সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

দিয়াবলকে স্থান দেবেন না

দিয়াবলকে স্থান দেবেন না

দিয়াবলকে স্থান দেবেন না

‘দিয়াবলকে সুযোগ দিয়ো না।’—ইফিষীয় (এফেসীয়) ৪:২৭, বাংলা জুবিলী বাইবেল।

১. কেন অনেকে দিয়াবলের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে?

 শত শত বছর ধরে অনেক লোক দিয়াবলকে এমন শিংওয়ালা, দ্বিখুরবিশিষ্ট এক প্রাণী হিসেবে কল্পনা করে আসছে, যে লাল কাপড় পরিহিত এবং লম্বা হাতলসহ কাঁটা-লাগানো দণ্ড ব্যবহার করে দুষ্ট মানুষদের অগ্নিময় নরকে নিক্ষেপ করে থাকে। বাইবেল এই ধারণাকে সমর্থন করে না। কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে, এইরকম ভুল ধারণাগুলো লক্ষ লক্ষ লোককে দিয়াবলের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে অথবা এইরকম চিন্তা করতে পরিচালিত করেছে যে, দিয়াবল শব্দটি কেবল এক মন্দ গুণকে চিত্রিত করে।

২. দিয়াবল সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় কিছু তথ্য কী?

দিয়াবলের যে অস্তিত্ব আছে, সেই সম্বন্ধে বাইবেলে চাক্ষুষ সাক্ষির প্রমাণ এবং স্পষ্ট স্বীকারোক্তি রয়েছে। যিশু খ্রিস্ট তাকে স্বর্গীয় আত্মিক রাজ্যে দেখেছিলেন এবং পৃথিবীতে তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। (ইয়োব ১:৬; মথি ৪:৪-১১) যদিও শাস্ত্র এই আত্মিক প্রাণীর আসল নাম সম্বন্ধে জানায় না কিন্তু এটি তাকে দিয়াবল [অর্থাৎ অপবাদক] নামে অভিহিত করে কারণ সে ঈশ্বরকে অপবাদ দিয়েছিল। এ ছাড়া, তাকে শয়তানও [অর্থাৎ বিপক্ষ] বলা হয়, যেহেতু সে যিহোবার বিরোধিতা করে। শয়তান দিয়াবলকে “পুরাতন সর্প” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আর তা সম্ভবত এই কারণে যে, সে হবাকে প্রতারিত করার জন্য একটা সাপকে ব্যবহার করেছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯; ১ তীমথিয় ২:১৪) এ ছাড়া, সে ‘দুষ্ট ব্যক্তি’ হিসেবেও পরিচিত।—মথি ৬:১৩, NW. *

৩. আমরা কোন প্রশ্নটা বিবেচনা করব?

যিহোবার দাস হিসেবে আমরা কোনোভাবেই একমাত্র সত্য ঈশ্বরের প্রধান শত্রু শয়তানের মতো হতে চাই না। তাই, আমাদের প্রেরিত পৌলের এই পরামর্শে মনোযোগ দিতে হবে: ‘দিয়াবলকে সুযোগ দিয়ো না।’ (ইফিষীয় [এফেসীয়] ৪:২৭, বাংলা জুবিলী বাইবেল) তা হলে, শয়তানের কিছু বৈশিষ্ট্য কী, যেগুলো আমরা কখনোই অনুকরণ করব না?

এই বড় অপবাদককে অনুকরণ করবেন না

৪. ‘দুষ্ট ব্যক্তি’ কীভাবে ঈশ্বরকে অপবাদ দিয়েছিল?

