সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার ধৈর্যকে অনুকরণ করুন

যিহোবার ধৈর্যকে অনুকরণ করুন

যিহোবার ধৈর্যকে অনুকরণ করুন

‘প্রভু [“যিহোবা,” NW] নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন কিন্তু তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু।’—২ পিতর ৩:৯.

১. কোন অতুলনীয় উপহার যিহোবা মানুষকে দিতে চান?

 যিহোবা আমাদের এমন কিছু দিতে চান, যা অন্য আর কেউ দিতে পারে না। এটা অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং মূল্যবান, তবে এটা ক্রয় অথবা অর্জন কোনোটাই করা যেতে পারে না। তিনি আমাদের যা দিতে চান তা হল, উপহার হিসেবে অনন্তজীবন—আমাদের বেশির ভাগ লোকের জন্য এর অর্থ হল, এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকালীন জীবন। (যোহন ৩:১৬) সেটা কত আনন্দেরই না হবে! যে-বিষয়গুলো আমাদের জন্য চরম দুঃখ নিয়ে আসে, সেগুলো দূর হয়ে যাবে যেমন বিবাদ, দৌরাত্ম্য, দারিদ্র্য, অপরাধ, অসুস্থতা ও এমনকি মৃত্যু। ঈশ্বরের রাজ্যের প্রেমময় শাসনের অধীনে লোকেরা সম্পূর্ণ শান্তিতে ও একতায় বাস করবে। সেই পরমদেশের জন্য আমরা কত আকুলভাবেই না আকাঙ্ক্ষা করে আছি!—যিশাইয় ৯:৬, ৭; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫.

২. কেন যিহোবা শয়তানের দুষ্ট জগৎকে এখনও দূর করেননি?

যিহোবাও সেই সময়ের জন্য সাগ্রহে প্রতীক্ষা করে আছেন, যখন তিনি পৃথিবীতে পরমদেশ স্থাপন করবেন। আর তা সত্য কারণ যিহোবা ধার্মিকতা ও ন্যায়বিচার ভালবাসেন। (গীতসংহিতা ৩৩:৫) এমন এক জগৎকে দেখে তিনি একটুও আনন্দিত হন না, যে-জগৎ তাঁর ধার্মিক নীতিগুলোর ব্যাপারে উদাসীন অথবা সেগুলোর বিরোধিতা করে ও সেইসঙ্গে তাঁর কর্তৃত্বকে অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং তাঁর লোকেদের তাড়না করে। তবে, শয়তানের দুষ্ট জগৎকে দূর করতে এখনও পদক্ষেপ না নেওয়ার পিছনে বিভিন্ন উপযুক্ত কারণ রয়েছে। সেই কারণগুলো তাঁর সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত নৈতিক বিচার্য বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই বিচার্য বিষয়গুলো মীমাংসা করার ক্ষেত্রে যিহোবা এমন অসাধারণ এক হৃদয়গ্রাহী গুণ দেখিয়েছেন, যে-গুণের অভাব আজকে অনেকের মধ্যে রয়েছে আর সেটা হল ধৈর্য।

৩. (ক) বাইবেলে যে-ইব্রীয় এবং গ্রিক শব্দকে “দীর্ঘসহিষ্ণুতা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির অর্থ কী? (খ) আমরা এখন কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

ধৈর্যের জন্য একটি গ্রিক শব্দ রয়েছে, যেটিকে বাইবেলে “দীর্ঘসহিষ্ণুতা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে কিন্তু এটির আক্ষরিক অর্থ হল, “দীর্ঘ মনোভাব।” ধৈর্যের জন্য ইব্রীয় ও গ্রিক ভাষার দুটো শব্দই সহনশীলতা এবং ক্রোধে ধীর হওয়ার ধারণাকে বোঝায়। যিহোবার ধৈর্য থেকে আমরা কীভাবে উপকৃত হই? যিহোবা এবং তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের ধৈর্য থেকে আমরা কোন শিক্ষাগুলো পেতে পারি? কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবার ধৈর্যের সীমা আছে? আসুন আমরা এই বিষয়গুলো বিবেচনা করি।

যিহোবার ধৈর্য সম্বন্ধে বিবেচনা করুন

৪. যিহোবার ধৈর্য সম্বন্ধে প্রেরিত পিতর কী লিখেছিলেন?

