সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য”

“সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য”

“সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য”

“তোমরা . . . পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।”—প্রেরিত ১:৮.

১. কখন এবং কোথায় শিষ্যরা প্রথম মথি ২৪:১৪ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণী শুনেছিল?

 মথি চব্বিশ অধ্যায় চোদ্দো পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলো এত পরিচিত যে, আমাদের অনেকেরই সেটা মুখস্থ। আর সত্যিই তা কতই না উল্লেখযোগ্য এক ভবিষ্যদ্বাণী! শিষ্যরা যখন প্রথম এই ভবিষ্যদ্বাণী শুনেছিল তখন তারা কী চিন্তা করেছিল, তা একটু কল্পনা করে দেখুন! সময়টা ছিল সা.কা. ৩৩ সাল। শিষ্যরা প্রায় তিন বছর ধরে যিশুর সঙ্গে সঙ্গে আছে এবং এখন তারা তাঁর সঙ্গে যিরূশালেমে এসেছে। তারা তাঁর অলৌকিক কাজগুলো দেখেছে এবং তাঁর শিক্ষাগুলো শুনেছে। যদিও যিশু তাদেরকে যে-মূল্যবান সত্যগুলো শিখিয়েছিলেন, সেগুলো জেনে তারা আনন্দিত হয়েছিল কিন্তু তারা খুব ভাল করেই জানত যে, সকলে তাদের মতো আনন্দিত হবে না। যিশুর এমন অনেক শত্রু ছিল, যারা অনেক শক্তিশালী ও সেইসঙ্গে প্রভাবশালী।

২. শিষ্যদের কোন বিপদ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হতে হবে?

জৈতুন পর্বতে চার জন শিষ্য যিশুর সঙ্গে বসে মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথাগুলো শুনছিল, যখন তিনি আসন্ন সেই বিপদ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর বিষয়ে বলেছিলেন, যেগুলোর মুখোমুখি শিষ্যদের হতে হবে। আগে এক সময় যিশু তাদের বলেছিলেন যে, তাঁকে হত্যা করা হবে। (মথি ১৬:২১) কিন্তু এখন, পর্বতে বসে তিনি এই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন যে, তাদেরকেও নিষ্ঠুর তাড়না ভোগ করতে হবে। “লোকেরা ক্লেশ দিবার জন্য তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, ও তোমাদিগকে বধ করিবে,” তিনি বলেছিলেন। “আর আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদিগকে দ্বেষ করিবে।” শুধু তা-ই নয়। ভাক্ত ভাববাদীরা অনেককে ভ্রান্ত করবে। অন্যেরা বিঘ্ন পাবে এবং পরস্পরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে ও পরস্পরকে ঘৃণা করবে। এ ছাড়া কারো কারো, বস্তুতপক্ষে “অধিকাংশ লোকের” ঈশ্বর ও তাঁর বাক্যের প্রতি প্রেম শীতল হয়ে যাবে।—মথি ২৪:৯-১২.

৩. মথি ২৪:১৪ পদে পাওয়া যিশুর কথাগুলো কেন সত্যিই আশ্চর্যজনক?

এইরকম এক নেতিবাচক পরিস্থিতি সম্বন্ধে বলার পরই, যিশু এমন এক উক্তি করেছিলেন, যা নিশ্চয়ই শিষ্যদের বিস্মিত করেছিল। তিনি বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (মথি ২৪:১৪) হ্যাঁ, যিশু ইস্রায়েলে যে-কাজ—‘সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া’—শুরু করেছিলেন, তা ক্রমাগত চলবে এবং পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে যাবে। (যোহন ১৮:৩৭) সত্যিই তা কতই না আশ্চর্যজনক এক ভবিষ্যদ্বাণী! “সর্ব্ব জাতির” কাছে সেই কাজ প্রসারিত করা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে; ‘সমুদয় জাতির দ্বেষের’ মুখে তা করা হবে অলৌকিক কাজের মতো। এই বিশাল কাজ সম্পাদন করা কেবল যিহোবার সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতাকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর প্রেম, করুণা ও ধৈর্যকেও মহিমান্বিত করবে। অধিকন্তু, এটা তাঁর দাসদের বিশ্বাস এবং ভক্তি দেখানোর এক সুযোগ করে দেবে।

৪. কাদের সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ করতে বলা হয়েছিল এবং যিশু কোন সান্ত্বনা জুগিয়েছিলেন?

যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে এই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশই রাখেননি যে, তাদেরকে খুবই উল্লেখযোগ্য একটা দায়িত্ব সম্পন্ন করতে হবে। স্বর্গে যাওয়ার আগে যিশু তাদের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন: “পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” (প্রেরিত ১:৮) অবশ্য, অন্যেরা শীঘ্রই তাদের সঙ্গে যোগ দেবে। তা সত্ত্বেও, শিষ্যরা সংখ্যায় কম ছিল। এটা জানা নিশ্চয়ই কত সান্ত্বনাজনকই না ছিল যে, ঈশ্বরের শক্তিশালী পবিত্র আত্মা তাদেরকে এই ঐশিক দায়িত্ব সম্পাদন করতে শক্তি দেবে!

৫. সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ সম্বন্ধে শিষ্যরা কোন বিষয়টা জানত না?

শিষ্যরা জানত যে, তাদের সুসমাচার প্রচার করতে এবং ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিতে’ হবে। (মথি ২৮:১৯, ২০) কিন্তু তারা জানত না যে, কতটা ব্যাপকভাবে এই সাক্ষ্য দেওয়া হবে এবং তারা এও জানত না যে, কখন শেষ আসবে। আমরাও তা জানি না। এই বিষয়গুলো কেবল যিহোবাই নির্ধারণ করেন। (মথি ২৪:৩৬) যখন যিহোবার সন্তোষ অনুযায়ী সাক্ষ্য দেওয়া হবে, তখন তিনি এই দুষ্ট জগতের শেষ নিয়ে আসবেন। একমাত্র তখনই খ্রিস্টানরা বুঝতে পারবে যে, যিহোবা যতটা চেয়েছেন সেই অনুযায়ী প্রচার কাজ সম্পাদিত হয়েছে। সেই প্রাথমিক শিষ্যরা এই শেষ সময়ে সাক্ষ্যদানের ব্যাপকতা সম্বন্ধে কল্পনাও করতে পারেনি।

প্রথম শতাব্দীতে যে-সাক্ষ্য দেওয়া হয়

৬. সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে এবং এর অল্প কিছু সময় পরে কী ঘটেছিল?

প্রথম শতাব্দীতে, রাজ্য প্রচার এবং শিষ্য তৈরির কাজ বিস্ময়কর ফল উৎপন্ন করেছিল। সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রায় ১২০ জন শিষ্য যিরূশালেমের ওপরের কুঠুরিতে ছিল। তাদের ওপর ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা বর্ষিত হয়েছিল, প্রেরিত পিতর এই অলৌকিক কাজের অর্থ ব্যাখ্যা করে এক প্রেরণাদায়ক বক্তৃতা দিয়েছিলেন আর এতে প্রায় ৩,০০০ লোক বিশ্বাসী হয়েছিল ও বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। সেটা ছিল কেবল শুরু। সুসমাচার প্রচার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ধর্মীয় নেতাদের একগুঁয়ে প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, “যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল, প্রভু [“যিহোবা,” NW] দিন দিন তাহাদিগকে [শিষ্যদের] সহিত সংযুক্ত করিতেন।” শীঘ্রই “তাহাতে পুরুষদের সংখ্যা কমবেশ পাঁচ হাজার হইল।” এরপর, “উত্তর উত্তর অনেক পুরুষ ও স্ত্রীলোক বিশ্বাসী হইয়া প্রভুতে সংযুক্ত হইতে লাগিল।”—প্রেরিত ২:১-৪, ৮, ১৪, ৪১, ৪৭; ৪:৪; ৫:১৪.