সেই ‘দুষ্ট ব্যক্তি’ দিয়াবল নামে ডাকার যোগ্য কারণ সে একজন অপবাদক। অপবাদ হল কারো সম্বন্ধে এক মিথ্যা, বিদ্বেষপূর্ণ এবং মানহানিকর বিবৃতি। ঈশ্বর আদমকে আদেশ দিয়েছিলেন: “সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” (আদিপুস্তক ২:১৭) হবাকে এই বিষয়ে জানানো হয়েছিল কিন্তু একটা সাপের মাধ্যমে দিয়াবল তাকে বলেছিল: “কোন ক্রমে মরিবে না; কেননা ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্‌-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ৩:৪, ৫) এটা ছিল যিহোবা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে এক বিদ্বেষপূর্ণ অপবাদ!

৫. কেন দিয়ত্রিফি অপবাদ দেওয়ার জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিলেন?

ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দেওয়া হয়েছিল: “তুমি কর্ণেজপ হইয়া” বা অপবাদ দেওয়ার জন্য “আপন লোকদের মধ্যে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিও না।” (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৬) প্রেরিত যোহন তার দিনের একজন অপবাদক সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “আমি মণ্ডলীকে কিছু লিখিয়াছিলাম, কিন্তু তাহাদের প্রাধান্যপ্রিয় দিয়ত্রিফি আমাদিগকে গ্রাহ্য করে না। এই জন্য, যদি আমি আসি, তবে সে যে সকল কার্য্য করে, তাহা স্মরণ করাইব, কেননা সে দুর্ব্বাক্য দ্বারা আমাদের গ্লানি করে।” (৩ যোহন ৯, ১০) দিয়ত্রিফি যোহনকে অপবাদ দিয়েছিলেন আর এর জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিলেন। কোন অনুগত খ্রিস্টানই বা দিয়ত্রিফির মতো হয়ে বড় অপবাদক শয়তানকে অনুকরণ করতে চাইবে?

৬, ৭. কেন আমরা কাউকে অপবাদ দেওয়া এড়িয়ে চলতে চাইব?

যিহোবার দাসদের বিরুদ্ধে প্রায়ই আক্রমণাত্মকভাবে অপবাদমূলক বিবৃতি দেওয়া হয় এবং তাদেরকে মিথ্যা দোষারোপ করা হয়। “প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকেরা দাঁড়াইয়া উগ্রভাবে [যিশুর] উপর দোষারোপ করিতেছিল।” (লূক ২৩:১০) মহাযাজক অননিয় এবং অন্যেরা পৌলকে মিথ্যাভাবে দোষারোপ করেছিল। (প্রেরিত ২৪:১-৮) আর বাইবেলে শয়তান সম্বন্ধে এভাবে বলা হয়েছে, “আমাদের ভ্রাতৃগণের উপরে দোষারোপকারী, যে দিবারাত্র আমাদের ঈশ্বরের সম্মুখে তাহাদের নামে দোষারোপ করে।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:১০) মিথ্যাভাবে দোষারোপকৃত ভাইয়েরা হল, এই শেষকালে পৃথিবীতে বিদ্যমান অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা।

কোনো খ্রিস্টানই কাউকে অপবাদ দিতে অথবা মিথ্যা দোষারোপ করতে চাইবে না। তবে, এইরকমটা হতে পারে যদি কারো বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার আগে, এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত তথ্য আমাদের জানা না থাকে। মোশির ব্যবস্থায়, স্বেচ্ছায় মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে একজন দোষারোপকারীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত। (যাত্রাপুস্তক ২০:১৬; দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১৫-১৯) সর্বোপরি, যে-বিষয়গুলো যিহোবার কাছে ঘৃণিত, সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত সেই ‘মিথ্যাসাক্ষী, যে অসত্য কথা কহে।’ (হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯) তা হলে, নিশ্চিতভাবেই আমরা এই প্রধান অপবাদক এবং মিথ্যা দোষারোপকারীকে অনুকরণ করা এড়িয়ে চলতে চাই।

সেই আদি নরঘাতকের পথগুলো পরিহার করুন

৮. কীভাবে দিয়াবল “আদি হইতেই নরঘাতক” ছিল?

