সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করা আমাদের রক্ষা করবে

ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করা আমাদের রক্ষা করবে

ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করা আমাদের রক্ষা করবে

“কিন্তু তোমরা প্রথমে . . . [ঈশ্বরের] ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।”—মথি ৬:৩৩.

১, ২. একজন খ্রিস্টান যুবতী কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং কেন সে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল?

 এশিয়ার একজন খ্রিস্টান যুবতী এক সরকারি অফিসে একজন সচিব হিসেবে কাজ করত। সে কঠোর পরিশ্রমী ছিল, সময়ের আগেই কাজে আসত এবং তার কাজে গড়িমসি করত না। কিন্তু, তার পদ যেহেতু স্থায়ী ছিল না, তাই পুনরায় মূল্যায়ন করার সময় এসেছিল। সেই যুবতীর বিভাগীয় প্রধান বলেছিলেন যে, তিনি তাকে চাকরিতে স্থায়ীভাবে রাখবেন এবং তাকে আরও উচ্চপদ দেবেন, যদি সেই যুবতী তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। সেই যুবতী সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেছিল, যদিও এর মানে ছিল তার চাকরি চলে যাওয়া।

সেই খ্রিস্টান যুবতী কি অবাস্তববাদী ছিল? না, সে মনোযোগপূর্বক যিশুর কথাগুলো মেনে চলেছিল: “কিন্তু তোমরা প্রথমে . . . [ঈশ্বরের] ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।” (মথি ৬:৩৩) তার জন্য ধার্মিক নীতিগুলো মেনে চলা, যৌন অনৈতিকতার মাধ্যমে সুবিধা নেওয়ার চেয়ে আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।—১ করিন্থীয় ৬:১৮.

ধার্মিকতার গুরুত্ব

৩. ধার্মিকতা কী?

‘ধার্ম্মিকতা’ শব্দটি নৈতিক নীতিনিষ্ঠা ও সততাপূর্ণ এক অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। বাইবেলে এই শব্দটির জন্য গ্রিক ও ইব্রীয় শব্দগুলো “সরলতা” বা ‘ন্যায়নিষ্ঠতার’ ধারণা বহন করে। এটা আত্মধার্মিকতা নয় অর্থাৎ একজনকে নিজের মানগুলোর দ্বারা বিচার করা নয়। (লূক ১৬:১৫) এটা হল যিহোবার মান অনুযায়ী ন্যায়নিষ্ঠতা। এটা হচ্ছে ঈশ্বরের ধার্মিকতা।—রোমীয় ১:১৭; ৩:২১.

৪. কেন ধার্মিকতা একজন খ্রিস্টানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

ধার্মিকতা কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ তাঁর লোকেরা যখন ধার্মিকতা অনুযায়ী চলে, তখন “ধার্ম্মিকতার ঈশ্বর” যিহোবা, তাদের প্রতি অনুগ্রহ দেখান। (গীতসংহিতা ৪:১; হিতোপদেশ ২:২০-২২; হবক্‌কূক ১:১৩) যে-ব্যক্তি অধার্মিকতার কাজ করে, তার ঈশ্বরের সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক থাকতে পারে না। (হিতোপদেশ ১৫:৮) সেই কারণে প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে জোরালোভাবে অনুরোধ করেছিলেন: “তুমি যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন কর” এবং অন্যান্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলির সঙ্গে সঙ্গে ‘ধাম্মিকতার অনুধাবন কর।’ (২ তীমথিয় ২:২২) আর এই কারণেই পৌল আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার বিভিন্ন অংশের তালিকা করার সময় ‘ধার্ম্মিকতার বুকপাটাকে’ অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।—ইফিষীয় ৬:১৪.

৫. কীভাবে অসিদ্ধ মানুষেরা ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করতে পারে?

