সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রাথমিক তালিকা, যা বাইবেলের অনুপ্রাণিত বইগুলোকে নিশ্চিত করে

প্রাথমিক তালিকা, যা বাইবেলের অনুপ্রাণিত বইগুলোকে নিশ্চিত করে

প্রাথমিক তালিকা, যা বাইবেলের অনুপ্রাণিত বইগুলোকে নিশ্চিত করে

 “প্রত্যেকটা লাইন বিশেষ করে সেই ব্যক্তিদের কৌতূহলকে জাগিয়ে তোলার জন্য লেখা হয়েছে বলে মনে হয়, যাদের প্রাথমিক খ্রিস্টীয় ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ রয়েছে।” একটি প্রাচীন দলিল সম্বন্ধে এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে। কোন দলিল সম্বন্ধে বলা হচ্ছে, তা কি আপনি অনুমান করতে পারেন?

এটি হচ্ছে সেই দলিল, যেটি সম্বন্ধে আপনি হয়তো শুনেছেন কিংবা শোনেননি—মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্ট। আপনি শুনে থাকুন বা না থাকুন, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্টটার বিশেষত্ব কী?’ এটি হচ্ছে খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্রের বিদ্যমান সবচেয়ে পুরোনো অনুপ্রাণিত বইগুলোর তালিকা।

কোনো সন্দেহ না করেই আপনি হয়তো ধরে নেবেন যে, এই নির্দিষ্ট বইগুলো বাইবেলেরই অংশ। তা সত্ত্বেও, এটা জানা কি আপনাকে অবাক করবে যে, এমন একটা সময় ছিল, যখন নির্দিষ্ট কোন বইগুলোকে বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে সেই নিয়ে কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছিল? মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্টে কিছু বইয়ের এক তালিকা রয়েছে, যেগুলোকে অনুপ্রাণিত বই হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আপনি যেমন বুঝতে পারেন যে, বাইবেলে ঠিক যতখানি বিষয়বস্তু রয়েছে, সেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা হলে, যে-বইগুলো নিয়ে এখন খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র গঠিত, সেগুলো সম্বন্ধে এই দলিলটি কী প্রকাশ করে? আসুন, প্রথমে আমরা এই দলিলের কিছু পটভূমি বিবেচনা করে দেখি।

এটির আবিষ্কার

মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্ট, হাতে লেখা ৭৬টা চর্মপত্রের এক পাণ্ডুলিপির অংশ এবং প্রত্যেকটা চর্মপত্র ২৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১৭ সেন্টিমিটার চওড়া। একজন বিখ্যাত ইতালীয় ইতিহাসবেত্তা লুদোভিকো আন্তনিয়ো মুরাটোরি (১৬৭২-১৭৫০) এটিকে ইতালির মিলানে আমব্রোজিয়ান লাইব্রেরিতে আবিষ্কার করেছিলেন। মুরাটোরি ১৭৪০ সালে তার উদ্ভাবনকে প্রকাশ করেছিলেন, তাই এর নাম হয়—মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্ট। মনে করা হয় যে, এই পাণ্ডুলিপিকে অষ্টম শতাব্দীতে ইতালির উত্তরাঞ্চলে, পিয়াচেনজার কাছেই ববিওর প্রাচীন মঠে উৎপাদন করা হয়েছিল। এটি সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুতে আমব্রোজিয়ান লাইব্রেরিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।

মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্ট ৮৫টা লাইন নিয়ে গঠিত এক পাঠ্যাংশ, যা পাণ্ডুলিপির ১০ ও ১১ পাতায় পাওয়া যায়। পাঠ্যাংশটি ল্যাটিন ভাষায় লেখা রয়েছে, যেটি স্পষ্টতই এমন একজন লেখক প্রতিলিপি করেছিলেন, যিনি অত মনোযোগী ছিলেন না। কিন্তু এটিকে যখন একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীর চারটে পাণ্ডুলিপির অন্তর্ভুক্ত একই পাঠ্যাংশের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তখন তার কিছু ভুল ধরা গিয়েছে।

এটি কখন লেখা হয়েছিল?