দিয়াবল হল একজন নরঘাতক। “সে আদি হইতেই নরঘাতক,” যিশু বলেছিলেন। (যোহন ৮:৪৪) আদম ও হবাকে ঈশ্বরের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রথম কাজ থেকেই শয়তান একজন নরঘাতকে পরিণত হয়েছে। সে প্রথম মানব দম্পতি এবং তাদের বংশধরের জন্য মৃত্যু নিয়ে এসেছিল। (রোমীয় ৫:১২) এটা লক্ষণীয় যে, এই কাজ কেবল একজন ব্যক্তিই করতে পারে, নিছক কোনো মন্দ গুণ নয়।

৯. প্রথম যোহন তিন অধ্যায় ১৫ পদে যেমন ইঙ্গিত করা হয়েছে, কীভাবে আমরা নরঘাতকে পরিণত হতে পারি?

ইস্রায়েলকে দেওয়া দশ আজ্ঞার একটিতে বলা হয়েছে, “নরহত্যা করিও না।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৭) খ্রিস্টানদের উদ্দেশে প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কেহ যেন নরঘাতক . . . বলিয়া দুঃখভোগ না করে।” (১ পিতর ৪:১৫) তাই, যিহোবার দাস হিসেবে আমরা কাউকে হত্যা করব না। তবে, আমরা যদি কোনো সহবিশ্বাসীকে ঘৃণা করি এবং তার মৃত্যু কামনা করি, তা হলে ঈশ্বরের কাছে আমরা দোষী হব। “যে কেহ আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে নরঘাতক,” প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন, “এবং তোমরা জান, অনন্ত জীবন কোন নরঘাতকের অন্তরে অবস্থিতি করে না।” (১ যোহন ৩:১৫) ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দেওয়া হয়েছিল: “তুমি হৃদয়মধ্যে আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করিও না।” (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৭) কোনো সহবিশ্বাসীর সঙ্গে আমাদের সমস্যা দেখা দিলে আমরা যেন তা তাড়াতাড়ি মিটমাট করে ফেলি, যাতে নরঘাতক শয়তান আমাদের খ্রিস্টীয় একতাকে নষ্ট করতে না পারে।—লূক ১৭:৩, ৪.

এই প্রধান মিথ্যাবাদীর বিরুদ্ধে দৃঢ় থাকুন

১০, ১১. প্রধান মিথ্যাবাদী শয়তানের বিরুদ্ধে দৃঢ় থাকার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?

১০ দিয়াবল হল একজন মিথ্যাবাদী। “সে যখন মিথ্যা বলে,” যিশু বলেছিলেন, “তখন আপনা হইতেই বলে, কেননা সে মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা।” (যোহন ৮:৪৪) শয়তান হবাকে মিথ্যা বলেছিল আর অন্যদিকে যিশু সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য জগতে এসেছিলেন। (যোহন ১৮:৩৭) খ্রিস্টের অনুসারী হিসেবে, আমরা যদি দিয়াবলের বিরুদ্ধে দৃঢ় থাকতে চাই, তা হলে আমরা মিথ্যা এবং প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারি না। আমাদের অবশ্যই ‘সত্য বলিতে’ হবে। (সখরিয় ৮:১৬; ইফিষীয় ৪:২৫) “সদাপ্রভু, সত্যের ঈশ্বর” কেবল তাঁর সত্যময় সাক্ষিদেরই আশীর্বাদ করেন। দুষ্ট ব্যক্তিদের তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করার কোনো অধিকার নেই।—গীতসংহিতা ৩১:৫; ৫০:১৬; যিশাইয় ৪৩:১০.

১১ আমরা যদি শয়তানের মিথ্যাগুলো থেকে আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাধীনতাকে মূল্যবান বলে গণ্য করি, তা হলে আমরা খ্রিস্টধর্মের অর্থাৎ ‘সত্যের পথের’ সঙ্গে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকব। (২ পিতর ২:২; যোহন ৮:৩২) আর “সুসমাচারের সত্য” সমগ্র খ্রিস্টীয় শিক্ষা নিয়ে গঠিত। (গালাতীয় ২:৫, ১৪) আমাদের পরিত্রাণ নির্ভর করে ‘সত্যে চলিবার’ ওপর—এর প্রতি লেগে থাকার এবং ‘মিথ্যাবাদীর পিতার’ বিরুদ্ধে দৃঢ় থাকার ওপর।—৩ যোহন ৩, ৪, ৮.

এই মুখ্য ধর্মভ্রষ্টকে প্রতিরোধ করুন

১২, ১৩. ধর্মভ্রষ্টদের সঙ্গে আমাদের কীভাবে আচরণ করা উচিত?

১২ যে-আত্মিক প্রাণী দিয়াবলে পরিণত হয়েছে, সে একসময় সত্যে ছিল। কিন্তু, ‘সে সত্যে থাকে নাই,’ যিশু বলেছিলেন, “কারণ তাহার মধ্যে সত্য নাই।” (যোহন ৮:৪৪) এই মুখ্য ধর্মভ্রষ্ট ‘সত্যের ঈশ্বরের’ বিরোধিতা করার জন্য অবিরত চেষ্টা করেছে। প্রথম শতাব্দীর কিছু খ্রিস্টান ‘দিয়াবলের ফাঁদে’ পড়েছিল, স্পষ্টতই ভ্রান্ত হয়ে সত্য থেকে সরে গিয়ে তার শিকারে পরিণত হয়েছিল। তাই, তাদেরকে মৃদুতার সঙ্গে শিক্ষা দেওয়ার জন্য পৌল তার সহকর্মী তীমথিয়কে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, যাতে তারা আধ্যাত্মিকভাবে সুস্থ হতে এবং শয়তানের ফাঁদ থেকে মুক্ত হতে পারে। (২ তীমথিয় ২:২৩-২৬) অবশ্য, সত্যের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকা এবং ধর্মভ্রষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর দ্বারা কখনোই ফাঁদে না পড়া হল আরও উত্তম।

১৩ দিয়াবলের কথা শোনার ফলে এবং তার মিথ্যাগুলো প্রত্যাখ্যান না করার কারণে প্রথম মানব দম্পতি ধর্মভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল। তা হলে, আমাদের কি ধর্মভ্রষ্টদের কথা শোনা, তাদের সাহিত্যাদি পড়া অথবা ইন্টারনেটে তাদের ওয়েব সাইট ঘাঁটাঘাঁটি করা উচিত? আমরা যদি ঈশ্বরকে এবং সত্যকে ভালবাসি, তা হলে আমরা তা করব না। ধর্মভ্রষ্টদের আমাদের ঘরে আসতে দেওয়া অথবা এমনকি তাদেরকে সম্ভাষণ জানানো উচিত নয় কারণ এই ধরনের কাজ আমাদেরকে ‘তাহাদের দুষ্কর্ম্ম সকলের সহভাগী’ করে তোলে। (২ যোহন ৯-১১) আমরা যেন কখনো সেইসব মিথ্যা শিক্ষকদের অনুসরণ করার জন্য খ্রিস্টীয় “সত্যের পথ” ত্যাগ করে দিয়াবলের চাতুরীর কাছে নতি স্বীকার না করি, যারা ‘সর্বনাশী ভ্রান্তমত অনুপ্রবেশ করানোর’ সুযোগ খোঁজে এবং ‘মিথ্যা গল্প শুনিয়ে আমাদের শোষণ করার’ চেষ্টা করে।—২ পিতর ২:১-৩, বাংলা জুবিলী বাইবেল।

১৪, ১৫. ইফিষের প্রাচীনদের এবং সহকর্মী তীমথিয়কে পৌল কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?

১৪ ইফিষের প্রাচীনদের পৌল বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান, এবং পবিত্র আত্মা তোমাদিগকে অধ্যক্ষ করিয়া যাহার মধ্যে নিযুক্ত করিয়াছেন, সেই সমস্ত পালের বিষয়ে সাবধান হও, ঈশ্বরের সেই মণ্ডলীকে পালন কর, যাহাকে তিনি নিজ রক্ত দ্বারা ক্রয় করিয়াছেন। আমি জানি, আমি গেলে পর দুরন্ত কেন্দুয়ারা তোমাদের মধ্যে প্রবেশ করিবে, পালের প্রতি মমতা করিবে না; এবং তোমাদের মধ্য হইতেও কোন কোন লোক উঠিয়া শিষ্যদিগকে আপনাদের পশ্চাৎ টানিয়া লইবার জন্য বিপরীত কথা কহিবে।” (প্রেরিত ২০:২৮-৩০) পরবর্তী সময়ে, এই ধরনের ধর্মভ্রষ্টদের উদয় হয়েছিল এবং তারা ‘বিপরীত কথা কহিয়াছিল।’

১৫ সাধারণ কাল প্রায় ৬৫ সালে, প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে ‘সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিবার’ জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। “কিন্তু,” পৌল লিখেছিলেন, “ধর্ম্মবিরূপক নিঃসার শব্দাড়ম্বর হইতে পৃথক্‌ থাক; কেননা সেই প্রকার লোক ভক্তিলঙ্ঘনে অধিক অগ্রসর হইবে, এবং তাহাদের বাক্য গলিত ক্ষতের ন্যায় উত্তর উত্তর ক্ষয় করিবে। হুমিনায় ও ফিলীত তাহাদের মধ্যে; ইহারা সত্যের সম্বন্ধে লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়াছে, বলিতেছে, পুনরুত্থান হইয়া গিয়াছে, এবং কাহারও কাহারও বিশ্বাস উল্টাইয়া ফেলিতেছে।” ধর্মভ্রষ্টতা শুরু হয়ে গিয়েছিল! “তথাপি,” পৌল আরও বলেছিলেন, “ঈশ্বর-স্থাপিত দৃঢ় ভিত্তিমূল স্থির রহিয়াছে।”—২ তীমথিয় ২:১৫-১৯.

১৬. মুখ্য ধর্মভ্রষ্টের চাতুরী সত্ত্বেও, কেন আমরা ঈশ্বর ও তাঁর বাক্যের প্রতি অনুগত থেকেছি?

১৬ শয়তান সত্য উপাসনাকে কলুষিত করার জন্য প্রায়ই ধর্মভ্রষ্টদের ব্যবহার করেছে—কিন্তু সফল হতে পারেনি। প্রায় ১৮৬৮ সালে চার্লস টেজ রাসেল খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলোর দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে গৃহীত মতবাদগুলো মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা করতে শুরু করেন এবং শাস্ত্রকে যে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তা দেখতে পান। রাসেল এবং অল্প কয়েক জন সত্য অনুসন্ধানকারী যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার পিটস্‌বার্গে একটা বাইবেল অধ্যয়ন ক্লাস গঠন করে। সেই সময় থেকে প্রায় ১৪০ বছর কেটে গিয়েছে আর যিহোবার দাসেরা জ্ঞানে এবং ঈশ্বর ও তাঁর বাক্যের প্রতি প্রেমে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুখ্য ধর্মভ্রষ্টের চাতুরী সত্ত্বেও, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর আধ্যাত্মিক সতর্কতা এই সত্য খ্রিস্টানদের যিহোবা ও তাঁর বাক্যের প্রতি অনুগত থাকতে সাহায্য করেছে।—মথি ২৪:৪৫.

