সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমার সৃষ্টিকর্তাকে ক্রমাগত সেবা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ

আমার সৃষ্টিকর্তাকে ক্রমাগত সেবা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ

জীবন কাহিনী

আমার সৃষ্টিকর্তাকে ক্রমাগত সেবা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ

বলেছেন কনস্ত্যানস্‌ বেনান্‌তি

সবকিছুই খুব তাড়াতাড়ি ঘটেছিল! মাত্র ছয় দিনের মধ্যে, আমাদের ২২ মাস বয়সি মেয়ে কামিলের প্রচণ্ড জ্বর হয় এবং সে মারা যায়। আমার কষ্ট অসহনীয় ছিল। এমনকি আমি মরতেও চেয়েছিলাম। কেন ঈশ্বর এটা ঘটতে দিয়েছিলেন? আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

 আমার বাবামা ছিল ইতালির সিসিলির কাসতেল্লামারে দেল গলফো শহর থেকে আসা অভিবাসী। তারা নিউ ইয়র্কে চলে এসেছিল, যেখানে ১৯০৮ সালের ৮ই ডিসেম্বর আমার জন্ম হয়। আমাদের পরিবারে ছিল বাবা, মা এবং তাদের আট সন্তান আর এদের মধ্যে পাঁচ জন ছেলে ও তিন জন মেয়ে। *

১৯২৭ সালে আমার বাবা সানতো কাতান্দজারো বাইবেল ছাত্রদের একটা ছোট দলের সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করেছিলেন, যিহোবার সাক্ষিদের তখন এই নামেই ডাকা হতো। সেই সময়ে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে প্রধান কার্যালয়ে (যেটাকে বেথেল বলা হয়) সেবারত, জোভান্নি ড্যাচিকা নামে ইতালির একজন ভাই, আমরা যেখানে থাকতাম সেই নিউ জার্সির কাছেই সভাগুলো পরিচালনা করতেন। এক সময়, বাবা প্রচার করতে শুরু করেছিলেন এবং পূর্ণসময়ের পরিচর্যা গ্রহণ করেছিলেন আর ১৯৫৩ সালে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি সেই কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন।

মা যখন যুবতী ছিলেন, তখন তিনি একজন নান হতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার বাবামা তাকে অনুমতি দেয়নি। প্রথম প্রথম আমি বাবার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়নে যোগ না দেওয়ার জন্য মায়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলাম। তবে, শীঘ্রই আমি বাবার মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ করেছিলাম। তিনি আগের চেয়ে আরও বেশি শান্ত এবং নম্র হয়েছিলেন আর পরিবারে আরও বেশি শান্তি ছিল। আমি তা পছন্দ করতাম।

ইতিমধ্যে, চার্লস নামে আমার সমবয়সি একজন ব্যক্তির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল, যিনি ব্রুকলিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আমার মতো তার পরিবারও সিসিলি থেকে এসেছিল। শীঘ্রই আমাদের বাগ্‌দান হয়েছিল এবং ১৯৩১ সালে ওহাইওর কলম্বাসে অনুষ্ঠিত যিহোবার সাক্ষিদের সম্মেলন থেকে বাবা ফিরে আসার পর, আমরা বিয়ে করি। এক বছরের মধ্যে আমাদের মেয়ে কামিলের জন্ম হয়। যখন সে মারা গিয়েছিল, তখন আমার মন একেবারে ভেঙে গিয়েছিল। একদিন চার্লস কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলেছিল: “কামিল যতটা তোমার, ঠিক ততটাই আমারও মেয়ে। আমরা কি একে অপরকে সান্ত্বনা দিয়ে আমাদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি না?”

আমরা বাইবেলের সত্য গ্রহণ করি

চার্লস আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, কামিলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বাবা যখন বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তখন তিনি পুনরুত্থানের প্রত্যাশা সম্বন্ধে বলেছিলেন। “তুমি কি সত্যিই পুনরুত্থানে বিশ্বাস করো?” আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম।

“আমি বিশ্বাস করি!” সে উত্তর দিয়েছিল। “এই বিষয়ে বাইবেল আরও কী বলে, তা আমরা জানছি না কেন?”

