বড়দিনের সময় এর মূলে কী রয়েছে?
বড়দিনের সময় এর মূলে কী রয়েছে?
লক্ষ লক্ষ লোকের কাছে ছুটির মরসুম হল, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার, নতুন করে স্নেহের বন্ধনকে জোড়া লাগানোর এক সময়। আবার অনেকে এটাকে যিশু খ্রিস্টের জন্ম এবং মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য তাঁর ভূমিকা সম্বন্ধে চিন্তা করার সময় বলে মনে করে। অন্যান্য অনেক দেশের মতো, রাশিয়ার লোকেদের সবসময় বড়দিন উদ্যাপন করার অনুমতি ছিল না। যদিও কয়েক শতাব্দী ধরে রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জার সদস্যরা খোলাখুলিভাবে বড়দিন উদ্যাপন করেছিল কিন্তু বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ সময়েই তাদেরকে তা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই পরিবর্তনের কারণ কী ছিল?
১৯১৭ সালে বলশেভিক সাম্যবাদী বিপ্লবের কিছু পরই সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ রাজ্যব্যাপী নাস্তিকতার এক আগ্রাসী পন্থা বলবৎ করে। বড়দিনের ছুটির মরসুম ও সেইসঙ্গে এর ধর্মীয় তাৎপর্য সমস্তকিছুই অনুমোদন হারিয়ে ফেলে। রাজ্য বড়দিন এবং নববর্ষ উদ্যাপনের বিরুদ্ধে এক প্রচার অভিযান শুরু করে। এমনকি সেই মরসুমের স্থানীয় প্রতীকগুলোকেও খোলাখুলিভাবে নিন্দা করা হয় যেমন, ক্রিসমাস ট্রি এবং ডিয়েড মোরোজ অথবা হিম দাদু—স্যান্টা ক্লজকে রাশিয়ায় এই নামে ডাকা হয়।
১৯৩৫ সালে এমন এক পরিবর্তন ঘটে, যা রাশিয়ার লোকেরা যেভাবে ছুটির মরসুম উদ্যাপন করত, সেটাকে একেবারে পালটে দিয়েছিল। সোভিয়েতের লোকেরা হিম দাদু, ক্রিসমাস ট্রি এবং নববর্ষের উদ্যাপন পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেছিল—তবে সেগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন ছিল। বলা হয়েছিল যে, হিম দাদু বড়দিনের সময়ে নয় কিন্তু নববর্ষের দিনে উপহার নিয়ে আসবেন। একইভাবে, কোনো ক্রিসমাস ট্রি থাকবে না। সেটা হবে নিউ ইয়ারস্ ট্রি! এভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নে বড়দিনের মূলে যে-বিষয়টা ছিল, তাতে বিরাট পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল। আসলে, বড়দিনের পরিবর্তে নববর্ষ উদ্যাপন করা হতো।
বড়দিনের মরসুম পুরোপুরিভাবে জাগতিক উৎসবমুখর উপলক্ষ হয়ে উঠেছিল, সেটা সরকারিভাবে কোনো ধর্মীয় তাৎপর্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। নিউ ইয়ারস্ ট্রি-কে ধর্মীয় সরঞ্জামাদি দিয়ে নয় কিন্তু জাগতিক সেই সরঞ্জামগুলো দিয়ে সাজানো হতো, যেগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের অগ্রগতিকে চিত্রিত করত। রাশিয়ার সংবাদপত্র ভাকরুগ স্ভিতা (পৃথিবীব্যাপী) ব্যাখ্যা করে: “সোভিয়েত যুগে নিউ ইয়ারস্ ট্রি-কে বিভিন্ন বছরে যেভাবে সাজানো হয়েছিল, সেটার দ্বারা সাম্যবাদী সমাজ কখন প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেছিল তার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া সম্ভব। সাধারণভাবে খরগোশ ছানা, তুষার শলাকা এবং গোলাকৃতি রুটি দিয়ে সাজানো ছাড়াও, কাস্তে, হাতুড়ি এবং ট্র্যাক্টরের আকৃতির সরঞ্জামাদিও উৎপাদন করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এগুলোর পরিবর্তে, খনিশ্রমিক ও নভোচারী, তেলকূপ খননের কাঠামো ও যন্ত্রপাতি, রকেট ও চন্দ্রযানের আকৃতির সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হয়।
