সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“সর্ব্ব ভাষাবাদী” লোকেরা সুসমাচার শোনে

“সর্ব্ব ভাষাবাদী” লোকেরা সুসমাচার শোনে

“সর্ব্ব ভাষাবাদী” লোকেরা সুসমাচার শোনে

“জাতিগণের সর্ব্ব ভাষাবাদী দশ দশ পুরুষ . . . কহিবে, আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী।”—সখরিয় ৮:২৩.

১. খ্রিস্টধর্মের বহুভাষিক ও আন্তর্জাতিক সূচনার জন্য যিহোবা কীভাবে সর্বোত্তম সময় এবং পরিবেশ জুগিয়ে দিয়েছিলেন?

 সময় এবং পরিবেশটা ছিল খুবই উপযুক্ত। এটা ছিল সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন। কয়েক সপ্তাহ আগে, সুদূর প্রসারিত রোমীয় সাম্রাজ্যের কমপক্ষে ১৫টা অঞ্চল ও তার বাইরে থেকে আসা যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা নিস্তারপর্ব পালন করার জন্য যিরূশালেমে জড়ো হয়েছে। সেই দিন তাদের মধ্যে হাজার হাজার ব্যক্তি, পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ সাধারণ লোকেদেরকে সেই সাম্রাজ্যে ব্যবহৃত হতো এমন অনেক ভাষায় সুসমাচার ঘোষণা করতে শুনেছে—তবে প্রাচীন বাবিলের সেই লোকেদের মতো বিভ্রান্তি সহকারে নয় কিন্তু বোধগম্যতা সহকারে। (প্রেরিত ২:১-১২) সেই সময়টা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর জন্মের এবং এক বহুভাষিক ও আন্তর্জাতিক শিক্ষামূলক কাজের সূচনার সংকেত দিয়েছিল, যা এখনও পর্যন্ত চলছে।

২. সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যিশুর শিষ্যরা কীভাবে বিভিন্ন পটভূমির শ্রোতাদের “চমৎকৃত” করেছিল?

যিশুর শিষ্যরা সম্ভবত সাধারণ গ্রিক ভাষায় কথা বলত, যা সেই সময়ের প্রচলিত ভাষা ছিল। এ ছাড়া, তারা ইব্রীয় ভাষা ব্যবহার করত, যে-ভাষায় মন্দিরে কথা বলা হতো। কিন্তু, সেই পঞ্চাশত্তমীর দিনে তারা বিভিন্ন পটভূমির শ্রোতাদের স্থানীয় ভাষায় কথা বলে তাদেরকে “চমৎকৃত” করেছিল। এর ফলে কী হয়েছিল? শ্রোতারা তাদের মাতৃভাষায় অতীব গুরুত্বপূর্ণ যে-সত্যগুলো শুনেছিল, সেগুলো তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। দিনের শেষে, শিষ্যদের একটা ছোট দল বৃদ্ধি পেয়ে ৩,০০০রেরও বেশি জনের একটা বড় দলে পরিণত হয়েছিল।—প্রেরিত ২:৩৭-৪২.

৩, ৪. শিষ্যরা যখন যিরূশালেম, যিহূদিয়া এবং গালীল থেকে অন্য জায়গায় গিয়েছিল, তখন কীভাবে প্রচার কাজের প্রসার হয়েছিল?

অতি গুরুত্বপূর্ণ সেই ঘটনার পরে, যিরূশালেমে তাড়নার ঢেউ বয়ে গিয়েছিল এবং “যাহারা ছিন্নভিন্ন হইয়াছিল, তাহারা চারদিকে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচারের বাক্য প্রচার করিল।” (প্রেরিত ৮:১-৪) উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত ৮ অধ্যায়ে আমরা ফিলিপ সম্বন্ধে পড়ি, যিনি স্পষ্টতই একজন গ্রিকভাষী সুসমাচার প্রচারক ছিলেন। ফিলিপ শমরীয়দের কাছে প্রচার করেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি একজন ইথিওপীয় কর্মকর্তার কাছে প্রচার করেছিলেন, যিনি খ্রিস্ট সম্বন্ধে বার্তার প্রতি সাড়া দিয়েছিলেন।—প্রেরিত ৬:১-৫; ৮:৫-১৩, ২৬-৩৯; ২১:৮, ৯.