৭. কর্ণীলিয়ের ধর্মান্তরিত হওয়া কেন এক লক্ষণীয় ঘটনা ছিল?

সাধারণ কাল ৩৬ সালে আরেকটা লক্ষণীয় ঘটনা ঘটেছিল—কর্ণীলিয় নামে একজন পরজাতি ব্যক্তি ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন ও বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। এই ঈশ্বর ভয়শীল ব্যক্তির কাছে যাওয়ার জন্য প্রেরিত পিতরকে নির্দেশনা দিয়ে যিহোবা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিবার’ বিষয়ে যিশুর আদেশ শুধু বিভিন্ন জায়গার যিহুদিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। (প্রেরিত ১০:৪৪, ৪৫) যারা নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? প্রেরিতরা এবং যিহূদিয়ার প্রাচীনরা যখন বুঝতে পেরেছিল যে, অন্যান্য জাতির—ন-যিহুদিদের—কাছেও সুসমাচার নিয়ে যেতে হবে, তখন তারা ঈশ্বরের গৌরব করেছিল। (প্রেরিত ১১:১, ১৮) এই সময়ের মধ্যে প্রচার কাজ যিহুদিদের মধ্যে ক্রমাগত ফল উৎপন্ন করে চলেছিল। কয়েক বছর পর, সম্ভবত প্রায় সা.কা. ৫৮ সালে পরজাতীয় বিশ্বাসী ছাড়াও আরও অনেক বা “কত সহস্র [যিহুদি] বিশ্বাসী” ছিল।—প্রেরিত ২১:২০.

৮. কীভাবে সুসমাচার আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে?

যদিও প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মধ্যে সংখ্যার বৃদ্ধি প্রেরণাদায়ক ছিল কিন্তু আমাদের কখনো সেই লোকেদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, যাদেরকে সেই সংখ্যা চিত্রিত করে। বাইবেলের যে-বার্তা তারা শুনেছিল, তা শক্তিশালী ছিল। (ইব্রীয় ৪:১২) যারা সেই বার্তা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছিল, তাদের জীবনকে এটি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করেছিল। আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের জীবনকে শুচি করেছিল, নতুন মনুষ্য বা ব্যক্তিত্ব পরিধান করেছিল এবং ঈশ্বরের সঙ্গে পুনরায় সম্মিলিত হয়েছিল। (ইফিষীয় ৪:২২, ২৩) আজকেও একই বিষয় সত্য। আর যারা সুসমাচার গ্রহণ করছে, তাদের সকলের অনন্তকাল বেঁচে থাকার অপূর্ব প্রত্যাশা রয়েছে।—যোহন ৩:১৬.

ঈশ্বরের সহকার্যকারী

৯. প্রাথমিক খ্রিস্টানরা তাদের কোন বিশেষ সুযোগ এবং দায়িত্ব রয়েছে বলে বুঝতে পেরেছিল?

যা কিছু সম্পাদিত হয়েছিল, সেটার কৃতিত্ব প্রাথমিক খ্রিস্টানরা নেয়নি। তারা বুঝতে পেরেছিল যে, পরিচারক হিসেবে তাদের কাজ ‘পবিত্র আত্মার পরাক্রমের’ সাহায্যে হয়েছিল। (রোমীয় ১৫:১৩, ১৯) যিহোবাই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি দিয়েছিলেন। একই সময়ে সেই খ্রিস্টানরা জানত যে, তাদের ‘ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী’ হওয়ার বিশেষ সুযোগ এবং দায়িত্ব রয়েছে। (১ করিন্থীয় ৩:৬-৯) এর ফলে, যিশুর আদেশের সঙ্গে মিল রেখে তারা সেই কাজে প্রাণপণ করেছিল, যে-কাজের ভার তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল।—লূক ১৩:২৪.