সেই রাতে আমি ঘুমোতে পারিনি। আমি ভোর ছটায় বাবা কাজে যাওয়ার আগেই তার কাছে গিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম যে, আমি ও চার্লস বাইবেল অধ্যয়ন করতে চাই। তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন এবং আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। মা তখনও বিছানায় ছিলেন আর আমাদের কথা বলতে শুনেছিলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কী হয়েছে। “তেমন কিছু না,” আমি বলেছিলাম। “চার্লস আর আমি বাইবেল অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তার উত্তর ছিল, “আমাদের সকলেরই বাইবেল অধ্যয়ন করতে হবে।” তাই, আমার ছোট ভাইবোনসহ আমরা সবাই—মোট ১১ জন—পরিবারগতভাবে একসঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলাম।

বাইবেল অধ্যয়ন আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছিল আর প্রত্যাশা ধীরে ধীরে আমার মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও শোক দূর করে দিয়েছিল। এক বছর পর, ১৯৩৫ সালে আমি এবং চার্লস অন্যদের কাছে বাইবেলের সত্য জানাতে শুরু করেছিলাম। ১৯৩৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রুকলিনের প্রধান কার্যালয়ে একটা বক্তৃতা যা জলে বাপ্তিস্ম নেওয়ার শাস্ত্রীয় তাৎপর্য সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিল, তা শোনার পর আমরা কাছেই একটা হোটেলে অন্য আরও অনেকের সঙ্গে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম। আমি শুধুমাত্র আমার মেয়েকে আবার কোনো একদিন দেখার আশাতেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের সেই সৃষ্টিকর্তাকে সেবা করার আকাঙ্ক্ষার কারণেও এই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, যাঁকে আমি জেনেছিলাম এবং ভালবেসেছিলাম।

পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করা

আমি যা শিখেছিলাম সেগুলো অন্যদের কাছে বলা রোমাঞ্চকর এবং পুরস্কারদায়ক ছিল, বিশেষভাবে সেই সময়ে কারণ অনেক লোক রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া দিয়েছিল এবং তা ঘোষণা করায় অংশ নিয়েছিল। (মথি ৯:৩৭) ১৯৪১ সালে চার্লস এবং আমি অগ্রগামী হয়েছিলাম, যিহোবার সাক্ষিরা তাদের পূর্ণসময়ের পরিচারকদের এভাবেই ডেকে থাকে। এর কিছুদিন পরেই আমরা একটা ট্রেইলার বা ভ্রাম্যমাণ বাড়ি কিনেছিলাম এবং চার্লস আমাদের পারিবারিক প্যান্ট ফ্যাক্টরির দায়িত্ব, আমার ছোট ভাই ফ্র্যাঙ্কের হাতে তুলে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে, আমরা একটা চিঠি পেয়ে রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম যেটাতে জানানো হয়েছিল যে, আমাদেরকে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। আমরা প্রথমে নিউ জার্সিতে সেবা করেছিলাম এবং পরে আমাদেরকে নিউ ইয়র্কে পাঠানো হয়েছিল।

১৯৪৬ সালে মেরিল্যান্ডের বল্টিমোরে একটা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সময়ে আমাদেরকে যিহোবার সাক্ষিদের বিশেষ প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটা সভায় দেখা করতে বলা হয়েছিল। আমরা সেখানে নেথেন এইচ. নর এবং মিলটন জি. হেনশেলের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তারা আমাদের সঙ্গে মিশনারি কাজ, বিশেষভাবে ইতালিতে প্রচার কাজ সম্বন্ধে কথা বলেছিল। তারা আমাদের ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অভ্‌ গিলিয়েড-এ যোগ দেওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে চিন্তা করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।

