সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আরমাগিদোন—এক আনন্দময় সূচনা

আরমাগিদোন—এক আনন্দময় সূচনা

আরমাগিদোন—এক আনন্দময় সূচনা

 “আরমাগিদোন” শব্দটি ইব্রীয় অভিব্যক্তি হর্‌মাগিদোন বা “মগিদ্দো পর্বত” থেকে এসেছে। এটি প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৬ পদে পাওয়া যায়, যা বলে: “উহারা, ইব্রীয় ভাষায় যাহাকে হর্‌মাগিদোন বলে, সেই স্থানে তাহাদিগকে একত্র করিল।” কারা আরমাগিদোনে একত্রিত হয় এবং কেন? মাত্র দুটো পদ আগে প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪ পদে আমরা পড়ি: ‘জগৎ সমুদয়ের রাজারা সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধার্থে’ একত্রিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সেই বিবৃতি কৌতূহল জাগানোর মতো বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্ভব করে। এই ‘রাজারা’ কোথায় যুদ্ধ করে? তারা কোন বিষয় নিয়ে এবং কার সঙ্গে যুদ্ধ করে? অনেকে যেমনটা মনে করে থাকে, তারা কি ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করবে? আরমাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কি থাকবে? বাইবেলকেই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে দিন।

উল্লেখিত “মগিদ্দো পর্বত” কি বোঝায় যে, আরমাগিদোন যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের এক নির্দিষ্ট পর্বতে সংঘটিত হবে? না। প্রথমত, বাস্তবে এই ধরনের কোনো পর্বতের অস্তিত্ব নেই—প্রাচীন মগিদ্দো পর্বত যেখানে অবস্থিত ছিল সেখানকার পার্শ্ববর্তী উপত্যকায় কেবল প্রায় ২০ মিটার উঁচু একটা টিলা রয়েছে। এ ছাড়া, মগিদ্দোর আশেপাশের এলাকা “পৃথিবীর” সকল ‘রাজগণ ও তাহাদের সৈন্যগণকে’ একত্রিত করার মতো যথেষ্ট বড় নয়। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৯) কিন্তু, মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের কিছু ভয়ানক এবং চূড়ান্ত যুদ্ধ মগিদ্দোতে সংঘটিত হয়েছিল। তাই, আরমাগিদোন নামটা এমন এক চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রতীক, যেখানে শুধুমাত্র একজনই বিজয়ী থাকবে।—৫ পৃষ্ঠায় দেওয়া “মগিদ্দো—এক উপযুক্ত প্রতীক” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

আরমাগিদোন শুধুমাত্র পৃথিবীর জাতিগুলোর মধ্যে সংঘটিত এক যুদ্ধ হতে পারে না কারণ প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪ পদ বলে যে, ‘জগৎ সমুদয়ের রাজারা সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধার্থে’ একজোট গড়ে তোলে। যিরমিয় তার অনুপ্রাণিত ভবিষ্যদ্বাণীতে বলেছিলেন, “সদাপ্রভুর নিহত লোক সকল পৃথিবীর এক প্রান্ত হইতে পৃথিবীর অন্য প্রান্ত পর্য্যন্ত” ছড়িয়েছিটিয়ে থাকবে। (যিরমিয় ২৫:৩৩) তাই, আরমাগিদোন মধ্যপ্রাচ্যের এক নির্দিষ্ট জায়গার সংঘটিত কোনো মানব যুদ্ধ নয়। এটা হল যিহোবার যুদ্ধ এবং তা হবে সারা পৃথিবী জুড়ে।

কিন্তু লক্ষ করুন যে, প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৬ পদে আরমাগিদোনকে একটা ‘স্থান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাইবেলে ‘স্থান’ হয়তো একটা অবস্থা বা পরিস্থিতিকে—এই ক্ষেত্রে, সমুদয় জগৎ যিহোবার বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার পরিস্থিতিকে—চিত্রিত করতে পারে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৬, ১৪) আরমাগিদোনে পৃথিবীর সমস্ত জাতি “রাজাদের রাজা ও প্রভুদের প্রভু” যিশু খ্রিস্টের সামরিক আদেশের অধীনস্থ ‘স্বর্গস্থ সৈন্যগণের’ বিরুদ্ধে পরস্পর মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৪, ১৬.