১০. সমস্ত জাতির কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কিছু প্রাথমিক খ্রিস্টান কোন প্রচেষ্টা করেছিল?

১০ “পরজাতীয়দের জন্য প্রেরিত” হিসেবে পৌল স্থল ও জলপথে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়েছিলেন, এশিয়া এবং গ্রিসের রোমীয় সাম্রাজ্যে অনেক মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। (রোমীয় ১১:১৩) এ ছাড়া, তিনি রোম এবং সম্ভবত স্পেনেও গিয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যে প্রেরিত পিতর, যাকে ‘ছিন্নত্বক্‌দের মধ্যে সুসমাচার’ ঘোষণা করার ভার দেওয়া হয়েছিল, তিনি সেই সময়কার যিহুদিধর্মের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বাবিলে পরিচর্যা করার জন্য অন্য দিক দিয়ে যাত্রা করেছিলেন। (গালাতীয় ২:৭-৯; ১ পিতর ৫:১৩) যারা প্রভুর কাজে পরিশ্রম করেছিল, তাদের অনেকের মধ্যে ছিল ত্রুফেণা ও ত্রুফোষা নামে দুজন মহিলা। পর্ষী নামে আরেকজন মহিলার কথাও বলা আছে, যিনি “প্রভুতে অত্যন্ত পরিশ্রম করিয়াছেন।”—রোমীয় ১৬:১২.

১১. কীভাবে যিহোবা শিষ্যদের প্রচেষ্টাগুলোতে আশীর্বাদ করেছিলেন?

১১ যিহোবা তাদের ও সেইসঙ্গে অন্যান্য উদ্যোগী কর্মীর প্রচেষ্টায় প্রচুর আশীর্বাদ করেছিলেন। সমস্ত জাতির কাছে সাক্ষ্য দেওয়া হবে, যিশু এই ভবিষ্যদ্বাণী বলার পর, ৩০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে পৌল লিখেছিলেন, ‘সুসমাচার আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচারিত হইয়াছে।’ (কলসীয় ১:২৩) সেই সময়ে কি শেষ এসেছিল? এক অর্থে এসেছিল। এটা সা.কা. ৭০ সালে যিহুদি বিধিব্যবস্থার ওপর এসেছিল, যখন রোমীয় সৈন্যরা যিরূশালেমের মন্দিরসহ সেই নগর ধ্বংস করে দিয়েছিল। কিন্তু, যিহোবা স্থির করেছিলেন যে, পৃথিবীব্যাপী শয়তানের বিধিব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসার আগে আরও বড় আকারে সাক্ষ্য দেওয়া হবে।

আজকে যে-সাক্ষ্য দেওয়া হয়

১২. প্রথম দিকের বাইবেল ছাত্ররা প্রচার করার আদেশকে কীভাবে বুঝেছিল?

১২ ধর্মভ্রষ্টতা বিদ্যমান থাকার দীর্ঘদিন পর, উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে শুদ্ধ উপাসনা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সময়ে বাইবেল ছাত্র হিসেবে পরিচিত যিহোবার সাক্ষিরা সারা পৃথিবীতে শিষ্য তৈরি করার আদেশ সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিল। (মথি ২৮:১৯, ২০) ১৯১৪ সালের মধ্যে, প্রায় ৫,১০০ জন সক্রিয়ভাবে প্রচার কাজে যোগ দিয়েছিল এবং প্রায় ৬৮টা জায়গায় সুসমাচার পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু, প্রথম দিকের সেই বাইবেল ছাত্ররা মথি ২৪:১৪ পদের কথাগুলোর তাৎপর্য পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেনি। উনবিংশ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই, বিভিন্ন বাইবেল সোসাইটি অনেক ভাষায় বাইবেল—যেটিতে সুসমাচার রয়েছে—অনুবাদ করেছিল ও ছাপিয়েছিল এবং সারা পৃথিবীতে বিতরণ করেছিল। তাই, কয়েক দশক ধরে বাইবেল ছাত্ররা যুক্তি দেখিয়েছিল যে, ইতিমধ্যেই সমস্ত জাতির কাছে সাক্ষ্য দেওয়া হয়ে গিয়েছে।

১৩, ১৪. উনিশশো আটাশ সালের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার একটা সংখ্যায় ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কোন স্পষ্ট বোধগম্যতা তুলে ধরা হয়েছিল?

১৩ ধীরে ধীরে, যিহোবা তাঁর লোকেদের তাঁর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে এক স্পষ্ট বোধগম্যতা প্রদান করেন। (হিতোপদেশ ৪:১৮) ১৯২৮ সালের ১লা ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় বলা হয়েছিল: “আমরা কি বলতে পারি যে, বাইবেল বিতরণের বিষয়টা ভবিষ্যদ্বাণীকৃত রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজকে সম্পাদন করেছে? কখনোই না! বাইবেলের এই বিতরণ সত্ত্বেও, পৃথিবীতে ঈশ্বরের সাক্ষিদের ছোট দলকে এখনও ঈশ্বরের [উদ্দেশ্য] ব্যাখ্যা করে এমন সাহিত্যাদি ছাপানোর কাজ এবং যে-ঘরগুলোতে এই বাইবেল অর্পণ করা হয়েছে, সেখানে সাক্ষাৎ করে যেতে হবে। তা না হলে লোকেরা আমাদের দিনের মশীহ সরকারের প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে অজ্ঞই থেকে যাবে।”

১৪ প্রহরীদুর্গ পত্রিকার সেই সংখ্যা আরও বলেছিল: “১৯২০ সালে, . . . বাইবেল ছাত্ররা মথি ২৪:১৪ পদে লিপিবদ্ধ প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে এক সঠিক বোধগম্যতা লাভ করেছিল। তারা তখন বুঝতে পেরেছিল যে, ‘এই সুসমাচার,’ যা পরজাতি অথবা সমস্ত জাতির কাছে সাক্ষ্য হিসেবে সমুদয় জগতে প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল, তা আসলে আসন্ন রাজ্যের সুসমাচার ছিল না বরং পৃথিবীর ওপর মশীহ রাজা যে তাঁর রাজত্ব শুরু করেছেন, সেই বিষয়ে এক সুসমাচার ছিল।”

১৫. উনিশশো বিশের দশক থেকে কীভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ প্রসারিত হয়েছে?

১৫ ‘সাক্ষিদের সেই ছোট দল’ ১৯২০ এর দশকে আর ছোট ছিল না। পরবর্তী দশকগুলোতে ‘আরও মেষের’ ‘বিস্তর লোককে’ শনাক্ত করা হয় এবং তাদেরকে একত্রিত করা হয়। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; যোহন ১০:১৬) আজকে দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে পৃথিবীর ২৩৫টা জায়গায় ৬৬,১৩,৮২৯ জন সুসমাচার প্রচারক রয়েছে। ভবিষ্যদ্বাণীর কী এক বিস্ময়কর পরিপূর্ণতা! এর আগে আর কখনো ‘রাজ্যের সুসমাচার’ এতটা ব্যাপক মাত্রায় প্রচারিত হয়নি। এর আগে পৃথিবীতে আর কখনো যিহোবার এত বিশ্বস্ত দাস ছিল না।

১৬. গত পরিচর্যা বছরে কী সম্পাদন করা হয়েছিল? (২৭-৩০ পৃষ্ঠার তালিকা দেখুন।)

১৬ সাক্ষিদের এই বিরাট দল একত্রে ২০০৫ সালের পরিচর্যা বছরে ব্যস্ত ছিল। দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৫টা জায়গায় সুসমাচার ঘোষণা করায় একশো কোটিরও বেশি ঘন্টা ব্যয় করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ পুনর্সাক্ষাৎ করা হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা হয়েছে। এই কাজ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা সম্পাদিত হয়েছে, যারা অন্যদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য জানানোর জন্য বিনামূল্যে তাদের সময় এবং সম্পদ ব্যয় করেছে। (মথি ১০:৮) যিহোবা তাঁর শক্তিশালী পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁর দাসদের তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য ক্রমাগত শক্তি দিয়ে যাচ্ছেন।—সখরিয় ৪:৬.

সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা

১৭. সুসমাচার প্রচার সম্বন্ধে যিশুর কথাগুলোর প্রতি যিহোবার লোকেরা কীভাবে সাড়া দিচ্ছে?

১৭ সুসমাচার প্রচারিত হবে, যিশু এই ভবিষ্যদ্বাণী করার পর যদিও প্রায় ২০০০ বছর কেটে গিয়েছে কিন্তু এই কাজের জন্য ঈশ্বরের লোকেদের উদ্যোগ এখনও কমে যায়নি। আমরা জানি যে, উত্তম কাজ করে চলার ব্যাপারে আমাদের সহ্যশক্তি দেখিয়ে আমরা যিহোবার প্রেম, করুণা এবং ধৈর্যের মতো গুণাবলি প্রতিফলিত করি। তাঁর মতো আমরাও চাই না যে, কেউ ধ্বংস হয়ে যাক বরং চাই যেন লোকেরা মন পরিবর্তন করে এবং যিহোবার সঙ্গে পুনরায় সম্মিলিত হয়। (২ করিন্থীয় ৫:১৮-২০; ২ পিতর ৩:৯) ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা উত্তপ্ত বা উদ্দীপিত হয়ে, যিহোবার সাক্ষিরা উদ্যোগের সঙ্গে পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত সুসমাচার ঘোষণা করে যাচ্ছে। (রোমীয় ১২:১১) এর ফলে, সমস্ত জায়গার লোকেরা সত্য গ্রহণ করছে এবং যিহোবার প্রেমময় নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনযাপন করছে। কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন।

১৮, ১৯. যারা সুসমাচারের প্রতি অনুকূল সাড়া দিয়েছে, তাদের কয়েক জন সম্বন্ধে কোন অভিজ্ঞতা আপনি বলতে পারেন?

১৮ চার্লস ছিলেন পশ্চিম কেনিয়ার একজন কৃষক। ১৯৯৮ সালে তিনি ৮,০০০ কেজিরও বেশি তামাক বিক্রি করেছিলেন এবং একটা সার্টিফিকেট লাভ করেছিলেন, যেখানে তাকে শ্রেষ্ঠ তামাক চাষী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। সেই সময়ে, তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। শীঘ্রই তিনি বুঝতে পারেন যে, যে-ব্যক্তি তামাক উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত তিনি প্রতিবেশীকে ভালাবাসার বিষয়ে যিশুর আদেশ অমান্য করছেন। (মথি ২২:৩৯) “শ্রেষ্ঠ তামাক চাষী” আসলে “শ্রেষ্ঠ ঘাতক” ছিলেন, এই উপসংহারে আসার পর চার্লস তামাক গাছের ওপর বিষ ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি উন্নতি করে নিজেকে উৎসর্গ করেন ও বাপ্তিস্ম নেন আর এখন একজন নিয়মিত অগ্রগামী ও পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করছেন।

১৯ কোনো সন্দেহ নেই যে, সারা পৃথিবীতে যে-সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ হচ্ছে, তার মাধ্যমে যিহোবা জাতিগুলোকে কম্পান্বিত করছেন এবং সেই মনোরঞ্জন বস্তুসকল—লোকেরা—আসছে। (হগয় ২:৭) পেদ্রু, যিনি পোর্তুগালে বাস করেন, তিনি ১৩ বছর বয়সে একটা সেমিনারিতে ঢোকেন। তার লক্ষ্য ছিল একজন মিশনারি হওয়া এবং বাইবেল সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া। কিন্তু কিছুদিন পর, তিনি সেমিনারি থেকে বেরিয়ে যান কারণ সেই ক্লাসগুলোতে বাইবেল থেকে খুব কমই শিক্ষা দেওয়া হতো। ছয় বছর পর তিনি লিসবনের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। তিনি তার মাসির সঙ্গে থাকতেন, যিনি একজন যিহোবার সাক্ষি আর এই মাসি তাকে বাইবেল অধ্যয়ন করতে উৎসাহিত করেন। সেই সময়ে পেদ্রু নিশ্চিত ছিলেন না যে, ঈশ্বর বলে কেউ আছেন কি না অথবা তিনি এই সিন্ধান্তও নিতে পারছিলেন না যে, বাইবেল অধ্যয়ন করবেন নাকি করবেন না। তিনি তার সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলেন। অধ্যাপক বলেছিলেন, মনোবিজ্ঞান শিক্ষা দেয় যে, যে-ব্যক্তি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, তিনি আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে। তাই, পেদ্রু বাইবেল অধ্যয়ন করার সংকল্প নেন। তিনি সম্প্রতি বাপ্তিস্ম নিয়েছেন আর এখন তিনিও বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করছেন।

২০. বিভিন্ন জাতির কাছে এতটা ব্যাপক মাত্রায় সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে বলে কেন আমরা আনন্দিত হতে পারি?

২০ আমরা এখনও জানি না যে, কতদূর পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন জাতির কাছে সাক্ষ্য দিতে হবে অথবা আমরা এও জানি না যে, কোন দিনে এবং মুহূর্তে শেষ আসবে। আমরা কেবল এটুকু জানি যে, তা খুব শীঘ্রই আসবে। আমরা আনন্দিত যে, এতটা ব্যাপক মাত্রায় সুসমাচার প্রচার করা অনেক ইঙ্গিতের মধ্যে একটা ইঙ্গিত যে, মনুষ্য সরকারগুলোকে সরিয়ে দিয়ে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় খুব কাছেই। (দানিয়েল ২:৪৪) প্রতিটা বছর পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ লক্ষ লোককে সুসমাচারের প্রতি সাড়া দেওয়ার এক সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এবং এটা আমাদের ঈশ্বর যিহোবাকে গৌরবান্বিত করে। বিশ্বস্ততা বজায় রাখা এবং আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে সমস্ত জাতির কাছে সাক্ষ্য বহন করার কাজে ব্যস্ত থাকা যেন আমাদের সংকল্প হয়। তা করার মাধ্যমে, আমরা নিজেদের ও সেইসঙ্গে যারা আমাদের কথা শোনে, তাদের রক্ষা করতে পারব।—১ তীমথিয় ৪:১৬.

আপনার কি মনে আছে?

• কেন মথি ২৪:১৪ পদ এক উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী?

• প্রাথমিক খ্রিস্টানরা প্রচার কাজে কোন প্রচেষ্টাগুলো করেছিল এবং এর ফল কী হয়েছিল?

• কীভাবে বাইবেল ছাত্ররা সমস্ত জাতির কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজন সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিল?

• যিহোবার লোকেদের গত পরিচর্যা বছরের কাজ সম্বন্ধে বিবেচনা করার সময় কোন বিষয়টা আপনার ওপর ছাপ ফেলেছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৭-৩০ পৃষ্ঠার তালিকা]

২০০৫ বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের পরিচর্যা বছরের রিপোর্ট

(বাঁধাই করা খণ্ড দেখুন)

[২৫ পৃষ্ঠার মানচিত্র/চিত্রগুলো]

পৌল সুসমাচার প্রচার করার জন্য স্থল ও জলপথে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়েছিলেন

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

কর্ণীলিয় ও তার পরিবারের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যিহোবা পিতরকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন