“যিহোবার পথ সকল ন্যায়নিষ্ঠ”
“যিহোবার পথ সকল ন্যায়নিষ্ঠ”
“সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] পথ সকল সরল [“ন্যায়নিষ্ঠ,” NW], এবং ধার্ম্মিকগণ সেই সকল পথে চলে।”—হোশেয় ১৪:৯.
১, ২. যিহোবার দ্বারা ইস্রায়েলীয়দের কেমন সূচনা হয়েছিল কিন্তু তাদের প্রতি কী ঘটেছিল?
ভাববাদী মোশির দিনে যিহোবার দ্বারা ইস্রায়েলীয়দের এক ন্যায়নিষ্ঠ সূচনা হয়েছিল। কিন্তু, সা.কা.পূ. অষ্টম শতাব্দীর প্রথম দিকে তাদের পরিস্থিতি এতটাই মন্দ হয়ে গিয়েছিল যে, ঈশ্বর তাদেরকে জঘন্য অন্যায়ের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। হোশেয় ১০ থেকে ১৪ অধ্যায়ের মধ্যে এটা স্পষ্ট হয়।
২ ইস্রায়েলের হৃদয় কপট হয়ে গিয়েছিল। দশ বংশের রাজ্যের লোকেরা ‘দুষ্টতারূপ চাষ করিয়াছিল’ এবং অধার্মিকতারূপ শস্য কেটেছিল। (হোশেয় ১০:১, ১৩) “ইস্রায়েলের বাল্যকালে আমি তাহাকে ভালবাসিতাম,” যিহোবা বলেছিলেন, “এবং মিসর হইতে আপন পুত্ত্রকে ডাকিয়া আনিলাম।” (হোশেয় ১১:১) যদিও ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের মিশরীয়দের বন্দিত্ব থেকে উদ্ধার করেছিলেন কিন্তু এর প্রতিদানে তারা মিথ্যা বলেছিল ও প্রতারণা করেছিল। (হোশেয় ১২:১) সেইজন্য যিহোবা তাদেরকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি আপন ঈশ্বরের কাছে ফিরিয়া আইস; দয়া ও ন্যায়বিচার রক্ষা কর।”—হোশেয় ১২:৬.
৩. বিদ্রোহী শমরিয়ার প্রতি কী ঘটেছিল কিন্তু কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা করুণা পেতে পারত?
৩ বিদ্রোহী শমরিয়া ও এর রাজার এক ধ্বংসাত্মক পরিণতি হবে। (হোশেয় ১৩:১১, ১৬) কিন্তু, হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণীর শেষ অধ্যায়টি এই অনুরোধ দিয়ে শুরু হয়: “হে ইস্রায়েল, তুমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আইস।” ইস্রায়েলীয়রা যদি অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে ফলস্বরূপ ঈশ্বরও করুণা করবেন। অবশ্য, তাদের স্বীকার করতে হবে যে, “যিহোবার পথ সকল ন্যায়নিষ্ঠ” আর সেই পথে তাদের গমনাগমন করতে হবে।—হোশেয় ১৪:১-৬, ৯.
৪. হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা কোন নীতিগুলো বিবেচনা করব?
৪ হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণীর এই বিভাগে অনেক নীতি রয়েছে, যেগুলো আমাদের ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে সাহায্য করতে পারে। আমরা এই বিষয়গুলো বিবেচনা করব: (১) যিহোবা অকপট উপাসনা চান, (২) ঈশ্বর তাঁর লোকেদের প্রতি অনুগত প্রেম দেখান, (৩) আমাদের সবসময় যিহোবার ওপর প্রত্যাশা রাখতে হবে, (৪) যিহোবার পথ সকল সর্বদা ন্যায়নিষ্ঠ এবং (৫) পাপীরা যিহোবার কাছে ফিরে আসতে পারে।
যিহোবা অকপট উপাসনা চান
৫. যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কোন ধরনের সেবা চান?