জগতের এই শাসককে কখনোই আপনার ওপর প্রভাব ফেলতে দেবেন না

১৭-১৯. সেই জগৎ কী, যা দিয়াবলের মধ্যে শুয়ে রয়েছে আর কেন আমাদের জগৎকে প্রেম করা উচিত নয়?

১৭ আরেকটা যে-উপায়ে শয়তান আমাদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে সেটা হল, এই জগৎকে—ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন অধার্মিক মানবসমাজকে—প্রেম করার জন্য আমাদের প্রলোভিত করার মাধ্যমে। যিশু শয়তান দিয়াবলকে “জগতের অধিপতি” বলে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন: “আমাতে তাহার কিছুই নাই” অথবা আমার ওপর তার কোনো প্রভাব নেই। (যোহন ১৪:৩০) শয়তান যেন কখনো আমাদের ওপর প্রভাব না ফেলে! অবশ্য, আমরা জানি যে, “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) এই কারণে উপাসনামূলক একটা ধর্মভ্রষ্ট কাজের বিনিময়ে দিয়াবল যিশুকে “জগতের সমস্ত রাজ্য” দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পেরেছিল, যে-কাজটাকে ঈশ্বরের পুত্র স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (মথি ৪:৮-১০) শয়তানের দ্বারা শাসিত এই জগৎ খ্রিস্টের অনুসারীদের ঘৃণা করে। (যোহন ১৫:১৮-২১) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, প্রেরিত যোহন জগৎকে প্রেম না করার বিষয়ে আমাদের সাবধান করেছিলেন!

১৮ যোহন লিখেছিলেন: “তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই। কেননা জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে। আর জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৫-১৭) আমরা অবশ্যই জগৎকে প্রেম করব না কারণ এর জীবনধারা পাপপূর্ণ মাংসের কাছে আকর্ষণীয় এবং যিহোবা ঈশ্বরের মানগুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত।

১৯ কিন্তু, কী হবে যদি জগতের প্রতি প্রেম আমাদের হৃদয়ে বিদ্যমান থাকে? তা হলে, আসুন আমরা এই প্রেম এবং এর সঙ্গে যুক্ত মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্য চেয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। (গালাতীয় ৫:১৬-২১) আমরা যদি মনে রাখি যে, ‘দুষ্টতার আত্মাগণ’ হল অধার্মিক মানবসমাজের ওপর অদৃশ্য ‘জগৎপতিরা,’ তা হলে নিশ্চিতভাবেই আমরা নিজেদেরকে জগৎ বা “সংসার হইতে . . . নিষ্কলঙ্করূপে” রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।—যাকোব ১:২৭; ইফিষীয় ৬:১১, ১২; ২ করিন্থীয় ৪:৪.

২০. কেন বলা যেতে পারে যে, আমরা “জগতের নই”?

২০ যিশু তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে বলেছিলেন, “তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১৬) অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা এবং তাদের উৎসর্গীকৃত সহযোগীরা নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে শুচি থাকার এবং জগৎ থেকে পৃথক থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। (যোহন ১৫:১৯; ১৭:১৪; যাকোব ৪:৪) এই অধার্মিক জগৎ আমাদের ঘৃণা করে কারণ আমরা এটা থেকে পৃথক থাকি এবং আমরা “ধার্ম্মিকতার প্রচারক।” (২ পিতর ২:৫) এটা ঠিক যে, আমরা এমন মানবসমাজের মধ্যে বাস করি, যেখানে রয়েছে ব্যভিচারী, পারদারিক, পরধনগ্রাহী, প্রতিমাপূজক, চোর, মিথ্যাবাদী এবং মাতাল। (১ করিন্থীয় ৫:৯-১১; ৬:৯-১১; প্রকাশিত বাক্য ২১:৮) কিন্তু, আমরা ‘জগতের আত্মার’ মধ্যে নিঃশ্বাস নিই না কারণ আমরা এই পাপপূর্ণ চালিকা শক্তির দ্বারা পরিচালিত নই।—১ করিন্থীয় ২:১২.

