সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কার আজ্ঞা পালন করেন—ঈশ্বরের নাকি মানুষের?

আপনি কার আজ্ঞা পালন করেন—ঈশ্বরের নাকি মানুষের?

আপনি কার আজ্ঞা পালন করেন—ঈশ্বরের নাকি মানুষের?

“মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।”—প্রেরিত ৫:২৯.

১. (ক) এই অধ্যয়নের মূল শাস্ত্রপদ কী? (খ) কেন প্রেরিতদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল?

 যিহুদি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা নিশ্চয়ই রেগে আগুন হয়ে গিয়েছিল। বন্দিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তারা ছিল সেই যিশু খ্রিস্টের প্রেরিতরা, যাঁকে কয়েক সপ্তাহ আগে উচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। এবার আদালত তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের বিষয়টা হাতে নিয়েছে। কিন্তু, রক্ষীরা যখন তাদের আনতে যায়, তখন তারা দেখতে পায় যে দরজাগুলো বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কারাকক্ষ খালি পড়ে রয়েছে। রক্ষীরা শীঘ্রই জানতে পারে যে, প্রেরিতরা যিরূশালেমের মন্দিরে রয়েছে আর সেখানে নির্ভয়ে যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে লোকেদের শিক্ষা দিচ্ছে—সেই একই কাজ করছে, যেজন্য তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল! রক্ষীরা সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরে গিয়ে প্রেরিতদের আবারও কারাগারে নিয়ে আসে এবং এরপর আদালতে নিয়ে যায়।—প্রেরিত ৫:১৭-২৭.

২. একজন স্বর্গদূত প্রেরিতদের কী করার আদেশ দিয়েছিলেন?

একজন স্বর্গদূত কারাগার থেকে প্রেরিতদের মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এটা কি তাদের আরও তাড়না থেকে নিষ্কৃতি দেওয়ার জন্য ঘটেছিল? না। এটা ঘটেছিল কারণ যিরূশালেমের অধিবাসীদের যিশু খ্রিস্ট বিষয়ক সুসমাচার শোনা উচিত। প্রেরিতদের প্রতি স্বর্গদূতের নির্দেশনা ছিল, তারা যেন ‘লোকদিগকে এই জীবনের সমস্ত কথা বলে।’ (প্রেরিত ৫:১৯, ২০) সেই কারণেই, মন্দিরের রক্ষীরা যখন প্রেরিতদের ধরতে এসেছিল, তখন তারা তাদের বাধ্যতার সঙ্গে সেই আদেশ পালন করতে দেখেছিল।

৩, ৪. (ক) যখন প্রচার বন্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তখন পিতর এবং যোহন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? (খ) অন্য প্রেরিতরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ দুজন প্রচারক, প্রেরিত পিতর ও যোহন আগেও আদালতে হাজির হয়েছিল কারণ প্রধান বিচারক যোষেফ কায়াফা তাদেরকে কড়াভাবে এ কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমরা তোমাদিগকে [যিশুর নামে] উপদেশ দিতে দৃঢ়রূপে নিষেধ করিয়াছিলাম; তথাপি দেখ, তোমরা আপনাদের উপদেশে যিরূশালেম পরিপূর্ণ করিয়াছ।” (প্রেরিত ৫:২৮) পিতর এবং যোহনকে পুনরায় আদালতে দেখে কায়াফার অবাক হওয়া উচিত ছিল না। কারণ প্রথমবার যখন তাদের প্রচার বন্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তখন এই দুজন প্রেরিত উত্তর দিয়েছিল: “ঈশ্বরের কথা অপেক্ষা আপনাদের কথা শুনা ঈশ্বরের সাক্ষাতে বিহিত কি না, আপনারা বিচার করুন; কারণ আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহা না বলিয়া থাকিতে পারি না।” প্রাচীন ভাববাদী যিরমিয়ের মতো, পিতর এবং যোহন প্রচার করার বিষয়ে তাদের দায়িত্ব পালন না করে থাকতে পারেনি।—প্রেরিত ৪:১৮-২০; যিরমিয় ২০:৯.

তবে এবার কেবল পিতর এবং যোহনই নয় কিন্তু—নতুন মনোনীত মত্তথিয়সহ—সমস্ত প্রেরিতের আদালতের আদেশ সম্বন্ধে প্রকাশ্যে নিজেদের মতামত ঘোষণা করার সুযোগ এসেছিল। (প্রেরিত ১:২১-২৬) যখন প্রচার বন্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তখন তারাও সাহসের সঙ্গে উত্তর দিয়েছিল: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।”প্রেরিত ৫:২৯.

ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন বনাম মানুষের আজ্ঞা পালন

৫, ৬. কেন প্রেরিতরা আদালতের আদেশ পালন করেনি?

প্রেরিতরা এমন আইনমান্যকারী ব্যক্তি ছিল, যারা সাধারণত আদালতের কোনো আদেশ অমান্য করত না। কিন্তু, যত ক্ষমতাবানই হোন না কেন, কোনো মানুষেরই অন্য আরেকজনকে ঈশ্বরের একটা আজ্ঞাও অমান্য করার আদেশ দেওয়ার অধিকার নেই। যিহোবা হলেন, “সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।” (গীতসংহিতা ৮৩:১৮) তিনি কেবল ‘সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তাই’ নন কিন্তু সেইসঙ্গে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাদাতা এবং যুগপর্যায়ের রাজা। আদালতের এমন যেকোনো আদেশ, যা ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোর একটাকেও বাতিল করার চেষ্টা করে, তা ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে অকার্যকর।—আদিপুস্তক ১৮:২৫; যিশাইয় ৩৩:২২.

এই বিষয়টা কয়েক জন সেরা আইন বিশেষজ্ঞ স্বীকার করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, অষ্টাদশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য ইংরেজ আইনবিদ উইলিয়াম ব্লাকস্টোন লিখেছিলেন যে, কোনো মনুষ্য আইনকে বাইবেলে প্রাপ্ত ‘প্রকাশিত আইনকে’ অস্বীকার করার অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়। তাই, মহাসভা যখন প্রেরিতদের প্রচার বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিল, তখন তা এর সীমা অতিক্রম করেছিল। প্রেরিতরা স্বাভাবিকভাবেই সেই আদেশ পালন করতে পারত না।

৭. কেন প্রচার কাজ দেখে প্রাধন যাজকরা ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল?

প্রচার চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রেরিতদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ মনোভাব দেখে প্রধান যাজকরা ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। কায়াফাসহ যাজকবর্গের কিছু সদস্য ছিল সদ্দূকী, যারা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করত না। (প্রেরিত ৪:১, ২; ৫:১৭) কিন্তু, প্রেরিতরা দৃঢ়তা সহকারে বলেই গিয়েছিল যে, যিশু মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন। অধিকন্তু, প্রধান যাজকদের মধ্যে কেউ কেউ রোমীয় কর্তৃপক্ষের অনুগ্রহ লাভ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। যিশুর বিচারের সময়, যিশুকে যখন রাজা হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তখন প্রধান যাজকরা এতটাই চরমে গিয়েছিল যে তারা চিৎকার করে বলেছিল: “কৈসর ছাড়া আমাদের অন্য রাজা নাই।” (যোহন ১৯:১৫) * প্রেরিতরা কেবল দৃঢ়তা সহকারে এই কথাই বলেনি যে, যিশু পুনরুত্থিত হয়েছিলেন কিন্তু তারা এও শিক্ষা দিয়েছিল যে, যিশুর নাম ব্যতীত “আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে।” (প্রেরিত ২:৩৬; ৪:১২) যাজকরা আশঙ্কা করেছিল যে, লোকেরা যদি পুনরুত্থিত যিশুকে তাদের নেতা হিসেবে দেখতে শুরু করে, তা হলে রোমীয়রা হয়তো আসতে পারে এবং এর ফলে যিহুদি নেতারা ‘তাহাদের স্থান ও জাতি উভয়ই’ হারাতে পারে।—যোহন ১১:৪৮.

৮. মহাসভাকে গমলীয়েল কোন বিজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছিলেন?

যিশু খ্রিস্টের প্রেরিতদের জন্য ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলেই মনে হয়েছিল। মহাসভার বিচারকরা তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিল। (প্রেরিত ৫:৩৩) কিন্তু, পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। শাস্ত্রে অভিজ্ঞ গমলীয়েল দাঁড়িয়ে তার সহকর্মীদের এত দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে সাবধান করেছিলেন। তিনি বিজ্ঞতার সঙ্গে বলেছিলেন: “এই মন্ত্রণা কিম্বা এই ব্যাপার যদি মনুষ্য হইতে হইয়া থাকে, তবে লোপ পাইবে; কিন্তু যদি ঈশ্বর হইতে হইয়া থাকে, তবে তাহাদিগকে লোপ করা তোমাদের সাধ্য নয়।” এরপর, গমলীয়েল তাৎপর্যপূর্ণ একটা বিষয় যুক্ত করেছিলেন, “কি জানি, দেখা যাইবে যে, তোমরা ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধ করিতেছ।”—প্রেরিত ৫:৩৪, ৩৮, ৩৯.