৫ যিহোবা চান আমরা যেন তাঁকে এক শুদ্ধ, অকপট উপায়ে পবিত্র সেবা দিই। কিন্তু, ইস্রায়েল ফলহীন ‘দীর্ঘপল্লবা দ্রাক্ষালতা’ হয়ে উঠেছিল। ইস্রায়েলের অধিবাসীরা মিথ্যা উপাসনায় ব্যবহার করার জন্য “অধিক যজ্ঞবেদি” নির্মাণ করেছিল। এই ধর্মভ্রষ্টরা এমনকি স্তম্ভ—সম্ভবত অশুদ্ধ উপাসনায় ব্যবহার করার জন্য স্মৃতিস্তম্ভ—নির্মাণ করেছিল। যিহোবা এই যজ্ঞবেদিগুলো ভাঙতে এবং এই ধরনের স্তম্ভগুলো ধ্বংস করতে যাচ্ছিলেন।—হোশেয় ১০:১, ২.
৬. ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে হলে, আমাদের কোন বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত হতে হবে?
৬ যিহোবার দাসদের মধ্যে কপটতার কোনো স্থান নেই। কিন্তু, ইস্রায়েলীয়দের ক্ষেত্রে কী হয়েছিল? ‘তাহাদের অন্তঃকরণ কপট হইয়াছিল’! যদিও তারা একবার যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত লোক হিসেবে তাঁর সঙ্গে এক চুক্তিতে প্রবেশ করেছিল কিন্তু তিনি তাদেরকে কপটতার জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। এটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা যদি ঈশ্বরের কাছে নিজেদের উৎসর্গীকৃত করে থাকি, তা হলে অবশ্যই আমরা কপট হব না। হিতোপদেশ ৩:৩২ পদ সাবধান করে: “খল সদাপ্রভুর ঘৃণার পাত্র; কিন্তু সরলগণের [“ন্যায়নিষ্ঠবানের,” NW] সহিত তাঁহার গূঢ় মন্ত্রণা।” ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে হলে আমাদের অবশ্যই “শুচি হৃদয়, সৎসংবেদ ও অকল্পিত” বা নিষ্কপট “বিশ্বাস হইতে উৎপন্ন” ভালবাসা প্রদর্শন করতে হবে।—১ তীমথিয় ১:৫.
ঈশ্বর তাঁর লোকেদের অনুগত প্রেম দেখান
৭, ৮. (ক) কোন পরিস্থিতিগুলোতে আমরা ঈশ্বরের অনুগত প্রেম উপভোগ করতে পারি? (খ) আমরা যদি গুরুতর পাপ করে থাকি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?
৭ আমরা যদি যিহোবাকে কপটতাহীন এবং ন্যায়নিষ্ঠ উপায়ে উপাসনা করি, তা হলে আমরা তাঁর দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়া অথবা অনুগত প্রেম লাভ করব। বিপথগামী ইস্রায়েলীয়দের বলা হয়েছিল: “তোমরা আপনাদের জন্য ধার্ম্মিকতার বীজ বপন কর, দয়ানুযায়ী শস্য কাট, আপনাদের জন্য পতিত ভূমি তোল; কেননা সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিবার সময় আছে, যে পর্য্যন্ত তিনি আসিয়া তোমাদের উপরে ধার্ম্মিকতা না বর্ষান।”—হোশেয় ১০:১২.
৮ ইস্রায়েলীয়রা যদি অনুতাপের সঙ্গে যিহোবার অন্বেষণ করত, তা হলে পরিস্থিতি কত ভালই না হতো! তখন তিনি আনন্দের সঙ্গে ‘তাহাদের ওপর ধার্ম্মিকতা বর্ষাইতেন।’ আমরা যদি ব্যক্তিগতভাবে গুরুতর পাপ করে থাকি, তা হলে আসুন আমরা যিহোবার অন্বেষণ করি, তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনা করি এবং খ্রিস্টান প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করি। (যাকোব ৫:১৩-১৬) এ ছাড়া, আমরা যেন ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার পরিচালনা পাওয়ার চেষ্টা করি, কারণ “আপন মাংসের উদ্দেশে যে বুনে, সে মাংস হইতে ক্ষয়রূপ শস্য পাইবে; কিন্তু আত্মার উদ্দেশে যে বুনে, সে আত্মা হইতে অনন্ত জীবনরূপ শস্য পাইবে।” (গালাতীয় ৬:৮) আমরা যদি ‘আত্মার উদ্দেশে বুনি,’ তা হলে আমরা ক্রমাগত ঈশ্বরের অনুগত প্রেম উপভোগ করে চলব।
৯, ১০. হোশেয় ১১:১-৪ পদ কীভাবে ইস্রায়েলের প্রতি প্রযোজ্য?