খ্রিস্টানরা যখন যিরূশালেম, যিহূদিয়া এবং গালীলের সীমানার বাইরে গিয়েছিল এবং পুনরায় তাদের জীবনযাপন শুরু করার জন্য বিভিন্ন জায়গা খুঁজেছিল, তখন তারা নতুন সাম্প্রদায়িক এবং ভাষার প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কেবল যিহুদিদের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিল। কিন্তু, শিষ্য লূক বর্ণনা করেন: “কয়েক জন কুপ্রীয় ও কুরীণীয় লোক ছিল; ইহারা আন্তিয়খিয়াতে আসিয়া গ্রীকদের নিকটেও কথা কহিল, প্রভু যীশুর বিষয়ে সুসমাচার প্রচার করিল।”—প্রেরিত ১১:১৯-২১.

একজন পক্ষপাতহীন ঈশ্বর—সকলের জন্য এক বার্তা

৫. সুসমাচারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে কীভাবে যিহোবার পক্ষপাতহীনতা দেখা যায়?

এই ধরনের সম্প্রসারণ ঈশ্বরের পথের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ; ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না। বিভিন্ন জাতির লোকেদের প্রতি পিতরের দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বয় করার জন্য যিহোবা তাকে সাহায্য করার পর, প্রেরিত পিতর উপলব্ধি সহকারে বলেছিলেন: “আমি সত্যই বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫; গীতসংহিতা ১৪৫:৯) প্রেরিত পৌল, যিনি আগে খ্রিস্টানদের একজন তাড়নাকারী ছিলেন, তিনি যখন ঘোষণা করেছিলেন যে, ঈশ্বরের “ইচ্ছা এই, যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়,” তখন তিনি এই বিষয়টা পুনরায় নিশ্চিত করেছিলেন যে, ঈশ্বর পক্ষপাতপূর্ণ নন। (১ তীমথিয় ২:৪) সৃষ্টিকর্তার পক্ষপাতহীনতা স্পষ্ট দেখা যায় কারণ রাজ্যের আশা যেকোনো লিঙ্গ, বর্ণ, জাতীয়তা অথবা ভাষার লোকেদের জন্য উন্মুক্ত।

৬, ৭. বাইবেলের কোন ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সুসমাচারের আন্তর্জাতিক ও বহুভাষিক সম্প্রসার সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল?

এই আন্তর্জাতিক প্রসার সম্বন্ধে শত শত বছর আগে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী: “[যিশুকে] কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও রাজত্ব দত্ত হইল; লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদীকে তাঁহার সেবা করিতে হইবে।” (দানিয়েল ৭:১৪) ১৫১টা ভাষায় প্রকাশিত এবং পৃথিবীব্যাপী বিতরিত এই পত্রিকা যে আপনাকে যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে পড়তে সমর্থ করে, সেই বিষয়টা বাইবেলের এই ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতাকে প্রতিফলিত করে।

বাইবেল এমন একটা সময় সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে, যখন বিভিন্ন ভাষার লোকেরা বাইবেলের জীবনদায়ী বার্তা সম্বন্ধে শুনবে। সত্য উপাসনা কীভাবে অনেককে আকৃষ্ট করবে, সেই সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে সখরিয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “তৎকালে জাতিগণের সর্ব্ব ভাষাবাদী দশ দশ পুরুষ এক এক যিহূদী পুরুষের [“ঈশ্বরের ‘ইস্রায়েলের’” অংশ, আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের] বস্ত্রের অঞ্চল ধরিয়া এই কথা কহিবে, আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী।” (সখরিয় ৮:২৩; গালাতীয় ৬:১৬) আর প্রেরিত যোহন একটা দর্শনে যা দেখেছিলেন, সেই সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন: “দেখ, প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না; তাহারা সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষ শাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) আমরা এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে সত্য হতে দেখেছি!