কিন্তু এই দাবি সম্বন্ধে কী বলা যায় যে, আরমাগিদোন হল ধ্বংসাত্মক অস্ত্রশস্ত্রের মাধ্যমে এক ব্যাপক ধ্বংস বা গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে এক সংঘর্ষ? একজন প্রেমময় ঈশ্বর কি মানবজাতির এবং তাদের বাসস্থান এই পৃথিবীর এই ধরনের ভয়ানকভাবে ধ্বংস হওয়াকে অনুমোদন করবেন? না। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন যে, তিনি পৃথিবীকে “অনর্থক” সৃষ্টি করেননি কিন্তু “বাসস্থানার্থে নির্ম্মাণ করিয়াছেন।” (যিশাইয় ৪৫:১৮; গীতসংহিতা ৯৬:১০) আরমাগিদোনে যিহোবা আমাদের এই পৃথিবীকে এক বিপর্যয়মূলক অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস করবেন না। বরং, তিনি “পৃথিবীনাশকদিগকে নাশ” করবেন।—প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮.

আরমাগিদোন—কখন?

শত শত বছর ধরে অতি গুরুত্বপূর্ণ যে-প্রশ্নটা অসংখ্য অনুমানের জন্ম দিয়েছে সেটা হল, কখন আরমাগিদোন আসবে? প্রকাশিত বাক্য বইটিকে বাইবেলের অন্যান্য অংশের আলোকে পরীক্ষা করে দেখা আমাদের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের সময় বুঝতে সাহায্য করতে পারে। প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৫ পদ আরমাগিদোনকে, চোরের ন্যায় যিশুর আসার সঙ্গে জড়িত করে। এই বিধিব্যবস্থার বিচার করার জন্য তাঁর আসার বর্ণনা দিতে যিশুও সেই দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন।—মথি ২৪:৪৩, ৪৪; ১ থিষলনীকীয় ৫:২.

বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর পরিপূর্ণতার মাধ্যমে যেমন দেখা যায় যে, ১৯১৪ সাল থেকে আমরা এই বিধিব্যবস্থার শেষকালে বাস করছি। * এই শেষকালের চূড়ান্ত দিনগুলো সেই সময়ের দ্বারা চিহ্নিত হবে, যেটাকে যিশু “মহাক্লেশ” বলে উল্লেখ করেছিলেন। সেই সময় কতদিন ধরে চলবে, এই বিষয়ে বাইবেল কিছু জানায় না কিন্তু এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দুর্দশাগুলো এত খারাপ হবে, যা পৃথিবীতে এর আগে কখনো ঘটেনি। সেই মহাক্লেশ আরমাগিদোনে গিয়ে শেষ হবে।—মথি ২৪:২১, ২৯.

যেহেতু আরমাগিদোন হল ‘সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধ,’ তাই এটার বিলম্ব ঘটাতে মানুষ কিছুই করতে পারে না। সেই যুদ্ধ শুরু করার জন্য যিহোবার এক ‘নিরূপিত কাল’ রয়েছে। ‘তাহা যথাকালে বিলম্ব করিবে না।’—হবক্‌কূক ২:৩.

একজন ধার্মিক ঈশ্বর এক ন্যায্য যুদ্ধ করেন

কিন্তু, কেন ঈশ্বর পৃথিবীব্যাপী এক যুদ্ধ করবেন? আরমাগিদোন তাঁর একটি মুখ্য গুণ, ন্যায়বিচারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাইবেল ঘোষণা করে: “সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৮) তিনি মানব ইতিহাসে সংঘটিত সমস্ত অন্যায় দেখেছেন। এটা স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ন্যায্য অসন্তোষ জাগিয়ে তোলে। তাই, তিনি এই সমগ্র দুষ্ট ব্যবস্থা ধ্বংস করতে এক ন্যায্য যুদ্ধ করার জন্য তাঁর পুত্রকে নিযুক্ত করেছেন।

একমাত্র যিহোবাই এমন এক যুদ্ধ করতে সমর্থ, যা প্রকৃতপক্ষেই ন্যায্য এবং শুধুমাত্র তাদের ওপর আসবে, যারা এটার উপযুক্ত আর সেই সময়ে সৎহৃদয়ের ব্যক্তিরা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের রক্ষা করা হবে। (মথি ২৪:৪০, ৪১; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০, ১৩, ১৪) আর একমাত্র তাঁরই সমস্ত পৃথিবীর ওপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করার অধিকার রয়েছে কারণ এটা হল তাঁর সৃষ্টি।—প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.