কিন্তু, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্টের তথ্যগুলো আসলে কখন লেখা হয়েছিল। এটা মনে করা হয় যে, আসলটি গ্রিক ভাষায় ফ্র্যাগমেন্ট পাঠ্যাংশেরও কয়েকশো শতাব্দী আগে লেখা হয়েছিল আর ফ্র্যাগমেন্ট পাঠ্যাংশকে গ্রিক ভাষা থেকে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। আসলটি কোন সময়ের তা নির্ধারণ করতে এই প্রামাণিক তথ্যটি সাহায্য করে। ফ্র্যাগমেন্টে শেপার্ড নামে একটি বইয়ের উল্লেখ রয়েছে, যেটি বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত নেই এবং এটি বলে যে, হারমাস নামে একজন ব্যক্তি “অতি সম্প্রতি, আমাদের সময়ে রোম শহরে” এটি লিখেছিলেন। পণ্ডিত ব্যক্তিরা মনে করে যে, হারমাসের শেপার্ড এর শেষ লেখাগুলো সা.কা. ১৪০ থেকে ১৫৫ সালের। অতএব, আপনি বুঝতে পারছেন যে, ল্যাটিন ভাষার মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্টের আসলটি, যা গ্রিক ভাষায় ছিল, তা কেন সা.কা. ১৭০ থেকে ২০০ সালের মধ্যে লেখা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

সরাসরি ও পরোক্ষভাবে রোম সম্বন্ধে যে-উল্লেখ রয়েছে তা ইঙ্গিত দেয় যে, এটি হয়তো সেই শহরেই লেখা হয়েছিল। কিন্তু এর গ্রন্থকার কে ছিলেন সেটা এক বাদানুবাদের বিষয়। আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ট, সার্দিসের মেলটো এবং ইফিষের পলিক্রেটিসকে গ্রন্থকার হিসেবে সুপারিশ করা হয়। তবে, অধিকাংশ পণ্ডিত ব্যক্তি, বহু গ্রন্থের লেখক হিপ্পোলাইটাসকে ইঙ্গিত করে, যিনি গ্রিক ভাষায় লিখতেন এবং রোমে সেই সময়ে বাস করতেন, সম্ভবত যখন মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্টের বিষয়বস্তুগুলো লেখা হচ্ছিল। আপনি হয়তো এই বিষয়গুলোকে অতটা আগ্রহজনক বলে মনে না-ও করতে পারেন কিন্তু আপনি এর বিষয়বস্তু সম্বন্ধে সম্ভবত আরও জানতে চাইবেন, যা এটিকে এতটা মূল্যবান করে তোলে।

এতে যে-তথ্যগুলো রয়েছে

পাঠ্যাংশটিতে খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্রের বইগুলোর এক তালিকাই শুধু নেই। এটি সেই বইগুলো ও তার লেখকদের সম্বন্ধেও কিছু মন্তব্য করে। আপনি যদি পাঠ্যাংশটি পড়েন, তা হলে আপনি দেখতে পাবেন যে, পাণ্ডুলিপির প্রথম লাইনগুলো সেখানে নেই এবং সেগুলো এমনভাবে শেষ হয়েছে যেন কথাগুলো বাদ পড়েছে। এটি লূকের সুসমাচারের বইয়ের উল্লেখ করে শুরু হয় এবং দলিলটি বলে যে, বাইবেলের এই বইটির লেখক ছিলেন একজন চিকিৎসক। (কলসীয় ৪:১৪) এটি বলে যে, লূকের সুসমাচার হচ্ছে তৃতীয় সুসমাচারের বই আর তাই আপনি বুঝতে পারছেন যে, শুরুর হারিয়ে যাওয়া অংশটুকু সম্ভবত মথি ও মার্কের সুসমাচারের বইগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করেছিল। আপনি যদি এই উপসংহারেই আসেন, তা হলে মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্ট থেকে আপনি এই বিষয়ে কিছু সাহায্য পাবেন যেটি বলে যে, চতুর্থ সুসমাচারের বইটি হচ্ছে যোহনের।

ফ্র্যাগমেন্ট থেকে এই বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রেরিতদের কার্য-বিবরণ বইটি “মহামহিম থিয়ফিল” এর উদ্দেশে লূক লিখেছিলেন। (লূক ১:৩; প্রেরিত ১:১) এরপর এটি করিন্থীয়দের উদ্দেশে (দুটি), ইফিষীয়দের উদ্দেশে, ফিলিপীয়দের উদ্দেশে, কলসীয়দের উদ্দেশে, গালাতীয়দের উদ্দেশে, থিষলনীকীয়দের উদ্দেশে (দুটি), রোমীয়দের উদ্দেশে, ফিলীমনের উদ্দেশে, তীতের উদ্দেশে এবং তীমথিয়ের উদ্দেশে (দুটি) লেখা প্রেরিত পৌলের পত্রগুলোর তালিকা দেয়। যিহূদার পত্র এবং যোহনের দুটি পত্রকেও অনুপ্রাণিত বই হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রেরিত যোহনের প্রথম পত্রটিকে ইতিমধ্যেই তার সুসমাচারের বইয়ের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুপ্রাণিত হিসেবে বিবেচিত বইগুলোর তালিকায় আ্যপোক্যালিপস্‌ অথবা প্রকাশিত বাক্য হচ্ছে শেষ বই।

এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, ফ্র্যাগমেন্টে আ্যপোক্যালিপস্‌ অভ্‌ পিটার এর উল্লেখ রয়েছে কিন্তু আবার বলা আছে, কেউ কেউ মনে করে যে, এই বইটি খ্রিস্টানদের পড়া উচিত নয়। ফ্র্যাগমেন্টের লেখক সাবধান করেন যে, তার দিনে নকল লেখাগুলো ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়ছিল। মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্ট ব্যাখ্যা করে যে, এই নকল লেখাগুলোকে গ্রহণ করা উচিত নয়, “কারণ মধুর সঙ্গে তিক্ত কিছু মেশানো ঠিক হবে না।” এ ছাড়া, দলিলটি অন্যান্য পাঠ্যাংশের বিষয়েও উল্লেখ করে, যেগুলোকে আসলে পবিত্র বইগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল না। এর আরেকটা কারণ হতে পারে, সেগুলো হারমাসের শেপার্ড এর মতো প্রেরিতদের সময়কালের পরে লেখা হয়েছিল অথবা সেগুলো ধর্মবিরোধিতাকে সমর্থন করার জন্য লেখা হয়েছিল।

ওপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন যে, বাইবেলের অনুপ্রাণিত বইগুলোর এই তালিকায় ইব্রীয়দের উদ্দেশে লেখা পত্র, পিতরের দুটি পত্র এবং যাকোবের পত্রের উল্লেখ নেই। তবে, যে-লেখক এই পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি করেছিলেন তার দক্ষতা সম্বন্ধে উল্লেখ করার পর, ড. জেফরি মার্ক হানিমান মন্তব্য করেছিলেন যে, এটা “অনুমান করা যুক্তিযুক্ত যে, ফ্র্যাগমেন্টে অন্যান্য বইয়েরও হয়তো উল্লেখ ছিল, যেগুলো এখন হারিয়ে গিয়েছে এবং সেগুলোর মধ্যে হয়তো যাকোব ও ইব্রীয় (এবং ১ পিতর) থাকতে পারে।”—মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্ট এবং বাইবেলের অনুপ্রাণিত বইগুলোর বিকাশ (ইংরেজি)।

এভাবে মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্ট নিশ্চিত করে যে, অধিকাংশ বই যেগুলো এখন খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্রে পাওয়া যায় সেগুলো সা.কা. দ্বিতীয় শতাব্দীতে ইতিমধ্যেই বাইবেলের অনুপ্রাণিত বই হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। অবশ্য, বাইবেলের বইগুলো যে-অনুপ্রাণিত—অর্থাৎ বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অধিকারপ্রাপ্ত—তা প্রাচীন এক নির্দিষ্ট তালিকায় সেগুলো উল্লেখ করা আছে, তার ওপর নির্ভর করে না। যে-বিষয়টা বাইবেলের বইগুলোকে পবিত্র আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত হিসেবে প্রমাণ করে, তা হল এগুলোর বিষয়বস্তু। বাইবেলের সব বই যিহোবা ঈশ্বরকে গ্রন্থকার বলে সমর্থন করে এবং এগুলো পুরোপুরিভাবে সংগতিপূর্ণ। বাইবেলের অনুপ্রাণিত ৬৬টা বইয়ের সংগতি ও ভারসাম্যতা প্রমাণ দেয় যে, এগুলোর মধ্যে মিল রয়েছে এবং এগুলো সম্পূর্ণ। তাই, এগুলো বাস্তবিকই যা, অর্থাৎ আমাদের দিন পর্যন্ত সংরক্ষিত যিহোবার বাক্যের অনুপ্রাণিত সত্য হিসেবে তা গ্রহণ করে নেওয়া আপনাকে উপকৃত করবে।—১ থিষলনীকীয় ২:১৩; ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

লুদোভিকো আন্তনিয়ো মুরাটোরি

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমব্রোজিয়ান লাইব্রেরি

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

মুরাটোরিয়ান ফ্র্যাগমেন্ট

[সৌজন্যে]

Diritti Biblioteca Ambrosiana. Vietata la riproduzione. Aut. No. F ১৫৭ / ০৫

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

ফ্র্যাগমেন্টগুলো: Diritti Biblioteca Ambrosiana. Vietata la riproduzione. Aut. No. F ১৫৭ / ০৫; মুরাটোরি, রেখা চিত্রের ওপর ভিত্তি করে: © ২০০৫ Brown Brothers