যিহোবার ধৈর্য সম্বন্ধে প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “প্রিয়তমেরা, তোমরা এই এক কথা ভুলিও না যে, প্রভুর [“যিহোবার,” NW] কাছে এক দিন সহস্র বৎসরের সমান, এবং সহস্র বৎসর এক দিনের সমান। যিহোবা নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন—যেমন কেহ কেহ দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করে—কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” (২ পিতর ৩:৮, ৯) এখানে বর্ণিত দুটো বিষয় দয়া করে লক্ষ করুন, যেগুলো যিহোবার ধৈর্য সম্বন্ধে বুঝতে আমাদের সাহায্য করতে পারে।

৫. যিহোবা সময়কে যেভাবে দেখেন, তা তাঁর কাজের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলে?

প্রথম বিষয়টা হল, সময়কে আমরা যেভাবে দেখি, যিহোবা সেভাবে দেখেন না। চিরকাল ধরে আছেন এমন একজন ব্যক্তির কাছে এক হাজার বছর হল মাত্র এক দিন। তিনি সময়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নন অথবা সময়ের কারণে চাপ অনুভব করেন না কিন্তু তাই বলে তিনি পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে ধীর নন। অসীম প্রজ্ঞার অধিকারী হওয়ায়, যিহোবা কোনো একটা কাজ করার সর্বোৎকৃষ্ট সময় সম্বন্ধে একেবারে সঠিকভাবে জানেন, যেন সংশ্লিষ্ট সকলে উপকার পায় আর এইজন্য তিনি ধৈর্যপূর্বক সেই সময়ের জন্য অপেক্ষাও করে থাকেন। কিন্তু, আমাদের এই উপসংহারে আসা উচিত নয় যে, এই সময়ের মধ্যে যিহোবার দাসেরা হয়তো যেসমস্ত দুঃখকষ্ট ভোগ করে থাকে, সেগুলোর ব্যাপারে তিনি উদাসীন। তিনি হলেন, ‘কৃপাযুক্ত স্নেহের’ ঈশ্বর, প্রেমের মূর্ত প্রতীক। (লূক ১:৭৮; ১ যোহন ৪:৮) তিনি সাময়িকভাবে এই দুঃখকষ্ট থাকতে দেওয়ার কারণে ঘটিত যেকোনো ক্ষতি সম্পূর্ণরূপে এবং স্থায়ীভাবে দূর করে দিতে সক্ষম।—গীতসংহিতা ৩৭:১০.

৬. ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদের কোন উপসংহারে আসা উচিত নয় এবং কেন?

অবশ্য, এমন কিছুর জন্য অপেক্ষা করা সহজ নয়, যেটার জন্য একজন ব্যক্তি আকুল আকাঙ্ক্ষী। (হিতোপদেশ ১৩:১২) তাই, লোকেরা যখন তাদের প্রতিজ্ঞাগুলো পূরণ করতে বিলম্ব করে, তখন অন্যেরা হয়তো এই উপসংহারে আসতে পারে যে, তারা সেগুলো পূরণ করতে চায় না। ঈশ্বর সম্বন্ধে এইরকম চিন্তা করা কতই না বোকামির কাজ হবে! আমরা যদি ঈশ্বরের ধৈর্যকে ভুলভাবে দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করি বা মনে করি যে তিনি দেরি করছেন, তা হলে সময়ের প্রবাহে আমরা সন্দেহ এবং নিরুৎসাহিতার দ্বারা জর্জরিত হতে পারি আর এর ফলে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকির মুখে পড়ি। এর চেয়েও খারাপ বিষয় হল, আমরা সেইসমস্ত লোকের দ্বারা ভ্রান্ত হতে পারি, যাদের সম্বন্ধে পিতর আগে সতর্ক করে দিয়েছিলেন আর তারা হল সেই উপহাসকেরা, যাদের বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। এইরকম লোকেরা পরিহাস করে বলতে পারে: “তাঁহার আগমনের প্রতিজ্ঞা কোথায়? কেননা যে অবধি পিতৃলোকেরা নিদ্রাগত হইয়াছেন, সেই অবধি সমস্তই সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন, তেমনই রহিয়াছে।”—২ পিতর ৩:৩, ৪.

