যিহোবা তাঁকে খুঁজে পেতে আমাকে সাহায্য করেছিলেন
জীবন কাহিনী
যিহোবা তাঁকে খুঁজে পেতে আমাকে সাহায্য করেছিলেন
বলেছেন ফ্লরেন্স ক্লার্ক
আমি আমার গুরুতর অসুস্থ স্বামীর হাত ধরে রেখেছিলাম। একজন আ্যংলিকান হিসেবে, আমি ঈশ্বরের কাছে আমার স্বামীর আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করেছিলাম এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে সে যদি বেঁচে থাকে, তা হলে ঈশ্বরের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত আমি তাঁকে খুঁজব। এরপর আমি তাঁরই হব।
আমি ফ্লরেন্স চুলুং, ১৯৩৭ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার দূরবর্তী কিমবার্লে মালভূমি অঞ্চলের আ্যবরিজিনাল উমবুলগুরি গোত্রে জন্মগ্রহণ করি।
আমার ছেলেবেলার ভাবনাহীন, আনন্দময় দিনের অনেক সুখস্মৃতি রয়েছে। যদিও আমি গির্জার মিশন থেকে ঈশ্বর ও বাইবেল সম্বন্ধে কিছু মৌলিক বিষয় শিখেছিলাম কিন্তু আমার মা-ই আমাকে খ্রিস্টীয় নীতিগুলো শিখিয়েছিলেন। তিনি নিয়মিতভাবে আমাকে বাইবেল পড়ে শোনাতেন আর একেবারে অল্প বয়স থেকেই আমি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য ভালবাসা গড়ে তুলেছিলাম। এ ছাড়া, আমি আমার এক মাসিকে খুবই শ্রদ্ধা করতাম, যিনি তার গির্জার একজন মিশনারি ছিলেন। মনে মনে আমি তার আদর্শ অনুসরণ করতে চেয়েছিলাম।
আগে ফরেস্ট রিভার মিশন বলে পরিচিত আমাদের সম্প্রদায়ে, প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। প্রতিদিন সকালে কেবল দুই ঘন্টার জন্য আমি স্কুলে যেতাম। এর অর্থ আমি খুব বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারিনি আর এই বিষয়টাই বাবাকে চিন্তিত করেছিল। তিনি চেয়েছিলেন যেন তার ছেলেমেয়েরা আরও ভাল শিক্ষা লাভ করে আর তাই তিনি পরিবার নিয়ে উমবুলগুরি ছেড়ে উইন্ডেম শহরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার দিনটা আমার জন্য অনেক কষ্টের ছিল কিন্তু উইন্ডেমে পরবর্তী চার বছর অর্থাৎ ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত, আমি পুরোপুরিভাবে স্কুলে যোগ দিয়েছিলাম। আমাকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি আমার বাবার কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
আমার মা স্থানীয় ডাক্তারের জন্য কাজ করতেন আর ১৫ বছর বয়সে আমি যখন পড়াশোনা বন্ধ করে দিই, তখন সেই ডাক্তার আমাকে উইন্ডেম হাসপাতালে নার্স হিসেবে চাকরি করার প্রস্তাব দেন। আমি সানন্দে সেই প্রস্তাবে রাজি হই, কারণ সেই সময়ে চাকরি দুষ্প্রাপ্য ছিল।
কয়েক বছর পর, আ্যলেক নামে একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়, যে পশুপালন করত। ১৯৬৪ সালে ডার্বিতে আমাদের বিয়ে হয়, যেখানে আমি নিয়মিতভাবে আ্যংলিকান চার্চে যোগ দিতাম। সেই সময়ে একদিন যিহোবার সাক্ষিরা আমার ঘরে আসে। আমি তাদের বলেছিলাম যে, আমি মোটেও আগ্রহী নই এবং তারা যেন আর না আসে। তবে তারা এমন কিছু বলেছিল যেটা আমাকে কৌতূহলী করে তুলেছিল আর তা হচ্ছে ঈশ্বরের একটি ব্যক্তিগত নাম রয়েছে, যা হল যিহোবা।
“তুমি কি নিজে নিজে প্রার্থনা করতে পারো না?”