৯. কী প্রমাণ দিয়েছিল যে, প্রেরিতদের কাজ ঈশ্বরের কাছ থেকে ছিল?

আশ্চর্যের বিষয় যে, আদালত গমলীয়েলের পরামর্শ গ্রহণ করেছিল। মহাসভা “প্রেরিতদিগকে কাছে ডাকিয়া প্রহার করিলেন, এবং যীশুর নামে কোন কথা কহিতে নিষেধ করিয়া ছাড়িয়া দিলেন।” কিন্তু, ভয় পাওয়া তো দূরের কথা বরং প্রেরিতরা প্রচার করার বিষয়ে স্বর্গদূতের আদেশ পালন করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিল। তাই, ছাড়া পাওয়ার পর, “[প্রেরিতরা] প্রতিদিন ধর্ম্মধামে ও বাটীতে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না।” (প্রেরিত ৫:৪০, ৪২) যিহোবা তাদের প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেছিলেন। কতটা আশীর্বাদ করেছিলেন? “ঈশ্বরের বাক্য ব্যাপিয়া গেল, এবং যিরূশালেমে শিষ্যদের সংখ্যা অতিশয় বৃদ্ধি পাইতে লাগিল।” বস্তুতপক্ষে, “যাজকদের মধ্যে বিস্তর লোক বিশ্বাসের বশবর্ত্তী হইল।” (প্রেরিত ৬:৭) প্রধান যাজকদের জন্য সেটা নিশ্চয়ই কত হতাশাজনকই না ছিল! এই বিষয়ে অজস্র প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল: প্রেরিতদের কাজ সত্যিই ঈশ্বরের কাছ থেকে ছিল!

ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারীরা সফল হতে পারে না

১০. মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে কেন কায়াফা হয়তো তার অবস্থানে নিরাপদ বোধ করেছিলেন কিন্তু তার আস্থা কেন ভুল জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল?

১০ প্রথম শতাব্দীতে, যিহুদি মহাযাজকরা রোমীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিযুক্ত হতো। ভ্যালিরাস গ্র্যাটুস, ধনী ব্যক্তি যোষেফ কায়াফাকে তার পদে স্থাপন করেছিলেন আর কায়াফা তার পূর্বের অনেক ব্যক্তির চেয়ে বেশি সময় সেই পদে বহাল ছিলেন। কায়াফা এই সাফল্যকে ঐশিক হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য না করে সম্ভবত কূটনীতিক হিসেবে তার দক্ষতা এবং পীলাতের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর এর কৃতিত্ব আরোপ করেছিলেন। যা-ই হোক না কেন, মানুষের ওপর তার আস্থা ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। প্রেরিতরা মহাসভায় হাজির হওয়ার ঠিক তিন বছর পর, কায়াফা রোমীয় কর্তৃপক্ষের অনুগ্রহ হারিয়েছিলেন এবং মহাযাজকের পদ থেকে তাকে অপসারিত করা হয়েছিল।

১১. পন্তীয় পীলাত এবং যিহুদি বিধিব্যবস্থার কোন চূড়ান্ত পরিণতি ঘটেছিল এবং এটা থেকে আপনি কোন উপসংহারে আসতে পারেন?