৭. যিহোবার ধৈর্য কীভাবে লোকেরা যেন মন পরিবর্তন করতে পারে, তাঁর এই ইচ্ছার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

দ্বিতীয় যে-বিষয়টা আমরা পিতরের কথাগুলো থেকে জানতে পারি সেটা হল, যিহোবা ধৈর্যশীল কারণ তিনি চান যেন সমস্ত মানুষ মন পরিবর্তন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। যে-লোকেরা একগুঁয়েভাবে তাদের কুপথ থেকে ফিরে আসতে চায় না, তারা যিহোবার হাতে দণ্ড ভোগ করবে। কিন্তু, দুষ্ট লোকের মরণে যিহোবা আনন্দ পান না। এর পরিবর্তে, তিনি লোকেদের মন পরিবর্তন করতে, তাদের কুপথ থেকে ফিরে আসতে এবং বেঁচে থাকতে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হন। (যিহিষ্কেল ৩৩:১১) এই কারণেই তিনি ধৈর্য ধরে চলছেন এবং সারা পৃথিবীতে সুসমাচার ঘোষণা করতে দিচ্ছেন, যাতে লোকেরা বেঁচে থাকার যথেষ্ট সুযোগ পেতে পারে।

৮. ঈশ্বরের ধৈর্য কীভাবে ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে তাঁর আচরণের মধ্যে দেখা যায়?

ঈশ্বরের ধৈর্য প্রাচীন ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে তাঁর আচরণের মধ্যেও দেখা যায়। তিনি কয়েক শতাব্দী ধরে তাদের অবাধ্যতা সহ্য করেছিলেন। তাঁর ভাববাদীদের মাধ্যমে তিনি বার বার তাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা আপনাদের কুপথ হইতে ফির, এবং আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে সমস্ত ব্যবস্থা দিয়াছি, ও আমার দাস ভাববাদিগণের হস্ত দ্বারা তোমাদের নিকটে যাহা পাঠাইয়াছি, তদনুসারে আমার আজ্ঞা ও বিধি সকল পালন কর।” এর ফল কী হয়েছিল? দুঃখজনক যে, তারা “কথা শুনিল না।”—২ রাজাবলি ১৭:১৩, ১৪.

৯. যিশুর ধৈর্য কীভাবে তাঁর পিতার ধৈর্যকে প্রতিফলিত করেছিল?

অবশেষে, যিহোবা তাঁর পুত্রকে পাঠিয়েছিলেন, যিনি যিহুদিদেরকে অক্লান্তভাবে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছিলেন, যেন তারা পুনরায় ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হয়। যিশুর ধৈর্য নিখুঁতভাবে তাঁর পিতার ধৈর্যকে প্রতিফলিত করেছিল। শীঘ্রই তাঁকে মৃত্যুদণ্ড ভোগ করতে হবে, সেই সম্বন্ধে ভালভাবে অবগত থাকায় যিশু দুঃখ করে বলেছিলেন: “হা যিরূশালেম, যিরূশালেম, তুমি ভাববাদিগণকে বধ করিয়া থাক, ও তোমার নিকটে যাহারা প্রেরিত হয়, তাহাদিগকে পাথর মারিয়া থাক! কুক্কুটী যেমন আপন শাবকদিগকে পক্ষের নীচে একত্র করে, তদ্রূপ আমিও কত বার তোমার সন্তানদিগকে একত্র করিতে ইচ্ছা করিয়াছি, কিন্তু তোমরা সম্মত হইলে না।” (মথি ২৩:৩৭) এই মর্মস্পর্শী কথাগুলো কোনো কঠোর বিচারকের নয়, যিনি কাউকে শাস্তি দিতে উৎসুক বরং এমন এক প্রেমময় বন্ধুর, যিনি লোকেদের প্রতি ধৈর্যশীল। তাঁর স্বর্গস্থ পিতার মতো যিশুও চান যেন লোকেরা মন পরিবর্তন করে এবং প্রতিকূল বিচার এড়াতে পারে। কেউ কেউ যিশুর সাবধানবাণীর প্রতি অনুকূলভাবে সাড়া দিয়েছিল এবং সা.কা. ৭০ সালে যিরূশালেমের ওপর আসা চরম বিচার এড়াতে পেরেছিল।—লূক ২১:২০-২২.