১৯৬৫ সালে জীবন বেশ দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। আমার স্বামীর তিন বার বেশ গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটে—দুবার ঘোড়ার সঙ্গে ও একবার গাড়ি সংক্রান্ত। আনন্দের বিষয় যে, সে এই আঘাতগুলো কাটিয়ে উঠেছিল এবং কাজে ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু, অল্প সময় পরেই ঘোড়ার সঙ্গে তার আরেকবার দুর্ঘটনা ঘটে। এইবার সে মাথায় মারাত্মক আঘাত পায়। আমি হাসপাতালে পৌঁছালে ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন যে, আমার স্বামীর বাঁচার কোনো আশাই নেই। আমি একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম। একজন নার্স স্থানীয় যাজককে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু সেই যাজক বলেছিলেন: “আজ নয়। আমি আগামীকাল আসব!”
আমি আশা করেছিলাম যে, যাজক আমার পাশে থেকে আমার সঙ্গে প্রার্থনা করবেন আর এই বিষয়টা আমি নানকে বলেছিলাম। তিনি বলেছিলেন: “কী দরকার? তুমি কি নিজে নিজে প্রার্থনা করতে পারো না?” তাই, আমি গির্জার মূর্তির সামনে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করতে শুরু করি—কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমার স্বামী মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল বলেই মনে হচ্ছিল। আমি চিন্তা করছিলাম, ‘আমার স্বামী যদি মারা যায়, তা হলে আমার কী হবে?’ এ ছাড়া, আমার তিন ছেলেমেয়ের—ক্রিস্টিন, নানেট ও জেফ্রির—বিষয়েও আমি চিন্তিত ছিলাম। বাবাকে ছাড়া তাদেরই বা কী হবে? আনন্দের বিষয় যে, তিন দিন পর আমার স্বামীর জ্ঞান ফিরে আসে এবং ১৯৬৬ সালের ৬ই ডিসেম্বর সে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়।
যদিও আমার স্বামী অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিল কিন্তু সে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তার স্মৃতিশক্তি কিছুটা নষ্ট হয়ে যায় এবং সে হিংস্র ও বদমেজাজি আচরণ করতে থাকে। তার পক্ষে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছিল আর তারা যদি বড়দের মতো আচরণ না করত, তা হলে সে তাদের প্রতি খুবই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠত। তার যত্ন নেওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়েছিল। বলতে গেলে তার প্রায় সব কাজই আমার করে দিতে হতো। এমনকি আমি তাকে আবারও পড়তে ও লিখতে শিখিয়েছিলাম। ঘরের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তার যত্ন নেওয়ার যে-চাপ, আমাকে সেটার বিরাট মাশুল দিতে হয়েছিল আর এর ফলে আমার স্নায়ুদৌর্বল্য ঘটে। আমার স্বামীর দুর্ঘটনার সাত বছর পর, আমার স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে, আমরা কিছু সময়ের জন্য পৃথক থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে দক্ষিণের পার্থ্ শহরে চলে গিয়েছিলাম। আমি সেখানে যাওয়ার আগেই, আমার ছোট বোন পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার একটা ছোট শহর কুনুনুরায় যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিল। সে আমাকে যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় * বই থেকে একটা ছবি দেখিয়েছিল, যেটা এক পরমদেশ পৃথিবী সম্বন্ধে বাইবেলের প্রতিজ্ঞাকে চিত্রিত করে। এ ছাড়া, সে এই বই থেকে দেখিয়েছিল যে ঈশ্বরের একটি ব্যক্তিগত নাম রয়েছে, যা হল যিহোবা আর এই বিষয়টা আমাকে আকৃষ্ট করে। যেহেতু গির্জা থেকে আমাকে কখনোই এই বিষয়গুলো বলা হয়নি, তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে পার্থে স্থায়ী হলে অবিলম্বে আমি যিহোবার সাক্ষিদের ফোন করব।
কিন্তু, আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কিছুটা দ্বিধা করছিলাম। এরপর একদিন সন্ধ্যায়, কলিংবেল বেজে ওঠে। আমার ছেলে দরজা খোলে এবং তাড়াতাড়ি ফিরে এসে আমাকে বলে, “মা, তুমি যাদের ফোন করবে বলেছিলে, তারা এসেছে।” আমি কিছুটা অবাক হয়ে তাকে বলেছিলাম, “তাদেরকে বলো আমি ঘরে নেই!” কিন্তু সে উত্তর দিয়েছিল, “মা, তুমি তো জানো যে আমার মিথ্যা বলা উচিত হবে না।” নিজেকে শুধরে নিয়ে আমি দরজায় দেখা করতে যাই। তাদেরকে সম্ভাষণ জানানোর পর আমি তাদের চেহারায় কিছুটা
দ্বিধাদ্বন্দ্ব লক্ষ করেছিলাম। আসলে তারা অন্য একজন ভাড়াটের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, যিনি সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন। আমি তাদের ভিতরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, ক্রমাগত প্রশ্ন করে তাদেরকে নাজেহাল করে তুলেছিলাম কিন্তু বাইবেল থেকে সন্তোষজনক উত্তরগুলো পেয়েছিলাম।পরের সপ্তাহে আমি যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় বই ব্যবহার করে সাক্ষিদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলাম। সেই অধ্যয়ন আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য আমার ভালবাসাকে পুনরায় জাগিয়ে তুলেছিল। দুই সপ্তাহ পর আমি যিশু খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ সভায় যোগ দিয়েছিলাম। আমি প্রত্যেক রবিবার সভাগুলোতে যোগ দিতাম এবং খুব শীঘ্রই সপ্তাহের অন্যান্য সভাতেও যোগ দিতে শুরু করি। এ ছাড়া, আমি যা শিখছিলাম সেগুলো অন্যদের জানাতে শুরু করি। আমি লক্ষ করেছিলাম যে, অন্যদের বাইবেলের সত্যগুলো জানতে সাহায্য করা, আমার মানসিক ও আবেগগত স্বাস্থ্যের উন্নতি করেছিল। ছয় মাস পর পার্থে অনুষ্ঠিত একটা জেলা সম্মেলনে আমি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম।
আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করার সঙ্গে সঙ্গে আমি বিবাহের পবিত্রতা সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করেছিলাম আর ১ করিন্থীয় ৭:১৩ পদের নীতিটিও এর অন্তর্ভুক্ত, যা বলে: “যে স্ত্রীর অবিশ্বাসী স্বামী আছে, আর সেই ব্যক্তি তাহার সহিত বাস করিতে সম্মত হয়, তবে সে স্বামীকে পরিত্যাগ না করুক।” এই শাস্ত্রপদ আমাকে আ্যলেকের কাছে ফিরে যেতে প্রেরণা দিয়েছিল।
ডার্বিতে ফিরে আসা
আমার স্বামীর কাছ থেকে দূরে থাকার পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পর, ১৯৭৯ সালের ২১শে জুন আমি ডার্বিতে ফিরে আসি। অবশ্য, আমি অনিশ্চিত বোধ করছিলাম এবং ফিরে গেলে সে কীরকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা ভাবছিলাম। আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি ফিরে আসায় সে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিল, তবে আমি যিহোবার সাক্ষি হওয়ায় সে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছিল। সে তখনই আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল যেন আমি পার্থে যাওয়ার আগে যে-গির্জায় যোগ দিতাম, যেটাতে সে-ও যোগ দিত, সেখানেই যোগ দিই। আমি বুঝিয়ে বলেছিলাম যে, আমি তা করতে পারব না। আমি তার মস্তকপদের সম্মান করতে এবং একজন খ্রিস্টান স্ত্রী হিসেবে আমার যথাসাধ্য করতে কঠোর প্রচেষ্টা করেছিলাম। আমি তার সঙ্গে যিহোবা এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তাঁর অপূর্ব প্রতিজ্ঞাগুলোর বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।
তা সত্ত্বেও, এক সময়ে আ্যলেক আমার নতুন জীবনধারাকেই কেবল মেনে নেয়নি কিন্তু সেইসঙ্গে আমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতেও শুরু করেছিল, যেন আমি সম্মেলন ও সাপ্তাহিক সভাগুলোতে যোগ দিতে পারি। আমি যাতে খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় ব্যবহার করতে পারি, সেইজন্য যখন সে একটা গাড়ি—অস্ট্রেলিয়ার দূরবর্তী এই অঞ্চলের জন্য এক মূল্যবান সম্পদ—কিনেছিল, তখন আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম। ভাইবোনেরা আর সেইসঙ্গে ভ্রমণ অধ্যক্ষও মাঝে মাঝে আমাদের ঘরে কয়েক রাত থাকত। এটা আ্যলেককে অন্যান্য সাক্ষির সঙ্গে পরিচিত হতে সক্ষম করেছিল এবং সে তাদের সাহচর্য পছন্দ করত বলে মনে হয়েছিল।
নিজেকে যিহিষ্কেলের মতো মনে হয়েছিল
ভাইবোনদের সাক্ষাৎগুলো আমি উপভোগ করতাম কিন্তু আমি একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলাম। ডার্বি শহরে আমি একাই সাক্ষি ছিলাম। সবচেয়ে কাছাকাছি মণ্ডলীটি ছিল ২২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্রুম শহরে। তাই, আমি সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমার যথাসাধ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যিহোবার সাহায্যে আমি নিজেকে তৈরি করেছিলাম এবং ঘরে ঘরে সাক্ষ্য দিতে শুরু করেছিলাম। এই কাজ অনেক কঠিন ছিল কিন্তু আমি সবসময় প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলো স্মরণ করতাম: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।”—ফিলিপীয় ৪:১৩.