১১ কায়াফাকে তার পদ থেকে অপসারিত করার আদেশ পীলাতের ঠিক ওপরের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি এবং সুরিয়ার দেশাধ্যক্ষ লুকিয়ুস ভিটেলিয়ুসের কাছ থেকে এসেছিল আর কায়াফার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পীলাত তা রোধ করতে পারেননি। বস্তুতপক্ষে, কায়াফার অপসারণের ঠিক এক বছর পরে, স্বয়ং পীলাতকেই তার পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং গুরুতর অভিযোগের জবাবদিহি করার জন্য তাকে রোমে ডেকে পাঠানো হয়। যে-যিহুদি নেতারা কৈসরের ওপর তাদের আস্থা স্থাপন করেছিল, ‘তাহাদের স্থান ও জাতি উভয়ই’ রোমীয়রা কেড়ে নিয়েছিল। এটা ঘটেছিল সা.কা. ৭০ সালে, যখন রোমীয় সৈন্যরা মন্দির এবং মহাসভাসহ যিরূশালেম নগরকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল। এই ক্ষেত্রে গীতরচকের এই কথাগুলো কতই না সত্য প্রমাণিত হয়েছিল: “তোমরা নির্ভর করিও না রাজন্যগণে, বা মনুষ্য-সন্তানে, যাহার নিকটে ত্রাণ নাই”!—যোহন ১১:৪৮; গীতসংহিতা ১৪৬:৩.

১২. যিশুর অবস্থা কীভাবে প্রমাণ দেয় যে, ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা প্রজ্ঞার কাজ?

১২ এর বৈসাদৃশ্যে, ঈশ্বর পুনরুত্থিত যিশু খ্রিস্টকে এক মহান আত্মিক মন্দিরের মহাযাজক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। কোনো মানুষই সেই নিয়োগকে বাতিল করতে পারে না। বস্তুতপক্ষে, যিশুর “যাজকত্ব অপরিবর্ত্তনীয়।” (ইব্রীয় ২:৯; ৭:১৭, ২৪; ৯:১১) এ ছাড়া, যিশুকে ঈশ্বর জীবিত ও মৃত সকলের ওপরে বিচারকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। (১ পিতর ৪:৫) সেই ক্ষমতায়, যিশু নির্ধারণ করবেন যে, যোষেফ কায়াফা অথবা পন্তীয় পীলাতের ভবিষ্যতে জীবন লাভ করার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না।—মথি ২৩:৩৩; প্রেরিত ২৪:১৫.

আধুনিক দিনের নির্ভীক রাজ্য প্রচারকরা

১৩. আধুনিক দিনে, কোন কাজ মানুষের কাছ থেকে এবং কোন কাজ ঈশ্বরের কাছ থেকে বলে প্রমাণিত হয়েছে? আপনি কীভাবে তা জানেন?

১৩ প্রথম শতাব্দীর মতো আমাদের দিনেও এমন ব্যক্তিদের অভাব নেই, যারা “ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধ” করে। (প্রেরিত ৫:৩৯) উদাহরণস্বরূপ, জার্মানির যিহোবার সাক্ষিরা যখন এডল্ফ হিটলারকে তাদের নেতা হিসেবে অভিবাদন করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন হিটলার তাদের নির্মূল করে দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন। (মথি ২৩:১০) তার সংগঠনকে ব্যবহার করে হত্যা করার যে-ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তা যথেষ্ট সফল বলেই মনে হয়েছিল। নাৎসিরা হাজার হাজার সাক্ষিকে ধরপাকড় করতে এবং তাদেরকে বিভিন্ন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠাতে সফল হয়েছিল। তারা এমনকি কিছু সাক্ষিকে হত্যা পর্যন্ত করেছিল। কিন্তু, নাৎসিরা একমাত্র ঈশ্বরকেই উপাসনা করার বিষয়ে সাক্ষিদের সংকল্পকে নষ্ট করতে এবং একটা দল হিসেবে ঈশ্বরের দাসদের নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এই খ্রিস্টানদের কাজ মানুষদের কাছ থেকে নয় বরং ঈশ্বরের কাছ থেকে ছিল আর ঈশ্বরের কাজ লোপ পেতে পারে না। হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা ষাট বছর পর এখনও ‘তাহাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, সমস্ত প্রাণ ও মন দিয়া’ যিহোবাকে সেবা করছে আর অন্যদিকে হিটলার এবং তার নাৎসি দলকে কেবল কুখ্যাতির জন্য স্মরণ করা হয়ে থাকে।—মথি ২২:৩৭.