১০. ঈশ্বরের ধৈর্য কীভাবে আমাদের উপকৃত করেছে?

১০ ঈশ্বরের ধৈর্য কি বিস্ময়কর এক বিষয় নয়? মানুষের চরম অবাধ্যতা সত্ত্বেও, যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে ও সেইসঙ্গে লক্ষ লক্ষ লোককে তাঁর সম্বন্ধে জানার এবং পরিত্রাণের আশা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছেন। “আমাদের প্রভুর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে পরিত্রাণ জ্ঞান কর,” প্রেরিত পিতর সহখ্রিস্টানদের লিখেছিলেন। (২ পিতর ৩:১৫) আমরা কি কৃতজ্ঞ নই যে, যিহোবার ধৈর্য আমাদের জন্য পরিত্রাণের পথ খুলে দিয়েছে? আমরা কি এই প্রার্থনা করি না যে, দিনের পর দিন তাঁর সেবা করে যাওয়ার সময় যিহোবা যেন আমাদের প্রতি ধৈর্য দেখিয়ে চলেন?—মথি ৬:১২.

১১. যিহোবার ধৈর্য সম্বন্ধে বুঝতে পারা আমাদের কী করতে পরিচালিত করবে?

১১ যিহোবা কেন ধৈর্য ধরেন, তা যখন আমরা বুঝতে পারি, তখন তিনি যে-পরিত্রাণ নিয়ে আসবেন, সেটার জন্য আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে সাহায্য পাই। আর আমরা কখনো এই উপসংহারে আসি না যে, তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে দেরি করছেন। (বিলাপ ৩:২৬) ঈশ্বরের রাজ্য আসার বিষয়ে ক্রমাগত প্রার্থনা করার সময় আমরা এই নির্ভরতা রাখি যে, সেই প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট সময় ঈশ্বর জানেন। অধিকন্তু, আমাদের ভাইবোন ও সেইসঙ্গে যাদের কাছে আমরা প্রচার করি, তাদের প্রতি ঈশ্বরীয় ধৈর্য দেখিয়ে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পরিচালিত হই। আমরাও চাই না যে কেউ ধ্বংস হয়ে যাক বরং আমরা চাই যেন তারা মন পরিবর্তন করে এবং আমাদের মতো তাদেরও অনন্তজীবনের আশা থাকে।—১ তীমথিয় ২:৩, ৪.

ভাববাদীদের ধৈর্য সম্বন্ধে বিবেচনা করুন

১২, ১৩. যাকোব ৫:১০ পদ অনুযায়ী, ভাববাদী যিশাইয় কীভাবে সফলতার সঙ্গে ধৈর্য বজায় রেখেছিলেন?

১২ যিহোবার ধৈর্য সম্বন্ধে বিবেচনা করে আমরা সেই গুণকে মূল্যবান বলে গণ্য করতে এবং গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে সাহায্য পেয়ে থাকি। অসিদ্ধ মানুষের পক্ষে ধৈর্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা সহজ নয় কিন্তু তা করা যেতে পারে। আমরা ঈশ্বরের প্রাচীন দাসদের কাছ থেকে শিখতে পারি। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “হে ভ্রাতৃগণ, যে ভাববাদীরা প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে কথা বলিয়াছিলেন, তাঁহাদিগকে দুঃখভোগের ও দীর্ঘসহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত বলিয়া মান।” (যাকোব ৫:১০) এটা জানা সান্ত্বনাদায়ক এবং উৎসাহজনক যে, আমাদের যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়, অন্যেরা সেগুলোকে সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।