স্থানীয় পাদরিশ্রেণী আমার কাজ, বিশেষভাবে আ্যবরিজিনদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার কাজকে পছন্দ করত না। তারা আমাকে ভয় দেখাতে এবং আমার প্রচার কাজ বন্ধ করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের বিরোধিতা আমাকে কাজ চালিয়ে যেতে আরও বেশি সংকল্পবদ্ধ করেছিল আর সাহায্যের জন্য আমি যিহোবার কাছে নিয়মিতভাবে প্রার্থনা যিহিষ্কেল ৩:৮, ৯.
করতাম। আমি প্রায়ই যিহিষ্কেলকে বলা উৎসাহজনক এই কথাগুলো স্মরণ করতাম: “দেখ, আমি তাহাদের মুখের প্রতিকূলে তোমার মুখ, এবং তাহাদের কপালের প্রতিকূলে তোমার কপাল দৃঢ় করিলাম। যে হীরক চক্মকি পাথর হইতেও দৃঢ়, তাহার ন্যায় আমি তোমার কপাল দৃঢ় করিলাম; . . . তাহাদিগকে ভয় করিও না, ও তাহাদের মুখ দেখিয়া উদ্বিগ্ন হইও না।”—আমি কেনাকাটা করার সময়ে বেশ কয়েকবার একটা গির্জা সংঘের দুজন ব্যক্তি আমার কাছে এসেছিল। অন্যান্য ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টায়, তারা চিৎকার করে অমার্জিত ভাষায় আমাকে উপহাস করেছিল। কিন্তু, আমি তাদের কথার কোনোরকম প্রতিবাদ করিনি। একবার আমি যখন একজন আগ্রহী মহিলার সঙ্গে পুনর্সাক্ষাৎ করছিলাম, তখন স্থানীয় গির্জা থেকে একজন পরিচারক এসে আমার সম্বন্ধে অভিযোগ করেছিলেন যে, আমি যিশুকে বিশ্বাস করি না। তিনি আমার হাত থেকে বাইবেল কেড়ে নিয়ে সেটি মুখের সামনে ধরে ঝাঁকিয়ে আবার আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সরাসরি তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি নম্রভাবে কিন্তু দৃঢ়তার সঙ্গে যোহন ৩:১৬ পদ উদ্ধৃতি করেছিলাম এবং তাকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে, আমি যিশুকে বিশ্বাস করি। আমাকে আস্থা সহকারে উত্তর দিতে দেখে তিনি খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এবং আর কোনো কথা না বলে চলে গিয়েছিলেন।
আমি ডার্বি এলাকার আ্যবরিজিনদের কাছে প্রচার করে আনন্দ পেতাম। একজন স্থানীয় যাজক আমাকে একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের লোকেদের কাছে যেতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনিই বদলি হয়ে গিয়েছিলেন। এর ফলে, আমি তাদেরকে বাইবেলের বার্তা জানাতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমি সবসময়ই আমার মাসির মতো মিশনারি হতে চেয়েছিলাম আর এখন আমি মিশনারির কাজই করছিলাম অর্থাৎ অন্যদের ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করছিলাম। আ্যবরিজিনদের মধ্যে অনেকেই আমার প্রচারের প্রতি অনুকূলভাবে সাড়া দিয়েছিল এবং আমি বেশ কয়েকটা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলাম।
আমার আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন
পাঁচ বছর ধরে, ডার্বিতে আমি একাই যিহোবার সাক্ষি ছিলাম। সহউপাসকদের সঙ্গে নিয়মিত সভাগুলো থেকে
উৎসাহ না পেয়ে আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকা, আমার কাছে কঠিন বলে মনে হয়েছিল। একবার, আমি অত্যন্ত নিরুৎসাহ বোধ করছিলাম আর তাই গাড়ি নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছিলাম। বিকেলে আমি যখন ঘরে ফিরে আসি, তখন দেখতে পাই যে একজন বোন ও তার সাত জন ছেলেমেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা অনেক দূরের ব্রুম শহরের মণ্ডলী থেকে আমার জন্য সাহিত্যাদি নিয়ে এসেছিল। তখন থেকে বেটি বাটারফিল্ড নামে এই বোন, মাসে একবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ডার্বিতে এসে আমার সঙ্গে থাকবেন বলে ঠিক করেছিলেন। আমরা একসঙ্গে প্রচারে যেতাম আর তারপর আমার ঘরে প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন করতাম। পালাক্রমে, আমিও মাসে একবার ব্রুমে যেতাম।