অবশ্য, কোনো মানুষই পুরোপুরি অর্থে ধার্মিক নয়। সকলেই আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে অসিদ্ধতা পেয়েছে এবং সকলেই জন্ম থেকে পাপপূর্ণ, অধার্মিক। তা সত্ত্বেও, যিশু বলেছিলেন যে, আমাদের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করা উচিত। সেটা কী করে সম্ভব? সেটা সম্ভব কারণ যিশু আমাদের জন্য তাঁর সিদ্ধ জীবন এক মুক্তির মূল্য হিসেবে দিয়েছিলেন এবং আমরা যদি সেই বলিদানে বিশ্বাস করে চলি, তা হলে যিহোবা আমাদের পাপ ক্ষমা করতে ইচ্ছুক। (মথি ২০:২৮; যোহন ৩:১৬; রোমীয় ৫:৮, ৯, ১২, ১৮) সেটার ওপর ভিত্তি করে, আমরা যখন যিহোবার ধার্মিক মানগুলো শিখি এবং সেগুলো পালন করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করি—আমাদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করি—তখন যিহোবা আমাদের উপাসনা গ্রহণ করেন। (গীতসংহিতা ১:৬; রোমীয় ৭:১৯-২৫; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) সেটা কতই না সান্ত্বনাদায়ক!

এক অধার্মিক জগতে ধার্মিক

৬. কেন জগৎ প্রাথমিক খ্রিস্টানদের জন্য এক বিপদজনক জায়গা ছিল?

যিশুর শিষ্যরা যখন “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” তাঁর সাক্ষি হওয়ার দায়িত্ব লাভ করেছিল, তখন তারা এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল। (প্রেরিত ১:৮) তাদের কার্যভারের সমস্ত এলাকা শয়তানের অর্থাৎ “সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া” ছিল। (১ যোহন ৫:১৯) জগৎ সেই দুষ্ট আত্মার বা মনোভাবের দ্বারা সংক্রামিত ছিল, যা শয়তান উদ্দীপিত করছে আর খ্রিস্টানরা এর কলুষিত প্রভাবের শিকার হয়েছিল। (ইফিষীয় ২:২) তাদের জন্য জগৎ এক বিপদজনক জায়গা ছিল। একমাত্র ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে প্রথমে চেষ্টা করার দ্বারাই তারা স্থির থাকতে ও তাদের নীতিনিষ্ঠাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে পারত। অধিকাংশ খ্রিস্টানই তখন স্থির থেকেছিল কিন্তু মাত্র অল্প কিছু লোক ‘ধার্ম্মিকতার পথ’ থেকে সরে গিয়েছিল।—হিতোপদেশ ১২:২৮; ২ তীমথিয় ৪:১০.

৭. কোন দায়িত্বগুলোর জন্য একজন খ্রিস্টানের কলুষতাপূর্ণ প্রভাবগুলোকে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন?

জগৎ কি আজকে খ্রিস্টানদের জন্য এক অধিকতর নিরাপদ জায়গা? কোনোভাবেই নয়! এটা এমনকি প্রথম শতাব্দীর চেয়ে আরও বেশি কলুষিত। অধিকন্তু, শয়তানকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়েছে আর সে “[নারীর] বংশের সেই অবশিষ্ট লোকদের সহিত, যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে,” সেই অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ভয়ানক যুদ্ধ করে চলেছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২, ১৭) এ ছাড়া, সেই ‘বংশকে’ সমর্থন করে এমন যেকাউকে শয়তান আক্রমণ করে। তা সত্ত্বেও, খ্রিস্টানরা এই জগৎ থেকে নিজেদের লুকাতে পারে না। যদিও তারা এর অংশ নয় কিন্তু তাদেরকে এখানেই বাস করতে হবে। (যোহন ১৭:১৫, ১৬) আর সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন লোকেদের খুঁজে বের করতে ও তাদেরকে খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে উঠতে শিক্ষা দিতে এখানে তাদেরকে প্রচার করতে হবে। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) অতএব, খ্রিস্টানরা যেহেতু এই জগতের কলুষতাপূর্ণ প্রভাবগুলোকে পুরোপুরিভাবে পরিহার করতে পারে না, তাই তাদের সেগুলোকে প্রতিরোধ করতে হবে। আসুন আমরা সেই প্রভাবগুলোর মধ্যে চারটে বিবেচনা করি।

অনৈতিকতার ফাঁদ

৮. কেন ইস্রায়েলীয়রা মোয়াবীয় দেবতাদের উপাসনা করতে শুরু করেছিল?

প্রান্তরে ৪০ বছর ঘুরে বেড়ানোর শেষের দিকে এক বিরাট সংখ্যক ইস্রায়েলীয় ধার্মিকতার পথ থেকে সরে গিয়েছিল। তারা যিহোবার অনেক উদ্ধার কাজের সাক্ষি হয়েছিল আর শীঘ্রই তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল। তা সত্ত্বেও, সেই চূড়ান্ত সময়ে তারা মোয়াবীয় দেবতাদের সেবা করতে শুরু করেছিল। কেন? কারণ তারা ‘মাংসের অভিলাষের’ কাছে নতি স্বীকার করেছিল। (১ যোহন ২:১৬) সেই বিবরণ বলে: “লোকেরা মোয়াবের কন্যাদের সহিত ব্যভিচার করিতে প্রবৃত্ত হইল।”—গণনাপুস্তক ২৫:১.

৯, ১০. আজকে কোন পরিস্থিতির কারণে ভুল মাংসিক অভিলাষের কলুষতাপূর্ণ প্রভাব সবসময় মনে রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?

সেই ঘটনা দেখায় যে, মাংসের ভুল অভিলাষগুলো কীভাবে অসতর্ক লোকেদের কলুষিত করতে পারে। এর থেকে আমাদের শেখা উচিত, বিশেষভাবে এই কারণে যে, অনৈতিকতাকে এখন ব্যাপক মাত্রায় গ্রহণযোগ্য এক জীবনধারা হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। (১ করিন্থীয় ১০:৬, ৮) যুক্তরাষ্ট্রের একটা রিপোর্ট বলে: “১৯৭০ সালের আগে পর্যন্ত অবিবাহিত নারী-পুরুষের একত্রে বসবাস করার রীতি আমেরিকার সব রাজ্যে অবৈধ ছিল। এখন এটা খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রথম বারের মতো বিয়ে করেছে এমন দম্পতিদের মধ্যে অর্ধেকই তাদের বিয়ের আগে একত্রে বাস করেছে।” এটা এবং একইরকম কিছু নীতিহীন অভ্যাস শুধু একটা দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। এমনটা সারা পৃথিবীতেই দেখা যাচ্ছে আর দুঃখজনক যে, কিছু খ্রিস্টান সেই হুজুগে গা ভাসিয়ে দিয়েছে—এমনকি এই কারণে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে তাদের সুনাম হারিয়েছে।—১ করিন্থীয় ৫:১১.

১০ অধিকন্তু, অনৈতিকতাকে উৎসাহিত করে এমন প্রচারণা সব জায়গায়ই বিদ্যমান বলে মনে হয়। চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের অনুষ্ঠানসূচি ইঙ্গিত করে যে, যুবক-যুবতীদের জন্য বিয়ের আগে যৌনসম্পর্ক করা পুরোপুরিভাবে গ্রহণযোগ্য। সমকামী সম্পর্কগুলোকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখানো হয়ে থাকে। আর অনেক অনুষ্ঠান যৌনক্রিয়াগুলোকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করে। এ ছাড়া, যৌনক্রিয়ার ছবিগুলো ইন্টারনেটে সহজেই পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, সংবাদপত্রের একজন নিয়মিত লেখক জানিয়েছিলেন যে, তার সাত বছর বয়সি ছেলে স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে অত্যন্ত উত্তেজিতভাবে তার বাবাকে বলেছিল যে, তার স্কুলের এক বন্ধু ইন্টারনেটে এমন এক সাইট খুঁজে পেয়েছে, যেখানে একজন নগ্ন নারী যৌনক্রিয়া প্রদর্শন করছে। বাবা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন কিন্তু কত জন ছেলেমেয়ে তাদের বাবামাকে জানিয়ে এই ধরনের সাইটগুলো ঘেঁটে থাকে? এ ছাড়া, কত জন বাবামাই বা জানে যে, তাদের ছেলেমেয়েরা যে-ভিডিও গেইমগুলো খেলছে, সেগুলোর বিষয়বস্তু কী? অনেক জনপ্রিয় গেইম জঘন্য অনৈতিকতা এবং সেইসঙ্গে প্রেতচর্চা ও দৌরাত্ম্যকে তুলে ধরে।

১১. কীভাবে একটা পরিবারকে জগতের অনৈতিকতা থেকে রক্ষা করা যেতে পারে?

১১ কীভাবে একটা পরিবার এই ধরনের নিচু মানের ‘আমোদপ্রমোদকে’ প্রতিরোধ করতে পারে? প্রথমে ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয় চেষ্টা করে, অনৈতিক কোনোকিছুতে জড়িত হওয়া প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে তা করতে পারে। (২ করিন্থীয় ৬:১৪; ইফিষীয় ৫:৩) যে-বাবামায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের কাজগুলোকে সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করে এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে যিহোবা ও তাঁর ধার্মিক আইনগুলোর প্রতি ভালবাসাকে গেঁথে দেয়, তা তাদেরকে অশ্লীল চিত্র, অশ্লীল ভিডিও গেইম, নোংরা চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য অধার্মিক প্রলোভনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে।—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৯. *

সমাজের চাপের কারণে বিপদ

১২. প্রথম শতাব্দীতে কোন সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল?