১৪. (ক) ঈশ্বরের দাসদের অপবাদ দেওয়ার জন্য বিরোধীরা কোন প্রচেষ্টাগুলো করেছে আর এর ফল কী হয়েছে? (খ) এই প্রচেষ্টাগুলো কি ঈশ্বরের লোকেদের জন্য কোনো স্থায়ী ক্ষতি নিয়ে আসবে? (ইব্রীয় ১৩:৫, ৬)

১৪ নাৎসির শক্তিপ্রয়োগের সেই বছরগুলোতে, অন্যেরাও যিহোবা এবং তাঁর লোকেদের বিরুদ্ধে ব্যর্থ লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে। ইউরোপের বেশ কয়েকটা দেশে চতুর ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো যিহোবার সাক্ষিদের এক ‘বিপদজনক দল’ হিসেবে অপবাদ দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছে, সেই একই অভিযোগ যা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে করা হয়েছিল। (প্রেরিত ২৮:২২) প্রকৃত বিষয়টা হল, ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত যিহোবার সাক্ষিদেরকে একটা সম্প্রদায় হিসেবে নয় বরং একটা ধর্ম হিসেবে স্বীকার করেছে। বিরোধীরা নিশ্চয়ই তা জানে। তবুও, তারা সাক্ষিদের অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ভুল বর্ণনার প্রত্যক্ষ ফল হল, এই খ্রিস্টানদের মধ্যে কাউকে কাউকে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাক্ষি ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন স্কুলে হয়রানি করা হয়েছে। ভীতু প্রকৃতির বাড়িওয়ালারা সেই বিল্ডিংগুলোর জন্য তাদের চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে, যেগুলো সাক্ষিরা অনেক বছর ধরে সভার স্থান হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, কেবল যিহোবার সাক্ষি বলে সরকারি প্রতিনিধিরা কারো কারো নাগরিকত্ব এমনকি অস্বীকার করেছে। তা সত্ত্বেও, সাক্ষিরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েনি।

১৫, ১৬. ফ্রান্সে যিহোবার সাক্ষিরা তাদের খ্রিস্টীয় কাজে আসা বিরোধিতার প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং কেন তারা প্রচার করে চলেছে?

১৫ উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সে লোকেরা সাধারণত যুক্তিবাদী এবং নিরপেক্ষ মনের হয়ে থাকে। কিন্তু, কিছু বিরোধী ব্যক্তি রাজ্যের কাজে বাধা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আইন তৈরি করেছে। যিহোবার সাক্ষিরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে? তারা ক্ষেত্রে তাদের কাজকে আগের চেয়ে আরও জোরদার করেছে আর এর ফল হয়েছে রোমাঞ্চকর। (যাকোব ৪:৭) মাত্র ছয় মাসে সেই দেশে বাইবেল অধ্যয়নের সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে! ফ্রান্সের সৎহৃদয়ের লোকেদের সুসমাচারের প্রতি সাড়া দিতে দেখা দিয়াবলকে নিশ্চয়ই ক্রুদ্ধ করেছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) ফ্রান্সে আমাদের সহখ্রিস্টানদের এই আস্থা রয়েছে যে, যিশাইয় ভাববাদীর এই কথাগুলো তাদের ক্ষেত্রে সত্য প্রমাণিত হবে: “যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না; যে কোন জিহ্বা বিচারে তোমার প্রতিবাদিনী হয়, তাহাকে তুমি দোষী করিবে।”—যিশাইয় ৫৪:১৭.

১৬ যিহোবার সাক্ষিরা তাড়িত হয়ে আনন্দ পায় না। কিন্তু, সমস্ত খ্রিস্টানের উদ্দেশে ঈশ্বরের আদেশের প্রতি বাধ্য হওয়ায় তারা যে-বিষয়গুলো শিখেছে, তা না বলে থাকতে পারে না এবং থাকবে না। তারা উত্তম নাগরিক হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু, যেখানে ঈশ্বরের আইন এবং মানুষের আইনের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়, সেখানে তারা অবশ্যই ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করে।

তাদেরকে ভয় পাবেন না

১৭. (ক) কেন আমাদের শত্রুদের ভয় পাওয়ার দরকার নেই? (খ) তাড়নাকারীদের প্রতি আমাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত?

১৭ আমাদের শত্রুরা অত্যন্ত বিপদজনক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তাই, যিশুর আদেশের সঙ্গে মিল রেখে তাদেরকে ভয় পাওয়ার পরিবর্তে যারা আমাদের তাড়না করে, তাদের জন্য আমরা প্রার্থনা করি। (মথি ৫:৪৪) আমরা প্রার্থনা করি যে, কেউ যদি অজ্ঞানতাবশত ঈশ্বরের বিরোধিতা করে থাকে, যেমনটা তার্ষের শৌল করেছিলেন, তা হলে যিহোবা সদয়ভাবে সত্যের প্রতি তাদের চক্ষু খুলে দেবেন। (২ করিন্থীয় ৪:৪) শৌল খ্রিস্টান প্রেরিত পৌল হয়েছিলেন এবং তার দিনের কর্তৃপক্ষের হাতে অনেক কষ্ট ভোগ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি সহবিশ্বাসীদের স্মরণ করিয়েই চলেছিলেন, “যেন তাহারা আধিপত্যের ও কর্ত্তৃত্বের বশীভূত হয়, বাধ্য হয়, সর্ব্বপ্রকার সৎক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হয়, কাহারও নিন্দা না করে [না, এমনকি তাহাদের সবচেয়ে প্রচণ্ড তাড়নাকারীদেরকেও নয়], নির্ব্বিরোধ ও ক্ষান্তশীল হয়, সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা দেখায়।” (তীত ৩:১, ২) ফ্রান্স এবং অন্যান্য জায়গার যিহোবার সাক্ষিরা এই পরামর্শ কাজে লাগানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে।

১৮. (ক) কোন কোন উপায়ে হয়তো যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করবেন? (খ) চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে?

১৮ ঈশ্বর, ভাববাদী যিরমিয়কে বলেছিলেন: “তোমার উদ্ধারার্থে আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (যিরমিয় ১:৮) কীভাবে আজকে যিহোবা আমাদেরকে তাড়না থেকে উদ্ধার করতে পারেন? তিনি হয়তো গমলীয়েলের মতো নিরপেক্ষ এক বিচারকের উত্থাপন করতে পারেন। অথবা তিনি হয়তো এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে পারেন যে, কলুষিত এবং বিরোধী কর্মকর্তার জায়গায় অপ্রত্যাশিতভাবে যেন আরও যুক্তিবাদী কোনো ব্যক্তি আসেন। তবে, মাঝে মাঝে যিহোবা হয়তো তাঁর লোকেদের প্রতি তাড়না ঘটতে দেন। (২ তীমথিয় ৩:১২) ঈশ্বর যদি আমাদেরকে তাড়িত হতে দেন, তা হলে তিনি সবসময় আমাদের সেই তাড়না সহ্য করার শক্তি দেবেন। (১ করিন্থীয় ১০:১৩) আর ঈশ্বর যা-ই ঘটতে দিন না কেন, চূড়ান্ত পরিণতি সম্বন্ধে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই: যারা ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারীরা জয়ী হতে পারবে না।

১৯. দুহাজার ছয় সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ কী এবং কেন তা উপযুক্ত?

১৯ যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন যে, ক্লেশ ঘটবেই। (যোহন ১৬:৩৩) এই পরিপ্রেক্ষিতে, প্রেরিত ৫:২৯ পদে লিপিবদ্ধ কথাগুলো আর কখনো এত সময়োপযোগী হয়নি: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।” সেই কারণে এই রোমাঞ্চকর কথাগুলো ২০০৬ সালের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। যেকোনো মূল্যেই হোক, আসন্ন বছর এবং চিরকাল ধরে ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করাই যেন আমাদের সংকল্প হয়।

[পাদটীকা]

^ সেই সময়ে যে-‘কৈসরকে’ প্রধান যাজকরা জনসমক্ষে সমর্থন করেছিল, তিনি ছিলেন ঘৃণ্য রোমীয় সম্রাট তিবিরিয়, যিনি ছিলেন একজন কপট এবং খুনী। এ ছাড়া, তিবিরিয় তার নোংরা যৌন অভ্যাসের জন্যও পরিচিত ছিলেন।—দানিয়েল ১১:১৫, ২১.

আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?

• প্রেরিতরা যেভাবে বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল, তার দ্বারা আমাদের জন্য তারা কোন উৎসাহজনক উদাহরণ স্থাপন করেছে?

• কেন আমাদের সবসময় মানুষদের চেয়ে বরং ঈশ্বর আজ্ঞা পালন করা উচিত?

• আমাদের বিরোধীরা আসলে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে?

• যারা তাড়না ভোগ করছে, তাদের জন্য কোন ফলাফল আমরা আশা করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

২০০৬ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হবে: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।”—প্রেরিত ৫:২৯.

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

“মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে”

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

কায়াফা ঈশ্বরের ওপর আস্থা স্থাপন না করে বরং মানুষের ওপর স্থাপন করেছিলেন