বড়দিন সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়? এটা নিশ্চিত যে, সেটাকে আর স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এর পরিবর্তে, সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ এটাকে এক সাধারণ ছুটির দিনের মর্যাদা দিয়ে ছোট করেছিল। যারা বড়দিনের ধর্মীয় উদ্যাপন পালন করে যেতে চেয়েছিল, তারা লুকিয়ে লুকিয়ে, সরকারের অসন্তোষ এবং অপ্রীতিকর পরিণতিগুলোর ঝুঁকি নিয়েই কেবল তা করতে পারত। হ্যাঁ, বিংশ শতাব্দীতে ছুটির মরসুমের মূলে যা ছিল, তাতে পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল আর তা ছিল ধর্মীয় উদ্যাপন থেকে জাগতিক উদ্যাপনে পরিবর্তিত হওয়া।
আরও সাম্প্রতিক এক পরিবর্তন
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায় এবং লোকেরা আরও স্বাধীনতা লাভ করে। রাষ্ট্রীয় নাস্তিকতার পন্থার বিলুপ্তি ঘটে। গির্জা এবং
রাষ্ট্র পৃথক হয়ে যাওয়ায়, নবপ্রতিষ্ঠিত স্বাধীন রাজ্যগুলোর অধিকাংশেরই ধর্মের সঙ্গে কোনো লেনদেন ছিল না। অনেক ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি মনে করেছিল যে, তারা এখন তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসরণ করতে পারবে। তারা যুক্তি দেখিয়েছিল যে, একটা উপায়ে তারা তা করতে পারবে আর সেটা হল ধর্মীয় ছুটির দিন, বড়দিন উদ্যাপন করে। কিন্তু, এই ধরনের অনেক ব্যক্তি শীঘ্রই হতাশ হয়ে পড়েছিল। কেন?বছর গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ছুটির দিন আরও বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছে। বস্তুতপক্ষে, পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মতো বড়দিনের মরসুম উৎপাদনকারী, পাইকারি বিক্রেতা এবং বণিকদের জন্য টাকাপয়সা আয় করার সবচেয়ে উত্তম উপায় হয়ে উঠেছে। বড়দিনের সাজসজ্জা বিভিন্ন সরঞ্জামের দোকানগুলোর সামনে এমনভাবে সাজিয়ে রাখা হয় যে, সেগুলোতে লোকেদের চোখ পড়বেই। পাশ্চাত্যের ধাঁচের বড়দিনের সংগীত এবং কীর্তন, যা আগে রাশিয়ায় অপরিচিত ছিল, এখন দোকানে দোকানে শোনা যায়। বিক্রেতারা বড়দিনের টুকিটাকি জিনিসপত্রে ভরা বিরাট ব্যাগ নিয়ে নিত্যদিনের ট্রেনগুলোতে এবং অন্যান্য জনসাধারণ্যের যানবাহনে তাদের জিনিসপত্র বিক্রি করে। বর্তমানে, আপনি এই দৃশ্যই দেখতে পাবেন।