১২ পৌল যখন এশিয়া মাইনরের লুস্ত্রায় ছিলেন, তখন তিনি একজন ব্যক্তিকে অলৌকিকভাবে সুস্থ করেছিলেন। সেই বিবরণ বলে: “পৌল যাহা করিলেন, তাহা দেখিয়া লোকেরা লুকায়নীয় ভাষায় উচ্চ রবে বলিতে লাগিল, দেবতারা মনুষ্য-রূপ ধারণ করিয়া আমাদের মধ্যে অবতীর্ণ হইয়াছেন। আর তাহারা বার্ণবাকে দ্যুপিতর বলিল, এবং পৌল প্রধান বক্তা, এই জন্য তাঁহাকে মর্কুরিয় বলিল।” (প্রেরিত ১৪:১১, ১২) পরে সেই একই জনতা পৌল ও বার্ণবাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। (প্রেরিত ১৪:১৯) স্পষ্টতই, সেই লোকেরা সমাজের চাপের কাছে খুব সহজেই নতি স্বীকার করেছিল। সেই অঞ্চলের কিছু লোক যখন খ্রিস্টান হয়েছিল, তখনও তারা তাদের কুসংস্কারমূলক প্রবণতাগুলো ধরে রেখেছিল বলে মনে হয়। কলসীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে দেওয়া তার চিঠিতে পৌল ‘দূতগণের পূজার’ বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছিলেন।—কলসীয় ২:১৮.

১৩. কিছু রীতি কী, যেগুলো একজন খ্রিস্টানকে পরিহার করতে হবে এবং কীভাবে তিনি তা করার শক্তি পেতে পারেন?

১৩ আজকে একইভাবে সত্য খ্রিস্টানদের, খ্রিস্টীয় নীতিগুলোকে লঙ্ঘন করে এমন মিথ্যা ধর্মীয় ধারণাগুলোর ওপর প্রতিষ্ঠিত জনপ্রিয় রীতিনীতিগুলোকে পরিহার করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু দেশে জন্ম ও মৃত্যুকে নিয়ে অনেক রীতিগত অনুষ্ঠান এই মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত যে, আমাদের মধ্যে এমন কিছু রয়েছে, যা মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে। (উপদেশক ৯:৫, ১০) এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে অল্পবয়সি মেয়েদের স্ত্রী যৌনাঙ্গচ্ছেদ করতে বাধ্য করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। * এটা এক নিষ্ঠুর, অপ্রয়োজনীয় অভ্যাস, যা খ্রিস্টান বাবামায়েরা তাদের সন্তানদের প্রতি যে-প্রেমময় যত্ন নিতে বাধ্য তার বিপরীত। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭; ইফিষীয় ৬:৪) কীভাবে খ্রিস্টানরা সমাজের চাপকে প্রতিরোধ করতে এবং এই ধরনের অভ্যাসগুলোকে পরিত্যাগ করতে পারে? যিহোবার ওপর পূর্ণরূপে নির্ভর করার দ্বারা। (গীতসংহিতা ৩১:৬) ধার্মিক ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের শক্তিশালী করবেন ও তাদের যত্ন নেবেন, যারা হৃদয় থেকে তাঁকে বলে: “তিনি আমার আশ্রয়, আমার দুর্গ, আমার ঈশ্বর, আমি তাঁহাতে নির্ভর করিব।”—গীতসংহিতা ৯১:২; হিতোপদেশ ২৯:২৫.

যিহোবাকে ভুলে যাবেন না

১৪. ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশের অল্প কিছু সময় আগে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?

