পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
মথি ৫:২২ পদে কোন তিনটে বিপদ সম্বন্ধে যিশু সাবধান করেছিলেন?
পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের এই সাবধানবাণী দিয়েছিলেন: “আমি তোমাদের বলছি, যে কেউ কোনো লোকের প্রতি ক্রুদ্ধ [“ক্রমাগত ক্রুদ্ধ,” NW] হয়, বিচারে তাকে তার জবাব দিহি করতে হবে। আর কেউ যদি কোন লোককে বলে, ‘ওরে মূর্খ’ (অর্থাৎ নির্বোধ) তবে তাকে ইহুদী মহাসভার সামনে তার জবাব দিতে হবে। কেউ যদি কাউকে বলে ‘তুমি পাষণ্ড’, তবে তাকে নরকের আগুনেই [“অগ্নিময় গিহেন্নায়,” NW] তার জবাব দিতে হবে।”—মথি ৫:২২, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন।
যিশু যিহুদিদের কাছে পরিচিত—বিচার, মহাসভা ও গিহেন্না—কথাগুলো ব্যবহার করে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, পাপ যত গুরুতর হবে সেটার শাস্তিও তত কড়া হবে।
প্রথমে, যিশু বলেছিলেন যে, প্রত্যেক ব্যক্তি যিনি কোনো লোকের প্রতি ক্রমাগত ক্রুদ্ধ হন, তাকে “বিচারে” বা বিচার-সভায় নিয়ে যাওয়া হবে। পরম্পরাগত রীতি অনুযায়ী, এই বিচার-সভাগুলো নগরে নগরে স্থাপন করা হতো, যেগুলো ১২০ জন বা তারও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে নিয়ে গঠিত ছিল। (মথি ১০:১৭; মার্ক ১৩:৯) এই ধরনের এক বিচার-সভায় বিচারকদের এমনকি হত্যার মামলাগুলো বিচার করারও অধিকার ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৮; ১৯:১২; ২১:১, ২) তাই, যিশু বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, একজন যদি অন্য লোকের প্রতি প্রচণ্ড রাগ পুষে রাখেন, তা হলে তিনি এক গুরুতর পাপ করছেন।
এরপর যিশু বলেছিলেন যে, একজন ব্যক্তি যিনি “কোন লোককে বলে, ‘ওরে মূর্খ’ (অর্থাৎ নির্বোধ) তবে তাকে ইহুদী মহাসভার সামনে তার জবাব দিতে হবে।” দ্যা নিউ থেয়ারস্ গ্রিক-ইংলিশ লেক্সিকন অভ্ দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট অনুসারে, “মূর্খ” হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দটি “খ্রিস্টের সময়ে ভর্ৎসনা করার জন্য যিহুদিদের দ্বারা ব্যবহৃত একটা আখ্যা” ছিল। তাই, কোনো লোকের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করার জন্য অপমানজনক মানহানিকর আখ্যা ব্যবহার করা যে কতটা গুরুতর ছিল, সেই বিষয়ে যিশু সাবধান করছিলেন। এই কথাগুলো বলার দ্বারা যিশু এটা বলতে চেয়েছিলেন যে, একজন ব্যক্তি যিনি এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন তিনি কেবল এক বিচারসভায় নয় কিন্তু মহাসভায়—যিরূশালেমে অবস্থিত এক বিচারক গোষ্ঠী, যা মহাযাজক ও ৭০ জন প্রাচীন ও অধ্যাপককে নিয়ে গঠিত—বিচারিত হবেন।—মার্ক ১৫:১.
শেষে, যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, একজন ব্যক্তি যদি অন্যজনকে “তুমি পাষণ্ড,” বলেন, তা হলে তিনি অগ্নিময় গিহেন্নায় যাবেন। ‘গিহেন্না’ কথাটি ইব্রীয় শব্দ গেহ্ হিন্নম থেকে অনুবাদিত হয়েছে, যেটির অর্থ ‘হিন্নোম উপত্যকা’ যা প্রাচীন যিরূশালেমের পশ্চিম ও দক্ষিণে অবস্থিত ছিল। যিশুর দিনে এই উপত্যকাটা আবর্জনা পোড়ানোর এক স্থান হয়ে উঠেছিল, এমনকি যাদেরকে সম্মাজনকভাবে কবর দেওয়ার যোগ্য মনে করা হতো না এমন সব জঘন্য অপরাধীর শবও সেখানে পোড়ানো হতো। তাই, ‘গিহেন্না’ চিরধ্বংসের এক উপযুক্ত প্রতীক ছিল।
তা হলে, “পাষণ্ড” শব্দটির অর্থ কী? এখানে যে-শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি এক ইব্রীয় শব্দের সমরূপ, যেটির অর্থ “বিদ্রোহী” বা “অবাধ্য।” এটি একজন ব্যক্তিকে নৈতিকভাবে অযোগ্য, একজন ধর্মভ্রষ্ট ও ঈশ্বরের বিদ্রোহী হিসেবে তুলে ধরে। তাই, একজন ব্যক্তি যিনি কোনো লোককে “পাষণ্ড” বলে ডাকেন, তিনি আসলে বলতে চাইছেন যে, সেই ব্যক্তির এমন শাস্তি হওয়া উচিত, যা ঈশ্বরের বিদ্রোহীর উপযুক্ত অর্থাৎ চিরধ্বংস। ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে, যে-ব্যক্তি অন্যকে এভাবে ভর্ৎসনা করেন, তিনি নিজেই সেই কঠোর শাস্তি—চিরধ্বংস—ভোগ করতে পারেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১৭-১৯.
এভাবে, যিশু তাঁর অনুসারীদের জন্য মোশির ব্যবস্থায় প্রাপ্ত নীতিগুলোর চেয়ে এক উচ্চমান স্থাপন করছিলেন। যদিও লোকেরা বিশ্বাস করত যে, একজন নরঘাতক বিচার-সভার বা “বিচারের দায়ে পড়িবে” কিন্তু যিশু তার চেয়েও আরও বেশি কিছু বুঝিয়েছিলেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের শিখিয়েছিলেন যে, এমনকি লোকেদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করাও এড়িয়ে চলা উচিত।—মথি ৫:২১, ২২.