যিহোবা তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে কোন শক্তিগুলো ব্যবহার করবেন? আমরা তা জানি না। আমরা যা জানি তা হল, দুষ্ট জাতিগুলোকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করতে নিজের ইচ্ছামতো উপায়গুলো ব্যবহার করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। (ইয়োব ৩৮:২২, ২৩; সফনিয় ১:১৫-১৮) কিন্তু, পৃথিবীতে ঈশ্বরের উপাসকেরা এই যুদ্ধে অংশ নেবে না। প্রকাশিত বাক্য ১৯ অধ্যায়ের দর্শন ইঙ্গিত করে যে, শুধুমাত্র স্বর্গীয় সৈন্যগণ যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে এই যুদ্ধে অংশ নেবে। পৃথিবীতে যিহোবার কোনো খ্রিস্টান দাসই এই যুদ্ধে অংশ নেবে না।—২ বংশাবলি ২০:১৫, ১৭.

একজন বিজ্ঞ ঈশ্বর যথেষ্ট সতর্কবাণী দেন

রক্ষাপ্রাপ্তদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? বস্তুতপক্ষে, আরমাগিদোনে কারোরই ধ্বংস হওয়ার কথা নয়। প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: ‘কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।’ (২ পিতর ৩:৯) আর প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের “ইচ্ছা এই, যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।”—১ তীমথিয় ২:৪.

সেইজন্য যিহোবা বিজ্ঞতার সঙ্গে নিশ্চিত করেছেন যেন ‘রাজ্যের সুসমাচার,’ সমস্ত পৃথিবীতে শত শত ভাষায় ঘোষণা করা হয়। সমস্ত জায়গার লোকেদের রক্ষা পাওয়ার এবং পরিত্রাণ লাভ করার জন্য সুযোগ দেওয়া হয়েছে। (মথি ২৪:১৪; গীতসংহিতা ৩৭:৩৪; ফিলিপীয় ২:১২) যারা সুসমাচারের প্রতি অনুকূলভাবে সাড়া দেয়, তারা আরমাগিদোনে রক্ষা পেতে এবং এক পরমদেশ পৃথিবীতে সিদ্ধ অবস্থায় অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারে। (যিহিষ্কেল ১৮:২৩, ৩২; সফনিয় ২:৩; রোমীয় ১০:১৩) ঈশ্বর যিনি হলেন প্রেম, তাঁর কাছ থেকে কি একজন ব্যক্তি এইরকমই আশা করবেন না?—১ যোহন ৪:৮.

একজন প্রেমময় ঈশ্বর কি যুদ্ধ করতে পারেন?

তবে, অনেকেই এইরকম ভেবে আশ্চর্য হয় যে, কীভাবে একজন ঈশ্বর যিনি হলেন প্রেমের মূর্ত প্রতীক, মানবজাতির অধিকাংশের ওপরে মৃত্যু এবং ধ্বংস নিয়ে আসবেন। এই পরিস্থিতিকে হয়তো ইঁদুর-উপদ্রুত একটা বাড়ির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। আপনি কি একমত হবেন না যে, একজন বিবেচক মালিকের উচিত ইঁদুরগুলোকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার মাধ্যমে তার পরিবারের স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলকে রক্ষা করা?

একইভাবে, মানুষের জন্য যিহোবার গভীর অনুভূতির কারণে আরমাগিদোন যুদ্ধ সংঘটিত হবে। ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল, পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করা এবং মানবজাতিকে সিদ্ধতায় ও শান্তিতে উন্নীত করা, যেখানে “কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।” (মীখা ৪:৩, ৪; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) তা হলে, যারা তাদের সহমানবদের শান্তি ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে, তাদের প্রতি কী করা হবে? ঈশ্বর অবশ্যই ধার্মিক ব্যক্তিদের জন্য, এই ধরনের “ইঁদুর”—অসংশোধনযোগ্য দুষ্ট ব্যক্তিদের—সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করবেন।—২ থিষলনীকীয় ১:৮, ৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৮.