“এই বিষয়ে চিন্তা করুন,” তারা আমাদের বলেছিল, “এবং তারপর আমাদেরকে আপনাদের উত্তর জানান।” অফিস থেকে বের হওয়ার পর, চার্লস এবং আমি একে অন্যের দিকে তাকিয়েছিলাম এবং তখনি ঘুরে ভিতরে গিয়েছিলাম। “আমরা এই বিষয়ে চিন্তা করেছি,” আমরা বলেছিলাম। “আমরা গিলিয়েড এর জন্য তৈরি।” দশ দিন পর আমরা সপ্তম গিলিয়েড ক্লাসে যোগ দিয়েছিলাম।

আমাদের প্রশিক্ষণের মাসগুলো অবিস্মরণীয় ছিল। বিশেষভাবে যে-বিষয়টা আমাদের মনে ছাপ ফেলেছিল, তা হল প্রশিক্ষকদের সেই ধৈর্য এবং প্রেম, যা বিদেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে আমাদের প্রস্তুত করছিল। ১৯৪৬ সালের জুলাই মাসে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর, আমাদের কিছু সময়ের জন্য নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রচার করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল, যেখানে ইতালি থেকে আসা অনেক লোক থাকত। তারপর সেই রোমাঞ্চকর দিন এসেছিল! ১৯৪৭ সালের ২৫শে জুন আমরা আমাদের মিশনারি কার্যভারের জন্য ইতালির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম।

আমাদের কার্যভারে স্থায়ী হওয়া

আমরা একটা জাহাজে করে সমুদ্র পাড়ি দিয়েছিলাম, যেটা আগে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতো। আমাদের জাহাজ ১৪ দিন সমুদ্রে কাটানোর পর ইতালির জেনোয়া বন্দরে ভিড়েছিল। শহরটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত বহন করছিল, যা কেবলমাত্র দুবছর আগে শেষ হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, বোমা হামলার কারণে রেল স্টেশনে জানালার কোনো কাচ ছিল না। আমরা জেনোয়া থেকে মালগাড়িতে করে মিলানে গিয়েছিলাম, যেখানে শাখা অফিস এবং একটা মিশনারি হোম অবস্থিত ছিল।

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইতালিতে জীবনযাপনের মান অত্যন্ত নিম্ন ছিল। পুনর্নিমাণের প্রচেষ্টা চলছিল কিন্তু সর্বত্রই দরিদ্রতা বিরাজ করছিল। শীঘ্রই আমার গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল। একজন ডাক্তারের কথানুসারে, আমার হার্টের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তিনি মনে করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়াই আমার জন্য সবচেয়ে ভাল হবে। আমি আনন্দিত যে তার রোগনির্ণয় একেবারে ভুল ছিল। ৫৮ বছর পর, এখনও পর্যন্ত আমি ইতালিতে আমার কার্যভার পালন করছি।

সেখানে কাজ করার মাত্র কয়েক বছর পরেই, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আমার নিজের ভাইয়েরা আমাদের একটা গাড়ি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু, চার্লস সদয়ভাবে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল আর আমিও সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলাম। যতদূর জানতাম, সেই সময়ে ইতালির কোনো সাক্ষিরই গাড়ি ছিল না আর চার্লস মনে করেছিল যে, আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের মতো একই ধরনের জীবনযাপনের মান বজায় রাখা আমাদের জন্য সবচেয়ে ভাল। ১৯৬১ সালের আগে পর্যন্ত আমাদের কোনো গাড়ি ছিল না।

মিলানে আমাদের প্রথম কিংডম হল ছিল ভূগর্ভস্থ একটা ঘর, যেটার মেঝে ছিল মাটির। সেখানে কোনো বাথরুম ছিল না তবে যখন বৃষ্টি হতো, তখন জলের অভাব হতো না। এ ছাড়া, সঙ্গী হিসেবে আমাদের সঙ্গে ছোট ছোট ইঁদুরও ছিল, যেগুলো এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করত। দুটো বাল্‌ব আমাদের সভাগুলোর জন্য আলো জোগাত। এই ধরনের অসুবিধা সত্ত্বেও আন্তরিক ব্যক্তিদের আমাদের সভায় আসতে এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে পরিচর্যায় যোগ দিতে দেখা উৎসাহজনক ছিল।

মিশনারি অভিজ্ঞতাগুলো

একবার আমরা একজন ব্যক্তিকে শান্তি—এটি কি স্থায়ী হতে পারে? (ইংরেজি) পুস্তিকাটি দিয়েছিলাম। আমরা চলে আসার সময়ে তার স্ত্রী সানতিনা, মুদির দোকান থেকে অনেক কেনাকাটা করে ফিরেছিলেন। তিনি কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, তাকে আট মেয়ের যত্ন নিতে হয় আর অতিরিক্ত কোনো সময় তার নেই। আমি আবার যখন সানতিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন তার স্বামী ঘরে ছিলেন না এবং তিনি উল বুনছিলেন। “শোনার মতো সময় হাতে নেই,” তিনি বলেছিলেন। “তা ছাড়া, আমি পড়তে পারি না।”

আমি নীরবে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম এবং তারপর জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, আমার স্বামীর জন্য একটা সোয়েটার বুনে দেওয়ার জন্য আমি তাকে মজুরি দিতে পারি কি না। দুই সপ্তাহ পরে আমি সোয়েটার পেয়েছিলাম এবং সানতিনা ও আমি “যে সত্য আপনাকে স্বাধীন করবে” (ইংরেজি) বইটির সাহায্যে নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলাম। সানতিনা পড়তে শিখেছিলেন এবং তার স্বামীর বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি উন্নতি করেছিলেন ও বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। তার পাঁচ জন মেয়ে সাক্ষি হয়েছিল এবং সানতিনাও আরও অনেককে বাইবেলের সত্য গ্রহণ করার জন্য সাহায্য করেছেন।

১৯৫১ সালের মার্চ মাসে আমরা অন্য দুজন মিশনারিসহ—রূৎ ক্যানেন * এবং লইস ক্যালাহান, যিনি পরে বিল ওয়েংয়ার্টকে বিয়ে করেছিলেন—ব্র্যাশায় চলে যাই, যেখানে কোনো সাক্ষি ছিল না। আমরা আসবাবপত্রে সাজানো একটা আ্যপার্টমেন্ট খুঁজে পেয়েছিলাম কিন্তু দুই মাস পর বাড়িওয়ালা আমাদেরকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। যেহেতু সেই এলাকায় অন্য কোনো সাক্ষি ছিল না, তাই আমাদের হোটেলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না, যেখানে আমরা প্রায় দুই মাস ছিলাম।

আমাদের খাদ্যতালিকা সীমিত ছিল: কফি, হালকা জলখাবার, পনির আর ফলমূল। বিভিন্ন অসুবিধা সত্ত্বেও, আমরা সত্যিই আশীর্বাদ লাভ করেছিলাম। পরে এক সময়ে, আমরা ছোট একটা আ্যপার্টমেন্ট খুঁজে পেয়েছিলাম আর ১৯৫২ সালে খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ সভায় সেই ছোট রুমে ৩৫ জন ব্যক্তি উপস্থিত হয়েছিল, যেটাকে আমরা কিংডম হল হিসেবে ব্যবহার করতাম।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করা

সেই সময়ে, পাদরিশ্রেণী লোকেদের ওপর ব্যাপক কর্তৃত্ব করে চলছিল। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যখন ব্র্যাশায় প্রচার করছিলাম, তখন আমাদেরকে পাথর মারার জন্য কয়েক জন ছেলে যাজকের দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিল। যাই হোক, পরবর্তী সময়ে ১৬ জন ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিল এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তারা সাক্ষি হয়েছিল। আর তাদের মধ্যে কে ছিলেন? যে-ছেলেরা আমাদেরকে পাথর মারার হুমকি দিয়েছিল তাদের একজন! এখন তিনি ব্র্যাশার একটা মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন। আমরা যখন ১৯৫৫ সালে ব্র্যাশা ছেড়ে চলে যাই, তখন সেখানে ৪০ জন রাজ্য প্রকাশক প্রচারে অংশগ্রহণ করছিল।

এরপর আমরা লেগহর্নে (লিভোর্নো) তিন বছর সেবা করেছিলাম, যেখানে বেশির ভাগ সাক্ষি ছিল মহিলা। এর অর্থ ছিল যে, আমাদের বোনদের মণ্ডলীর এমন দায়িত্বগুলোর দেখাশোনা করতে হতো যেগুলো সাধারণত ভাইদের জন্য ছিল। তারপর আমরা জেনোয়াতে চলে গিয়েছিলাম, যেখানে ১১ বছর আগে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। এই সময়ের মধ্যে সেখানে একটা মণ্ডলী গড়ে উঠেছিল। আমাদের আ্যপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলাতেই কিংডম হল ছিল।

জেনোয়াতে পৌঁছানোর পর, আমি একজন মহিলার সঙ্গে অধ্যয়ন শুরু করেছিলাম, যার স্বামী একজন সাবেক মুষ্টিযোদ্ধা এবং মুষ্টিযোদ্ধাদের একটা শরীরচর্চা কেন্দ্রের ম্যানেজার ছিলেন। সেই মহিলা আধ্যাত্মিক উন্নতি করেছিলেন এবং শীঘ্রই আমাদের খ্রিস্টান বোন হয়েছিলেন। কিন্তু, তার স্বামী বিরোধিতা করতেন এবং অনেক সময় ধরে তা করে চলেছিলেন। পরে তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে সভাগুলোতে যেতে শুরু করেছিলেন। তিনি হলের ভিতরে না ঢুকে বাইরে বসে শুনতেন। পরে, জেনোয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমরা শুনেছিলাম যে, তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে চেয়েছেন। পরবর্তী সময়ে, তিনি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন এবং একজন প্রেমময় খ্রিস্টান অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন।

এ ছাড়া, আমি আরও একজন মহিলার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলাম, যার একজন পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌দান হয়েছিল। প্রথমে সেই পুলিশ কিছুটা আগ্রহ দেখিয়েছিলেন কিন্তু বিয়ের পর তার আচরণ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তিনি বিরোধিতা করেছিলেন এবং সেই স্ত্রী অধ্যয়ন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে যখন তিনি আবার বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন, তখন তার স্বামী এই বলে ভয় দেখিয়েছিলেন যে, যদি তিনি কখনো আমাদের অধ্যয়ন করতে দেখেন, তা হলে আমাদের দুজনকেই গুলি করবেন। যাই হোক, সেই মহিলা আধ্যাত্মিক উন্নতি করেছিলেন এবং বাপ্তাইজিত সাক্ষি হয়েছিলেন। এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, তিনি কখনোই আমাদের গুলি করেননি। বস্তুতপক্ষে, কয়েক বছর পর যখন আমি জেনোয়ার একটা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম, তখন কেউ একজন পিছন থেকে আমার চোখ ধরেছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তিনি কে আমি তা অনুমান করতে পারি কি না। আমি যখন সেই মহিলার স্বামীকে দেখেছিলাম, তখন আমি চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। আমাকে জড়িয়ে ধরার পর তিনি বলেছিলেন যে, যিহোবার কাছে উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে তিনি সেই দিনই বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন!

১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত চার্লস যখন বিভিন্ন মণ্ডলীকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য পরিদর্শনে যেত, তখন আমি তার সঙ্গী হওয়ার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলাম। আমরা ইতালির উত্তরাঞ্চলে প্রায় সব জায়গায় সেবা করেছিলাম—পিডমন্ট, লমবার্ডি এবং লিগিউরিয়ায়। তারপর আমরা ফ্লোরেন্সের কাছাকাছি এলাকায় এবং পরবর্তী সময়ে ভারচ্যালিতে পুনরায় অগ্রগামীর কাজ শুরু করেছিলাম। ১৯৭৭ সালে ভারচ্যালিতে কেবল একটা মণ্ডলী ছিল কিন্তু ১৯৯৯ সালে আমরা যখন সেখান থেকে চলে আসছিলাম, তখন সেখানে তিনটে মন্ডলী ছিল। সেই বছরে, আমার ৯১ বছর পূর্ণ হয়েছিল এবং আমাদেরকে রোমের মিশনারি হোমে চলে আসার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল, যেটা ছিল তুলনামূলকভাবে এক শান্তিপূর্ণ এলাকায় একটা চমৎকার ছোট্ট বাড়ি।

