আমাদের কি একজন মশীহের প্রয়োজন আছে?
আমাদের কি একজন মশীহের প্রয়োজন আছে?
খুব সম্ভবত আপনি এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করতে পারেন, “আমাদের কি একজন মশীহের প্রয়োজন আছে?” আর এটা জিজ্ঞেস করা যুক্তিযুক্ত যে, একজন মশীহ আপনার ওপর প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেন কি না।
আপনি যার মতামতের প্রতি হয়তো সম্মান দেখান, তিনি আপনাকে আশ্বাস দিতে পারেন যে, এই প্রশ্নের উত্তরটা একেবারে স্পষ্ট ও সুনিশ্চিত: প্রত্যেকের মতোই আপনারও নিশ্চিতভাবে একজন মশীহের প্রয়োজন আছে। প্রথম শতাব্দীর একজন যিহুদি আইন বিশেষজ্ঞ মশীহ সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের যত প্রতিজ্ঞা, তাঁহাতেই সে সকলের ‘হাঁ’ হয়।” এইভাবে তিনি, পৃথিবীর সমস্ত জাতিকে আশীর্বাদ করার জন্য আমাদের সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে মশীহ যে-প্রধান ভূমিকা পালন করেন সেই বিষয়টা তুলে ধরেছিলেন। (২ করিন্থীয় ১:২০) মশীহের ভূমিকা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তাঁর আসা ও জীবন কাহিনী হচ্ছে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর কেন্দ্রবিন্দু। গত ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির দ্বারা ব্যবহৃত এক ছোট্ট পুস্তিকাতে, হেনরি এইচ. হ্যালি জোরের সঙ্গে বলেছিলেন: “পুরাতন নিয়ম, [মশীহের] আসার প্রতি এক প্রত্যাশা জাগানোর এবং পথ প্রস্তুত করার জন্য লেখা হয়েছিল।” কিন্তু তাঁর আসা কি অত্যাবশ্যক? আপনার কেন এই বিষয়ে চিন্তা করা উচিত?
বস্তুত, “মশীহ” শব্দটির অর্থ “অভিষিক্ত ব্যক্তি” এবং এটি সুপরিচিত “খ্রিস্ট” শব্দের সমার্থ। ১৯৭০ সালের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা সংস্করণ যে-ব্যক্তিকে “সর্বমহান মুক্তিদাতা” হিসেবে উল্লেখ করে, তাঁকে প্রথম মানব দম্পতি আদম ও হবার ভক্তিহীন কাজের জন্য আসতেই হতো। তাদেরকে পরমদেশে অন্তহীন জীবনের আনন্দদায়ক প্রত্যাশা দিয়ে সিদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিল কিন্তু তারা সেই প্রত্যাশা হারিয়েছিল। একজন বিদ্রোহী স্বর্গদূত, যে শয়তান দিয়াবল নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল, সে ইঙ্গিত করেছিল যে, তাদের সৃষ্টিকর্তা খুবই কঠোর এবং কোনটা ভাল ও কোনটা মন্দ তা তারা নিজেরাই নির্ধারণ করে আরও ভাল ফল পাবে।—আদিপুস্তক ৩:১-৫.
হবা প্রবঞ্চিত হয়েছিল এবং সেই মিথ্যাকে বিশ্বাস করেছিল। স্পষ্টতই, আদম ঈশ্বরের প্রতি তার আনুগত্যের চেয়ে তার স্ত্রীর সাহচর্যকে বেশি মূল্য দিয়েছিল, ফলে দিয়াবলের দ্বারা প্ররোচিত বিদ্রোহে সে-ও অংশী হয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩:৬; ১ তীমথিয় ২:১৪) তাদের কাজের মাধ্যমে তারা পরমদেশতুল্য পরিবেশে অন্তহীন জীবনের প্রত্যাশা ছাড়া আরও কিছু হারিয়েছিল। তারা তাদের অজাত বংশধরদের জন্য পাপ ও এর পরিণতি, মৃত্যু রেখে গিয়েছিল।—রোমীয় ৫:১২.
আমাদের সৃষ্টিকর্তা, যিহোবা সঙ্গে সঙ্গেই সেই বিদ্রোহের কারণে উদ্ভূত বিভিন্ন ঘটনার মন্দ প্রভাবগুলোকে দূর করার জন্য একটা ব্যবস্থা নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি এমন এক নীতির দ্বারা পুনরায় সম্মিলনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছিলেন, যেটি পরে মোশির ব্যবস্থার এক বৈধ নীতি হয়ে উঠবে আর তা হচ্ছে সমতুল্যতা। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:২১; ১ যোহন ৩:৮) মানব পরিবারের জন্য সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য অনুযায়ী, আদম ও হবার দুদর্শাগ্রস্ত যেকোনো বংশধরের এক পরমদেশ পৃথিবীতে অন্তহীন জীবন লাভ করার জন্য এই বৈধ নীতিটি কাজে লাগাতে হতো। এটি আমাদেরকে মশীহের দিকে পরিচালিত করে।
দিয়াবলকে শাস্তি দেওয়ার সময় যিহোবা ঈশ্বর, বাইবেলের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীতে ঘোষণা করেছিলেন: “আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৫) একজন বাইবেল পণ্ডিত মন্তব্য করেছিলেন যে, “শাস্ত্রে উপস্থাপিত মশীহ সম্বন্ধীয় প্রতিজ্ঞাগুলোর কাহিনী [এই] বিবৃতি দিয়েই শুরু হয়।” আরেকজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেছিলেন যে, মশীহ হচ্ছেন ঈশ্বরের হাতিয়ার, যা “পতনের ফলে ঘটিত সমস্ত দুর্দশাকে দূর করে দেবে” আর সেইসঙ্গে মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসবে।—ইব্রীয় ২:১৪, ১৫.
তবে, আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন যে, বর্তমানে মানবজাতি কোনোভাবেই আশীর্বাদ লাভ করছে না। বরং মানবজাতি নৈরাশ্য ও হতাশার মধ্যে ডুবে রয়েছে। তাই, দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে যে, “এখনও অনেক যিহুদি, একজন মশীহের আসার অপেক্ষায় রয়েছে” আর তিনি “অবিচারগুলো দূর করার সঙ্গে সঙ্গে লোকেদের শত্রুদের পরাজিত করবেন।” কিন্তু, বাইবেল বলে যে, মশীহ ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছেন। বাইবেল যা বলে তা বিশ্বাস করার কি কোনো কারণ রয়েছে? পরবর্তী প্রবন্ধটি এর উত্তর দেবে।