১৩ উদাহরণস্বরূপ, ভাববাদী যিশাইয়ের তার কার্যভার পালন করার জন্য নিঃসন্দেহে ধৈর্যের প্রয়োজন হয়েছিল। যিহোবা তাকে এই কথাগুলো বলার দ্বারা সেটার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন: “তুমি যাও, এই জাতিকে বল, তোমরা শুনিতে থাকিও, কিন্তু বুঝিও না; এবং দেখিতে থাকিও, কিন্তু জানিও না। তুমি এই জাতির অন্তঃকরণ স্থূল কর, ইহাদের কর্ণ ভারী কর, ও ইহাদের চক্ষু বন্ধ করিয়া দেও, পাছে তাহারা চক্ষে দেখে, কর্ণে শুনে, অন্তঃকরণে বুঝে, এবং ফিরিয়া আইসে, ও সুস্থ হয়।” (যিশাইয় ৬:৯, ১০) লোকেরা কান ভারী করা বা সাড়া না দেওয়া সত্ত্বেও, যিশাইয় ধৈর্যের সঙ্গে কমপক্ষে ৪৬ বছর ধরে যিহোবার সাবধানবাণীমূলক বার্তা ঘোষণা করেছিলেন! একইভাবে, ধৈর্য আমাদের সুসমাচার প্রচার কাজে সহ্যশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করবে, যদিও অনেক লোকের হৃদয় স্থূল অথবা তারা সুসমাচার গ্রহণ করবে না।

১৪, ১৫. দুর্দশা এবং নিরুৎসাহিতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য কী যিরমিয়কে সাহায্য করেছিল?

১৪ অবশ্য, ভাববাদীদের তাদের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার সময় কেবল সাড়া না দেওয়ার বিষয়টার সঙ্গেই মোকাবিলা করতে হয়নি; তারা তাড়নাও ভোগ করেছিল। যিরমিয়কে হাড়িকাঠে আটকে রাখা হয়েছিল, “কারাগারে” ভরা হয়েছিল এবং কুয়োর মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। (যিরমিয় ২০:২; ৩৭:১৫; ৩৮:৬) এই তাড়না তিনি সেই লোকেদের কাছ থেকেই ভোগ করেছিলেন, যাদেরকে তিনি সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিরমিয় তিক্তবিরক্ত হয়ে পড়েননি অথবা প্রতিশোধও নেননি। তিনি ধৈর্য ধরে কয়েক দশক পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন।

১৫ তাড়না এবং উপহাস যিরমিয়কে চুপ করাতে পারেনি আর সেগুলো আজকে আমাদেরও চুপ করাতে পারছে না। অবশ্য, মাঝে মাঝে আমরা হয়তো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি। যিরমিয়ও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। “সদাপ্রভুর বাক্য প্রযুক্ত সমস্ত দিন আমাকে টিটকারি দেওয়া ও বিদ্রূপ করা হয়,” তিনি লিখেছিলেন। “যদি বলি, তাঁহার বিষয় আর উল্লেখ করিব না, তাঁহার নামে আর কিছু কহিব না।” তখন কী হয়েছিল? যিরমিয় কি প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন? তিনি বলে চলেছিলেন: “আমার হৃদয়ে [ঈশ্বরের বাক্য] যেন দাহকারী অগ্নি অস্থিমধ্যে রুদ্ধ হয়; তাহা সহ্য করিতে করিতে আমি ক্লান্ত হইয়া পড়ি, আর তিষ্ঠিতে পারি না।” (যিরমিয় ২০:৮, ৯) লক্ষ করুন যে, তিনি যখন লোকেদের উপহাস নিয়ে বেশি চিন্তা করেছিলেন, তখন তিনি আনন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু, যখন তিনি অপূর্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তখন তিনি পুনরায় আনন্দ লাভ করেছিলেন। সর্বোপরি, যিহোবা “প্রবল পরাক্রান্ত বীরের ন্যায়” যিরমিয়ের সঙ্গে ছিলেন, ঈশ্বরের বাক্য উদ্যোগ ও সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করার জন্য তাকে শক্তিশালী করেছিলেন।—যিরমিয় ২০:১১.

১৬. সুসমাচার প্রচার কাজে কীভাবে আমরা আনন্দ বজায় রাখতে পারি?

১৬ ভাববাদী যিরমিয় কি তার কাজে আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন? অবশ্যই! তিনি যিহোবাকে বলেছিলেন: “তোমার বাক্য সকল পাওয়া গেল, আর আমি সেগুলি ভক্ষণ করিলাম, তোমার বাক্য সকল আমার আমোদ ও চিত্তের হর্ষজনক ছিল; কেননা হে সদাপ্রভু, . . . আমার উপরে তোমার নাম কীর্ত্তিত।” (যিরমিয় ১৫:১৬) যিরমিয় সত্য ঈশ্বরকে প্রতিনিধিত্ব করার এবং তাঁর বাক্য প্রচার করার বিশেষ সুযোগ পেয়ে আনন্দিত ছিলেন। আমরাও আনন্দিত হতে পারি। অধিকন্তু, স্বর্গে যেমন দূতেরা করে থাকে, তেমনই আমরাও এই দেখে আনন্দ করি যে, পৃথিবীব্যাপী অনেক লোক রাজ্যের বার্তা গ্রহণ করছে, মন ফিরাচ্ছে এবং অনন্তজীবনের পথে আসছে।—লূক ১৫:১০.

‘ইয়োবের ধৈর্য্য’

১৭, ১৮. ইয়োব কীভাবে ধৈর্য ধরেছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?

১৭ প্রাচীনকালের ভাববাদীদের সম্বন্ধে মন্তব্য করার পর, শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন, “তোমরা ইয়োবের ধৈর্য্যের কথা শুনিয়াছ; প্রভুর [“যিহোবার,” NW] পরিণামও দেখিয়াছ, ফলতঃ প্রভু [“যিহোবা,” NW] স্নেহপূর্ণ ও দয়াময়।” (যাকোব ৫:১১) যে-গ্রিক শব্দকে এখানে ‘ধৈর্য্য’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির অর্থ যাকোব আগের পদে যে-‘দীর্ঘসহিষ্ণুতা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, সেটির সমরূপ। এই দুটি শব্দের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে একজন পণ্ডিত ব্যক্তি লিখেছিলেন: “প্রথমটি হল সেই ধৈর্য, যখন লোকেরা আমাদের তাড়না করে আর পরেরটি হল, আমাদের কষ্ট দেয় এমন বিষয়গুলোর মধ্যে সাহসের সঙ্গে অটল থাকা।”

১৮ ইয়োব চরম দুর্দশা ভোগ করেছিলেন। তিনি আর্থিক ক্ষতি ভোগ করেছিলেন, সন্তান হারিয়েছিলেন এবং যন্ত্রণাদায়ক রোগে ভুগেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি এই মিথ্যা অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছিলেন যে, যিহোবা তাকে শাস্তি দিচ্ছেন। ইয়োব নীরবে সবকিছু সহ্য করে যাননি; তিনি তার পরিস্থিতির জন্য বিলাপ করেছিলেন আর এমনকি তিনি পরোক্ষভাবে বলেছিলেন যে, তিনি ঈশ্বরের চেয়ে ধার্মিক। (ইয়োব ৩৫:২) কিন্তু, তিনি কখনো বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেননি অথবা তার নীতিনিষ্ঠা ত্যাগ করেননি। তিনি ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দেননি, যদিও শয়তান বলেছিল যে, তিনি জলাঞ্জলি দেবেন। (ইয়োব ১:১১, ২১) এর ফল কী হয়েছিল? যিহোবা “ইয়োবের প্রথম অবস্থা হইতে শেষাবস্থা অধিক আশীর্ব্বাদযুক্ত করিলেন।” (ইয়োব ৪২:১২) যিহোবা ইয়োবের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তার সম্পদ দ্বিগুণ করেছিলেন এবং তার প্রিয়জনদের সঙ্গে এক পূর্ণ ও সুখী জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিয়ে তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। ইয়োবের অটল ধৈর্য তাকে যিহোবা সম্বন্ধে আরও পূর্ণরূপে বুঝতে সমর্থ করেছিল।

১৯. ইয়োবের ধৈর্য বজায় রাখা থেকে আমরা কী শিখি?

১৯ ইয়োবের ধৈর্য বজায় রাখা থেকে আমরা কী শিখি? ইয়োবের মতো আমরাও হয়তো অসুস্থতা এবং অন্যান্য কষ্ট ভোগ করি। আমরা হয়তো পুরোপুরি বুঝতে পারি না যে, কোনো একটা পরীক্ষা যিহোবা আমাদের ওপর কেন ঘটতে দেন। কিন্তু, এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারি: আমরা যদি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে আমরা আশীর্বাদ লাভ করব। যারা যিহোবাকে আন্তরিকভাবে অন্বেষণ করে, তাদেরকে যিহোবা আশীর্বাদ করবেনই করবেন। (ইব্রীয় ১১:৬) যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।”—মথি ১০:২২; ২৪:১৩.

‘যিহোবার দিন আসিবে’

২০. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবার দিন আসবে?

২০ যদিও যিহোবা ধৈর্য দেখান কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি ন্যায়পরায়ণ আর তাই তিনি চিরকাল দুষ্টতা সহ্য করবেন না। তাঁর ধৈর্যের সীমা আছে। পিতর লিখেছিলেন: “[ঈশ্বর] পুরাতন জগতের প্রতি মমতা করেন নাই।” যদিও নোহ ও তার পরিবার রক্ষা পেয়েছিল কিন্তু সেই ভক্তিহীন জগৎ জল দ্বারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া, যিহোবা সদোম ও ঘমোরার ওপর বিচার নিয়ে এসেছিলেন, সেই নগরগুলোকে ভস্মীভূত করে দিয়েছিলেন। এই বিচারগুলো “যাহারা ভক্তিবিরুদ্ধ আচরণ করিবে, তাহাদের দৃষ্টান্তস্বরূপ।” তাই, এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি: ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিন আসিবে।’২ পিতর ২:৫, ৬; ৩:১০.

২১. কীভাবে আমরা ধৈর্য দেখাতে পারি এবং পরের প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়টা বিবেচনা করব?

২১ তা হলে, আসুন অন্যেরা যাতে রক্ষা পেতে পারে, সেইজন্য তাদেরকে মন পরিবর্তন করতে সাহায্য করে আমরা যিহোবার ধৈর্যকে অনুকরণ করি। এ ছাড়া, আমরা যাদের কাছে প্রচার করি, তারা সাড়া না দিলেও ধৈর্যপূবর্ক সুসমাচার ঘোষণা করে আসুন আমরা ভাববাদীদের অনুকরণ করি। অধিকন্তু, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের প্রচুররূপে আশীর্বাদ করবেন, যদি আমরা ইয়োবের মতো পরীক্ষা সহ্য করি এবং নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখি। আমরা যখন দেখি যে, সারা পৃথিবীতে সুসমাচার প্রচার করার ক্ষেত্রে তাঁর লোকেদের প্রচেষ্টার ওপর যিহোবা প্রচুর আশীর্বাদ করেছেন, তখন পরিচর্যায় আনন্দিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আমাদের রয়েছে। এটা আমরা পরের প্রবন্ধে দেখতে পাব।

আপনার কি মনে আছে?

• কেন যিহোবা ধৈর্য দেখান?

• ভাববাদীদের ধৈর্য থেকে আমরা কী শিখি?

• ইয়োব কীভাবে ধৈর্য দেখিয়েছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?

• কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবার ধৈর্যের সীমা আছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর ধৈর্য নিখুঁতভাবে তাঁর পিতার ধৈর্যকে প্রতিফলিত করেছিল

[২০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিরমিয়ের ধৈর্যকে যিহোবা কীভাবে পুরস্কৃত করেছিলেন?

[২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ইয়োবের ধৈর্যকে যিহোবা কীভাবে পুরস্কৃত করেছিলেন?