে হবে। একইভাবে যা ভাল, আমরা যদি তা-ই কাটতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই যা ভাল তা-ই বপন করতে হবে। আপনি কি ক্রমাগত যা ভাল তা কাটতে চান, অর্থাৎ ঈশ্বরের নতুন জগতে অনন্তজীবনের প্রত্যাশাসহ বর্তমানে এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন চান? যদি চান, তা হলে আপনাকে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন এবং তাঁর ধার্মিক মানগুলোর সঙ্গে সংগতি রেখে জীবনযাপন করার দ্বারা যা ভাল, তা বপন করে যেতে হবে।
২২. হোশেয় ৬ থেকে ৯ অধ্যায়ের মধ্যে আমরা কোন শিক্ষাগুলো পেয়েছি?
২২ হোশেয় ৬ থেকে ৯ অধ্যায় পর্যন্ত আমরা চারটে শিক্ষা পেয়েছি, যেগুলো আমাদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে সাহায্য করবে: (১) প্রকৃত অনুতাপ কাজের দ্বারা প্রদর্শিত হয়; (২) শুধুমাত্র বলিদান ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে না; (৩) যিহোবা কষ্ট পান, যখন তাঁর উপাসকরা তাঁর কাছ থেকে সরে যায়; এবং (৪) ভাল কিছু কাটার জন্য আমাদের অবশ্যই ভাল কিছু বপন করতে হবে। বাইবেলের এই পুস্তকের শেষ পাঁচটা অধ্যায় কীভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• অকৃত্রিম অনুতাপ কীভাবে প্রদর্শিত হয়?
• কেন শুধুমাত্র বলিদান আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে সন্তুষ্ট করে না?
• ঈশ্বরের উপাসকরা যখন তাঁকে পরিত্যাগ করে, তখন ঈশ্বর কেমন বোধ করেন?
• ভাল কিছু কাটার জন্য আমাদের কী বপন করতে হবে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাতঃকালের মেঘের মতো ইস্রায়েলের অনুগত প্রেম অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইস্রায়েলের মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো তুন্দুরের মতো জ্বলছিল
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
কেন যিহোবা তাঁর লোকেদের বলিদান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন?
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
ভাল কিছু কাটার জন্য আমাদের অবশ্যই ভাল কিছু বপন করতে হবে