সমস্ত ধরনের লোকেদের কাছে পৌঁছানো

৮. আধুনিক দিনের কোন বাস্তবতার জন্য আমাদের সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে রদবদল করার প্রয়োজন হয়েছে?

আজকে ক্রমাগতভাবে লোকেরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছে। বিশ্বায়ন বিদেশে বসবাস করার এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। যুদ্ধাঞ্চল এবং অর্থনৈতিকভাবে মন্দা এলাকাগুলো থেকে লোকেরা দলে দলে আরও স্থায়ী জায়গাগুলোতে যাচ্ছে, বস্তুগত দিক দিয়ে নিরাপদ এক জীবন লাভ করার চেষ্টা করছে। অনেক দেশে ব্যাপক হারে অভিবাসী এবং শরণার্থীর আগমনের ফলে বিদেশিভাষী অধ্যুষিত এলাকা গঠিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ফিনল্যান্ডে ১২০টারও বেশি ভাষায় কথা বলা হয়; অস্ট্রেলিয়ায় ২০০রও বেশি ভাষায় কথা বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেবল একটা শহরে—সান ডিয়েগোতে—১০০টারও বেশি ভাষা শোনা যেতে পারে!

৯. আমাদের এলাকায় ভিন্ন ভাষায় কথা বলে এমন ব্যক্তিদের উপস্থিতিকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

খ্রিস্টান পরিচারক হিসেবে আমরা কি ভিন্ন ভাষায় কথা বলে এমন ব্যক্তিদের উপস্থিতিকে আমাদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এক বাধা হিসেবে দেখি? কখনোই না! এর পরিবর্তে, আমরা এই উপস্থিতিকে আমাদের পরিচর্যার এলাকার—“কাটিবার মতো শ্বেতবর্ণ হইয়াছে” এমন “ক্ষেত্রের”—কাঙ্ক্ষিত প্রসার হিসেবে দেখি। (যোহন ৪:৩৫) আমরা সেইসমস্ত লোকের যত্ন নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি, যারা আত্মাতে দীনহীন বা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন, তা তাদের জাতীয়তা অথবা ভাষা যা-ই হোক না কেন। (মথি ৫:৩) এর ফলে প্রতি বছর ‘প্রত্যক ভাষার’ বৃদ্ধিরত লোকেরা খ্রিস্টের শিষ্য হচ্ছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬) উদাহরণস্বরূপ, ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে জার্মানিতে প্রায় ৪০টা ভাষায় প্রচার কাজ সম্পাদিত হয়েছিল। একই সময়ে, অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৩০টা ভাষায় সুসমাচার প্রচারিত হয়েছিল, যেখানে মাত্র দশ বছর আগে ১৮টা ভাষায় প্রচারিত হয়েছিল। গ্রিসে যিহোবার সাক্ষিরা প্রায় ২০টা ভাষার লোকেদের কাছে পৌঁছেছিল। পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৮০ শতাংশ যিহোবার সাক্ষি ব্যাপক আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি ছাড়া অন্য একটা ভাষায় কথা বলে।

১০. “সমুদয় জাতিকে” শিষ্য করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক প্রকাশকের ভূমিকা কী?

১০ বাস্তবিকপক্ষেই, ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিবার’ বিষয়ে যিশুর আদেশ সম্পাদন করা হচ্ছে! (মথি ২৮:১৯) সেই কার্যভারকে উৎসুকভাবে গ্রহণ করে, যিহোবার সাক্ষিরা দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৫টা জায়গায় সক্রিয় রয়েছে এবং ৪০০টারও বেশি ভাষায় সাহিত্য বিতরণ করছে। যদিও যিহোবার সংগঠন লোকেদের কাছে পৌঁছানোর জন্য যে-বিষয়বস্তুর প্রয়োজন, সেগুলো জুগিয়ে থাকে কিন্তু প্রত্যেক রাজ্য প্রকাশক যে-ভাষা সবচেয়ে ভাল বোঝেন, সেই ভাষায় ‘সকলের’ কাছে বাইবেলের বার্তা প্রকাশ করার জন্য তাদেরকে পদক্ষেপ নিতে হবে। (যোহন ১:৭) এই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা বিভিন্ন ভাষার দলের লক্ষ লক্ষ লোককে সুসমাচার থেকে উপকার পেতে সক্ষম করে। (রোমীয় ১০:১৪, ১৫) হ্যাঁ, আমরা প্রত্যেকে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকি!

প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবিলা করার জন্য যা প্রয়োজন, তা পূরণ করা

১১, ১২. (ক) কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মোকাবিলা করতে হবে এবং কীভাবে পবিত্র আত্মা সাহায্য করে? (খ) লোকেদের কাছে তাদের মাতৃভাষায় প্রচার করা কেন প্রায়ই সাহায্যকারী?

১১ আজকে, অনেক রাজ্য প্রকাশক অন্য একটা ভাষা শিখতে চায় কিন্তু তারা ঈশ্বরের আত্মার অলৌকিক দানের ওপর নির্ভর করতে বা সেটার প্রত্যাশা করতে পারে না। (১ করিন্থীয় ১৩:৮) নতুন একটা ভাষা শেখা এক বিরাট কার্যভার। এমনকি ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় আরেকটা ভাষায় কথা বলে এমন প্রকাশকরা বাইবেলের বার্তাকে সেইসমস্ত লোকের কাছে আবেদনময় করে তোলার জন্য হয়তো নিজেদের চিন্তাভাবনা এবং পদ্ধতিকে রদবদল করতে পারে, যারা সেই ভাষায় কথা বলে ঠিকই কিন্তু তাদের ভিন্ন পটভূমি এবং সংস্কৃতি রয়েছে। এ ছাড়া, নতুন অভিবাসীরা প্রায়ই লাজুক হয়ে থাকে; তাদের চিন্তাভাবনা বোঝার জন্য অনেক প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়।

১২ তা সত্ত্বেও, যে-লোকেরা অন্য ভাষায় কথা বলে তাদেরকে সাহায্য করার প্রচেষ্টায় পবিত্র আত্মা এখনও যিহোবার দাসদের মধ্যে কার্যরত। (লূক ১১:১৩) অলৌকিকভাবে ভাষাগত ক্ষমতা দেওয়ার পরিবর্তে, পবিত্র আত্মা সেই লোকেদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করার আকাঙ্ক্ষা বাড়াতে পারে, যারা আমাদের ভাষায় কথা বলে না। (গীতসংহিতা ১৪৩:১০) লোকেরা যে-ভাষার সঙ্গে পরিচিত নয়, সেই ভাষায় বাইবেলের বার্তা প্রচার করা অথবা শিক্ষা দেওয়া হয়তো তাদের মনে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু, আমাদের শ্রোতাদের হৃদয়কে স্পর্শ করার জন্য প্রায়ই তাদের মাতৃভাষা—যে-ভাষা তাদের গভীরতম আকাঙ্ক্ষা, প্রেরণা এবং আশা সম্বন্ধে জানায়—ব্যবহার করা উত্তম।—লূক ২৪:৩২.

১৩, ১৪. (ক) আরেকটা ভাষার পরিচর্যা গ্রহণ করার জন্য কী কিছুজনকে অনুপ্রাণিত করেছে? (খ) কীভাবে আত্মত্যাগের মনোভাব দেখা যায়?

১৩ অনেক রাজ্য ঘোষণাকারী, বিদেশিভাষী ক্ষেত্রে বাইবেলের সত্যের প্রতি উত্তম সাড়া লক্ষ করে, সেইসমস্ত ক্ষেত্রে পরিচর্যা করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। অন্যেরা উদ্দীপনা বোধ করেছে, যখন তাদের সেবা আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং আগ্রহজনক হয়ে উঠেছে। “যারা পূর্ব ইউরোপ থেকে এসেছে, তাদের মধ্যে অনেকে সত্যের জন্য তৃষ্ণার্ত,” দক্ষিণ ইউরোপের যিহোবার সাক্ষিদের একটা শাখা অফিস বলে। গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এমন লোকেদের সাহায্য করা কতই না পরিতৃপ্তিদায়ক!—যিশাইয় ৫৫:১, ২.

১৪ কিন্তু, এই কাজে অর্থপূর্ণভাবে অংশ নেওয়ার জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়ার এবং আত্মত্যাগ করার প্রয়োজন। (গীতসংহিতা ১১০:৩) উদাহরণস্বরূপ, বেশ কয়েকটা জাপানি সাক্ষি পরিবার চাইনিজ অভিবাসীদের দলকে বাইবেল বুঝতে সাহায্য করার জন্য বড় বড় শহরের আরামদায়ক বাড়ি ছেড়ে দিয়ে দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে, প্রকাশকরা ফিলিপিনো ক্ষেত্রের লোকেদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার জন্য নিয়মিতভাবে এক থেকে দুই ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে যায়। নরওয়েতে, এক বিবাহিত দম্পতি আফগানিস্তান থেকে আসা একটা পরিবারের সঙ্গে অধ্যয়ন করে। সাক্ষি দম্পতি ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান? ব্রোশারের ইংরেজি এবং নরওয়েজিয়ান দুটো সংস্করণই ব্যবহার করে। * পরিবার পারসিক ভাষায় অনুচ্ছেদগুলো পড়ে, যে-ভাষা তাদের স্থানীয় ডারি ভাষার অনেক কাছাকাছি। তারা ইংরেজি এবং নরওয়েজিয়ান ভাষায় কথাবার্তা বলে। এই ধরনের আত্মত্যাগী মনোভাব এবং নমনীয়তা প্রচুররূপে পুরস্কৃত হয়, যখন বিদেশিরা সুসমাচারের প্রতি সাড়া দেয়। *

১৫. কীভাবে আমরা সকলে বহুভাষিক প্রচারের প্রচেষ্টায় অংশ নিতে পারি?

১৫ আপনি কি এই বহুভাষিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন? আপনার এলাকায় সাধারণত কোন বিদেশি ভাষায় কথা বলা হয়, সেই বিষয়ে জানার চেষ্টা করে তা শুরু করুন না কেন? এরপর আপনি হয়তো সেইসব ভাষার কিছু ট্র্যাক্ট এবং ব্রোশার সঙ্গে নিতে পারেন। ২০০৪ সালে প্রকাশিত সমস্ত জাতির লোকেদের জন্য সুসমাচার (ইংরেজি) পুস্তিকাটি অনেক ভাষায় এর সহজ, ইতিবাচক বার্তার দ্বারা রাজ্যের আশা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার প্রমাণিত হয়েছে।—৩২ পৃষ্ঠায় “সমস্ত জাতির লোকেদের জন্য সুসমাচার” প্রবন্ধটি দেখুন।

“বিদেশীকে প্রেম করিও”

১৬. কীভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইয়েরা বিদেশিভাষী লোকেদের সাহায্য করার জন্য নিঃস্বার্থ মনোভাব প্রকাশ করতে পারে?

১৬ আমরা অন্য আরেকটা ভাষা শিখি বা না-ই শিখি, আমরা সকলে আমাদের এলাকায় বিদেশিদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেওয়ায় সাহায্য করতে পারি। যিহোবা তাঁর লোকেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, “বিদেশীকে প্রেম করিও।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৮, ১৯) উদাহরণস্বরূপ, উত্তর আমেরিকার একটা বড় শহরে পাঁচটা মণ্ডলী একই কিংডম হলে মিলিত হয়। অনেক হলের মতো সেখানেও প্রতি বছর সভার সময়ের পরিবর্তন হওয়ায় চাইনিজ সভাগুলো রবিবার রাতে পড়েছিল। কিন্তু এর অর্থ হবে, যে-অভিবাসীরা রেস্টুরেন্টের সঙ্গে যুক্ত কাজগুলো করে, তারা সভাতে যোগ দিতে পারবে না। অন্যান্য মণ্ডলীর প্রাচীনরা সদয়ভাবে রদবদল করেছিল, যাতে চাইনিজ সভাগুলো রবিবারে আগে হতে পারে।

১৭. কেউ যখন অন্য আরেকটা ভাষার দলকে সাহায্য করার জন্য কোনো জায়গায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমাদের কেমন বোধ করা উচিত?