১৪ ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার অল্প কিছুদিন আগে যিহোবা তাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, তারা যেন তাঁকে ভুলে না যায়। তিনি বলেছিলেন: “সাবধান, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলিয়া যাইও না; আমি অদ্য তাঁহার যে সকল আজ্ঞা, শাসন ও বিধি তোমাকে দিতেছি, সে সকল পালন করিতে ত্রুটি করিও না। তুমি ভোজন করিয়া তৃপ্ত হইলে, উত্তম গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া বাস করিলে, তোমার গোমেষাদির পাল বৃদ্ধি পাইলে, তোমার স্বর্ণ ও রৌপ্য বৃদ্ধি পাইলে, এবং তোমার সকল সম্পত্তি বৃদ্ধি পাইলে, তোমার চিত্তকে দর্পিত হইতে দিও না; এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলিয়া যাইও না।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৮:১১-১৪.

১৫. কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমরা যিহোবাকে ভুলে যাচ্ছি না?

১৫ আজকে কি একইরকম কিছু ঘটতে পারে? হ্যাঁ, যদি আমরা ভুল বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিই। কিন্তু, যদি আমরা ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে প্রথমে চেষ্টা করি, তা হলে শুদ্ধ উপাসনা আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। পৌল আমাদের যা করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন, আমরা ঠিক তেমনই সময় বা “সুযোগ কিনিয়া” নেব এবং আমাদের পরিচর্যায় তৎপরতার মনোভাব থাকবে। (কলসীয় ৪:৫; ২ তীমথিয় ৪:২) কিন্তু, সভায় উপস্থিতি এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যা যদি অবসর সময় বা আমোদপ্রমোদের সময়ের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হয়, তা হলে আমরা এই অর্থে যিহোবাকে ভুলে যেতে পারি যে, তাঁকে আমরা জীবনে গৌণ বিষয় হিসেবে দেখছি। পৌল বলেছিলেন যে, শেষকালে মানুষ “ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয়” হবে। (২ তীমথিয় ৩:৪) আন্তরিক খ্রিস্টানরা সেই ধরনের চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে না, এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে নিয়মিতভাবে নিজেদেরকে পরীক্ষা করে থাকে।—২ করিন্থীয় ১৩:৫.

এক স্বাধীনচেতা মনোভাবের ব্যাপারে সাবধান হোন

১৬. হবার দ্বারা এবং পৌলের দিনের কিছু ব্যক্তির দ্বারা কোন ভুল মনোভাব প্রকাশ পেয়েছিল?

১৬ এদনে শয়তান, স্বাধীন হওয়ার জন্য হবার স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষায় আবেদন তৈরি করতে সফল হয়েছিল। হবা সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) প্রথম শতাব্দীতে, করিন্থীয় মণ্ডলীর কিছু ব্যক্তির একইরকম স্বাধীনচেতা মনোভাব ছিল। তারা ভেবেছিল যে, তারা পৌলের চেয়ে বেশি জানে আর তাই পৌল ব্যঙ্গাত্মকভাবে তাদের প্রেরিত-চূড়ামণি বলেছিলেন।—২ করিন্থীয় ১১:৩-৫; ১ তীমথিয় ৬:৩-৫.

১৭. কীভাবে আমরা এক স্বাধীনচেতা মনোভাব গড়ে তোলা পরিহার করতে পারি?

১৭ আজকে জগতে অনেকে “দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ” আর কিছু খ্রিস্টান সেই ধরনের চিন্তাধারার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কেউ কেউ এমনকি সত্যের বিরোধী হয়ে উঠেছে। (২ তীমথিয় ৩:৪; ফিলিপীয় ৩:১৮) বিশুদ্ধ উপাসনার ক্ষেত্রে নির্দেশনার জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করা এবং “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” ও মণ্ডলীর প্রাচীনদের সঙ্গে সহযোগিতা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সেটাই হচ্ছে ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করার এক উপায় আর এটা আমাদের এক স্বাধীনচেতা মনোভাব গড়ে তোলা থেকে রক্ষা করে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; গীতসংহিতা ২৫:৯, ১০; যিশাইয় ৩০:২১) অভিষিক্তদের মণ্ডলী হচ্ছে “সত্যের স্তম্ভ ও দৃঢ় ভিত্তি।” যিহোবা আমাদের সুরক্ষা ও পরিচালনা দেওয়ার জন্য তা জুগিয়েছেন। (১ তীমথিয় ৩:১৫) এর অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে উপলব্ধি করা আমাদের নম্রভাবে যিহোবার ইচ্ছাকে মেনে নেওয়ার সময় ‘অনর্থক দর্পের বশে কিছুই না করিতে’ সাহায্য করবে।—ফিলিপীয় ২:২-৪; হিতোপদেশ ৩:৪-৬.