ব্রুমের ভাইয়েরা অনেক সাহায্যকারী ছিল আর মাঝে মাঝে তারা প্রচারে আমাকে সাহায্য করার জন্য দীর্ঘ যাত্রা করে ডার্বিতে আসত। অন্যান্য শহর থেকে যে-ভাইবোনেরা ডার্বি শহর দিয়ে অন্য জায়গাতে যেত, তাদেরকে আমার সঙ্গে দেখা করার এবং প্রচারে যোগ দেওয়ার জন্য তারা পরামর্শ দিত। এ ছাড়া, এই ভ্রমণকারীরা আমার জন্য জনসাধারণের বক্তৃতার ক্যাসেট নিয়ে আসত। কেউ কেউ আমার সঙ্গে প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নে যোগ দিত। এই সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎগুলো অনেক উৎসাহজনক ছিল।
আরও সাহায্য আসতে যাচ্ছিল
কয়েক বছর ধরে আমি বেশ উৎসাহ পাচ্ছিলাম, যখন আর্থার ও মেরি উইলিস নামে এক অবসরপ্রাপ্ত দম্পতি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চল থেকে কিছুটা ঠাণ্ডার সময়ে তিন মাসের জন্য আমাকে সাহায্য করতে আসত। ভাই উইলিস অধিকাংশ সভা পরিচালনা করতেন এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় নেতৃত্ব দিতেন। আমরা একসঙ্গে কিমবার্লে মালভূমির আরও দূরবর্তী অঞ্চলে গিয়ে সেখানকার খামারগুলোতে লোকেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতাম। প্রত্যেক বারই ভাই ও বোন উইলিস চলে গেলে, আমি বিরাট শূন্যতা অনুভব করতাম।
অবশেষে, ১৯৮৩ সালের প্রায় শেষের দিকে আমি একটা সুসংবাদ শুনেছিলাম যে, একটা পরিবার—ড্যানি ও ডেনিজ স্টারজিয়ন এবং তাদের চার ছেলে—ডার্বিতে থাকার জন্য আসছে। তারা আসার পর, আমরা নিয়মিত সাপ্তাহিক সভাগুলোর ব্যবস্থা করতে ও একসঙ্গে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যোগ দিতে সক্ষম হয়েছিলাম। ২০০১ সালে এখানে একটা মণ্ডলী গঠিত হয়। বর্তমানে ২৪ জন রাজ্যের প্রকাশকসহ ডার্বিতে একটা দৃঢ় মণ্ডলী রয়েছে, যেখানে দুজন প্রাচীন ও একজন পরিচারক দাস আধ্যাত্মিকভাবে আমাদের উত্তম যত্ন নিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে আমাদের সভাগুলোতে প্রায় ৩০ জন উপস্থিত থাকে।
অতীতের বছরগুলোর দিকে ফিরে তাকালে, যিহোবা কীভাবে তাঁর সেবা করার জন্য আমাকে সাহায্য করেছেন, তা দেখে আমি অনেক উৎসাহ পাই। যদিও আমার স্বামী এখনও পর্যন্ত বিশ্বাসী হয়নি কিন্তু সে অন্যান্য উপায়ে আমাকে সমর্থন করে যাচ্ছে। আমার নিজের পরিবারের পাঁচ জন সদস্য—আমার দুই মেয়ে, দুই নাতনি ও এক বোনঝি—বাপ্তাইজিত সাক্ষি হয়েছে। এ ছাড়া, আমার আরও কয়েক জন আত্মীয় যিহোবার লোকেদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করছে।
যিহোবা তাঁকে খুঁজে পেতে আমাকে সাহায্য করেছিলেন বলে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। আমি চিরকাল তাঁরই থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।—গীতসংহিতা ৬৫:২.
[পাদটীকা]
^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত কিন্তু এখন আর ছাপানো হয় না।
[১৫ পৃষ্ঠার মানচিত্র/চিত্রগুলো]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
অস্ট্রেলিয়া
উইন্ডেম
কিমবার্লে মালভূমি
ডার্বি
ব্রুম
পার্থ্
[সৌজন্যে]
ক্যাঙ্গারু ও লায়ার পাখি: Lydekker; koala: Meyers
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৫৩ সালে উইন্ডেম হাসপাতালে একজন নার্স হিসেবে কাজ করছি
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
২০০৫ সালে ডার্বি মণ্ডলী