ত্রুটিপূর্ণ মানব শাসন এবং জাতীয়তামূলক সুবিধাগুলোর জন্য স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষার কারণে বর্তমানে বেশির ভাগ সংঘর্ষ ও রক্তপাত ঘটে। (উপদেশক ৮:৯) মানব সরকারগুলো তাদের প্রভাবকে আরও বাড়ানোর চেষ্টায়, ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করে। এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে, তারা তাদের সার্বভৌমত্ব পরিত্যাগ করে ঈশ্বর এবং যিশুর কাছে তা সমর্পণ করবে। (গীতসংহিতা ২:১-৯) তাই, যিশুর অধীনে যিহোবার রাজ্যের ধার্মিক শাসনের জন্য পথ প্রস্তুত করতে এই ধরনের সরকারগুলোকে অবশ্যই দূর করতে হবে। (দানিয়েল ২:৪৪) কার এই গ্রহ ও মানবজাতিকে শাসন করার অধিকার রয়েছে, এই বিচার্য বিষয়টা চিরকালের জন্য সমাধান করতে আরমাগিদোন হতেই হবে।

আরমাগিদোনে যিহোবার সক্রিয় হস্তক্ষেপ মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম মঙ্গল নিয়ে আসবে। মন্দতর জগৎ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে একমাত্র ঈশ্বরের নিখুঁত শাসনব্যবস্থা মানবজাতির চাহিদাগুলো পুরোপুরিভাবে পূরণ করবে। একমাত্র তাঁর রাজ্যের মাধ্যমেই প্রকৃত শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে। ঈশ্বর যদি চিরকাল হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকেন, তা হলে জগৎ পরিস্থিতি কীরকম হবে? ঘৃণা, দৌরাত্ম্য এবং যুদ্ধগুলো কি মানবজাতিকে ক্রমাগত কষ্ট দেবে না, যেমন তারা মানব শাসনব্যবস্থায় শত শত বছর ধরে ভোগ করেছে? আরমাগিদোন যুদ্ধ আসলে মানবজাতির উপকারের জন্যই!—লূক ১৮:৭, ৮; ২ পিতর ৩:১৩.

সমস্ত যুদ্ধকে শেষ করার জন্য এই যুদ্ধ

আরমাগিদোন এমন কিছু সম্পাদন করবে, যা কোনো যুদ্ধই এযাবৎ সম্পাদন করতে পারেনি—সকল যুদ্ধের শেষ। এমন এক দিনের জন্য কে না আকুলভাবে অপেক্ষা করে, যখন যুদ্ধ অতীতের এক বিষয় হয়ে যাবে? কিন্তু, যুদ্ধকে শেষ করার জন্য মানুষের সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। যুদ্ধ শেষ করার জন্য মানুষের প্রচেষ্টাগুলো বার বার ব্যর্থ হওয়া স্বাভাবিকভাবেই যিরমিয়ের এই কথাগুলোর সত্যতার ওপর জোর দেয়: “হে সদাপ্রভু আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যিরমিয় ১০:২৩) যিহোবা কী সম্পাদন করবেন সেই সম্বন্ধে বাইবেল এই প্রতিজ্ঞা করে: “তিনি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন; তিনি ধনু ভগ্ন করেন, বড়শা খণ্ড খণ্ড করেন, তিনি রথ সকল আগুনে পোড়াইয়া দেন।”—গীতসংহিতা ৪৬:৮, ৯.

যখন জাতিগুলো একে অন্যের প্রতি তাদের মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করবে এবং পরিবেশকে ধ্বংস করার হুমকি দেবে, তখন পৃথিবীর নির্মাতা—বাইবেলে বর্ণিত আরমাগিদোনে—পদক্ষেপ নিবেন! (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮) অতএব, এই যুদ্ধ ঠিক তা-ই সম্পাদন করবে, যা বছরের পর বছর ধরে ঈশ্বর ভয়শীল লোকেরা আশা করতে পারে। এটা তাঁর সকল সৃষ্টির ওপর শাসন করার বিষয়ে পৃথিবীর কর্তা যিহোবা ঈশ্বরের অধিকারের ন্যায্যতা প্রতিপাদন করবে।