আরেকটা দুঃখজনক ঘটনা

২০০২ সালের মার্চ মাসে চার্লস, যার স্বাস্থ্য বরাবরই ভাল ছিল, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ২০০২ সালের ১১ই মে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। ৭১ বছর ধরে, আমরা দুঃখের সময়ে একসঙ্গে কেঁদেছি আর যখনই আশীর্বাদ পেয়েছি তখন একসঙ্গে আনন্দ করেছি। তার মৃত্যু আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক এক বিচ্ছেদ ছিল।

আমি প্রায়ই মনে মনে চার্লসকে তার স্যুট এবং ১৯৩০ এর দশকের টুপি পরা অবস্থায় দেখতে পাই। আমি তার হাসি কল্পনা করি অথবা তার অতি পরিচিত হাসি শুনতে পাই বলে মনে হয়। যিহোবার সাহায্যে এবং অনেক প্রিয় খ্রিস্টান ভাইবোনদের ভালবাসার কারণে আমি এই দুঃখজনক সময় সহ্য করতে পেরেছি। আমি উৎসুকভাবে সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি, যখন আমি আবারও চার্লসকে দেখতে পাব।

আমার সেবা চালিয়ে যাওয়া

আমার সৃষ্টিকর্তাকে সেবা করাই আমার জীবনের সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে, ‘আমি আস্বাদন করিয়া দেখিয়াছি যে সদাপ্রভু মঙ্গলময়।’ (গীতসংহিতা ৩৪:৮) আমি তাঁর প্রেম উপলব্ধি করেছি এবং তাঁর যত্নের অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। যদিও আমি আমার বাচ্চাকে হারিয়েছিলাম কিন্তু যিহোবা আমাকে—ইতালির সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা—অনেক আধ্যাত্মিক ছেলেমেয়ে দিয়েছেন, যারা আমার এবং তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করেছে।

আমি যা করতে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি তা হল, আমার সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে অন্যদের কাছে বলা। সেই কারণেই আমি প্রচার এবং বাইবেল অধ্যয়ন করা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার স্বাস্থ্যের কারণে বেশি কিছু করতে পারি না বলে মাঝে মাঝে আমি দুঃখ করি। কিন্তু আমি উপলব্ধি করি যে, যিহোবা আমার সীমাবদ্ধতা জানেন এবং আমাকে ভালবাসেন আর আমি যা করতে সক্ষম, তিনি সেটার মূল্য দেন। (মার্ক ১২:৪২) আমি গীতসংহিতা ১৪৬:২ পদের এই কথাগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি: “আমি যাবজ্জীবন সদাপ্রভুর প্রশংসা করিব; আমি যত কাল বাঁচিয়া থাকি, আমার ঈশ্বরের প্রশংসা গান করিব।” *

[পাদটীকাগুলো]

^ আমার ছোট ভাই আ্যনজেলো কাতান্দজারোর অভিজ্ঞতা ১৯৭৫ সালের ১লা এপ্রিল প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২০৫-৭ পৃষ্ঠায় প্রকাশ করা হয়েছিল।

^ তার জীবন কাহিনীর জন্য ১৯৭১ সালের ১লা মে প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২৭৭-৮০ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ এই প্রবন্ধটি প্রস্তুত করার সময় বোন বেনান্‌তি ২০০৫ সালের ১৬ই জুলাই মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

কামিল

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৩১ সালে আমাদের বিয়ের দিন

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রথমে আগ্রহী না হলেও, মা একমত হয়েছিলেন যে আমাদের সকলেরই বাইবেল অধ্যয়ন করা উচিত

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৪৬ সালে গিলিয়েড গ্র্যাজুয়েশনের সময় ভাই নরের সঙ্গে

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

চার্লসের সঙ্গে, তার মৃত্যুর কয়েক দিন আগে