এমনকি যারা এই ধরনের পুরোদস্তুর ব্যবসায়িক মনোভাবের মধ্যে দোষের কিছু দেখে না, তারাও হয়তো এই মরসুমের আরেকটা বিরক্তিকর দিক দেখে চিন্তিত হতে পারে—মদের অপব্যবহার ও সেইসঙ্গে এর ভয়াবহ পরিণতিগুলো। মস্কোর একটা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একজন ডাক্তার ব্যাখ্যা করেছিলেন: “ডাক্তাররা ভালভাবেই জানে যে, নববর্ষ উদ্যাপন মানে এমন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, যারা হয় গাড়ির ধাক্কায় আঘাত পেয়েছে বা ছুরি বিদ্ধ হয়েছে কিংবা বুলেট দ্বারা আহত হয়েছে আর এগুলোর বেশির ভাগই ঘরোয়া যুদ্ধ, মাতাল অবস্থায় ঝগড়াঝাঁটি করার এবং গাড়ি দুর্ঘটনার কারণে হয়ে থাকে।” রাশিয়ান একাডেমি অভ্ সাইন্সেস এর একটা শাখার একজন উচ্চপদস্থ বিজ্ঞানী বলেছিলেন: “মদ্যপান সংক্রান্ত মৃত্যুর হার আকস্মিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা বিশেষ করে ২০০০ সালে সবচেয়ে বেশি ছিল। সেইসঙ্গে আত্মহত্যা এবং খুনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।”
দুঃখের বিষয় যে, রাশিয়ায় ছুটির মরসুমে এইরকম যেকোনো আচরণ আরেকটা কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। “রাশিয়ার লোকেরা দুবার বড়দিন উদ্যাপন করে” শিরোনামের মধ্যে ইজভিসতিয়া সংবাদপত্র রিপোর্ট করে: “রাশিয়ার প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় একজন লোক দুবার বড়দিন উদ্যাপন করে। রাশিয়ান পাবলিক ওপিনিয়ন এন্ড মারকেট রিসার্চ এক্রোনিম (ROMIR) পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সমীক্ষা প্রমাণ দেয় যে, উত্তরদাতাদের মধ্যে শতকরা ৮ জন স্বীকার করেছে যে, তারা ক্যাথলিকদের বড়দিনের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫শে ডিসেম্বর রাতে এবং অর্থোডক্সদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৭ই জানুয়ারি, দুবারই বড়দিন উদ্যাপন করে থাকে . . . স্পষ্টতই, কারো কারো কাছে বড়দিনের ধর্মীয় তাৎপর্য নয় বরং উদ্যাপন করার সুযোগটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা তা পালন করে থাকে।” *
সাম্প্রতিক উদ্যাপনের মূলে যা রয়েছে, তা কি সত্যিই খ্রিস্টের সম্মান আনে
স্পষ্টতই, ছুটির মরসুমের সঙ্গে অনেক ভক্তিহীন আচরণ যুক্ত রয়েছে। এটা লোকেদের চিন্তিত করে যার ফলে কেউ কেউ হয়তো মনে করে যে, ঈশ্বর এবং খ্রিস্টের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের উদ্যাপনগুলো করা উচিত। ঈশ্বরকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষা প্রশংসনীয়। কিন্তু, ঈশ্বর এবং খ্রিস্ট কি সত্যিই বড়দিনের মরসুমের জন্য আনন্দিত? এর উৎস কোথায় সেটা সম্বন্ধে চিন্তা করুন।
উদাহরণস্বরূপ, বড়দিনকে সোভিয়েতের লোকেরা যেভাবে দেখে থাকে, সেটা সম্বন্ধে একজনের দৃষ্টিভঙ্গি যা-ই থাকুক না কেন, নীচে দেওয়া এই ঐতিহাসিক তথ্যের বিরুদ্ধে তর্ক করা কঠিন হবে, যেগুলো মহান সোভিয়েত বিশ্বকোষ (ইংরেজি) বইয়ে উল্লেখিত রয়েছে: “বড়দিনকে . . . প্রাক্খ্রিস্টীয় সেই দেবতাদের উপাসনা থেকে ধার করে নেওয়া হয়েছিল, যারা ‘মারা যায় এবং মৃত্যু থেকে উত্থাপিত হয়’, যে-উপাসনা বিশেষ করে সেই কৃষকদের মধ্যে প্রচলিত ছিল, যারা সাধারণত ২১-২৫শে ডিসেম্বর মকরক্রান্তির সময়ের মধ্যে পড়ত এমন সময়ে, বছরে একবার ঈশ্বরের সেই পরিত্রাতার ‘জন্ম’ উদ্যাপন করত, যিনি প্রকৃতিকে নবজাগরিত করেন।”
সেই বিশ্বকোষ সঠিকভাবে যে-বিষয়টাকে তুলে ধরে, সেটাকে আপনি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতে পারেন: “প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টধর্ম বড়দিন উদ্যাপন সম্বন্ধে জানত না। . . . চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে, খ্রিস্টধর্ম মিথরার উপাসনা থেকে মকরক্রান্তির উদ্যাপনের রীতিনীতি গ্রহণ করেছিল, সেগুলোকে বড়দিন পালন করার নাম দেওয়া হয়েছিল। প্রথম যারা বড়দিন উদ্যাপন করেছিল, তারা ছিল রোমের ধর্মীয় সমাজ। দশম শতাব্দীতে, বড়দিন ও সেইসঙ্গে খ্রিস্টধর্ম, রাশিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছিল, যেখানে সেটাকে প্রাচীন স্লাভের শীতকালীন উদ্যাপনের সঙ্গে পালন করা হতো আর সেটা পূর্বপুরুষদের আত্মাকে সম্মান দেখিয়ে করা হতো।”
আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল, ২৫শে ডিসেম্বর যিশুর জন্মগ্রহণ করার বিষয়ে কী বলে?’ আসলে, বাইবেল যিশুর জন্মের নির্দিষ্ট তারিখ সম্বন্ধে কিছুই জানায় না এবং এমন কোনো রেকর্ডও নেই যে, যিশু নিজে এই বিষয়ে কিছু বলেছিলেন আর তা উদ্যাপন করতে বলা তো দূরের কথা। কিন্তু, বাইবেল আমাদের নির্ধারণ করতে সাহায্য করে যে, যিশু বছরের কোন সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মথির সুসমাচারের ২৬ এবং ২৭ অধ্যায় অনুসারে যিশুকে ১৪ই নিশান, যিহুদি নিস্তারপর্বের দিনের শেষে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা সা.কা. ৩৩ সালের ৩১শে মার্চে শুরু হয়েছিল। লূকের সুসমাচার থেকে আমরা জানতে পারি যে, যিশু যখন বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন এবং তাঁর পরিচর্যা শুরু করেছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৩০ বছর। (লূক ৩:২১-২৩) সেই পরিচর্যা সাড়ে তিন বছর ধরে চলেছিল। তাই, যিশু যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন তার বয়স প্রায় সাড়ে ৩৩ বছর ছিল। সা.কা. ৩৩ সালের ১লা অক্টোবরে তাঁর বয়স ৩৪ হওয়ার কথা ছিল। লূক জানান যে, যিশুর জন্মের সময়ে মেষপালকরা “মাঠে অবস্থিতি করিতেছিল, এবং রাত্রিকালে আপন আপন পাল চৌকি দিতেছিল।” (লূক ২:৮) মেষপালকরা নিশ্চয়ই ডিসেম্বরের শীতে তাদের পাল নিয়ে বাইরে ছিল না, যে-সময়ে বৈৎলেহমের আশেপাশে এমনকি তুষারপাতও হয়। কিন্তু, তারা প্রায় ১লা অক্টোবরের দিকে তাদের পাল নিয়ে মাঠে থাকতে পারে, যে-সময়ে প্রমাণ অনুযায়ী বলা যায় যে, যিশু জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
প্রসঙ্গ অনুযায়ী, নববর্ষ উদ্যাপনের বিষয়ে কী বলা যায়? আমরা যেমন দেখেছি যে, এটা নোংরা আচরণে পূর্ণ। একে সরকারি
স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও এরও সন্দেহজনক উৎস রয়েছে।স্পষ্টতই, ছুটির মরসুমের সঙ্গে যুক্ত তথ্যগুলোর আলোকে, এই ধরনের স্লোগান অর্থহীন যেমন, এই মরসুম যিশু খ্রিস্টের ওপর কেন্দ্রীভূত। আপনি যদি বড়দিনের মরসুমের সঙ্গে যুক্ত বাণিজ্যিক মনোভাব এবং বিরক্তিকর আচরণ ও সেইসঙ্গে এটার অপ্রীতিকর পৌত্তলিক উৎস দেখে চিন্তিত হন, তা হলে নিরুৎসাহিত হবেন না। এমন এক উপযুক্ত উপায় আছে, যার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের প্রতি উপযুক্ত শ্রদ্ধা দেখাতে ও খ্রিস্টকে সম্মান করতে এবং একইসঙ্গে আমাদের পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করতে পারি।
ঈশ্বর এবং খ্রিস্টকে সম্মান দেখানোর এক উত্তম উপায়
বাইবেল আমাদের বলে যে, যিশু খ্রিস্ট “অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে” এসেছিলেন। (মথি ২০:২৮) তিনি মৃত্যুদণ্ড মেনে নিয়েছিলেন, আমাদের পাপের জন্য স্বেচ্ছায় মারা গিয়েছিলেন। কেউ কেউ হয়তো খ্রিস্টকে সম্মান দেখাতে চায়, এইরকম মনে করে যে বড়দিনের মরসুমে তারা তা করতে পারে। কিন্তু আমরা যেমন দেখেছি, বড়দিন এবং নববর্ষের সঙ্গে খ্রিস্টের কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে এবং এগুলোর উদ্যাপনের উৎস হল পৌত্তলিক। এ ছাড়া, বড়দিনের মরসুম যদিও কারো কারো কাছে আকর্ষণীয় কিন্তু এটা পুরোপুরিভাবে বাণিজ্যিক। সেইসঙ্গে এটাও স্বীকার করা আবশ্যক যে, বড়দিনের ছুটির দিনের সঙ্গে এমন লজ্জাজনক আচরণ যুক্ত, যা ঈশ্বর এবং খ্রিস্টকে অখুশি করে।
যে-ব্যক্তি ঈশ্বরকে খুশি করার চেষ্টা করেন, তার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? মানুষের তৈরি রীতিনীতি যেগুলো হয়তো ধর্মপরায়ণ মনোভাব জাগাতে পারে অথচ শাস্ত্রের বিপরীত, সেগুলো পালন না করে চলে বরং একজন অকপট ব্যক্তি ঈশ্বর এবং খ্রিস্টকে সম্মান দেখানোর সঠিক উপায়টা খোঁজার চেষ্টা করবেন। সঠিক উপায়টা কী এবং আমাদের কী করা উচিত?
খ্রিস্ট নিজে আমাদের বলেছেন: “এটাই অনন্তজীবন যে, তারা তোমার, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বর সম্বন্ধে এবং সেই ব্যক্তি যাঁকে তুমি পাঠিয়েছ অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে জ্ঞান নেয়।” (যোহন ১৭:৩, NW) হ্যাঁ, প্রকৃত সৎহৃদয়ের ব্যক্তি ঈশ্বর এবং খ্রিস্টকে যেভাবে সম্মান দেখানো যায়, সেই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এরপর তিনি সেই জ্ঞানকে কাজে লাগান আর তা শুধু বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়েই নয় কিন্তু রোজকার জীবনে। ঈশ্বর এইরকম আন্তরিক প্রচেষ্টা দেখে খুশি হোন, যা অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
আপনি কি আপনার পরিবারকে সেই লোকেদের মধ্যে দেখে খুশি হবেন, যারা সত্যিই ঈশ্বর ও খ্রিস্টকে শাস্ত্রের সঙ্গে মিল রেখে সম্মান দেখায়? যিহোবার সাক্ষিরা সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ পরিবারকে বাইবেল থেকে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানটি নিতে সাহায্য করেছে। আমরা আপনার এলাকার যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অথবা এই পত্রিকার ২ পৃষ্ঠায় দেওয়া যেকোনো উপযুক্ত ঠিকানায় তাদেরকে চিঠি লেখার জন্য উষ্ণ আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
[পাদটীকা]