তাই, যে-লোকেরা ধার্মিকতা ভালবাসে, তাদের আরমাগিদোনকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং, এটা আশার এক ভিত্তি জোগায়। আরমাগিদোন যুদ্ধ সমস্ত দুর্নীতি ও দুষ্টতা থেকে পৃথিবীকে পরিষ্কার করবে এবং ঈশ্বরের মশীহ রাজ্য শাসনের অধীনে এক ধার্মিক নতুন বিধিব্যবস্থার পথ খুলে দেবে। (যিশাইয় ১১:৪, ৫) এক বিপর্যয়মূলক ধ্বংসের বিপরীতে, আরমাগিদোন সেইসমস্ত ধার্মিক ব্যক্তিদের জন্য এক আনন্দময় সূচনার সংকেত দেবে, যারা পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকবে।—গীতসংহিতা ৩৭:২৯.

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইয়ের ১১ অধ্যায় দেখুন।

[৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

মগিদ্দো—এক উপযুক্ত প্রতীক

প্রাচীন মগিদ্দো, উত্তর ইস্রায়েলের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত, যেখান থেকে উর্বর যিষ্রিয়েল উপত্যকার পশ্চিমাঞ্চল দেখা যেত। এটা সেখানে মিলিত হওয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং সামরিক পথগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করত। এভাবে, মগিদ্দো বিভিন্ন চূড়ান্ত যুদ্ধের এক স্থান হয়ে উঠেছিল। অধ্যাপক গ্রেয়েম ডেভিস তার বাইবেলের সময়ের শহরগুলো—মগিদ্দো (ইংরেজি) বইয়ে লেখেন: “মগিদ্দো শহর . . . ছিল এমন এক এলাকা, যেখানে সবদিক থেকে ব্যবসায়ী এবং অভিবাসীরা সহজেই প্রবেশ করতে পারত; কিন্তু একই সময়ে, যদি যথেষ্ট শক্তিশালী হতো, তা হলে এটা বিভিন্ন পথের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে আর এভাবে বাণিজ্য এবং যুদ্ধ উভয়ের উন্নতি সমন্বয় করতে পারত। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, এটা ছিল . . . এক পুরস্কারস্বরূপ, যেটা নিয়ে প্রায়ই যুদ্ধ করা হতো এবং একবার অধিকার করা হলে পর দৃঢ়ভাবে এর সুরক্ষা করা হতো।”

মগিদ্দোর দীর্ঘ ইতিহাস শুরু হয়েছিল সা.কা.পূ. দ্বিতীয় সহস্রাব্দে, যখন মিশরীয় শাসক থুতমোসি ৩য় সেখানে কনানীয় শাসকদের পরাজিত করেছিলেন। শত শত বছর ধরে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত তা চলেছিল, যখন ব্রিটিশ জেনারেল এডমান্ট আ্যলেনবি তুরস্কের সৈন্যদের নৃশংসভাবে পরাজিত করেছিলেন। এই মগিদ্দোতেই ঈশ্বর কনানের রাজা যাবীনকে শোচনীয়ভাবে ধ্বংস করতে বিচারক বারককে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৪:১২-২৪; ৫:১৯, ২০) এর আশেপাশের এলাকায় বিচারক গিদিয়োন মিদিয়নীয়দের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেছিলেন। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৭:১-২২) এ ছাড়া, এই জায়গাতেই রাজা অহসিয় এবং রাজা যোশিয়কেও হত্যা করা হয়েছিল।—২ রাজাবলি ৯:২৭; ২৩:২৯, ৩০.

তাই, আরমাগিদোনকে সেই এলাকার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করা যথোপযুক্ত কারণ এই এলাকায় অসংখ্য চূড়ান্ত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এটা সকল বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ঈশ্বরের সম্পূর্ণ বিজয়ের এক উপযুক্ত প্রতীক।

[সৌজন্যে]

Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.

[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আরমাগিদোন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পৃথিবীব্যাপী, লোকেদেরকে এক সতর্কবাণী এবং সুযোগ দেওয়া হচ্ছে

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আরমাগিদোন এক আনন্দময় সূচনার সংকেত দেবে