৯ আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের সঙ্গে সবসময় প্রেমপূর্ণ উপায়ে আচরণ করেন। হোশেয় ১১:১-৪ পদে এর প্রমাণ পাওয়া যায়, যেখানে আমরা পড়ি: “ইস্রায়েলের বাল্যকালে আমি তাহাকে ভালবাসিতাম, এবং মিসর হইতে আপন পুত্ত্রকে ডাকিয়া আনিলাম। তাহারা . . . বাল দেবগণের উদ্দেশে যজ্ঞ করিল, এবং প্রতিমাগণের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইল। আমিই ত ইফ্রয়িমকে [ইস্রায়েলীয়দের] হাঁটিতে শিখাইয়াছিলাম, আমি তাহাদিগকে কোলে করিতাম; কিন্তু আমি যে তাহাদিগকে সুস্থ করিলাম, ইহা তাহারা বুঝিল না। আমি মনুষ্যের বন্ধনী দ্বারা তাহাদিগকে আকর্ষণ করিতাম, প্রেমরজ্জু দ্বারাই করিতাম, আর আমি তাহাদের পক্ষে সেই লোকদের ন্যায় ছিলাম, যাহারা হনূ হইতে যোঁয়ালি উঠাইয়া লয়, এবং আমি তাহাদিগকে ভক্ষ্য দিতাম।”
১০ এখানে ইস্রায়েলকে এক ছোট্ট বাচ্চার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যিহোবা প্রেমপূর্ণ উপায়ে ইস্রায়েলীয়দের হাঁটতে শিখিয়েছিলেন এবং তিনি তাদেরকে কোলে নিতেন। আর তিনি ‘প্রেমরজ্জু দ্বারা’ তাদেরকে আকর্ষণ করে চলেছিলেন। কী এক মর্মস্পর্শী চিত্র! কল্পনা করুন যে, আপনি একজন বাবা অথবা মা আর আপনার বাচ্চাকে প্রথম হাঁটতে সাহায্য করছেন। আপনার হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়েছেন। আপনার ছোট্ট বাচ্চা যাতে পড়ে না যায়, তাই তাকে ধরে রাখার জন্য আপনি হয়তো রজ্জু বা রশি ব্যবহার করছেন। একইভাবে, আপনার প্রতি যিহোবার ভালবাসা ঠিক এইরকম কোমল। তিনি “প্রেমরজ্জু” দ্বারা আপনাকে পথ দেখিয়ে আনন্দ পান।
১১. কীভাবে ঈশ্বর ‘সেই লোকের ন্যায় হইয়াছিলেন, যিনি যোঁয়ালি উঠাইয়া লন’?
১১ ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে যিহোবা ‘তাহাদের পক্ষে সেই লোকেদের ন্যায় ছিলেন, যাহারা হনূ হইতে যোঁয়ালি উঠাইয়া লয়, এবং [তিনি] তাহাদিগকে ভক্ষ্য দিতেন।’ ঈশ্বর এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে কাজ করেছিলেন, যিনি একটা জোয়ালকে উঠিয়ে নেন বা এতটা পিছনে সরিয়ে দেন, যাতে একটা পশু স্বাচ্ছন্দ্যে খেতে পারে। ইস্রায়েলের লোকেরা যখন ঈশ্বরের প্রতি তাদের বশ্যতার জোয়াল ভেঙে ফেলত, একমাত্র তখনই তারা তাদের শত্রুদের পীড়নকর জোয়ালের অধীনে আসত। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৪৫, ৪৮; যিরমিয় ২৮:১৪) আমরা যেন কখনো আমাদের প্রধান শত্রু শয়তানের বশীভূত না হই এবং তার পীড়নকর জোয়ালের কষ্টগুলো ভোগ না করি। এর পরিবর্তে, আসুন আমরা ক্রমাগত আমাদের প্রেমময় ঈশ্বরের সঙ্গে অনুগতভাবে গমনাগমন করি।
সবসময় যিহোবার ওপর প্রত্যাশা রাখুন
১২. হোশেয় ১২:৬ পদ অনুসারে, ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে চলার জন্য আমাদের কীসের প্রয়োজন?
১২ ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে চলতে হলে, আমাদের অবশ্যই সবসময় তাঁর ওপর প্রত্যাশা রাখতে হবে। ইস্রায়েলীয়দের বলা হয়েছিল: “তুমি আপন ঈশ্বরের কাছে ফিরিয়া আইস; দয়া ও ন্যায়বিচার রক্ষা কর; নিত্য আপন ঈশ্বরের অপেক্ষায় থাক।” (হোশেয় ১২:৬) ইস্রায়েলের অধিবাসীরা দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়া প্রকাশ করে, ন্যায়বিচার অনুশীলন করে এবং ‘নিত্য ঈশ্বরের অপেক্ষায় থাকিয়া’ বা সবসময় ঈশ্বরের ওপর প্রত্যাশা রাখার দ্বারা অনুতপ্ত হয়ে যিহোবার কাছে ফিরে আসার প্রমাণ দিতে পারত। আমরা যতদিন ধরেই ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে থাকি না কেন, আমাদের সবসময় প্রেমপূর্ণ-দয়া প্রদর্শন করতে, ন্যায়বিচারের সঙ্গে কাজ করতে এবং ঈশ্বরের ওপর প্রত্যাশা রাখতে হবে।—গীতসংহিতা ২৭:১৪.
১৩, ১৪. পৌল যেভাবে হোশেয় ১৩:১৪ পদ প্রয়োগ করেছিলেন, সেটা আমাদের যিহোবার ওপর প্রত্যাশা রাখার কোন কারণ জোগায়?
১৩ ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী ঈশ্বরের ওপর প্রত্যাশা রাখার এক বিশেষ কারণ জোগায়। “পাতালের হস্ত হইতে আমি তাহাদিগকে উদ্ধার করিব,” যিহোবা বলেছিলেন। “মৃত্যু হইতে আমি তাহাদিগকে মুক্ত করিব। হে মৃত্যু, তোমার মহামারী সকল কোথায়? হে পাতাল, তোমার সংহার কোথায়?” (হোশেয় ১৩:১৪) যিহোবা সেই সময় ইস্রায়েলীয়দের শারীরিক মৃত্যু থেকে মুক্তি দিতে যাচ্ছিলেন না কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যুকে চিরকালের জন্য শেষ করবেন এবং এর বিজয়কে অকার্যকর করে দেবেন।
১৪ অভিষিক্ত সহখ্রিস্টানদের উদ্দেশে পৌল হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন এবং লিখেছিলেন: “এই ক্ষয়ণীয় যখন অক্ষয়তা পরিহিত হইবে, এবং এই মর্ত্ত্য যখন অমরতা পরিহিত হইবে, তখন এই যে কথা লিখিত আছে, তাহা সফল হইবে, ‘মৃত্যু জয়ে কবলিত হইল’। ‘মৃত্যু তোমার জয় কোথায়? মৃত্যু তোমার হুল কোথায়?’ মৃত্যুর হুল পাপ, ও পাপের বল ব্যবস্থা। কিন্তু ঈশ্বরের ধন্যবাদ হউক, তিনি আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমাদিগকে জয় প্রদান করেন।” (১ করিন্থীয় ১৫:৫৪-৫৭) যিহোবা যিশুকে মৃত্যু থেকে উত্থিত করেছিলেন আর অত্যন্ত সান্ত্বনাদায়ক এই নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের স্মৃতিতে থাকা লোকেরা পুনরুত্থিত হবে। (যোহন ৫:২৮, ২৯) যিহোবার ওপর প্রত্যাশা রাখার কী এক আনন্দিত কারণ! কিন্তু পুনরুত্থানের আশা ছাড়াও, প্রত্যাশা আমাদের ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে প্রেরণা দেয়।
যিহোবার পথ সকল সর্বদা ন্যায়নিষ্ঠ
১৫, ১৬. শমরিয়া সম্বন্ধে কী ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল এবং কীভাবে সেই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল?
১৫ “যিহোবার পথ সকল ন্যায়নিষ্ঠ,” এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয় আমাদের ক্রমাগত ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে সাহায্য করে। শমরিয়ার অধিবাসীরা ঈশ্বরের ধার্মিক পথে গমনাগমন করেনি। শেষ পর্যন্ত, তাদের পাপ ও যিহোবার ওপর বিশ্বাসের অভাবের কারণে তাদেরকে এক বিরাট মূল্য দিতে হয়েছিল। ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল: “শমরিয়া দণ্ড পাইবে, কারণ সে আপন ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারিণী হইয়াছে, তাহারা খড়্গে পতিত হইবে, তাহাদের শিশুগণকে আছাড়িয়া খণ্ড খণ্ড করা যাইবে, তাহাদের গর্ব্ভবতী স্ত্রীলোকদের উদর বিদীর্ণ করা যাইবে।” (হোশেয় ১৩:১৬) ঐতিহাসিক বিবরণগুলো দেখায় যে, যে-অশূরীয়রা শমরিয়াকে জয় করেছিল, তারা বাস্তবে এই ধরনের ভয়ংকর নৃশংসতা ঘটিয়েছিল।
১৬ শমরিয়া ছিল ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের রাজধানী। কিন্তু, এখানে শমরিয়া নামটা সেই রাজ্যের পুরো এলাকার প্রতি প্রযোজ্য হতে পারে। (১ রাজাবলি ২১:১) অশূর-রাজ শল্মনেষর পঞ্চম, সা.কা.পূ. ৭৪২ সালে শমরিয়া শহর অবরোধ করেছিলেন। সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে অবশেষে যখন শমরিয়া পতিত হয়েছিল, তখন এর অনেক উচ্চপদস্থ অধিবাসীকে মিসপতামিয়ায় ও মাদীয় দেশে নির্বাসিত করা হয়েছিল। শমরিয়াকে শল্মনেষর পঞ্চম, নাকি তার উত্তরসূরি সর্গোন দ্বিতীয় অধিকার করেছিলেন, তা অজানা রয়ে গিয়েছে। (২ রাজাবলি ১৭:১-৬, ২২, ২৩; ১৮:৯-১২) তবে, সর্গোনের বিবরণগুলো ২৭,২৯০ জন ইস্রায়েলীয়কে, ইউফ্রেটিস উপকূল হতে দূরবর্তী অঞ্চল ও মাদীয় দেশে নির্বাসিত করার বিষয়ে উল্লেখ করে।
১৭. ঈশ্বরের মানগুলোকে অবজ্ঞার চোখে দেখার পরিবর্তে আমাদের কী করা উচিত?
১৭ শমরিয়ার অধিবাসীরা যিহোবার ন্যায়নিষ্ঠ পথে গমনাগমন করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে চরম মূল্য দিয়েছিল। উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান হিসেবে আমরাও দুঃখজনক পরিণতিগুলো ভোগ করব, যদি আমরা ঈশ্বরের ধার্মিক মানগুলোকে অবজ্ঞার চোখে দেখে পাপ করে চলি। আমরা যেন কখনো এই ধরনের দুষ্টতার পথ অনুধাবন না করি! এর পরিবর্তে, আসুন আমরা প্রত্যেকে প্রেরিত পিতরের এই পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি: “তোমাদের মধ্যে কেহ যেন নরঘাতক কি চোর কি দুষ্কর্ম্মকারী কি পরাধিকারচর্চ্চক বলিয়া দুঃখভোগ না করে। কিন্তু যদি কেহ খ্রীষ্টীয়ান বলিয়া দুঃখভোগ করে, তবে সে লজ্জিত না হউক; কিন্তু এই নামে ঈশ্বরের গৌরব করুক।”—১ পিতর ৪:১৫, ১৬.
১৮. কীভাবে আমরা ‘ঈশ্বরের গৌরব করিয়া চলিতে’ পারি?
১৮ আমরা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার পরিবর্তে, তাঁর ন্যায়নিষ্ঠ পথে গমনাগমন করার দ্বারা ‘ঈশ্বরের গৌরব করিয়া চলি।’ কয়িন নরহত্যা করেছিল কারণ সে নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করেছিল এবং যিহোবার সেই সাবধানবাণীতে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছিল যে শীঘ্রই পাপ তাকে গ্রাস করবে। (আদিপুস্তক ৪:১-৮) বিলিয়ম মোয়াবের রাজার কাছ থেকে বেতন নিয়ে ইস্রায়েলকে অভিশাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। (গণনাপুস্তক ২৪:১০) আর মোশি ও হারোণের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারণে ঈশ্বর লেবীয় কোরহ ও অন্যদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। (গণনাপুস্তক ১৬:১-৩, ৩১-৩৩) নিশ্চিতভাবেই, আমরা “কয়িনের” হত্যাজনক “পথে” এবং “বিলিয়মের ভ্রান্তি-পথে” যেতে চাই না অথবা “কোরহের প্রতিবাদে” বিনষ্ট হতে চাই না। (যিহূদা ১১) কিন্তু, আমরা যদি পাপ করে থাকি, তা হলে হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের সান্ত্বনা দেয়।
পাপীরা যিহোবার কাছে ফিরে আসতে পারে
১৯, ২০. অনুতপ্ত ইস্রায়েলীরা কোন বলি উৎসর্গ করতে সমর্থ ছিল?
১৯ এমনকি যারা গুরুতর পাপ করার দ্বারা উছোট খেয়েছে, তারাও যিহোবার কাছে ফিরে আসতে পারে। হোশেয় ১৪:১, ২ পদে আমরা এই অনুরোধ দেখতে পাই: “হে ইস্রায়েল, তুমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আইস; কেননা তুমি নিজ অপরাধে উছোট খাইয়াছ। তোমরা বাক্য সঙ্গে লইয়া সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আইস; তাঁহাকে বল, সমুদয় অপরাধ হরণ কর; যাহা উত্তম, তাহা গ্রহণ কর; তাহাতে আমরা আপন আপন ওষ্ঠাধর বৃষরূপে দিয়া বলিদান করিব।”
২০ অনুতপ্ত ইস্রায়েলীয়রা ‘তাহাদের ওষ্ঠাধর বৃষরূপে’ উৎসর্গ করতে সমর্থ ছিল। আর তা ছিল অকৃত্রিম প্রশংসার বলি। পৌল পরোক্ষভাবে এই ভবিষ্যদ্বাণীর বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি ইব্রীয় খ্রিস্টানদের “ঈশ্বরের উদ্দেশে নিয়ত স্তব-বলি, অর্থাৎ তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল, উৎসর্গ” করতে জোরালোভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১৩:১৫) আজকে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করা এবং এই ধরনের বলি উৎসর্গ করতে পারা কী এক বিশেষ সুযোগ!
২১, ২২. অনুতপ্ত ইস্রায়েলীয়রা কোন পুনর্স্থাপন উপভোগ করবে?
২১ যে-ইস্রায়েলীয়রা তাদের স্বেচ্ছাচারী পথ পরিত্যাগ করেছিল এবং ঈশ্বরের কাছে ফিরে এসেছিল, তারা ‘তাহাদের ওষ্ঠাধর বৃষরূপে’ উৎসর্গ করেছিল। ফলে, তারা আধ্যাত্মিক পুনর্স্থাপন উপভোগ করেছিল, ঠিক যেমন ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। হোশেয় ১৪:৪-৭ পদ বলে: “আমি [সদাপ্রভু] তাহাদের বিপথগমনের প্রতীকার করিব, আমি স্বেচ্ছায় তাহাদিগকে প্রেম করিব; কেননা আমার ক্রোধ তাহা হইতে ফিরিয়া গিয়াছে। আমি ইস্রায়েলের পক্ষে শিশিরের ন্যায় হইব; সে শোশন পুষ্পের ন্যায় ফুটিবে, আর লিবানোনের ন্যায় মূল বাঁধিবে। তাহার পল্লব সকল বিস্তারিত হইবে, জিত বৃক্ষের ন্যায় তাহার শোভা এবং লিবানোনের ন্যায় তাহার সৌরভ হইবে। যাহারা তাহার ছায়াতলে বাস করে, তাহারা ফিরিয়া আসিবে, শস্যবৎ সঞ্জীবিত হইবে, দ্রাক্ষালতার ন্যায় ফুটিবে, লিবানোনীয় দ্রাক্ষারসের ন্যায় তাহার সুখ্যাতি হইবে।”
২২ অনুতপ্ত ইস্রায়েলীয়রা আধ্যাত্মিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে এবং আবার ঈশ্বরের প্রেম উপভোগ করবে। যিহোবা তাদের জন্য সতেজতাদায়ক শিশির হয়ে উঠবেন, এই অর্থে যে, তিনি তাদের প্রচুররূপে আশীর্বাদ করবেন। তাঁর পুনর্স্থাপিত লোকেরা “জিত বৃক্ষের ন্যায়” শোভা পাবে এবং তারা ঈশ্বরের পথে গমনাগমন করবে। যেহেতু আমরা যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে সংকল্পবদ্ধ, তাই আমাদের কাছ থেকে কী চাওয়া হয়?
যিহোবার ন্যায়নিষ্ঠ পথে গমনাগমন করে চলুন
২৩, ২৪. হোশেয়র বই কোন উৎসাহমূলক ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে শেষ হয় এবং তা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে?
২৩ আমরা যদি ক্রমাগত ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে চলতে চাই, তা হলে আমাদের “যে জ্ঞান” বা প্রজ্ঞা “উপর হইতে আইসে” তা অনুশীলন করতে হবে এবং সর্বদা তাঁর ন্যায়নিষ্ঠ পথের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হবে। (যাকোব ৩:১৭, ১৮) হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণীর শেষ পদে লেখা আছে: “জ্ঞানবান্ কে? সে এই সকল বুঝিবে; বুদ্ধিমান্ কে? সে এই সকল জ্ঞাত হইবে; কেননা যিহোবার পথ সকল ন্যায়নিষ্ঠ, এবং ধার্ম্মিকগণ সেই সকল পথে চলে, কিন্তু অধর্ম্মাচারিগণ সেই সব পথে উছোট খায়।”—হোশেয় ১৪:৯.
২৪ এই জগতের প্রজ্ঞা ও মানগুলোর দ্বারা নির্দেশিত হওয়ার পরিবর্তে, আসুন আমরা ঈশ্বরের ন্যায়নিষ্ঠ পথে চলার জন্য সংকল্পবদ্ধ হই। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪, NW) হোশেয় ৫৯ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে তা করেছিলেন। তিনি বিশ্বস্তভাবে ঐশিক বার্তা জানিয়েছিলেন, এই বিষয়টা জেনে যে, যারা জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমান তারা এই কথাগুলো বুঝবে। আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? যতদিন পর্যন্ত যিহোবা আমাদেরকে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ দেন, ততদিন আমরা তাদেরকে খুঁজে চলব যারা বিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর অযাচিত দয়া গ্রহণ করবে। আর ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করে আমরা অতিশয় আনন্দিত।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.
২৫. হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে বিবেচনা, আমাদের কী করতে পরিচালিত করা উচিত?
২৫ হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে বিবেচনা, আমাদের তাঁর নতুন জগতে অনন্তজীবনের আশা নিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে চলতে সাহায্য করা উচিত। (২ পিতর ৩:১৩; যিহূদা ২০, ২১) কী এক চমৎকার প্রত্যাশা! সেই প্রত্যাশা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হবে, যদি আমরা কথা ও কাজের দ্বারা প্রমাণ করি যে, আমরা এই কথার অর্থ সত্যিই বুঝি, যখন আমরা বলি: “যিহোবার পথ সকল ন্যায়নিষ্ঠ।”
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• আমরা যদি ঈশ্বরকে শুদ্ধ উপাসনা দিই, তা হলে তিনি আমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন?
• কেন আমাদের সবসময় যিহোবার ওপর প্রত্যাশা রাখা উচিত?
• কেন আপনি দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, যিহোবার পথ সকল ন্যায়নিষ্ঠ?
• কীভাবে আমরা ক্রমাগত যিহোবার ন্যায়নিষ্ঠ পথে গমনাগমন করতে পারি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রিস্টান প্রাচীনদের কাছ থেকে আধ্যাত্মিক সাহায্য গ্রহণ করুন
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী আমাদেরকে যিহোবার পুনরুত্থানের প্রতিজ্ঞায় প্রত্যাশা রাখার কারণ জোগায়
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
অনন্তজীবনের প্রতি দৃষ্টি রেখে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে চলুন