যিশুর অনুকারী হোন

১৮. কোন কোন দিক দিয়ে আমাদের যিশুকে অনুকরণ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে?

১৮ যিশুর সম্বন্ধে বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে বলে: “তুমি ধার্ম্মিকতাকে প্রেম করিয়া আসিতেছ, দুষ্টতাকে ঘৃণা করিয়া আসিতেছ।” (গীতসংহিতা ৪৫:৭; ইব্রীয় ১:৯) অনুকরণ করার জন্য এটা কী এক উত্তম মনোভাব! (১ করি. ১০:৩৪) যিহোবার ন্যায়নিষ্ঠ মানগুলোকে যিশু কেবলমাত্র জানতেনই না; তিনি সেগুলোকে ভালবাসতেন। তাই প্রান্তরে শয়তান যখন তাঁকে প্রলোভিত করেছিল, তখন যিশু ‘ধার্ম্মিকতার মার্গ’ থেকে বিচ্যুত হওয়া প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে নিঃসংকোচ ও দৃঢ় ছিলেন।—হিতোপদেশ ৮:২০; মথি ৪:৩-১১.

১৯, ২০. ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করার উত্তম ফলগুলো কী?

১৯ এটা ঠিক যে, মাংসের অধার্মিক অভিলাষগুলো প্রবল হতে পারে। (রোমীয় ৭:১৯, ২০) কিন্তু, যদি ধার্মিকতা আমাদের কাছে মূল্যবান বিষয় হয়ে থাকে, তা হলে এটা আমাদের দুষ্টতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী করবে। (গীতসংহিতা ১১৯:১৬৫) যখন আমরা কোনো অন্যায়ের মুখোমুখি হই, তখন ধার্মিকতার প্রতি গভীর ভালবাসা আমাদের রক্ষা করবে। (হিতোপদেশ ৪:৪-৬) মনে রাখবেন, যখন আমরা প্রলোভনের কাছে নতি স্বীকার করি, তখন আমরা শয়তানকে জয়ী করি। তাকে প্রতিরোধ করে যিহোবাকে জয়ী করা আরও কতই না ভাল!—হিতোপদেশ ২৭:১১; যাকোব ৪:৭, ৮.

২০ সত্য খ্রিস্টানরা ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করে বলে তারা “ধার্ম্মিকতার সেই ফলে পূর্ণ . . . যাহা যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা পাওয়া যায়, এইরূপে যেন ঈশ্বরের গৌরব ও প্রশংসা হয়।” (ফিলিপীয় ১:১০, ১১) তারা “নূতন মনুষ্যকে” পরিধান করে, “যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।” (ইফিষীয় ৪:২৪) তারা যিহোবার অধিকার এবং তাঁকে সেবা করার জন্য বেঁচে থাকে, নিজেদের সন্তুষ্ট করার জন্য নয়। (রোমীয় ১৪:৮; ১ পিতর ৪:২) সেটাই তাদের চিন্তা ও কাজকে নির্ণয় করে। তাদের স্বর্গীয় পিতার হৃদয়কে তারা কত আনন্দিতই না করে!—হিতোপদেশ ২৩:২৪.

[পাদটীকাগুলো]

^ অনৈতিক প্রভাবগুলো থেকে পরিবারকে রক্ষা করার ওপরে বাবামাদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ, যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত পারিবারিক সুখের রহস্য (ইংরেজি) বইয়ে পাওয়া যায়।

^ স্ত্রী যৌনাঙ্গচ্ছেদকে আগে স্ত্রী ত্বকচ্ছেদ বলা হতো।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করা কেন অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

• কীভাবে একজন অসিদ্ধ খ্রিস্টান ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করতে পারেন?

• জগতে কিছু বিষয় কী, যেগুলো একজন খ্রিস্টানকে পরিহার করতে হবে?

• কীভাবে ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করা আমাদের সুরক্ষা করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর অনুসারীদের জন্য জগৎ এক বিপদজনক জায়গা ছিল

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যে-ছেলেমেয়েদের যিহোবাকে ভালবাসতে শেখানো হয়, তারা অনৈতিকতা প্রতিরোধ করতে শক্তিশালী হবে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

কিছু ইস্রায়েলীয় প্রতিজ্ঞাত দেশে সমৃদ্ধি লাভের পর যিহোবাকে ভুলে গিয়েছিল

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর মতো, খ্রিস্টানরা অধার্মিকতাকে ঘৃণা করে