^ ১৯১৭ সালে অক্টোবর মাসের বিপ্লবের আগে, রাশিয়া পুরনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করত কিন্তু অধিকাংশ দেশ সেটার পরিবর্তে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে শুরু করে। ১৯১৭ সালে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের চেয়ে ১৩ দিন পিছনে ছিল। বিপ্লবের পরে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিল রেখে সোভিয়েতের লোকেরা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার বাদ দিয়ে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে শুরু করে। কিন্তু, অর্থোডক্স গির্জা তাদের উদ্যাপনের জন্য জুলিয়ান ক্যালেন্ডারই ব্যবহার করতে থাকে আর সেটাকে “পুরনো ধাঁচের” ক্যালেন্ডার নামে আখ্যায়িত করে। আপনি হয়তো শুনতে পারেন যে, রাশিয়ায় ৭ই জানুয়ারি বড়দিন উদ্যাপিত হয়। কিন্তু মনে রাখবেন যে, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সেই ৭ই জানুয়ারি হল জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ২৫শে ডিসেম্বর। তাই, রাশিয়ার অনেক লোক তাদের ছুটির মরসুমকে এভাবে উদ্যাপন করে: ২৫শে ডিসেম্বর, পাশ্চাত্যের বড়দিন; ১লা জানুয়ারি, সরকারি নববর্ষ; ৭ই জানুয়ারি, অর্থোডক্সদের বড়দিন; ১৪ই জানুয়ারি, পুরনো ধাঁচের নববর্ষ।
[৭ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
নববর্ষ উদ্যাপনের উৎস
একজন গ্রেগরিয়ান অর্থোডক্স ভিক্ষু সাহসের সঙ্গে তার মন্তব্য ব্যক্ত করেন
“নববর্ষের ছুটির দিনের উৎস হচ্ছে প্রাচীন রোমের বেশ কয়েকটা পৌত্তলিক ছুটির দিন। ১লা জানুয়ারি ছিল পৌত্তলিক দেবতা জেনাসের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত এক ছুটির দিন এবং জানুয়ারি মাসের নাম তার নাম থেকে এসেছে। জেনাসের মূর্তির দুদিকে মুখ রয়েছে, যার অর্থ হল যে সে অতীত এবং বর্তমান উভয়ই দেখতে পারে। কথিত ছিল যে, যারা ১লা জানুয়ারিকে মজা, হাসিতামাশা এবং প্রাচুর্যের সঙ্গে গ্রহণ করবে, তাদের সারা বছর সুখেশান্তিতে কাটবে। আমাদের অনেক সহনাগরিকের নববর্ষ উদ্যাপনের সঙ্গেও এই একই কুসংস্কার যুক্ত রয়েছে। . . . নির্দিষ্ট কিছু পৌত্তলিক ছুটির দিনে লোকেরা দেবতার উদ্দেশে সরাসরি বলি উৎসর্গ করে। কিছু কিছু ছুটির দিন অনৈতিক ধর্মানুষ্ঠান, পারদারিকতা এবং ব্যভিচারের জন্য কুখ্যাত। অন্যান্য সময়ে, উদাহরণস্বরূপ, জেনাসের ছুটির দিনে মাত্রাতিরিক্ত ভোজন, মদ্যপান করা হয় এবং সব ধরনের অশুচিতা এগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। অতীতে আমরা যেভাবে নববর্ষ উদ্যাপন করেছি, তা যদি আমরা স্মরণ করি, তা হলে আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, আমরা সকলে এই পৌত্তলিক উদ্যাপনে অংশগ্রহণ করেছি।”—একটি গ্রেগরিয়ান খবরের কাগজ।
[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রিস্টীয়জগৎ মিথরার উপাসনাকে গ্রহণ করেছিল
[সৌজন্যে]
Museum Wiesbaden
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
মেষপালকরা নিশ্চয়ই ডিসেম্বরের শীতে তাদের পাল নিয়ে বাইরে ছিল না