দিয়াবলকে কোনো স্থান দেবেন না

২১, ২২. কীভাবে আপনি ইফিষীয় ৪:২৬, ২৭ পদে লিপিবদ্ধ পৌলের পরামর্শ কাজে লাগাতে পারেন?

২১ ‘জগতের আত্মার’ দ্বারা পরিচালিত হওয়ার পরিবর্তে আমরা ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হই, যে-আত্মা আমাদের মধ্যে প্রেম এবং ইন্দ্রিয়দমনের মতো গুণাবলি উৎপন্ন করে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) এগুলো আমাদের বিশ্বাসের ওপর দিয়াবলের আক্রমণকে প্রতিরোধ করতে আমাদের সাহায্য করে। সে চায় যেন আমরা ‘কেবল দুষ্কার্য্য করি’ কিন্তু ঈশ্বরের আত্মা আমাদের ‘ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হইতে, কোপ ত্যাগ করিতে’ সাহায্য করে। (গীতসংহিতা ৩৭:৮) এটা ঠিক যে, মাঝে মাঝে আমাদের রাগ করার উপযুক্ত কারণ থাকতে পারে কিন্তু পৌল আমাদের পরামর্শ দেন: “ক্রুদ্ধ হইলে পাপ করিও না; সূর্য্য অস্ত না যাইতে যাইতে তোমাদের কোপাবেশ শান্ত হউক; আর দিয়াবলকে স্থান দিও না।”—ইফিষীয় ৪:২৬, ২৭.

২২ রাগ আমাদেরকে পাপ করার দিকে পরিচালিত করতে পারে, যদি আমরা তা পুষে রাখি। এইরকম মনোভাব রাখলে আমরা দিয়াবলকে মণ্ডলীর মধ্যে মতভেদ ছড়িয়ে দেওয়ার অথবা মন্দ কাজগুলো করার জন্য আমাদেরকে প্ররোচিত করার সুযোগ করে দেব। তাই, আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঈশ্বরের পথ অনুযায়ী অন্যদের সঙ্গে মতবিরোধ মিটমাট করতে হবে। (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৭, ১৮; মথি ৫:২৩, ২৪; ১৮:১৫, ১৬) অতএব, আসুন আমরা ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হই, ইন্দ্রিয়দমন দেখিয়ে চলি আর এমনকি রাগ করার উপযুক্ত কারণ থাকলেও কখনো সেটাকে শত্রুতা, বিদ্বেষ এবং ঘৃণাতে পরিণত হতে না দিই।

২৩. পরের প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

২৩ আমরা দিয়াবলের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে আলোচনা করেছি, যেগুলো আমাদের অনুকরণ করা উচিত নয়। কিন্তু, কিছু পাঠক হয়তো ভাবতে পারে: আমাদের কি শয়তানকে ভয় পাওয়া উচিত? কেন সে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে তাড়নাকে উসকে দেয়? আর কীভাবে আমরা শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হওয়া এড়াতে পারি?

[পাদটীকা]

^ ২০০৫ সালের ১৫ই নভেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ধারাবাহিক প্রচ্ছদ প্রবন্ধ “দিয়াবল কি বাস্তব?” দেখুন।

আপনার উত্তর কী?

• কেন আমাদের কখনো কাউকে অপবাদ দেওয়া উচিত নয়?

১ যোহন ৩:১৫ পদ অনুযায়ী, কীভাবে আমরা নরঘাতক হওয়া এড়াতে পারি?

• ধর্মভ্রষ্টদের কীভাবে দেখা উচিত এবং কেন?

• কেন জগৎকে প্রেম করা উচিত নয়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমরা কখনো আমাদের খ্রিস্টীয় একতাকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য দিয়াবলকে সুযোগ দেব না

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

জগৎকে প্রেম না করার বিষয়ে যোহন কেন আমাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন?