সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে আমাদের সাহায্য করে

হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে আমাদের সাহায্য করে

হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করতে আমাদের সাহায্য করে

“তাহারা সদাপ্রভুর অনুগমন করিবে।”—হোশেয় ১১:১০.

১. হোশেয়র বইয়ে কোন রূপক নাটক রয়েছে?

 আপনি কি এমন নাটকগুলো উপভোগ করেন, যেগুলোতে আকর্ষণীয় চরিত্র এবং গুপ্ত চক্রান্ত রয়েছে? বাইবেলের হোশেয় বইয়ে এক রূপক নাটক রয়েছে। * সেই নাটক ঈশ্বরের ভাববাদী হোশেয়র পরিবারের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করে এবং তা সেই রূপক বিবাহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যেটাতে যিহোবা মোশির ব্যবস্থা চুক্তির মাধ্যমে প্রাচীন ইস্রায়েলের সঙ্গে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

২. হোশেয় সম্বন্ধে কী জানা যায়?

এই নাটকের পটভূমি হোশেয় ১ অধ্যায়ে পাওয়া যায়। স্পষ্টতই হোশেয়, ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের (যেটাকে এর প্রভাবশালী বংশের জন্য ইফ্রয়িমও বলা হতো) অঞ্চলে বাস করতেন। তিনি ইস্রায়েলের শেষ সাত জন শাসক এবং যিহূদার রাজা উষিয়, যোথম, আহস ও হিষ্কিয়ের রাজত্বের সময়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (হোশেয় ১:১) তাই, হোশেয় কমপক্ষে ৫৯ বছর ধরে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। যদিও তার নামের পুস্তকটি সা.কা.পূ. ৭৪৫ সালের অল্প কিছু সময় পরেই লেখা শেষ হয়েছিল কিন্তু এটি আজকের দিনেও প্রযোজ্য, যখন লক্ষ লক্ষ লোক এমন এক পথ অনুধাবন করছে, যা এই কথাগুলোর দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পথের মতো: “তাহারা সদাপ্রভুর অনুগমন করিবে।”—হোশেয় ১১:১০.

এক সংক্ষিপ্ত সারাংশ যা প্রকাশ করে

৩, ৪. হোশেয় ১ থেকে ৫ অধ্যায়ের মধ্যে যে-বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।

হোশেয় ১ থেকে ৫ অধ্যায়ের এক সংক্ষিপ্ত সারাংশ, বিশ্বাস দেখিয়ে চলার এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক পথ অনুধাবন করার মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে গমনাগমন করার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করবে। যদিও ইস্রায়েল রাজ্যের অধিবাসীরা আধ্যাত্মিক ব্যভিচারের দোষে দোষী হয়েছে কিন্তু তারা যদি অনুতপ্ত হয়, তা হলে ঈশ্বর তাদের প্রতি করুণাময় হবেন। এটা হোশেয় তার স্ত্রী গোমরের প্রতি যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেটার দ্বারা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তার জন্য একটা সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে স্পষ্টতই গোমরের দুটো অবৈধ সন্তান হয়েছিল। কিন্তু, হোশেয় তাকে পুনরায় গ্রহণ করেছিলেন, ঠিক যেমন যিহোবা অনুতপ্ত ইস্রায়েলীয়দের করুণা দেখাতে ইচ্ছুক ছিলেন।—হোশেয় ১:১–৩:৫.

ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যিহোবার এক বিবাদ বা অভিযোগ ছিল কারণ সেই দেশে কোনো সত্য, দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়া অথবা ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান কিছুই ছিল না। তিনি প্রতিমাপূজক ইস্রায়েল এবং বিপথগামী যিহূদা রাজ্য, উভয়ের কাছ থেকেই নিকাশ নেবেন। কিন্তু, ঈশ্বরের লোকেরা যখন “সঙ্কটের সময়ে” ছিল, তখন তারা যিহোবার অন্বেষণ করেছিল।—হোশেয় ৪:১–৫:১৫.

নাটক উন্মোচিত হয়

৫, ৬. (ক) ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যে ব্যভিচার কতটা ছড়িয়ে পড়েছিল? (খ) প্রাচীন ইস্রায়েলকে দেওয়া সতর্কবাণী কেন আমাদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ?

“তুমি যাও,” ঈশ্বর হোশেয়কে আদেশ দেন, “ব্যভিচারের স্ত্রীকে ও ব্যভিচারের সন্তানদিগকে গ্রহণ কর, কেননা এই দেশ সদাপ্রভুর অনুগমন হইতে নিবৃত্ত হওয়ায় ভয়ানক ব্যভিচার করিতেছে।” (হোশেয় ১:২) ইস্রায়েলে ব্যভিচার কতটা ছড়িয়ে পড়েছিল? আমাদেরকে বলা হয়েছে: “ব্যভিচারের আত্মা [দশ বংশের রাজ্যের লোকেদের] ভ্রান্ত করিয়াছে, আর তাহারা আপন ঈশ্বরের অধীনতা ছাড়িয়া ব্যভিচার করিতেছে। . . . তোমাদের কন্যাগণ বেশ্যা হয়, ও তোমাদের পুত্ত্রবধূগণ ব্যভিচার করে। . . . লোকে আপনারাও বেশ্যাদের সহিত গুপ্ত স্থানে যায়, ও গণিকাদের সহিত যজ্ঞ করে।”—হোশেয় ৪:১২-১৪.

প্রাচীন ইস্রায়েলে দৈহিক এবং আধ্যাত্মিক উভয় অর্থে ব্যভিচার অবাধে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাই, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে “ফল ভোগ” করাবেন বা নিকাশ নেবেন। (হোশেয় ১:৪; ৪:৯) আজকে আমাদের জন্য এই সতর্কবাণীর তাৎপর্য রয়েছে কারণ বর্তমানে যারা অনৈতিক কাজকর্ম করে চলেছে এবং কলুষিত উপাসনায় রত রয়েছে, তাদের কাছ থেকে যিহোবা নিকাশ নেবেন। কিন্তু, যারা ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে, তারা বিশুদ্ধ উপাসনার জন্য দেওয়া তাঁর মানগুলো মেনে চলে এবং জানে যে, “বেশ্যাগামী . . . কেহই খ্রীষ্টের ও ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পায় না।”—ইফিষীয় ৫:৫; যাকোব ১:২৭.

৭. হোশেয়র সঙ্গে গোমরের বিয়ের দ্বারা কী চিত্রিত হয়েছিল?

হোশেয় যখন গোমরকে বিয়ে করেছিলেন, তখন স্পষ্টতই তিনি একজন কুমারীই ছিলেন এবং যখন তিনি ‘তাঁহার জন্য পুত্ত্র প্রসব করিয়াছিলেন,’ তখন একজন বিশ্বস্ত স্ত্রী ছিলেন। (হোশেয় ১:৩) রূপক নাটকে যেমন তুলে ধরা হয়েছে, সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে ইস্রায়েলীয়দের মিশরীয় বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করার অল্প কিছুকাল পর ঈশ্বর অনুরূপভাবে তাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছিলেন, যা এক শুদ্ধ বিবাহের চুক্তির মতো ছিল। চুক্তির সঙ্গে একমত হয়ে ইস্রায়েল তার “পতি” বা স্বামীতুল্য কর্তা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল। (যিশাইয় ৫৪:৫) হ্যাঁ, ঈশ্বরের সঙ্গে ইস্রায়েলের এই রূপক বিয়ে, হোশেয়র সঙ্গে গোমরের শুদ্ধ বিয়ের দ্বারা চিত্রিত হয়েছিল। কিন্তু, সেই পরিস্থিতি কীভাবেই না পালটে গিয়েছিল!

৮. কীভাবে ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের উৎপত্তি হয়েছিল এবং এর উপাসনা সম্বন্ধে আপনি কী বলতে পারেন?

হোশেয়র স্ত্রী “পুনর্ব্বার গর্ব্ভধারণ করিয়া কন্যা প্রসব করিল।” সেই মেয়ে এবং পরবর্তী সন্তান সম্ভবত গোমর ব্যভিচারের কারণে গর্ভধারণ করেছিল। (হোশেয় ১:৬, ৮) যেহেতু গোমর ইস্রায়েলকে প্রতিনিধিত্ব করেছিল, তাই আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, ‘ইস্রায়েল কীভাবে নিজেকে বেশ্যায় পরিণত করেছিল?’ সা.কা.পূ. ৯৯৭ সালে, ইস্রায়েলের দশ বংশ দক্ষিণের যিহূদা এবং বিন্যামীনের বংশ থেকে পৃথক হয়েছিল। লোকেদের যাতে যিরূশালেমে যিহোবার মন্দিরে উপাসনা করার জন্য যিহূদায় যেতে না হয়, সেজন্য ইস্রায়েলের দশ বংশের উত্তর রাজ্যে বাছুর উপাসনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মিথ্যা দেবতা বালের উপাসনা ও সেইসঙ্গে এর যৌনতাপূর্ণ উচ্ছৃঙ্খলতা ইস্রায়েলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছিল।

৯. হোশেয় ১:৬ পদে যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, ইস্রায়েলের প্রতি কী ঘটেছিল?

গোমরের সম্ভবত অবৈধ দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের সময় ঈশ্বর হোশেয়কে বলেছিলেন: “তুমি তাহার নাম লো-রুহামা [অনুকম্পিতা নয়] রাখ, কেননা আমি ইস্রায়েল-কুলের প্রতি আর অনুকম্পা করিব না, কোন ক্রমে তাহাদের পাপ ক্ষমা করিব না।” (হোশেয় ১:৬) যিহোবা তাদের ‘পাপ ক্ষমা করেননি,’ যখন অশূরীয়রা সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে ইস্রায়েলকে বন্দিত্বে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, যিহোবা যিহূদার দুই বংশের রাজ্যের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন এবং সেটাকে রক্ষা করেছিলেন তবে ধনু, খড়্গ, যুদ্ধ, অশ্ব অথবা অশ্বারোহী দ্বারা নয়। (হোশেয় ১:৭) সা.কা.পূ. ৭৩২ সালে এক রাতে শুধুমাত্র একজন স্বর্গদূত, যিহূদার রাজধানী যিরূশালেমকে আক্রমণ করতে আসা ১,৮৫,০০০ অশূরীয় সৈন্যকে হত্যা করেছিলেন।—২ রাজাবলি ১৯:৩৫.

ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যিহোবার অভিযোগ

১০. গোমরের ব্যভিচারী আচরণ কোন বিষয়টা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিল?

১০ গোমর হোশেয়কে পরিত্যাগ করেছিল এবং ‘ব্যভিচারের স্ত্রী’ হয়ে উঠেছিল, অবিশ্বস্তভাবে আরেকজন ব্যক্তির সঙ্গে বাস করেছিল। এটা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিল যে, কীভাবে ইস্রায়েল রাজ্য প্রতিমাপূজক জাতিগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল এবং তাদের ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছিল। বস্তুগত উন্নতির জন্য যিহোবাকে কৃতিত্ব দেওয়ার পরিবর্তে, ইস্রায়েল এই জাতিগুলোর দেবতাদের কৃতিত্ব দিয়েছিল এবং মিথ্যা উপাসনায় জড়িত হয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে তার বিবাহের চুক্তিকে লঙ্ঘন করেছিল। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আধ্যাত্মিকভাবে ব্যভিচারকৃত জাতির বিরুদ্ধে যিহোবার অভিযোগ ছিল!—হোশেয় ১:২; ২:২, ১২, ১৩.

১১. যিহোবা যখন ইস্রায়েল এবং যিহূদাকে বন্দিত্ব যেতে অনুমোদন করেছিলেন, তখন ব্যবস্থা চুক্তির কী হয়েছিল?

১১ ইস্রায়েল তার স্বামীতুল্য কর্তাকে পরিত্যাগ করার ফলে কোন দণ্ড ভোগ করেছিল? ঈশ্বর তাকে বাবিলের ‘প্রান্তরে আনিয়াছিলেন,’ যে-জাতি অশূরিয়া রাজ্যকে জয় করেছিল, যেখানে সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে ইস্রায়েলীয়রা নির্বাসিত হয়েছিল। (হোশেয় ২:১৪) এভাবে যিহোবা যখন ১০ বংশের রাজ্যের শেষ নিয়ে এসেছিলেন, তখন তিনি ইস্রায়েলের মূল ১২ বংশের জাতির সঙ্গে তাঁর বিবাহ চুক্তিকে বাতিল করেননি। বস্তুতপক্ষে, সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে ঈশ্বর যখন যিরূশালেমকে বাবিলীয়দের দ্বারা ধ্বংস হতে দিয়েছিলেন এবং যিহূদার লোকেদের বন্দি হওয়াকে অনুমোদন করেছিলেন, তখন তিনি মোশির ব্যবস্থা চুক্তিকে লোপ করেননি, যেটার মাধ্যমে ১২ বংশের ইস্রায়েল তার সঙ্গে এক রূপক বিবাহে আবদ্ধ হয়েছিল। যিহুদি নেতারা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করার এবং সা.কা. ৩৩ সালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরই সেই সম্পর্ক লোপ পেয়েছিল।—কলসীয় ২:১৪.

যিহোবা ইস্রায়েলকে উপদেশ দেন

১২, ১৩. হোশেয় ২:৬-৮ পদের মূল বিষয়বস্তু কী এবং কীভাবে সেই কথাগুলো ইস্রায়েলের প্রতি প্রযোজ্য ছিল?

১২ ঈশ্বর ইস্রায়েলকে ‘আপন বেশ্যাচার দূর’ করতে উপদেশ দিয়েছিলেন কিন্তু সে প্রেমিকগণের পিছনে পিছনে যেতে চেয়েছিল। (হোশেয় ২:২, ৫) “এই জন্য,” যিহোবা বলেছিলেন “দেখ, আমি কন্টক দ্বারা তাহার পথ রোধ করিব, ও তাহার চারিদিকে প্রাচীর গাঁথিব, তাহাতে সে আপন পথের সন্ধান পাইবে না। সে আপন প্রেমিকদের পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িয়া যাইবে, কিন্তু তাহাদের লাগাল পাইবে না; সে তাহাদের অন্বেষণ করিবে, কিন্তু সন্ধান পাইবে না। তখন সে বলিবে, আমি ফিরিয়া আমার প্রথম স্বামীর নিকটে যাইব; কেননা এখন অপেক্ষা তখন আমার পক্ষে মঙ্গল ছিল। সে ত বুঝিত না যে, আমিই তাহাকে সেই শস্য, দ্রাক্ষারস ও তৈল দিতাম, এবং তাহার রৌপ্য ও স্বর্ণের বৃদ্ধি করিতাম,—যাহা তাহারা বালদেবের জন্য ব্যবহার করিয়াছে।”—হোশেয় ২:৬-৮.

১৩ যদিও ইস্রায়েল সেই জাতিগুলোর সাহায্য অন্বেষণ করেছিল, যারা তার “প্রেমিক” ছিল কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই তাকে সাহায্য করতে সমর্থ ছিল না। সে যেন এক গহিন ঝোপঝাড়ের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল, যার ফলে তারা তাকে কোনোরকম সাহায্য করতে পারেনি। অশূরিয়াকে আক্রমণ করার তিন বছর পরে, এর রাজধানী শমরিয়া সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে পতিত হয় এবং দশ বংশের রাজ্য আর কখনো পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বন্দি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে কেবল কয়েক জন ব্যক্তি বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের পূর্বপুরুষরা যখন যিহোবার সেবা করেছিল, তখন পরিস্থিতি কতই না ভাল ছিল। সেই অবশিষ্টাংশরা বাল উপাসনাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং যিহোবার সঙ্গে পুনর্নবীকৃত চুক্তির সম্পর্ক লাভ করার চেষ্টা করেছিল।

নাটকটি আরেকবার পরীক্ষা করা

১৪. কেন হোশেয় গোমরের সঙ্গে তার বৈবাহিক সম্পর্ককে পুনর্স্থাপন করেছিলেন?

১৪ হোশেয়র পারিবারিক ব্যাপার এবং যিহোবার সঙ্গে ইস্রায়েলের সম্পর্কের মধ্যে সংযোগ পুরোপুরি বোঝার জন্য এই কথাগুলো বিবেচনা করুন: “পরে সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি পুনশ্চ যাইয়া কান্তের প্রিয়া অথচ ব্যভিচারিণী এক স্ত্রীকে প্রেম কর।” (হোশেয় ৩:১) গোমর যে-ব্যক্তির সঙ্গে থাকত, তার কাছ থেকে গোমরকে পুনরায় ক্রয় করে হোশেয় এই আদেশ অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। এর পরে হোশেয় তার স্ত্রীকে দৃঢ়ভাবে উপদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি অনেক দিন পর্য্যন্ত আমার নিমিত্ত বসিয়া থাকিবে, ব্যভিচার করিবে না, ও কোন পুরুষের স্ত্রী হইবে না।” (হোশেয় ৩:২, ৩) গোমর শাসনের প্রতি সাড়া দিয়েছিল এবং হোশেয় তার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করেছিলেন। ইস্রায়েল এবং যিহূদার লোকেদের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণের ক্ষেত্রে এটা কীভাবে প্রযোজ্য হয়েছিল?

১৫, ১৬. (ক) কোন পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের শাসনপ্রাপ্ত জাতি করুণা লাভ করতে পেরেছিল? (খ) হোশেয় ২:১৮ পদ কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে?

১৫ ইস্রায়েল এবং যিহূদা থেকে আসা নির্বাসিত ব্যক্তিরা যখন বাবিলে বন্দি ছিল, তখন ঈশ্বর তাঁর ভাববাদীকে ‘তাহাদের চিত্ততোষক কথা কহিবার’ জন্য ব্যবহার করেছিলেন। ঐশিক করুণা পাওয়ার জন্য তাঁর লোকেদের অনুতাপ প্রদর্শন করতে এবং তাদের স্বামীতুল্য কর্তার কাছে ফিরে যেতে হতো, ঠিক যেমন গোমর তার স্বামীর কাছে ফিরে গিয়েছিলেন। এরপর যিহোবা বাবিলীয় ‘প্রান্তর’ থেকে তার শাসনপ্রাপ্ত স্ত্রীতুল্য জাতিকে গ্রহণ করেছিলেন এবং তাকে পুনরায় যিহূদা ও যিরূশালেমে নিয়ে এসেছিলেন। (হোশেয় ২:১৪, ১৫) তিনি সেই প্রতিজ্ঞা সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে পরিপূর্ণ করেছিলেন।

১৬ ঈশ্বর এই প্রতিজ্ঞাও পরিপূর্ণ করেছিলেন: “সেই দিন আমি লোকদের নিমিত্ত মাঠের পশু, আকাশের পক্ষী ও ভূমির সরীসৃপ সকলের সহিত নিয়ম করিব; এবং ধনুক, খড়্গ ও রণসজ্জা ভঙ্গিয়া দেশের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন করিব, ও তাহাদিগকে নিশ্চিন্তে শয়ন করাইব।” (হোশেয় ২:১৮) যে-যিহুদি অবশিষ্টাংশরা তাদের জন্মভূমিতে ফিরে গিয়েছিল তারা নিরাপদে বাস করেছিল, পশুদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ তাদের ছিল না। এই ভবিষ্যদ্বাণী সা.কা. ১৯১৯ সালেও পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন আত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশরা মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য “মহতী বাবিল” থেকে মুক্ত হয়েছিল। তারা এখন নিরাপদে বাস করছে এবং তাদের সেই সহযোগীদের সঙ্গে আধ্যাত্মিক পরমদেশে জীবন উপভোগ করছে, যারা চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রাখে। এই সত্য খ্রিস্টানদের মধ্যে পশুসুলভ কোনো বৈশিষ্ট্য নেই।—প্রকাশিত বাক্য ১৪:৮; যিশাইয় ১১:৬-৯; গালাতীয় ৬:১৬.

শিক্ষাগুলোতে মনোযোগ দিন

১৭-১৯. (ক) এখানে ঈশ্বরের কোন গুণাবলি আমাদের অনুকরণ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে? (খ) যিহোবার করুণা এবং সমবেদনার দ্বারা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত?

১৭ ঈশ্বর হলেন করুণাময় ও সমবেদনাময় আর আমাদেরও সেইরকম হওয়া উচিত। এটা হল একটা শিক্ষা, যা হোশেয়র প্রথম কয়েকটা অধ্যায় থেকে শেখা যায়। (হোশেয় ১:৬, ৭; ২:২৩) অনুতপ্ত ইস্রায়েলীয়দের প্রতি ঈশ্বরের অনুকম্পা বা করুণা দেখানোর ইচ্ছা অনুপ্রাণিত এই প্রবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: “যে আপন অধর্ম্ম সকল ঢাকে, সে কৃতকার্য্য হইবে না; কিন্তু যে তাহা স্বীকার করিয়া ত্যাগ করে, সে করুণা পাইবে।” (হিতোপদেশ ২৮:১৩) এ ছাড়া, অনুতপ্ত অন্যায়কারীরা গীতরচকের কথাগুলো থেকেও সান্ত্বনা পেতে পারে: “ঈশ্বরের গ্রাহ্যবলি ভগ্ন আত্মা; হে ঈশ্বর, তুমি ভগ্ন ও চূর্ণ অন্তঃকরণ তুচ্ছ করিবে না।”—গীতসংহিতা ৫১:১৭.

১৮ হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী আমরা যে-ঈশ্বরের উপাসনা করি, তাঁর সমবেদনা এবং করুণাকে তুলে ধরে। এমনকি কেউ কেউ যদি তাঁর ধার্মিক পথ থেকে বিপথেও চলে যায়, তারা অনুতপ্ত হতে এবং ফিরে আসতে পারে। তারা যদি তা করে, তা হলে যিহোবা তাদের স্বাগত জানান। তিনি ইস্রায়েল জাতির অনুতপ্ত সদস্যদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন, যাদের সঙ্গে তিনি এক রূপক বিবাহে আবদ্ধ হয়েছিলেন। যদিও তারা যিহোবার অবাধ্য হয়েছিল এবং ‘ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে অসন্তুষ্ট করিয়াছিল, কিন্তু তিনি স্নেহময় [“করুণাময়,” NW] এবং স্মরণ করিলেন যে, তাহারা মাংসমাত্র।’ (গীতসংহিতা ৭৮:৩৮-৪১) এই ধরনের করুণার দ্বারা আমাদের সমবেদনাময় ঈশ্বর যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করতে পরিচালিত হওয়া উচিত।

১৯ যদিও হত্যা, চুরি এবং ব্যভিচার করার মতো পাপগুলো ইস্রায়েলে অবাধে বৃদ্ধি পেয়েছিল কিন্তু যিহোবা ‘তাহাকে চিত্ততোষক কথা কহিয়াছিলেন।’ (হোশেয় ২:১৪; ৪:২) আমরা যখন তাঁর করুণা এবং সমবেদনা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন এটার দ্বারা আমাদের নিজেদের হৃদয়কে উদ্দীপিত এবং যিহোবার প্রতি ব্যক্তিগত আসক্তিকে শক্তিশালী করার জন্য পরিচালিত হওয়া উচিত। তাই, আসুন আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করি: ‘অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করার সময় কীভাবে আমি যিহোবার করুণা এবং সমবেদনাকে আরও ভালভাবে অনুকরণ করতে পারি? যে-সহখ্রিস্টান আমাকে দুঃখ দিয়েছে, তিনি যদি ক্ষমা চান, তা হলে আমি কি ঈশ্বরের মতো ক্ষমাবান বা ক্ষমা করতে তৈরি আছি?’—গীতসংহিতা ৮৬:৫.

২০. ঈশ্বরদত্ত আশার ওপর আমাদের যে আস্থা রাখা উচিত, সেই বিষয়ে একটা উদাহরণ দিন।

২০ ঈশ্বর আমাদের প্রকৃত আশা দেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি . . . আশাদ্বার বলিয়া আখোর তলভূমি তাহাকে দিব।” (হোশেয় ২:১৫) যিহোবার প্রাচীন স্ত্রীতুল্য সংগঠনের নিজ জন্মভূমিতে পুনর্স্থাপিত হওয়ার নিশ্চিত আশা ছিল, যেখানে “আখোর তলভূমি” অবস্থিত ছিল। সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে সেই প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা, যিহোবা আমাদের সামনে যা রেখেছেন সেই নিশ্চিত আশায় আনন্দ করার উপযুক্ত কারণ জোগায়।

২১. ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করার ক্ষেত্রে জ্ঞান কোন ভূমিকা পালন করে থাকে?

২১ ক্রমাগত ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করার জন্য আমাদের তাঁর সম্বন্ধে জ্ঞান নিয়ে যেতে এবং তা আমাদের জীবনে কাজে লাগিয়ে যেতে হবে। ইস্রায়েলের মধ্যে যিহোবা বিষয়ক জ্ঞানের প্রচণ্ড অভাব ছিল। (হোশেয় ৪:১, ৬) কিন্তু, কেউ কেউ ঐশিক শিক্ষাকে অনেক উচ্চমূল্য দিয়েছিল, এর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছিল এবং প্রচুররূপে আশীর্বাদ পেয়েছিল। হোশেয় ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। এলিয়ের দিনে ৭০০০ জন ব্যক্তিও ছিল, যারা বালের সামনে জানু পাতেনি। (১ রাজাবলি ১৯:১৮; রোমীয় ১১:১-৪) ঐশিক শিক্ষার প্রতি আমাদের ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা আমাদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে চলতে সাহায্য করবে।—গীতসংহিতা ১১৯:৬৬; যিশাইয় ৩০:২০, ২১.

২২. ধর্মভ্রষ্টতাকে কীভাবে দেখা উচিত?

২২ যিহোবা চান যে তাঁর লোকেদের মধ্যে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিরা যেন ধর্মভ্রষ্টতাকে প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু, হোশেয় ৫:১ পদ বলে: “হে যাজকগণ, এই কথা শুন; হে ইস্রায়েল-কুল, অবধান কর; হে রাজকুল, কর্ণপাত কর, কারণ তোমাদেরই বিচার হইতেছে; কেননা তোমরা মিস্পাতে ফাঁদস্বরূপ ও তাবোরে বিস্তৃত জালস্বরূপ হইয়াছ।” ধর্মভ্রষ্ট নেতারা ইস্রায়েলীয়দের জন্য ফাঁদ এবং জালস্বরূপ ছিল, তাদেরকে প্রতিমাপূজা করতে প্রলোভিত করেছিল। তাবোর পর্বত এবং মিস্পা নামক স্থান সম্ভবত এই ধরনের মিথ্যা উপাসনার কেন্দ্রস্থল ছিল।

২৩. হোশেয় ১ থেকে ৫ অধ্যায় অধ্যয়ন করে আপনি কীভাবে উপকৃত হয়েছেন?

২৩ এই পর্যন্ত আলোচনায়, হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের দেখিয়েছে যে, যিহোবা হলেন একজন করুণাময় ঈশ্বর, যিনি সেই ব্যক্তিদের আশা প্রদান করেন এবং আশীর্বাদ করেন, যারা তাঁর নির্দেশনা কাজে লাগায় এবং ধর্মভ্রষ্টতাকে প্রত্যাখ্যান করে। অতীতের অনুতপ্ত ইস্রায়েলীয়দের মতো, আসুন আমরা যিহোবাকে অন্বেষণ করি এবং সবসময় তাঁকে খুশি করার প্রচেষ্টা করি। (হোশেয় ৫:১৫) তা করার মাধ্যমে আমরা যা ভাল তা কাটব এবং যারা বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে, তাদের মতো অতুলনীয় আনন্দ এবং শান্তি আমাদের থাকবে।—গীতসংহিতা ১০০:২; ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.

[পাদটীকা]

^ গালাতীয় ৪:২১-২৬ পদে এক রূপক নাটক তুলে ধরা হয়েছে। এই সম্বন্ধে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) বইয়ের খণ্ড ২ এর ৬৯৩-৪ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• হোশেয়র সঙ্গে গোমরের বিবাহ কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে?

• কেন ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যিহোবার অভিযোগ ছিল?

হোশেয় ১ থেকে ৫ অধ্যায়ের কোন শিক্ষাটা আপনাকে প্রভাবিত করেছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি জানেন হোশেয়র স্ত্রী কাকে প্রতিনিধিত্ব করে?

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

সাধারণ কাল পূর্ব ৭৪০ সালে শমরিয়ার অধিবাসীদের অশূরীয়রা জয় করেছিল

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আনন্দিত লোকেরা নিজ জন্মভূমিতে ফিরে এসেছিল