১৭ প্রেমময় অধ্যক্ষরা সেইসমস্ত যোগ্য এবং দক্ষ ভাই ও বোনদের প্রশংসা করে, যারা আরেকটা ভাষার দলকে সাহায্য করার জন্য অন্য জায়গায় যায়। স্থানীয় মণ্ডলী হয়তো এই ধরনের অভিজ্ঞ বাইবেল শিক্ষকদের অভাব বোধ করতে পারে কিন্তু অধ্যক্ষরা লুস্ত্রা ও ইকনীয়ের প্রাচীনদের মতো একইরকম বোধ করে। সেই প্রাচীনরা তীমথিয়কে পৌলের সঙ্গে ভ্রমণ করতে বাধা দেয়নি যদিও তীমথিয় তাদের মণ্ডলীর জন্য এক মূল্যবান সম্পদ ছিলেন। (প্রেরিত ১৬:১-৪) অধিকন্তু, যারা প্রচার কাজে নেতৃত্ব নেয়, তারা বিদেশিদের ভিন্ন মনোভাব, প্রথা অথবা আচরণের দ্বারা নিরুৎসাহিত হয় না। এর পরিবর্তে, তারা বৈচিত্র্যকে মেনে নেয় এবং সুসমাচারের জন্য উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে বিভিন্ন পথ খুঁজে থাকে।—১ করিন্থীয় ৯:২২, ২৩.

১৮. কার্যসাধক কোন বৃহৎ দ্বার সকলের জন্য খোলা রয়েছে?

১৮ ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, সুসমাচার ‘জাতিগণের সর্ব্ব ভাষাবাদীর’ কাছে প্রচার করা হচ্ছে। বিদেশিভাষী ক্ষেত্রে এখনও বৃদ্ধির চমৎকার সম্ভাবনা রয়েছে। হাজার হাজার ফলবান প্রকাশক এমন ‘এক বৃহৎ দ্বারে’ প্রবেশ করেছে, যা “কার্য্যসাধক।” (১ করিন্থীয় ১৬:৯) কিন্তু এই ধরনের এলাকাগুলোকে কর্ষণ করার জন্য আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন, যা পরের প্রবন্ধে দেখা যাবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

^ আরও উদাহরণের জন্য ২০০৪ সালের ১লা এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৪-৮ পৃষ্ঠার “ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ত্যাগস্বীকার আমাদের জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে” প্রবন্ধটি দেখুন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• সকল লোকের প্রতি পক্ষপাতহীনতা দেখানোর ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি?

• আমাদের এলাকার সেই লোকেদের প্রতি আমাদের কেমন দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত, যারা আমাদের ভাষায় কথা বলে না?

• কেন লোকেদের কাছে তাদের মাতৃভাষায় প্রচার করা সাহায্যকারী?

• আমাদের মধ্যে থাকা বিদেশিদের জন্য কীভাবে আমরা চিন্তা দেখাতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার মানচিত্র/চিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

রোম

ক্রীতী

আশিয়া

ফরুগিয়া

পাম্ফলিয়া

পন্ত

কাপ্পাদকিয়া

মিসপতামিয়া

মাদীয়

পার্থীয়া

এলম

আরব

লুবিয়া

মিশর

যিহূদিয়া

যিরূশালেম

[জলরাশি]

ভূমধ্যসাগর

কৃষ্ণ সাগর

লোহিত সাগর

পারস্য উপসাগর

[চিত্র]

সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে, রোমীয় সাম্রাজ্যের ১৫টা অঞ্চল ও তার বাইরে থেকে আসা লোকেরা তাদের স্থানীয় ভাষায় সুসমাচার শুনেছে

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

অনেক বিদেশি বাইবেলের সত্যের প্রতি ভালভাবে সাড়া দেয়

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

একটা কিংডম হলে, কিংডম হল কথাটা পাঁচটা ভাষায় রয়েছে